নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-১৮+১৯

0
301

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
পর্ব : ১৮

চন্দননগর স্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী জেলের এক কারাগারের ভিতরের মহিলাটিকে দেখলে মনে হবে, এই মহিলাটির কতো কষ্ট। জীর্ণ শরীর যেনো তার আর চলছে না। যে কেউই তাকে দেখে মায়ায় পড়ে যাবে। কিন্তু সেই মায়া হবে অর্থহীন মায়া। যার জন্যে এই মায়া দেখানো হবে সে কি আদৌ মায়াবতী! না নয়। তবে সময় মানুষকে পরিবর্তন করে। তিনিও পরিবর্তন হচ্ছে, বুঝতে শিখছেন নিজের দোষ। ছেলের নাম মাত্র বউয়ের প্রতি করা অত্যাচার গুলো এখন যেনো তাকেই ঘিরে ধরেছে। জেলেতে তাকে রোজ কাজ করতে হয়। শুধু নিজের কাজ টুকু নয় এই জেলার এক আতঙ্ক সৃষ্টিকারি মহিলার কাজও ওনাকেই করতে হয়। দিন শেষে খাবারও সে ঠিক মত পায় না। আসলে এখনকার যুগে শুধু কলেজ গুলোতে রাগিং হয় না, এই জেল গুলোতেও হয়।

আজ আসামি একশো তিনের বাড়ির লোক এসেছে। তাই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে একটা ঘরে। সময় মাত্র পাঁচটা মিনিট।

– ” কেমন আছো মা? ”

একশো তিন নম্বর আসামি ক্লান্ত হেসে বলেন, ” আছি, ভালোই আছি। শারীরিক দিক দিয়ে না হলেও মানসিক দিক দিয়ে। ”

– ” তোমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।”

– ” জানি বাবা, জানি। দোষ যখন করেছি শাস্তি তো পেতেই হবে। ”

– ” কিন্তু তুমি আমার দোষ কেনো নিজের কাঁধে নিলে মা। কেনো?”

একশো তিন নম্বর আসামি পরম মমতায় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল , ” মায়েরা নিজের সন্তানের সুখের জন্যে সব করতে পারে। আমিও করেছি। আর আমার জীবন সে তো শেষ। কিন্তু তোকে ভালো থাকতে হবে। তোর একটা সংসার আছে, ছেলে আছে, বউ আছে। তাদের তো দেখতে হবে। আর তোর বোন, ওর বিয়ে দিলি, ও কেমন আছে? স্বামীর বাড়িতে মানিয়ে নিতে পেরেছে? হাঁ রে ওর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ভালো? নাকি আমার মতো, ”

থেমে গেলেন ভদ্রমহিলা। আজ হয়তো মনে পড়ছে তিনি কারোর মেয়েকে কী হারে জ্বালিয়েছেন। ভদ্রমহিলার সামনে থাকা ছেলেটির মুখ মলিন হয়ে রয়েছে। যথাসাধ্য নিজেকে ঠিক রেখে মাকে শান্তনা দিয়ে বললো, ” সবাই ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি আসছি। ”

আর দাঁড়ানো হয়তো ছেলেটির পক্ষে সম্ভব ছিল না। লোহার কারাগারের বাইরে হাত দিয়ে মহিলাটি অনবরত ডেকে গেলেন,” এই সুবীর , শুনে যা বাপ। কী হলো তোর। আমার কথা আছে, শুনে যা। ”

জেল থেকে বেরিয়ে সামনেই গঙ্গার ঘাট। এখন জোয়ার চলছে। সিঁড়ির একদম সামনে পর্যন্ত জল এসে গিয়েছে। সুবীর গিয়ে জলে পা দিয়ে বসে পড়ে। চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে। অতিরিক্ত দুঃখের পাশাপাশি রাগ তাকে কাবু করে রয়েছে। তার জীবনে এখন চলছে চরাই উৎরাই। মাকে সে মিথ্যে বলে এসেছে। সে বলতে পারেনি তার ছেলের সংসারটা ভাঙতে বসেছে। নিলি তার স্ত্রী তাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। এমনকি ওদের ছেলে দ্বীপ তো বাবাকে দেখলেই ভয়ে কেঁদে উঠছে। সেই দিন বাবার রাগটা সে নিজের চোখে দেখছে। পাঁচ বছরের বাচ্চাটা দেখেছে তার বাবা কী করে কাউকে মেরেছে। অপর দিকে রশ্মি, ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউ মানতেই পারছে না। একজন জেল খাটা আসামির মেয়ে কিনা বাড়ির বউ। আর নতুন বউয়ের বাড়ির কীর্তি শুনে তো তারা কেউ রশ্মিকে বাড়িয়ে থাকতে পর্যন্ত দিতে চাইছে না।

সুবীর তো নিজেই তিলে তিলে মরছে। কিন্তু মাকে সে বলতে পারবে না। নিজের করা দোষ পুরোটাই মা নিজের কাঁধে নিয়েছে। এর উপর এই সব কথা বললে ওর মা নির্ঘাত সহ্য করতে পারবে না। দূরের নৌকোগুলোর দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো সুবীর। জীবনের ছক মেলাতে ব্যস্ত সে। যার জন্যে ওদের আজ এই পরিণতি তাকে তো সুবীর কিছুতেই ছাড়বে না। শিকার তো হাতের ঠিক কাছেই আছে। কতো দিন আর নিশ্চিন্তে থাকবে সে। জানে সুবীর তাকে মারবে না, তবে তছনছ সে করবেই। ধ্বংস ও করবেই, কারোর সংসার, সুখ।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে ফোন লাগালো সুবীর। অল্প দুই কথায় ফোনটা কেটে শয়তানি হেসে উঠলো।

– ” বোবা মেয়েকে সহানুভূতি দেখিয়ে প্রেম কিংবা বিয়ে করাই যায়। তবে সংসারটা ঠিক হয় না।”

——————————————————————

আজ দুই দিন হলো সকলে গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। নীরব আর ইচ্ছে কেবল একা বাড়িতে রয়েছে। অফিস তো অপর জনের কলেজের মধ্যে দিয়ে দিন গুলো কেটেছে। তার মধ্যে ইচ্ছে বেশ ভয়ে ভয়ে রয়েছে, পুরোনো ভয়টা আবার ওকে কাবু করে রয়েছে। অপর দিকে নীরব কেবল চুপচাপ রয়েছে। যেনো কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস। তবে নিজেকে শান্ত এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে দিয়েই সে নিজেকে সামলে রেখেছে।

বিকেল পাঁচটার দিকে ঘুম ঘুম চোখে নীচে নামলো ইচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে ঘরের কোথাও নীরবকে ও দেখেনি। তবে নীরবের জুতো জোড়া দেখে বুঝেছে নীরব বাড়িতেই রয়েছে। নিশ্চয় গত কয়েকদিনের মতো রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করছে। সেন্টার টেবিলের উপর রাখা চায়ের কাপগুলো রেখে পাশের সোফায় বসলো নীরব। সামনে বসে থাকা ব্যাক্তিটি চায়ে চুমুক দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা রমণীকে দেখে থেকে গেলো। চুপ করে বসে বসে দেখতে লাগলো, রমণী তাকে দেখে রিয়্যাকশন কেমন দেয়!

ইচ্ছে হাই তুলতে তুলতে সোফায় বসে মাথা চেপে ধরলো। বিকেলের দিকে আজ ও বেশ অঘোরে ঘুমিয়েছে। তাই হয়তো মাথা ব্যাথা। কোনোদিকে না তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সামনে নীরবের দিকে তাকাতে গিয়ে থমকে গেলো ইচ্ছে। নীরবের ঠিক বাম দিকের সোফায় বসে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো ইচ্ছে। ফলস্বরূপ হাতের গরম চায়ের কাপ নিজের হাতের মধ্যে ছিটকে পড়লো। ভয় এবং ব্যথায় শব্দহীন ভাবে কঁকিয়ে উঠলো ইচ্ছে।

ইচ্ছের এই ভাবে হুট করে নীচে নামায় নীরব চুপ করে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। তবে সুবীরকে ইচ্ছের হাত ধরতে দেখে বুকের মধ্যে তীব্র এক কষ্টের বেদনা সে অনুভব করলো। ওর ঠিক সামনে সুবীর ইচ্ছের হাত ধরে ফুঁ দিয়ে চলেছে।

– ” কী করো তুমি বলোতো। কোনোদিন নিজের খেয়াল রাখতে শিখলে না। কতবার বলেছি একটু সাবধানে চলাফেরা করতে। কিন্ত না তুমি আর শোধরালে না।”

নীরব হালকা হেসে বলল, ” ইচ্ছে তুই ঘরে যা। আমি তোর জন্যে ঔষুধ নিয়ে আসছি।”

সুবীর ইচ্ছের হাতটা ছেড়ে দিলো। ইচ্ছে একমুহুর্ত আর অপেক্ষা করলো না। এক ছুটে নিজের ঘরে।

– ” নীরব আমি ইচ্ছেকে ভালোবাসি। আর আমি এ ও জানি তুমি ইচ্ছেকে নিজের স্ত্রী মানো না। তুমি প্লিজ ইচ্ছেকে মুক্তি দাও। তোমার হয়তো ওর কথা না বলতে পারার জন্যে প্রবলেম আছে কিন্তু আমার তা নেই।”

– ” আরে ব্রো রিলাক্স। আমি জানি তো তুমি ইচ্ছেকে ভালোবাসো। ওকে খুব সুখে রাখবে। তুমি এখন বাড়ি যাও পরশু এসো। ইচ্ছেকে মুক্তি দেবো ক্ষণ। এবার থেকে ওকে হ্যাপি থাকতে হবে তো।”

নীরব , সুবীরকে বিদায় দিয়ে মলম খুঁজতে গেলো। অপর দিকে ঘরের এক কোনায় বসে থেকে ভয়ে কাঁপছে ইচ্ছে। মৃত মানুষ কিভাবে ফিরে আসে! তাহলে কি ও ভুল জানে!

( চলবে )

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১৯ .

সুবীরের ঠাম্মা মারা গিয়েছে দুই সপ্তাহ হবে। আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে ইচ্ছের উপর আরেক অত্যাচার। আজ বাড়িতে সুবীর এসেছে। ঠাম্মা মারা যেতে একবার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে এলেও আজ আবার এসেছে। নিহি আর দ্বীপ রয়েছে নিহির বাবার বাড়ি। সে এখনও অবধি জানে না ইচ্ছের বিষয়ে। তবে ইচ্ছেকে দেখে কিছুটা সন্দেহ তার মনে তৈরি হয়েছে বটে। কিন্তু সেই সন্দেহের সত্যটা বিচার করার আগেই সুবীর ওদের ওর বাবার বাড়িতে নিয়ে চলে গিয়েছিল। আজ সুবীরের এই বাড়িতে আসার অন্যতম কারণ মাথার উপর থাকা চিন্তাকে টান মেরে ফেলে দেওয়া। নিহিকে সে জানাতে চায় না বিয়ের ব্যাপারে। তাই আজ একেবারে ডিভোর্স পেপার তৈরি করেই এনেছে। সুবীর নিজে সাইন করে দিয়েছে, এইবার কেবল ইচ্ছের একটা সাইন আর পেপারটা কোর্টে জমা করলেই চলে।

– ” এই যে তাড়াতাড়ি সাইন টা করুন দেখি। আজ এটা কোর্টে জমা করতে হবে। কাল শনিবার কোর্ট বন্ধ। আমি এই বিষয়টা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাই।”

সুবীরের তীক্ষ্ম গলা শুনেও ইচ্ছে সাইন করলো না। গত কয়েকদিন আগেই সে ডিভোর্স পেপারটা শাশুড়ির হাত থেকে পেয়েছে। কিন্তু সাইন সে করতে চাইছে না। আবার হয়তো চায় এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে। চোখের কোণের জল টুকু আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিয়ে সুবীরকে দেখলো। এটাই ভালো করে সুবীরকে দেখা। বিয়ের আগে সবাই বলেছিল ছেলে একেবারে রাজপুত্র। হ্যাঁ তাই, সুবীর রাজপুত্রই বটে। কিন্তু সব রাজপুত্রের মধ্যে ভালো, স্নেহ , মায়া, মমতা লুকিয়ে থাকে না। কেউ হয় অহংকারী, খারাপ, বর্বর শ্রেণীর। আর সুবীর ও সেই গোত্রীয়।

– ” কী হলো কানে যাচ্ছে না? আমার ছেলে সেই থেকে তোমাকে সাইন করতে বলছে আর তুমি স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছো।”

– ” ক্ষমা করবেন মা, আমি সাইন করতে পারবো না। আপনার ছেলে ওনার স্ত্রীর সঙ্গে থাকুক আমি কোনো দিন কিছু অধিকার চাইবো না। শুধু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যাবো না। আমি না হয় আগের মতই থাকবো। ”

সুবীর ক্রোধের আগুনে জ্বলতে শুরু করলো। বললো, ” অনেকক্ষণ ধরে আমি এক কথা শুনছি। যা বলছি তাই কর। আর আমি ডিভোর্স দিলে তোরই তো সুবিধা। পাশের বাড়ির ছেলেটাকে নাহয় বিয়ে করে ফেলবি। তাতে কী।”

ইচ্ছে ভালো মতোই বুঝেছে সুবীর কার কথা বলছে। একবারের জন্য অবশ্য নীরবের কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিল। তবে পরক্ষণেই তাচ্ছিল্যের হাসি পেলো তার। মনের জমানো ক্ষেদ বলে দিলো, ” আমি তো তাকে বিয়ে করবো বলিনি। আমার বিয়ে আপনার সাথে হয়েছে। আর সারাজীবন তাই থাকবে। আপনি আপনার স্ত্রী কে নিয়ে থাকতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই। ”

রাগের মাত্রা যেনো সুবীরের বৃদ্ধি পেলো। কথায় বলে রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। কথাটা শতভাগ সত্যি। কিন্তু রাগের প্রভাব যার জীবনে পড়ে তাকে হয়তো রাগী ব্যাক্তির থেকেও বেশি খেসারত দিতে হয়। তাই বোধহয় সুবীর করলো ইচ্ছের উপর। রাগে ইচ্ছের গলাটা টিপে ধরলো। মাথা তার এমনিই সবসময় গরম থাকে।

– ” ডিভোর্স আমার চাই ইচ্ছে। আপনি কি বুঝতে পারছেন না!”

ইচ্ছে হয়তো বুঝতে পেরেছিল নিজের পরিণতি। আসলে ও নিজেই নিজের জীবন থেকে মুক্তি চেয়েছিল। তাইতো সুবীরকে পুনরায় রাগিয়ে দিয়ে বলেছিল, দেবোনা ডিভোর্স, দেবোনা।”

এরপর ইচ্ছের আশঙ্কাই ঠিক হলো। কোনো মানুষের সাথে খুব খারাপ হবার আগেই বোধহয় সে বুঝে যায়, যে কিছু হবে। আর তাই হলো। ইচ্ছের শ্বাশুড়ি আর ননদ তখন দাঁড়িয়ে মজা দেখতে ব্যস্ত। তারাও চায় ইচ্ছেকে তাড়াতে। নিজের পরিবার, নিজের ভালোবাসার মানুষ নীরব সকলের দূর করতে চাওয়া ইচ্ছেকে, এক ঝটকায় সুবীরই দূরে ঠেলে দিলো। হটাৎই এক তীব্র ঝাঁকুনিতে ইচ্ছে গিয়ে পড়লো সামনের কাঁচের সেন্টার টেবিলের উপর। টেবিলটা ছিল নীঁচুতে, তার উপর ছিল সুবীরের ঠাম্মার ছবি। আরও কিছু কাঁচের ফুলদানি ছিল সেখানে। যার মধ্যে রজনীগন্ধার গন্ধে মো মো করছে। হঠাৎই ঝন ঝন শব্দে কাঁচগুলো ভেঙে গেলো। উপস্থিত তিনজনেই চমকে তাকিয়ে রইল মেঝের কাঁচ ভাঙার দিকে। আসতে আসতে জায়গাটা রক্তে ভরে উঠলো।

ঠিক তখনই একরকম ছুটতে ছুটতে বাড়িতে ঢুকছিল দ্বীপ। এখন তার খুব আনন্দ। এতদিন একা একা মা বাবার সঙ্গে থাকলেও এখন ও জানে ওর একটা দিদুন আছে, পিপি আছে। কায়কদিন আগে যখন ও এই বাড়িতে এসেছিল তখন দিদুন আর পিপি ওকে খুব আদর করেছে। তাছাড়া এইবাড়িতে একটা দিদিও আছে, ইচ্ছে দিদি। যদিও বা দ্বীপ, ইচ্ছের কাছে যায়নি তবে দূর থেকে দেখে ওর ইচ্ছে দিদিকে বেশ লেগেছে। কেমন যেনো পুতুল, পুতুল। পিপি ওকে বলেছে ওই মেয়েটা ইচ্ছে, এই বাড়িতে কাজ করে, ও ছেলেধরা ওকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। তবে দ্বীপের সেই সব মাথায় ঢোকেনি। পুতুল বুঝি ছেলে ধরা হয়! দ্বীপের মতে দিদিটা খুব কিউট। পুরো রসগোল্লার মতো মিষ্টি। নামটাও কী ভালো। দ্বীপ কে ওর মা বলেছে, ইচ্ছে যাদের নাম হয় তারা সবার ইচ্ছে পূরণ করে। ওর ও করবে। দ্বীপ তাই মাকে সঙ্গে করে এই বাড়িতে চলে এসেছে।

তবে দ্বীপের আনন্দ থেমে গেলো প্রথমে নিজের বাবাকে দেখে। পরে রক্তাক্ত ইচ্ছেকে দেখে। এতো রক্ত তার ছোটো শরীর টা সহ্য করতে পারলো না। কেমন এক শ্বাস কষ্ট শুরু হলো। ছেলের ডাকে সুবীর সহ ওর দিদুন ও পিপির ও হুশ ফিরল। তাদের মাথা যেনো ব্লাইন্ড হয়ে রয়েছে কী করবে ভেবে। নিহি গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢুকে ছেলের অবস্থা দেখে ভীষণ ভয় পেলো। তবে সামনে থাকা রক্তাক্ত শরীর যেনো ওকে এক মুহূর্তের জন্যে নিষ্ক্রিয় করে দিলো। চিৎকার করে নিহি বলে উঠলো, ” কী হয়েছে মেয়েটার? ”

সুবীর, ওর মা – বোন কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। শেষে কিনা তারা কাউকে খুন…. ভাবতেই শিউরে উঠলো ওরা। ইচ্ছে তখন কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে। মাথা, গলা, হাত, মুখ দিয়ে রক্তের স্রোত বইছে যেনো।

জ্বলতে থাকা হাতে কিছু স্পর্শ হতেই ব্যাথায় পিছিয়ে গেলো ইচ্ছে। ব্যথাটা কিছুক্ষণ আগের গরম চা পড়ে যাওয়ার জন্যে না সেই ভয়ঙ্কর দিনের ব্যথার অনুভূতি কিনা সেটা ইচ্ছে বুঝতে পারলো না। সামনে বসে রয়েছে নীরব। নীরব হাতটা ভালো করে ধুঁয়ে মলম লাগাতে শুরু করলো। ইচ্ছের চোখটা জলে ঝাপসা হয়ে এলো। সেই দিন ইচ্ছে মরে গেলে কি খুব ক্ষতি হতো! তবে নীরব হয়তো এই মুহূর্তে ওকে সহানুভূতি দেখাতো না।

নীরব ইচ্ছেকে উঠে দাঁড়াতে বললো। কিন্তু ইচ্ছে এক ভাবে মেঝেতে বসে রয়েছে। নীরবের কথা তার কানে যাচ্ছে না।
– ” কী রে ওঠ!”

ইচ্ছে মুখ তুলে নীরবের দিকে তাকালো। নীরব কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইচ্ছে না ওঠায় নীরব ইচ্ছেকে কোলে তুলে নিলো। ইচ্ছেকে বিছানায় বসানোর আগেই নীরব বলে উঠলো,

” বাপরে, দিন দিন কী ভারী হচ্ছিস! ”

নীরব বোধ করি ভেবেছিল ইচ্ছে রেগে যাবে। কিন্তু সে কিছুই বললো না। চুপ করে নীরবের বসিয়ে দেওয়া জায়গায় হেলান দিয়ে বসলো।

( চলবে )