দোটানা ২ পর্ব-০৭

0
475

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৭

পিছল খেয়ে সায়ান কেটে থাকা সে ওয়্যারের উপর পরবে এর আগেই আরুশি ওকে বাঁচানোর জন্য ওকে ধরতে আসে।সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরায় আরুশি কিন্তু নিজে ব্যালেন্স রাখতে পারে না,পরে যায় আরুশি,ওর হাত ওই ওয়্যারের এক কোন ছুঁয়ে যায়,যাতে অল্প শক লাগে আরুশির আর তাতেই জ্ঞান হারায়।সায়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,যাকে সে মারতে চাইলো সেই ওকে বাঁচানোর জন্য নিজের প্রাণ বিপদে ফেললো।সায়ান আর অন্য দিক ভাবলো না আরুশিকে ডাকতে লাগলো তবে আরুশির কোনো উত্তর নেই,অচেতন সে।সায়ান আরুশিকে কোলে উঠিয়ে বিছায়ান নিয়ে গেলো,তারপর ঘরের সবাইকে ডাকলো।সবাই ডাক্তার ডাকালেন শিগগিরী, সায়ানকে তার কারন সবাই জিজ্ঞেস করলে সায়ান কিছু বললো না শুধু বললো যে আরুশির বৈদ্যুতিক শক লেগেছে।কিন্তু কিভাবে কি হয়েছে তা বললো না।ডাক্তার বললেন অল্প শক লাগায় তেমন কিছু হয় নি,ও রেস্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে,যে জায়গায় ওয়্যার লেগেছে সে জায়গায় অল্প ক্ষত হয়েছে তাই সে জায়গায় ডাক্তার ওষুধ লাগিয়ে চলে গেলেন।একটু পর আরুশির জ্ঞান ফিরলো।সবাই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কিভাবে হয়েছে তা,তখন আরুশি একনজর সায়ানের দিকে তাকালো।সায়ান ভয় পেয়ে গেলো যদি আরুশি সত্যটা বলে দেয় তবে তার বাবা তাকে আসতো রাখবে না।কিন্তু আরুশি তাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে বললো।

আসলে ওই ওয়্যারটা আমার অসাবধানতা বশত ছিড়ে গেছে আর সেটার খেয়াল না থাকায় ভুলবশত আমি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে জ্ঞান হারাই।

কি বলছো রে মা এসব তুমি,এতো বেখেয়ালি হলে চলে বলো? আজ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমরা কি করতাম?পারতাম নিজেদের ক্ষমা করতে?আমরা ওয়্যারটা ঠিক করিয়ে দিচ্ছি সামনে থেকে খেয়াল রেখো।আমরা এখন আসি তুমি রেস্ট করো।

কথাগুলো বলে নিধী সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।সবাই চলে গেলেও সায়ান গেলো না।

কি হয়েছে সায়ান যাবে না?কোনো দরকার তোমার আমার সাথে?স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাইলো আরুশি।

তুমি আমাকে বাঁচালে কেনো?যেখানে আমি তোমাকে মারতে চেয়েছিলাম?

আমার মাঝে যে মনুষ্যত্বটা এখনও বিলুপ্ত হয় নি সায়ান।কারনটা কি যথার্থ না কাউকে বাঁচানোর জন্য।

তুমি কি বলতে চাইছো আমি অমানুষ?

যে অল্প কারনে কাউকে খুন করার মতো মানসিকতা রাখতে পারে তার মাঝে আর যাই হোক মনুষ্যত্বটা বেঁচে নেই।

হাউ ডেয়ার ইউ টু টক টু মি লাইক দিস।কথাটা বলে তেড়ে এসে আরুশির ক্ষততে চেপে ধরে সায়ান।যাতে আরুশি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে।সায়ান এক পলক আরুশির ক্ষতের দিকে তাকায় অতঃপর তাকে ছেড়ে দেয় আর কিছু না বলে স্থান ত্যাগ করে।

রুমে চলে গেলো সায়ান।তবে শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না মনের কোনে।আরুশি ওকে অমানুষ বলেছে।বিষয়টা মেনে নিতে ব্যার্থ হচ্ছে সায়ান।

তুমি কি মনে করো সস্তা মেয়ে তুমি আমার প্রাণ বাঁচিয়ে আমার হয়ে ঘরের সবাইকে মিথ্যে বলে আমার মন জয় করে নিবে,আমার জীবনের অংশ হবে?নো ওয়ে তা কখনোই হবে না ইউ বেগার।
সামান্য প্রাণ বাচিয়ে আমাকে অমানুষ উপাধী দিলে তুমি।না তোমাকে আমি আর প্রাণে মারতে চাইবো না তবে হ্যাঁ মরণ যন্ত্রনা তোমাকে উপভোগ করতে হবে।সায়ান চৌধুরীকে অমানুষ বলার দুঃসাহস দেখিয়েছো তুমি।ভরপাই তো তোমার করতেই হবে।

আমি কোনো অমানুষ না সায়ান।আমার ভিতর মনুষ্যত্ব যথেষ্ট আছে,হ্যাঁ তা আলাদা কথা যে আমিও আমার প্রতিশোধ চাই কিন্তু সেটা আমি আমার মতে নিবো।তোমার প্রাণ নেওয়ার বা তোমাকে তোমার বাবা মায়ের চোখে ছুটো করার কোনো মানসিকতায় আমি এখানে আসি নি।
___________________

পরদিন সকালে আরুশি ঘুম থেকে উঠেই আগে কিচেনে গেলো হুট করে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেতে ইচ্ছে জাগলো বড্ড তাই।তখন দেখলো দুজন কাজের লোক আলাদা আলাদা করে একই ধরনের ফ্রুট জুস বান্নাচ্ছে।আরুশি এগিয়ে গিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারলো এগুলো আয়ান সায়ানের জন্য।রোজ সকালে এক্সারসাইজ করার সময় ওদের এগুলো দরকার পরে।আরুশির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করলো।চুপচাপ সেখান থেকে সরে আসলো।অপেক্ষা করছিলো কাজের লোকগুলো অল্পের জন্য সরে কি না।হঠাৎ নিরবের ডাক পরলে দুজনই বাইরে যায় ঠিক তখনি আরুশি চারিদিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ওগুলোতে জামাল গুটা মিশিয়ে দেয়,চৌধুরীর বাড়ির বাগানেই একটা জামাল গোটার গাছ ছিলো যা আরুশির চোখে পরেছিলো অনেক আগে।হয়তো গাছটা এমনিই উঠে গেছিলো বিনা কোনো পরিচর্যায় তবে তা আরুশির কাজে আসলো।জামালগুটা মিশিয়ে লুকিয়ে চলে আসলো আরুশি।

রুমে এসে আরুশি হাসতে হাসতে নেই।
আমার সাথে লাগতে আসা তাই না।হা হা হা।

বেশ কিছুসময় পর থেকে আয়ান সায়ানের স্বাভাবিক অবস্থা আর স্বাভাবিক থাকে না।ওয়াসরুম থেকে বিছানা অব্দি তাদের দৌড় চলতে থাকে।রুমের বাইরে দুজনেরই কোনো আনাগোনা নেই,তাজা খবর জানতে আরুশি সায়ানের রুমের বাইরে থেকে রুমে অল্প উঁকি দিলো,সায়ান বিছানায় পরে এপাশ থেকে ওপাশে উলোট পালোট করছে পেট ব্যাথায়।অল্পক্ষনে আবারও দৌড় দেয় ওয়াসরুমে।আরুশি হাসতে হাসতে গেলো আয়ানের কক্ষের বাইরে।আয়ান নিস্তেজ হয়ে পেটে হাত দিয়ে পরে আছে বেডে।কারো সাথে করুন স্বরে ফোনে কথা বলছে।

আরে না আমি আজ অফিস আসবো না,আপনি সব কাজ দেখেন,বাবা আর ছোটো বাবা চলে আসবে।

কথাটা পুরানোর আগেই তার পেট মোচড় দিলে চট করে ফোন কেটে ওয়াসরুমে ছুটলো।

আরুশি মুখ চেপে হাসছে।

সারাদিন আরুশির ভালোই কাটলো।কারন দুই বজ্জাত আজকে আর রুম থেকেই বেরোয় নি ওর সাথে কি আর লাগবে।ডাক্তার এসে দুজনকে দেখে গেলেন।দুই মা দুজনের সেবা করছে।রাতে দুজন অনেকটা সুস্থ হলেও অনেক দূর্বল এখনও।কোনোমতে দুজন হেটে খেতে আসছে,যদিও মায়েরা বলেছিলেন রুমে দেওয়া হবে তবুও দুজন নিজে থেকে আসলো খেতে,আরুশি ওরা আসার আগেই খেয়ে নিয়ে পাশের সোফায় বসে আছে,যায়ানকে একটা পেইন্টিং করতে সাহায্য করছে।

আয়ান সায়ান ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে খাওয়াতে মন দিলো।আরুশি হঠাৎ বললো যায়ানকে।

আরে যায়ান ভাই আমার তুমি সব তো দিলে এখানে তবে একটা জিনিসের কমতি।

কি আপু?

আরে ওয়াশরুম।দেখো বাড়ি আঁকলে ভালো কথা কিন্তু ওয়াশরুম না দিলে হবে?ওয়াশরুম তো বাধ্যতামুলক চাই।
এবার বলো তো আমাদের বাধ্যতামুলক কি চাই?

ওয়াশরুম।

কি চাই।

ওয়াশরুম।

কি চাই।

ওয়াশরুম।

হ্যাঁ ওয়াশরুম।

আয়ান সায়ানকে ব্যাঙ্গ করে বলছে এসব আরুশি তা দুজন ভালোই বুঝতে পারছে তাই দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে দুজন।এখন আরুশিকে কিছু বলারও শক্তি নাই ওদের।
________________

আজ আরুশি অফিস পৌঁছাতেই ডাক এলো আয়ানের রুম থেকে।

আল্লাহ আসতে না আসতে খবরদারি। না জানি আজ কি করবে ওই ঘুমরো হনুমান।আল্লাহ আমি মন থেকে বলছি ওর কপালে কখনো বউ জুটিয়ো না।আর ল্যাংরা লুলা একটা বউ জুটে গেলেও যেনো বাচ্চা না জুটে কপালে।

কেবিনে ঢুকতেই আয়ান আরুশিকে কাগজে একটা এড্রেস দিলো।

এটা কিসের এড্রেস স্যার?

এটা আমাদের ক্লাজের একটা জায়গা,এখানে আজকে সারাদিন রাত তোমাকে পাহাদার হিসেবে থাকতে হবে।কারন এখানের পাহাদার হঠাৎ পলাতক হয়েছে।আরেকজন পেতে সময় আছে তাই এর বদলে তুমি যাবে আজ।

নিজেই চলে যা না।লোকে তোকে বেস্ট পাহারাদার এওয়ার্ড না দিয়ে দেয়।বিরবির করে বললো আরুশি।

কি বললে।ভ্রুকুচকে বললো আয়ান।

বলছি যে আমি এখানের পিয়ন আপনার প্রাইবেট সেক্রেটারি না যে যাই চাইবেন তাই করাবেন।

তুমি আমার কর্মচারী আর আমি তোমাকে যা ইচ্ছে তা করাতে পারি আর তুমি তা করতে বাধ্য।
কাজ করতে না পারলে চাকরি ছাড়তে পারো,এক্সকিউজ কেনো দিচ্ছো?

দেখেন স্যার আমার নির্দিষ্ট কাজ ছাড়া আপনি আমাকে অন্য কাজ দিতে পারেন না।

ইউ রাবিস।কথায় কথায় আরগিউ করার কি তোমার বংশগত সমস্যা আছে।

ছিলো না আপনার থেকে শিখেছি।আমি জানি আমি যাতে নিজের ইচ্ছেয় কাজ ছাড়ি তাই এসব করছেন না আপনি ওকে ফাইন।আমিও দমে যাওয়ার পাত্র নই।

আরুশি বেড়িয়ে আসলো সেখান থেকে এই এড্রেস অনুযায়ী।
আয়ান রাগে ফুঁসতে লাগলো।

সেখানে পৌঁছালো আরুশি,একটা আধভাঙা বাড়ি তাতে কোনো পাহারাদার আদোও ছিলো কি না কে জানে।এখানে পাহারাদার রেখেই বা কি লাভ।এখানে পাহারাদারের জন্য কোনো ছাউনিরও ব্যবস্থা নাই,না তো আছে বসার জায়গা।আরুশি বুঝতে পারলো আয়ান ওকে সাজা দেওয়ার জন্যই এমন করেছে।
সেখানে অনেক রোদ্দুর, আশেপাশে কোনো দোকানও নেই যে আরুশি কিছু কিনে খাবে,দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে কিন্তু আরুশির পেটে এখনও খাবার জুটে নি।এদিকে সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থেকে আরুশির মাথা ঘুরছে। অবশেষে রাত হলো।আয়ান শান্তিতে কাজ করেছে সারাদিন।আরুশিকে শাস্তি দিয়ে সে কি মজা পায় তা শুধু সেই জানে।এখন অফিস আওয়ার শেষ।সবাই বাড়ি চলে যাবে সাথে আয়ানও।হঠাৎ ওর মনে পরলো আরুশির কথা।

অনেক হয়েছে। সারাদিন যে রোদে পুড়েছে তারপর এই জব করার ধান্দা আর মাথায় থাকবে না।এখন ওকে বাড়ির আসার জন্য বলি।এমনিতেই ও বাড়িতে কেনো আসে নি তার জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে তাছাড়া ওই এরিয়া অনেকটা জনশূন্য। এমন এরিয়াতে ওর এতো রাতে একা থাকা মোটেও ভালো হবে না।যেই বা হোক সে একটা মানুষ এটাই বড় কথা।

আয়ান আরুশিকে ফোন করে।তবে ফোন উঠায় না আরুশি।তিন চার বার ফোন করার পর এখন ফোন বন্ধ আসছে তার।আয়ান চিন্তায় পরে গেলো আরুশিকে নিয়ে।

এই মেয়েটা ফোন কেনো তুলছে না,আর এখন বন্ধ আসছে কেনো?কোনো বিপদ হলো না তো এর।অফিসের সবাই তো প্রায় চলে গেছে। কাউকে পাঠাবো? না আমাকে ওখানে যাওয়া দরকার?যদি সত্যি ওর কোনো বিপদ হয়ে থাকে।

চলবে……..