দোটানা ২ পর্ব-১০+১১

0
435

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১০(প্রেমানুভুতি🙈)

ট্রাকটা আরুশিকে ধাক্কা দিয়ে দিবে ঠিক তখনি আয়ান টান দিয়ে ওকে সেখান থেকে সরায়।টানের বেগে আরুশি ঠিক এসে তার বুকে ঠাই পায়,আচমকা টানের তাল সামলাতে না পেরে আরুশি নিজেকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচাতে উভয় হাত দিয়ে আয়ানের পিছনের দিকের শার্ট খামছে ধরে।অল্পক্ষণের জন্য আয়ানের হৃদয়ে যেনো ক্ষনিক ভালোলাগা দুলিয়ে যায়।মনে প্রশান্তি আসে আরুশিকে বাঁচাতে পারায় সাথে আচকমা এক অনুভূতিরও সৃষ্টি হয় যার মানে আয়ানের অজানা।নিজেকে সামলে আয়ান আরুশিকে ছাড়িয়ে অনেক রেগে যায় তার উপর।

আর ইউ স্টুপিড?কখন থেকে ডাকছি কানে শুনতে পাও না?এখনি কি হয়ে যেতো ভাবতে পারছো?খেয়াল কোথায় রেখে হাটো তুমি? ইউ সিলি গার্ল।

আরুশি ধাক্কা দিয়ে তাকে সরালো অনেকটা দূরে অতঃপর ঝাঁঝালো স্বরে ফেটে পড়লো তার উপর।

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ জানি কি হতো।মরে যেতাম।চলে যেতাম নিজের মায়ের কাছে।তাতে কার কি যায় আসতো?কে আছে আমার?কেউ নেই।আপনি কেনো এসেছেন?আপনিও তো আমাকে আপদ ভাবেন।আমি চলে গেলেই বাঁচেন।এখন তো চলেই যাচ্ছিলাম চিরতরে কেনো বাঁচালেন আমায়?কেনো?

কথাগুলো বলে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে অনেক শব্দ করে কাঁদতে লাগলো আরুশি।এই প্রথম আয়ান নিজের মনে কারো জন্য এতো ব্যাথীত ভাব আন্দাজ করতে পারলো।অনেক খারাপ লাগলো তার আরুশির জন্য।এতোটা খারাপ যে তার এর আগে কখনো কারো জন্যই লাগে নি।আয়ান ওর দিকে এগিয়ে গেলো।আরুশির কাঁধে সহানুভূতিময় হাত রাখতেই আরুশি চট করে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।অনেকটা আঁকড়ে।অতি আবেগে আরুশি স্বজ্ঞানে নেই।আয়ানকে আঁকড়ে ধরে অনেক কেঁদে কেঁদে বলছে।

কেউ ভালোবাসে না আমায়।কেউ নেই আমার।কেউ নেই।আমি বড্ড একা।এই পৃথিবীতে বোঝা স্বরুপ। কেউ চায় না আমায় কেউ না।কেউ ভালোবাসে না।

আয়ান হতভম্ব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।এই মুহুর্তে কি তার করনীয় জানে না সে।মনের ভিতর চলমান আচমকা সেই অনুভুতির মানে সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞাত আয়ান।যেনো মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ তার বুকে ঠাই খুঁজছে আর আয়ানের সেই বেহায়া মনটাও যেনো আজ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।বড্ড করে চাইছে যেনো আরুশির ব্যাথায় ব্যাথীত হতে।অরুশির কান্না আর সহ্য হলো না আয়ানের।অবশেষে জড়তা কাটিয়ে হাত উঠাতে গেলো আরুশিকে অল্প সহানুভূতি প্রদানের সুবিধার্থে।কিন্তু সেই ক্ষনেই আরুশি জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পরতে গেলো রাস্তায় তবে পরতে দিলো না আয়ান তাকে।আবদ্ধ করলো নিজ বাহুডোরে।ডাকতে শুরু করলো আরুশিকে।

আরুশি। আরুশি চোখ খুলো।আরুশি।ও মাই গড আরুশির পুরো শরীর দেখি বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।ওর নিশ্বাসও অনেক ধীর গতিতে চলছে।নো….. ওর তো শ্বাসকষ্টের সমস্যা।ওর জন্য ঠান্ডায় থাকা একদম ঠিক না।ওকে এখনি হাতপাতালে নিতে হবে।চিন্তা করো না আরুশি আমি তোমায় কিছুই হতে দিবো না।
পাজকোলে তুলে আয়ান আরুশিকে গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি ছাড়লো।বার বার আরুশিকে দেখছে আর ড্রাইব করছে।হাওয়ার বেগে হাতপাতালে এলো আয়ান।আরুশিকে আবারও পাজকোলে নিয়ে এসে এডমিট করালো হাসপাতালে। ভেজা শরীরেই বসে থাকলো আরুশির কেবিনের বাইরে।ডাক্তার আরুশির চিকিৎসা করছেন।

বাড়িতে ফোন করে জানালো আয়ান উনারা বিষয়টা শুনে অনেক ঘাবড়ে গেছেন।সবাই বেড়িয়ে পরেছেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।বাড়ি থেকে হাসপাতাল টা অনেক দূর তাই আসতে সময় লাগবে।তখন আয়ান সেই জায়গায় যাচ্ছিলো সায়ান আরুশির খোঁজে তখনি আরুশিকে এমতাবস্থায় রাস্তায় হাটতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে ওকে ডাকতে শুরু করে তবে আরুশি তার ডাকে সারা দিচ্ছিলো না এদিকে ট্রাকটা আরুশির দিকে এগিয়ে আসছিলো দ্রুত গতিতে তাই ঠিক সময়ে ছুটে গিয়ে আরুশিকে বাঁচাতে সক্ষম হলো আয়ান।যেহেতু অনেকটা কাছে ছিলো।

অনেক্ষন পর ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন।

ডক্টর আরুশি কেমন আছে?ঠিক আছে তো ও?

দেখেন উনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা,এদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভিজেছেন উনি এছাড়াও হয়তো উনি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পরেছিলেন আর তাই এতো কিছু একসাথে উনার শরীর আর মস্তিষ্ক নিতে না পারায় উনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন।উনাকে ঠিক সময়ে এখানে আনাতে উনার প্রাণ বেঁচে গেছে।আরেকটু দেরি হলে হয়তো অনেক বড় কিছুও ঘটে যেতে পারতো।তবে যাই হোক উনি এখন সুস্থ আছেন।উনার জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।জ্ঞান ফিরার পর উনার অবস্থা বুঝে উনাকে ডিসচার্জ করা হবে।
আপনি চাইলে উনার পাশে যেতে পারেন।

কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে গেলেন।আয়ান গেলো আরুশির পাশে।বেডে অচেতন হয়ে পরে আছে আরুশি।হাসিখুশি সে চেহারাটা মুহুর্তেই ফ্যাকাশে ভাব ধারন করে গেছে।আরুশিকে দেখতেই বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো আয়ানের।যেনো আরুশির কষ্ট তারও অনুভবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। ধিমি পায়ে এগিয়ে গেলো ওর পানে। একটা চেয়ার টেনে পাশে বসলো তার। বড্ড মায়া হচ্ছে আয়ানের মনে আরুশিকে নিয়ে।ঠিক যেনো তার সেই ছোট্টো নিষ্পাপ আরুশিকে দেখতে পাচ্ছে সে এই আরুশিতে।কতো নিষ্পাপ এই মেয়েটা।গরীব হয়েছে বলে কি কোনো পাপ করেছে সে?সবাই তো আর একরকম হয় না।একজন খারাপ হলো বলে পুরো পৃথিবীটাকে কি খারাপ মনে করে নিতে হবে?আরুশির মাথায় সহানুভূতিময় হাত বুলাতে বড্ড মন চাইলো আয়ানের।হাত বাড়ালো সে সুবাদে কিন্তু অল্পক্ষণে মনে পরে গেলো কিছু তিক্ত স্মৃতি চট করে হাত ফিরিয়ে নিলো আয়ান।আর বসলোও না সেখানে উঠে বাইরে চলে গেলো।
তখনি বাড়ির সবাই চলে এলেন।

নিধী আর কথা আরুশির জন্য কান্না করছে খুব।নিধী নিজেকে দোষারোপ করছে আরুশির এই হালের জন্য।নিহান ওকে সামলাচ্ছে। এদিকে আয়ানকে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে ও যতোটুকু জানে ততোটুকুই বললো।সায়ানকে এখনও ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না।ওর ফোন বন্ধ।নিহান নিধী আর কথা আরুশির কাছে থাকলো নিরব,যায়ান আর আয়ান বাড়ি ফিরলো।আয়ানের কেনো যেনো বাড়ি যেতে মন চাইলো না আরুশিকে ছেড়ে তবুও মনকে বোঝালো।ও তো আরুশিকে বাঁচিয়ে নিয়েছে এখন তো আরুশি ঠিক আছে তবে এখন আর ওর সাথে থেকে কি করবে আয়ান।আরুশি তো আর আয়ানের অতোও আপন কেউ না।হ্যাঁ আয়ান এখানে থাকবে না।মন স্থির করে বাড়িতে রওয়ানা দিলো নিরব আর যায়ানকে নিয়ে। বাড়িতে গেলো আয়ান তবে মনের কোনে শান্তির কোনো ছিটেফোঁটা নেই তার।ভুলতে পারছে না সে মুহুর্ত যখন আরুশি ওকে আঁকড়ে ধরেছিলো অল্প আশ্রয়ের লোভে।ভুলতে পারছে না তার সে অসহায় অবস্থা,ওর সে জ্ঞানহীন নিষ্পাপ চেহারা।কেনো জানি বার বার আরুশির খেয়াল বড্ড জ্বালাতন করছে ওকে।কেনো এমন হচ্ছে ওর সাথে?ঘুম আসছে না তার।আরুশির কান্নারত চেহারা যেনো ফুঁটে উঠছে চোখের সামনে চোখ বন্ধ করলেই।

ধুর কিছুই ভালো লাগছে না।ঘুমটাও তো আসছে না।কেনো হচ্ছে এমনটা?কখনো কোনো মেয়ের এতো পাশে যাই নি যতোটা আজ আরুশির পাশে ছিলাম তাই হয়তো এমন সব ঘটছে এছাড়া আর কি কারন হবে। হ্যাঁ ওটাই হবে।আর যদি তার অন্য কারন হয়।আরে ধুর কি সব ভাবছি আমি! আর কি কারন হবে?আয়ান ওতো ভাবিস না।ঘুমোনোর চেষ্টা কর।

অতএব নিজেকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ঘুমোনোর বৃথা চেষ্টা করলো আয়ান। কিন্তু ব্যার্থই হলো।খুব হতেই আগে রওয়ানা হলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।মনকে শান্তনা দিলো আরুশি একজন মানুষ আর সেই মনুষ্যত্বের খাতিরে ও আরুশিকে দেখতে যাচ্ছে। কারন আরুশিকে নিয়ে ওর এই পেরেশানির মানে ওর কোনোদিক থেকেই জানা নেই।তাই নিজে থেকে একটা মানে বানালো।

সুইটির ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের গালে অনুভব করতেই ঘুম ভাঙলো সায়ানের। চোখ খুলতেই সামনে পেলো সুইটিকে।ভালো করে উঠে বসলো সে।অল্পসময়ে রাতের কথা মনে পরতেই ছোটে কারের বাইরে গেলো।সুইটিও সাথে গেলো।

কি হয়েছে সায়ান বেবি এমন অস্থির কেনো লাগছে তোমায়?

আরুশি কোথায়?

আমি জানি কি আরুশি কোথায়?আমার ঘুম তো এই একটু আগেই ভাঙলো তাই কার থেকে নেমে নিজের কাপড় নিয়ে পরে আবার তোমার পাশে গেলাম।

ইউ স্টুপিড। তোমার জন্যই আমি কাল রাতে গাড়িতে ঘুমিয়ে গেছিলাম।কে বলেছিলো তখন মাথা ঘামাতে। ঝড় হচ্ছে বেবি বাইরে যেয়ো না ঝড় থামলে যাবে কথাটা বলে আমাকে গাড়ির ভিতর রাখলে আর না জানি কখন ঘুমিয়ে গেলাম।এখন আরুশি কোথায় আছে কে জানে।তুমি জানো না এই জায়গা এমনিই নির্জন।রাতে তো কোনো গাড়িও আসে না এখানে আরুশি এতোদূর বাড়ি কিভাবে যাবে এখান থেকে।এছাড়াও ওর শ্বাসকষ্টের সমস্যা,পুরো একটা ঝড় গেছে ওর উপর দিয়ে।না জানি কোথায় আছে এবার।

সায়ানের চেহারায় সুইটি আরুশির জন্য আলাদা একটা টান আর অস্থিরতা যেনো আন্দাজ করতে পারছে।যাতে সুইটির গা জ্বলে উঠলো।অল্প রেগে উত্তর দিলো সুইটি।

দেখো সায়ান তুমি ওকে ইচ্ছে করেই এখানে এনেছো।ওকে এভাবে কষ্ট দেওয়া তোমার প্লান ছিলো।ও মরে গেলে তো তোমারই ভালো।কিন্তু এখন এমন ভান করছো যেনো ওতে তোমার নিশ্বাস আঁটকে আছে।

সুইটির কথায় আমতা ভাব এলো সায়ানের মধ্যে। তাই আমতা কন্ঠেই উত্তর দিলো।

ওই আসলে এমন কিছু না।ও মরে গেলে আমিই সবথেকে বেশি খুশি হবো।তবে ওর কিছু হয়ে গেলে বাড়িতে ডেড আমায় আসতো রাখবে না। তার কারন ওকে আমি সাথে করে এনেছিলাম।তাই ওকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে তাও সম্পুর্ন সুস্থভাবে।তুমি তোমার বাড়ি যাও।আমি দেখি আরুশিটা গেলো কোথায়।

সায়ানের উত্তর মোটেও ঠিক মনে হলো না সুইটির কাছে।কথাগুলো বলে সায়ান সুইটিকে শান্তনা দিলো না নিজের মনকে সে বিষয়ে তারা দুজনই অজানা।(লেখিকা আমি নিজেও আজানা।হু হু)

সায়ান ফোন অন করে যায়ানকে ফোন করলো,আরুশি বাড়ি গেছে কি না তা জানতে।এ বিষয়ে জানতে হলে অন্য কাউকে ফোন করা এখন ঠিক হবে না তাই যায়ানকে ফোন করলো।ফোন ধরে যায়ান বলতে লাগলো।

আরে ভাইয়া তুমি কোথায় আছো?সবাই সারারাত ধরে তোমাকে খুঁজে খুঁজে নাই।বাড়ি এলে খবর আছে তোমার।আরুশি আপুর সাথে কি করেছো তুমি?কাল আয়ান ভাইয়া আপুকে রাস্তায় পেয়েছে অসুস্থ অবস্থায়। আপুকে( হাসপাতালটির নাম বলে) এই হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।তুমি জলদি বাড়ি আসো।

কথাটা শুনতেই মন টা খচ করে উঠলো সায়ানের।বাড়ি গেলে তার খবর আছে বর্তমানে এই কথাটা তাকে প্যারা না দিয়ে বরং প্যারা দিচ্ছে আরুশির অসুস্থতার কথা।বার বার কানে বাজছে আরুশিকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় পাওয়া গেছে।তবে কি হলো আরুশির।বড় কিছু হয় নি তো?মনের শান্তি নিমিষেই উধাও হলো।আর অন্য কিছু না ভেবে সেই হাসপাতালের দিকে গাড়ি ছোটালো।

আরুশি এখন অনেকটা সুস্থ,জ্বর আছে ওর গায়ে।ডাক্তার বলেছেন ওকে বেশি করে খেয়াল করতে।ওকে তেমন কোনো চিন্তা না করতে দিতে আর ওকে ঠান্ডা না লাগানোর জন্য মানা করা হলো।সব নিয়ম মেনে ডিসচার্জ করা হলো ওকে।যায়ান বাদে সেখানে সবাই উপস্থিত। আয়ানও আরুশিকে একপলক দেখে যে মনে বড্ড শান্তি পেলো।

আরে মা তুমি নিজে থেকে উঠো না।আমরা আছি তো।

আরে না ছোটো মা আমি একা পারবো উঠতে।আমি ওতোটাও অসুস্থ না।নিধী কথা ওর কাছে আসার আগেই নিজেই বেড থেকে উঠে চলতে গেলে মাথা ঘুরে আবারও পরতে নেয় আরুশি তখন আয়ান ওর সবথেকে পাশে থাকায় এক ছোটে ওকে ধরে নেয়।বাহুডোরে আবদ্ধ করে আরুশিকে।আরুশিও পরে যাওয়ার ভয়ে আয়ানকে ঝাপটে ধরে তখনি আগমন ঘটে সেখানে সায়ানের।চোখের সামনে আরুশি অন্যের বাহুডোরে আবদ্ধ ব্যাপারটা অল্প পিড়া দান করলো সায়ানের হৃদয়ে।মনে জ্বালা অনুভব করলো সে।

চলবে………..

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১১

এতো জেদ কেনো তোমার?অসুস্থ অবস্থায় উঠতে গেলে কেনো?

একদম তাই।আমরা দুই মা থাকতে তুমি কেনো একা নিজেকে সামলাতে যাবে?

কথাটা বলে নিধী কথাকে নিয়ে আরুশির পাশে গেলো।আরুশি সাথে সাথেই নিজেকে আয়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলো। আরুশিকে নিয়ে বেরুবে তখনি সামনে সায়ানকে দাড়ানো দেখতে পায় সবাই।নিরব অনেকটা রেগে ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠে।

সায়ান তুমি?কোথায় ছিলে সারারাত?এখন কোথা থেকে আসছো?কি করেছো তুমি আরুশির সাথে?ও কাল রাত একা রাস্তায় কি করছিলো?

সায়ান শুকনো ঢোঁক গিলে আমতা কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তখনি আরুশি বলে উঠলো।

আসলে বড় বাবা ওর কোনো দোষ ছিলো না।আসলে ঐ জায়গায় যাওয়ার পর দেখলাম দুজনের ফোনে নেটওয়ার্ক নেই।আসতে আমাদের দেরি হতো তাই বাড়িতে ফোন দিয়ে জানানোর ছিলো।তবে নেটওয়ার্ক না থাকায় দুজনই আশেপাশে নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকি।কিন্তু জায়গায়টা আমার চেনা ছিলো না তাই আমি হারিয়ে যাই।সায়ানকেও খুঁজে পাই না।আর তারপর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকি।

আরুশির কথা কারোই হজম হলো না।আয়ানের সন্দেহটাই বেশি এখানে।

ভালো করেই জানি আরুশি মিথ্যে বলছে ওই সায়ানই কিছু করেছে হয়তো।তবে এই স্টুপিড মেয়ে একে বাঁচাতে কেনো চাইছে!

সায়ান হতভম্ব। আরুশি ওর হয়ে এতো বড় মিথ্যা আবারও কেনো বললো!নিরব ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করলো।

তুমি ওকে নিয়ে এমন নির্জন জায়গায় কেনো গিয়েছিলে সায়ান?

সায়ান আমতা আমতা করে বললো।

ওই আসলে আমি আরুশিকে নিয়ে একা একটা নিরব জায়গায় কিছু সময় কাটাতে চাইছিলাম তাই।

তাই বলে এমন জায়গায়!

নিরবের কথার আর উত্তর দিলো না সায়ান।কোনোরূপ স্থান ত্যাগ করে গেলো।

আরুশিকে নিয়ে বাড়িতে আসা হলো।ওকে রেস্ট করতে দেওয়া হয়েছে।

সায়ান মনের কোনো কোনে শান্তি পাচ্ছে না।আরুশি কেনো ওকে বাঁচালো!কেনো মিথ্যে বললো ওকে নিয়ে!কিছুই ভালো লাগছে না সায়ানের।জবাবটা তার আরুশির কাছে জানতেই হবে।তাই গেলো আরুশির রুমের পানে এগিয়ে।

আরুশির কাঁধে যে ব্যাগটা ঝুলানো ছিলো সেটা আয়ানের গাড়িতেই রয়ে যায় তাই ওটা বর্তমানে আয়ান ওকে দিতে এসেছিলো।তখনি দেখলো আরুশি কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে এগুচ্ছে। গোসল তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো আয়ান।তাই ব্যাগটা পাশের টেবিলে রেখে অল্প ধমক দিলো ওকে।

এই তুমি জ্বর নিয়ে শাওয়ার কেনো নিতে যাচ্ছো?

আপনার এতো মাথা ব্যাথা কেনো আমাকে নিয়ে?আমার ইচ্ছে আমি গোসল করবো তাতে আপনার কি?

ডাক্তার বলেছেন তোমাকে ঠান্ডা না লাগাতে মনে নেই তা?

আরে গোসল করলে গায়ের ময়লা যাবে।ওই ডাক্তারগুলো এমনিতেই প্যাকপ্যাক করে।কিছুই হবে না আমার।বরং গোসল করলে শরীর ফুরফুরে ও মন চাঙ্গা হবে।কতো কিছু করে মায়েদের চোখ ফাঁকি দিয়ে শাওয়ার নিতে যাচ্ছিলাম আমার সেই সুবর্ণ সু্যোগে আপনি এসে বালি ছুড়তে চাইছেন।সরেন তো সামনে থেকে।

আরুশি আয়ানকে সরিয়ে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত ধরে ওকে আটকালো।

তুমি গোসল করবে না ব্যাস।এখনি মায়েদের ডেকে বলবো আমি।

ইশ।এই যে ভাইজান আপনার সমস্যা কি?আমি গোসল করে গায়ের ময়লা দূর করতে চাইছি এটা তো ভালো জিনিস। আমার সবকিছুতেই আপনার সমস্যা হয় কেনো বলুন তো?

কি আমি তোমার ভাইজান?চোখমুখ কুঁচকে বললো আয়ান।

তো ভাইজান বলবো নয়তো আপু বলবো?হা হা।সরেন সরেন।

ধুলোয় গড়াগড়ি খাও যে একদিন গোসল না করলে ময়লা গায়ে লেগেই থাকবে?

তা খাই না।তবে কাল আপনি হয়তো কোলে টুলে নিয়েছিলেন নয়তো হাসপাতালে নিলেন কেমনে সে অনুযায়ী আপনার গায়ের ময়লা আমার গায়ে লেগে থাকতেই পারে।

তুমি বলতে চাইছো আমার গায়ে ময়লা লেগে থাকে সবসময়।রাগে দাঁত চেপে আয়ান বললো।

তা বলি নি।তবে সত্যতা মেনে নেওয়া আপনার কর্তব্য। হা হা।

তোমাকে না আমি….

কথাটা বলে মুখ চেপে হাসতে লাগলো আরুশি তখনি আয়ান ওর দিকে রাগে তেড়ে আসছিলো।আরুশি সেই মুহুর্তেই কাশতে শুরু করে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতে শুরু হয় তার।আয়ান অল্প অস্থির হয়ে পরে আরুশির জন্য।

আরুশি।আরুশি কি হয়েছে তোমার?

আমার ইনহেলার।আরুশি অনেক কষ্টে নিশ্বাস টেনে কথাটা বলে একটা ড্রয়ারের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো।আয়ান ছোটে গিয়ে তার ইনহেলার তাকে দিলে আরুশি তা নিয়ে অল্প শান্ত হলো, আয়ান আর অন্য দিক না ভেবে আরুশিকে কোলে উঠালো।ঠিক তখনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো সায়ান।উপস্থিত মুহুর্ত মোটেও তার সহ্য সীমানার ভিতরের ছিলো না।গা জ্বলে উঠলো তার। রাগে হাতের মুঠো যেনো নিজে থেকেই মুষ্টিবদ্ধ হলো।আয়ান আরুশিকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো।

কেমন মেয়ে তুমি!জানো তোমার শ্বাসকষ্ট,উপর থেকে জ্বর। একদিন শাওয়ার না নিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে তোমার?

এই যে আপনি এভাবে বার বার আমাকে কোলে তুলে আমার গায়ে ময়লা না লাগালে আমি কি আর স্বাদে শাওয়ার নিতান।

ফাজিল মেয়ে।

আয়ান আরও কিছু বলবে এর আগেই সায়ান এসেই ওকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বেশ দূরে সরায় আরুশি থেকে।সায়ানের আচমকা ধাক্কা মোটেও ভালো ঠেকলো না আয়ানের কাছে তাই সেও তার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সমতালে এগিয়ে গিয়ে সায়ানকে ধাক্কা দিলো যাতে সায়ানও কিছুদূর পিছিয়ে গেলো।

ইউ ফালতু আয়ান তোর সাহস কি করে হলো আমাকে ধাক্কা মারার?

তুই ফালতু সায়ান। তুই আমাকে ধাক্কা মারলি কেনো?

ওমা একি এরা আবার মোরগা লড়াই শুরু করবে না কি!কথাটা বলে আরুশি দুজনের মধ্যে চলে আসলো।দুজন রাগে দুদিক থেকে দুজনের দিকে তেড়ে আসছিলো আরুশি মধ্যে আসলে দুজন থমকালো।

এই যে আপনারা দুজনের ঝগড়া করতে হলে বাইরে গিয়ে করেন।আমার রুম থেকে বের হন।আমাকে শান্তিতে থাকতে দিন।

আমি ঝগড়া করতে আসি নি।ঝগড়া তো ওই সায়ান শুরু করেছে।চোখ উল্টে বললো আয়ান।

আচ্ছা। তবে আপনি কেনো এসেছেন মি.স্যার জানতে পারি?

গতকালকে তোমার ব্যাগ রয়ে গেছিলো আমার গাড়িতে ওটা দিতে এসেছিলাম। ওই টেবিলে রেখেছি ওটা।

হুম ঠিক আছে এবার আপনি আসতে পারেন।
এখন আপনি বলেন আপনি কেনো এসেছেন মি.সায়ান?সায়ানের দিকে না তাকিয়েই ঘুমরো মুখে কথাটা জিজ্ঞেস করলো আরুশি।

আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো আরুশি।

আয়ান রুম থেকে বাইরে বেড়িয়েও বেরুতে চাইছে না।সায়ানকে আরুশির ধারে দেখে কেমনটা লাগছে।ইচ্ছে করছে সায়ানকে টেনে রেব করতে আরুশির রুম থেকে।এদিকে আরুশি শক্ত স্বরে জবাব দিলো সায়ানকে।

দেখেন মি.সায়ান আমার আপনার সাথে কোনো কথা বলার নেই।আপনিও আসতে পারেন।

বাট আরুশি কথাটা জরুরি।

প্লিজ মি.সায়ান।যান এখান থেকে আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।

কথাটা শুনে সায়ান নিরাশ হয়ে বেড়িয়ে গেলো।যাতে আয়ানেরও মনে প্রশান্তি বিরাজ করলো তাই সেও সাচ্ছন্দ্যে বেড়িয়ে গেলো।ওদের বের করে আরুশিও শান্তির নিশ্বাস নিলো।আবারও শাওয়ার নিতে এগিয়ে গেলে দুই মা রুমে প্রবেশ করলেন আর আরুশি ধরা পরলো।

দুষ্টু মেয়ে বলেছিলাম না গোসল না করতে?

আরুশির কান ধরে ওকে বিছানায় বসালো নিধী।

উফ কি করছো ছোটো মা।লাগছে ছাড়ো।

ছাড়বো না ফাজিল মেয়ে।মানা করেছিলাম না গোসল না করতে তবে কেনো যাচ্ছিলে?ভাগ্যেস আয়ান সময়মতো আমাদের পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

ছাড়বোনা মি.স্যার আপনাকে।আমাকে বকা খাওয়ানো।মনে মনে কথাগুলো বলে মুখ ফুলিয়ে বসলো আরুশি।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো কথা।

মা রে নিজের খেয়াল নিজে না করলে কে করবে বলো।চলো এবার খাবে।

কথার এক হাতে খাবার ছিলো।ওটা নিয়ে নিধী নিজ হাতে মেখে আরুশির মুখের সামনে ধরলে দেখলো আরুশির চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। নিধী অস্থির হলো অনেকটা।

কি হলো মা কাঁদছো কেনো?

মাও ঠিক একইভাবে খাওয়াতো আমায়।

নিধী স্বযতনে মুছলো আরুশির আঁখিজল।
পাগলি মেয়ে আমার আমি কি তোমার মা না।

সাথে সাথেই আরুশি জড়িয়ে ধরলো নিধীকে,আবেগী হয়ে বললো,তুমি তো আমার ছুটোমা।আমার মা।তখনি কথা বলে উঠলো।

বা রে আমি মনে হয় মা ই না।

আরুশি নিধী দুজনই হাসলো।অতঃপর আরুশি বললো তুমি তো আমার হিয়া বড় মা বলে কথাকেও জড়িয়ে ধরলো।তিনজনই হাসলো একসাথে।তারপর কথা নিধী মিলে আরুশিকে খাইয়ে দিলো।সারাদিন ওকে চোখে চোখে রাখলো যেনো ঠান্ডা না লাগায়।

রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে ব্যস্থ হলো আরুশি।আজকের আকাশটা স্বচ্ছ। নেই কোনো ঝড়ের কালো হাতছানি।চাঁদের সাথে আকাশে আজ তারাদেরও মেলা বসেছে,মৃদ্যু বেগে বেশ ঠান্ডা হাওয়াও বইছে যা গায়ে মাখতে ভালোই লাগছে আরুশির।।অপলক চাহনিতে তাকিয়ে আছে বিস্তর আকাশের পানে।তখনি পিছনের ডাক আরুশির মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।আরুশি বলে পিছন থেকে ডাকলো সায়ান।এখানে ও আরুশির খোঁজেই এসেছে।সায়ানের ডাকে পিছন মুড়লো আরুশি।

চলবে………..