নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-১৪+১৫

0
312

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৪ .

বিকেলের হাওয়ায় বারান্দার ইরার আপন নীড় হাওয়ার শন শন শব্দে ঝনঝন করে নড়ছে। সাথে বেচারাও নড়ছে। মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটে বলে চলেছে ,”ইছে, ইছে, ।”

বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে হারিয়ে রয়েছে ইচ্ছে। শীতের শেষ আর বসন্তের শুরু, এই আবহাওয়ার মধ্যে এক মাধুর্য্য রয়েছে। আচ্ছা সবাই কী তা অনুভব করে? সকালের ভোরের আলোর সাদা আকাশটাকে দেখে দিন শুরু থেকে শুরু করে বেলার রোদের আলোর ছটার মাঝেও এক আলাদা অনুভুতি লুকিয়ে আছে। আর বিকেল শুরুর মুহূর্তকে বলে বোঝানো আর যাই হোক আমার কম্ম নয়। বিকেলের হাওয়া মৃদুমন্দগতিতে শুধু বয়ে চলে এমন না। সেই বাতাস যেনো কানে কানে বলে যায়, “শোনো হে রমণী শোনো, তোমার চেনা এই আকাশটা বহু দিনের পুরোনো। এই যে তোমার দেখা এই শহরে ছিল এক উপন্যাস এর প্রেমিকা। ছিল কোনো কাব্যিক। যার বুনোন শৈলী তোমার চোখে ভাসে, তবে তুমি তো বোঝো না হে রমণী। ওই যে পাখির গুঞ্জন, তারা রোজ গায় কবির প্রেমের হাজারো গান। সেই গানেরই প্রেমে তুমি
অপেক্ষায় রও যেই মুহূর্তের, ওই রাস্তার ধারে হেঁটে যাওয়া তোমার প্রেমিক সে আজ কখন আসবে? এসে কী তবে ভালোবাসি বলবে? নাকি না দেখেই চলে যাবে?”

প্রকৃতির সত্তা থেকে ইচ্ছে যখন বেরিয়ে এলো তখনও ইরা ” ইছে” করে ডেকে চলেছে। ইচ্ছের বড্ড রাগ হলো। ইচ্ছে নাম যদি পারিস তবে ‘ ইচ্ছে ‘ ডাক ‘ ইছে ‘ কেনো ডাকবি রে? যদি বা ইরা হলো ইচ্ছের সতীন। আগে ছিল না এই কয়দিন হয়েছে। কারণ এখন দেখা যায় ইরার সাথেই নীরবের যত ভাব। নীরব আঠার মতো ইরার পিছনে পড়ে থেকে কথা শিখিয়েছে। যেমন ‘ নীরব ‘ আর ‘ ইছে ‘। নিজের নামটা খুব ভালোভাবেই ইরার ঠোঁটোস্ত করিয়েছে নীরব। কেবল ইচ্ছের বেলায় গাফিলতি দিয়ে এই কাজ করেছে। তাই তো নামটা ইচ্ছে পর্যন্ত পৌঁছায়নি। মাঝের স্টেশনে ট্রেন না থেমে সোজা গন্তব্যে পৌঁছিয়ে গেছে যেনো। ইরা আবারও ডানা ঝাপটিয়ে ‘ ইছে ‘ বলতেই ইচ্ছে ইরার খাঁচায় একটা হালকা করে বারি মেরে ঘরে চলে গেল। শুধু বলা হলো না, ” আমার নামের পিন্ডি চটকাবিনা। নামটা কে নিয়ে মাঝে মাঝে আমি দুঃখ প্রকাশ করলেও নামটা আমি বড্ড ভালোবাসি।” জীবনে নামটাই কেবল ওর অজান্তে কেউ একজন অন্তত ভালো রেখেছে। নাহলে অনেকের এমন এমন নাম হয় তারা ভাবে জন্মের সময় যদি নিজের পছন্দের নামটা চুজ করতে পারতো। কিন্তু সব কিছু সম্ভব হয় না।
———-
বিছানা জুড়ে কম করে পাঁচটা শাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কার শাড়ি তা ইচ্ছে জানে না। ওর তো নয় আবার রুমা দেবীর ও না। তাহলে?

নীরব টিশার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো, ” দেখ তো শাড়ি গুলো পছন্দ কিনা?”

ভ্রু কুঁচকে শাড়ির দিকে তাকালো ইচ্ছে। শাড়ি গুলো যে ওর জন্যে আনা তা ইচ্ছে ভালো মতোই জানে। আর শাড়ি গুলো যে ইচ্ছের পছন্দ হবে তা নীরব ও ভালো মতোই জানে। সামনেই ধীরের বিয়ে। সেই উপলক্ষেই নীরব শাড়িগুলো ইচ্ছের জন্যে এনেছে। যদিও বা ওরা শপিং এ গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ইচ্ছে কিচ্ছুটি নেই নি। ওর মতে শাড়ি ওর লাগবে না। টাকা নষ্ট করার কী আছে। কিন্তু নীরব অন্য প্রকৃতির। শুধু শাড়ি তো সে কেনেনি পাশে রয়েছে প্রতিটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং পাঞ্জাবি, কোট। ধীরের বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানে ওদের ড্রেস যেনো একই হয়, এই ভাবনায় শপিং। যদিও বা ভাবনাটা এসেছে ইপশি আর রজতের ড্রেস কম্বিনেশন দেখে। তাই নীরব ও অ্যাপ্লাই করলো নিজের ক্ষেত্রে।

ইচ্ছে র শাড়ি তো খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সব থেকে বেশি কিছু যদি ওকে আকৃষ্ট করে তবে তা নীরবের নীল পাঞ্জাবিটা। কী অসম্ভব সুন্দর! তাই হয়তো শাড়ির থেকে আগে পাঞ্জাবিটা খুলেই দেখে নিলো। যেনো ভাবাও হয়ে গেলো এই পাঞ্জাবিতে কেমন লাগতে পারে নীরবকে।

লাল একখান শাড়ি নীরবের ভারী পছন্দের। সেটাই নীরব হাতে নিয়ে ইচ্ছেকে দেখালো। ইচ্ছেও নীরবের দেখাদেখি নীল পাঞ্জাবিটা ওর চোখের সামনে তুলে অঙ্গভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো কতো সুন্দর।

– ” বাহ্, লাল রঙে মিশে গেছে নীল।”

————————

সকাল থেকেই বিয়ে বাড়িতে হাঁক পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে বাড়ির সকলে মিলে তারাহুরো করছে গায়ে হলুদের জন্যে। ছেলের হলুদ যত তাড়াতাড়ি হবে ততই না মেয়ের বাড়িতে হলুদ যাবে। পাশের বাড়ির বোস গিন্নি থেকে শুরু করে ইচ্ছের পরিবারের কতো আত্মীয় জড়ো হয়েছে আজ। ধীরকে বসানো হয়েছে হলুদ মাখাতে। বোস গিন্নি হাঁক দিয়ে বললো, ” কী গো নবনীতা? ইচ্ছে কে পাঠাবে তো এখানে তো আরেক এঁয়ো লাগবে। তাড়াতাড়ি পাঠাও। ওদিকে তেল হলুদে দেরি হয়ে যাবে তো।”

কথা শেষ হতে দেরি তার আগেই ইচ্ছের দূর সম্পর্কের এক পিসি বলে উঠলো, ” একই বলো বৌদি, ইচ্ছেকে জি করে এই কাজ করবে? ও তো বিধবা।”

কখনো শুয়ে, কখনো হেলে ধীরের জবরদস্ত ছবি তুলছিল নীরব। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বলা কথায় চমকে যায় নীরব। হাতের ক্যামেরা দিয়ে দূর থেকে আসা ইচ্ছের কয়েকটা ছবি তুলতে তুলতে বলে, ” জীবিত এই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি মারবেন না প্লিজ।”

সেই পিসি কে বোস গিন্নি কানে কানে বলে দিলেন ইচ্ছের বিয়ের কথা। আসলে তিনি তা জানতেন না। পাশ থেকে ইচ্ছের বয়সী সেঁজুতি নিজের মাকে সবার সামনেই বলে, ” বিধবা আবার কী? পৃথিবী থেকে কারোর বিদায় নেওয়া মানে এটা না যে সেই মানুষটা নেই তাই আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই। কেউ চলে গেলো মানে জীবন আমার জন্যে নতুন কিছু রেখেছে। ”

নীরব সাবলীল ভাবে মেয়েটির নিকটে গিয়ে বললো, ” আপনার নাম জানতে পারি.? ”

নিজের মন মর্জি চলা, রাগী মেয়েটি বিরক্তির সাথে বললো, ” আমি সেঁজুতি। ” বলেই মেয়েটি সেখান থেকে পালিয়ে যাই।

নীরবের মেয়েটাকে কেমন যেনো মনে হলো। যেনো নিজেই নিজের রাজা। দূর থেকে নীরবকে এইভাবে কারোর সাথে কথা বলতে দেখে ইচ্ছের ভালো লাগলো না। কেমন যেনো জেলাস দিল হলো।

_(চলবে)

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৫ .

ঠিক বিকেল পাঁচটার সময় বর অর্থাৎ ধীর যাবে বিয়ে করতে। আর তারজন্যে বিয়েবাড়ির প্রতিটা ব্যক্তি সাজ সজ্জায় ব্যস্ত। নীরব ও কয়েকজন ধীরের বন্ধু মিলে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধীর রয়েছে বাড়ির ভিতরে, কী সব নিয়ম রয়েছে। সেই কাজেই সে ব্যস্ত। আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নীরবের পা ব্যথার জোগাড়। অপরদিকে ধীরের বন্ধু গুলো একে অপরের নানা পোজে পিক তুলে দিচ্ছে। অসহ্য লাগছে নীরবের। ইচ্ছেটাও রেডি হচ্ছে। ও এলে ওকে খানিক রাগালে ভালো লাগতো নীরবের। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সেঁজুতি আসছে। গাড়ির কাছেই আসছে। পরনে তার অফ হোয়াইট লাহেঙ্গা, বেশ মানিয়েছে মেয়েটিকে। তার উপর চোখে একখানা চশমাও দেখা যাচ্ছে। কই নীরব আগে তো মেয়েটিকে চশমায় দেখেনি। তবে মানিয়েছে বেশ। কিন্তু মেয়েটিকে দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না সে সাজগোজ করেছে নাকি না।

– ” এই যে সেঁজু, তুমি কি জানো না মেয়েদের বেশি সাজলে ভূতের মতো লাগে। আর কম সাজলে মনে হয় খাবার ডায়টিং এর ন্যায় সাজহীন রয়েছে। তো তুমি কীসের ন্যায় এইমুহুর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছো?”

– ” আমার নাম সেঁজুতি, সেঁজু নয়। ”
কথাটুকু বলেই গাড়ির একেবারে পিছনের দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বসে গেলো সেঁজুতি। নীরব ও গিয়ে মাঝের সাইটের দরজাটা খুলে বাইরে পা ঝুলিয়ে গাড়িতে বসে গেলো। এই মেয়েটাকে এই মুহূর্তে একটু রাগাবে ও।

– ” আরে ওই একই হলো। তোমার সাজ এতো কম কেনো, আমি তো তাই ভাবছি। মনে হচ্ছে সাজগোজ করেছো আবার করোনি। ”

সেঁজুতি চোখের চশমাটা হাত দিয়ে একটু নাড়িয়ে বললো, ” আমিও তবে আপনাকে বলতে পারি আপনি একটু কমই সাজগোজ করেছেন। আপনার উচিৎ ছিল আরও ঘণ্টা খানেক মুখে মেকাপ করার। ”

– ” আর বলো না সেঁজু, এই লুকেই বউ আমার ফিদা। আরও ঘণ্টা খানিক সাজগোজ করলে বেচারি হয়তো ডবল ফিদা হয়ে যাবে। তখন আবার তোমাদেরই সামলাতে হবে। তোমাদের কষ্ট দিই কীকরে বলো। তোমরা এখন ঘুরবে, প্রেম করবে তা না করে তোমাদের ডিস্টার্ব করলে চলবে বলো। ”

নীরবকে অসহ্য লাগলো সেঁজুতির। পুনরায় নামের পিন্ডি করে দিয়েছে। ধীর ওকে বলেছিল অবশ্য, নীরব হলো প্রচুর ঘাঁড়তাঁড়া। সেঁজুতি কথা বাড়ায় না, কানে হ ইয়ার ফোন গুঁজে নেয়। নাহলে ও নির্ঘাত নীরবের মাথা ফাটিয়ে দিতো।

– ” তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে সেঁজুতি? না মানে আমার এক বন্ধু আছে ওউ ঠিক তোমার মতো নাকের উপর রাগ। ঘটকালি করবো তবে।”

সেঁজুতি বোধহয় শোনেনি কথা গুলো। শুনলে নীরবের হাল বেহাল হওয়ার ছিল। আর সেটাই ভাবালো নীরবকে, যে এই মেয়ে কিছু বলছে না কেনো? কিন্তু নীরব ভাবেনি বিয়ে বাড়ির মতো হইহুল্লোড় জায়গায় এই মেয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে রয়েছে। তবে নীরব ও কম যায় না। সেঁজুতির কান থেকে ইয়ার ফোনটা নিয়ে নিজের কানে গুজে দিলো। যেখানে একটা ইংলিশ সং হচ্ছে, যা নীরবের পছন্দ হলো না। যখন তখন যা তা গান শুনতে ভালো লাগে না।

– ” কী সব গান শোনো, একটু কোথায় ভালো ভালো গান শুনবে তা না। কিসব ড্রিম, ক্রিম গান শুনছো।”

সেঁজুতি রাগী চোখে নীরবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই ছেলেটার সাহস কম নয়। ওর জিনিসে হাত দিতে যেখানে সকলে ভয় পায় সেখানে এ কিনা ডাইরেক্ট কেঁড়ে নিয়ে নিলো। আর একটু আগে কী যেনো বললো, ওর বিয়ে! বিয়ে করবে তো ও তবে নীরবের ঘাঁড় যেইদিন মতকাটে পারবে সেই দিন।

– ” হেই সেঁজু, এতো রাগো কেনো? আমি কিন্তু এতটা রাগী না। তবে আমার বন্ধু খুব রাগী। তোমাকে টেক্কা দিয়ে চলে যাবে।”

গাড়ির সিটে সেঁজুতি জোরে একটা ঘুষি মারলো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো সেঁজুতি, আবারও বিয়ে, অসহ্য। নীরব এই মুহূর্তে গান না শুনলে ঠিকই বুঝতে পারতো যে এই মেয়ে কী পরিমাণ রাগী।

নীরব তখনও বাইরে পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে। কানে চলছে নীরবের অপছন্দের গান। খানিকটা দূরেই নীরব আর ধীরের বাড়ি। ওখান থেকে সকলে বেরিয়ে আসছে। এক্ষুনি গাড়ি ছাড়বে। বিয়ের মণ্ডপে যেতেও তো সময় লাগবে। তপতীর বিয়ের ডেকোরেশন যেখানে হয়েছে সেটা এখান থেকে প্রায় 20 কিমি। নীরবের কানে বাজতে থাকা গানটা শুনে নীরব বললো, ” এতক্ষণে একটা ভালো গান এলো। নীরবও গানটা গেয়ে উঠলো,
” এক মুঠো স্বপ্ন এসে ছুঁয়ে যায় সারাক্ষণ চেয়ে থাকি আমি তার আশায়। একমুঠো ইচ্ছে রাখি লুকিয়ে হৃদয়ে, হয়না সাজানো ভালোবাসা…….. ভালোবাসার এ কী জ্বালা।”

গানের প্রতিটা শব্দের উচ্চারণের মাঝেই যেনো নীরবের চোখ দুটো কোথাও একটা আটকে গেলো। হ্যাঁ ইচ্ছের দিকেই আটকেছে। দক্ষিণী রমণীর ন্যায় তার পরনে কাঞ্জিভরম শাড়ির পাশাপাশি সেখানকার স্টাইলের গহনা। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর পড়ে চুলগুলো সুন্দর করে খোঁপা করা। নীরব খানিক দূর থেকেই বুঝেছে এটাই ইচ্ছে।
কথায় বলে তোমার স্পেশাল মানুষটা যখন তোমার চোখের সামনে আসে তখন তোমার অনুভূতি হয় কেমন যেনো একটা। ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে নীরব বোধহয় অনুভব করতে পারছে। তবে এই অনুভূতি কতোটা ঠিক কে জানে? হাঁ করে তাকিয়ে থাকা নীরবকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল সেঁজুতি। ভূত দেখলো নাকি, এই রকম ভাবে বাইরে কাকে দেখে এই ছেলে?

– ” এই যে শুনুন দাদা, কিছু কি হয়েছে আপনার? ”

নিজের বুকের বাম দিকের পাঞ্জাবির খানিক অংশ মুঠোয় ভরে নেয় নীরব। সেঁজুতির কথায় বলে, ” হয়েছে, কঠিন এক রোগ হয়েছে আমার। কই আগে তো কখনো এমনটা হয়নি, এই কদিন ঠিক কী এমন হলো? এটা কি ম্যাজিক? ”

– ” কী ম্যাজিক?”
– ” আমার দৃষ্টির অর্ধেকের বেশি অংশ যেনো ব্লার। শুধু সেই দৃশ্যমান। এ কী করে হয় বলো? তবে তুমি খুকি বুঝবেনা। ”

সেঁজুতি রাগী চোখে নীরবের দিকে তাকালো, ” কী বুঝবোনা? আমি কি বাচ্চা নাকি যে বুঝবোনা! ”

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো নীরব। একটু সামনে এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে এসে বলে গেলো, ” ভালোবেসেছ কোনোদিন?” বলেই হাওয়া।

তপ্ত শ্বাস ফেললো সেঁজুতি। ভালোবাসা আবার কী? ভালোবাসার সারমর্ম বোঝার মত ক্ষমতা তো ওর নেই। আসলেই নেই। সামনের সিটে নীরবের রেখে যাওয়া ইয়ার ফোন কানে গুজে নিলো ও। বিরবির করে বললো, ” ভালোবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি যদি আমি অনুভব করতে পারি, তাহলে বুঝবো আমিও ভালোবাসতে পারি।”

——————————————————————

বসন্তের বিকেল আর দারুন মিষ্টি হাওয়া দেবে না তাই বুঝি হয়, হয় না। ঝড়ের গতিতে গাছের পাতা গুলো নড়ে চলেছে। ইচ্ছের একদিকে এই হাওয়া ভালো লাগছে তো অপর দিকে ইচ্ছের শাড়ির তা ভালো লাগছে না। পতাকার ন্যায় উড়ে চলেছে। কিছুতেই এই আঁচলটা কে সামলাতে পারছে না ইচ্ছে। আর ইচ্ছেই এই কষ্টটা নীরবের ঠিক সহ্য হলো না। তাইতো ছুটতে ছুটতে ইচ্ছের কাছে এসে ইচ্ছের উড়ন্ত আঁচলটা ধরে ইচ্ছের কাঁধের অপর পাশে ফেলে দেয়। চমকে ওঠে ইচ্ছে, নীরবও তাকায় ওর দিকে। এই দৃষ্টিতে ছিল ভালোবাসার অনুভূতির অজস্র মেলা, অজস্র প্রজাপতি।

– ” কী করছিস এখনও, চল গাড়ি ছাড়বে তো।”

ঘাড় নাড়ে ইচ্ছে। এগিয়ে যায় গাড়ির কাছে। তবে নীরবের মনটা কেমন যেনো অশান্ত হয়ে যায়। মন বলে ওঠে একবার এই রমণীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু নীরব তো তা পারবে না। আদৌ এটা ভালোবাসা কি ও তো ঠিক জানে না। তবে সূক্ষ্ম অনুভূতির হাত বাড়িয়ে নীরব ইচ্ছের হাত ধরে সামনে হাঁটা দেয়। শুধু পারে না একবার জড়িয়ে ধরতে।

( চলবে )