#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -১৯
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
নিস্তব্ধ রাতের পাশাপাশি চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকা ছড়াছড়ি হলেও শহরে তার রেশ টুকুও নেই। আর সেই নিস্তব্ধ রজনিতেও কারো গভীর ভাবনায় কোনো কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। মেঘার এলোকেশী চুল গুলো অবাধ্য খোঁপা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে আছে চারিপাশে। কিছুক্ষন আগেই তার ঘুম ভেঙেছে। আর নিজেকে পুরো এক অন্য রুমে আবিষ্কার করেছে। সে বুঝতে পারছে না এখানে কেমন করে এলো সে? এরপর অনেকক্ষন দরজা খোলার চেষ্টা করলেও সে ব্যার্থ হয়। কিন্তু সে এখানে কিভাবে? এটাতো আদ্রর বাড়ি নয়। সে তো তার বাবার সাথে দেখা করতে ২০৩ নম্বর রুমে গিয়েছিল।
ফ্ল্যাশব্যাক –
মেঘা বোরকা পরে ২০৩ নম্বর রুমে ঢুকেই তার আব্বুকে দেখতে পাই। আর অমনি দৌড়ে ছোটে যায়। আব্বুকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড কান্না করতে থাকে। এতদিন যে তার ছত্রছায়া থেকে দূরে ছিলো। আর আজকে এতো কষ্টের পর তার দেখা পেলো। হ্যা মেঘা আগে থেকেই প্ল্যান করে আদ্রিয়ান এর সাথে হসপিটালে এসেছে। কারণ তার আব্বু আগে থেকেই তাকে বিষয়টি তার এক গার্ড ধারা জানিয়ে দিয়েছিল। যে আদ্রিয়ান দের বাড়িতে মালি সেজে এসেছিল।
“এই যে আম্মু এইভাবে কান্না করলে কিন্তু আব্বু আর আসবো না। দেখি দেখি কান্না করতে করতে তো চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছো! কি কাণ্ড দেখোতো! কই ভাবলাম আমার মা টা কে ভালো করে দেখবো। চোখের সাদ মেটাবো কিন্তু না সে আর কিভাবে?
বলেই আলতাফ মন খারাপ করার ভান করে। এতে মেঘা অশ্রু সিক্ত চোখে আব্বুর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো
আব্বু তুমিও না। আর এতো রিস্ক নিয়ে কেনো আসতে গেলে বলোতো? জানোই তো আদ্র কেমন? আর তুমি জানলেই বা কিভাবে আমি আদ্রর কাছে?
সে অনেক কথা আম্মু। এসব তোমার ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না।
আব্বু তুমি আমাকে যতোটা ছোটো ভাবো আমি ততোটা ছোটো নয়। আর তোমার প্রাপ্ত ট্রেনিং আমার মধ্যেও আছে কিন্তু। তাই আমাকে একদম নরম ভাববে না
বলেই মেঘা মুচকি হাঁসি দিলো।
শুনো আম্মু, তুমি যে জায়গায় আছো সেখানে একদম সেভ আছো। কারণ আমি আদ্রিয়ান কে যতো টুকু জানি সে সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে তোমাকে রক্ষা করবে। তার জন্যই আমি এখনও তোমাকে সেখানে থাকার পারমিশন দিচ্ছি।
কিন্তু আব্বু এইভাবে আর কত দিন? আমার তো বন্ধী জীবন একদম ভালো লাগছে না। এটা সত্যি যে আমার আগে খারাপ লাগলেও এখন তেমন একটা
বলেই মেঘা চুপ হয়ে গেলো। আব্বুর সামনে কিসব কথা বলছে সে। আসলেই মাথাটা গেছে ওই অসভ্য লোকটার পাল্লায় পড়ে।
কি আম্মু!! কারো মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছো কি?
ভ্রু উচুঁ করে মেঘাকে জিজ্ঞেস করে। পরে হালকা হেসে মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। মেঘাও লজ্জা পাই নিজের কাজে।
আম্মু আমি আজকে তোমার সাথে একটা কাজের জন্য দেখা করতে বলেছি। আব্বু কখনো তোমার খারাপ চেয়েছে কখনো?
মেঘা মাথা নাড়িয়ে না সম্ভোধন করে
তাহলে আজকে যেই কথা গুলো বলবো সেগুলো মাথায় রাখবে। আমি জানি আমার মামনি খুবই স্ট্রং। কখনো কারো সামনে নিজেকে অসহায় প্রদর্শন করবে না। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী তোমাকে সহজেই আঘাত দিতে পারবে। তোমাকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু হ্যা কিছু ক্ষেত্রে মনকেও কাজে লাগাবে। এতে তোমার মনোবল বাড়বে সাথে শক্তিও পাবে। আমি তোমাকে নিজেকে প্রটেকশন এর জন্য যতো টুকু প্রয়োজন ছিল প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আশা করি আব্বুকে নিরাশ করবে না। আব্বু সব সময় যে তোমার পাশে থাকবো না। দুনিয়াটা বড্ড স্বার্থপর। সাথে খুবই ভয়ানক, এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে যে নরম হওয়া মানায় না আম্মু। তাই নিজেকে যতো তাড়াতাড়ি স্ট্রং করতে পারবে ততই মঙ্গল হবে। পারবে না আম্মু??
মেঘা এতক্ষন তার আব্বুর কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। হ্যা তার আব্বু তাকে সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু কখনো কারো সামনে প্রদর্শন করতে বারণ করেছে। কারণ এতে তাদের শত্রু পক্ষ টের পেয়ে যেতে পারে। হ্যা তার আব্বু একজন মাফিয়া ছিলো। কিন্তু কখনো কারো ক্ষতি করেনি। সব সময় মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছে। কিন্তু সেই পথ তার প্রিয়তমের জন্য ছাড়তে হয়েছিলো। অনেক বছর শান্তি মতো কাটলেও এখন তার শত্রু পক্ষ তার খুঁজ পেয়ে গেছে। যার জন্য এত কিছু। এত লুকোচুরি। এর মধ্যে আরো একটি ব্যাপার এখনও গোপনীয়। যা মেঘা আগে না জানলেও কিছুদিন আগে জেনেছে তার বাবার বিশ্বস্ত গার্ড এর কাছ থেকে।
আব্বু সবই বুঝলাম। কিন্তু এখন যে তোমার সাথে যেতে ইচ্ছে করছে। এখানে তো অনেকদিন থাকা হলো আর কতো? মানুষে যে নানারকম সমালোচনা করছে হয়তো। এইভাবে দুইজন বিবাহ যোগ্য ছেলে মেয়ে একই বাড়িতে থাকলে তো সমালোচনা হবেই। বিষয়টা তো দৃষ্টিকটু।
আম্মু তুমি এখনও অনেক অবুঝ। তাই অনেক কিছুই তোমার কাছে ধোঁয়াশা। আরেকটু সময় হোক সব বুঝতে পারবে। আর আদ্রিয়ান তোমার সম্মানে কোনো দাগ লাগতে দেবে না। এত টুকু ভরসা আমার আছে তার প্রতি।
বাব বাহ পরের ছেলের উপর এত বিশ্বাস?
সেই পরের ছেলে যে আমার আম্মুর নিতান্ত আপন জন হয়ে উঠেছে। তাহলে পর কিভাবে হলো আম্মু?
আব্বুর কথাই মেঘা আব্বু থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চারিদিকে তাকাতে লাগলো। যেনো চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
ঠিক আছে অনেক ক্ষন হয়েছে এখানে আছি। এখন না গেলে আদ্রিয়ান সন্দেহ করতে পারে। আর আমি কি বলেছি তা যেনো খেয়াল থাকে। আর হ্যা একদম কোনো কান্না করি করবে না। আব্বু সবসময় তোমার আসে পাশে থাকবো। লক্ষী মেয়ের মতো থাকো। আমার কিছু কাজ বাকি আছে এখনও আম্মু। তানাহলে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতাম।
আমাকে নিয়ে গিয়েই তোমার বাকি কাজ করো। আমি কিচ্ছু জানি না তোমার সাথেই এখনই যাবো আমি। ওই আক্রুর সাথে যাবো না আর।
না আম্মু এখন আমার সাথে গেলে অনেক ঝুঁকি বাড়তে পারে যে
কিন্তু আব্বু আমি যে__
কোনো কিন্তু না। আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না। যা বলেছি সেটাই করবে
আব্বুর কড়া কথা শুনে মুখটা কে চুপসে ফেললো। কি এমন হতো তাকে সাথে করে নিয়ে গেলে। এতে ওই আক্রুর শিক্ষা হতো। আমাকে ইগনোর করার ফল পেতো। হুমমম,, কিন্তু আব্বু তো নিয়েই যাচ্ছে না। ধুর ভালো লাগে না
এই যে এখন আমার সময় হয়েছে যাওয়ার। আর কিছুক্ষন থাকলে সমস্যা হতে পারে
আচ্ছা ঠিক আছে। নিয়ে যেতে হবে না আমাকে। কিন্তু তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। এটাতে তো কোনো সমস্যা নেই, তাইনা
আলতাফ মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্বোধন করলো। এরপর মেঘা কে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে বের হলো। অবশ্য মেঘা বোরকা পড়া ছিল তাই তাকে চিনার কোনো উপায় নেই। এরপর তার আব্বুকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বিদায় জানালো। এরপর যখন পিছন দরজা দিয়ে ঢুকবে তখনই কেউ মুখে কিছু একটা চেপে ধরলো। এরপর আর কিছু মনে নেই।
বর্তমান –
যখন সে তার ভাবনায় বিভোর ছিলো তখনই দরজা খোলার শব্দ হয়। কোনো এক অপরিচিত ব্যাক্তিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। ব্যাক্তিটি তার সামনে এসে বসে মেঘার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে মেঘা পিছন দিকে সরে যায়।
কে আপনি? আর আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে? আপনাকে কখনো দেখেছি বলেতো মনে হয়না? কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? বলেন কে আপনি?
হুশশ শ, মায়াবতী এত গুলো প্রশ্ন এক সাথে করলে আমি উত্তর দেবো কোনটা?
হুমম আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কে সেটাই তো জানতে চাইছো? আমি হচ্ছি এই কিংডমের রাজা। আর তুমি হচ্ছো এই কিংডমের হবু রানী। খুব জলদিই এই রাজ্যের রানী হবে।
মেঘা লোকটার কথা আগা মাথা কিছুঁই বুঝলো না। লোকটার মনে হয় মাথার সমস্যা আছে।
“আচ্ছা এটা কত সাল?”
“কেনো ২০২৪ সাল।”
“না আপনি যেইভাবে রাজা রাণীর পাঠ শুরু করলেন আমিতো ভেবেছি কোনো টাইম ইউনিভার্সে চলে এসেছি। সে যাই হোক। আমি আপনাকে আপনার পরিচয় দিতে বলেছি রাজা রাণীর গল্পঃ শুনাতে বলেনি।”
মেঘার এমন চটাং চটাং কথা শোনে হ্যা করে তাকিয়ে থাকলো সামনের ব্যাক্তিটি।
“ওয়াও ইন্টারেস্টিং, আমি তো ভাবতাম তোমার মুখ থেকে কথা বের করতে অনেক কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তুমি তো আমাকে রীতি মতো অবাক করে দিয়েছো। যায় বলো তোমার দম আছে বলতে হবে। আর হবেই না বা কেনো আমার মায়াবতী বলে কথা”
লোকটি মেঘার কাছে এসে তার হাত ধরতে নিলে মেঘা হাত ঝারা দিয়ে ফেলে দিয়ে বেড থেকে নেমে যায়। এরপর টেবিলে থাকা ফুলদানি নিয়ে লোকটার সামনে রেখে
“আপনার সমস্যা টা কি? বার বার গায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো? মেয়ে মানুষ দেখলেই হাত বাড়াতে ইচ্ছে করে নাকি? আর আপনি জানেন আমি কে? আমার গায়ে হাত দেওয়া মানে আপনার কাল কে ধরা”
“এই মায়াবতী এই! আমি তোমাকে কোনো খারাপ ইন্টেনশনে ধরতে চাই নি। ভুল বুঝছো আমাকে।”
বলেই সামনে আগাতে লাগলে মেঘা ফুলদানি টা লোকটার মাথায় নিক্ষেপ করে। সাথে সাথে বিকট আওয়াজ হয়
মেঘা ফুলদানি নিক্ষেপ করেই দরজার দিকে ছুটলো। দরজা খোলাই ছিল। উপরে তেমন কেউ নেই দেখে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলো। কিন্তু সামনে কয়েক জন গার্ড কে দেখতে পেলো। তাই সাথে সাথে সোফার পাশে লুকিয়ে পড়লো। এরপর একটু মাথাটা উচুঁ করে দেখলো কে কোন জায়গায় আছে। তিন জন গার্ড দরজার সামনে থাকায় ওই জায়গা থেকে যাওয়া টা ঠিক হবে না। তাই অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে। এরপর আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো সিঁড়ির বাম পাশে একটা লম্বা সরু জানলা আছে। যা কাচের তৈরি। কাচ গুলো হয়তো খোলা যেতে পারে ভেবেই সে তাড়াতাড়ি সেই জায়গায় লুকিয়ে লুকিয়ে গেলো। এরপর তাড়াতাড়ি কাঁচটা উপর দিকে তুললে তা খুলে গেলো। এরপর চারদিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখছে কিনা। হুমম কেউ এদিক টাই নেই। এরপর জানলা দিয়েই বের হয়ে গেলো। জানলা টা নিচে হওয়ায় নামতে কোনো অসুবিধা হলো না। এরপর সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রাচীর টপকে পালালো।
এইদিকে –
অচেনা লোকটার জ্ঞান ফিরলে চারিদিকে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে না পেয়ে চিৎকার চেচামেচি করে সব গার্ড দের ডাকতে লাগলো। এরপর সবাই কে জিজ্ঞেস করলো মেঘার খবর। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। সেটার জন্য প্রচুর রাগারাগিও করলো। এরপর মাথা চেপে রি*ভ*লবার হাতে করে কয়েক জন গার্ড কে নিয়ে বের হলো। বেশি দূর হয়তো যেতে পারেনি।
“কাজটা ভালো করলে না মায়াবতী। এতো চটপটে হবে জানলে কঠিন ব্যাবস্থা নিতাম। কিন্তু তুমি সেটা টের পেলে দিলেতো। যতোটা মাসুম তোমাকে ভেবেছি ততোটা তুমি নও। পর্দার আড়ালেও যে অন্য এক মেঘা আছে সেটা তোমার কাণ্ডে বুঝতে পারলাম। যায় হোক তোমার সাথে ভালই জমবে আমার”
____________________
“যাক বাবা পালাতে তো পারলাম। কিন্তু ওই শয়তান টা আমাকে আনলো কোথায়? আদ্র হয়তো আমার জন্য চিন্তা করছে। মানুষটা আমাকে নিয়ে বড্ড পসেসিভ। যে করেই হোক আমাকে আদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। কিন্তু যাবো টা কোথায় আমি? ধ্যাত,, ফোনটাও নেই যে গুগল বাবাজির হেল্প নেবো। উফ্ এই কোন মসিবতে পড়লাম আমি।”
মেঘা কথা নিজের সাথে কথা বলছে আর দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন ফিরেও দেখছে কেউ আসছে কিনা। অনেক্ষন পর হাইওয়েতে পৌঁছালো। কোনো গাড়ি করে লিপ চাইলে হয়তো এখান থেকে বের হতে পারবে। কিন্তু কোনো গাড়িও পাচ্ছে না। বিপদের সময় কোনো কিছুই পাওয়া যায় না। হাঁটতে হাঁটতে একটা কালো গাড়ি দেখতে পেলো। গাড়িটি কে দেখেই মেঘার মুখে হাসি ফোটে উঠলো। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িতে গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করলো। থেমেও গেলো। মেঘা দৌড়ে গাড়ির জানলায় গিয়ে
“আমাকে একটু লিফ দিয়ে হেল্প করবেন প্লীজ? আমি প্রচন্ড বিপদে পড়েছি। প্লিজ আমাকে___
আর কোনো কথা বলতে পারেনি।কারণ সামনের ব্যাক্তিটি কে দেখে তার……
#চলবে_কি?
#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২০
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা
“আমাকে একটু লিপ দিয়ে হেল্প করবেন প্লীজ? আমি প্রচন্ড বিপদে পড়েছি। প্লিজ আমাকে___
আর কোনো কথা বলতে পারেনি।কারণ সামনের ব্যাক্তিটি কে দেখে তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। এত তাড়াতাড়ি শয়তান লোকটা যে চলে আসবে ভাবে নি। পিছনে আরো দুটো গাড়ি ছিলো। যেটা দেখে মেঘার ভয় লাগতে শুরু করলো। একা ছিলো লোকটা তাই সামলাতে পেরেছে। কিন্তু এখন তো পুরো দল চলে আসছে। এখন কি করবে? মেঘা এসব ভেবেই তাড়াতাড়ি পিছন দিকে জঙ্গলে দৌড় মারলো।
মেঘার কর্ম কাণ্ড দেখে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই শয়তানি হাসি হাসলো অচেনা লোকটি।
“কোথায় পালাবে মায়াবতী? আমার নাগাল থেকে পালানো বড্ড কঠিন! একবার যখন তোমাকে পেয়েছি তখন দ্বিতীয় বার পালানোর সুযোগ দেবো না”
বলেই তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গার্ড দেরও মেঘার পিছনে যেতে বললো। সবাই জঙ্গলের দিকে ছুটলো।
এইদিকে –
মেঘা দৌড়াতে দৌড়াতে একদম গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেলো। পিছনে শুকনো পাতার মচমচে শব্দ হচ্ছে অনেক। মনে হয় বেশি দূরে না তারা। মেঘা একটি বড়ো গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। আর রব কে স্মরণ করতে লাগলো। এক তো সারাদিন না খাওয়া।তার উপর এতো দখল। এখন শরীর টাও খুব ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে এখনই পরে যাবে। চোখ বন্ধ করে যখন ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে তখনই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির প্রতিচ্ছবি ভাসলো। হ্যা আদ্রিয়ান, তার প্রিয় আদ্রিয়ান এর প্রতিচ্ছবি।
কই আছেন আপনি আদ্র? দেখুন না আপনার স্নিগ্ধ পরী খুব বিপদে পড়েছে। মনে জোর থাকলেও শরীর তো আর চলছে না। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসুন না আমার কাছে। আপনার স্নিগ্ধ পরী আপনাকে ডাকছে আদ্র। শুনতে পারছেন কি?
মেঘা যখন চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ান কে স্মরণ করছিলো তখনই সামনে কেউ এসে দাড়ালো। মেঘার মুখেও হাসি ফোটে উঠলো। তার ডাক হয়তো কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি শুনেছে। হাঁসি মুখে চোখ খোলে যখন সামনে তাকাই তখন তার মুখে ঘন অমাবস্যা জমে। এদেরও আসার আর টাইম পেলো না। কি এক জগণ্য কাণ্ড। এক তো শয়তান লোকটার পাল্লায় পড়ে এই ঘন জঙ্গলে আসা। এখন উপর থেকে সামনের বিপদ। মানুষ হইলে নাহয় সামলানো যেতো। কিন্তু এইসব প্রাণী জাতিদের কিভাবে সামলাবে? সামলানো তো দূরের কথা সেতো এইসব দেখলেই ঘাবড়িয়ে যাই। এইসব প্রাণী থেকে যতো দূরে থাকা যায় তত ভালো বলে মনে করে সে।
আসলে সামনে প্রায় ছয় সাতটা বানর। সবাই তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু সে যে দৌড় মারবে তারও কোনো উপায় নেই। কারণ চারদিক থেকেই বানর রা তাকে ঘিরে ধরছে। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না। সে চিৎকার করবে দেখে হাত দিয়ে মুখ ধরে রাখছে। যাতে আওয়াজ না হয়। আওয়াজ হলে ওই লোক গুলো তাকে ধরে ফেলবে।
“প্লিজ তোমরা আমার কাছে আসবে না। দূরে যাও প্লীজ। দেখো আমাকে খেয়ে কিছুই পাবে না। আমি তো একদম শুকনো কাঠি। আমার মাংস একদম টেস্ট নেই।”
আস্তে আস্তে কথা গুলো বলেই কান্না করতে লাগলো।
“আদ্র আপনি তাড়াতাড়ি আসুন না। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। দেখুন না এসব বানরের দল আমাকে চাবিয়ে চাবিয়ে খাবে। আমি তো মরে যাবো। তখন আপনি স্নিগ্ধ পরী বলে কাকেই বা ডাকবেন বলেন? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন না,, অ্যা, অ্যা, অ্যা অ্যা
কথা গুলো বলতে বলতে খুব কান্না করতে লাগলো। আর বানর গুলো তার পাশেই কিন্তু কেউই শরীর স্পর্শ করছে না। মনে হচ্ছে তাদের কে নিষেধ করা আছে স্পর্শ করা থেকে। কিন্তু তা মেঘা বুঝলেতো!
“কি জান আমাকে স্মরণ করছো? এখন বুঝি আমাকে মনে পড়ছে? কেনো যখন পালিয়ে ছিলে তখন আমার কথা মনে পড়ে নি?”
_________________
এইদিকে –
“একটা মেয়েকে সামলাতে পারিস না তোরা? তোদের কে টাকা দিয়ে রাখি কেনো আমি? সব কটা অকর্মার ঢেঁকি।”
বলেই অচেনা লোকটি জঙ্গলের ঝারে লা*থি মারলো। কিন্তু ঝারে কাটা যুক্ত ডাল থাকায় পায়ের পাশে প্রচন্ড ভাবে গীতে গেলো। হঠাৎ করে এসব হওয়ায় চোখ মুখ বন্ধ করে কষ্ট টা ভেতরেই রাখলো। উপরে প্রকাশ করলো না।
“খুব কষ্ট দিচ্ছ তুমি মায়াবতী। এই কষ্টের পরিমাপ গুলো তোমাকেও বহন করতে হবে যে। শুধু একবার আমার হাতের নাগালে পাই”
মনে মনে এসব বললো আর রাগে হিশ্রাতে লাগলো।এরপর গার্ড আর সেই অচেনা লোকটি সামনের দিকে এগোতে লাগলো। কিন্তু জঙ্গলের গভীরে এসে পড়ায় সামনে আগানো টা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই গার্ড রা বাধা দিলে সেই লোকটি বি*শ্রী ভাষায় কিছু গালি দিয়ে সামনে আগাতে লাগলো। সাথে রিভলবার আর লাইট তো আছেই। তার মায়াবতী যে এই জঙ্গলে আছে। যদি তার কিছু হয়ে যায় তাহলে তো,,,, না আর কিছু ভাবতে পারছে না। এক তো মাথায় আঘাত সাথে পায়েও ব্যাথা। এসব নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
__________________________
আদ্র,, আদ্র,, আপনি এসেছেন? প্লিজ এদেরকে সরান না! আমার খুব ভয় করছে যে। প্লিজ এগুলোকে সরান।
বলেই মেঘা কান্না করতে লাগলো। আসলেই বানরকে সে প্রচন্ড ভয় পাই। এর কারণও আছে। ছোটো বেলায় তার আব্বুর সাথে যখন পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে যায় তখন হঠাৎ করেই দুটো বানর তার উপর আক্রমণ করে। যার থেকে অনেক আঘাতও পাই। তার আব্বু তখন ফোনে ব্যাস্ত ছিল। আর অনেকটায় দূরে ছিলো যার জন্য মেঘার চিৎকার শুনতে পারেনি। মেঘার আব্বু ফোন রাখতেই মেঘাকে কাছে না দেখে ভয় পেয়ে যায়। এরপর আশে পাশে খুজতে লাগলে কোনো মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। তখন সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে দেখে যে মেঘা মাটিতে পড়ে আছে আর দুইটা বানর দৌড়ে চলে যাচ্ছে। মেঘার আব্বু দৌড়ে মেঘার পাশে গিয়ে দেখে অনেক জায়গা থেকেই রক্ত পড়ছে। তাড়াতাড়ি পাশের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ হসপিটালে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু বানর দেখলে প্রচন্ড ভয় পাই।
“উহু ম ম,, এগুলো তো সরানো যাবে না জান। আমার থেকে পালিয়ে আসার সাহস যখন করেছো। তখন তো তোমার অনেক সাহস হয়েছে। স্বয়ং বাঘের নাকের নিচ দিয়ে এসেছো। তখন এই বানর আর কি।”
আদ্রিয়ান মেঘার অপজিটে দুই পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা গুলো বলছে। আর মেঘাকে দেখছে।
“আমি পালায়নি তো। পালায়নি আমি, আমিতো,,,
বলেই মেঘা চুপ হয়ে গেলো। কারণ মেঘা তো সত্যি টা বলতে পারবে না। সত্যি টা বললে যে তার বাবার সাথে দেখা করার বিষয়টা ধরা পড়ে যেতে পারে। না না কিছুতেই সেটা বলা যাবে না। এতে আব্বুর যদি কোনো ক্ষতি করে দেই। না না
“আমিতো কি? কথা বন্ধ হয়ে গেছে? সমস্যা নেই জান তোমার পালানোর শাস্তি আমি নয় এরাই দেবে”
“কিংডমচ তোমরা সামনের ব্যাক্তিটির খাতির যত্ন করো”
বলেই মেঘার থেকে চোখ সরিয়ে মোবাইল নিয়ে ঘাটতে লাগলো। এইদিকে বানর গুলো মেঘার দিকে আরও এগিয়ে গেলো আর দাঁত গুলো বের করে ভয়ানক ভাবে শব্দ করতে লাগলো। মেঘার এসবে প্রচন্ড ভয় পেতে লাগলো। আস্তে আস্তে তার নিশ্বাস ঘন হতে লাগলো আর প্রচন্ড ঘামতে লাগলো। হাতও কাঁপতে লাগলো।
“আ,,, ,,,দ্র,,,, আ,,,,
হঠাৎ করেই মেঘার অন্য রকম আওয়াজ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখলো মেঘার পেনিক অ্যাটাক এসেছে। তাড়াতাড়ি মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে বানর গুলোকে যেতে বললে তারা দূরে সরে যেতে থাকে। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি গিয়ে মেঘাকে আগলে নেই। এরপর পকেট থেকে একটা ছোটো বক্স বের করে সেটা খুলে। আর সেখান থেকে একটি ওষুধ নিয়ে মেঘাকে খাইয়ে দেই। মেঘার শরীর রীতিমত বরফ হয়ে গেছে। তাই আদ্রিয়ান নিজের কোট খোলে মেঘাকে পরিয়ে দেয়। এরপর কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে নিচে বসে থাকে মেঘাকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। কিছুক্ষনের মধ্যেই মেঘার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে থাকে আর নিশ্বাসের মাত্রাও নরমাল হয়। এরপর গার্ড দের ফোন করে জানিয়ে দেই তারা আসছে। আদ্রিয়ান এর সাথে দুইজন গার্ড আগে থেকে ছিলো যারা বানর গুলোকে সেফ ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। বানর গুলো আদ্রিয়ান এর প্রশিক্ষণ দেওয়া বানর। র
এরপর মেঘাকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরে। হাঁটছে আর সকালের কথা মনে করছে। যখন সিসিটিভি তে ঐসব দেখে তখন আদ্রিয়ান নিজের মধ্যে ছিল না। যার জন্য সে রাগ গুলো নিজের মধ্যেই ধারণ করতে থাকে আর মেঘাকে বিভিন্ন জায়গায় খুজতে থাকে। এসব করার মাঝে সে গুরত্বপূর্ণ বিষয়ই ভুলে যাই। মেঘাকে একদিন গলায় একটি পেন্ডেন্ট পরিয়ে দেয় যার ভেতরে জিপিএস ট্র্যাকার বুথ লাগানো ছিলো। যাতে মেঘা যেকোনো জায়গায় গেলেও মেঘার লোকেশন ট্রেস করতে পারবে। হঠাৎ করেই যখন সেটার কথা মনে তখনই মোবাইল নিয়ে চেক করে সেই লোকেশন। আর মেঘার সঠিক লোকেশন পেয়েও যাই। এরপর যখন সেই জায়গার মধ্যেই রাস্তাতে মেঘাকে দূর থেকে দেখতে পাই।এরপর যখন কিছু একটা খেয়াল কিরে তখন আর এগুই না। এরপর মেঘার পদক্ষেপ গুলো দেখতে লাগলো। এরপর আদ্রিয়ানও একটু দূরে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে গেলো
মেঘাকে গাড়িতে বসিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দেই আর নিজের বুকের মধ্যে মেঘার মাথাটা রাখে। মেঘা অবশ্য এখন ঘুমাচ্ছে। মেঘার অসুখ টা যেহেতু তেমন কোনো ব্যাপার না তখন এসব ওষুধ খেলে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। এসব ভেবে ভেবে আদ্রিয়ানও খুব ক্লান্ত। এক তো নারী পাচার হওয়া থেকে আটকিয়েছে। কিন্তু মেইন কালপ্রিট কে ধরতে পারেনি। আর এইদিকে নিজের প্রেয়সী। সব মিলে অনেক ধকল গিয়েছে। এখন শান্তির একটা ঘুম প্রয়োজন (আমারও প্রয়োজন শান্তির ঘুম)
#চলবে_কি?