নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-২৫+২৬

0
79

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২৫
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

আজ নিশু আর আদ্রিয়ান এর গায়ে হলুদ। যার জন্য পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ফুলের গন্ধে সারা বাড়িতে সুবাস ছড়াচ্ছে চারিদিকে। সবাই সবার নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত। কিন্তু মেঘার যেনো কোনো কাজই নেই। সে দাদীমার সাথে বসে আছে এক কোনায়। আর দাদীমা বিভিন্ন জুয়েলারি সিলেক্ট করছে। কিছু ভারী ভারী জুয়েলারি মেঘার সামনে নিয়ে চেক করতে লাগলো। এতে মেঘা চোখ বড় বড় করে দাদীমার দিকে তাকিয়ে

“এসব কি করছো দাদীমা? আমাকে কেনো পরাচ্ছ? দেখো এসব অনেক দামি জিনিস আমার হাতের কোনো টান লাগলে ছিঁড়ে গেলে তখন লংকা কাণ্ড হবে।(মনে মনে- আব্বু কালকেই আমাকে নিতে আসবে। আমি এগুলো আর দেখতে পারছি না। এর থেকে ভালো আব্বুর সাথে কালকেই চলে যাবো। আর কোনো দিনও এদিক হবো না। না আর আদ্রর মুখোমুখি হবো। তার ভালোবাসা অভিনয় হলেও আমার তো নয়। কিভাবে দেখবো নিজের প্রেমিক পুরুষ কে অন্য কারো হতে। না না এতো বড়ো মহান আমি নয়।)

মেঘা কথা গুলো ভাবতে ভাবতে গয়না গুলো দাদীমা কে সযত্নে দিয়ে দিলো। এরপর দাদীমা কে কিছু বলতে না দিয়ে সেই জায়গা থেকে উঠে নিজের রুমে গেলো। এসব দেখতে আর ভালো লাগতেছে না। সব কিছুই বিষাক্ত মনে হচ্ছে। ওইদিন এর কিছু বিষাক্ত অতীত। কিন্তু সে একটা ব্যাপার বুঝতে পারতেছে না ওইদিন এতো ব্যাথা লাগার পরেও সকাল বেলা সব ব্যাথা গায়েব। আর যখন সে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলো। তখন আইনার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হালকা চিৎকার দিয়ে উঠলো। আর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়েই হালকা ব্যাথায় কেপে উঠলো। ঠোঁটের এই নাজেহাল অবস্থা কিভাবে হলো? এরপর গলাতেও লাল লাল কিসের চিন্হ। অজানা ভয়ে পুরো শরীর কেপে উঠলো। নিজের শরীরে কেমন জানি একটা অদৃশ্য স্পর্শ লেগে আছে। আর সেই স্পর্শ টাও তার অচেনা নয় বরং চেনাই। কিন্তু আদ্র ওর কাছে কিভাবে আসবে? সেতো নিশু দির সাথে কালকে রাতে! ভাবতেই সেই কথোপকথন গুলো কানের মাঝে ভেসে উঠলো

“আরে আরে কি করছো এগুলো বেবি! প্লিজ এখনই এসব না। দুইদিন পড়তো বিয়েই। তখন নাহয় সব হবে।”

অপজিটে আদ্রিয়ান কি বললো কিছুই শুনা গেল না। কিন্তু নিশু আবার বললো।

“আচ্ছা, আচ্ছা। দিচ্ছি তো কিস। রাগ করছো কেনো? আচ্ছা এই দিকে এসো”

বলেই তাদের দুইজনার হাসিতে আর কিছু পার্সোনাল কথা শুনে বোঝা গেলো তারা তাদের আলিঙ্গন গুলো গাঢ় করছে। আর তখন এসব শুনেই মেঘা দৌড়ে চলে গেলো।

বাস্তবে –

মেঘা এসব ভেবেই নিজেকে সামলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে আদ্রিয়ান টি তার কাছে আসেনি। তাহলে কে আসলো। ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো। এরপর আবছা মনে পড়লো যে কেউ তার সামনে এসেছিল। এরপর কি হয়েছিল। মেঘা কোনো মতেই মনে করতে পারলো না। নিজেকে ভালো ভাবে চেক করে বুঝতে পারলো। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এসব কে করলো? নিজেকে কেমন দিশেহারা মনে হচ্ছে। মনে এরূপ বিদ্রুপের মধ্যেই রুমে এসে বেডে বসলো। এরপর বেডে যখন বালিশে হাত দিল তখন কিছু একটা হাতে বিদলো মনে হলো। যখন জিনিস টি কি দেখার জন্য হাত সরালো তখন জোরে চিৎকার দিয়ে দরজার কাছে চলে গেলো। আর দাদীমা, নিশু আর আদ্রিয়ান কে ডাকতে লাগলো। মেঘার চিৎকারে দাদীমা আর নিশু আসলেও আদ্রিয়ান আসলো না। দাদীমা নিশু দুজনই যখন জিজ্ঞেস করলো মেঘা চিৎকার করছে কেনো তখন মেঘা দুইজনকে ভয়ে ভয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বেডের দিকে দেখতে বললো। দাদীমা নিশুও মেঘার হাতের ইশারা অনুযায়ী রুমের ভেতরে ঢুকে বেডের দিকে তাকিয়ে কিছু আন্দাজ করতে পারে নি। তাই আরো কাছে যখন দেখতে গেলো তখন দেখলো কত গুলো মরা কালো কালো পোকা বালিশের আশে পাশে ছড়িয়ে আছে। যা দেখে নিশুও চিৎকার দিলো আর দাদীমা কে ধরে একটু পেছনে গেলো।

“এত গুলো মরা পোকা এখানে আসলো কি করে? মেঘা

বলেই মেঘার দিকে ফিরলে দেখলো মেঘার ঠোঁট আর ঘাড়ের অবস্থা নাজেহাল। তা দেখে দাদীমা তাড়াতাড়ি মেঘার কাছে গেলো। গিয়ে ভালো ভাবে হাত দিয়ে চেক করতে লাগলো।

“মেঘা তোর এই অবস্থা কেনো? কোনো এই পোকা গুলো তোকে কামরায় নি তো? নিশু দেখ তো আর কোথায় কোথায় কামড়েছে। মেয়েটার উপর থেকে বিপদ যায়ই না।”

দাদীমার কথাই নিশু মেঘাকে ভালো করে চেক করতে লাগলো। ঠোঁট আর ঘাড় ছাড়া কোথাও কামরায় নি। কিন্তু ওরা এটাই বুঝছে না এত গুলো পোকা এখানে আসলো কোথা থেকে? আসলো তো আসলো একে বারে মেঘার বেডে। মেয়েটাকে দেখে এখন দুজনেরই মায়া হচ্ছে। এমনিতে ছোটো তার উপর দুই দিন পর পর কিছু না কিছু লেগে আছে। আদ্রিয়ান যদি এই গুলো দেখে কি কাণ্ড করবে এক মাত্র উপর ওয়ালাই জানে। দাদীমা তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ান কে খবর পাঠাতে বললে খবর আসে যে অনেক্ষন আগেই আদ্রিয়ান জরুরি কাজে অফিসে চলে গেছে। তাই দাদীমা আর আদ্রিয়ান কে খবর দেইনি। তাই তাদের একজন ফ্যামিলি ডক্টর কে কল দিয়ে আসতে বলে। কারণ যদি পোকা গুলো বিষাক্ত হয় তাহলে মেঘার বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই ডক্টর এসে মেঘাকে চেক আপ করে কিছু ওষুধ আর মলম দেই। আর বলে যাই যে চিন্তার কোনো কারণ নেই। দুই দিন এর মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে। তাই দাদীমা আর নিশু মেঘাকে স্যুপ আর ওষুধ খাইয়ে দেই। মলমও লাগিয়ে দেই। এরপর তাকে রেস্ট করতে বলে রুম থেকে চলে যায়। আর এই দিকে আমাদের মেঘা রাণী এতক্ষণে মনের মধ্যে থাকা কথা গুলো ভাবতে থাকে। দাদীমা আর নিশু থাকায় কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু এখন ভাবতেই তার বমি চলে আসতেছে। কারণ পোকা গুলো তাঁর ঠোঁটে উঠেছিল। ভাবতেই উল্টি আসতেছে। তাই তাড়াতাড়ি ওয়াশ রুমে গিয়ে বমি করতে লাগলো। যা খেয়েছে তাও বের করতে লাগলো। আর সাবান দিয়ে ঠোঁট গুলো ঘষতে লাগলো। কিন্তু ঠোঁটে ব্যাথা থাকায় বেশিক্ষণ সাবান আর পানি লাগতে পারলো না। একটু ফোলা কমলেও এখন আরো লাল হয়ে গেল। আর ফোলেও পুরো অবস্থা নাজেহাল। ব্যাথায় মেঘা কান্না করে দিলো। তার এতো সুন্দর ঠোঁট টার অবস্থা দেখে তার নিজেরই ভয় করছে। যতদিন না ঠোঁটের অবস্থা ভালো হচ্ছে ততদিন সে রুম থেকেই বের হবে না। দরকার হলে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে তবুও তার এই রূপ আর কাউকে দেখাবে না।

অন্যদিকে মেঘার কাণ্ড দেখে আদ্রিয়ান মুচকি মুচকি হাসছে। হ্যা মেঘার সাথে হওয়া সব কিছুই আদ্রিয়ান তার অফিসে বসে ল্যাপটপে দেখছে। যেহেতু মেঘার পুরো রুম টা সিসিটিভি ধারা আবৃত সেহেতু মেঘার সকল কর্মকাণ্ড আদ্রিয়ান তার নিজস্ব ফোনে বা ল্যাপটপে দেখে।

“কি স্নিগ্ধ পরী! আমার স্পর্শ এতো সহজে ধুয়ে ফেললে। কিন্তু তাতে ত তোমারই ক্ষতি হলো। স্পর্শ গুলো তো মুছতে পারলেই না উল্টো তা আরো গাঢ় হলো। দেখলে তো আমার স্পর্শও তোমাকে শাস্তি দিতে প্রস্তুত।”

কথা গুলো বলেই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। আর তার হাঁসি পুরো অফিস রুমের চারদিকে বারি খাচ্ছে। রুশ যখন স্যারের কেবিনে ঢুকবে তখন দেখলো স্যার খুব হাসছে। এত হাসির কারণ কি বুঝতে পারলো না রুশ। কিন্তু তবুও ভালো লাগছে যে তার স্যার অনেকদিন পর মন খুলে হাসছে। হয়তো এটার কৃতিত্ব তার মেঘা মেডামের। রুশ নিজেও এখন খালি খালি অনুভব করছে। ইশ যদি আমারও যদি স্যারের মত কেউ থাকতো। তাহলে আমিও তাকে নিয়ে ভাবতাম। আসাফও তো তার মনের মানুষ ঠিক করে নিয়েছে। যেই দিকে তাকাই সেই দিকেই শুধু ডাবল ডাবল। একা ওদের মাঝেই সেই সিঙ্গেল আর কাবাবের হাড্ডি। এসব চিন্তা করছিলো আর নিজের নখ কামড়াচ্ছিল। ওইদিকে আদ্রিয়ান যে কখন থেকে তার সামনে দাড়িয়ে আছে তার কোনো খেয়ালই নেই। আদ্রিয়ান যখন রুশ এর মাথায় ফাইল দিয়ে বারি মারলো তখন নিজের সম্বিতে ফিরলো। এরপর স্যার কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধুক গিললো।

“কোথায় মন দিয়ে বসে আছো রুশ? এত কি ভাবছো যে ডাক দিলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এই ভাবে কিন্তু নিজের কাজ থেকে ফোকাস হারাবে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক এক্সপেক্টেশন। বুঝতেই পারছো। নিরাশ করবে না আমায়।”

রুশ নিজেকে স্বাভাবিক করে –

“ইয়েস স্যার,, আপনার আশা কখনোই বিফল যাবে না। আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো স্যার।”

“গুড, যাও এখন গাড়ি বের করতে বলো। ক্লায়েন্ট রা অপেক্ষা করছে”

“জ্বি স্যার”

রুশ তাড়াতাড়ি বের হয়ে গাড়ি বের করতে বললো ড্রাইভার কে। এরপর রুশও আদ্রিয়ান এর সাথে ফাইভ স্টার হোটেলে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। কারণ ঐখানেই ডোবাই এর ক্লায়েন্ট আছে। যারা গতকাল রাতেই হোটেলে উঠেছে। অনেক বড় একটি ডিল সাইন করার আছে। যার জন্য আদ্রিয়ান খুব সকালেই অফিসে চলে আসছে।

___________________________

এর মধ্যে দুইদিন কেটে যায়। মেঘা রুম থেকেও বের হয়নি। আর না কাও কে রুমে ঢুকতে দিয়েছে। খাবার বাইরে থেকে নিয়েই দরজা আটকে দিয়েছে। রুমের মধ্যেই নিজেকে বন্ধী রেখেছে। এতে অবশ্য বাকিদের সুবিধা হয়েছে অনেক কিছুতেই। যা মেঘার অজানা। তাই কেউ মেঘাকে রুম থেকে বেরুনোর জন্য বলেনি। কিন্তু কেউ রুমে না ঢুকলেও একজন মধ্যে রাতে ঢুকে আর তার জানের যত্ন নেই। সারাদিনের ক্লান্তি মেটায় তার জান কে দেখেই। এরপর ভোর হতে হতে আবার বের হয়ে যায়। যা মেঘার সম্পূর্ণ অজানা। সেতো তার বিরহে আছে এই ভেবে যে তার কাছের মানুষটি একবারও তাকে দেখার জন্য আসেনি। অবশ্য আসবেই বা কেনো সেতো তার বিয়ে নিয়ে ব্যাস্ত। তার জন্য কি আর সময় আছে। কিন্তু না তাকে দুর্বল হলে চলবে না। তাই একজন সার্ভেন্ট থেকে লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে তার আব্বুকে ফোনে দিয়ে সব জানাই। তার আব্বু এসব শুনে অবাক হই। কারণ তার জানা মতে আদ্রিয়ান কখনোই এসব করবে না তার মেয়ের সাথে। কিন্তু এসব যখন করছে তখন নিশ্চই কোনো কারণ আছে। এইদিকে মেঘাও কান্না করছে আর বার বার তাকে নিয়ে যেতে বলছে। হয়তো তার মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই তাকে আশ্বাস দেই যে দুইদিন পর সে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু মেঘার আব্বু এখনই আদ্রিয়ান এর সামনে যেতে পারবে না। এতে অনেকের চোখের সামনে তার আব্বুর আসল চেহারা খুলাসা হয়ে যেতে পারে। তাই মেঘাকে ফোন দিয়ে সব ইনফরমেশন দিলো কিভাবে মেঘাকে বেরোতে হবে। সব জায়গায় তার লোক ঠিক করা থাকবে। শুধু তার কথা মতো বের হলেই হলো। এসব শুনে মেঘা খুশি হলেও মন থেকে দুঃখ প্রকাশ করলো। তবুও মরীচিকার পিছনে ছোটে তো লাভ নেই। যে তার নয় তাকে তো ছাড়তেই হবে। তাই আব্বুর সাথে এক মত হয়ে পালানোর প্ল্যান বানালো। এসবই এতক্ষন ভাবছিল। তখনই নিচ থেকে ডাক আসলো দাদীমার। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও নিচে গেলো কেনো ডাকছে দেখার জন্য। নিচে গিয়ে তিনজন ব্যাক্তিকে দেখলো। এদেরকে চিনে বলে তার মনে হয়না। তাই জানার চেষ্টা করলো তারা কে। নিশু দি অবশ্য ওদের কে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। কথাই বোঝা গেলো এদের মধ্যে দুইজন হলো নিশুর আব্বু আম্মু। আর আরেকজন তার বড়ো ভাই। কিন্তু ছেলেটি পিছু ফিরে থাকায় চেহারা দেখতে পারলো না। তাই সামনে গিয়ে দাদীমা যখন নিশুর আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করাতে লাগলো তখন দুইজন তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করলো না মেঘার সাথে পরিচয় হতে। মনে হচ্ছে দুইজনই বিরক্ত তার প্রতি। দাদীমা যখন ছেলেটির সাথে পরিচয় করাতে লাগলো তখন মেঘা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। কারণ ছেলেটিকে তার চিনা চিনা মনে হচ্ছে। বেশির ভাগ চোখ গুলো তার খুব পরিচিত। এসব যখন ভাবছিল তখন ছেলেটি হাত বাড়িয়ে

“হাই মায়াবিনী!! আমি নিদ্র খান। নাম তো সুনাহি হো গা”

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২৬
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

“হাই মায়াবিনী!! আমি নিদ্র খান। নাম তো সুনাহি হো গা”

হঠাৎ করে ছেলেটির কথা শুনে মেঘা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো। কারণ ছেলেটির কণ্ঠ চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হঠাৎ করেই দাদীমার ডাকে তার দিকে ফিরল।

“বুড়ি এই হচ্ছে আদ্রিয়ান এর ফুফি আর ফুফা। আর এই যে এটা হলো তোর নিশু দির বড়ো ভাই নিদ্র। আর নিদ্র ওর কথা তো তোদের কে বলাই হয়েছে। আমার আরেক নাতি।”

“মা তুমিও না। যাকে তাকে নিজের নাতি বানিয়ে দাও। শুনো এসব লো,,,

“আহ: রুমানা। কোথায় কি বলছো তা একটু দেখে বলো। আর ভুলে যেয়ো না আদ্রিয়ান কেনো তোমাকে এখানে এনেছে

” হ্যা উচিত কথা বললেই তো সব দোষ আমার। ধুর,, এই চলোতো তুমি”

বলেই রুমানা তার হাসব্যান্ড নুমান খান কে নিয়ে গেলো। অবশ্য নুমান আর রুমানা কেউই মেঘাকে তেমন একটা সহ্য করতে পারে না। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। ওরা যখন নিজেদের ঠিক করা রুমে চলে গেলো তখন নিশু খেয়াল করলো নিদ্র মেঘার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিশুর থেকে এই চোখের দেখাটা অদ্ভুত ঠেকলো। কারন তার ভাই সহজে কারো দিকে এইরকম দৃষ্টিতে তাকায়নি। হ্যা সে একজন ফ্লার্ট বয়। যার জন্য নিশু তার ভাইকে এই একটা ব্যাপারে অনেক বিরক্ত হয়। কিন্তু সে যদি মেঘার সাথেও এমন করে তাহলে। না না তার ভাইকে আটকাতে হবে।

“এই ভাইয়া এখনও দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও ফ্রেশ হতে যাও। কিছুক্ষন পরই তো হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে”

“হ্যা নিশু এইতো যাচ্ছি। আর তুই এখনও ফেসিয়াল শুরু করিসনি? তোর হবু বর তো তোকে এই রূপে দেখে আর বিয়ের আসরেই বসবে না। তখন তো আবার আমার পিছনেই পড়বি সেই দুর্ভিক্ষের কান্না নিয়ে।”

“ভাই,,,,য়া,,,, নানুদি তুমি কিছু বলবে ভাইয়া কে?”

“দাদুভাই কেনো শুধু শুধু মেয়েটা কে উশকাচ্ছ কেনো? বলোতো,, এমনিতেই কালকে মেয়েটার,,, (দাদীমা মেঘার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই কথা অন্য টপিকে নিয়ে গেলো)
সে যাই হোক তুমি এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। একটু পরই হলুদের ফাংশন শুরু হবে।

“নিশুরে তোর স্বভাব আর বদলালো না। সেই কাও কে না কাও কে তোর দিকে নিশ। সমস্যা নেই আমারও টাইম আসবে। কথায় আছে না আপন টাইম আয়েগা।”

বলেই নিদ্র শয়তানি হাসি দিল। এরপর মেঘার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ মেরে উপরে উঠে গেল। আর মেঘা নিদ্রর কার্যকলাপে বিরক্ত হলো। কি ছেলেরে বাবা এই ছেলেতো ফ্লার্ট করতে চাইছে। এমনিতেই নিজের চিন্তায় ঘুম আসছে না। আর এখন এক মাত্র কাজ হচ্ছে কোনো মতে বাড়ি থেকে বের হতে পারলে হলো। নিশু মেঘা কে কিছু ভাবতে দেখে হালকা ধাক্কা দিলো। এরপর তারপর তাকে জোর করে মেঘার রুমে নিয়ে গেলো। ঐখানে হলুদের জন্য সুন্দর কারুকার্যের কাঁচা হলুদ কালারের একটি লেহেঙ্গা ঝুলানো ছিলো। মেঘা প্রথম দেখেই চোখ আটকে গেলো।

“আজকে তুমি এটাই পড়বে ঠিক আছে? আমি স্পেশালি তোমার জন্য অর্ডার করেছি। তোমার আর আমার অনেকটায় সেম ডিজাইন। শুধু কালার টা বেশ কম। আমার টা অরেঞ্জ কালারের।”

“কিন্তু নিশু দি আমি কেনো এইরকম ড্রেস পড়তে যাবো? হলুদ হচ্ছে তোমার আর ঐখানে আমি ঐখানে এভাবে গেলে তো সবাই ভাববে আমারও হলুদ তাইনা? আর আমার সত্যি ভালো লাগতেছে না অনুষ্ঠানে যেতে। আমি বরং তোমাকে কিভাবে সাজাই সেটা দেখি কেমন?”

বলেই মেঘা নিশুকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো।

“মাইর খাবে নাকি আমার? শুনো তুমি যখন আমাকে দি বলে ডাকো তার মানে তুমি আমার ছোটো বোন। আর বড়ো বোনের বিয়েতে ছোটো বোন সাজবে না এটাতো হতে পারে না তাইনা? কিছুক্ষন পর পার্লারের লোক আসবে সাজাতে তাদের কাছে সুন্দর করে লক্ষী মেয়ে হয়ে সেজে নিবে,, ঠিক আছে?”

“ও নিশু দি! তুমি আমার লক্ষ্মী দি তো! প্লিজ আমাকে পার্লারের লোক দিয়ে সাজিয়ও না। আমার একদম ভালো লাগে না ওদের ভুত সাজানো। এর থেকে আমি যতো টুকু পারি ততো টুকুই সাজবো। আচ্ছা যাও তোমার কথা মত ড্রেস টা পড়ে নিচ্ছি,, কিন্তু প্লীজ আমাকে তাদের হাতে সাজতে বলো না। প্লিজ প্লিজ,,,

মেঘার ইনোসেন্ট মার্কা কথা শুনে নিশুর খুব হাসি পেলো। মেয়েটা আসলেই বাচ্চা। মেঘার এতো রিকোয়েস্ট এ নিশু আর না করতে পরলো না। তাই মেঘাকে রেডী হতে বলে সে নিজের রুমে গেলো। কিছুক্ষন পর পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে। যেতে যেতে মোবাইলে কাও কে মেসেজ করে মেঘার আপডেট টা জানিয়ে দিলো। সেও কিছু একটা পাঠালো যা দেখে নিশুর মুখে হালকা হাসির রেখা দেখা গেলো। এখন সব কিছু ভালোই ভালোই হলেই হলো। ভেবেই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুমে গেলো।

___________________________

সন্ধার দিকে মেঘা সম্পুর্ণ রেডী হয়ে ainar মধ্যে নিজেকে দেখতে লাগলো।আর নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হলো। হঠাৎ করেই তাকে বড়ো বড়ো লাগছে। মুখে আলাদা এক রমণীর ভাব ফুটে উঠেছে। লেহেঙ্গার সাথে ওড়না সুন্দর করে মাথায় হিজাব বাঁধলো। মুখে হালকা প্রসাধনী। কাঁচা ফুলের গয়না থাকলেও তা সে পড়লো না। নিজেকে এত সাজাতে ভালো লাগছে না। এক মাত্র নিশুদী বলেছে বলে আর দাদীমা এসেও রিকোয়েস্ট করে বলে গেছে লেহেঙ্গা টা পড়তে। তাই সে আর না করতে পারেনি। কারণ এই দুইজনই এই কয়দিনে মেঘাকে অনেক আপন করে নিয়েছে। যার জন্য তাদের কে না করার মত সাহস আর দেখালো না। কালকে তো চলেই যাবে আজ নাহয় তাদের এই ইচ্ছে গুলো পূরণ করে যাক। এসবই ভাবছিল তখনই দরজায় টোকা পরে। তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখলো দাদীমা দাড়িয়ে আছে হাতে কিছু গয়নার বাক্স। মেঘাকে দেখতেই দাদীমা

“মাশাআল্লাহ!! আমার বুড়ি টাকে যে কি সুন্দর লাগছে”

বলেই রুমে ঢুকে গয়নার বাক্স টা টেবিলে রেখে মেঘার মাথায় ধরে কিছু দোয়া দরুদ পরে দিলো। এরপর হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে কামড় দিয়ে মেঘাকে মন ভরে দেখতে লাগলো। আসলেই মেয়েটা কে আজ খুব বড়ো লাগছে। আর কি মায়ায় না চেহারায়।

“কিরে বুড়ি তুই ফুলের গয়না গুলো পরিসনি কেনো? নিশু দেখলে কিন্তু রাগ করবে!

“আসলে দাদীমা আমার ফুলের গয়না ভালো লাগে না। তাই পড়িনি। এমনিতেই তো দেখো ঠিক লাগছে। আর কিছু পড়ার দরকার নেই”

“কি যে বলিস না। সে যাই হোক। দেখতো এই গয়না পছন্দ হয় কিনা?”

একটা সুন্দর ডায়মন্ডের নেকলেস মেঘার গলায় পড়িয়ে দিয়ে আয়নার মধ্যে দেখতে লাগলো। মেঘা হঠাৎ করে এতো দামি গয়না পড়ানোতে চমকে গেলো। দাদীমা কে নিষেধ করলেও দাদীমা কথা গুলো শুনলো না। উল্টো চোখ গরম করে মেঘাকে থামিয়ে দিলো। মেঘাও আর কিছু বললো না। এরপর দাদীমা মেঘাকে নিয়ে স্টেজে গেলো। মেঘা চারদিকে অবাক চোখে তাকাতে লাগলো। স্টেজ টা বাইরে বাগানে করা হয়েছে। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। স্টেজে নিশু নানারকম ফটোশুট করছে। নিশু কে দেখেই মেঘার হঠাৎ করেই বুকের মধ্যে তোলপাড় হতে লাগলো। কারণ নিশু তো কালকে আদ্রিয়ান এর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবে। এই কয়েকদিন ব্যাপার গুলোকে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও এখন আর নিতে পারছে না। যতই হোক আদ্রিয়ান এর সব কিছু অভিনয় হলেও তার অনুভূতি গুলো তো অভিনয় ছিলো না। সে তো তার সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আদ্রিয়ান এর এরূপ বদলানো দেখে বুঝতে পারলো আদ্রিয়ান এর শুধু হাতের পুতুল সে। এসব ভাবতে ভাবতে দাদিমা স্টেজে নিয়ে আসলো মেঘাকে। মেঘা নিশুকে জড়িয়ে ধরে তাকে শুভেচ্ছা জানালো। নিশুও মেঘাকে এরূপ শাজে দেখে অনেক খুশি হলো। এরপর এক সাথে অনেক গুলো ছবি তুললো। কিছু কিছু শুধু মেঘার একা তুললো টাও আবার তাকে জোর করিয়ে। ফটোশট শেষ হলে। একে একে সবাই নিশুকে হলুদ লাগিয়ে দিতে লাগলো। মেঘাও তখন স্টেজে না থেকে একটু দূরে কর্নারে গেলো। হঠাৎ করে কারো আগমন ঘটলো তার নিকট। তাই সঙ্গে সঙ্গে যখন ফিরে দেখলো তখন চমকে একটু পিছনে গেলো। সামনের ব্যাক্তিটি মেঘার দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর কেনো লাগছে মেয়েটিকে। নাকি সে সুন্দর বলেই সুন্দর লাগছে।

“মায়াবিনী,, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। এতো সুন্দর সেজে আসলে যে কেউ যদি তোমাকে দেখে হার্ট অ্যাটাক করে তার দায় ভার কি তুমি নিবে?”

নিদ্রর এরূপ কথা শুনে মেঘা বিরক্ত বোধ করলো। এই লোকটাকে একদম সহ্য করতে পারেনা। কেমন করে জানি তাকিয়ে থাকে। মনে হয় খেয়ে ফেলবে ফেলবে ভাব।

“হ্যা দাদিমা। আমি এখানে এইতো আসছি। ভাইয়া আমাকে দাদীমা ডাকছে আমি আসছি।”

বলেই মেঘা কেটে পড়লো সেই জায়গা থেকে। মেঘার এরূপ কাণ্ড দেখে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। তাকে ইগনোর করছে। নিদ্র খানকে। এরূপ অপমান।

“যতো ইগনোর করার করে নাও আজকে মায়াবতী। কারণ কালকের সূর্যের রশ্মির মতই আমার জীবনেও তুমি আলো হবে। সারাজীবনের জন্য আমার করে ফেলবো তোমায়। এখন শুধু রাত নামার বাকি। কালকের সূর্য উদয় আমার নামে হবে মায়াবিনী”

বলেই নিদ্র অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে নিশুর কাছে গেলো।

___________________

হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে আদ্রিয়ান এর কোনো ছায়াও দেখা যাইনি। দাদীমা থেকে শুনলো যে আদ্রিয়ান এর জরুরি কোনো কাজ পড়েছে যার জন্য সে আসতে পারেনি। মেঘার থেকে বিষয় টা অদ্ভুত ঠেকলো। যার হলুদের জন্য এতো আয়োজন সেই নেই। ব্যাপার টা খুব হাস্যকর। যার হলুদ তার খবর নেই প্রতিবেশীর লহ কাণ্ডের শেষ নেই। অনেক্ষন ধরেই মেঘা অনুষ্ঠানে থাকায় পা গুলো ব্যাথা হয়ে গেছে। আর অনেক জোরে গান বাজানোতে মাথাটাও ধরেছে খুব। তখন নিদ্র কে বাহানা দিয়ে দাদীমার কাছেই ছিলো। দাদীমা যেখানে যেখানে গিয়েছে মেঘাও তার পিছু পিছু ছিলো। এখন আর দাড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাড়ীর ভেতরে একদম উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। সবাই বাহিরে থাকায় ভেতরে তেমন কাও কে দেখা গেলো না। শুধু কয়েক কেয়ার টেকার ছাড়া। মেঘা ওইদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো। রুমে ঢুকে দেখল সব কিছুই অন্ধকার। কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে সে যখন রুম থেকে বের হয়েছিল দাদীমার সাথে তখন রুমের লাইট অন ছিলো। তাহলে অফ কিভাবে হলো? হয়তো কেয়ার টেকারের কেউ অফ করেছে। কিন্তু যখনই সে লাইটের সুইচ অন করতে যাবে তখনই কেউ দরজা বন্ধ করে মেঘার হাতের কব্জি টেনে নিয়ে দেওয়ালে মিশিয়ে নিলো। হঠাৎ এরূপ হওয়ায় মেঘা চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিন্তু বাইরে সাউন্ড বক্স বাজায় কেউ তার চিৎকার শুনতে পেলো না শুধু মাত্র সামনে ব্যাক্তি টি ছাড়া। মেঘা ভয়ে যখন চটপট করছিলো তখন সামনের ব্যাক্তিটি মেঘার গালের সাথে সেই ব্যাক্তির গাল মেশালো। হঠাৎ করেই ঠান্ডা অনুভব হলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু যখন চোখ মেললো তখন সামনে তাকিয়ে,,,,,,,

#চলবে_কি?