নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-২৩+২৪

0
180

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-২৩
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

মেঘা অনেকক্ষণ ধরে ঘরে পায়চারি করছে। কিছুক্ষন পর তার টিচার আসবে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষন আগেই ফোন করে বিষয়টি তাকে জানিয়েছে। সেটা বড়ো বিষয় না বিষয় হচ্ছে এই আদ্র তার সাথে এতদিন প্রেম প্রেম অভিনয় কেনো করলো? আদো কি এতো নিখুঁত করে অভিনয় করা যায়? নাকি এর মধ্যেও কোনো কিছু লোকায়িত আছে। অবশ্য আদ্রিয়ান কে দিয়ে সব সম্ভব। উফফ মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নেবো নাকি এই আদ্র কে নিয়ে রিচার্জ করবো। এতো ছোট্ট কেনো হলাম আমি, কে জানে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। ধুর কিছু ভালো লাগে না। ইচ্ছে করছে চাঁদের দেশে গিয়ে চাঁদের বুড়ির কাছে গিয়ে চরকায় সুতা উৎপাদন করি। তখন আদ্রিয়ান যদি আবার তার প্রেম বাস্তবে রুপান্তর করতে চাই তখন যাতে ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পাই, যেমন টা এখন আমি পাচ্ছি। আমার দেখা পেতে চেয়েও যাতে দেখা না পাই তখন। তখন আমিও চাঁদের বুড়ির সাথে বসে বসে আদ্রিয়ান এর পাগলামি দেখবো আর হাসবো। হুঁ,,,,, কি ভেবেছে সে? বিয়ে করবে অন্য কোন কে আর প্রেম প্রেম খেলবে আমার সাথে? মগের মুল্লুক নাকি। আমিও আমার আব্বুর সাহসী মেয়ে,, না তেমন সাহসী না,, তাতে কি হইছে সাহসী তো সাহসীই হয় কেউ বেশি কেউ অল্প। সাহসী ওয়ার্ড টাতো আর চেঞ্জ হয়না সেটা একই জায়গায় থাকে। তাই সে তার সাহসী আব্বুর সাহসী মেয়ে। বলেই নিজে নিজে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

হঠাৎ করেই দরজায় কেউ টোকা দিলে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো। এরপর তাকিয়ে দেখলো যে সার্ভেন্ট এসে বললো যে তার টিচার এসেছে পড়ানোর জন্য। এরপর সেও তাড়াতাড়ি মাথার ঘোমটা ঠিক করে তার জন্য বরাদ্দ কৃত পড়ার রুমে চলে গেলো। অবশ্য তার টিচার একজন মহিলা। তারই কলেজের অধ্যয়নরত একজন প্রফেসর।

______________________________

দুইদিন পর –

এই দুইদিনে দাদীমার সাথে মেঘার অনেক ভালো সম্পর্ক হয়েছে। সাথে নিশুর সাথেও। মেয়েটা স্মার্ট আর সুন্দরী হলেও তার মধ্যে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই। মেঘাকে নিজের ছোটো বোনের মতো স্নেহ করে। প্রত্যেক দিন সে যখন বাইরে যাই মেঘার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। এই যেমন ড্রেস, চকলেট, ফুসকা আরো অনেক কিছু। মেঘাও নিশুকে নিজের বড়ো বোনের মতোই আপন করে নিয়েছে। এর মধ্যে আদ্রিয়ান এর সাথে দুইবার দেখা হয়েছে। প্রথম বার ছিলো মেঘা রুম থেকে বের হতে গিয়ে পরের বার ছিলো নিশুকে নিয়ে যখন আদ্রিয়ান বিয়ের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলো। অবশ্য মেঘা সেটা দেখে কষ্ট পেলেও নিজের মধ্যেই সব কিছু লোকায়িত করে রেখেছে। সবার সামনে হাসি খুশি থেকেছে। কারণ যে ব্যাক্তি নিজে থেকে এত নিখুত অভিনয় করে তার মত নরম ফুলকে শুকনো ফুলে পরিণত করে ছুঁড়ে ফেলতে পারে সে যাই হোক ভালোবাসার যোগ্য না। কিন্তু তবুও অবুঝ মন তো বার বার কাটা দিয়ে ক্ষত করছে সেই পিণ্ডতে। কিন্তু তাকেও যে শক্ত থাকতেই হবে। আব্বু তো বললো নিজের কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে এখানে থাকতে নারাজ। সব কিছু তার চোখের সামনে হলে সে সহ্য করতে নাও করতে পারে। তাই সুযোগ খুঁজছে কিভাবে এখান থেকে বের হওয়া যাবে। এমনিতেই আদ্রিয়ান তাকে কলেজে যাওয়া ছাড়া কোথাও যেতে দেইনা। সাথে দানবের মতো দেখতে দুটো মেয়ে বডিগার্ড দিয়েছে। প্রত্যেক দিন একবার নিয়ে যাবে আবার কলেজে ছুটি হলে দিয়ে যাবে। প্রত্যেক দিন এক কাহিনী দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে। আর আগে নাহয় সে এসব মেনে নিয়েছে কিন্তু এখন এতো আধিক্ষেতা কেনো করছে? এখন তো আর অভিনয় এর প্রয়োজন নেই তাইনা! সব কিছুই খোলাসা।
আদ্রিয়ান তাকে নিয়ে চাইছে টা কি?

“ডল বেবি! তুমি এখানে দাড়িয়ে কি করছো? আর এই অবেলায় গোসল কেনো করেছো? ঠান্ডা লাগবে তো! এরপর কিন্তু আদ্রিয়ান আমাকে তো বকবেই সাথে তোমাকেও!”

“কি যে বলোনা নিশু দি! ঠান্ডা লাগলে লাগবে আমার। এতে উনি কেনো বকবে? আর আমি কি করবো না করবো সেটা কি আদ্রিয়ান ঠিক করে দিবে? তুমিও না ভালই মজা করো নিশু দি”

” তাই,,, আমি মজা করছি? সেটা কিন্তু তুমিও ভালো করে জানো কে কাকে বকবে,, সে যাই হোক – দাদীমা খেতে ডাকছে। তুমি নাকি দুপুরেও খাও নি? আচ্ছা খাবারের প্রতি এত অবহেলা কেনো? আদ্রিয়ান থেকে তোমার হেলথের বিষয়ে শুনলাম। নিজের তো খেয়াল রাখতে হবে তাইনা? না হলে কেউ একজন কিন্তু”

নিশু আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলো। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলা হয়ে যেতো নইলে। মেঘাও কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো। নিশু দি কি একটা বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেলো! যখনই কথাটা জিজ্ঞেস করবে তখনই দাদীমা সার্ভেন্ট কে পাঠালো এখনও কেনো খেতে আসছে না। তাই মেঘা যখন চিন্তায় বিভোর তখন নিশু মেঘাকে ভাবনাতে না রেখে টেনে নিচে খাওয়ার জন্য নিয়ে গেলো।

_________________________

মেঘা নিশু যখন নিচে নেনে ডাইনিং টেবিলের দিকে যাবে তখন দেখলো আদ্রিয়ান আগে থেকেই চেয়ারে বসে ফোন চালাচ্ছে। মেঘা আদ্রিয়ান কে দেখে আর সামনে যেতে চাইলো না দেখে নিশু তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। মেঘা তখন বললো যে তার এখন খিদে পায়নি। খিদে পেলে খেয়ে নিবে। এত ব্যস্ত হতে হবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা নিশু টেনে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে আদ্রিয়ান এর সামনাসামনি বসালো। আর নিশু আদ্রিয়ান এর পাশে বসলো। দাদীমা মেঘার পাশে। মেঘা নিশু আর আদ্রিয়ানকে পাশাপাশি বসতে দেখে চোখ টা হালকা জ্বলতে লাগলো। কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো। দাদীমাও মেঘার প্লেটে খাবার দিলো।

“দাদীমা এই বাড়ির একটা নিয়ম আছে সেটা হয়তো কেউ ভুলে যাও নি। অবশ্য কেউ এখানে নতুন তাই হয়তো নিয়মের ব্যাপারে জানে না। সমস্যা নেই আমি আজকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছি। সময়ের খাবার যাতে সবাই সময়ে করে সেটা এই বাড়ির রুলস এর মধ্যে পড়ে। কিন্তু তোমার পাশের জন হয়তো সেই বিষয়টি অবগত হলেও নিয়মের লঙ্ঘন করেছে। আমি আজকে লাস্ট বার বলে দিচ্ছি। খাবার নিয়ে হেলাফেলা করলে কিন্তু তার শাস্তিও কিন্তু রেডী থাকে সবসময়। তাই আজকের মত ছেড়ে দিলাম”

বলেই আদ্রিয়ান থামলো। আর এতক্ষন ধরে সবাই আদ্রিয়ান এর কথা মন দিয়ে শুনলেও কেউ কোনো কথা বললো না। কিন্তু মেঘাও চুপ করে থাকলো না উল্টো আদ্রিয়ান প্রশ্ন করলো

“আদ্রিয়ান ভাইয়া,, কই আগে তো এইরকম রুলস এর কথা বলেন নি? আমি তো এখানে অনেক দিনই আছি। যদি অবগত করতেন তাহলে আপনার বিখ্যাত রুলস গুলো পালন করতাম আদ্রিয়ান ভাইয়া,, য়া,,য়া। সে যাই হোক,, এখন যখন আমার উদ্দেশ্য কথা গুলো বলেছেন সেহেতু আপনার কথা এবং রুলস ফলো করার যথেষ্ঠ চেষ্টা করবো।”

মেঘার মুখে আদ্রিয়ান কে ভাইয়া সম্বোধন করাতে নিশুর কাশি উঠে গেলো। কষ্টে কষ্টে অবস্থা খারাপ। মেঘা তাড়াতাড়ি জায়গা থেকে উঠে নিশুকে পানি খাওয়ালো। কিছুক্ষন পর নিশুর কাশি কমলে মেঘার দিকে একবার তাকিয়ে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো। আর দাদীমা মুচকি মুচকি হেসে খেতে লাগলো। আদ্রিয়ান চামচ হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে চামচের অবস্থা বেহাল করতে লাগলো। কাটা চামচ হওয়ায় হালকা কেটেও গেলো। কিন্তু সেই দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মেঘার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু মেঘা এর বিন্দু মাত্র কেয়ার না করে নিজের চেয়ারে বসে খাবার খেতে খেতে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো

“একি আদ্রিয়ান ভাইয়া আপনার হাতের এই অবস্থা কেনো?”

“আদ্রিয়ান হাত থেকে চামচ টা ফেলো”

নিশু তাড়াতাড়ি নিজের খাবার রেখে আদ্রিয়ান এর হাত থেকে চামচ নিয়ে টেবিলে রাখলো। এরপর মেঘাকে বললো পানি দিয়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার করার জন্য। মেঘা যখনই পানির গ্লাস নিয়ে হাতে পানি দিতে যাবে ওমনিই আদ্রিয়ান মেঘার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিল। হঠাৎ এমন হওয়াতে মেঘার হাতে থাকা গ্লাস মাটিতে পড়ে গেল। আর মেঘার হাত টেবিলের সাথে বাড়ি খেলো। মেঘা হালকা আওয়াজ করলেও আদ্রিয়ান তা খেয়াল করলো না।

” আমি কি তোমাকে বলেছি পানি দিতে? কোন সাহসে তুমি আমাকে আপনি দিতে যাচ্ছিল? বলো?”

আদ্রিয়ান প্রথমের কথা গুলো ধমক দিয়ে বললেও পরের কথা গুলো চিৎকার করে বললো।

“আদ্রিয়ান এইভাবে কেনো বলছিস মেয়েটা কে? মেয়েটা তো শুধু তোর সাহায্য করতেই চাইছে! তুই এমন রিয়্যাক্ট করছিস যেনো ও তোর কাঁচা ধানে মই দিয়েছে। এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে?”

“দাদীমা প্লীজ তুমি এসবের মধ্যে ধুকো না। তোমার মেডিসিনের সময় হয়েছে। নিশু দাদীমা কে নিয়ে যাও।আর মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে দাও। তুমিও গিয়ে শুয়ে পড়ো। কালকে থেকে বিয়ের কাজ শুরু হবে। শরীরে রেস্ট দেওয়া জরুরি। এরপর আর রেস্ট করার সুযোগ পাবে না। যাও”

আদ্রিয়ান কথা গুলো বলে নিশুকে ইশারা করলো দাদীমা কে নিয়ে যেতে।

“কিন্তু আদ্রিয়ান,,,

“তোমাকে যেতে বলেছি নিশু। কথা শুনো”

আদ্রিয়ান গরম চোখে তাকালে নিশু দাদীমা কে নিয়ে যেতে লাগলো। দাদীমাও আর কিছু বলল না। শুধু মেঘাকে ইশারায় ভয় পেতে বারণ করলো। কিন্তু মেঘা তো মেঘায়। হঠাৎ আদ্রিয়ান এর এমন রিয়্যাক্ট এ প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছে। নিজেকে শক্ত করতে চাইলেও কান্না গুলো দলা পাকিয়ে চলে আসলো। কিন্তু খুবই সন্তর্পনে কান্না গুলো গিলতে লাগলো। যার ফলে হালকা হেঁচকি উঠতে লাগলো।

নিশু আর দাদীমা যখন চলে গেলো তখন মেঘার ব্যাথা পাওয়া হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। মেঘার অবশ্য আগে থেকেই হেঁচকি উঠছিল। কিন্তু ব্যাথার জায়গায় শক্ত করে ধরায় ব্যাথাটা যেনো দশ গুন তাজা হয়ে উঠলো। কিন্তু তবুও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না কারণ সেও দেখতে চাই এই আদ্রিয়ান চাইটা কি?

আদ্রিয়ান মেঘাকে নিয়ে রুমে ঢোকে দরজা লক করে দিল। এরপর মেঘাকে দেওয়ালের সাথে চেপে হিসহিসিয়ে বললো

“এই মেয়ে এই,, আমি তোর কোন জনমের ভাই লাগি? আমার জানামতে আমার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান আমি। তাই বোন থাকার প্রশ্নই আসে না। আর তোর বা আমার কোনো চাচা, মামা, ফুফা লাগে না যে” সেই সম্পর্কে তুই আমার কাজিন হবি! তাহলে কোন সাহসে তুই আমাকে ভাইয়া ডাকিস বল? ”

আদ্রিয়ান এর চিল্লিয়ে কথা বলা গুলো মেঘা? হজম করে নিচ্ছে। কারণ আদ্রিয়ান থেকে আসল কথা বের করতে হবে। তাই নিজেকে শক্ত রেখে হালকা হাসার চেষ্টা করলো।

“কেনো? আপনি তো আমার বয়সে অনেক বড়। তাহলে সেই ভিত্তিতে আপনাকে ভাইয়া ঢাকায় যাই। তাইনা? আংকেল তো আর ডাকা যায়না। আপনার যদি ভাইয়া ডাক পছন্দ না হয়, তাহলে আপনি অনুমতি দিলে আমি কিন্তু আপনাকে আংকেল ডাকতে পারি”

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২৪ (১৮+ এলার্ট)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(প্রাপ্ত বয়স্ক দের জন্য)

“কেনো? আপনি তো আমার বয়সে অনেক বড়। তাহলে সেই ভিত্তিতে আপনাকে ভাইয়া ডাকায় যাই। তাইনা? আংকেল তো আর ডাকা যায়না। আপনার যদি ভাইয়া ডাক পছন্দ না হয়, তাহলে আপনি অনুমতি দিলে আমি কিন্তু আপনাকে আংকেল ডাকতে পারি”

মেঘার এরূপ কথাতে আদ্রিয়ান এর রগের শিরা গুলো ফোলে উঠছে। মেঘার উপর হঠাৎ করেই প্রচন্ড রাগ আসার ফলে মেঘার দেওয়ালের পাশে প্রচন্ড জোরে ঘুষি দিলো। এতে আদ্রিয়ান এর হাতের চামড়া গুলো ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। আদ্রিয়ান এর হঠাৎ এইরকম করতে মেঘা প্রচন্ড ভয় পেলো। তাই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।

“মেঘু খুব বার বেড়েছো। কার থেকে এত সাহস পাচ্ছো বলতে পারবে? কথার বুলি ফোটেছে খুব দেখছি।”

“আপনি হয়তো আমাকে চিনতে ভুল করেছেন তাই হয়তো আমাকে নিয়ে পুতুল পুতুল খেলা খেলছেন? আমি কার মেয়ে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। সে যাই হোক দুইদিন পর আপনার বিয়ে, তাই নিজের হবু বউয়ের সাথে বেশি বেশি টাইম স্পেন্ড করবেন। তা না করে আপনি একজন আশ্রিতা কে নিয়ে আপনার রুমে ঢুকলেন। আবার দরজাও বন্ধ করে রেখেছেন। নিজেকে কি বাদশাহ ভাবছেন? আপনার সন্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। আমি ভদ্র পরিবারের মেয়ে। তাই নিজের লিমিট ক্রস করবেন না মিস্টার আদ্রিয়ান।

মেঘার এরূপ কথা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। এরপর কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো এরপর মেঘার উদ্দেশ্য

“আসলেই ঠিক বলেছো। তোমার মতো একজন আশ্রিতার কাছে কেনোই বা থাকতে চাইবো। ভালো বুদ্ধি দিয়েছো হবু বৌয়ের সাথে সময় কাটানো উচিত। অযথা কেনো যে তোমাকে নিয়ে আসলাম। আমার সময় পুরোটাই লস।”

এই বলেই মেঘাকে রুমের বাইরে রেখে রুম লক করে নিশুর ঘরে গিয়ে দরজা অফ করে দিলো। মেঘা সেই দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। আদ্রিয়ান হয়তো তার সাথে দুষ্টামি করছিলো ভেবে দাড়িয়ে থাল। আদ্রিয়ান বের হয় কিনা দেখার জন্য। মেঘার হাতের ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছিল। যার জন্য কিছুক্ষন পর পর হাত টা দেখছিল আর পায়চারি করছিলো নিশুর দরজার সামনে। কিন্তু প্রায় ত্রিশ মিনিট হওয়ার পর যখন বের হলো না তখন মেঘার বুক টা ধুক করে উঠলো। সামনে এগিয়ে গিয়ে দরজায় কান পেতে শুনার চেষ্টা করলো ভেতরে কি হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কিছু শুনলো মেঘা পাথরের মতো হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান এতো খারাপ। ছি: এমন টা কিভাবে করতে পারে সে। ছি: বলেই মেঘা কান্না করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিলো। হাতের ব্যাথাটাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। মনে হয় হাড় ভেঙেছে।কেউ দরজা খুলে সেই দৃশ্য দেখে বাকা হাসলো। এরপর দরজা টা অফ করে দিলো।

____________________________

মধ্যে রাতে মেঘার রুম থেকে ঘুঙ্গানুর আওয়াজ হতে লাগল ধীরে ধীরে। হয়তো প্রচন্ড ব্যাথায় মেয়েটা কাতরাচ্ছে। অর্ধ ঘুমে থেকেও কাও কে ডাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। শরীর টা প্রচন্ড দুর্বল লাগছে। তেষ্টাই গলাটা শুকিয়ে গেছে। সাথে হাতের ব্যাথাটাও বেড়েছে। হাত অনেকটায় ফুলে ডোম হয়ে গেছে। বাম হাতে মিনি টেবিল থেকে পানির বোতল নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই ফুফিয়ে কান্না করে দিলো। মেঘা যখন কান্নায় ব্যাস্ত ছিল তখন কেউ একজন মেঘার দরজার নড় ঘুরিয়ে রুমে ঢুকলো। মেঘাকে ঘুঙ্গাতে দেখে হাতের মেডিসিন গুলো নিয়ে মেঘার পাশে গিয়ে বসলো আর পানির বোতল টা নিয়ে মেঘাকে উঠিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো। মেঘাও যেনো পানির তৃষ্ণা নিবারণে প্রায় অর্ধেক বোতল পানি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেললো। এরপর মেঘাকে ধরে শুইয়ে দিলো। মেঘা আধো আধো চোখ খুলে দেখতে লাগলো সামনে ব্যাক্তি টিকে। কিন্তু রুমে ড্রিম লাইট থাকায় স্পষ্ট কিছু বুঝা গেলো না সামনে কে বসে আছে। তবুও পরিচিত পারফিউমের সুবাস যেনো বলে দিচ্ছে তার প্রিয় পুরুষটি এসেছে। তার সন্নিকটেই বসে আছে। আর তার আলিঙ্গন পেতেই ধীরে ধীরে তার কাছে গিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে সেই ব্যাক্তির পেটে মুখ গুচলো। সামনে ব্যাক্তি টি সুস্বাস্থের হওয়ায় ঠিক মতো জড়িয়ে ধরতেও পারছে না। সামনের ব্যাক্তিটি হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরেছে তাই মেঘাকে নিজে থেকেই কাছে টেনে নিলো। এরপর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো

” আপনি এসেছেন আদ্র? আপনি কেনো এসেছেন এখানে? একদম আসবেন না এখানে। আপনি না খুব খুব পচা একজন লোক। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। তার জন্যই তো নিশু দির সাথে বিয়ে করছেন। করেন গিয়ে বিয়ে আমিও আপনাদের এখানে আর থাকবো না। অনেক দূরে চলে যাবো। আপনি শুধু আমায় কষ্ট দেন। আমার আব্বু আমাকে একটুও কষ্ট দিতো না। আব্বু তো বলেছিল আপনি নাকি আমাকে ভালো রাখবেন। কই ভালো রাখছেন উল্টো কষ্ট দিচ্ছে। এইযে আজকেও কষ্ট দিয়েছেন আমাকে। হাতেও ব্যাথা দিয়েছেন। আমি কি এত কষ্ট সহ্য করতে পারি? আমার মনটা যেমন নরম শরীরের হাড় গুলোও তো নরম। আপনার মতো তো আর শক্ত না যে ব্যাথা পেলেও ব্যাথা লাগে না। উফ্ খুব ব্যাথা করছে তো আদ্র।”

এরূপ বলেই মেঘা আরেকটু জোরে কান্না করতে লাগলো। সামনের ব্যাক্তিটির মুখটা গম্ভীর হলেও নিজের ভেতরের কষ্টটা জমিয়ে রাখলো। তারও তো ইচ্ছে করছে না মেঘাকে কষ্ট দিতে। কিন্তু তার যে উপায় নেই। হাতের মেডিসিন গুলো থেকে স্প্রে বের করে মেঘার হাতে স্প্রে করে দিয়ে কিছুক্ষন হাত টাতে ম্যাসাজ করে দিলো। হাতটা একদম লাল হয়ে আছে আর বেশ ফুলেও গেছে। সেটা দেখেই বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। তার স্নিগ্ধ পরিকে সে এইভাবে যন্ত্রণা দিলো। সে এতো টা পাষাণ কিভাবে হতে পারলো। হ্যা লোকটি আর কেই নয় আদ্রিয়ান। নিজের কাজে নিজের উপরই এখন রাগ উঠছে। এতো টা কেনো নিজেকে দুর্বল আর অসহায় লাগছে নিজেকে? এইতো আর দুইদিন এরপর সব কিছুই তার হাতের মুটুই থাকবে।

“জান,, খুব কষ্ট হচ্ছে! এইতো ব্যাথার ওষুধ দিয়ে দিয়েছি। দেখবে একটু পর ভালো হয়ে যাবে। তোমার আদ্র তোমার পাশেই আছে লক্ষীটি। এইতো আমি লক্ষ্মীটি! আর কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো সোনা। আমি খুব ব্যাথা দিয়েছি তাইনা সোনা। এইতো এখনই ব্যাথা সেরে যাবে।”

বলেই আদ্রিয়ান মেঘাকে শুইয়ে দিয়ে কপাল গালে কিস করতে লাগলো। আর “জান কোথায় ব্যাথা করছে বলো? আমি এখনই সেরে দিচ্ছি! এইতো তোমার আদ্র তোমার কাছে আছে জান। কোথাও যাই নি, আমি এখানেই আছি একদম সন্নিকটে জান।” এরূপ বলতে বলতে মেঘাকে এলোপাথাড়ি চু*মো দিতে লাগলো। চুলের খোঁপা টাও খুলে ফেললো। এরপর ঘাড়ে হাত গলিয়ে ঠোঁটে এগিয়ে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে নিতে চোখ মেলে একবার মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখলো। মেঘাও নিভু নিভু চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকলো আর ঘন ঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো। আদ্রিয়ান নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না মেঘার ওই নরম ওষ্ঠে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো। মেঘাও যেনো সেই মাতোয়ারা নেশায় আসক্ত হলো। এক করে দিলো নিজের ভেতরে থাকা সুপ্ত অনুভূতি গুলো। আদ্রিয়ান পুরো পাগলের মত মেঘার ওষ্ঠে এলোপাথাড়ি কি*স করতে করতে কয়েক তো কামড়ও দিলো। এরপর ঠোঁ*ট থেকে কি*স করতে করতে নিচে নেমে আসতে লাগলো। মেঘার জামাটা চেইন সিস্টেম হওয়ায় পিছন থেকে চেইন খুলে যখনই বুকে কিস করতে যাবে তখন দেখে মেঘার কোনো নড়চড় নেই। আদ্রিয়ান উপর দিকে চেয়ে দেখলো মেঘা ঘুমিয়ে পড়েছে। আগেই মেঘাকে জ্বরের আর ব্যাথার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে যার জন্য মেঘার শরীর উত্তেজনায় নেতিয়ে গেছে। আর এর জন্যই আদ্রিয়ান এর স্পর্শ সহ্য করতে না পেরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আদ্রিয়ান মেঘার কাণ্ড দেখে মুচকি হাসতে লাগলো।

“সামান্য আমার স্পর্শেই তুমি এইভাবে নেতিয়ে যাও। যখন তোমাকে পুরোটাই আমার মাঝে সমাহিত করবো তখন কি করবে গো জান? তখন তো মনে হয় তোমাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।”

এরপর মেঘার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিলো। গালে হাত দিয়ে আবার আলতো ভাবে কি*স করলো। এরপর যখন ঠোঁ*টের দিকে নজর গেলো তখন দেখলো যে তার পাগলামির সামান্য ঝলক। ঠোঁটের অবস্থা বেহাল। অনেক ব্যাথা পেয়েছে হয়তো মেঘা। কিন্তু এগুলোতো অভ্যেস করে নিতে হবে ওকে। নাহলে তো তারই সমস্যা হতে পারে। এসব ভেবেই আদ্রিয়ান মেঘার রুমের ড্রয়ার থেকে মলম বের করে বেডে আসলো। এরপর মেঘার ঠোঁটে আলতো করে কিস করে খুব যত্ন সহকারে মলম লাগিয়ে দিল। মেঘার জামাটাও ঠিক করে দিলো। এরপর কপালে চেক করে দেখলো জর টা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে আর ঘাম দিচ্ছে। ওষুধে কাজ হয়েছে। আদ্রিয়ান মেঘার বাথরুমে গিয়ে একটা টাওয়েল ভিজিয়ে এনে মেঘার পুরো শরীর মুছিয়ে দিলো। স্পর্শ কাতর জায়গা ছাড়া। এরপর টাওয়েল আবার বাথরুমে রেখে সব কিছু ঘুচিয়ে মেঘার কম্বলের ভিতর ঢুকে মেঘাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। নিজের বুকের মধ্যে প্রশান্তি যেনো উপছে পড়ছে। মেঘাও আদ্রিয়ান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের ভেতর নাক ঘষে বিড়াল চানার মতো ঠোঁট উল্টে শুয়ে থাকলো। আর ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে লাগলো।আদ্রিয়ান মেঘার কাণ্ড দেখছিল। যখন দেখলো মেঘা কিছু বলছে তখন কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু মেঘার এরূপ কথা শুনে তার খুব হাসি পেলো

“আদ্র আপনি নিশুদি কে বিয়ে না করে আমাকে করবেন। আমাকে বিয়ে না করলে কিন্তু কেস ঠোকে দেবো। তারপর পুলিশ আংকেল আপনাকে হাযোতে নিয়ে যাবে। ইয়া বড়ো বড়ো রশি দিয়ে বেঁধে। তখন আমিও আপনার এসব ভিডিও করে নেটে পাবলিশ করে দেবো। আর ক্যাপশন দেবো “অবলা মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে প্রেগনেন্ট করে এখন অন্য একজন কে বিয়ে করছে। জাতি কি মেনে নিবে এই অবিচার? না কক্ষনো মানবে না কক্ষনো না”

বলতে বলতেই মেঘা আদ্রিয়ান এর বুকে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। আর আদ্রিয়ান ভাবছে এই মেয়ের মাথায় এসবই ঘুরছে তাহলে তাকে নিয়ে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার? একে বারে প্রেগনেন্ট বলে দাবি করবে।

“সমস্যা নেই স্নিগ্ধ পরী! তোমার নকল প্রেগনেন্ট কে আসল প্রেগনেন্ট করানোর দায়িত্ব আমার। ছোটো বলে অনেক ছাড় দিয়েছি। আর নয়,, এখন সময় হয়ে গিয়েছে আমি পুরোটাকেই সামলানোর। বিয়ে করার যখন এতই তাড়াহুড়া তখন আর দুইদিন ওয়েট করো। আসল খেলতো তখন শুরু হবে।আপাতত শান্তি মতো ঘুমিয়ে নাও। কারণ পরের ঘুম গুলো আমি ঘুমাবো তোমার ঘুম কেড়ে।”

#চলবে_কি?