দোটানা ২ পর্ব-১৪+১৫

0
555

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৪

আমাকে এখানে কেনো এনেছো সায়ান!আর দরজা কেনো বন্ধ করলে!

আরুশির কোনো উত্তর না দিয়ে অতিরিক্ত রাগে সায়ান তেড়ে গিয়ে আরুশির থুতনিতে চেঁপে ধরে দাঁত কটমট করে বলতে শুরু করলো।

রাস্তার মেয়ে তোর খুব লোভ না?বড় ঘরের টাকাওয়ালা সুন্দর,স্মার্ট ছেলেরাই তোর মতো মেয়েদের স্বীকার হয় তাই না?আমাকে তো হাত করতে পারছিস না তাই এখন আয়ানকে পটাতে চলেছিস।

সজোরে ধাক্কা দিয়ে সায়ানকে নিজের ধার থেকে অনেকটা সরিয়ে দেয় আরুশি।তারপর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে লাগে।

হ্যাঁ চলেছি পটাতে।তাতে তোমার সমস্যা কি শুনতে পারি সায়ান?কেনো জ্বলছে তোমার?আসলে জানো কি সায়ান যে যেমন অন্যকেও ঠিক তেমনই ভাববে,আর তোমার মতো মানুষকে আমি না তো নিজের বিষয়ে কিছু আলাদা করে জানাতে চাই না বোঝাতে।ইউ নো হোয়াট ইউ আর নট ইমপোর্টেন্ট ফোর মি।

কথাটা বলে আরুশি যেতে নিলে তাকে এবার দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরলো সায়ান।আরুশির হাত দুটো ওর হাতের মুঠোয়। তখন সায়ানের ভাঙা জগের টুকরোগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও দু-এক টুকরো রয়ে গেছিলো হুট করে সায়ান আরুশিকে দেয়ালে চেঁপে ধরলে এক টুকরো আরুশির পায়ে ঢুকে গেলো।আরুশি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো তাতে।

আহ মা….কি করছো ছাড়ো সায়ান আমার লাগছে। আমার পায়ে কাচ ঢুকেছে ছাড়ো।

লাগুক। তুই মরে গেলেও আমার কিছু যায় আসবে না।তোর মতো নোংরা মেয়ের মরা উচিত। তোকে তো ইচ্ছে করছে।

কথাটা আর পুরাতে দিলো না আরুশি কোনোরূপ সায়ানকে ছাড়িয়ে আবারও তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরালো।আর বলতে লাগলো।

কি ইচ্ছে করছে সায়ান।মারতে আমায়?রেপ করতে আমাকে?আর কি করতে মন চাইছে বলো?আর কি বা করতেই পারবে সায়ান তুমি?আর কি করার আছে তোমার?তোমার মতো হিংস্র মানুষের কাছ থেকে আর কি আশাই বা করা যায় বলো?জানো আমার আজ সত্যি নিজের উপর ঘৃণা হয় যে আমি কি দেখে তোমার মতো হিংস্র অধমকে ভালোবেসেছিলাম।ছিঃ সায়ান তুমি এতো নিকৃষ্ট যে তোমাকে এখন আমার ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয়।ছিঃ

কথাগুলো বলে আরুশি দরজা খুলে চলে যায়।পায়ে কাচ ঢোকার দরুন কোনোমতে হেঁটে রুমে যায় সে।এদিকে আরুশির কথাগুলো শুনে সায়ান নিস্তব্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে কতক্ষন। আরুশির কথাগুলো বার বার ওর কানে বাজছে।আরুশি ওকে ঘৃণা করে কথাটা বুকে বড্ড পীড়া দান করছে জানা নেই তার মানে।তবে বিষয়টা কোনোমতে মেনে নিতে পারছে না।রাগে যেনো গা এবার জ্বলেই যাবে।তেড়ে এসে আয়নাতে সজোরে একটা ঘুষি মারে রাগ দমাতে না পেরে যাতে সাথে সাথে আয়না ভেঙে কয়েকটুকরো কাচ সায়ানের হাতে ঢুকে কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার।আরুশির বলা কথা মন থেকেই সরাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আরুশি কোনোরূপ রুমে এসে পায়ের কাচ টা বের করে পায়ে অল্প ওষুধ লাগিয়ে শুয়ে পরে।কিন্তু ঘুম আসছে না তার।এদিক ওদিক গড়াগড়ি করে উঠে পরে।ভাবলো আয়ানকে একবার দেখে আসুক যেহেতু ওর জ্বর। কোনোকিছুর দরকার পরতে পারে।গেলো তার রুমে।এদিকে সায়ান অনেক্ষন শান্ত হয়ে বসার পর তার রাগ অনেকটা কম হলো,হাতে ব্যান্ডেজ করছে নিজে নিজে।হঠাৎই নজর গেলো ওর রুমের ফ্লোরে রক্তের দাগ লেগে আছে।ও খেয়াল করলো আরুশি তখন বলেছিলো ওর পায়ে কাচ ঢুকেছে যাওয়ার সময় আরুশিকে খুঁড়িয়ে যেতেও দেখেছে। বিষয়টা ভেবে সায়ানের মন খচ করে উঠলো।ইচ্ছে হলো আরুশিকে দেখতে যেতে।অন্যকিছু না ভেবে উঠে গেলো আরুশির রুমের পানে ঠিক তখনি দেখলো আরুশি আবারও আয়ানের রুমে ঢুকছে।মাথায় আবারও রাগ চটকালো সায়ানের।রেগে আগুন হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো।

তুই শুধু অবহেলা আর ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য রাস্তার মেয়ে।তোকে আমি কোনোমতেই ছাড়বো না।

আরুশি আয়ানের রুমে ঢুকে দেখলো আয়ান কি সব যেনো বিড়বিড় করছে।

আরুশি…. আরুশি যাস নে।থাক না আমার পাশে।যাস নে আরুশি।

আয়ানের এমন কথা শুনে অবাক হলো আরুশি।মনে উঠলো হরেক প্রশ্ন।

এই আয়ান স্যার জ্বরের ঘোরে কোন আরুশির নাম নিচ্ছেন!অবশ্য আমার নাম তো নিচ্ছেন না তাতে আমি শিওর। তবে কে সে?

আরুশি এগিয়ে গেলো আয়ানের কাছে।জ্বরে একপ্রকার কাঁপছে সে।আরুশি গিয়ে ওর গায়ে হাত দিলে দেখলো জ্বরে একদম পুড়ে যাচ্ছে আয়ান।আরুশি বড় একটা কম্বল এনে আয়ানের গায়ে দিলো যাতে তার কম্পন থামলো অনেকটা কিন্তু মুখের বাণী থামে নি।

আরুশি যাস নে আরুশি।আমার পাশে থাক।যাস নে প্লিজ।

আরুশি বুঝতে পারলো অনেক প্রিয় কেউ না হলে কেউ জ্বরের ঘোরে বলতে গেলে অজ্ঞান অবস্থায় তো আর কারো নাম এভাবে নিতে পারে না।তাকে হারানোর ভয় পেতে পারে না।এর মানে এই আরুশিটা আয়ানের অনেক কাছের এবং প্রিয় কেউ হবে।অনেক মায়া হলো আরুশির মনে আয়ানের জন্য তাই পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো ঠিক তখনি আয়ান আরুশির হাত টেনে নিয়ে নিজের বুকের মধ্যে গুজলো।

আরুশি যেয়ো না তুমি আমার পাশে থাকো যেয়ো না দয়া করে।

আমি যাবো না কোথাও আপনি ঘুমান আমি এখানেই আছি।

আয়ানকে অল্প শান্ত করার জন্য এমনটা বললো আরুশি।যা কাজ করে গেলো।আয়ানেরও যেনো মনে হলো ওর ছোট্ট আরুশি ওর কাছে বসে আছে সে শান্তনা যে ওর মন ছুঁয়ে গেলো।অতঃপর ঘুমিয়ে পরলো সে।অনেকক্ষন পর আরুশি খেয়াল করলো আয়ানের জ্বর অনেকটা নেমে গেছে কিন্তু আয়ান ওর হাত ছাড়ছে না।অনেক কষ্টে আরুশি আয়ানের থেকে তার হাত ছাড়ালো।তারপর উঠে চলে যেতে চাইলে মনে হলো ও আয়ানকে বলেছিলো ও যাবে না।তাই আর গেলো না।ওখানের একটা চেয়ারে বসে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো।ক্ষনিকে ঘুমিয়ে গেলো। ফজরের আযানে ঘুম ভাঙলো আরুশির উঠে ওযু করে আয়ানকে দেখতে গেলো।আয়ানের জ্বর এখন নেই গায়ে হাত দিয়ে মনে হলো আরুশির।রাতে ওষুধ খাওয়ানোতে সেড়ে গেছে জলদি।প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে চলে গেলো আরুশি।

ঘুম থেকে উঠলে আরুশি নাস্তা এনে জোর করিয়ে আয়ানকে তা খেতে বাধ্য করলো। তারপর ওষুধ খাওয়ালো।সবকিছু দেখছে সায়ান।শুধু দাঁতে দাঁত চেঁপে সহ্য করছে সব। আরুশিকে সে ছাড়বে না ওর জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা সে করে নিয়েছে তাই এখন শান্ত আছে।আরুশি আবারও আয়ানের রুমে এসে দেখলো আয়ান রেডি হচ্ছে অফিসের জন্য।

আরে এই যে মি.এ্যরোগেন্ট আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

বিয়েতে।

ও মা কার বিয়েতে?

আর ইউ স্টুপিড অফিসের কাপড় পরে আমি বিয়েতে যাবো?বিরক্তি নিয়ে বললো আয়ান।

তবে এমন কথা বলে মানুষকে কনফিউজ করেন কেনো?

বোকার মতো প্রশ্ন করলে আর কি করবো।এখন সামনে থেকে সরো আমি অফিস যাবো।

অফিস যাবেন মানে?জ্বর নিয়ে কিসের অফিস?

ও হ্যালো আমি ২ বছরের বাচ্চা না যে জ্বর এসেছে বলে মা বাবার কোলে বসে দিন কাটাবো।এতো কেয়ার দেখাতে এসো না আমাকে সরো রাস্তা থেকে।

আরে কোথায় যাচ্ছেন? শুনেন আমার কথা।

আরুশির কথায় পাত্তা না দিয়ে আয়ান বেড়িয়ে গেলো ঘরের বাইরে।আরুশির ওর সাথে ছুটলো।

আয়ান গাড়িতে চড়তেই আরুশি অপর পাশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

এই তুমি আমার গাড়িতে উঠলে কেনো?

আমিও যাবো অফিস।

তা বাড়িতে অন্য গাড়ি তো আছে সেগুলোতে যাও আমার গাড়িতে চাপলে কেনো?

আপনি জ্বরের ঘোরে যদি মাতাল হয়ে এক্সিডেন্ট করেন। তাই দেশের জনগণের রক্ষার্থে আমার এই পদক্ষেপ। এবার গাড়ি ছাড়েন।

আমি জ্বরের ঘোরে এক্সিডেন্ট করি না করি তোমার মতো জোকার সাথে থাকলে নিশ্চিত করবো। নামো গাড়ি থেকে।

ওকে আমি এখনই ছুটোমাকে ফোন করে বলছি উনি যার উপর আমার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সে আমার দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যই না।

তোমার ডাউট আছে আমার যোগ্যতা নিয়ে?

হ্যাঁ অবশ্যই আছে। এতোই যদি যোগ্য হতেন তবে মা বাবাদের অনুপস্থিতিতে আমাকে সবসময় খেয়াল করে রাখতেন,আমাকে সাথে করে অফিস নিয়ে যেতেন, সাথে করে আনতেনও।তবে আপনি এমন কিছুই করছেন না।ফালতু দায়িত্ববান আপনি।এখনই ফোন করছি ছুটো মাকে।

কথাটা বলে আরুশি নিধীকে কল করলে ফোন কেরে নিয়ে কল কেটে দিলো আয়ান তারপর ফোনটা আরুশির হাতে দিয়ে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললো।

ইউ নো ইউ আর জাস্ট লাইক এ হেডেইক। চুপচাপ বসো আমি নিয়ে যাচ্ছি।যতোসব।

আয়ান গাড়ি ছেড়ে দিলে আরুশি ফিক করে হেসে পরলো।

আয়ান আরুশিকে একত্রে যেতে দেখলো সায়ান।

ভুলে গেছো না নিজের অবস্থান নোংরা মেয়ে।চিন্তা করো না তোমাকে তোমার অবস্থান আঙুল দিয়ে আজ আবারও দেখিয়ে দিবো।

চলবে…….

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১৫

আজ আয়ান আরুশির সাথে কোনো লাগালাগি করে নি।বরং ওর সাথে সেরকম নম্র ভদ্র ব্যবহার করেছে যেমনটা ও অফিসের বাকি কর্মচারীদের সাথে করে থাকে।দিনটা ভালোই গেলো আরুশির। অফিস আওয়ার শেষ আয়ান ভিতরে এখনও কিছু কাজ করছে আরুশিকে বলেছে থাকতে ও সাথে করে নিয়ে যাবে তাই আরুশি বেড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছে ঠিক তখনি বাড়ি থেকে গাড়ি আসলো আরুশির জন্য।আরুশি অবাক হলো কারন ও বাড়ি থেকে কোনো গাড়ি আনায় নি।কাউকে আসতে বলে নি।

ম্যাডাম চলেন।

রিয়াজ ভাইয়া আপনি?আমি তো আজ বাড়ি থেকে গাড়ি আসার জন্য বলি নি তবে আপনি কেনো এলেন?

আসলে নিধী ম্যাডাম যাওয়ার সময় বলে গেছেন আমি যেনো রোজ আপনাকে অফিসে নেওয়া আনা করি।

হুম।ঠিক আছে।
তবে আজ আপনি চলে যান বাড়িতে আমি আয়ান স্যারের সাথে আসবো উনি বলেছেন থাকতে।

না ম্যাডাম আয়ান স্যারই তো আমায় একটু আগে ফোন দিয়ে বললেন আপনাকে এসে নিয়ে যেতে উনার ফিরতে দেরি হবে।

কথাটা শুনে আরুশির কেমন জানি লাগলো।তাই বলে উঠলো।

আমি আয়ান স্যারকে বলে আসি।আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আপনাকেই বা কেনো ডাকবেন উনি?

ঠিক আছে ম্যাডাম যান।তবে খারাপ লাগলো আপনার আমার উপর বিশ্বাস নাই।এতো বছর ধরে চৌধুরী বাড়ির ড্রাইবার কিন্তু কখনো এরকম অবিশ্বাস কেউ করে নি আমাকে।গরীব বলেই আজ অবহেলিত।

কথাটাতে খারাপ লাগলো আরুশির।ড্রাইবার তো বাড়িরই, এখানে অবিশ্বাসের কি আছে।তাছাড়া এমনও হতে পারে আয়ান ওকে সাথে নিতে চায় না ও জ্বালাতন করবে বলে ওকে বলে নি তা।তাই আর বেশি না ভেবে গাড়িতে উঠে পরলো আরুশি।ড্রাইবারও যটফট গাড়ি ছাড়লো।

গাড়িটা বাড়িতে না গিয়ে ঠিক একটা ক্লাবের সামনে এসে থামলো।আরুশি অবাকত্ব নিয়ে রিয়াজকে জিজ্ঞেস করলো।

আপনি আমাকে বাড়ি না নিয়ে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন রিয়াজ ভাইয়া?

নামেন ম্যাডাম দয়া করে।
রিয়াজ নেমে এসে আরুশির পাশের দরজা খুলে বললো।

আমি নামবো কেনো এখানে আজব তো?

নামেন না ম্যাডাম, নামলে বলবো।

আরুশি নামলো রিয়াজের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে। রিয়াজ ভিতু কন্ঠে বললো।

আমাকে ক্ষমা করবেন ম্যাডাম।আমি আপনাকে সায়ান স্যারের কথায় মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছি।আসলে আপনাকে এখানে না আনলে আমাকে এই চাকরি থেকে বের করে দিতেন উনি আর এই চাকরি আমার জন্য অনেক বড় কিছু। এটা আমি হারাতে পারবো না।আমাকে ক্ষমা করবেন।কথাটা বলে রিয়াজ চট করে গাড়িতে উঠে চলে যায়।আরুশি হতবাক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে তখনি কয়েকটা মেয়ে এসে ওকে টেনে ভিতরে নিয়ে যেতে শুরু করে।আরুশি নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

কি করছেন আপনারা ছাড়েন আমায়।ভিতরে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন?

আরে আরুশি আপা চলেন ভিতরে।আপনার জন্যই তো আজকের সব আয়োজন।

আরুশিকে টেনেটুনে ভিতরে নিয়ে গেলো মেয়েগুলো তারপর ঠিক সায়ানের সামনে এনে ছাড়লো।সায়ান তখন অনেকগুলো মেয়েদের ভিরে ডান্স করছিলো আরুশিকে দেখে কাউকে ইশারা করলে সে মিউজিক অফ করে সায়ানের হাতে মাইকটা ধরিয়ে দিলো।যার মানে মিউজিক বক্সে এখন সায়ানের কথা শুনা যাবে যা এখানে উপস্থিত সবার কান অব্দি পৌঁছাবে।সায়ান বলতে শুরু করলো এবার।

হট বেবিস এন্ড ডুডস এটেনশন প্লিজ।
সবাই মনোযোগ দিলো সায়ানের কথায় এতে।সায়ান আবারও বলতে লাগলো।

আপনারা সবাই জানতে চেয়েছিলেন সায়ান চৌধুরী কাকে বিয়ে করতে চলেছে।ওর বাবা ওর জন্য কোন মেয়েকে বেঁচে নিলেন।তবে সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ আজ।ইনিই এলেন তিনি যিনি আমার বউ হবার স্বপ্ন দেখেন।যাকে বলে ছেড়া কাথার নিচে থেকে লাখের স্বপন দেখা।এসব রাস্তার মেয়েদের এমন স্বপন থাকাটা তো বড় কিছু না কি বলো সবাই।

রাইট ডুড। সবাই জোরসে বলে উঠলো।সায়ান আবারও বললো।

আরে সবাই জানো উনি তো আবার ব্লেকমেইলও করেন।আর একজনে না হলে অন্যজনের উপর ট্রাইও করেন।

ও মা বলো কি বেবি।অন্যজনের উপর ট্রাই করে মানে কি?ও মা তার মানে এসব সতিত্বের ঢং করে তবে ফস্টিনস্টি তার জারি আছে।

হ্যাঁ সুইটি বেবি।তাই ভাবলাম লুকিয়ে ফস্টিনস্টি করে কি লাভ এখানে যার সাথে ইচ্ছে ফস্টিনস্টি করুক।আমাদের মতো করে যাতে টাকা ও পাবে আর হয়তো স্ট্যাটাসও।স্টার্ট দ্যা মিউজিক।

সায়ানের কথায় আবারও মিউজিক অন হলো আর সবাই নাচতে মগ্ন হলো।আরুশির কাছে মোটেও কিছু অবাক লাগলো না সায়ান কতোটা নিচ তার যে আর জানার বাকি নেই।আরুশি আর কিছু না ভেবে ওখান থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলে চারদিক থেকে ছেলেরা ওকে ঘিরে ডান্স করতে শুরু করে ও বেরুতে পারছে না এদিকে সায়ান ওকে দেখিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে ডান্স করছে আর আড়চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে। এসব কিছু ওর আরুশিকে জ্বালানোর প্লান।নাচতে নাচতে সায়ান একটা মেয়ের সাথে একটা রুমের দিকে যেতে থাকলো আরুশিকে দেখিয়ে এদিকে আরুশি ভয় পেয়ে গেছে বেরুনোর কোনো রাস্তা পাচ্ছে না।ছেলেগুলো ওর সাথে একটু বেশি ঘেঁষাঘেঁষি করছে।হুট করে কেউ একজন আরুশির কোমরের হাত ছোঁয়ায় খারাপভাবে যাতে আরুশির অনেক রাগ হয় আর হাত তুলেই তার গাল বরাবর কঢ়া একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।লোকটা আর কেউ না মিরাজ।থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে ঘাড় কাত করে শয়তানি হাসি দিয়ে আরুশির দিকে তাকিয়ে বললো।

তেজ অনেক না তোর মধ্যে। চল আজ তোর তেজ মেটাবো।

কথাটা বলে মিরাজ আরুশিকে একটা রুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে।আরুশি ঠিক তখনি ওর হাত কামড়ে ছুটে পালায়।বাইরের দিকে পালানোর রাস্তা না পেয়ে ভিতরে দিকে লুকোনোর রাস্তা খুঁজে মিরাজ ওর পিছনে আছে।আরুশি একটা ছুটো রুমে লুকিয়ে আয়ানকে ফোন করতে শুরু করে।বর্তমানে আয়ান ব্যাতীত ওর আর কোনো আশা নেই।

এদিকে আয়ান বেরিয়ে এসে বাইরে আরুশিকে না পেয়ে আশেপাশে তার খোঁজ নেয় সে নেই।অফিসে খোঁজ নিলে জানতে পারে আরুশি অনেক আগে বেড়িয়েছে।

কি হলো আরুশি গেলো কোথায়।এভাবে না বলে তো যাবে না যেখানে আমি বলেছি ওকে নিয়ে যাবো।না একটা কল করি ওকে।ওই মেয়েটাকে নিয়েও পারি না। না জানি কোথায় দৌঁড় ঝাপ করছে।

আয়ান কল করতে গেলে আরুশির কল আসে।আয়ান কল উঠিয়ে কিছু বলবে এর আগেই অপর দিক থেকে আরুশির কাঁপা ভিতু কন্ঠ ভেসে আছে।

স্যার আমাকে বাঁচান।সায়ান ড্রাইবার রিয়াজকে দিয়ে মিথ্যে বলিয়ে আমাকে একটা ক্লাবে(ক্লাবটার এড্রেস দিয়ে) নিয়ে এসেছে আর এখানে একটা ছেলে আমার সাথে খারাপ করার চেষ্টা করছে।আমাকে বাঁচান আপনার আল্লাহর দোহাই লাগে।আরুশি আর কিছু করার আগেই তার ফোন কেটে গেলো।আয়ান ঘাবড়ে গেলো।যেনো কেউ তার প্রাণ বন্ধি করে নিয়েছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে যেনো ওর।হাওয়ার বেগে গাড়ি ছোটাতে লাগলো সে ক্লাবটার দিকে।

আরুশি ফোনে কথা বলছিলো ঠিক তখনি মিরাজ ওর সামনে প্রকট হয়ে ওর ফোন কেরে নিয়ে কেটে তা ছুঁড়ে ফেলে আরুশির দিকে লোলুপ দৃষ্টি অটল রেখে ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে এগুতে শুরু করে।আরুশি ওকে ধাক্কা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে ও আরুশিকে ঝাপটে ধরে পাশের বিছানায় ফেলে দেয়।আরুশি উঠার আগেই তার উপর ঝাপটে পরে মিরাজ।ওদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আরুশি সর্বশক্তি দিয়ে ওকে আটকানোর চেষ্টা করছে। ওর মুখ খামছে দিচ্ছে। আর চিৎকার করছে বাঁচাও বলে।অনেক কষ্টে মিরাজকে ফেলে দিয়ে দরজা খুলে আবারও বাইরে বেরুলে মিরাজ খপ করে ওকে ধরে ফেলে আর দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে ওর ঠোঁটের পানে এগিয়ে আসে।মিরাজ ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবে ঠিক তখনি জোড়ালো ঘুষি পরে মিরাজের গাল বরাবর মিরাজ ছিটকে পরে অনেকটা দূরে।আরুশি অশ্রভেজা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে।তবে সায়ান ওকে বাঁচাতে এসেছে ভাবনাটা কল্পনা করাও দুষ্কর আরুশির কাছে, তাই অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে ওর।সায়ান যে নিজেতেই নেই।মাথায় রক্ত চেঁপেছে ওর– আজ সে মিরাজকে যেনো মেরেই ফেলবো, শুরু করেছে মিরাজকে হেবি ধুলাই দিতে।মিরাজও পাল্টা ঘাত করছে তবে সায়ানের সাথে পারছে না।সায়ান মারছে আর বলছে।

তোর সাহস হলো কি করে আরুশির গায়ে হাত দেওয়ার?সাহস হলো কি করে তোর?

মারতে মারতে মিরাজের একটা হাত ভেঙে দিলো সায়ান কেউ ওকে আটকাতে পারছে না।মিরাজের অন্য হাত ভাঙবে ঠিক তখনি মিরাজের হয়ে দুজন সায়ানের উপর আক্রমণ করলো।সায়ানের এখন ওই দুজনের সাথেও লড়াই শুরু হলো।তবে সায়ানের তরফ থেকে কেউ লড়তে আসছে না কেউ আটকাচ্ছেও না,সবাই দাঁড়িয়ে যেনো তামাশা দেখছে।দুজনের সাথে একা লড়াই করছে সায়ান।হঠাৎ ওদের একজন আরুশির দিকে খারাপভাবে হাত বাড়ালে ওর হাত ধরতে যায় সায়ান কিন্তু তার আগে সে হাত যায় অন্য কারো হাতে।সয়ং আয়ান দাঁড়িয়ে আছে সে হাত ধরে চোখে তার রাগের ছাঁপ স্পষ্ট। টান দিয়েই মুড়ে হাতটা ভেঙে দিলো আয়ান।তারপর দুই ভাই দুজনের সাথে লড়াই করতে শুরু করলো।আয়ান আরুশিকে জিজ্ঞেস করলো কে ওর সাথে খারাপ করার চেষ্টা করেছে।আরুশি তখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো একপাশে হাতের ব্যাথায় পরে কাঁতরাতে থাকা মিরাজের দিকে আয়ান শান্ত ভঙ্গিতে ওর পাশে গিয়ে এক মুড়ো দিয়ে ওর ওপর হাতও ভেঙে দিলো।বাকি দুজনের অবস্থা দুই ভাই মিলে নাজেহাল করে দিলো।আরুশি আর সেখানে দাঁড়ালো না,চোখের গড়িয়ে পরা জল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো সেখান থেকে।আয়ান আরুশির পিছন এলো ছুটে।এমনকি সায়ানও।

আয়ান এসে আরুশির হাত ধরে আটকালো ওকে।

দাঁড়াও আরুশি কোথায় যাচ্ছো?

যেতে দিন আমাকে আমার যেখানে ইচ্ছে। এই সায়ান নামক নরপশুর আশেপাশে থাকতেও এখন আমার ভয় করছে।অসহ্য লাগছে।কথাটা বলে আরুশি শব্দ করে কাঁদতে লাগে।তখনি সায়ান এলো সেখানে।কথাগুলো কানে গেলো ওর।

আয়ান লক্ষ্য করলো আরুশির উভয় হাতে মিরাজের খামছির দাঁগ,হাতের দিকের কামিজের অংশ ছিঁড়ে দিয়েছে সে সেখানেও খামচির দাঁগ,ওগুলো দেখে আয়ানের শরীর আবারও রাগে জ্বলে উঠলো,ইচ্ছে করছে মিরাজকে প্রাণে মেরে ফেলতে।তবে এখন মিরাজের উপর রাগ দেখানো থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আরুশির খেয়াল করা,সায়ানেরও বর্তমানে একই অনুভুতি হচ্ছে যেমনটা আয়ানের ক্ষেত্রে ঘটছে। আরুশির চোখ দিয়ে আগত জল মুছে দিলো আয়ান। নিজের গায়ের ব্লেজারটা খুলে আরুশিকে ঢেকে দিলো।

তখনি সায়ান আরুশির অল্প কাছে এসে নরম আর ব্যাথার্থ কন্ঠে বললো।

তুমি ঠিক আছো আরুশি?

আরুশি বিনা বাক্যে জোড়ালো একটা থাপ্পড় বসালো সায়ানের গালে।তারপর গর্জে বললো।

১০০টা জানোরয়ার মরার পর হয়তো তোর মতো জানোয়ারের জন্ম হয়েছিলো।তোকে শুধু ঘৃণা করতে ইচ্ছে হয়।আমার তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে যে বর্তমানে আমি তোর মতো জানোয়ারের সাথে দাঁড়িয়ে আছি।ছিঃ

আরুশি আর না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে চায় তখনি হাঁটতে গিয়ে পরতে নেয়।কারন কালকের কাটা এখনও শুকোয় নি তার একটুও, উপর থেকে এতোটুকু ছুটোছুটি করতে গিয়ে তাতে আরও ব্যাথা পেয়েছে।পা দিয়ে অনেক রক্ত ঝরছে আরুশির।আয়ানের যেনো তা দেখে মাথা ঠিক থাকলো না। আরুশিকে টান দিয়ে পাজ কোলে নিয়ে নিলো সায়ানের সামনে।সায়ান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাদের পানে।আরুশি অল্প অবাক হলেও বেশি হলো না,কারন সবসময়ের মতোই আয়ান আজও তার খেয়াল করছে।আয়ান ওকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে সিটে বসিয়ে নিজের রুমাল দিয়ে আরুশির পা বেঁধে আবারও অনেক বেগে গাড়ি ছোটাতে শুরু করে।আরুশিকে হাসপাতাল নিয়ে গিয়ে ওর সব রকম ট্রিটমেন্ট করিয়ে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসে।এখনও পাজকোলে করে এনে আরুশিকে ওর বিছানায় রাখলো।আরুশি অপলকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ দিয়ে জল পরা শুরু হয়েছে আবারও।আরুশির চোখে জল দেখে হয়রান হলো আয়ান।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো ওকে।

কি হয়েছে আরুশি?কাঁদছো কেনো?কোথায় ব্যাথা হচ্ছে তোমার?ডাক্তার ডাকবো আবারও?বলো কি হয়েছে?

আরুশি কিছু বললো না বরং আয়ানকে অবাক করে দিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো তাকে।সজোরে কাঁদতে শুরু করলো।

কেনো এতোকিছু করছেন আপনি আমার মতো অনাথ গরীব আর রাস্তার মেয়ের জন্য?কেনো এতোটা খেয়াল রাখছেন আমার?কেনো আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো অবহেলা করছেন না? কেনো আমাকে এতে মর্ম প্রদান করছেন কেনো?

আরুশির কষ্টে আয়ানের চোখ ঝলকে উঠলো।আর অন্যকিছু না ভেবে আয়ানও আরুশিকে জরিয়ে ধরলো।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো।

তুমি রাস্তার মেয়ে না আরুশি।আর না তো অনাথ।নিজেকে আর কখনো এতোটা ছুটো ভাববে না তুমি।তোমার পরিবার আছে।আমাদের পুরো পরিবার তোমার পরিবার।তোমার জন্য আমাদের এই পরিবার আছে।আমি আছি কখনো নিজেকে একা আর ছুটো মনে করো না।তোমাকে প্রমিজ করলাম কখনো কোনো কিছুর আঁচ লাগতে দিবো না তোমার গায়ে।আগলে রাখবো তোমায়।ভয় পেয়ো না তুমি।প্রতিঙ্গা করলাম।

আরুশি সায়ানের উপর হাত তুললো কিন্তু এই প্রথম সায়ানের আরুশির উপর রাগ হচ্ছে না।বরং ওর জন্য কষ্ট অনুভুত হচ্ছে মনের কোনে। মন যে চাইছে বড্ড আরুশির পাশে যেতে।আরুশির কষ্ট অনুভব করতে।ওর কান্না মুছে দিতে।কেনো তার মন তার বিপরীতে যাচ্ছে ভেবে পাচ্ছে না সায়ান।তখন সে সেই মেয়েটির সাথে একটা রুমে গেলেও ওই মেয়েতে কোনো মোহ খুঁজে পাচ্ছিলো না সায়ান।যেনো আরুশির খেয়াল ওকে টানছিলো।আরুশিকে ছেলেদের ভিরে রেখে এসেছিলো সে খেয়াল বার বার তার মস্তিকে আসাযাওয়া করছিলো।মনে দুঃশ্চিতা খেলা করতে শুরু করেছিলো যদি আরুশির সাথে কিছু খারাপ হয়।তাই এসব ভাবনার আর কোনো যুক্তি না খোঁজে বেড়িয়ে এসেছিলো আরুশির খোঁজে। আর বাইরে এসে খুঁজতে খুঁজতে তখন আরুশিকে ওভাবে পেয়েছিলো।

চলবে……..