নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-০৭

0
284

#পর্ব_৭
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

ওকে বাকিটা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি চিল্লায় বলে উঠলাম,
– শুনতে চাই না আমি, তোমার আম্মু কি করেছে না করেছে! আর ভালো লাগছে না আমার৷ এখন থেকে আমি সেটাই করবো যেটা আমার বাচ্চার জন্য ভালো হবে। আর তোমার মতো কাপুরুষ বাপ আর তোমার ভিলেন মা না থাকলেই আমার বাচ্চার জন্য ভালো। আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাই না৷ আমার বেবিটা এই পৃথিবীতে আসলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দেবো। লাগবে না তোমাকে আমাদের জীবনে। আমরা দুইজন অনেক ভালো থাকবো। তুমি মুক্তি দাও আমাদের।
– চুপ, একদম চুপ!
– আজ আমি চুপ করবো না৷ আল্লাহ কেন আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে এমন একটা পরিবারে পাঠাচ্ছে! তার থেকে তুমি ওকে …
কথা শেষ করার আগেই নীড় শক্তহাতে আমার গাল চেপে ধরে বললো,
– কথাটা শেষ করলে তোর জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। ভূলে গেছিস আমার আসল রূপ? অনেক সাহস হয়ে গেছে তোর৷ আমি তোর সাথে অন্যায় করছি বলে এই কয়দিন তোর অনেক বেয়াদপি সহ্য করছি। তার মানে এই না যে তুই পদে পদে আমার মুখের উপর কথা বলবি৷

আর একবার আমার বাচ্চা আমার বাচ্চা করবি তো তোর খবর আছে। বাচ্চা কিভাবে হয় জানিস না তুই? এখন তোকে বায়োলজি পড়ানোর সময় আমার নেই৷ আর ডিভোর্সের কথা মুখ দিয়ে কখনো যেন বের না হতে শুনি। আমার বউ, আমার বাচ্চা আমার কাছেই থাকবে সারাজীবন।
৪ বছরে কেবল তো সবে একটা দিলাম বাচ্চা। বছর বছর কিভাবে তোর পেট বুক করে রাখতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে। যখন কোলে একটা, পিঠে একটা আর পেটে একটা করে থাকবে তখন আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবিস।

সে আরো কিছুক্ষণ ওভাবেই আমার গাল চেপে ধরে ধমকাতে থাকলো। আমি মানসিক কষ্ট + শারীরিক দুই কষ্টেই প্রচুর কান্না করতে থাকলাম। কান্না নাকি ক্ষুধা নাকি দুইটার কারণেই হঠাৎ বমি চলে আসলো। আমি জোরে তার হাত ঠেলে বাথরুমে যেয়ে বমি করতে থাকলে সেও পিছে পিছে এসে আমার মাথায়,পানি ঢালতে থাকলো। শেষ হলে আমার হাতমুখ ভালো করে ধুইয়ে আমাকে ধরে রুমে নিয়ে এসে আমার মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
-আমাকে কেনো রাগাও সোনাপাখি! জানোই তো যে রেগে গেলে আমার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। অনেক ব্যাথা দিয়ে ফেলছি! আমি স্যরি। তুমি প্লিজ আমাকে আর ইচ্ছা করে রাগাবা না। আমি বাবা হতে যাচ্ছি সো রাগ কন্ট্রোল করা আমাকে শিখতে হবে। যেদিন তুমি প্রথম আমাকে বাবা হওয়ার সুখবরটা দিলে সেদিন নিজের কাছে প্রমিজ করেছিলাম যে আর রাগারাগি করবো না তোমার সাথে। বেস্ট হাসবেন্ড হতে পারিনি কিন্তু বেস্ট আব্বু হয়ে তোমাকে দেখিয়ে দেবো। কেন আমাকে রাগিয়ে দিয়ে আমার প্রমিজ ভাঙলে! স্যরি বলো!
-তুমি সারাজীবন ধরে স্যরি বললেও আর ক্ষমা পাবা না। সেখানে আমার স্যরি বলার প্রশ্নই ওঠেনা।
– দেখি রাতে কিভাবে রাগ করে থাকো!
– একদম ওইসব মতলবে আমার কাছে ঘেষবে না। তুমি আমাকে স্পর্শ করার right হারায় ফেলছো।
ও প্রচন্ড রাগে চোখবন্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করে তারপর কথা ঘুরিয়ে বললো,
– অনেকক্ষণ কিছু খাওনা। আমি খাবার নিয়ে আসছি৷ চুপচাপ বসে থাকবা।
সে খাবার আনতে গেলে আমি চুল আচড়িয়ে দেখি সায়শা আর নাবিল আসছে রুমে। সায়শা বললো,
– ঐ তোর শাশুড়ীকে কি বলে টাইট দিছিস বলনা!
– আমাদের শাশুড়ী বউমার সিক্রেট তোকে কেন বলবো?
– প্লিজ, প্লিজ বলনা!
নীড় খাবার হাতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– ও এখন খাবে৷ তোরা তোদের খাবার নিয়ে আয় যা। আজ আমার বউয়ের শ্বশুরবাড়ি প্রথমদিন তাই বাসায় অনেক রান্না হয়েছে। জলদি যা নইলে আম্মু রুম থেকে বেরোলে তোদেরকে ধরবে।
সায়শা নীড়কে দেখেই বলে উঠলো,
– ঐ তুই এখানে কি করিস? তোকে না আঙ্কেল বাসা থেকে বের করে দিলো?
– বের করে দিলেই হলো! আমার বউ এইখানে থাকবে আর আমি কই যাবো? কয়দিন আব্বুর সামনে না পড়লেই হলো।
– এখন বউ বউ করছো। আরেকটা মেয়ের সাথে বিয়ে বসার সময় এই বউ কই ছিলো?
– বিয়ে কি করছি আমি? অবশ্যই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতাম আমি৷ সব প্ল্যানও রেডি রাখছিলাম৷ কিন্তু তার মাঝেই তুই মাতবর আমার ভোলা ভালা বউটাকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়ে রাগিয়ে ধাগিয়ে অ্যাটম বোম বানায় নিয়ে আসলি। যদিও তাতে শাপে বর হয়েছে, আব্বু আমার বউটাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু তোর কান ভাঙানিতে সে এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়। তুই কান ভাঙাইছিস এখন তুই আবার আমার বউকে বোঝাবি যাতে সে আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও না ভাবতে পারে।
– বয়েই গেছে আমার!!!
– ঠিক আছে যতদিন আমার বউ আমাকে কাছে ঘেষতে দেবে না তোর জামাইও তোর থেকে দূরে থাকবে।
– আমার জামাই আমায় ছাড়া থাকতেই পারবে না! তাই না সোনা! (সায়শা নাবিলের দিকে কিউট ফেস করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো)
নাবিল উত্তর করার আগেই নীড় বললো,
– নাবিল, তোর জন্য নীলগিরি ট্যুর ফ্রি।যতদিন খুশী তুই আর আমি ট্যুর করে বেড়াবো। এখন ভেবে উত্তর কর।
– স্যরি জান। বউ গেলে বউ পাবো, কিন্তু ফ্রি ট্যুর মিস গেলে আর পাবো না। (নাবিল অট্টহাসি দিতে দিতে বললো)
– ভালো হচ্ছে না কিন্তু!!! আজ তুই বাড়ি চল, তোকে আমি নীলগিরি ট্যুর করাচ্ছি।
– ঐ গাপ্পু, তুই না আমার বেস্টুর বউ। এমন মীরজাফরগিরি করিস না প্লিজ। বিবাহিত মহিলা হয়ে এই বিবাহিত পুরুষটার কষ্টটা একটু বোঝ বুনডি! বউ থাকতে কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করবো বল?
– তুই আমার বান্ধবীর থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবি। তার এতদিনের ভালবাসা হেলায় ফেলায় হারিয়েছো এবার নিজ যোগ্যতায় সেটা restore করো। আমি বা নাবিল কেউ হেল্প করবো না। আর নাবিল যদি তলে তলে তোকে হেল্প করে ওর একদিন কি আমার একদিন।

আমি মনে মনে বলতে থাকলাম যত চাই করো তোমাকে আমি মাফ করবো না৷ তোমার আব্বুর একটা কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত তাই না বেবি! যাতে করে আর তোমাকে আর আমাকে ছাড়া সে আর কিছুই ভাবতে না পারে।

কথা ঘুরাতে নাবিল বলে, চল সায়শা তোর আর আমার খাবার নিয়ে আসি৷ খাটাসটা শুধু ওদের খাবার আনছে। বলে ওরা দুইটা বেরিয়ে গেলে সে আমাকে খাওয়ানো শুরু করলো। কয়েক গাল খাওয়ার পর আমার আবার বমি পাচ্ছে দেখে ও আর জোর করলো না, নিজে খাওয়া শুরু করলো।
নাবিল বিশাল বড়ো একটা প্লেটে খাবার নিয়ে এসে বললো,
– মামা, তোর বিয়ে উপলক্ষে তো জম্পেশ অ্যারেন্জমেন্ট করছে! এমন খাবার না হলে জমে নাকি বিয়ে! তুই এক কাজ কর শুধুমেয়ে দেখতে যাওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকিস না টেনেটুনে এমন বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে আসবি তাহলে আমি প্রতি উইকে এমন গান্ডে পিন্ডে গিলতে পারবো। হেব্বি হবে কিন্তু ব্যাপারটা।

ও কথাটা শেষ করে নীড়ের দিকে তাকাতেই তার অগ্নিমূর্তি দেখে কিছুটা চুপসে গেলো।
– ব্যাটা পেটপুরে গিলে তুই তোর বউ নিয়ে বেরো আমার বাড়ি থেকে। তুই আমার বন্ধু না মীরজাফর তুই। তোর বউকি কম পড়ে গেলো যে তুইও এখন আমার বৌকে আমার বিরুদ্ধে উসকাচ্ছিস্।
– পাখি, i was just joking. তুই প্লিজ নীড়ের উপর রাগ করিস না। দেখ ছেলেটা তোকে খুব ভালবাসে। মায়ের ভয়ে ভীতু হয়ে থাকে ঠিকই কিন্তু আমার কাছে একটা পারফেক্ট সল্যুশন আছে। তোর ছেলে হলে তুইও তোর ছেলেকে মায়ের ভেড়া বানাবি।
বলে ভাবলো কি চমত্কার জোক মারছে। বাট আমার আর নীড়ের দিকে তাকিয়ে ওর দম ফুস হয়ে গেলো।
নীড় বললো,
– ব্যাটা তুই তোর মুখটা বন্ধ করে খা। মুখ দিয়ে যা বের করছিস তাই দূর্গন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তুই গেলেই আমাকে air freshner মারতে হবে।
অনেকদিন পর এত ঝামেলার মাঝেও নাবিল আর সায়শা থাকার কারণে টেনশন কিছুটা ভূলে গেলাম৷ ওরা সন্ধ্যার দিক চলে গেলো। আমি আর নীড় রুম থেকে আর বেরোলাম না। নীড় ফোন করে তানকে জানিয়ে দিলো আজ বাসায় কি কি ঘটছে। আর ওকে বাসায় ম্যানেজ করতে বলে আমাকে নিয়ে কাল ও বাড়ি যাওয়ার কথাটাও বললো।
আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের তারা দেখছিলাম আর তানের সাথে নীড়ের conversation শুনছিলাম। কখন যে নীড় পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! আমি হঠাৎ চমকে গেলাম। নীড় বললো,
– স্যরি, সোনাপাখি। তুমি যে চমকে যাবে বুঝতে পারিনি৷ চলো কাল ডক্টর দেখায় আসি। এত জার্নি, স্ট্রেস কিছুই বেবির জন্য ঠিক না।
কথাগুলো বলতে বলতে ও আমার ঘাড়ে নাক ঘষতে থাকলো। বেটার মতলব খারাপ বুঝে আমি তাকে হার্ট করার জন্য বললাম,
– আমার বাচ্চার ভালোমন্দ আমিই বুঝবো। আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই।
নীড় ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে আমাকে জোর করে ওর দিকে ফিরিয়ে বলতে লাগলো,
– খুব মার খাওয়ার শখ হয়েছে তোর।তুই অন্তত আমাকে পেইন দিসনা প্লিজ। তুই কিচ্ছু জানিস না। তোকে আব্বু মেনে নিয়েছে মানে এই না যে আম্মু আমাদের সম্পর্কটা আর ভাঙার চেষ্টা করবে না। এখনও আমি তাকে পরাস্ত করার অস্ত্র খুঁজে বেড়াচ্ছি। প্লিজ আমাকে একটু শান্তিতে ভাবতে দে।
আর বার বার আমার বাচ্চা আমার বাচ্চা করতে নিষেধ করছি। কষে একটা না দিলে তুই শুধরাবিনা। বাচ্চাটা আসছে কোথা থেকে একবার ভাবছিস! বিয়ের পর থেকেই আমি ফিজিক্যালি তোর সাথে একটিভ। সাধুপুরুষ না আমি যে বিয়ে করে বউয়ের সাথে ফিজিক্যাল না হয়ে ধ্যান করব৷ আর তুই এতবছর ধরেই প্রোপার প্রটেকশন ইউজ করিস। তাহলে বাচ্চাটা এলো কোথা থেকে ভাবছিস একবার! বাচ্চা হওয়ার নিউজটাতে আমি কেন একটুও অবাক হইনি! ঢাকায় যেখানে দুইজনের সংসার চালাতেই আমাকে হিমশিম খেতে হতো সেখানে বাচ্চা হওয়ার খবরটা আমাকে বিচলিত না করে এত খুশি কেন করেছিলো? ভেবেছিস???

চলবে?