দোটানা ২ পর্ব-০৯

0
396

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৯

সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই একত্রিত আছে।নিরব খেতে খেতে সায়ানকে জিজ্ঞেস করলো।

তো সায়ান বিয়ের বিষয়ে এখনও তোমার কোনো জবাব পেলাম না।তোমার দোষ এভাবে এরিয়ে যেতে পারি না আমি।

ডেড আমি ভেবেছি বিষয়টা নিয়ে।ওই আসলে হুট করে তো কাউকে বিয়ে করা যায় না।আমি ওকে ভালোবাসি না। হ্যাঁ এতোই যখন চাপ তবে আমার ওকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নাই কিন্তু এর আগে আমি ওর সাথে কিছু সময় কাটাতে চাই।আই মিন আমাদের একে ওপরকে বোঝার, ভালোবাসার সময়টা তো দেওয়াই যায় তাই না?স্বাভাবিক ভাবে কথাগুলো বললো সায়ান

সায়ানের কথা শুনে আরুশি বিষম খেয়ে গেলো,আরুশিকে পানি খাওয়ালো নিধী।সবাই হতবাক কথাগুলো কি আদোও সায়ান বলছে।সায়ান বিয়ের জন্য মেনে গিয়েছে তাও আরুশিকে কথাটা ভাবাই দুষ্কর।

ঠিক আছে কিছু সময় নাও।তবে হ্যাঁ বেশি সময় দিতে পারবো না।নিরব বললো।

বেশি না ডেড এই দুই তিন মাস হলেই হবে।

হুম।ঠিক আছে।শান্ত স্বরে বললো নিরব।

ও মা এই নোংরা হনুমানের ভাবসাব কিছু আন্দাজ করতে পারছি না।বিয়ের জন্য এতো সহজে কেমনে মেনে গেলো।নিশ্চয়ই কোনো ধান্দা আছে এখানেও এর।

তোমার মতো ফকিন্নি হবে আমার বউ।কখনো কল্পনাও করো না আরুশি।তোমাকে সায়েস্তা করার জন্য আমার এই দুই তিন মাসই যথেষ্ট।
_____________________

সুইট মম ওই ভাবছি কি আরুশিকে নিয়ে একটু বাইরে যাবো।ওর সাথে সবকিছু ঠিক করতে হলে ওর সাথে সময়ও তো কাটাতে হবে। তাই ভাবলাম ওকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাই।তুমি প্লিজ ওকে বলে দিও সন্ধ্যায় রেডি থাকতে।

আচ্ছা ঠিক আছে।আলতো হেসে বললো নিধী।অতঃপর সায়ান বেড়িয়ে গেলে নিধী আরুশিকে গিয়ে কথাটা জানালো।আরুশি হতবাক।

এই সায়ান না জানি কি করবে তবে যাই করুক না কেনো আমি দমে যাবো না।আমাকেও এলার্ট থাকতে হবে।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।আয়ানও বাড়ি এসে পরলো।নিজের রুমে আসার সময় সায়ানকে কারো সাথে কথা বলতে শুনলো আয়ান।

হুম আমি আরুশিকে নিয়ে (একটা জায়গায় নাম বললো)ওখানে আসছি তুমিও এসে পরো।ওকে।

কথাটা শুনে আয়ান অল্প থমকালো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো।

এই জায়গাটা তো অনেকটা জনশূন্য। এই জায়গায় সায়ান আরুশিকে নিয়ে কেনো যাবে তাছাড়া আরও কাকেও আসতে বললো।

আরে যা ইচ্ছে তা করুক আমার কি?আমি কেনো ওই আরুশিকে নিয়ে ভাববো।তাচ্ছিল্য করে চলে গেলো আয়ান নিজের রুমে।আরুশি সুন্দর একটা থ্রিপিচ পরে রেডি হয়ে গেলো।সায়ান ওর জন্য গাড়িতেই অপেক্ষা করছিলো।আরুশিকে দেখতেই একটা রহস্যময়ী হাসি দিলো।আরুশি এতো সব খেয়ালে না নিয়ে পিছনে গিয়ে বসতে লাগলো।তখনি সায়ান বললো।

আরে আরুশি করছো কি?তুমি না আমার হবু বউ।পিছনে বসলে আমাদের কাপল মনে হবে বলো?মনে হবে যেনো আমি তোমার ড্রাইবার।তাই ভালো বউয়ের মতো সামনে বসো না বেবি।ঠিক আমার পাশে।

সায়ান তুমি একটু বেশি ড্রামা করছো না?আমি ভালো করে জানি তুমি আমাকে কখনোই বিয়ে করবে না।এসব শুধুই তোমার নাটক।

পুরো ৮ মাস রিলেশনে থেকে আর যাই হোক তুমি আমায় ভালোই চিনে গেছো দেখছি বেবি।ওয়েল ডান।
চলো তোমাকে আমার বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানানোর আছে এবার।

তোমাকে জানতে বা চিনতে আমার কোনো বাকি নেই সায়ান।তবে হ্যাঁ মনে রেখো যে যতটুকু করবে তাকে ঠিক ততোটুকুই সুধ সমিত ফিরত নিতে হবে।তোমার ভাগের টাও কম হবে বলে আমার মনে হয় না।

তা সুধ সমিত কে ফেরত দেবে আমায় শুনি?তুমি?হা হা হা হা।

আরুশিকে ব্যাঙ্গ করে অট্টহাসিতে ফেঁটে পরলো সায়ান।আরুশিও আর কথা বাড়ালো না উঠে বসলো গাড়িতে।

আস্তে আস্তে গাড়িটা একটা জনশূন্য রাস্তার দিকে চলেছে।বাতাসও যে প্রবল বেগে বইছে।একটু সময়েই যেনো মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়তে শুরু হবে।আরুশির মনের ভয় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু হয়েছে।

আমরা এই নিঝুম রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছি সায়ান?

তোমাকে খুন করতে।হা হা হা।

আবারও ব্যাঙ্গ করে হাসলো সায়ান।

দেখো সায়ান ফাজলামো করো না।তোমার আমাকে খুন করার হলে এভাবে সবাইকে জানিয়ে আমাকে সাথে আনতে না।সোজাসাপ্টা বলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায় আর কেনো?

হুম ৮ মাস আমার সাথে থেকে দেখছি বড্ড চালাক হয়ে গেছো।হুম গুড।ইমপ্রেসিভ।হ্যাঁ আমি তোমায় খুন করতে নিয়ে যাচ্ছি না তবে কোনো নিয়ে যাচ্ছি তা খুব শিগ্রই জানতে পারবে।হা হা।

অল্প ক্ষনে গাড়ি থামলো সায়ান একটা নির্জন রাস্তার মোড়ে।তবে নির্জন বললে ভুল হবে।সেখানে আরেকটা গাড়ি খাঁড়া। সেটাতে হেলান দিয়ে একটা মেয়েও দাঁড়িয়ে। মেয়েটাকে চিনতে মোটেও অসুবিধা হলো না আরুশির।মেয়েটি সুইটি।সায়ানকে দেখতেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে বেবি বলে।আরুশিকে জ্বালাতে মুখে ব্যাঙ্গ হাসি টাঙিয়ে আরুশির দিকে তাকিয়ে সায়ানও সুইটিকে জড়িয়ে ধরলো। আরুশির চোখে যেনো মরিচ পরলো।৮ মাসের জন্যই হোক ভালোবেসেছিলো সে সায়ানকে তার সাথে অন্য মেয়েকে এখনও যে মেনে নিতে কষ্ট হয় তার।জল চোখে তাড়া দিচ্ছে তবে তা বইতে দিতে নারাজ আরুশি।অনেক কষ্টে নিজেকে ধমন করে নিচ্ছে।

কি হয়েছে বেবি খারাপ লাগছে তোমার?ওওওওওও।তবে কি করি বলো।আমি যে এমনই।দেখো বিয়ের আগে স্বামী সম্পর্কে জেনে নেওয়া তোমার জন্য জরুরি তাই না?কারন বিয়ের পরও তো এমনই চলবে বেবি।তাই বিয়ের আগে এসব অভ্যেস করে নেওয়া ভালো হবে বুঝেছো।

আরে ওই ফকিন্নি কি বলবে বেবি।ছাড়ো ওকে।চলো না দুজন একটু রোমান্স করি।ওয়েদার দেখো কতো রোমান্টিক।এখানে এই ফকিন্নি ব্যতীত কেউ নাই আমাদের ডিসটার্ব করার জন্য।আর ওই ফকিন্নিকে আমরা সে চান্সও দেবো না।

তা আর বলতে বেবি। চলো আমারও না এই ফকিন্নির ধারে আর একটুও দাঁড়াতে মন চাইছে না। ওই সস্তা মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো আমরা দুজন কারের ভিতর প্রাইবেট টাইম স্প্যান্ড করতে যাচ্ছি ততোক্ষণ বাইরে ওয়েট করবে।ওকে…

কথাটা বলেই সুইটির ঠোঁটে ঠোঁট জমিয়ে দিলো সায়ান আরুশির সামনেই।ফট করে আরুশির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে নিচে পরলো।কিস করতে করতে সায়ান সুইটিকে নিয়ে কারের ভিতর ঢুকে গেলো। ঠিক তখনি বৃষ্টি আরম্ভ হলো।মুহুর্তেই ঝড় বইতে শুরু হলো।রাস্তায় হুমড়ি দিয়ে বসে পরলো আরুশি।মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করেছে।তার চোখের সামনে গাড়ির জানালার কাচ খুলে সায়ান সুইটির সব কাপড় ছুড়ে ফেললো হাত বাড়িয়ে অতঃপর আবারও কাচ লাগিয়ে নিলো। আরুশিকে জ্বালানোর জন্যই এমনটা করলো।আরুশির মনে ক্ষত দিতে চেয়েছে সায়ান আর তাই করতে সক্ষম হলো।আরুশির যে সত্যিই যন্ত্রণা হচ্ছে বড্ড। হয়তো এই ক্ষত না দিয়ে সায়ান ওকে খুন করে ফেললেও এতো কষ্ট ওর হতো না।আরুশি বেশ শব্দ করেই কাঁদছে পারছে না নিজেকে সামলাতে।

ঝড় পুরো ওর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। তবে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই তাকিয়ে আছে বন্ধ সে কারটার দিকে।অল্পক্ষনিক নড়ছেও কারটা যা কারের ভিতরের লোকগুলোর নোংরামোর প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে তাও আরুশি বার বার সেদিকে তাকাচ্ছে। বুকে জ্বলতে থাকা আগুন পারছে না এই তেজি ঝড়ের কোনো দাপট নিভিয়ে দিতে।

কেনো আল্লাহ?কেনো আমার কপালেই সব দুর্দশা রেখেছেন?কি পাপ করেছিলাম আমি?কেনো জন্ম থেকেই কপালপোড়া বানিয়ে রেখেছেন আমায়?কেনো?কেনো সায়ানের সাথে পরিচয় করালেন আমার?কেনো ওর জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি করলেন আমার মনে।কেনো?আল্লাহ। কেনো ওকে ভালোবাসালেন।রহম করুন আমাতে রাব্বুল আলামিন। রহম করুন।আপনি ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই মালিক।রহম করুন।

আরুশি আর সেখানে থাকলো না ওসব নোংরামি সহ্য করার ক্ষমতা আর তার নেই।উঠে হাটতে শুরু করলো।
__________________

বাড়িতে তোড়জোড় পরেছে।সায়ান আরুশিকে নিয়ে সেই কবে বেড়িয়েছে কিন্তু এখন রাত ১২ টা পেরিয়ে গেছে দুজনের কোনো খোঁজ নেই।আরুশি সায়ান দুজনেরই ফোন বন্ধ আসছে।সবাই অনেক চিন্তায় পরে গেছেন।

নিধী তুমি কেনো সায়ানের সাথে মেয়েটাকে যেতে দিলো?তুমি কি জানো না সায়ান এক নাম্বারের ফাজিল ছেলে?মেয়েটার সাথে কিছু হয়ে গেলে কি করবো আমরা ভেবেছো?

আসলে নিরব স্যার আমি ভাবলাম দুজন একসাথে সময় কাটালে একে ওপরকে বুঝবে।সায়ানতো এজন্যই সময় নিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো ভয় লাগছে আমার আরুশির জন্য।

চল নিহান আমরা দুজন গিয়ে দেখি কোথাও ওদের খোঁজ পাওয়া যায় কি না।

হুম চল ভাইয়া।

এই ঝড়ের মধ্যে আপনারা কোথায় খুঁজবেন ওদের।বলে উঠলো কথা।

আরুশিকে নিয়ে কোনো চান্স নেওয়া ঠিক হবে না,তোমরা চিন্তা করো না আমরা আসছি। চল ভাইয়া।কথাটা বলে নিহান নিরবকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

উনাদের কথায় আরুশির জন্য আয়ানের মনও খনিক ঘাবড়ে উঠলো।ও তখন রাতের খাবারের জন্য নিচে ছিলো।বাবারা চলে গেলে খেয়ে উপরে আসলো আয়ান।

আমার কি বাবা আর ছুটো বাবাকে বলে দেওয়া উচিৎ যে সায়ান আরুশিকে নিয়ে ওই নির্জন জায়গায় গেছে।পরে যদি সত্যিই সায়ান আরুশির সাথে খারাপ কিছু করে বসে।

তো করলে করুক।ভালোই তো আপদ সরবে।
কথাটা বলে মনকে অল্প শান্ত করে কাজে মন লাগাতে চাইলো আয়ান।তবে কোনো কাজে মন লাগছে না তার।বার বার মনে উঠছে আরুশির খেয়াল।
ওই সায়ানকে নিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই।মনুষ্যত্ব তো তার মধ্যে এক তিল পরিমাণও নেই।যদি আরুশির সাথে খারাপ কিছু করে।বাবা আর ছুটো বাবাকে এসব বলে কাজ নেই পরে উল্টো কিছু না হয়ে যায় আবার।তবে কি আমার যাওয়া দরকার?

আরে ধুর আমার কেনো এতো দরদ হচ্ছে ওই আরুশির জন্য?যাক জাহান্নামে আমার কি?কোনো কিছু হলে তো আর তার কারন আমি থাকবো না যে আমার অনুশোচনা হবে।

মনে শান্তনাসূচক কথাটার জানান দিয়ে আবারও কাজ করতে চাইলেও পারলো না আয়ান।কাজে মন বসাতেই অক্ষম হলো সে।

ইশ।না একবার গিয়েই দেখি।হয়তো না গেলে এ মনে শান্তিই আসবে না।

অতঃপর আয়ানও বেড়িয়ে পরলো আরুশির খোঁজে। আরুশি রাস্তা দিয়ে হাটছে উদ্দেশ্য বাড়ি।এই রাস্তা দিয়ে লোক সমাগম নেই।হঠাৎ হঠাৎ এক দুইটা প্রাইবেট কার ব্যাতীত কিছুই যাচ্ছে না।তবে আরুশি কোনো গাড়িতে চড়তেও যেনো চাইছে না।অনুভুতিহীন ভঙ্গিতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে সে।ঝড় এখনও থামে নি।

আশেপাশে কি ঘটছে তাতেও আরুশির কোনো খেয়াল নেই।বেখেয়ালি হয়ে হাটতে মগ্ন সে।এদিকে পিছন থেকে একটা নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাক তেড়ে আসছে।গাড়ির ড্রাইবার অতিরিক্ত ম/দ্য পান করে গাড়ি চালাচ্ছে তাই গাড়িতে সে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।এদিকে আরুশি বেখেয়ালি হয়ে আছে।অল্পক্ষণেই ট্রাকটি আরুশির একদম পাশে চলে আসে আর……..

চলবে…………