নানান রঙের মেলা পর্ব-০৪

0
229

‘নানান রঙের মেলা’ পর্ব ৪
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

নিবরাসের হুট করে আগমনটা কারোরই বোধগম্য হলো না। টুইঙ্কেল নিবরাসের ব্যাকুলতা দেখে শুধু তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে বলল,

-‘না না। কিছু হয়নি আমার।’

আবইয়াজ নিবরাসের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

-‘কিরে! হঠাৎ এতদিন পর কি মনে করে আসলি? সেদিন যে এতবার বললাম একটু আয়, এলি না।’

নিবরাস কি বলবে বুঝে পায় না। সে এই বাড়িতে আসতে ভ’য় পায়। বারবার মনে হতো এখানে এলেই তার বড় ধরনের কোনো একটা চু’রি ধরা পড়ে যাবে। আজও আসতো না। কিন্তু আজমাইনের কথা শোনার পর থেকে তার অন্তরে এক দণ্ড শান্তি নেই। সে ছ’টফট করছিল বারবার। তাই তো বে’হা’য়া’র মতো চলে এসেছে। অবশ্য সে ভাবছে যে সে বে’হা’য়া’র মতো এসেছে। খান বাড়ির কেউই এমনটা ভাবছে না। অতিথি আগমনে তারা সুখ অনুভব করে। তাছাড়া আবইয়াজের পুরোনো বন্ধু হলো নিবরাস।

আবার আরেকটা নিবিড় সম্পর্কও তার এবাড়ির সাথে আছে। নিবরাসের বাবা সালাম খানের ঘনিষ্ট বন্ধু। আজমাইন নিজেদের পারিবারিক ব্যবসায় ছেড়ে নিবরাসদের কোম্পানিতে কাজ করছে একটা বড় কারণে। বলা যায় শা’স্তি হিসেবেই চাকরিটা করতে হচ্ছে তাকে। আজমাইন অনার্সে পড়ুয়া এক মেয়ের সাথে দুই বছর হলো প্রেম করছে। বিয়েও করবে সব ঠিক। দুই পরিবারই জানে তাদের ব্যাপারে। সমস্যাটা হলো আজমাইন পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের কোম্পানিতে ঢোকার পর খুব গা ছাড়া ভাবে চলতো। ব্যাপারটা এমন, নিজের বাড়ি, নিজের ঘর, সে নিজেই বস। কাজ ইচ্ছে হলে করবে ইচ্ছে না হলে করবে না। কর্মীদের সর্বক্ষণ অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দিয়ে প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো তার প্রধান কাজ ছিল। প্রথম প্রথম আবইয়াজ আর আলফাজ খুব বুঝিয়েছে যে বাবা চাচারা জানলে সমস্যা হবে। সে শোনেনি দুই ভাইয়ের কারো কথা। নিজের মর্জি মতোই চলেছে।

শাফকাত খান আর তার ভাইয়েরা ছেলেরা ব্যবসার হাল ধরার পর থেকে একটু অবসর নিয়েছিলেন। তারা সবদিকে তেমন একটা খেয়াল রাখতেন না। আবইয়াজ আর আলফাজ সবকিছু এত সুন্দর করে পরিচালনা করছিল যে তারা নিশ্চিন্তে সপ্তাহে দুই তিন দিন বাড়িতেই কাটিয়ে দিতেন। এতসবে আজমাইনের এমন ফাঁকিবাজিও তাদের নজরে পড়েনি। কিন্তু ওই যে, ‘চো’রের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন’ বলে একটা প্রবাদ আছে! প্রথম কয়মাস নজরে না পড়লেও হুট করেই একদিন সালাম সাহেব ধরে ফেলেন তার এসব কু’কর্ম। তারপর আর কি! বিচার বসে বাড়িতে, আজমাইনকে বলা হয় যতদিন না সে নিজ যোগ্যতা বলে কাজ করে উপার্জন করছে ততদিন সে যেন ঘরে বউ না আনে। চাকরির জন্য আজমাইন এদিক ওদিক প্রথমে ঘুরছিল কিন্তু খানদের ছেলে নিজেদের কোম্পানি রেখে কি কারণে বাহিরে চাকরি খুঁজছে এই ভেবে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি তার যোগ্যতা থাকার পরেও তাকে চাকরি দেয়নি। সরকারি চারকরির পেছন পেছন ঘুরেও তার না’জে’হাল অবস্থা হয়। বিসিএস এ না টিকলে সরকারি ভালো চাকরিও আবার পাওয়া যায় না। তাই এই বছর বিসিএসে বসেছিল। রিটেনে হলেও ভাইবা তে হয়নি। তার এত পরিশ্রম দেখে তার বাপ চাচার মন গলে। তবে সরাসরি নিজেদের কোম্পানিতে ঢোকায়নি তাকে। আরো কয়েক মাস তাকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য সালাম খান তার বন্ধু নাবিদ সেরনিয়াবাতের সাথে আলাপ করেন। নাবিদ সাহেব নিজ পুত্র নিবরাসকে বললে সে একটা পদের জন্য ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করে। যেহেতু যোগ্যতাসম্পন্ন ছিল আজমাইন তাই কাজটা পেয়েও যায়। আর তারপর থেকেই গত তিন মাস যাবৎ সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। নিবরাসকে ছোট থেকে তার ভাই ডাকার অভ্যাস। কিন্তু সেটাও এখন ডাকতে পারে না। নিবরাস অবশ্য এর জন্য কিছু বলেনি, অফিসে স্যার ডাকলে ডাকুক বাহিরে ভাই ডাকলে তার সমস্যা নেই। কিন্তু শাফকাত খান বললেন আজমাইন ওই ভাই ডেকে ডেকেই কাজ হাসিল করে নিবে। স্টাফ আর বসের মধ্যে ভাই ভাই সম্পর্ক থাকলে সেটা কাজেও প্রভাব ফেলে। আর সেটা যে ইতিবাচক হবে না তা বোঝাই যায়।

নিবরাসের আগমনে সালাম সাহেব খুশি হলেন খুব। পরক্ষণেই একটা হাহাকার এসে ভর করে তার মনে। তার বহুত শখ ছিল এই ছেলেকে নিজ কন্যা মেহনাজের সাথে বিবাহ দিবেন। এদিকে বোনের এত অনুরোধের পর তাকেও নারাজ করতে চাননি। যার ফলে মতটা তিনি দিয়ে দিয়েছেন। যাবিরও ভালো ছেলে। তবে কখনো তাকে নিয়ে তেমনটা তিনি ভাবেননি। কিন্তু এখন করার নেই কিছু। কথার খেলাপ করার মতো মানুষ সালাম খান না। তিনি হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিলেন ক্যামেলিয়া বা কামিনী যেকোনো একজনের সাথে নিবরাসের জুটি বেঁধে দিবেন। মনে মনে এটা ভেবে তিনি বেশ উচ্ছাসিত হয়ে উঠলেন।

আবইয়াজ বন্ধুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যাওয়ার পর আজমাইন বুয়াকে ডাক দিতেই চোখ মুখ কুঁচকে গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বুয়া হল রুমে আসেন। আজমাইন তাকে নিবরাসের আনা জিনিসপত্র ভেতরে নিয়ে যেতে বললেই তিনি সব কিছুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে চোখ কপালে তোলেন। নিবরাস এত এত জিনিস বাজার থেকে উঠিয়ে এনেছে যে দেখে মনে হচ্ছে সে নতুন জামাই। বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি এসেছে। আজমাইনও তখন অবাক হচ্ছিল নিবরাস এতকিছু কেনাকাটা করছে বলে। কিন্তু কিছু বলতেও পারেনা বস যে তাই। তবে তার বি’র’ক্ত’ই লাগছিল।

আজমাইন রুমে চলে যাওয়ার পর বুয়া মর্জিনা আর ছকিনাকে ডাক দিলো। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল,

-‘এহ, আমি বুঝি করুম কাম! আমি কি কামের বেডি? আমারে কয় ব্যাগ উডাইতে।’

মর্জিনা আর ছকিনা এসে সব নিয়ে যখন চলে গেল তখন বুয়া পেছন পেছন যেতে থাকে। আর বলে,

-‘বাবাগো বাবা! হেয় এত্তডি জিনিস আনছে মনে হয় হের শ্বউর বাইত আইছে। বড় লোকের এসব ঢং দেখলে বাঁচি না। হুহ!’

টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে আজমাইন আর নিবরাসও টেবিলেই বসেছে। শাহরিয়ার বসতে চায়নি। তাকে হল রুমেই দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে অরোরা বলল,

-‘এ কি? আপনি বসবেন না?’

শাহরিয়ার বেশ দ্বিধা জড়ানো গলায় বলল,

-‘আসলে আমি হসপিটাল থেকে এসেছি। ওটি ছিল তো, তাই এখন শাওয়ার না নিয়ে কিছু খেতে পারব না। আপনারা প্লিজ খেয়ে নিন।’

-‘শাওয়ার নিয়ে নিন তবে।’

শাহরিয়ার এমন কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। এখানে শাওয়ার নিবে কেন সে? এটা একটা অসম্ভব কাজ নয় কি! সে হেসে বলল,

-‘সেটা তো সম্ভব না। আমি আসলে এখনই হসপিটাল ব্যাক করব। আমার এখনও দুইটা ওটি বাকি আছে। মা আর খালামণিও খাওয়া দাওয়ার পর নিজেদের মতো ফিরে যাবেন।’

কথাটা শুনে অরোরার এত ক’ষ্ট হলো! ক’ষ্টে তার বুক ফাঁটা কান্না আসছিল। লোকটা আরো কিছুক্ষণ থাকলে কি হবে? শাহরিয়ার সত্যি সত্যিই বি’দা’য় নিয়ে চলে গেল। এক গ্লাস পানিও পান করল না সে। অরোরা এত বেশি ম’র্মা’হ’ত হলো যে রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে। সে ভাবে, কয়েক মুহূর্তের পরিচয়ে কারো জন্য বুঝি এত মায়া হয়? এটা কি কেবল মায়া নাকি অন্যকিছু!

সন্ধ্যার আগেই একে একে সব মেহমান বিদায় নিলো। মাগরিবের নামায শেষে খান বাড়ির সবাই নিজেদের রোজকার রুটিনের মতোন হল রুমে বসে চা পাকোড়া খাচ্ছিল আর আজকের সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। সভায় বাড়ির প্রতিটি সদস্য ছিল। বুয়া পর্যন্ত ছিল।

অরোরা আর শাহরিয়ারের বিয়ের তারিখ পড়বে পরশু বায়নার পর। আগামীকাল থেকেই সকল প্রকার আয়োজন শুরু হবে। বাড়ির জোয়ান ছেলেদের দায়িত্ব সব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবাই বেশ আনন্দের সাথেই নিজ নিজ কাজ বুঝে নিচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, বিয়ে যে ঠিক হয়েছে এতে অরোরা কিংবা শাহরিয়ারের মত কেউ নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি। আসলে শাহরিয়ারের মায়ের অরোরাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। ছেলের বউ হিসেবে তার অরোরাকেই চাই। ছেলেটা তো বিয়ে শাদি করতে চায় না। দেখা গেল তাকে জিজ্ঞেস করতে গেলে বারণ করে দিবে। তাই তিনি কিছু বলেন না আর। মত নেওয়ার কথাও ভাবেন না। শুধু ক’ড়া গলায় বলে দেন এখানে বিয়ে হবে মানে এখানেই হবে। খান বাড়িতেও একই দশা। শাহরিয়ারকে সবার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এদিকে তাদের মেয়ের তো শুধু রিজেক্ট করার দো’ষ আছে। দেখা গেল এই এত ভালো প্রস্তাবটাও জিজ্ঞেস করলে কোনো একটা কারণ দেখিয়ে সে নাকোচ করে দিবে। তাই কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধও করেনি। প্রথমে অবশ্য ইমরোজ খান একবার বলেছেন অরোরার কি মত তা জানার জন্যে। তার এহেন কথা শুনে তাদের মা হোসনে আরা বেগম ঠোঁট উল্টো করে জবাব দেন,

-‘হেরে কি জিগাইবো? হেয় তো ওই এক কথায় কইব। বেডা অপর্বিত্তর! হের মতো না পবিত্তর না। হের পবিত্ত হইছে গিয়া শুচি’বা’য়ু। তো হেয় কি চায়? হের মতো শু’চি’বা’ই হইতো পোলাগো? যত্তসব! আমগো কালে পুতুল খেলতে ঘর দুয়ারে বইসা ছিলাম, তেনারা আইসা আমারে খেলাইতে দেখছিল। সক্কালে আইয়া বিক্কালেই বিয়া কইরা আমারে লইয়া আনছে। আহারে! বাপের ঘর! হেইডা যেন ক্ষণিকের আশ্রয়!’

শেষ কথাগুলো বলতে বলতে হোসনে আরা বেগমের মুখে কালো মেঘ জমে। চোখে বিষণ্ণতা এসে ভর করে। ছেলে, নাতি সবাই তার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে কেবল।

সব কথাবার্তা শেষ হলে যখন সবাই এশার নামাযের জন্য বের হবে সেইসময় তাদের বাড়িতে এক ভদ্র মহিলা আর একটা যুবতী মেয়ে প্রবেশ করে। সাথে অবশ্য ড্রাইভারের পোশাকে একটা লোক ছিল। যার হাতে কিনা মন্ডা মিঠাই, ফলমূলে ভরপুর ব্যাগ ছিল। মহিলা এসে সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে জানালো তিনি ক্যামেলিয়ার কলেজের প্রফেসর। তার পরিচয় পেয়ে সবাই তাড়াতাড়ি তাকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তিনি হেসে বলেন,

-‘ব্যস্ত হবেন না। আমি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসেছি। কিছু জরুরী কথা বলার ছিল। ক্যামেলিয়ার বাবা মায়ের সাথে দরকারটা ছিল।’

রহমত খান এগিয়ে এসে বললেন,

-‘জ্বি আমি ক্যামেলিয়ার বাবা।’

রহমত খান যে সোফায় বসেছিলেন তার পাশে তার স্ত্রী নুর জাহান দাঁড়িয়ে বলেন,

-‘আমি ওর মা। কিছু কি হয়েছে ম্যাডাম?’

-‘আসলে কিছু হয়েছে বলতে আমি শুনেছি ক্যামেলিয়ার নাকি বিয়ে দিচ্ছেন!’

উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলেন। রহমত খান বললেন,

-‘ক্যামেলিয়াকে বিয়ে দিচ্ছি?’

তারপরই কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে হেসে বলেন,

-‘আরে না না। ক্যামেলিয়া নয়, আমাদের বাড়ির বড় মেয়ে অরোরার বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে। এই যে ইনি আমার বড় ভাই।’

রহমত খান একে একে সবার সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলেন। ক্যামেলিয়ার প্রফেসর মাজেদা হক কিছুক্ষণের জন্য তব্দা খেয়ে যান। তারপরই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। হেসে বলেন,

-‘আমার ছেলে জাওয়াদ, নৌবাহিনীতে আছে ক্যাপ্টেন পদে। আপনার মেয়ে ক্যামেলিয়া তাকে পছন্দ করে। আর আমার ছেলেরও আপনার মেয়েকে পছন্দ। সে তো সবসময় কাজের জন্যে বাহিরে বাহিরে থাকে। তেমন একটা আসা হয় না। তাই বিয়ে শাদির ব্যাপারে এখনও কিছু ভাবা হয়ে ওঠেনি। আজ সকালে ছেলে আমাকে কল দিয়ে ভাঙা গলায় মা ডাকে। আমি ভাবলাম কোনো অ’ঘ’ট’ন ঘটে গেছে। বোঝেনই তো! ওদের যে পেশা তাতে কতটা রি’স্ক। আমি এদিকে ভ’য়ে অস্থির। তার কি হলো! পরে কথা বলার পর জানতে পারলাম এসব। আপনার মেয়ে নাকি আমার ছেলেকে মেসেজ পাঠিয়ে বলেছে তার বিয়ে ঠিক। এরপর আমার তাকে সে সবকিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছে। ছেলের থেকে ঘটনা আরো জানলাম সে ক্যামেলিয়াকে পছন্দের কথা কখনো জানায়নি। আসলে সে চাইছিল একেবারে বিয়ের কথাটাই তুলবে। তার সামনের মাসেই ফেরার কথা। এবার এসেই নাকি সে জানাতো কিন্তু এর মধ্যে এসব দেখে সে আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে পড়েছে। আমার ওইরকম শক্ত মনের একটা ছেলে যে এমন মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে দুর্বল হয়ে পড়বে আমি ভাবতেও পারেনি। ভাই! আপনার মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্য আমি চাইছি। ছেলেটা আমার আপনার মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি মা, ছেলের অনুভূতি আমি বুঝি। মেয়েটাকে আমার ছেলের জন্যই দিবেন দয়া করে। তা ক্যামেলিয়া কোথায়? একটু ডেকে দিবেন!’

ক্যামেলিয়া নিজের প্রফেসরকে দেখে বহু আগেই সিঁড়ির কোণায় গিয়ে লুকিয়েছিল। সেখান থেকে সব শুনে সে ল’জ্জায় লাল নীল হচ্ছিল আবার ভ’য়ে হাত পাও তার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। আজ যে তাকে কত বড় বি’প’দের মুখে পড়তে হবে ভাবতেই তার বুক ধড়ফড় করছে। সে কোনো ভাবেই আজ ম্যামের সামনে যাবে না। তাই তাড়াতাড়ি নিজের রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

কামিনী তার দাদুর রুমে ছিল। সেখান থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই তাকে মাজেদা হক দেখে ফেলেন। তারপর নিজে উঠে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে টে’নে নিয়ে আসেন।

আবইয়াজ, আলফাজ, আজমাইন তখন দোতলা থেকে নামছিল। কামিনীকে একটা মহিলা হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দেখে সকলেই থমকে দাঁড়ালো। আজকে ক্যামেলিয়া আর কামিনী দুজনেই এক রকম জামা পরেছিল। তাই কেউই বুঝতে পারল না এটা আসলে কামিনী নাকি ক্যামেলিয়া। তবে আবইয়াজ বুঝল। সে তড়িগড়ি করে নিচে নেমে আসতেই শুনতে পেল মাজেদা হকের কথা।

-‘তা তুমি যে আমার ছেলেকে ভালোবাসো সেটা আমাকে আগে বললেই তো পারতে মা! আমি নিজেই ছেলেকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিতাম। এখন যখন আমি জেনে গেছি আর চিন্তা নেই। খুব দ্রুত বিয়েটা দিয়ে দিব দুজনের। জাওয়াদ ফিরছে। আগামী মাসের পাঁচ তারিখে।’

আবইয়াজ কথাটা শুনেই যেন নিজের অবস্থান ভুলে গেল। খপ করে কামিনীর হাতটা মুঠোয় পুড়ে তাকে টান দিয়ে নিজের দিকে নিয়ে এসে বলল,

-‘কাকে ভালোবাসো তুমি? উনি কি বলছেন এসব!’

আবইয়াজ এত জোর গলায় আগে কখনো কথা বলেনি কামিনীর সাথে। কারো সাথেই বলে না অবশ্য। এই আবইয়াজকে কেউই চিনতে পারল না। উপস্থিত সবাই ভড়কে গেল আবইয়াজের কাজে। আর কামিনী তো ভ’য়ের চোটে জ্ঞানই হারিয়ে ফেলে।

#চলবে।