নীল সীমানার শেষপ্রান্তে পর্ব-০২

0
7320

#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
||পর্ব_০২||

;
;
;

—“হ্যালো, তনিমা। আমি বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করেছি।”

—“কার জন্য মেয়ে ঠিক করেছো, ডার্লিং? ”

—“আমি অন্য কারোর জন্য কেন মেয়ে দেখতে যাবো? আমার নিজের বিয়ের ব্যবস্থা করছি।”

একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বললো জয়। জয়ের মুখে এমন কথা শুনে তনিমা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—“ম,,,মানে? কী বলছো কি তুমি? তুমি বিয়ে করতে চাইছো? অন্য কাউকে? তাহলে,,,, ”

জয় কিটকিটিয়ে হেসে বললো,
—“কাম অন, তনিমা! তোমার কি আদৌও মনে হয় আমি তোমায় ছাড়া স্বেচ্ছায় অন্য কাউকে বিয়ে করবো? ”

—“মনে হয় না বলেই তো অবাক হচ্ছি। কী হয়েছে ক্লিয়ারলি বলো!”

—“আমি কন্ট্র্যাক্টে একজনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তনিমা চক্ষু গোলক ইয়া বড়ো বড়ো করে চিল্লিয়ে বললো,
—“হোয়াটটট!”

জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—“আম রিয়েলি সরি, তনিমা। আমি অনেক ভেবেছি তোমার আমার বিষয়টা নিয়ে। আমার ফ্যামিলি কখনোই তোমায় মেনে নিতে চাইবে না, এটা তো তুমি বুঝো। তাই আমার একবছরের জন্য একজনকে বিয়ে করতেই হবে। দ্যান, ওর সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে বাবা নিজের মান- সম্মান বাচাতে তোমায় মানতে বাধ্য।”

তনিমা অবাক হয়ে বললো,
—“তোমার মাথায় এতো বুদ্ধি কোত্থেকে আসে বলোতো? আম জাস্ট এলথ্রোলড!”

জয় হেসে বললো,
—“এটা আমি কাল রাতে ভেবেছিলাম, আর আজ সকাল হতে না হতেই একটা মেয়েকে পেয়েও গেছি। আর হ্যাঁ, এটা বলে রাখি এই বিয়ের একমাস পর আমি তোমায় বিয়ে করছি। সো, গেট রেডি!”

তনিমা সাথে সাথেই ফোন কেটে দেয়। জয় ভেবেছে, হয়তো লজ্জায়। কিন্তু না;

তনিমা রেগে নিবিড়কে বললো,
—“হোয়াট ননসেন্স, নিবিড়! তুমি দেখছো না আমি জয়ের সাথে কথা বলছি? তবু্ও এভাবে চিৎকার করে বেইবি বলে ডাকার মানে কী? আর একটু হলে, জয় শুনে ফেলতো।”
বলেই চোখ গরম করে নিবিড়ের দিকে তাকালো। নিবিড় তনিমার কাছে গিয়ে ওর গাল টেনে বললো,
—“আসলে আমি বুঝতে পারিনি সুইটহার্ট যে তুমি জয়ের সাথে কথা বলছো। তা কী বললো তোমার ভালোবাসার মানুষ টা?”

তনিমা মুখ বাকিয়ে বললো,
—“ভালোবাসার মানুষ মাই ফুট। আমি তো শুধু আমার নিবিড়কে ভালোবাসি। আমার কিউট হাসব্যান্ড টাকে!”

হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন ; তনিমা বিবাহিত। নিবিড় তনিমার কথা শুনে হেসে দেয়। তনিমা হঠাৎ বলে উঠলো,
—“জানো, জয় বিয়ে করছে।”
তারপরই নিবিড়কে সব কিছু খুলে বললো। নিবিড় তনিমার কথা শুনে বললো,
—“প্ল্যানটা সুন্দর। কিন্তু এটায় একটা রিস্ক আছে। তুমি জানো, জয় ওপর দিয়ে যতোটা রাগী, কঠোর ও বদমেজাজি ; ভেতর থেকে তার চেয়েও বেশি নরম ও দায়িত্বশীল। ও একটা মেয়েকে বিয়ে করে এমনি এমনি ফেলে দিবে এটা ভাবলে কী করে? জয় মেয়েটার ওপর নিজের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করবে। আর যদি ও ঐ মেয়েটাকে কোনোভাবে ভালোবেসে ফেলে তাহলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। ”

তনিমা আশ্বাস দিয়ে বললো,
—“সেটা কখনো হবে না। কারন আর একমাস পর ও আমায় বিয়ে করবে, তখন আমি ওকে আমার বশে রাখবো।”

—“তখন আবার তুমি আমায় ভুলে যাবে নাতো?”

—“আরে, না। ওকে তো আমি শুধু কাগজে কলমে বিয়ে করবো। কিন্তু কোনো সময় দেব না; চান্স ও না। আমি তো শুধু তোমার। ”
—————

পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের আচার-আচরণ একেক জায়গায় ও একেক সময় একেক রকমের হয়। জয় মাহমুদ ব্যক্তিটা যে সেই দলের লিডার সে সম্পর্কে আমার কোনো কনফিউশানই নেই। কে বলবে এই দায়িত্বশীল লোকটা অসম্ভব ধরনের স্বার্থপর। তার একমাত্র প্রত্যক্ষ দর্শী আমি।

আজ উনি কন্ট্র্যাক্ট পেপার সাইন করানোর পর নিজে আমায় নিয়ে ছুটে হসপিটালে এসেছেন। আমি উনার এহেন কাজে নিজের অবাকতা কাটিয়ে উঠার জন্য নিজের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করছি। আসার পর থেকে উনি এমনভাবে সবার সাথে কথা বলছেন, ডক্টরদের সাথে ডিসকাস করছেন আর মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে, আমি সবকিছু ভুলে গিয়ে ওনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা, এমন হবে না তো যে, যেই কাগজ কলমের বন্ধনে আমরা বাধা পড়ছি তা থেকে ছুটে আসাটা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে! তখন কীভাবে নিজেকে সামলাবো আমি??

এসব কথা স্যারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আনমনে ভাবছিলাম আমি।
–“এভাবে একজন পুরুষ মানুষকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো, তাও আবার এমন পাবলিক প্লেসে। স্টপ ইট, মুন।”

ওনার চাপা কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠলাম আমি। সত্যিই তো! আমি ভাবনার রাজ্যে ডুবে গিয়েছিলাম নাকি স্যারের রাজ্যে? তবে যেটাতেই ডুবি না কেন ওনার দিকে ঐভাবে তাকানোটা ঠিক হয়নি।

–‘মুন, গ্রো সাম শেইম। আর ভুলে যেও না যে, ইট’স আ ডিল বিটউইন ইউ অ্যান্ড মি। তাই আমি এটাই চাইবো যে তুমি তোমার আবেগ টাকে কন্ট্রোলে রাখো।”

ওনার শেষ কথাটা শুনো কেন যেন নিজের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে উঠছে। কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে? বুকের ভেতর একটা চাপা আর্তনাদ ক্রমাগত উথাল-পাথাল করছে। কিন্তু আমি সেটা সহ্য করতে পারছি না।

জয় স্যার আবার দাতে দাত চেপে বলে উঠলেন,
–‘আমি শুধু আমার দায়িত্বটা পালন করছি, মুন। সো এটা নিয়ে এতো পারপ্লেক্সড হবার কিছু নেই। পেপারটা সাইন করার মাধ্যমে আমার বিয়ে হয়ে যায়নি ঠিক। কিন্তু তোমার প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বাকি এক বছর সেই দায়িত্ব টা যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করবো। ”

আমি ড্যাম শিয়র যে, এই ব্যক্তির মধ্যে একটা চৌম্বকীয় পদার্থ আছে যা না চাইতেও আমায় বারবার ওনার দিকে আকর্ষণ করছে। কিন্তু গত একবছর ধরে ওনার আন্ডারে কাজ করেও কখনো এমন অনুভুতি আমার মাঝে আসেনি। তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে?

আমি একমনে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বেড়িয়ে আসলে ওনি হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে ডক্টরের কাছে গেলেন। কিন্তু আমি এখনো ওনাতে মশগুল। হঠাৎ বাবার কথা মনে আসতেই আমিও ডক্টরের কাছে গেলাম।

জয় স্যার ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলেন,
–“কী হয়েছে, ডক্টর? ইজ এভ্রিথিং ওকে? ”

ডক্টর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
–“ইয়েস, দ্য অপারেশন ইজ সাকসেসফুল। কিন্তু পেশেন্টের জ্ঞান ৪৮ ঘন্টা পর ফিরবে। ওনাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। গিয়ে দেখে আসতে পারেন। ”

জয় স্যার খুশিতে আমায় একহাতে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, আলহামদুলিল্লাহ । আমি খুশিতে কেঁদে দিয়েছি। ফাইনালি আমার বাবা পুরো পুরি সুস্থ হয়ে যাবে, ভাবতেই আমার অনেক খুশি লাগছে। আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মাও কাঁদছে, আমিও কাঁদছি।
এদিকে জয়ের মধ্যে যে কী চলছে তা শুধু জয়ই জানে।
–“এই মেয়েটার মুখে হাসিটা অসম্ভব সুন্দর লাগে। একদম নিষ্পাপ সেই হাসি, যাতে বিন্দু মাত্র কৃত্রিমতা নেই। কই তনিমার হাসি তো আমার কাছে এমব লাগে না। ওতো দেখতে মুনের চেয়েও সুন্দর, কিন্তু ওর হাসিটা মুনের হাসির মতো ঝলমলে কেন নয়?না ওর থেকে আমায় দূরে দূরে থাকতে হবে। আমি তো তনিমাকে ভালোবাসি, ওকে আমি কোনো ভাবেই ঠকাতে বা কষ্ট দিতে পারবো না। কিন্তু না চাইলেও আমায় এখন মুনকে বিয়ে করতে হবে। কেন যে বাবা, মা, ভাইয়া তনিমাকে খারাপ বলে আমি আজো বুঝে উঠতে পারলাম না।”

একসপ্তাহ পর,,,,,,

-চলবে………