দ্বিতীয় সূচনা পর্ব-৪২+৪৩+৪৪+৪৫

0
469

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪২
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

আমার একটা বন্ধু আছে। যার নাম আসিফ। তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। সে অবশ্য এখন দেশের বাইরে থাকে।বন্ধুদের মধ্যে আসিফই সবার আগে বিয়ে করেছে। আসিফের হলুদ অনুষ্ঠান। আমায় ইনভাইট করেছিল। আমি ছোটোবেলা থেকেই বড়ো কোনো অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতাম। হই হল্লা আমার পছন্দ ছিল না কখনও। কিন্তু বন্ধুর বিয়ে। সবাই আসবে। তোমার স্যার শরীফ সাহেব, তিনিও ছিলেন সাথে। না চাইতেও যেতে হলো আমায়। ড্রেস কোড দিয়েছিল। মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। সবার মন রাখার জন্য বাধ্য হলাম ড্রেস কোড অনুযায়ী পাঞ্জাবি পরতে৷ সময়টা আজও মনে আছে। আটটা বেজে পনেরো মিনিট। আমিই সবার শেষে গিয়েছিলাম। আসিফ খানিকটা রাগ করেছিল। তবে শেষ মুহুর্তে আমায় দেখে তার রাগটা কমে গিয়েছিল। শরীফ আমায় দেখে হেসে বলে,
‘হারামি, এখন আসার সময় হলো তোর?’
‘রাস্তায় কেমন জ্যাম থাকে, তা কি তুমি জানো না।’
যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমি আসিফকে হলুদ মাখিয়ে পাশে থাকা সোফায় কিছুক্ষণের জন্য বসি। মোবাইল দেখছিলাম। এমন সময় খেয়াল করলাম কেউ একজন এসে আমার পাশে বসেছে। তার শরীর থেকে এত সুন্দর ঘ্রাণ আসছিল যা আমায় বার বার আকৃষ্ট করছিল।আমি তাকে আড়চোখে দেখছিলাম। সবুজ রঙের শাড়ি আর খোঁপায় গাদা ফুলের মালা পরেছিল। এক কথায় অপূর্ব লাগছিল তাকে। মানুষ বলে না লাভ এট ফার্স্ট সাইট। ওইটাই বার বার মনে হচ্ছিল তখন। প্রথম কোনো মেয়েকে আমার এত ভালো লেগেছিল। নিজের মধ্যে তখন ইগো কাজ করত। তাই আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি। তবে ইচ্ছে হচ্ছিল কথা বলি। নাম জিজ্ঞেস করি। ফোন নাম্বারটা নিয়ে নেই৷ কিন্তু ওইযে ইগো, ইগোই বাধা দিচ্ছিল আমায়।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে আমরা সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে এসে আমায় একটা কাগজ দিয়ে বলল,
‘আংকেল, একটা আন্টি আপনাকে এই কাগজটা দিতে বলেছে।’
আমি কাগজের ভাজ খুলে দেখলাম সেখানে লেখা — আপনি বোধ হয় আমায় কিছু বলতে চান। আমায় বার বার দেখছিলেন। আমি খেয়াল করতেই আপনি অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিয়েছেন। কিছু বলতে চাইলে আমার নাম্বারে ফোন করতে পারেন। কাগজটার মধ্যে থাকা লেখাগুলো পড়ে আমি যেন মোহগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি যে তাকে আড়চোখে দেখছিলাম সেও খেয়াল করেছে। কাগজটা ভাজ করে রেখে দিলাম। চারপাশে নজর দিচ্ছিলাম এই ভেবে যে যদি একবার দেখতে পাই। খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাকে। আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিষন্ন মনে চলে আসব এমন সময় হঠাৎই সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজল চোখে আমার দিকে তাকায়। ওই সময় চারপাশটা যেন তার রুপের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। চুপচাপ শুধু তাকেই দেখছিলাম। সেও আমার দিকে তাকিয়েছিল কিছুক্ষণ। এরপরই শব্দ করে হেসে আমায় বলেছিল — শুধু তাকিয়েই থাকবেন নাকি কিছু বলবেন। আমি তখনও চুপ। আমার নীরবতা তাকে বিরক্ত করছিল। তার চোখে মুখে হালকা বিরক্ত। সে বলল — চলে যাচ্ছি। কনে আমার বান্ধবী। কাগজে আমার নাম্বার দেওয়া আছে। কিছু বলতে চাইলে ফোন করতে পারেন। আমি আপনার কথা শোনার অপেক্ষায় থাকব।

বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দুটো। ফ্রেশ হয়ে তার কথা ভাবছিলাম। কাগজটা হাতে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। মোবাইল হাতে নিলাম একবার ফোন করব বলে৷ এত রাতে ফোন দেওয়া ঠিক হবে কি না তাও বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু তখনই তার হাসিমাখা মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। নাম্বার ডায়াল করলাম। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম সে যেন ফোনটা রিসিভ করে। কিছুক্ষণ পর ফোন রিসিভ হলো। মিষ্টি একটা কন্ঠস্বর কানে লাগে আমার। সে বোধ হয় আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল। চিনে ফেলেছিল আমায়। আমি হ্যালো বলার পরেই সে বলল — আমি আপনার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম। এত দেরি করবেন তা বুঝতে পারিনি। আমাদের কথা শুরু হলো। নাম জিজ্ঞেস করতে উত্তর দিল — আমার নাম বন্দনা। নামটা শুনে আমি আরও জড়িয়ে গেলাম তার সঙ্গে। আমাদের পরবর্তী দেখা হয় বিয়েতে। মেরুন রঙের লেহেঙ্গায় তাকে অত্যন্ত বেশি সুন্দর লাগছিল। আমার সব থেকে বেশি লেগেছিল তার বডি ল্যাংগুয়েজটা। কী পরিমাণ মারাত্মক তার বডি ল্যাংগুয়েজ। বলার মতো না। আমি আরও আকৃষ্ট হলাম তার প্রতি। ধীরে ধীরে আমাদের কথা বাড়তে লাগল। এদিকে বাবা চাইত আমি অফিসে বসি। তাকে পাওয়ার নেশা আমায় এতটাই আঁকড়ে ধরল যে আমি তার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম। রোজ রাতে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কথা হতো। বাবার প্রেশারে অফিসে বসতে হলো। বাবা আমায় সব কিছু বুঝিয়ে দিতে শুরু করলেন। আমি নিজের মতো করে সব গোছাতে শুরু করি। বাবা মায়ের কাছে বন্দনার কথা বললাম। বাবা মা তখন কিছু বলেনি। কিন্তু কিছুদিন পর বাবা অমত করলেন। বাবার কথা ছিল — মেয়েটা ভালো না। তোমাকে পরে পস্তাতে হতে পারে। আমি মানতে পারিনি বাবার কথা। দু’বছরের সম্পর্ক। এতদিনে এমন কিছুই চোখে পড়েনি যা দ্বারা তাকে খারাপ বলা যায়। অন্যদিকে বন্দনা বলল তাকে বিয়ে করতে হবে। কিছুই যেন চোখে দেখছিলাম না। মস্তিষ্ক শুধু বলছিল আমার তাকেই চাই। ব্যাস, বিয়ে করে নিলাম। আমি আলাদা ফ্ল্যাট নিলাম। বিয়ের পর সেখানেই ছিলাম বন্দনাকে নিয়ে। এরপর কেটে যায় কিছু মাস। মা আমায় ছাড়া থাকতে পারে না বলে বাবাকে ম্যানেজ করে আমাদের বাড়ি নিয়ে যায়। ভালোই চলছিল সব কিছু। কিন্তু এরপর,,,,,,,,,,,

কথা বলতে গিয়ে থমকে যায় ফারহান। অয়নন্দিতা চোখের পানি মুছে আগ্রহ নিয়ে তাকায় ফারহানের দিকে। এরপরের কাহিনীটুকুন শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতা। ফারহান উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়ালের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

চলবে……..…..…………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৩
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

প্রথম দিকে কেউ মেনে না নিলেও আমার মুখের দিকে চেয়ে সবাই মেনে নেয় বন্দনাকে। সাজি, ফারাশ ওরাও বন্দনাকে মেনে নেয়। সাজি তখন আরেকটু ছোটো। আমাদের বাড়িটা তো বেশ বড়ো। তা তো জানোই। পুরো বাড়িতেই বন্দনার বিচরণ ছিল। সবার সঙ্গে হেসে খেলে থাকত। দিন বাড়তে থাকে বন্দনার প্রতি আমার ভালোবাসাও বাড়তে থাকে। সত্যি বলতে কি এখন আর আগের মতো ভালোবাসা নামক অনুভূতি মনের ভেতরে কাজ করে না। আমার ভালোবাসার সবটুকু অনুভূতি বন্দনা নিয়ে নিয়েছে। তাই চাইলেও সেই ভালোবাসার পুরোটা তোমায় দিতে পারছি না। আমি জানি, তুমি আমায় ভীষণ ভালোবাসো। আমিও তোমায় ভালোবাসি তবে অনুভূতিগুলো এখন আর নাড়াচাড়া দেয় না। কারণ, সব অনুভূতি তো বন্দনাতে ইনভেস্ট করে ফেলেছি।

অয়নন্দিতার চোখ জোড়া তখনও বন্ধ ছিল। মনে হচ্ছে আরেকটু পর হিচকি উঠে যাবে তার। বহুত কষ্টে নিজের কান্নাকে ধরে রেখেছে সে। ফারহান একটু বিরত নিয়েছে। এরপর আবারও বলা শুরু করে।

আমি তখনও জানতাম না বন্দনার মনে কী চলছে। বন্দনাকে আমি কখনই বাঁধা দিইনি। মুক্ত স্বাধীনচেতা মেয়ে ছিল বন্দনা। ঘরে বন্দী থাকার মতো মেয়ে সে ছিল না। আর আমিও তাকে তেমন শাসন করতাম না। তার মন যখন চাইত সে বের হতো। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেত। শপিংয়ে যেত। সে যেখানেই যেত আমায় বলে যেত। তাই তার প্রতি আমাত বিশ্বাসটা ছিল অগাধ। কিন্তু মাস দুয়েক পর বন্দনার মাঝে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। কথায় কথায় উগ্র আচরণ করতে শুরু করত। কারো সঙ্গে সুন্দর মতো কথা বলত না। এমন কি একটা সময় ও আমার সঙ্গে এক বিছানায় শুতে পর্যন্ত চাইত না। আমার বন্দনার এত পরিবর্তন আমায় পোড়াত। প্রথম ধাক্কাটা লেগেছিল বুকে যেদিন বন্দনা বলল– তোমার সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। ভেবেছিলাম আমার দ্বারা কোনো ভুলচুক হয়েছে বলেই ও এমন করছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কাটা একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগে যখন বন্দনা বলল– আমি ডিভোর্স চাই।
বার বার জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমার ভুল কোথায়? উত্তরে বলল– তোমার ভুল হয়নি। ভুল আমার হয়েছে। আমি ডিভোর্স চাই। এ নিয়ে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে আমি রেগে গেলাম। হাত তুললাম বন্দনার গায়ে। এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করেনি বন্দনা। বের হয়ে গেল আমার বাড়ি থেকে। কত রকমে মানানোর চেষ্টা করেছিলাম তাকে সে রাজি হয়নি। অন্যদিকে বলেওনি যে তার কী সমস্যা। কেন সে ডিভোর্স চায়। খুব রাগ হতো নিজের ওপর। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতাম। বাবা বলেছিল– আমি জানতাম এই মেয়ে ভালো না। দেখছ তো, কী পরিণতি হচ্ছে। বাবার কথা সেদিন সত্যি মনে হচ্ছিল।
এক সপ্তাহ পর আমার বাসায় ডিভোর্স পিটিশন আসে। আমি অবাক হলাম বন্দনার সাহস দেখে। পিটিশন নিয়ে চলে গেলাম বন্দনার বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি বন্দনা নেই। বন্দনার মাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন বন্দনা নাকি চট্টগ্রাম গেছে রাজিবের সঙ্গে। রাজিব কে প্রশ্ন করলে বন্দনার বোন জবাব দেয় রাজিব বন্দনার বন্ধু। বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রাম গেছে কথাটা শোনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল আমার। ওই বাসায় অনেক চেঁচামেচি করি। শুনতে শুনতে শুনি রাজিব বন্দনার কলেজের বন্ধু। এবং ইদানীং সময় রাজিব আর বন্দনাকে বেশ মেলামেশা করতে দেখা গেছে। বন্দনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীই আমায় সব বলে। বন্দনা নাকি বলেছে সে রাজিবকে ভালোবাসে। আমার সঙ্গে তার হচ্ছে না। সে রাজিবকে না পেলে মরে যাবে।
আমি ভেঙে পড়েছিলাম এই ভেবে যে, হয়তো আমার ভালোবাসায় কমতি ছিল। আমিই বন্দনাকে ভালো রাখতে পারিনি। দুই বছরের সম্পর্কের পর এক বছরের সংসার করে যে পাখি থাকতে চায় না সেই পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা যায় না। উড়িয়ে দিতে হয়। তাই বন্দনাকেও উড়িয়ে দিয়েছি ডিভোর্স পিটিশনে সাইন করে। আমার এখনও মনে আছে। যেদিন ডিভোর্সের তারিখ ছিল সেদিন বন্দনা এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমার মুখের দিকে একটাবারের জন্যেও তাকায়নি। রাজিব নামের ভদ্রলোক ছিল তার সাথে। আমি হাসিমুখে বন্দনাকে যেতে দিয়েছি। ভালোবাসার প্রতি এখন আর আস্থা জন্মায় না। আমি তোমাকেও বিয়ে করতে চাইনি। কারণ আমি জানতাম তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারব না। তবুও আমি বাধ্য হলাম বিয়ে করতে। বিয়ের পর আমার আচরণে তুমি নিশ্চয়ই দগ্ধে মরেছ। একটা কথাই ভেবেছ আমি কেন ভালোবাসি না তোমায়। যেদিন তুমি বললে তোমায় ভালোবেসে আমি ঠকব না। আমার ভালোবাসার খানিকটা অংশ তোমার পেছনে ইনভেস্ট করতে সেদিন থেকে আবারও মন চঞ্চল হয়ে গেল তোমায় ভালোবাসার জন্য। আমি ভালোবাসার কাঙাল অয়নন্দিতা। আমি ভালোবেসেই গেছি কিন্তু ভালোবাসা পাইনি। আমি ভালোবাসা পেতে চাই অয়নন্দিতা। আমি ভালোবাসা পেতে চাই।

অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ঝড়ের বেগে দ্রুত কাছে চলে যায় ফারহানের৷ দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ফারহানকে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,
‘ফারহান ভালোবাসি আমি তোমায়। ভীষণ ভালোবাসি। মৃত্যু পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চাই। হ্যাঁ ফারহান, মৃত্যু পর্যন্ত ভালোবেসে যেতে চাই আমি তোমায়। ভালোবাসি আমি তোমায়।’
ফারহান এতক্ষণ পর্যন্ত চোখের পানি আটকে রাখলেও এখন আর আটকাতে পারেনি। অয়নন্দিতাকে আঁকড়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় ফারহান।

চলবে………………………..

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৪
লেখা – আফরোজা আক্তার
[কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

অয়নন্দিতা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ফার্ম হাউজে এক পাশে পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরে মাছ চাষও হয়। পুরো পরিবেশটাকে ফারহান একটা গ্রাম্য জীবনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছে। ফারহানের কাছ থেকে শুনেছে বছরে একবার সবাই এখানে আসে। এক সপ্তাহ থেকে যায়। আর এবার সবার আগে ফারহান তাকে নিয়ে এসেছে। মোরগ ডাকছে বেশ চওড়া গলায়। অয়নন্দিতা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। মোরগটা বেশ বড়ো। লাল খয়েরী রঙের মোরগটাকে বেশ স্বাস্থ্যবান।
ফারহানের দুঃসম্পর্কের ফুফু অয়নন্দিতার পাশে এসে দাঁড়ায়।
‘কী গো বউ, এইখানে দাঁড়াই আছো যে?’
অয়নন্দিতা মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। কী মায়াময় চাহনি তার! ফারহানের কাছ থেকে শুনেছিল এই মহিলার ছেলে নাকি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলের বউ নাকি ভাত দিত না। অয়নন্দিতা ভাবে, আল্লাহ পাকের দুনিয়ায় এত নিকৃষ্ট মানুষও হয় যে নিজের জন্মদাত্রী মায়ের মুখেও খাবার তুলে দেয় না। ফারহান যখন জানতে পারে তখন তাকে মানুষ দিয়ে এখানে নিয়ে আসে। শুধু তিনিই নন এখানে বাকি যারা আছেন সবাই এমন কোনো না কোনো পরিস্থিতির শিকার। ফারহান প্রতি মাসে টুকটাক বাজার পাঠিয়ে দেয় আর বাকি শাক সবজি তারা এখানেই চাষ করে। অয়নন্দিতা হাসি মুখে জবাব দেয়,
‘এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি৷’
‘ফারু কই? ঘুমায়?’
ফারু নামটা শুনে অয়নন্দিতা একটু চমকে গেলেও বুঝে নেয় যে তিনি ফারহানকে ফারু বলে ডাকেন। তাই উত্তর দেয়,
‘হ্যাঁ। ও ঘুমাচ্ছে।’
‘তুমি কিছু খাইবানি?’
‘নাহ। এখন কিছু খাব না।’
‘মতিনের আম্মা রসের নাস্তা বানাইছে। খাইবানি একটু?’
রসের নাস্তা অয়নন্দিতার ভীষণ প্রিয়। ছোটোবেলা নানাবাড়ি গেলে নানী বানিয়ে খাওয়াত। অয়নন্দিতার নারকেল দিয়ে খেতে ভালো লাগে। রসের নাস্তার নাম শুনে জিবকে সামলাতে না পেরে অয়নন্দিতা বলে,
‘নাস্তায় নারকেল দিয়েছে?’
‘হ। নারকোল দিছে। খাইবানি?’
‘আচ্ছা।’
‘তাইলে ঘরে গিয়া বসো। আমি নাস্তা নিয়া আসি।’
‘নাহ। আমি পাকের ঘরে বসেই নাস্তা খাব।’
‘কী কও বউ? না না তুমি ঘরে গিয়া বসো।’
‘নাহ। আমি ওখানে বসেই খাব।’
ভদ্রমহিলা অয়নন্দিতার কথার সাথে পেরে না উঠে অয়নন্দিতাকে নিয়ে গেলেন পাকের ঘরে।

বেলা করেই ফারহান ঘুম থেকে উঠেছে। গতকাল রাতে বেশ ইমোশন হয়ে পড়ায় মাথায় চাপ লেগেছে। সকালে একবার ঘুম ভেঙেছিল। চোখ মেলে পাশে অয়নন্দিতাকে না পেয়ে একবার উঠে বসেছিল কিন্তু প্রচন্ড মাথা ব্যথার কারণে আবারও শুয়ে পড়ে।
অয়নন্দিতাও আর ফারহানকে ডেকে তোলেনি। সে ভাবে, সারা মাস তো বিরামহীন ভাবে অফিসে ব্যস্ত থাকে এখন না হয় একটু ফ্রী সময় কাটাক। তার খারাপ লাগে ফারহানের কথা ভেবে। মানুষটা কত্ত ভালোবাসত বন্দনাকে। আর বন্দনা,,,
অয়নন্দিতা মনে মনে বলে, আমি কখনও বন্দনাকে ক্ষমা করব না। তার উচিত ছিল ফারহানকে ধরে রাখার। কিন্তু সে এইভাবে ফারহানকে ঠকিয়ে গেছে। তার ক্ষমা হয় না।
অয়নন্দিতা ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এক মনে এইসবই ভেবে যাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে ফারহান এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
‘কী ভাবছ একা একা?’
অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
‘উঠে গেছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘চলো। নাস্তা করবে।’
‘বললে না তো কী ভাবছিলে?’
‘তেমন কিছুই না। চলো।’
‘তুমি কি বন্দনাকে নিয়ে ভাবছিলে নাকি অয়নন্দিতা?’
ফারহান সত্যিটাই আন্দাজ করতে পেরেছে। সে বুঝে গেছে অয়নন্দিতা বন্দনাকে নিয়েই ভাবছিল। সত্যিটা এড়িয়ে যায় সে।
‘নাহ। তাকে নিয়ে ভাবব কেন? আমি এখানে এমনিতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি একা একা আর তুমিও ঘুমাচ্ছিলে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রোদ পোহাচ্ছিলাম। তুমি অযথাই টেনশন করছ। চলো, নাস্তা করে নেবে।’
অয়নন্দিতা সামনে পা বাড়াতেই ফারহান খপ করে তার হাতটা ধরে।
‘অয়নন্দিতা, একটা কথা বলি তোমাকে। তুমি বন্দনার বিষয়ে জানতে চেয়েছ তাই আমি বলেছি। এইসব নিয়ে আর ভাববে না। আমি চাই না আমার কালো অতীত নিয়ে টেনশন করে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো। মনে থাকবে আমার কথা?’
অয়নন্দিতা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁসূচক ইশারা করে। ফারহান অয়নন্দিতার ইশারা দেখতে পেয়ে অয়নন্দিতার দু’গাল চেপে ধরে। এরপর কাছে এসে আলতো করে অয়নন্দিতার কপালে চুমু দেয়।
‘এইতো আমার লক্ষী বউ। চলো, ক্ষুধা লেগেছে। নাস্তা খাব।’
ফারহান অয়নন্দিতার ডান হাতটা ধরে ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়।

চলবে…………………………

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

গাড়ি মধ্যম গতিতে এগিয়ে চলছে। পাশের সিটে বসে আছে অয়নন্দিতা। আজ তিনদিন পর বাড়ি ফিরছে তারা। ফারহান চুপচাপ ড্রাইভ করছে। অয়নন্দিতার নজর বার বার ফারহানকে দেখছে। সে উপলব্ধি করতে পারছে ফারহানের মনের কষ্টগুলো। কাউকে এত গভীরভাবে ভালোবাসার পরেও কোনো মানুষ কী করে পারে এইভাবে ছেড়ে চলে যেতে। অয়নন্দিতা ভাবছে, ওই মানুষটা এমন কেন যে, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এতখানি কষ্ট দিয়ে দূরে চলে গেল। আল্লাহ পাক কি তার মনে একটুও দয়া মায়া দেয়নি।
বার কয়েক ডাকার পরেও অয়নন্দিতার সাড়া না পেয়ে অয়নন্দিতার হাতে নিজ হাত রাখে ফারহান। স্পর্শ অনুভব করতে পেরেই ফারহানের দিকে তাকায় অয়নন্দিতা। ফারহান ঠিক ধরতে পেরেছে অয়নন্দিতা কোনো কিছু ভাবছে। অত্যন্ত গভীর কিছু ভাবছে। নয়তো পাশে বসে ডাকটা ঠিকই শুনতে পেত। ফারহান এক পাশে গাড়ি থামায়। অয়নন্দিতাকে নিয়ে বের হয়ে আসে গাড়ি থেকে। এইভাবে রাস্তার মধ্যিখানে গাড়ি থামানো দেখে অয়নন্দিতা ফারহানকে প্রশ্ন করে,
‘গাড়ি দাঁড় করালে যে? বাড়ি যাবে না?’
অয়নন্দিতার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে ফারহান। গাঢ় নজরে তাকিয়ে থাকে অয়নন্দিতার সরল চোখের দিকে। অয়নন্দিতা আবারও প্রশ্ন করে,
‘কী হয়েছে, এইভাবে তাকিয়ে আছো যে। কী দেখছ?’
‘কী হয়েছে অয়নন্দিতা? এইভাবে অন্যমনস্ক হয়ে কী ভাবছিলে?’
‘কিছু ভাবছি না তো।’
‘পাশে বসে কয়বার ডেকেছি তোমায়। তোমার ধ্যান অন্য কোথাও ছিল। তাই হয়তো শুনতে পাওনি।’
আসলেই অয়নন্দিতা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। হয়তো ফারহান তাকে ডেকেছে আর সে শুনতে পায়নি। যার জন্য ফারহানের সন্দেহ হচ্ছে। আর তার সন্দেহ যে সঠিক এটা অয়নন্দিতা ভালো করেই জানে।
‘তুমি কি বন্দনাকে নিয়ে ভাবছিলে অয়নন্দিতা?’
ফারহানের করা প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই তার কাছে। অস্বস্তিবোধ করছে অয়নন্দিতা। চোখ অন্যত্র সরিয়ে ফেলে সে। আর তার রি আচরণটাই ফারহানকে আরও বিশ্বাস করিয়ে দেয় যে, সে এতক্ষণ বন্দনাকে নিয়েই ভাবছিল। ভীষণ রাগ হচ্ছে এখন তার। মেজাজও খারাপ হচ্ছে৷ নিষেধ করার পরেও অয়নন্দিতা বন্দনাকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছে।
‘এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছ অয়নন্দিতা। তুমি এমন করবে জানলে আমি তো কিছুই বলতাম না।’
‘আসলে আমি…’
‘আসলে নকলে বাদ দাও। প্লিজ অয়নন্দিতা। আমি অনেকদিন পর ভালো থাকতে শুরু করেছি। ভালো থাকতে দিবে না আমায়?’
নির্বাক চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ অয়নন্দিতা। ঠিকই তো, ফারহান অনেকদিন পর ভালো থাকতে শুরু করেছে। ভালো থাকুক না ফারহান। সে কেন মিছেমিছি এইসব ভেবে নিজের এবং ফারহানের ভালো থাকাটা নষ্ট করবে। একদমই না। তারা এখন থেকে ভালো থাকবে। অয়নন্দিতা ফারহানের ডান হাতটা শক্ত করে ধরে।
‘আমি আর ভাবব না এইসব৷ কথা দিলাম, ভাবব না। আমরা ভালো থাকব। ভীষণ ভালো থাকব৷’
ফারহান অয়নন্দিতার কপালে আলতো চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অয়নন্দিতাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়।

ফারাশ ইদানীং বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফূর্তিতে মেতে থাকা ছেলেটা এখন বিজনেসে পা রেখেছে। তার জন্য তো সব কিছু কঠিন মনে হবেই৷ কিন্তু বাবার কড়া আদেশ। এবার থেকে ব্যবসা দেখাশোনা করতে হবে। রমজান শেখ নিজে যা কিছু অর্জন করেছেন তার সবটুকুই তিন ছেলেমেয়ের জন্য। সাজিকে বিয়ে দেওয়ার পর সাজির পাওনাগণ্ডা সাজিকে বুঝিয়ে দেবেন৷ বাকি যা আছে তা সমান ভাগে বন্টন করে দেবেন দুই ছেলের মাঝে। যদিও তারা দু’জনের একজনও কখনও ভাগ বাটোয়ারার পক্ষে যাবে না। কারণ, তিনি ছেলেদের তেমন ভাবেই মানুষ করেছেন৷
ফারহান গত তিন দিন ছিল না বলে ফারাশ নিজে অফিসে বসেছে। তবে ফারহান আর তার মাঝে বিস্তর ফারাক। একজন গম্ভীর অন্যজন হাসিখুশি প্রাণবন্ত। অফিসে সবার সঙ্গে বেশ হাসিখুশি ভাবেই কাজ করেছে। স্টাফরা কেউ বুঝতেই পারেনি ফারাশ মালিক তারা কর্মচারী। জরুরী একটা মেইল চেক করছিল ফারাশ। এমন সময় কেউ একজন দরজায় নক করে। ফারাশ মুখ তুলে তাকাতেই নিজের ভাইকে দেখতে পায়। হাসিমুখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
‘ভাইয়া, তুমি! চলে এলে?’
‘আর কত থাকব। বাবা নেই, তুই একা হাতে সবটা সামাল দিচ্ছিস।’
‘গেলা ঘুরতে তাও আবার রাজরানীকে নিয়ে। আরও কয়েকটা দিন ঘুরে আসতে। আমি তো সামলে নিচ্ছিলাম।’
‘তুই অয়নন্দিতাকে রাজরানী বলে ডাকিস কেন? ও রাজরানী হলো কীভাবে?’
‘ও মা, ওকে কি রাজরানীর মতো লাগে না?’
‘তা বলিনি, জিজ্ঞেস করলাম মাত্র।’
‘ভেবে নাও শেখ ভিলা একটা রাজ্য। ওইখানে আমাদের রাজত্ব চলে। ওই রাজ্যের মহারাজা তোমার আমার বাপ মানে রমজান শেখ। তাহার সহধর্মিণী মিসেস রওশন শেখ রাজ্যের মহারানী। তাদের আবার দুই রাজপুত্র এক রাজকুমারী। তাদের মধ্যে বড়ো রাজপুত্র মানে তোমার বধূ অয়নন্দিতা। হলো না সে রাজরানী।’
‘পুরো ইতিহাস ঠুকে দিয়েছিস তুই।’
‘হা হা।’
‘আলী ব্রাদার্স এন্ড সন্স এর ফাইলটা চেক করেছিলি? ফাইলটায় কিছু ভুল ছিল।’
‘হ্যাঁ, চেক করা শেষ। ভুলগুলো ঠিকও করে দিয়েছি।’
‘ফাইলটা নিয়ে একটু রুমে আয়। নেক্সট মিটিংটা তুই করবি।’
‘আমায় আবার টানছ কেন?’
‘এই না বললি নিজে সব সামলে নিবি। আর না টানলে ঘরে দ্বিতীয় রাজরানী আসবে কী করে? শুনেছি দ্বিতীয় রাজরানীর বাপ আবার মহা হিটলার।’
ভাইয়ের কথার ধাঁচে ফারাশ বুঝে যায় যে, অয়নন্দিতা তার ভাইকে সব বলে দিয়েছে। অয়নন্দিতা মেয়েটার প্রতি তার সম্মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। সে চায় নায়াও অয়নন্দিতার মতো সব দিক সামলে নিবে। অথবা সব দিক না সামলালেও অয়নন্দিতার মতো আচরণ করবে।

মানিক সাহবে চেয়ারে বসে আছেন। তার পাশে ফারাশ। ফারাশের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন আরেকজন কর্মকর্তা। নিজ চেয়ারে বসে ফাইল ঘাটছে ফারহান। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। ফারাশ সবকিছু বুঝতে পেরেই এদিক-সেদিক একবার তাকিয়ে ভাইয়ের চোখে চোখ রাখে। স্টাফদের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। তাই ঘুরিয়ে বলে,
‘ভাইয়া, ব্যাটার হয় আমরা যদি একটা সলিউশনে যাই।’
মানিক সাহেবও ফারাশকে সমর্থন করে বলেন,
‘স্যার এটাই ভালো হবে মনে হচ্ছে।’
ফারহান এবার ক্ষেপে যায়। মাথার প্রতিটা রগ যেন ছিঁড়ে যাবে। ফারাশ দু’জন স্টাফদের চলে যেতে বলে ফারহানের সামনে বসে।
‘তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন?’
‘হোয়াট ইজ দিস ফারাশ, হোয়াট ইজ দিস?’
‘আই নো। প্লিজ, শান্ত হও। স্টাফরা কী ভাববে?’
‘অর্ডার ক্যান্সেল করে দে।’
‘মাথা খারাপ হয়েছে তোমার। কাদের সঙ্গে মিলেছে দেখেছ? আমাদের রেগুলার ক্লাইন্ট এরা। ক্যান্সেল করার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। আমি বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। বাবা আজকে রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা ঢুকবে। আগামীকাল সবকিছু নিয়ে আলাপ করা যাবে। প্লিজ, নিজে শান্ত হও।’
‘বিশ লাখ টাকার অর্ডার ফারাশ। এমন না যে আমি দিব না কিংবা দিতে ভয় পাব। বাট, আমার মনে হচ্ছে তারা অর্ডার নিয়ে ঝামেলা করবে। যেইভাবে নিচে নামানো যায় আর কি।’
‘এত সোজা! ব্যাবসা জগতে এতদিন রমজান শেখ এব্যতার বড়ো ছেলে ছিল। এখন ছোটো ছেলেও হাজির। এত সহজে বাঁকা করতে পারবে না।’
‘সাহস হয় কীভাবে, এটাই ভাবছি আমি, ওর সাহস হয় কীভাবে?’
‘সাহসটা তো আগে থেকেই পেয়ে গেছে। এটা বোঝো না?’
‘নতুন করে নাটক করার কোনো মানে নেই৷ ফাঁদে ফালানোর জন্যই এমন নাটক সাজিয়েছে।’
‘যতই নাটক সাজাক, ভিলেন হিসেবে আমিও কম যাই না। ওইদিকে লিড রোলে যদি সে থাকে তবে এইদিকে লিড রোলে আমি ভিলেন হিসেবে পারফেক্ট। কী বলো?’
ফারহানের মনে হচ্ছে ফারাশ কিছু একটা করবেই। তাই আগে থেকেই তাকে সাবধান করতে হবে।
‘এমন কিছুই করবি না তুই। যা হবে দেখা যাবে। বাড়তি কিছু করতে যাস না।’
ফারাশ তার ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রাত বারোটা পার হবার ফারহান বাড়ি ফেরে। ততক্ষণে অয়নন্দিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। ফারহান পূর্বের ন্যায়ে ধীর পায়ে অয়নন্দিতার পাশে দাঁড়ায়। একদম নিঃশব্দে বিছানায় বসে সে। অয়নন্দিতা হাত ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। এগারোটার পর একবার অয়নন্দিতা তাকে ফোন করেছিল৷ প্রচন্ড মেজাজ খারাপ থাকায় ফোন রিসিভ করে একটু কঠিন স্বরে কথা বলেছিল। কষ্ট পেয়েছে কি না জানে। অয়নন্দিতার ঘুমন্ত মুখটাকে মায়াবী লাগে। ফারহান একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখতে থাকে অয়নন্দিতাকে। ফারাশের কথামতো সেও স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে আসলেই অয়নন্দিতা এই রাজ্যের রাজরানী। তার মুখশ্রীতে রাজরানী রাজরানী ভাবটা আছে। তার রাজ্যের রানী সে। তার রাজত্বে বসবাস হবে এই রাজরানীর। অ
ফারহান আলতো হাতে অয়নন্দিতার একটা গাল ছুঁয়ে দেয়। ঘুমন্ত অয়নন্দিতা স্পর্শ অনুভব করতে পেরে হালকা নড়ে উঠতেই ঘাবড়ে গিয়ে ফারহান দু’কদম পিছিয়ে যায়। পাছে তার স্পর্শে রাজরানীর ঘুম ভেঙে যায়।

চলবে……………….