নাম না জানা পাখি পর্ব-০২

0
640

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_২

(গল্পের নায়কার নাম খুশি, মিহু না। এই পর্ব টা অনেক আগে লিখে ছিলাম তখন নাম নিয়ে একটু ঝামেলাই ছিলাম তাই গলমেলে হয়ে গেছে। নায়কার নাম খুশি।)

পরের দিন খুশি মাহিরের ডিটেইলস অধরার থেকে বের করে। মাহিরকে সবাই চিনে আর চিনবেই না কেনো, নাম করা শিংগার হাজার হাজার ফ্যান তার। গত পাচটা বছর খুশি গান শুনে নি আর না কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার খবর রেখেছে। খুশির জীবনে পড়াশোনা ছাড়া কিছু ছিলো না, যে করেই হক ভালো রেজাল্ট করা লাগবে এটা নিয়েই পরে ছিলো। দুই বছর হলো গ্রাম থেকে শহরে এসেছে কলকাতাই ভালো ভার্সিটি তে পড়বে তাই। শহরে আশার আরেকটা কারণ আছে তা আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।

অধরার কাছে মাহিরের সব ডিটেইলস নেওয়ার পর জানতে পারে মাহির দুইবছর ধরে কতো কাছে ছিলো তার। অথচ খুশি জানতেই পারে নি পাচ বছর ধরে যাকে খুঁজছে তার শহরেই দুই বছর ধরে বাশ করছে খুশি।

হৃদিতা আহমেদ খুশি, আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে খুশি দেখতে বেশ সুন্দরি। দুই বছর আগে আব্বু মারা গেছে খুশির জীবনে তার আম্মু মুনতাহা ছাড়া কেউ নেই। রামপুর গ্রামে বাশ করতো খুশি ও তার পরিবার কিন্তু দুই বছর আগে আব্বু মারা যাওয়াই শহরে চলে আসে খুশি তার আম্মু কে নিয়ে। খুশি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট, পড়াশোনার পাশাপাশি কোলকাতার বড়ো একটা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম জব করে। এখন খুশিকেই সব কিছু দেখতে হয়, তার আম্মুর মেডিসিন সংসার খরচ তার নিজের পড়াশোনার খরচ সব খুশিকে একাই করতে হয়। খুশির আম্মু সেলাইয়ের কাজ করতো কিন্তু তার অসুখ দিন দিন বেরেই চলেছে তাই খুশি আর তার আম্মু কে সেলাইয় করতে দেয়না। বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্টে কাজ করে খুশি। ভার্সিটি শেষ করে চলে যায় স্কুটি নিয়ে রেস্টুরেন্টে। টাকা জমিয়ে সেকেন্ড হান্ড একটা স্কুটি কিনেছে ভার্সিটি থেকে রেস্টুরেন্টে অনেক সময় লাগে যেতে তাই।

“তুমি আমাকে চিনতে পারছো না কেনো মাহির? তুমি তো খুশি বলতে পাগল ছিলা এখন কেনো আমাকে চিনতে পারলে না। (কথা গুলো মনে মনে ভেবেই চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরে খুশির)

” কি রে কান্না করছিস কেনো? তাহলে কি এই মাহির তোর হারিয়ে যাওয়া বন্ধু?(অধরা অবাক হয়ে বলে)

খুশি কিছু বলে না শুধু মাথা নারাই যার অর্থ হ্যাঁ।

।।

“কষ্ট হচ্ছে না খুব মিস হৃদিতা খুশি আহমেদ খুব কষ্ট হচ্ছে। হ্যাঁ আমারও এমন কষ্ট হয়েছিলো ৫ বছর আগে যখন গ্রামের মানুষ অপমান করে আমার আব্বু আম্মু আমাকে বের করে দিয়েছিল। কথায় ছিলে তুমি তখন? একটা বারও খোজ নিয়েছিলে সেদিন ঠিক কতটা অপমান হতে হয়েছিলো আমাকে আমার পরিবারকে। কেনো লুকিয়ে ছিলে সেদিন সামনে এসে সত্যি কেনো বলো নি। যতটা কষ্ট অপমান আমাকে সজ্জ করতে হয়েছে ততটাই তোমাকেও করতে হবে মিস খুশি। অপমান তো তুমি আর তোমার পরিবার হয়েছো এবার কষ্ট ভগ কোরো আমার থেকে। তুমি বললে না তুমি নাকি আমাকে খুঁজেছো অনেক হাহা তুমি কি খুঁজবে আমি নিজেই তোমাকে আমার চোখের সামনে রেখেছি। গতকাল আমাদের দেখা টা কোনো কাকতালিও না আমি নিজেই তোমার সামনে গেছি।

দেওয়ালে তাংগানো খুশির ছবির সামনে দাড়িয়ে প্রচুর পরিমানে রাগ নিয়ে বলে মাহির কথা গুলো।

।।

সকালে উঠে খুশি স্কুটি নিয়ে ভার্সিটির জন্য বের হয়। খুশি নিজের মতো স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলো তখনি একটা গাড়ি এসে খুশিকে ধাক্কা দেয়। যদিও ধাক্কা টা খুব জরে লাগেনি কিন্তু খুশি স্কুটি থেকে পরে যায় নিছে। হাতে একটু ব্যাথাও পেয়েছে, খুশি রেগে গাড়ির মালিকের কাছে যায় গাড়ির কাচে টোকা দিয়ে বলতে শুরু করে।

” চোখ কি হাটু তে নিয়ে গাড়ি চালাতে নেমেছেন? নাকি নিজের সম্পত্তি ভেবে রেখেছেন রাস্তা টাকে?

কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই খুশি থমকে যায়, কারণ এটা আর কেউ না সয়ং মাহির। মাহিরকে দেখে খুশি চুপ করে যায় কিছুই বলে না কারণ মাহিরের পাসে একটা মেয়ে বসে আছে খুশি তাকে দেখতেই ব্যাস্ত। মাহির গাড়ি থেকে বের হয়ে খুশির সামনে দাড়িয়ে বলে।

“উপ্সস এই পাগল মেয়েটা এখানেউ অসহ্য। (বিরক্তি নিয়ে বলে)

খুশি কে দেখে মাহিরের বিরক্তি মাখা কথা শুনে অনেক কষ্ট হয় খুশির। খুশি ভাবে আগে একদিন দেখা না করলে বিরক্তি হতে তুমি আর আজ দেখা হয়েছে বলে করছে।

” কতটা বদলে গেছো তুমি। (মনে মনে খুশি বলে)

খুশিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহির চোখ ফিরিয়ে নেয়। যতই রেগে থাকুক ঘৃণা করুক, তবুও মাহির খুশির চোখে আটকে যায়। মাহির কিছু বলবে তার আগে গাড়ি থেকে মেয়েটা বের হয়ে বলে।

“মাহির কি হয়েছে?

” কিছু না বেবি তুমি গাড়ি তে বসো আমি আসছি।(মাহির খুশি শুনিয়ে বললো)

মাহিরের কথা শুনে খুশি ফিক করে হেসে দেয়। খুশির এমন হটাৎ হাসি দেখে মাহির রেগে বলে।

” হাসলে কেনো তুমি?

“আপনি বিয়ে কবে করলেন? আর আপনার এতো বড়ো মেয়েও আছে জানতাম না।(শেষের কথা টা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে খুশি)

এমন কথা শুনে মেয়েটা রেগে বলে।

“এই মেয়ে কি বলছো এসব তুমি?

” জারা গাড়িতে গিয়ে বসো।

মেয়েটার নাম জারা, মাহির জারাকে গাড়িতে বসতে বলে খুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে।

“জারা আমার হবু বউ, খুব জলদি ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। পরের বার আমার চোখের সামনে আসবে না।

কথা গুলো বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায় মাহির। খুশি দাড়িয়ে মাহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরে মাহিরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বলে। খুব কষ্ট হয় খুশির।

” আমার জন্য তাহলে কি তোমার কোন ফিলিংস ছিলো না।

কথা টা মনে মনে বলে স্কুটি নিচ থেকে তুলে চলে যায় খুশি। এই দিকে মাহির গাড়ি চালাছে আর ভাবছে,

“আমি তোমার বার বার সামনে যাবো এখন যেমন ইচ্ছা করে তোমার স্কুটিতে ধাক্কা দিলাম। তোমাকে কে তো জানাতে হতো আমার হবু বউ ও আছে।। (মনে মনে বলে আর শয়তানি হাসি দেয়)

ভার্সিটিতে এসে খুশি অধরা কে বলে।

” অধু, আমি সকালের টাইমে একটা টিউসন পড়াতে চাই। তোর কোনো আত্তিওর টিচার লাগলে আমাকে বলিস প্লিজ।

“কি তুই আবার টিউসন পড়াবি, রেস্টুরেন্টে তো জব করিস আর কেন টিউসন পড়া লাগবে তোর নিজের ও পড়া আছে। আর তুই রবট না তোর নিজের ও রেস্ট দরকার। (অধরা)

” আম্মুর শরিল দিন দিন খারাপ হচ্ছে ডক্টর বলেছে অপারেশন না করালে আম্মুকে বাচাতে পারবো না। তুই তো জানিস আমার আম্মু ছাড়া কেউ নেই। আমার টাকার খুব দরকার তুই প্লিজ খুজে দে।

“ঠিক আছে আমি তোকে রাতে ফোন করবো।

তারপরে খুশি অধরা ক্লাস করতে লাগে। খুশির মনে মাহিরের জন্য ফিলিংস আছে খুশি চাই ও মাহির তাকে চিনুক কথা বলুক। কিন্তু মাহিরের থেকে খুশির এখন তার আম্মুর জীবন বাচানো জরুরি আর তার পড়াশোনা। খুশি চাইনা জোর করে মাহিরকে নিজের করে নিতে। গতকাল রাতেই ভেবে নিয়েছে যতদিন মাহির নিজে তার কাছে আসে ততদিন খুশি মাহিরের সঙ্গে আর কথা বলবে না বা মনে করানোর চেস্টাও করবে না।

চলবে?

(বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি।)