দোটানা ২ পর্ব-১২+১৩

0
423

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১২ (বোনাস পার্ট)

কি করছো এখানে এতো রাতে?সারা ঘর খোঁজেও তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।ঠান্ডা বাতাসে থেকে আবারও ঠান্ডা লাগানোর প্লান আছে না কি?

বাহ!হুট করে আমার এতো চিন্তা করার কারন জানতে পারি?তাচ্ছিল্য হেসে বললো আরুশি।

নিজেকে এতোও গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোনো মানে নেই আরুশি।আমি শুধু লজিক দেখিয়ে কথা বলছিলাম।

আপনার লজিক দেখানো শেষ হলে আপনি যেতে পারেন।

তোমার মতো সামান্য মেয়ের এতো দেমাগ দেখানো মানায় না আরুশি,খেয়ালে রেখো কথাটা।

আপনার মতো ছেলেরও আমার মতো মেয়ের পিছন ঘুরে বেড়ানো শোভা দেয় না মি.সায়ান।

ও হ্যালো।তুমি কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছো? আমি তোমার পিছন ঘুরবো এটা ভাবলেও কি করে?আমি শুধু জানতে এসেছি কেনো তুমি আমার হয়ে মিথ্যা বলেছো?

আমি চাইলেও সত্যটা বলতে পারতাম মি.সায়ান।তবে আমি চাই নি আপনার এতো হিংস্র সত্য শুনে বাবা মায়েরা কষ্ট পাক।

তবে কি শুধু উনাদের জন্যই এমন করলে?

কেনো মি. সায়ান এখানে কি আপনি অন্য কোনো কারন খুঁজছিলেন?ভুলেও তা আশা করবেন না ।সব কারন আপনি নিজের হাতেই মিটিয়ে দিয়েছেন।তাই এখন আলাদা কোনো আশা আমার কাছ থেকে রাখার কোনো মানে আমি দেখছি না।

স্বাভাবিক ভাবে কথাগুলো বলে প্রস্থান করলো আরুশি।আরুশির মুখের শেষোক্ত বাণীগুলো যেনো বুকে তীরের মতো বিধলো সায়ানের।

নিরব চিৎ হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়।মুখে একরাশ চিন্তার ছড়াছড়ি আন্দাজ করতে পারলো প্রিয়তমা স্ত্রী।পাশে এসে বসে তার মাথায় হাত বুলালো কথা।চট করে এসে মাথা রাখলো নিরব কথার কোলে,নিরবের সকল অশান্তির প্রশান্তি স্থান যে কথারই কোল।স্বামীর মাথায় হাত বুলাতে ব্যস্থ অবস্থায় মৃদ্যু হেসে বললো কথা।

কি হয়েছে নিরব সাহেব?চিন্তিত মনে হচ্ছে আপনাকে।

কি করবো বলো কথা রাণী।দুইটা ছেলে নাকে দম করে রেখেছে।আয়ান তো ভালোই ছিলো তবে হুট করে ওর মধ্যে এতো অহংকার কোথা থেকে এলো কে জানে।আর সায়ান ও তো কোনোদিক থেকেই ভালো রয়ে যায় নি।না জানি কখন শুধরাবে ও।ব্যার্থ মনে হয় নিজেকে, বাবা হয়েও নিজের ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলাম না।

আপনি চিন্তা করবেন না।আজকালকার জেনারেশনে এই বয়সে এমনটা স্বাভাবিক। দেখবেন আল্লাহর রহমতে আস্তে-ধীরে দুজনই সঠিক পথে আসবে।

জানো কথারাণী আমার মনে আল্লাহ আমার পাপের সাজা দিচ্ছেন আমায়।ওদের বয়সে না জানি কতো পাপ করেছি আমি।বাচ্ছাদের মধ্যে শুনেছি বাবা মায়ের স্বাভাব কিছুটা যায়।এই আমার ছেলে দুটো আমার মতোই হবে কে জানতো।একজন পেয়েছে আমার অহংকার,দম্য আর অন্যজনের কথা তো আর বলে লাভ নেই।

আপনি মন ছুটো করবেন না।আল্লাহ সব ঠিক করবেন।আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন ওদেরও দেখাবেন ইনশাআল্লাহ।

হুট করে খবর আসলো নিরব নিহানের বাবার ফুঁফাতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। না গেলে রাগারাগি করছেন উনারা যেতেই হবে ওখানে।বাবা মা বাড়িতে নেই তাই বাকি সবাইকে যাওয়ার জন্য জোর করছেন । আয়ান কাজ নিয়ে এতো ব্যস্ত যে ওর যাওয়ার সময় নেই।এছাড়াও অনুষ্ঠান আয়োজন শোরগোল ওর ভালো লাগে না।সায়ান এই ধরনের বিয়ে শাদীতে কখনোই যায় না।এসব নম্রভদ্র আয়োজন ওর বরাবরাই পছন্দ না।এসব নাকি ওর টাইপের না তাই যাবে না।যায়ানের পরীক্ষা চলছে তাই ওকেও নেওয়া হবে না।কিন্তু বাকি সবাই যাবে।আরুশিকে নিয়ে যেতে চাইছেন উনারা তবে আরুশি যেতে চাইলো না।উনারা কম করে হলেও তিন দিনের জন্য থাকবেন ওখানে তাই আরুশিকে কোনোরুপ আয়ান সায়ানের মধ্যে রেখে যেতে চাইছেন না।কিন্তু আরুশি যেতেই চায় ই না।বললো ওর নাকি যেতে মন চাইছে না,কিন্তু সবাই ভালোই জানে এসব অনুষ্ঠান উৎসব ওর পছন্দ। কিন্তু আরুশি কোনোমতেই যাবে না জেদ ধরেছে। সবাই অনেক চিন্তায় পরে গেলো। ওকে রেখে যাবেই বা কিভাবে, উনারা সবাই না গেলেও হবে না।নিধী থাকতে চাইলেও আরুশি থাকতে দিলো না।ও চায় না ওর জন্য উনাদের সুন্দর মুহুর্তগুলো নষ্ট হোক তবে ওর এখানে থাকারও আলাদা কারন আছে,যা ও কাউকেই বুঝতে দিলো না।এদিকে যায়ানও চাইছে আরুশি থাকুক ও থাকলে ওর পড়ালেখায়ও অনেক সহযোগিতা হয়,তাও এখন এক্সাম টাইম। না চাইতেও সবাইকে যেতে হলো তবে দুদিনের বেশি থাকবেন না উনারা বলে গেলেন আর যাওয়ার আগে আয়ানকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন।

আয়ান তুমি যথেষ্ট দায়িত্বশীল তাই কোনো দায়িত্ব কখনো তোমার কাঁধে দিতে ভয় করে না।তুমি তো জানো সায়ান কেমন।আমরা আসার আগ অব্দি আরুশির খেয়াল রেখো।

চিন্তা করো না ছুটো মা, সব বারের মতো এবারও নিরাশ করবো না তোমায় আমি।

আরুশির দায়িত্ব নিয়ে আয়ানের বেশ ভালোই লাগলো।

আজ সকালেই সবাই বেরুলেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে।দিন শুক্রবার,আয়ান বাড়িতে এমনকি সায়ানও আজ বাড়িতে।দিনের বেলা সায়ান খুব কম বাড়িতে থাকে। আয়ান জুমুয়ার নামায শেষে বাড়ি ফিরলো।সায়ান নামায পড়ে না কখনো,তবে আয়ান ঠিক সময়ে নামায আদায় করে। ভর দুপুর আয়ান এসে দেখলো ঘরের ভিতর চুপচাপ, বুঝতে পারলো ঘরের ভিতর আরুশি নেই তাই কাজের লোককে জিজ্ঞেস করলো।

মিজান চাচা আরুশি কোথায়?

জানি না বাবা।একটু আগে যায়ান বাবা আর আরুশি মাকে বাইরের দিকে যেতে দেখলাম।তখন সায়ান নিচে এসেছিলো হয়তো কোনো কাজে আয়ানের এভাবে আরুশির খোঁজ নেওয়া মোটেও ভালো লাগলো না তার।ভ্রু কুঁচকে বললো।

আজকাল তোর বড় মাথা ব্যাথা দেখছি আরুশিকে নিয়ে আয়ান?

হুম তোর কোনো সমস্যা?

নো ওয়ে…..আমার কি সমস্যা হবে।

ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেলো সায়ান।আয়ানও আর কিছু বললো না বাইরে গেলো আরুশির খোঁজে। যেহেতু সায়ান বাড়িতে তাই আরুশিকে নিয়ে কোনো চান্স নেওয়া ঠিক হবে না মোটেও।বাবা মায়েরা আরুশির দায়িত্ব যে তার ঘাড়ে দিয়ে গেছেন তাই।আয়ান আরুশির নাম নিয়ে ডাকতে ডাকতে সারাবাড়ি খুঁজছে তবে তার কোনো ধিদ্বার নাই।অবশেষে গেলো বাগানের দিকে।গিয়ে তো সে তাজ্জব। যায়ান নিচে আম কুড়োচ্ছে আর উপর থেকে কে যেনো পাকা পাকা আম ফেলছে তাদের বড় আমগাছ থেকে।আয়ান এগিয়ে গিয়ে দেখে আরুশি গাছের উপর থেকে আম পারছে। আয়ানকে দেখতেই গাছটা জোরে একটা ঝাঁকানি দিলো যাতে কয়েকটা আম আয়ানের উপর পরলে আয়ান কোনোরুপ নিজেকে বাঁচায়।আরুশি হাসতে হাসতে নেই।

হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস।আর ইউ চাইল্ড আরুশি।রাগে চোখ মুখ খিঁচে বললো আয়ান।

দিল তো বাচ্চা হে জি।হা হা হা।

কি যখন তখন পেত্নির মতো হা হা করো।গাছের উপর একদম তোমাকে পেত্নিই লাগছে নামো এবার।

আমি পেত্নি দাড়ান এখনই ঘাড় মটকাবো।বলেই গাছে আরেকটা ঝাঁকানি দিলে আরও কয়েকটা আম আয়ানের উপর পরলো।যায়ান আরুশি দুজনই হেসে লুটপুট।

দাঁড়াও এখনি মায়েদের ফোন করে বলছি।না জানি কেনো মায়েরা এই পাগল ছাগলের দায়িত্ব আমায় দিয়ে গেলেন।কথাটা বলে আয়ান নিধীকে ফোন করে তবে ফোন রিং হচ্ছে উঠাচ্ছে না নিধী।এটা দেখে যায়ান আরুশির হাসি আরও বেড়ে যায়।

দেখে নিবো তোমাকে আরুশি।

ওকে ওকে দেখে নিয়েন।আমিও আপনাকে ভয় পাই না।

আয়ান দাঁত কটমট করে সেখান থেকে চলে আসলো।এদিকে বেলকোনি দিয়ে আয়ান আরুশির সব কর্মকাণ্ড দেখছিলো সায়ান।আয়ানের আরুশিকে নিয়ে মাথা ঘামানো মোটেও ভালো লাগছে না সায়ানের।আজ আয়ান বাড়ি আছে বলেই সায়ানও বাইরে যায় নি।যেহেতু আরুশিও ঘরে।তবে ও কেনো এমনটা করছে তা সম্পর্কে এখনও সে অবগত নয়।

আম নিয়ে যায়ান আরুশি ঘরের ভিতর যাবে ঠিক তখনি বৃষ্টি চলে আসে।যায়ান ভিতরে গেলেও আরুশি গেলো না বরং বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো।

আপু ভিতরে আসো ভিজছো কেনো?তোমার অসুখ এখনও কমে নি ভিতরে আসো।

আরে হাদারাম চেঁচাস না তো বৃষ্টিতে ভিজার মজা তুই কি বুজবি।

এসেছেন উনি অভিজ্ঞ।চুপচাপ ঘরে চলো,ডাক্তারের কথা মনে নেই। ঝড়ে জ্ঞান হারিয়ে পরেছিলে গত পরশু এখন আবার বৃষ্টিতে ভিজছো মাথায় ঘিলু নামক কিছু আছে?ঘরে ঢুকো।হুট করে সামনে প্রকট হলো আয়ান,ধমক দিলো আরুশিকে।আরুশি নাক মুখ কুঁচকে ভালো মানুষের মতো ঘরের দিকে যেতে নিলো আয়ানও ভাবলো হয়তো ঘরে যাচ্ছে কিন্তু আয়ানকে অবাক করে দিয়ে বাগানের একসাইডে রাখা পানির পাইপ নিয়ে আয়ানকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো হাসতে হাসতে।

আমাকে মায়েদের কাছে বকা খাওয়ানো। এখন কেমন লাগে মি.স্যার?

ইউ স্টুপিড। তোমাকে না আমি।বলে আয়ান আরুশির কাছ থেকে পাইপটা আনতে গেলে আরুশি পাইপ ছেড়ে ছোটে পালালো।আয়ান পাইপ নিয়ে আরুশিকে ভিজাতে লাগলো।বৃষ্টিতে ভিজছে দুজন এদিক ওদিকে দৌঁড় ছোট করছে,আরুশি আয়ানের সাথে লাগছে আর আয়ান ক্ষেপে গিয়ে ওর পিছন ছোটছে।যায়ান ওর ফোন বের করে ওদের এই মুহুর্তেগুলো ভিডিও করতে শুরু করেছে।এদিকে সায়ান নেমে এসেছে অনেক আগেই।বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আয়ান আরুশির কান্ড দেখছে আর জ্বলছে।পারছে না সহ্য করছে।ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে আয়ানের মাথা ফাঁটিয়ে দিতে ওর।কিন্তু কোনো কারন ছাড়া ও তা কেনোই বা করবে।ভিতরের জড়তা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে সায়ান বার বার।

চলবে………..

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৩

আয়ান আরুশির পিছন ছোটছিলো ওকে ধরবে বলে।অবশেষে ওকে ধরে ফেললো আয়ান।তবে হুট করে ধরে টান দেওয়ায় আরুশি আয়ানের অনেকটা পাশাপাশি চলে আসলো। দুজন একদম কাছাকাছি চোখে চোখ পরলো দুজনের।অল্পক্ষণের জন্য যেনো মুহুর্ত ওদের সেখানেই থমকালো।একে ওপরের চোখে হারালো দুজন।বৃষ্টি যেনো দুজনের মনে চলমান সেই ক্ষনের আচমকা অনুভুতিতে আরও সারা জাগালো।সুন্দর একটা ক্ষণ তৈরি হলো সেখানে।দৃশ্যটা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তা ক্যামেরা বন্ধি করলো যায়ান।সায়ানের চোখে যেনো কেউ গলন্ত সিসা ঢাললো।অতিরিক্ত রাগে চিৎকার করে উঠে বললো।বাড়িটাকে সিনেমার সেট মনে করা হচ্ছে না কি?ন্যাকামোতে আর বাঁচি না।
কথাটা বলে সায়ান অতিরিক্ত রাগ নিয়ে হনহনিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।সায়ানের কথায় দুজন হকচকিয়ে একে ওপরকে ছেড়ে দেয়।আরুশি জড়তা কাটিয়ে নেয় অতি জলদি অতঃপর পাশ থেকে পানির পাইপ নিয়ে আবারও আয়ানকে ভিজাতে শুরু করে।

সায়ান রুমে এসে অতি রাগে দেয়ালে ঘুষি মারতে শুরু করে পর পর অনেকগুলো।অতিরিক্ত ঘুষির ফলে হাত ছিলে যায় তার অনেকাংশ তাও তার উক্ত কার্য চলমান। রাগ তার কমছেই না। আরুশি আয়ানের এতোটা পাশে ছিলো।দুজনের ঘনিষ্ঠ ওই মুহুর্ত কোনোমতে চোখের সামনে থেকে সরছে না সায়ানের।তবে নিজেকেও শান্তনা দিতে সক্ষম হচ্ছে না।আরুশি আয়ানের সাথে ছিলো তাতে তার কি?ওর মতো রাস্তার মেয়েকে নিয়ে সায়ান চৌধুরীর কেনো এতো মাথা ব্যাথা হবে।বিষয়টা কোনো মতেই নিজেকে বোঝাতে পারছে না সায়ান।ঘুষি মারতে মারতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসলো সায়ান তবুও নিজেকে শান্ত করতে ব্যার্থ হলো।তাই রাগে হাতের কাছের কাচের পানির জগটা ছুড়ে মারলো দেয়ালে যা কয়েক টুকরো হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে পরলো।

আয়ানকে অনেক নাকানিচুবানি খাইয়ে ঘরে চলে আসলো আরুশি হাসতে হাসতে।আয়ান ভিজে কাক।রাগে আগুন হয়ে ঘরে গেলো ফ্রেস হতে।যায়ান অনেক অবাক হলো আয়ানের কান্ডে।আয়ান অনেক গম্ভীর আর রাগি স্বভাবের। কখনো কেউ তাকে এভাবে প্যারা দেওয়ার কথা ভাবতেও পারে না।সে কখনোই এভাবে কারো জ্বালাতন সহ্য করবে না তবে আরুশির সাথে যেনো ও সবদিক থেকে মানিয়ে নিচ্ছে।আয়ান বৃষ্টিতে বেরুনোর কথা ভাবতেও পারে না কখনো।কিন্তু আজ আরুশির জন্য বৃষ্টিতে যথারীতি দৌঁড়ছোট করেছে।

এশার নামাজ শেষে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসেছে আয়ান।ঠান্ডা লেগে গেছে ওর।হাঁচি দিচ্ছে আর কাজ করছে।মাথাটাও প্রচুর ধরেছে হয়তো জ্বর আসবে তাও কাজ করে যাচ্ছে। তখন রুমে প্রবেশ করলো আরুশি।কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে আয়ান দেখতে পেলো আরুশি এসেছে রুমে।

তুমি এখানে?

না আমি না।আমার আত্না এসেছে।

সোজা উত্তর দিবে না কখনো তাই না?

না?

জ্বর আসে নি তো তোমার?

আমার ইমিউনিটি আপনার মতো কম না যে অল্প বৃষ্টিতে ভিজতেই জ্বর আসবে।

ইমিউনিটি কার কতোটুকু তা আমার ভালোই জানা হয়ে গেছে।যাও এখান থেকে কাজ করতে দাও আমায়।

আরুশি আয়ানের কথায় কান না দিয়ে ওর কপালে হাত রাখলো।দেখলো ওর শরীর গরম হয়ে আছে।

এই তুমি আমার গায়ে হাত দিচ্ছো কেনো?যাও এখান থেকে।

না গেলে কি করবেন শুনি?চলেন কাজ ছাড়েন আর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরেন আমি ডাক্তার ডাকি।

তোমার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আমি ঠিক আছি তুমি যাও।

উঠেন বলছি।

আরে যাও বাবা মাথা খাচ্ছো কেনো?

প্রথমত আমি আপনার বাবা না।আর দ্বিতীয়ত আমি মানুষের মাথা খাই না।এখন উঠেন,জ্বর এসেছে এখন কোনো কাজ করবেন না আপনি সোজা কথা।চলেন বিছানায়।

উফ আরুশি আমি কোনো বাচ্চা না যে অল্প অসুখে বিছানায় ভর্তি হতে হবে।যাও তো কাজ আছে আমার।

আপনি এখনি উঠবেন ব্যাস।

আমি উঠবো না।এখনি যাও নইলে।

নইলে কি নইলে কি।আমি ভয় পাই না আপনাকে।কথাটা বলেই আরুশি আয়ানের হাত থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে বন্ধ করে দিলো ওটা।আয়ান অল্প রেগে বললো।

তুমি ওটা বন্ধ করলে কেনো আরুশি? আমার কাজ আছে ইম্পোর্ট্যান্ট। দাও ওটা আমাকে।

একদম পাবেন না আপনি ওটা।

দেখো আরুশি কেউ কখনো আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করাতে সক্ষম হয় নি আমাকে।এতোবড় স্পর্ধা কখনো কেউ দেখায়ও নি।তাই তুমিও দেখিয়ো না।পরিণাম ভালো হবে না।

পরিণামের ভয় আমার নেই।চলেন এবার চুপচাপ।কথাটা বলে আয়ানের হাত ধরে টেনে আরুশি ওকে বিছানায় নিয়ে বসালো তারপর ধাক্কা দিয়ে শুয়ালো।

কি করছো এসব তুমি?

আপনার চিকিৎসা। তারপর একটা থার্মোমিটার এনে আয়ানের মুখে দিলো।

ওমা আপনার পুরো ১০১ ডিগ্রি জ্বর।

এখানেই শুয়ে থাকুন আমি ডাক্তার ডাকছি।

তারপর আরুশি ডাক্তার ডাকালো।আয়ান কোনো মতেই আরুশির হাত থেকে রেহাই পেলো না।ডাক্তার আয়ানকে দেখে ওষুধ দিয়ে গেলেন।আরুশি খাবার এনে আয়ানকে খেতে দিলো।

খাবো না খিদে নেই।

খেতেই হবে আপনাকে।আর না খেলে আমি খাইয়ে দিবো জোর করে।দেই খাইয়ে?

এতোক্ষনে আরুশির জোরাজোরি সম্পর্কে ভালো ধারনা হয়ে গেছে আয়ানের তাই আর ওর সাথে জেদ দেখাতে গেলো না খেতে লাগলো কিন্তু খাবারের মধ্যে হুট করে বিষম খেয়ে গেলো।আরুশি ছোটে গিয়ে পানি নিয়ে আসে ওর কাছে।তাকে খেতে দেয়।

পানি পান করিয়ে খাবার খাওয়া শেষ হলে আরুশি উঠে আয়ানের জন্য ওষুধ খুলতে শুরু করে পাশের টেবিলে দাঁড়িয়ে। আয়ান ওর দিকে অপলক দৃষ্টি স্থাপন করে তাকিয়ে রইলো।কেনো যেনো আরুশির ওর প্রতি এই যত্ন অনেক ভালো লাগছে আয়ানের।কখনো কারো জোরাজুরিতে আসে নি আয়ান।তবে আরুশির জোরাজুরিতে আবদ্ধ হতে মোটেও খারাপ লাগছে না তার।বরং ভালোই লাগছে আরুশির ওর উপর এই অধিকার ফেলানো।আরুশি ওষুধ হাতে নি একটু ধমকের স্বরে কথা বললে ঘোর কাটে আয়ানের।

এই যে মি.এ্যরোগেন্ট হঠাৎ করে কোথায় বিলীন হলেন আপনি?

এই মেয়ে এতো চেঁচাও কেনো তুমি।আর আমাকে এ্যরোগেন্ট বললে কেনো?

তো আপনি যা তা তো বলবোই।হা হা।আমার তো মনে হয় এই আপনার যে অতি অহংকার ওগুলোই এখন জ্বর হয়ে মাথায় ভর করেছে।

হোয়াট তুমি বলতে চাও আমি অহংকারী?

হায় রে এতো সময় ধরে কি বলে যাচ্ছি আমি।কানে কম শুনেন আপনি?জ্বর থেকে বধীরতার সমস্যাও ধরেছে না কি আপনাকে?

তোমাকে আ….

হয়েছে এবার পানি দিয়ে গিলে ফেলেন এগুলো।

আয়ান আমি বলার জন্য আ করলে আরুশি মুখে তার ওষুধগুলো দিয়ে দিলো।আয়ান আর রাস্তা না পেয়ে পানি দিয়ে গিলে নিলো ওগুলো।

হয়েছে এবার শুয়ে পরেন।বলে আরুশি ওকে ধাক্কা দিয়ে আবারও শুইয়ে আয়ানের উপর চাদর দিয়ে দিতে লাগলো।আয়ান ওকে দেখে আবারও একপ্রকার ঘোরে চলে গেলো।মনে মনে ভাবতে লাগলো।

আরুশি আমার এতো খেয়াল কেনো করছে?জিজ্ঞেস করবো ওকে?যেই ভাবা সেই কাজ করলো।জিজ্ঞেস করেই বসলো।

তুমি আমার এতো খেয়াল কেনো করছো আরুশি?

সোজা উত্তর দিলো আরুশি।

আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন।আমার এতো খেয়াল করছেন।তাই আমারও দায়িত্ব আপনার খেয়াল করা।

শুধু কি দায়িত্ববোধ থেকেই এতো কিছু?

না।ভালোবাসি আপনাকে তাই।

কথাটা শুনে যতোটা অবাক হলো আয়ান ততোটাই ভালোলাগা কাজ করলো তার ভিতরে।যেনো এই কথারই আশায় ছিলো তার মন।পরক্ষণেই আরুশি খিলখিল করে হেসে উঠলো।

আপনিও না মি.এ্যরোগেন্ট আমি আপনাকে ভালোবাসতে যাবোই বা কোন দুঃখে আর ভালোবাসলে কি তা আপনার কাছে ভালো ঠেকবে।আমি না আবার রাস্তার মেয়ে।এমন মেয়ের ভালোবাসা আপনার কাছে তো ধুলোর সমান তাই না?হা হা।আপনি শুয়ে পরেন কিছু দরকার পরলে আমাকে ফোন করবেন।আর হ্যাঁ কোনো কাজ করবেন না এখন আর।

কথাগুলো বলে আরুশি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আয়ানের মনে নিরাশা ঘর করলো।আরুশি নিজেকে রাস্তার মেয়ে বললো।নিজেকে এতোটা নিচু ভাবলো ওর কাছে।তবে এই ভাবনাটা তো আরুশি নিজে থেকে আনে নি আয়ানই তো এই ভাবনা মাথায় রাখতে ওকে বাধ্য করেছে।আরুশির সত্যতা জানার পর ওকে ওর নাম থেকে বেশি সস্তা মেয়ে আর রাস্তার মেয়ে বলে ডেকেছে আয়ান আর আজ যখন আরুশি তা মেনে নিলো তখন আয়ান কেনো মন থেকে খুশি হতে পারছে না।কেনো ওর খারাপ লাগছে বুঝে উঠতে সক্ষম হতে পারছে না আয়ান।

সায়ান সব কিছু খেয়াল করছে আয়ান আরুশির কর্মকাণ্ড। আরুশির আয়ানের এমন খেয়াল করা মেনে নিতে পারছে না।না পারছে সইতে না পারছে কিছু করতে।নিজেকেও সামলাতে পারছে না,এমনিতে রুম থেকে বের হয় না তেমন বাড়িতে থাকলে কিন্তু আরুশিকে যখন থেকে আয়ানের সাথে দেখেছে তখন থেকে রুমেই থাকছে না ওদের উপর নজর রাখতে বাইরেই ঘোরপাক করছে।আয়ানের জন্য আরুশিকে খাবার নিয়ে যেতে দেখে ওর গায়ের জ্বালা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়।যার ফলস্বরূপ আয়ানের রুমের বাইরেই ঘোরপাক করতে শুরু করে।আর আরুশি রুম থেকে বেরুতেই ওর হাত ঝাপটে ধরে টেনে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে।
আরুশি নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে আর বলছে।

কি করছো সায়ান?ছাড়ো আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

সায়ান কোনো উত্তর না দিয়ে আরুশিকে টেনে নিয়ে গিয়ে রুমে ছিটকে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিলো।

চলবে……….