পরাণ দিয়ে ছুঁই পর্ব-১০ ( প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি)

0
182

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ১০( প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি)
#Jhorna_Islam

সৌন্দর্য খুব যত্ন সহকারে নূরের কুনোইয়ে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। নূর প্রথমে লাগাতে চায় নি জ্বলুনির ভয়ে। সৌন্দর্যের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়।কিন্তু সৌন্দর্যের শক্তির সাথে নূর পেরে উঠে না তার উপর আবার এক ধমক খেয়েছে সৌন্দর্যের কাজে ব্যা’ঘা’ত ঘটানো তে। সৌন্দর্যের চোখ রাঙানিতে আর কিছু বলার সাহস পায়নি নূর।একবার অবশ্য অসহায় দৃষ্টিতে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই আশায় ইসরাত হয়তো নূর কে এই জ/ল্লাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।কিন্তু বেচারি ইসরাত নিজেই সৌন্দর্যের ধমক শুনে গলা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সৌন্দর্য হাতে লেগে থাকা র/ক্ত পরিষ্কার করে দিয়ে বেন্ডেজ লাগিয়ে দেয়। নিজের কাজ শেষ করে ইসরাতের কোলে গুটি শুটি মেরে বসে থাকা ফাতিহার দিকে তাকায়। ফাতিহা কে ইসরাতের কোল থেকে ফাতিহা কে নিয়ে চোখের ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। ততক্ষণে নূর নেমে যেতে নেয়।

কেউ যেনো আমার পার্মিশন ছাড়া এক পা ও না নড়ে।গম্ভীর কন্ঠে বলা কথাটা নূরের অন্তরাত্না কাঁপিয়ে দেয়।
কন্ঠে কি যেনো একটা ছিলো নূর আর গাড়ি থেকে নামার মতো সাহস দেখায় নি।চুপচাপ গাড়িতে বসে।

ইসরাত ও তারাতাড়ি গিয়ে নূরের সাথে পিছনে গিয়ে বসে। সৌন্দর্য ওদের দিকে তাকিয়ে সামনের সিটে ফাতিহা কে বসিয়ে দেয়। মাথার চুল গুলো ঠিক করে কপালে অধর ছুঁইয়ে জানতে চায় পানি খাবে মাম?

ফাতিহা এখনো মৃদু কাঁপছে। সৌন্দর্য আশ্বাস দিয়ে বলে,, ভয় পায় না। তুমি না আমার ব্রেভ গার্ল? কিছু হয়নি সব ঠিক আছে।নিজেকে শান্ত করো।তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ফাতিহা কে পানি দেয়।ফাতিহা এক ঢুক খেয়েই রেখে দেয়। ফাতিহার জন্য কিনে আনা হাওয়াই মিঠাই সৌন্দর্য ফাতিহার হাতে দেয়। ঐসময় এগুলো এনে দেখে ফাতিহা গাড়িতে নেই। হাওয়াই মিঠাই গাড়িতে রেখে এদিক ওদিকে খুঁজতে থাকে। তারপর ফাতিহা কে কুকুরের থেকে বাঁচানোর জন্য দৌড় দিয়ে যাওয়ার আগেই নূর তাকে বাঁচিয়ে নেয়।

সৌন্দর্য একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তারপর ফাতিহা কে কোলে তুলে নিয়ে বলে,,,”মাম বি ইজি।”
আমি তোমাকে গাড়ি থেকে নামার কারণ বা ঐ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য কিছুই বলবো না। সো কাপা-কাপি অফ করো।

নূর আর ইসরাত সামনে থাকা দুইজনের কথোপকথন নীরব দর্শক হয়ে শুনে ও দেখে চলেছে। নূরের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই লোকটা এতো কোমল করে কথা ও বলতে পারে।

সৌন্দর্য গাড়ি চালু করার আগেই ফাতিহা মিনমিনিয়ে বলে,, আমি ঐ আন্টিদের কাছে যাবো।

কি বললে?

আমি ওদের কাছে গিয়ে বসবো।হাত দিয়ে নূরদের দিকে দেখিয়ে বলে ফাতিহা। সৌন্দর্য পিছনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সৌন্দর্য সম্মতি জানাতে দেরি ফাতিহার সিটের উপর দিয়ে লাফালাফি করে ওদের কাছে দেরি হয়নি।

আরে মাম কি করছো এসব? ব্যাথা পাবে তো।

ফাতিহা ততক্ষণে দুইজনের মাঝখানে জায়গা করে নিয়ে নূরের কাছ ঘেঁষে বসে ও পরেছে।

সৌন্দর্য আর তেমন কিছু বলেনি। গাড়ি চালাতে চালাতে ওদের দুইজনের বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। ইসরাত ঠিকানা বলে দেয়।

ফাতিহা দুইজনের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। ওদের নাম ও জেনে নিয়েছে। ইসরাত গল্প করার মাঝে মাঝেই অন্য মনস্ক হয়ে পরে।তার বিশ্বাস হচ্ছে না এসব কিছু। সৌন্দর্যের মেয়ে এটা কিছুতেই মানতে পারছে না। দেখে তো মনে হয় অবিবাহিত তার কিনা এতো বড় একটা মেয়ে ও আছে। অবাক করা বিষয়।

সারা রাস্তা তিনজন মিলে কথা বলতে বলতে যায়।যদিও বা নূরের গলা তেমন কানে আসেনি সৌন্দর্যের।ফাতিহা আর ইসরাত ই জোরে জোরে কথা বলেছে।গাড়ির লুকিং গ্লাসে তিনজনের হাস্যজ্জল মুখ ভেসে উঠে।সৌন্দর্য তা গাড়ি চালাতে চালাতে অবলোকন করে।

ইসরাত কে নূরের আগে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। এইদিক দিয়ে নূরদের বাড়ি ইসরাতদের বাড়ির পরে তাই নূর গাড়িতেই রয়ে যায়। নূরুের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালে নূর নামতে নিবে কিন্তু তার ওড়নায় টান পরায় পিছনে ঘুরে তাকায়।ফাতিহা নূরের ওড়না টেনে ধরে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমাকে তোমাদের বাড়িতে নিবে না?

সৌন্দর্য ফাতিহা কে বলে,মাম কি বলছো?

নূর মুচকি হেসে বলে,, তুমি যাবে আমার বাড়ি?

ফাতিহা মুচকি হেসে সম্মতি দেয় সে যাবে নূরের বাড়ি।

আচ্ছা তাহলে আসো।

না আমিতো ফান করেছি যাবো না।

‘কেন আসো।’

আরেকদিন আসবো গুড বায় বলেই আবার সামনের সিটে চলে আসে। নূর সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে বাড়ির ভিতর হাঁটা দেয়।

সৌন্দর্য মিনিট দুয়েক পর গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

—————————————-

এরমধ্যে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।সময়ের ধারা তার নিজ গতিতে বয়ে চলে। নূরদের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্ট ও দিয়ে দেয়।গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে নূর।পুরো বোর্ডে নূর প্রথম। নূর তার আশানুরূপ রেজাল্ট পেয়েছে। ইসরাত ও ভালো করেছে। নূরের মতো না হলেও ইসরাত ও ভালো ছাত্রী।

ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে নূর আর ইসরাত একই ভার্সিটি তে চান্স পায়।এরমধ্যে ওদের সাথে আরো কয়েকজন চান্স পেয়েছে। নূর আর ইসরাত খুব খুশি জীবনেও ভাবেনি এক সাথে থাকতে পারবে একই ভার্সিটিতে চান্স পাবে।

ভার্সিটি লাইফ দুইজনের ই ভালো চলছে তবে কিছু সমস্যায় ও আছে। সেটা দুইজন ই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এরমধ্যে ইসরাত তালহা কে জ্বালাতে ভুলে না। নূরের অবশ্য দেখা হয় মাঝে মাঝে তালহার সাথে। সৌন্দর্যের সাথে আর কারোই দেখা হয়নি।সৌন্দর্য কে দুইজনই প্রায় ভুলে বসেছে ব্যস্ত ময় জীবন পার করছে।পড়াশোনা নিয়ে চলে যাচ্ছে দিন।

এরমধ্যে দুইদিন পর এক্সাম ও শুরু হয়ে যায়। সময় যে কোনদিক দিয়ে যায় বুঝতেও পারে না। অনার্সেের জীবন নিয়ে ইসরাতের কতো অভিযোগ। তার যে তালহা কে ছাড়া মন বসছে না সেটা বলে না। সব দোষ তার অনার্স পড়া নিয়ে। সব কাজ শেষ করে নূর বাড়িতে এসে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে থাকে।পড়াশোনাই একমাত্র তার ধ্যান জ্ঞান। বিকেল বেলা জানালার ধারে বসে পরছিলো নূর। এরমধ্যে নূরের মা হাতে করে একটা শাড়ি নিয়ে এসে তারাতাড়ি তৈরি হতে বলে। নূরের ফুপাতো বোনকে বলে শাডি পরিয়ে দিতে। যতো তারাতাড়ি এসেছেন ততো তারাতাড়ি আবার চলেও গেলেন।নূরকে কিছু বলার সুযোগ ও দেয় নি। নূর বোনকে জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায় নি। সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আপু তাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজিয়ে চলে যায়। নূর বসে বসে ভাবছে হচ্ছে টা কি।দুই দিন পর তার এক্সাম আর এরা কি শুরু করেছে।

কিছু সময়ের মাঝে নূরের বাবা আসে রুমে।এসে মেয়ের পাশে বসে। মাথায় হাত রেখে বলে,,আম্মা বাবার প্রতি বিশ্বাস আছে না?

নূর মাথা নাড়ে।

বাবা যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। বাবা রা মেয়েদের কখনো জলে ভাসিয়ে দেয় না। আমি ভেবে চিন্তে সব করি তুমি তো জানো। শুধু একটু ভরসা রেখো।তারপর মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে চলে যান। নূরের মন কু ডাকছে।অজানা ভয়ে হৃদপিণ্ড ধপাস ধপাস করে শব্দ তুলছে। কিছু সময়ের মাঝে নূরের মা আর দুইজন মহিলা এসে নিয়ে যায় নূর কে। নূর রোবটের মতো চলতে থাকে।

আসল ঝটকা তো খায় তখন যখন কাজি কবুল বলতে বলে। বাবার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় একবার। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে নূর। হায় এই কি ছিল তার জীবনে। সব আশা স্বপ্ন ভরসা সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

ঐদিক দিয়ে কাজি বার বার নূরকে কবুল বলতে বলছে সেই দিকে তার খেয়াল কই? সে তো বাবার দিকে তাকিয়ে জীবনের হিসাব মিলাচ্ছে।

নূরের বাবা করুন চোখে তাকায়। বাবার তাকানো দেখে নূর মুখ দিয়ে কবুল বলা ব্যাতিত একটা টু শব্দ ও বের করে নি। না জেনে না দেখে অজানা সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো।সব স্বপ্ন সব আশা বিসর্জন দিলো।

প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি।