নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-০৬

0
264

#পর্ব_৬
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

উনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন পারলে শুধু দৃষ্টি দিয়েই আমাকে ভস্ম করে দেন! ভয় না পেয়ে আমি আবার বললাম,
– শ্বশুর মশাইকে আমার ব্যাপারে কি বলে ম্যানেজ করবেন সেটাও আপনি বুঝবেন৷
– মেয়ে! তুমি আগুন নিয়ে খেলছো! তোমার জীবন আমি দোজখ বানিয়ে ছাড়বো।
– আপনার ছেলে মনে হয় আপনাকে বলেনি যে, আমি ইউনিভার্সিটি টপার। জাদরেল জাদরেল টিচারদের থেকে হাই সিজিপিএ ম্যানেজ করা মেয়েটার, আপনার মতো শাশুড়ীকে ম্যানেজ করা চুটকির ব্যাপার।

দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করতে করতে উনি বেরিয়ে গেলেন। আমিও শরীরের খারাপ লাগাটা কমাতে হিজাব খুলে আমার চাবি দিয়ে আলমারি খুলে নর্মাল একটা সুতির শাড়ি বের করে নিলাম। এই আলমারিতে একটা সেকশন জুড়ে শুধু আমার দরকারি জিনিস রাখা। বড়লোক হওয়ার এই এক সুবিধা কেউ কারো জিনিস ঘাটে না। তাইতো মিনমিনে লোকটা নিজের মাকে লুকিয়ে তার ঘরটা জুড়ে বউয়ের জিনিস দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পেরেছে।

কিন্তু নীড়কে একটা কঠিন শাস্তি দেবো আমার চোখের সামনে অন্যমেয়েকে বিয়ে করার সাহসটা করার জন্য। নিজের স্ত্রীর থেকে এত এত সিক্রেট লুকিয়ে রাখার জন্য ওর সাজা পাওয়া বাকি৷ স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক কিন্তু সে সবসময় আমার থেকে সবকিছু লুকিয়ে রেখেছে। আজ যদি বিয়েটা হতো তাহলে একমাত্র sufferer হতো আমার বাচ্চাটা। আমার বেবিটা পৃথিবীতে আসলেই আমি বেয়াদপটাকে ডিভোর্স দেবো। যত severe কারণই থাকুক না কেন যে নিজের স্ত্রী, অনাগত সন্তানকে বাদ দিয়ে মায়ের ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়ে অন্যমেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয় তার সাথে কোনোভাবেই আমি সংসার করবো না।

আমার বাচ্চাটাকে আমি এই টক্সিক পরিবারে বড়হতে দেবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারারের ভাইবার রেজাল্টটা দেওয়া বাকি আছে। চাকরিটা হয়ে গেলে আমাদের দুজনের দিব্যি চলে যাবে৷ আর বিসিএসের মতো অনন্তকাল ধরে চলা পরীক্ষাও দিতে হবে না। যাদের থেকে respect পাওয়ার জন্য ক্যাডার হতে চেয়েছিলাম তাদেরকেই আমার জীবনে আর রাখবো না।আমার সন্তান আর আমি দুজন মিলে আমাদের ছোট্ট ভালবাসাপূর্ণ একটা পৃথিবী গড়ে তুলবো। কিন্তু আমার বাড়ির লোককে কি করে বোঝাবো! না একএক করে আগাতে হবে৷ আজ এই বাসার situation tackle দেই তারপর ওবাড়ি দেখবো।

গোসল সেরে শাড়ি পাল্টে রুমে এসে দেখি সায়শা হাসতে হাসতে কুজো হয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম,
– কিরে কাহিনি কি?
– ড্রইং রুমে একটু আগে এমন সার্কাস হলো! তুই মিস করছিস।
– কি হয়েছে?
– তোর শাশুড়ী হুট করে যেয়েই বলে, এই বিয়ে সম্ভব না। সবাই কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, তার ছেলে অন্য একজনকে ভালবাসে, শুধুমাত্র মাকে খুশি করতে এই বিয়েতে মত দিয়েছিলো। কিন্তু উনি নিজ হাতে নিজের সন্তানের সুখ কেড়ে নিতে পারবেননা বলে মেয়েপক্ষের কাছে ক্ষমা চান। মেয়ে পক্ষতো গালি দিতে পরো হট্টগোল বাদায় ফেলছিলো যে তাদের নিষ্পাপ মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করছে নীড়। ওকে দেখে নেবে৷ তখন নাবিল সবাইকে ওর ফোন বের করে মেয়েটার অনেকগুলা অশ্লীল টিকটক ভিডিও দেখায় বললো আপনাদের মেয়ে কতটা নিষ্পাপ বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই! তখন মেয়েপক্ষ কালক্ষেপণ না করেই ছুচোর মতো মুখ লুকিয়ে বের হয়ে গেলো।

নীড়ের মুখটা দেখে মনে হচ্ছিলো সপ্তাশ্চর্যের থেকেও বেশি আশ্চর্যের কোনো ঘটনা ঘটতে দেখছে। তোর শ্বশুর তো নীড়ের উপর খেপে বোম হয়ে গেছে যে কেন তাকে একবার মনের কথা জানালো না৷
আঙ্কেল বলছে নীড়ের পছন্দের পাত্রীকে এখনই তার সামনে হাজির করতে উনি তার ছেলের পছন্দসই মেয়েকেই বাড়ির বউ করবে। তুই আসলে কি বলছিস রে তোর শাশুড়ীকে! বাঘিনী হঠাৎ মেনি বিড়াল হয়ে গেলো যে!
আচ্ছা যা পরে শুনবো তুই এখন চল আঙ্কেল ডাকছে। বলেই ও হাত ধরে গটগট করে টানতে টানতে আমাকে আব্বুর সামনে নিয়ে গেলো। নীড়ের আব্বু খুব গম্ভীর একজন মানুষ তাই এতবছরে হাতেগুনে কয়েকবার ওনার সাথে দেখা হওয়ায় আমি ওনাকে সেভাবে বুঝিনা। কাজেই খুব নার্ভাস feel করতে লাগলাম৷

আব্বু আমাকে দেখেই রাগী স্বরে বললো,
– এই মেয়ে! তুমিই তাহলে আমার ছেলের প্রমিকা?
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম। কিন্তু নীড় আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো
– আব্বু, ও আমার প্রেমিকা না। তোমার পুত্রবধূ। ৪ বছর আগেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা একে অপরকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু সাহস করে তোমাকে কখনো পাখির কথা বলতে পারিনি৷ ভেবেছিলাম আম্মুর মতো তুমিও রেগে যাবে।
আব্বু মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। চোখের উপর হাত রেখে প্রায় আধঘন্টা ওভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে রইলেন৷ আমি ভাবতে থাকলাম উনি কি এতোগুলো শক একসাথে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন! এখনো তো বাচ্চার শক বাকি আছে।
নীড় আবার বলে উঠলো,
– আব্বু, তুমি এমন চুপ হয়ে থেকো না প্লীজ। আমি অনেকবার তোমাকে বলতে চেয়েছি কিন্তু সাহসে কুলাতে পারিনি। গতকাল ভাবছিলাম রাতে তোমাকে সব খুলে বলবো। কিন্তু তার মাঝেই সব এত দ্রুত হয়ে গেলো যে আমি বলার সময় করে উঠতে পারিনি৷
আব্বু আস্তে আস্তে চোখ খুলে বললেন,
– আমি তোমাকে পুরুষ মানুষ তৈরি করতে পারিনি বাবা। ব্যবসা করতে করতে, টাকা কামাতে কামাতে বাসায় সময় না দেওয়ার ফল আজ এইভাবে পেতে হবে বুঝিনি৷ এই মেয়েটার দিকে আমি কোনমুখে তাকাবো বলো! তুমি নিজের বিবাহিত স্ত্রী থাকতে দিনের পর দিন মায়ের পছন্দে মেয়ে দেখে বেড়িয়েছো? অথচ সাহস করে একবার আমাকে জানাতে পারোনি? এতটা অমানুষ তুমি কিভাবে হলে!
আর ফারহানা তুমি জেনে বুঝে কি করে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে উদ্যোত হলে! ছেলের পছন্দের উপর একবার তো ভরসা করতে পারতে। ছোটোবেলা থেকে ও তোমার বাধ্য বলেই কি যা নয় তাই করতে বাধ্যকরবে ওকে? একবার ওর সুখের কথা ভাববে না? মা হয়ে এতো কঠোর কি করে হতে পারলে?

আর নীড় বরাবরের মতো এবারও মায়ের ভেড়া হয়ে তুমি এই মেয়েটার কাছে আমার মাথা হেট করে দিলে।
আর কি কোনো কিছু বলা বাকি আছে তোমার?
নীড় মাথাটা হেট করে আস্তে করে বললো,
– আব্বু আপনি দাদা হতে যাচ্ছেন।
এই কথাটা বলার সাথে সাথেই হঠাৎ করে সোফা থেকে উঠে নীড়ের গালে ৪২০ ভোল্টের একটা কষে দিলেন উনি। আর বললেন,
– তোমার মুখটা আমি আর একবারও দেখতে চাইনা৷ বাবা হচ্ছো জেনেও মায়ের কথায় বিয়ে বসতে যাচ্ছিলে! বেয়াদপ কোথাকার। বের হয়ে যাও আমার দুইচোখের সামনে থেকে।
উনি কথাটা বলতেই নীড় আমার হাত ধরতেই উনি চিল্লায় বললেন,
– ওর হাত ছাড়ো।
– তুমিই না চলে যেতে বললে!
– তোমাকে বলেছি। ওকে কিছু বলেছি আমি? ও এখানেই থাকবে। আমার কাছে আমার আর একটা মেয়ে হয়ে থাকবে।
এবার নীড়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম চড় খেয়ে সোজা হয়নি, মুচকি মুচকি হাসে৷ জোর করে হাসি বন্ধ করে বললো,
– ঠিক আছে, রুম থেকে কিছু জিনিস সাথে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
বলেই সে আর দেরি করলো না আমার হাত ধরে টানতে টানতে তার রুমে নিয়ে দরজা লক করে দিলো কেউ আসার আগে৷ দরজা বন্ধ করে দিয়েই সে হঠাৎ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু আমি যেমন ছিলাম তেমন ভাবেই দাড়িয়ে থাকলাম৷ আজ আর তার স্পর্শ আমার মাঝে কোন আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না৷ কিছুক্ষন পর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার মুখটা দুইহাতে নিয়ে বলতে লাগলো,
– থ্যাংক ইউ, সোনাপাখি। আজ আমাদের ভালবাসাকে বাঁচানোর জন্য। তুমি না আসলে যে আজ কি হতো আমি just ভাবতে পারছি না। কিভাবে যে আম্মুকে থামাতাম! কোনো বুদ্ধিই মাথায় আসছিলো না৷ তোমাকে সম্মানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি তবুও ফাইনালি আব্বু তোমাকে মেনে নিলো। এরপর যা হোক ম্যানেজ করে নেবো।
– আমি এসেই তোমার জন্য ঝামেলাটা পাকালাম। আসলে আমার পেটেরটার জন্য আসছি। নইলে তোমার সাধের বিয়েটা ভন্ডুল করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না। বাপের পরিচয় ছাড়া ওকে মানুষ করতে পারবো না, তাই আজকের occurance টা ঘটালাম।
– কি সব বলছো তুমি? তুমি জানোনা আম্মু…

চলবে?