#নিষিদ্ধ_সে
(১০)
সায়রঃ ছেলে ঠিক হয়ে গেছে বিয়ের জন্য তবু ছেলেদের চোখ টিপ মারিস লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?
চোয়াল হা হয়ে গেলো আমার। কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের নিচে কালির রেখা দেখা যাচ্ছে! আমার দিকে শীতল চোখে চেয়ে আছেন। রিহাম ভাইয়াকে দেখে আবারো তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা করে উঠলেন,,,
” ঐটাই কি তোর জন্য ঠিক করা ছেলে? ভালোই তো!”
“কি আবোল তাবোল বলছেন? আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়েছে মানে?”
“লুকোচ্ছিস কেন? ঠিক হয়নি বলতে চাইছিস?”
“লুকোতে যাবো কেন? সত্যিই আমার জন্য কোন ছেমড়াকে ঠিক করা হয়নি!”
সায়র ভাই বিস্মিত হয়ে তাকালেন আমার দিকে কিছুক্ষন পর চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো উনার।
“সায়রি তাহলে আমাকে মিথ্যে বলবে?”
চোখ মুখ কুচকে তাকাতে উনি পাশ থেকে চলে গেলেন। আমি ভেবলা হয়ে চেয়ে আছি। অদ্ভুত! ঘুরে ঘুরে সায়রিকে খুজতে গিয়ে কিছু আন্টির কথা কানে এলো। গুজুর ফুজুর করছেন কিছু নিয়ে। পাশে দেখি আম্মু আর সায়রির মা দাঁড়িয়ে অসন্তুষ্ট চেহেরা নিয়ে। আম্মুর কাছে দাঁড়াতে টেনে পাশে দাঁড় করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলেন, “দেখেছিস? এর জন্যই তোকে ঢাকায় নিয়ে গেছিলাম!” বহুত সময় লাগানোর পর ঘটে কাহিনীর মূলভাব স্পষ্ট হলো। রনক ভাই সামনে ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও রিধিতা আপুর চেহেরা ফেকাশে হয়ে আছে সায়রির চাচির বদৌলতে। মানে বন্ধুর বাড়িতে থাকাটাও দোষের হয়ে গেলো!
“দেখো কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে! সামান্তা (সায়রির আম্মু) তুই কোন চার্জ নিসনি এর থেকে? বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছিস থাকতে দিচ্ছিস! এদেরও বা কি বলবো!”
আন্টি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত চোখে এক আন্টির দিকে তাকালেন। সেই আন্টিটা মুখ দিয়ে মধু বের হওয়া আন্টিকে ধমকে উঠলো। ভেংচি কেটে উঠলেন তিনি, “মানুষের ভালোও চাইতে নেই! ভালো কথাতেও কেমন করে!” আমি আম্মুর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে রনক ভাইয়াদের কাছে গেলাম। ফোনে নিউজফিড স্ক্রল করছেন খুব মনোযোগে তিনি! আমি কাধে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলে ম্লান হাসি দিলেন।
“ভাইয়া চলুন! সায়রিকে খুজে দিবেন!”
“আমি কিভাবে____”
“আরেক মেয়ে আবার ঢং দেখিয়ে ডাকতে এসেছে।”
আন্টিটার কথায় কথাটা মাঝ পথে থামিয়ে দিলেন ভাইয়া। আমাকে নিচুস্বরে এখান থেকে চলে যেতে বললেন। খারাপ লাগলো খুব রিধিতা আপুর মুখ দেখে। বড় মানুষ নাহলে চুলাচুলি লাগিয়ে দিতাম এখন। সামান্তা আন্টির ইশারাতে রনক ভাইয়ার হাত ধরে টানতে লাগলাম, “রনক ভাইয়া আসেন তো! আপনার পিছনে যে মধুর চাক আছে সব তো ধুয়ে নিচ্ছে মৌমাছিরা! পিছনে যে ভনভন করে পরেছে সেটা দেখেন না? অবস্থা আরো নাজেহাল করে দিবে। মৌমাছিগুলোও কেমন! নিজের চাক ছেড়ে আপনার পিছনের মধুতে সুখ খুজে! আজব চিড়িয়া সব!”
ভাইয়াকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে সামনে আবারো সায়র ভাইয়া পরলো। ভ্রু কুচকে চেয়ে আছেন তিনি রনক ভাইয়ার হাত ধরে রাখা হাতটায়। উনার চাহনি দেখে হাত চাপ দিয়ে ধরলাম আরো। রনক ভাইয়া ব্যাথাদায়ক শব্দ করে উঠলে ছেড়ে দিয়ে আবারো ধরলাম।
“তুই কি চাস আসলে? নিজের_____”
“ঐ ঐ সমস্যা কই আপনার? একে তো নিজের ফ্রেন্ডকে এনে তার খোজ রাখেন না ভালো আছে কি না আছে। তার উপর আমার জামাইয়ের পিছে পরেছেন! আমাকে কি লেসবো লাগে? হ্যা? দেখতে গেলাম ভাইয়ার জন্য মেয়ে জনে জনে রটিয়ে বেড়াচ্ছেন আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়ে গেছে! হলে বেশ হয়েছে আপনার কি? রিলেশনে আছেন নির্মা আপুর সাথে বারবার আমার না হওয়া মেয়ে জামাই ওরফে রিধিতা আপুকে খোচা দিয়ে কথা বলেন কেন? আজকেও গঞ্জিকা খেয়েছেন? বেশি করবেন তো কিছুদিন আগে আপনার স্বিকারোক্তি ভাইরাল করে দিবো! হ্যান্ডসাম ওম্যান কোথাকার!”
রেগে সায়র ভাইকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই সায়রিকে খুজতে লাগলাম। রেগে কোন কোন রুম তাড়াঘোড়ায় দেখেছি খেয়াল করিনি। হঠাৎ হলুদ শাড়িতে সজ্জিত সায়রিকে চোখে পরলো। দম টেনে নিজেকে ঠিক করে ওর কাছে গেলাম। সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। রুমে থাকা নির্মা আপুসহ সায়রির কাজিনরা আমাকে অবাক হয়ে দেখছে! সায়রির কাছে গিয়ে আয়নার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালাম সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ভ্রু কুচকে ওর থুতনি ধরে আমার দিকে ফিরালে হাত ঝারা মারলো। নির্মা আপু কানের দুল পরতে পরতে এগিয়ে এলো।
নির্মাঃ শুনলাম তোমার জন্য নাকি ছেলে ঠিক হয়েছে? এর জন্যই এতো তাড়াহুড়োয় চলে গেছিলে? আমাদের অন্তত কিছু বলে যেতে।
সায়রি আড়চোখে তাকালো। ভ্রু কুচকে নির্মা আপুর দিকে তাকালাম।
“কে বলেছে এগুলো তোমাদের?”
নির্মাঃ তুমিই তো মেসেজ দিলে সায়রিকে ছেলে দেখতে গিয়েছো!
“কিহ! আমি মেসেজ দিয়েছি! কই দেখি!”
সায়রি অন্যদিকে ফিরে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আসলেও আমার ফোন থেকে মেসেজ গিয়েছে আমি ছেলে দেখতে এসেছি। নিজের ফোন বের করলাম দেখি সত্যিই পাঠিয়েছি। কিছুক্ষন ভাবার পর কাহিনী পরিষ্কার হলো। লুকিয়ে ফোন টিপে উত্তর দিতে গিয়ে টাইপিং এ ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি লিখতে গিয়ে অটোকারেকশনে মেসেজ চলে গেছে ভাইয়াকে নিয়ে ছেলে দেখতে এসেছি! কিছুক্ষন পর কোমড়ে হাত দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলাম। সায়রি কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে তাকালো।
নির্মাঃ [আমাকে ধাক্কিয়ে মিটিমিটি হেসে] তোমার বান্ধবী রেগে আছে আর তুমি হাসছো? ছেলে দেখতে গেলে আর ওকে নিলে না? বেশ রাগ করেছে!
হাসতে হাসতে সায়রির কাধে মারলাম সে বিরক্ত হয়ে তাকালো। “আরে ভাই, অটোকারেকশনে এই মেসেজ চলে গেছে তোর কাছে। কালকে ভাইয়ার সাথে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার জন্য ছেলে ঠিক হয়নি!”
সায়রিঃ [হাতের কাছে থাকা পাউডারের কৌটা ছুরে মেরে] হারামি আমি আরো ভেবেছি তুই আমাকে রেখেই কবুল পড়ে এসেছিস।
“হুস! একটা মজার ব্যাপার কি জানিস?”
সায়রিঃ কি?
“ভাইয়ার জন্য যে মেয়ে দেখতে গিয়েছি সে রিধিতা আপু।”
সায়রিঃ মানে রনক ভাইয়ার বোন?
“হ্যা। হাহাহাহা, ভাগ্যিস রনক ভাই সেখানে ছিলো না আমার আম্মু তো রনক ভাইয়ার নাম শুনেই ফিট! রিধিতা আপুর ইন্টার্ভিউ না নিয়ে রনক ভাইয়ার আব্বুর কাছে ভাইয়ার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছিলো। বাসা থেকে বেরিয়ে আম্মুর কি আফসোস____”
রিধিতাঃ [মাথায় মেরে] বেশ তো! তাহলে আন্টিকে বলতে হয় তোমার আর রনকের বিয়ে আমাদের সাথেই দেওয়ার জন্য।
পিছনে ঘুরলাম। রিধিতা আপু ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আর সায়র ভাইয়া, রনক ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে হেসে, “আউইইইই তাহলে তো বেশ হয়! এমনিতেই টোলওয়ালা ক্রাশ ভাইয়া। আচ্ছা এখন থেকেই রনক বলে ডাকবো। এই রনক এদিকে আসো সেলফি তুলবো!”
রিধিতা আপু হেসে আবারো মারলেন আমাকে।সায়রিকে জড়িয়ে ধরে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেসা করতে লাগলেন। রনক ভাইয়ার হাত ধরে দূরে সরে যেই সেলফি তুলবো সায়র ভাই মধ্যে এসে বাগড়া দিলো।
ভ্রু কুচকে তাকালাম, “কি সমস্যা?”
সায়রঃ আমিও তুলবো!
ভেংচি কেটে, “আপনাকে নিবো না! সরেন!”
সায়রঃ তুই নিবি না তোর ঘাড় নিবে!
চোখ ছোট ছোট করে, “আচ্ছা রনক ভাইয়া কি আপনার প্রেমিকা লাগে? যতোবার ছবি তুলতে যাই, ভাইয়ার সাথে থাকি আপনি মধ্যে এসে বাগড়া দেন! [ফিসফিসিয়ে] আপনার কি গে-সম সমস্যা আছে সায়র ভাই?”
সায়র ভাই চোখে আগুনের শিখা জ্বেলে তাকিয়ে আছেন। সপ্রশ্নচোখে তার এই রিয়েকশন দেখছি।
চলবে_________❤
এ্যাগ্নেস_মার্টেল