নাম না জানা পাখি পর্ব-০১

0
1035

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১

অসভ্য মেয়ে, ছেলে দেখলেই গায়ে পরতে ইচ্ছা করে? তোমরা মেয়ে জাতি গুলো এতো গায়ে পরা সভাবের কি করে হউ? লজ্জা নেই? যেমন দেখলে সেলেব্রিটি ছেলে তেমনই নাটক শুরু করে দিলে? তোমরা মেয়েরা টাকা ছাড়া কিছুই বুঝো না বড়োলোক ঘরের ছেলে দেখলেই পিছে লাগতে হবে তাই না?

রেগে এক দমে বলে থাকে মাহির। খুশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পরেই যাচ্ছে। খুশি বুঝতে পারছে না এই কোন মাহির কে দেখছে সে, তার মাহির তো এমন ছিলো না।

কিছুখন আগের ঘটনা।

আজ এক নাম না জানা কোনো পাখি ,
ডাক দিলো ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো।
আজ এলো কোন অজানা বিকেল ,
গান দিলো গোধূলী এক দু মুঠো।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।(২বার)
(মিউজিক)🎶

কলকাতা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বিল্ডিং এ মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো খুশি।তখনই তার কানে আসে এই গান। চমকে উঠে গানটা শুনে,আর যে গান টা গাইছে তার কন্ঠ শুনে।সঙ্গে সঙ্গে চোখে পানি চলে আসে খুশির।পাগলের মতো দৌড়ে যায় সেদিকে।খুশি কে এমন পাগলের মতো দৌড়াতে দেখে খুশির ফ্রেন্ড অধরা পিছন থেকে চিৎকার করে ডাকছে তবুও খুশির কানে যেনো কোনো ডাক যায় না।সে তো এই গান গাওয়া ব্যক্তির কাছে যাচ্ছে। খুব যে চেনা এই কণ্ঠ, খুব বেশি চেনা। খুশি দৌড়ে নামার সময় সিড়িতে পা মচকে পরে যায় তা দেখে অধরা চিৎকার করে উঠে,

“খুশি!!”

কিন্তু না খুশি তবুও কোনো কথা শুনে না। মচকে যাওয়া পা নিয়ে খোড়াতে খোড়াতে দৌড়ে হল রুমের কাছে যায়। কলেজে আজ অনুষ্ঠান হচ্ছে,হল রুমে।সেখানেই গান গাইছে কেউ একজন।তা শুনেই খুশির এমন পাগলামি।খুশি হল রুমের দরজার কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়।চোখ থেকে অনবরত পানি পরেই যাচ্ছে।সামনের স্টেজের মানুষটাকে দেখে মুখে হাত দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে খুশি। চোখের সামনে পুরনো দিন গুলো ভেসে উঠে। কতো খুঁজেছে এই মানুষটাকে খুশি। কতো অপেক্ষা করেছে, তবুও আসে নি এই মানুষ টা। খুব অভিমান হচ্ছে খুশির।কান্না যেনো থামছেই না।

(স্টেজের মানুষটা মিউজিক শেষে আবার গান শুরু করে)

🎶আজ এক নাম না জানা কোনো হাওয়া ,
চোখ বুজে ভাবছে বেয়াদব ধুলো।
টুপটাপ বৃষ্টি ফোটা গেলো থেমে ,
ভেজা ভেজা খিড়কি দরজা তুমি খোলো।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।(২বার)
(মিউজিক)🎶

এই গান, হ্যাঁ এই গান কতোবার শুনিয়েছে খুশিকে এই মানুষটা। খুশি ভাবতে লাগে,
“উনি কি আমার জন্য এখানে এসেছে? আমার পছন্দের গান গেয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে। হ্যাঁ আমার জন্যই এসেছে। এতোদিন অপেক্ষা করিয়েছে আমাকে, আমিও ভাব নিয়ে কথা বলবো না মিস্টার বেশরম।%(কান্না করছে আর এগুলো ভাবছে খুশি)

(গান)
আজ যদি গল্প হয় , চুপচাপ রূপকথার,
লাল নীল কমলা রোদ ক্যানভাসে . . ।
আজ যদি বৃষ্টি হয় , যেন প্রানপনে ভিজবো খুব,
রামধনু উঠবে ঠিক ,ফ্যান্টাসি.. ।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।
ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই। – [ ২ বার ]

গান শেষে চারিদিক থেকে করতালি ভেজে উঠে। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কলকাতার বড় শিংগার নুরে শাহরিয়ার মাহিরের গান। কলকাতা মেডিকেল কলেজের নবীনবরণ এর চিফ গেস্ট হয়ে এসেছে নুরে শাহরিয়ার মাহির। সবার জোরাজুরি তে গান গায় সে।স্টেজ থেকে নেমে যায় মাহির। তার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। কলেজের সবাই ভির জমাচ্ছে মাহিরের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য। গার্ডদের সাহায্যে বেরিয়ে যায় মাহির। এতোক্ষণ নয়ন ভরা চোখে দাঁড়িয়ে দেখছিল খুশি। খুশির চোখে আনন্দের কান্না মুখে হাসি দুটো কারণে।এক,মাহিরকে খুঁজে পেয়েছে।দুই, মাহির তার স্বপ্ন পূরণ করেছে দেখে।মাহিরের খুব করে ইচ্ছা ছিল বড় সিংগার হওয়ার।বার বার খুশিকে বলতো, “দেখবে একদিন আমি অনেক বড় গায়ক হবো।সবাই আমার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য ব্যাকুল হবে”। হ্যাঁ, মাহির তার স্বপ্ন পূরণ করেছে।সব সেলফি তোলার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।

মাহির কলেজের গাড়ি পার্কিং সাইডে আসে।ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছে। তখনি পিছন থেকে কেউ মাহিরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগে।মাহির ভীষণ অবাক হয়।তাড়াতাড়ি তাকে ছাড়িয়ে সামনে তাকায়।খুশি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিল মাহির কে।কিন্তু মাহির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে খুশির দিকে।খুশি আবার ঝাপটে ধরে মাহিরকে। কান্না করতে করতে বলে,

“কোথায় হারিয়ে গেছিলেন মিস্টার বেশরম? আমাকে কি আপনার একবারও মনে পরেনি? আমাকে নিতে আসবেন বলে আর আসেননি কেনো? জানেন আমি কতো অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য।”(কান্না করছে আর বলছে খুশি)

মাহির নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু।বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সঙ্গে। মাহির এবার খুশিকে জোর করে ছাড়িয়ে বলে,

“কে তুমি?”

মাহিরের এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে তাকায় খুশি মাহিরের দিকে। খুশির চোখে জলের পুকুর হয়ে আছে।মাহির খুশির চোখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মাহির কেনো জানি এই চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না সে।খুশি বলে,

“আমাকে চিনতে পারছো না? আমি মিহু।আমরা একসঙ্গে কতো সময় কাটিয়েছি।”(মায়া ভরা মুখ নিয়ে বলে খুশি)

“দেখেন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি আপনাকে চিনি না। এই মুহুর্তে আপনাকে আমি প্রথম দেখলাম।”(মাহির শান্ত হয়ে বলে)

“তুমি মজা করছো তাই না? আর তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছো? আমাকে ভয় দেখাচ্ছো। আমি বুঝেছি,আমি আর ছোট নেই মিস্টার বেশরম। আমি সব বুঝি আমাকে আগের মত আবার ভয় দেখাচ্ছো আমি আর ভয় পায়না।”(খুশি চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলে)

“দেখুন আমি আপনাকে সত্যি চিনি না।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।যান এখান থেকে।”(একটু রেগে বলে)

“কেনো এমন করছো? আমি তোমার খুশি।আমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতে না,আর এখন না চেনার ভান কেনো করছো?”(কান্না করে)

খুশি কান্না করতে করতে আবার জরিয়ে ধরে মাহিরকে। মাহির এবার খুব রেগে খুশিকে এক থাপ্পর দেয়, আর বাজে কথা শোনাতে লাগে।

অসভ্য মেয়ে ছেলে দেখলেই গায়ে পরতে ইচ্ছা করে? তোমরা মেয়ে জাতি গুলো এতো গায়ে পরা সভাবের কি করে হউ? লজ্জা নেই? যেমন দেখলে সেলেব্রিটি ছেলে তেমনই নাটক শুরু করে দিলে? তোমরা মেয়েরা টাকা ছাড়া কিছুই বুঝো না বড়োলোক ঘরের ছেলে দেখলেই পিছে লাগতে হবে তাই না?

রেগে এক দমে বলে থাকে মাহির। খুশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পরেই যাচ্ছে। খুশি বুঝতে পারছে না এই কোন মাহির কে দেখছে সে, তার মাহির তো এমন ছিলো না।

” আমি গায়ে পরা মেয়ে? টাকার লোভে তোমার পিছনে এসেছি?(খুশি কান্না করতে করতে বলে)

মাহির চুপ করে আছে কিছু বলে না শুধু রাগি চোখে খুশির দিকে তাকিয়ে আছে। খুশি আবার বলে

“তুমি যদি আমাকে চিনতে না পারো তাহলে তো এটাও বলবে, তুমি রামপুর গ্রামে আসো নি?

“আমি কখন রামপুর গ্রামে গেলাম?পাগল নাকি!”(বিরক্ত মাহির)

খুশি অনেক বেশি অবাক হয়। খুশি বলে,

“এমন মজা করবে না প্লিজ আমি অনেক খুঁজেছি তোমাকে পাইনি।এখন যখন পেয়েছি,এমন করছেন কেনো ।অনেক ভালোবাসি তোমাকে ।”(কান্না করে)

মাহির এবার খুব রেগে যায়।রেগে খুশিকে আবার জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়। খুশি থাপ্পরের চাপ নিতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়। খুশি এবার অবাকের সাত আসমানে উঠে গেছে। মাহির ওকে মারলো!যে কোনোদিন ফুলের টোকাও দেয়নি সে আজ দুই বার মারলো!ভাবতেই পারছে না খুশি। মাহির বলে,

“এই মেয়ে লজ্জা শরম কি চিনো না নাকি? একটা অচেনা ছেলেকে বারবার জড়িয়ে ধরতে আসছো। তোমার মতো মেয়েরা এসবই পারে। বড়লোক ছেলে দেখলেই পটাতে আসে।স্টুপিড একটা। আমার সামনেও যাতে না দেখি আর তোমাকে।”(বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় মাহির)

খুশি অবাক হয়ে মাহিরের বলা কথা গুলা শুনছিল। এ কোন মাহিরকে দেখলো খুশি!এটা তো ওর মাহির না। মাহির কখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন করে না আর খুশির সঙ্গে তো নয়-ই। এমন কেনো করলো মাহির? খুশি কে চিনতে পারলো না কেনো?খুশি কান্নায় ভেঙে পরে।অধরা খুশির কাছে এসে দাঁড়ায়।এতক্ষন আড়াল থেকে সব দেখেছে অধরা।অধরা খুশির মাথায় হাত রাখে।খুশি অধরাকে দেখে আরো আবেগী হয়ে উঠে। ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে।

চলবে?