পরাণ দিয়ে ছুঁই পর্ব-৮+৯

0
182

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam

“একদম খা’মচি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। এইবার আর ছেড়ে দিবো না।নখ সহ আঙ্গুল কে’টে ফেলবো।”

নূর আর ইসরাত সামনে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তার মানে তারা যাকে ভেবেছে সে দরজা খুলেনি।খুলেছে সৌন্দর্য। নূর হাত সামনে নিয়ে যে ভাউউ বলে ছিলো সামনে তাকিয়ে সৌন্দর্য কে দেখে একই ভাবে আছে।

স’রি স্যার আমরা বুঝতে পারিনি আপনি দরজা খুলবেন।আসলে হয়েছে কি আমরা ভেবেছি তালা স্যার না মানে ইয়ে তালহা স্যারের ভাতিজি দরজা খুলে দিবে। আমরা আরো কয়েকবার এসেছি সে দরজা খুলে দিয়েছে তো,তাই ভাবলাম এবার ও বুঝি দরজা খুলবে।
ইসরাত কথা গুলো বলে সৌন্দর্যের থেকে দৃষ্টি সরায়। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে নূরের হাতগুলো নিচে নামায়।

নূর খুব অস্বস্তি তে পরে যায়। মনে মনে তার একটাই প্রশ্ন কেন,কেন কেন? এই লোকটার সামনেই কেন এমন হতে হবে? পৃথিবীতে তো কতো লোক আছে ওদের সাথে তো এমন কিছু হয় না। তাহলে এই লোকটার সামনেই কেন।

এরমধ্যে পিছন থেকে তালহা বলে উঠে, কিরে সৌন্দর্য দরজা খুলতে এসে তুই দেখি এখানেই পরে আছিস। কে এসেছে? বলেই সৌন্দর্যর পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখে দরজার বাইরে নূর আর ইসরাত দাঁড়িয়ে আছে।

ওহ তোমরা এসে গেছো? ভিতরে এসে বসো। এই সৌন্দর্য সাইড দে ওদের। দরজার সামনে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ওরা ভিতরে প্রবেশ করবে কিভাবে?

সৌন্দর্য তালহার কথায় সাইড হয়ে দাঁড়ায়।

ইসরাত ভিতরে আগে আগে ঢুকে পরে।পিছন পিছন নূর গুটি গুটি পায়ে যায়।

ইসরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে নূর বলে,, ইশু এমন ভাবে কেউ ভিতরে ঢুকে নাকি? কি ভাব্বে উনারা লজ্জা শরম নেই তোর।

চুপ যা বোন। নিজের শ্বশুর বাডিতে আবার কিসের লজ্জা শুনি?

—” শ্বশুর বাড়ি মানে?”

— শ্বশুর বাড়ির মানে জানিস না? এটা তো তালহা স্যারের বাড়ি। আর উনি তোর দুলাভাই। বলেই ওড়নার কোনা টা দুই হাতে কচলাতে কচলাতে লাজুক হাসে যেনো সে লজ্জা পেয়েছে খুব।

ওদের কথার মাঝখানেই তালহা বলে,,তোমরা একটু বসো। আম্মু বাড়িতে নেই।ভাবিকে নিয়ে একটু বেরিয়েছে। দাদি আছে তবে উনি ঘুমোচ্ছে। আমি একটু রান্না ঘরে ছিলাম।

ইসরাত ভালো করে তালহার দিকে তাকিয়ে দেখে কপালে আর গালে আটা লেগে আছে। দেখেই ফিক করে হেসে দেয়।

ইসরাতের হাসি দেখে সকলেই ইসরাতের দিকে তাকায়। নূর হাত দিয়ে খোঁচা দেয় যেনো না হাসে। এরমধ্যে পোড়া গন্ধ এসে নাকে লাগে। তালহা স্যার মনে হচ্ছে কিছু পুড়ে যাচ্ছে। কেমন পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।

তালহার এতক্ষনে মাথায় আসে সে চুলায় সিঙ্গারা ভাজতে ছিলো।কড়াইয়ে দিয়ে ও এসেছে।

ওহ নো আমিতো সিঙ্গারা দিয়ে এসেছি বলেই তালহা দৌড় দেয় রান্না ঘরে।

সৌন্দর্য চুপ করে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইসরাত আর নূর সোফায় বসতে যাবে এমন সময় রান্না ঘর থেকে তালহা স্যারের চিৎকার শুনে আর ওদের বসা হয় না। সকলেই রান্না ঘরের দিকে ছুটে।

সিঙ্গারা পুড়ে যাওয়ায় তালহা ভুলবশত তারাতাড়ি করে হাত দিতে গিয়ে হাতে ছেঁকা খায়।

নূর,ইসরাত আর সৌন্দর্য রান্না ঘরে গিয়ে দেখে হাত ধরে তালহা লাফালাফি করছে।

ইসরাত তালহা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। কি হয়েছে আপনার স্যার? লাফালাফি করছেন কেন? আপনি ঠিক আছেন?

তালহা কিছুই বলছে না।

এবার সৌন্দর্য ব্রু কোচকে বলে, তোর ব্যাঙের মতো লাফালাফি শেষ হলে বলবি কি হয়েছে? আমাদের বললে খুবই উপকার হতো।

হাতে গরম ছেঁকা লেগেছে ভাই।

ইসরাত তালহার কথা শুনে কাউকে পরোয়া না করে তালহার হাত ধরে টেনে বসার ঘরে নিয়ে যায়। তারপর টেবিল থেকে গ্লাস এনে হাত টা ডুবিয়ে দেয়। তালহা কে জিজ্ঞেস করে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে এসে বার্ণ ক্রিম লাগিয়ে দিতে থাকে হাতে। সৌন্দর্য বসার রুমে এসে দেখে ইসরাত সুন্দর করে চিকিৎসা করছে তার বন্ধুর। তালহা চুপচাপ শুধু দেখে চলেছে কিছু বলছে না।
সৌন্দর্য ওদের সামনের সোফায় বসে পরে।

নূর রান্না ঘরেই আছে। রান্না ঘর কে যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেলেছে। এসব নূরের একদম ভালো লাগছে না। হাতের ব্যাগটা সোফাতেই আছে। নূর আর কিছু না ভেবে আগে চুলার আগুন টা নিভিয়ে ফেলে। তারপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব কিছু এক-এক করে গোছাতে থাকে। সব কিছু গোছানো শেষ করে। পোড়া সিঙ্গারা গুলো তুলে ফেলে দেয়। তারপর নিজে বানাতে থাকে। সাথে কফিও বসিয়ে দেয়।

তালহা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,,নূর কোথায় চলে গেলো?

ইসরাত ও তাকিয়ে দেখে নূর নাই।তাই ডাক দেয় নূর কোথায় তুই?

নূরের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে তালহা আর ইসরাত দেখতে যায় কোথায় আছে। গিয়ে দেখে রান্না ঘরে। তালহা অনেক করে বারণ করেছে এসব করতে হবে না। কোনো দরকার নেই এসবের কিন্তু তালহার কথা নূর শুনেনি।বেশি সময় লাগবে না হয়ে গেছে প্রায়। আর ওর রান্না করতে ভালোই লাগে। অগত্যা কি আর করার তালহা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ইসরাত নূরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

তালহা বের হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য যেখানে বসে আছে সেখান থেকে রান্না ঘর পুরোটা দেখা যায়। তালহা গিয়ে সৌন্দর্যের পাশে বসে। তারপর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে,,, আমি তোর মতিগতি কিছু বুঝতে পারছি না ভাই।

কিসের মতিগতি?

এইযে আমরা নূর কে খুঁজতে ছিলাম।তোর এখান থেকে সব দেখা যাচ্ছে নূর কি করছে।এখন এটা বলিস না তুই দেখিস নি। তাও তুই আমাদের বলিস নি।আর না তাকে আটকেছিস।

আমি আটকাবো কেন?

কি ধরনের কথা বলিস তুই সৌন্দর্য?

কিছুই না শা/লির হাতের রান্না খাওয়ার সুযোগ পেলি তাই আর কিছু বলিনি।

তুই মুখে এটা বললেও তোর মুখের এক্সপ্রেশন অন্য কিছু বলছে।সে যাই হোক।

নূর হাতে কফি আর ইসরাত সিঙ্গারা নিয়ে আসে।এনে টেবিলের উপর রাখে।হাত দিয়ে ইসরাত বাতাস করতে করতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,, মানবতা আজ কোথায় ছাত্রীদের ডেকে এনে কাজ করায়।

তুমি কি কাজ করেছো শুনি? সব তো নূরই করলো।

আমার টা এমনিতেও চোখে পরবে না। এই যে সিঙ্গারা গুলো এনে দিলাম রান্না ঘর থেকে এটা কি কাজ না?

ইসরাতের কথা শুনে সৌন্দর্য শব্দ করে হেসে উঠে। তালহা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। নূর মিটমিটিয়ে হাসছে। সৌন্দর্যের হাসির শব্দে আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে সন্তর্পনে নিজের চক্ষুদ্বয় সরিয়ে নেয়।

নূর এবার মিনমিনিয়ে বলে,,, সবাই কফি নিন নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। তারপর নিজেই একে একে সবার হাতে তুলে দেয়।সৌন্দর্য কে নিজে দিবে নাকি টেবিলে রেখে দিবে বুঝতে পারে না নূর। নিজে না দিলে কেমন দেখায় সকলেইতো হাতে হাতে এগিয়ে দিয়েছে। তাই একটু ইতস্তত বোধ হলেও সৌন্দর্য কে কফির কাপ টা বাড়িয়ে দেয়।

সৌন্দর্য বাধ্য ছেলের মতো কফি নিয়ে চুমুক বসায়।এর মধ্যে ফোন টা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে সৌন্দর্যের দাদি বলে উঠে,,

দাদু ভাই কোথায় তুই?

“কেন দাদি কি হয়েছে? আমি তো তালহার বাড়িতে। ”

— এখনই বাড়িতে আয় দাদু ভাই। ফাতিহা সেই স্কুল থেকে এসে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। কিছুতেই খুলছে না।ডাকলাম সারা ও দিচ্ছে না। আমার খুব ভয় হচ্ছে দাদু ভাই। বাড়িতে কেউ নেই ও।

হোয়াটটট? এসব তুমি কি বলছো? আমি এখনই আসছি।কল টা কেটেই সৌন্দর্য কফির কাপটা টেবিলে রেখে উঠে পরে। যেতে যেতে তালহা কে বলে,,,আমার জরুরি কাজ আছে। আমি তোর সাথে পরে কথা বলে নিবো। বলেই সৌন্দর্য বেরিয়ে যায়।

সকলেই হুট করে কি হলো বুঝলো না। চিন্তিত ভঙ্গিতে সৌন্দর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।

আধা ঘণ্টার রাস্তা সৌন্দর্য মনে হয় দশ মিনিটে পারি দিয়েছে। কিভাবে যে সে গাড়ি চালিয়েছে শুধু সেই জানে।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে। সৌন্দর্যের দাদি তার অপেক্ষাতেই ছিলো। সৌন্দর্য কে ফাতিহার রুমের দিকে দৌড়ে যেতে দেখে নিজেও পিছনে পিছনে যায়।

দরজার সামনে গিয়ে টোকা দিয়ে ডেকে উঠে,,

“মাম? এই মাম দরজা খুলো ভিতরে কি করছো? দেখো আমি ডাকছি তো।তোমার ছেলে তোমাকে ডাকছে।”

ফাতিহা কোনো সারা শব্দ করে না।

সৌন্দর্য দাদির দিকে তাকিয়ে আবার ডাক দেয়। মাম আমি বাইরে থেকে এসেছি।খুব পানি পিপাসা পেয়েছে আমার পানি দিবে না?

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

মাম আমি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি। সৌন্দর্য আবার দরজা টোকা দিতে যাবে এরমধ্যে দরজা খোলার আওয়াজ পায়। সৌন্দর্য স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। দাদিকে চোখের ইশারায় আস্বস্থ করে রুমের ভিতর ঢুকে।

ফাতিহা দরজা খুলে আবার বিছানায় চলে গেছে। সৌন্দর্য ফাতিহার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

মাম কি হয়েছে তোমার?

“সামওয়ান কলিং মি তিহা মি.ওয়াহিদ। ”

#চলবে,,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

“সামওয়ান কলিং মি তিহা মি. ওয়াহিদ।”

হোয়াট মাম?

ফাতিহা এবার চোখ তুলে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,, একটা আন্টি আজ আমাকে তিহা বলে ডেকেছে।সাথে আমার গাল ও টেনে দিয়েছে।এই দেখো এইভাবে বলেই ফাতিহা নিজের গাল ধরে টেনে সৌন্দর্য কে দেখাতে থাকে।

সৌন্দর্য এতো সময় ব্রু কোচকে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ফাতিহার গাল টানা দেখে নিজের হাসি টা অনেক কষ্টে দ’মিয়ে রেখেছে। এখন একদম হাসা যাবে না। নয়তো ফাতিহা বুড়ি বো*ম হয়ে সব উড়িয়ে দিবে। তাই কিছুতেই হাসা যাবে না। সৌন্দর্য মনে মনে বুলি আওড়াচ্ছে কনট্রোল সৌন্দর্য কনট্রোল।

ফাতিহা বসে বসে নাক টানছে একটু পর পর। সৌন্দর্য উঠে গিয়ে টিস্যু বক্স নিয়ে আসে।

“মাম এখানে আসো আমার কাছে। তোমার ঠান্ডা লেগে গেছে। এতো কেউ কাঁদে? ”

— আমাকে তিহা বলেছে আর আমি কাঁদবোনা?

— তোমার ঐ আন্টি টা হয়তো জানতো না তুমি তিহা বলা একদম পছন্দ করো না। বা ইমোশনাল হয়ে যাও। আচ্ছা তুমি বলোতো ঐ আন্টিটার কি কোনো দোষ আছে এখানে?

উহুু।

এটাই তো সে না বুঝে তোমায় বলে ফেলছে।এতে কারো কোনো দোষ নেই। আর তোমাকে নিজেকে অনেক শক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। নিজে এভাবে ভেঙে পরলে চলবে? তুমি না আমার ব্রে’ভ গার্ল?

ইয়েস।

এখন এইদিকে আসো আমি নাক পরিষ্কার করে দিচ্ছি। তুমি কথা বলতে পারছো না। সৌন্দর্যের কথায় ফাতিহা লাফ দিয়ে এসে সৌন্দর্যের কোলে বসে। সৌন্দর্য সুন্দর করে এক হাতে ফাতিহা কে আগলে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফাতিহার নাক পরিষ্কার করে দেয়। স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ ও মনে হয় হয়নি মেয়েটা।চুলগুলো সব অগোছালো হয়ে আছে। সব চুল নিজের হাতে সৌন্দর্য ঠিক করে দেয়। আসো আমি ফ্রেশ করিয়ে দিচ্ছি। ফাতিহা কে নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে দাদি কে কল দিয়ে বলে যায় ফাতিহার জন্য খাবার পাঠানোর জন্য।

সৌন্দর্য ফাতিহা কে ফ্রেশ করিয়ে রুমে এসে দেখে টেবিলের উপর খাবার রাখা। মনে হয় সার্ভেন্ট এসে দিয়ে গেছে। খাবার নিয়ে ফাতিহার মুখের সামনে ধরতেই সৌন্দর্যের ফোনে কল আসে।এক হাতে কল রিসিভ করে আরেক হাতে ফাতিহা কে খাওয়াতে থাকে। তালহা কল দিয়েছে। রিসিভ করতেই তালহা বলে উঠে,,, ” কি হয়েছে সৌন্দর্য কিছুই তো বললি না।তখন অমন কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলি। বাড়িতে সব ঠিক আছে?

হ্যা সব ঠিকই আছে। তবে ফাতিহা,,,,,

ফাতিহা? কি হয়েছে ফাতিহার? ঠিক আছে তো??

— আগে আমায় বলতে দে ইয়ার।এতো প্রশ্ন করছিস কেন?

— আচ্ছা বল।

কার সাথে যেনো আজ দেখা হয়েছে। আর তিহা বলে ডেকেছে। তাই একটু ইমোশনাল হয়ে গেছে। তুইতো সব জানিস ই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে সৌন্দর্য।

আহারে বাচ্চা মেয়েটা। এখন ঠিক আছে?

— হুম।

এসবের চক্করে তোর সাধের সিঙ্গারা খাওয়া হলো না। আফসোস হচ্ছে কতো কিছু করলি সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য। আমাকে জোর করে পাঠালি রান্না করতে। সব বাদ দিলাম নূর সিঙ্গারা বানালো তুই তো খেতেই পারলি না। কি টেস্ট ছিলো ভাই মুখে লেগে থাকার মতো।আমি এতো টেস্টি সিঙ্গারা আর খাইনি দোস্ত। উফফফ।

ভালো করেছিস। তুই কি ভেবেছিস এমন রস,কস লাগালে আমার লো’ল পরবে? হাউ ফানি!

তোর জন্য দুইটা তুলে রেখেছি, আজ কি আসবি? এসে খেয়ে যা। নাকি ফ্রিজে রেখে দিবো কোনটা?

শা,,,, সৌন্দর্য ব;কা দিতে গিয়ে ও থেমে যায়। কারণ ফাতিহা খেতে খেতে সৌন্দর্যের দিকেই তাকিয়ে আছে।
সৌন্দর্য নিজেকে সংযত করে মিনমিনিয়ে বলে,,, মজা করা বাদ দিয়ে ফোন রাখ।নয়তো তোর খবর আছে।

আমি মজা করিনি দোস্ত। আসলেই তোর জন্য আফসোস হচ্ছে এতো টেস্টি সিঙ্গারা খেতে পারলি না। আহারে,,,,

সৌন্দর্য তালহা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়।

তুমি আমাকে না নিয়ে তালহা আঙ্কেলদের বাড়িতে গিয়েছিলে?

— আমার একটু কাজ ছিলো মাম।

— আমি খাবো না তুমি হাত সরাও। তুমি আমাকে না নিয়ে গেলে কেন?

— মাম পুরো টা শেষ করো খাবার। আমি ঐদিক দিয়ে আসার সময়ে তোমার তালহা আঙ্কেল আমাকে টেনে নিয়ে গেছে। আর তোমার তো ক্লাস ছিলো।তুমি স্কুলে ছিলে কি করে নিয়ে যাবো বলো?

–আমি রে’গে আছি।

— কি করলে রাগ ভাঙবে?

আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।

আচ্ছা।

পাক্কা?

হুম।তবে আজ না কাল নিয়ে যাবো।

ওকে। এন্ড লাভ ইউ মি.ওয়াহিদ।

লাভ ইউ টু মাম।

—————————————–
সকাল সকাল তৈরি হয়ে সোফায় বসে পা নাচাচ্ছে ফাতিহা। সে ঘুরতে যাবে।কি আনন্দ লাগছে তার।অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। আজ সে যাবে। কিন্তু অপেক্ষা তার সহ্য হচ্ছে না। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে সৌন্দর্যের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।

সৌন্দর্যের দাদি ফাতিহার পাশেই বসে বসে পানের বাটা নিয়ে পান বানাচ্ছে। ফাতিহা তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,উফফ বুড়ি তোমার জামাই এখনো আসছে না কেন? এতো টাইম লাগে? দেখো সাজতেছে নতুন বউ পেয়ে যাবে আর তোমাকে ভুলে যাবে।

দিন দিন পেকে যাচ্ছিস ফাতু বুড়ি। তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই আমার থেকেও বয়সে বড়।

ফাতিহা মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে তাকায়। এরমধ্যেই সৌন্দর্য গাড়ির চাবি হাতের আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে শিষ বাজিয়ে ফাতিহার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফাতিহা ঝটপট সোফায় উঠে দাঁড়ায়। সৌন্দর্য ঘুরে ফাতিহা কে কাঁধে তুলে নেয়। তারপর দুইজন চলে যায়।

গাড়ি নিয়ে সৌন্দর্য পার্কের ভিতর যাবে এরমধ্যে ফাতিহা হাওয়াই মিঠাই দেখে বায়না ধরে সে খাবে। যা বলবে বলবেই সৌন্দর্য বারণ করে ও মানাতে পারবে না। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে যায় হাওয়াই মিঠাই আনার জন্য। যাওয়ার আগে ফাতিহা কে বারণ করে যায় গাড়ি থেকে নামতে। ফাতিহা সম্মতি দেয় সে গাড়ি থেকে নামবে না।

ফাতিহা একটা বাচ্চা কে দেখে সৌন্দর্যের বলা গাড়ি থেকে না নামার কথাটা ভুলে যায়।মিষ্টি বাচ্চা মায়ের কোলে থেকে খিলখিলিয়ে হাসছে। এটা দেখে নেমে আসে। মহিলাটার পিছন পিছন যেতে থাকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই বাচ্চাটা কে হারিয়ে ফেলে ফাতিহা।গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ও এসে গেছে।

ফিরে আসার সময় দুই তিনটি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে তাকিয়ে দেখে ওর দিকেই তে’ড়ে আসছে। ফাতিহা ভয় পেয়ে উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু কুকুরের সাথে পেরে উঠছে না।

নূর আর ইসরাত কোচিং শেষ করে হেঁটেই বাড়ি ফিরছে।একটা বাচ্চাকে কুকুর দৌড়াচ্ছে এটা দেখে নূর দাঁড়িয়ে যায়। তারপর সে দৌড়ে যেতে থাকে। পিছন থেকে ইসরাত বারণ করছে যাওয়ার জন্য কিন্তু নূর শুনছে না। যেই মেয়ে টা দশ হাত দূরেও কুকুর দেখে ইসরাতের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে কিনা এখন দৌড়াচ্ছে।

নূর গিয়ে ফাতিহা কে কোমড় ধরে তুলে অন্য পাশে নিয়ে আসে।নিজেকে সামলাতে না পেরে ফাতিহা কে নিয়েই পরে যায়। ফাতিহা পাপ্পা বলে চিল্লিয়ে উঠে। নূর ফাতিহা কে ব্যাথা পেতে দেয়নি। দুইজন ই পরে গেছে। নূর একটু তাকিয়ে দেখে কুকুরগুলো ছুটে একটা ডাস্টবিনের কাছে চলে গেছে। এরমধ্যে সৌন্দর্য ও দৌড়ে এসে ওদের কাছে থামে। ফাতিহা কে প্রথমে নূরের উপর থেকে তুলে জিজ্ঞেস করে ঠিক আছে কিনা। ফাতিহা ভয়ে কিছু বলতে পারছে না শুধু কেঁপে চলেছে। সৌন্দর্য ফাতিহা কে বুকে জড়িয়ে নেয়। তারপর নূরের দিকে তাকায়। নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য। এরমধ্যে ইসরাত ও ওদের কাছে এসে পরে। সৌন্দর্য কিছু না বলে ইসরাতের কোলে ফাতিহা কে দিয়ে দেয়। নিচে বসে নূরের হাত ধরে তুলে।নূরের কুনোই ছিলে র/ক্ত ঝরছে। সৌন্দর্যের স্পর্শে নূর কেঁপে ওঠে। নিজেকে সরিয়ে নিতে চায় কিন্তু সৌন্দর্য ছাড়ে না। হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।

গাড়িতে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নূরের পাশে বসে। ঔষধ দেখেই নূরের চোখের পানি ছলছল করতে থাকে। সৌন্দর্য তা ভালো করেই লক্ষ করে। চোখ দুটোকে মনে হচ্ছে কোনো গভীর সমুদ্র।

সৌন্দর্য মনে মনে আওড়ায়,,” চোখ তো না যেনো কাউকে ধ্বং’স করার ক্ষে’প’ণা’স্ত্র। ”

#চলবে,,,,

কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।