পরাণ দিয়ে ছুঁই পর্ব-৬+৭

0
198

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

সৌন্দর্য হাত উঁচু করেই পিছনে ফিরে তাকায়। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। হাসি থামিয়ে মুখটাতে কিছু দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলে। তারপর হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসে পরে।

সৌন্দর্যের দিকে ৭ বছরের এক বাচ্চা রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে রাগে ফুঁসছে।

” কি হয়েছে মাম?”

— আপনি কি কিছু হতে বাকি রেখেছেন মিষ্টার ওয়াহিদ?

— এভাবে কথা বললে আমার ভয় লাগে তো।

— উফফ মি. ওয়াহিদ একদম ড্রামা করবেন না। আমি আপনাকে হাড়ে হাড়ে চিনি।

— আমার মা আমাকে না চিনলে কে চিনবে?

— দিন দিন সেই মায়ের অবাধ্য সন্তান হয়ে যাচ্ছেন।

— মোটেও না।আমি৷ আমার মায়ের বাধ্য সন্তান।

ওদের কথার মাঝেই একজন বলে উঠে,, কি রে ফাতু? আমার জামাই টা আসতে না আসতেই তুই শাসন করা শুরু করে দিলি?

উফফফ বুড়ি ইট’স ফাতিহা।নট ফাতু। আর তোমার জামাই হওয়ার আগে আমি তার কে হই জিজ্ঞেস করো এই বা’উন্ডুলে ছেলে কে।

দেখ দাদু ভাই দেখ এই বয়সেই কি রকম করে কথা বলে। মনে হচ্ছে বয়স ৭ না ৭০ পেরিয়ে গেছে।

মি. ওয়াহিদ আমি আপনার কে হই?

— অবশ্যই আমার মা।

— তাহলে তোমাকে শাসন করার অধিকার কার বেশি আমার না তোমার এই বুড়ি বউয়ের?

সবার আগে মা।

ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সৌন্দর্য ও চুমু খায় ফাতিহার কপালে।

আমি যে তোমাকে কি বলেছিলাম সেটা করেছো?

তুমি কিছু বলেছো আর আমি সেটা করিনি এমন কোনোদিন হয়েছে?

কখনো না।

এবারও তোমার কথা মতোই সব হয়েছে। কথাটুকু বলে সৌন্দর্য উঠে দাঁড়ায়। সোফায় নিজের শরীর টা হেলিয়ে দিয়ে বলে,,, একটু পানি দাও তো মাম। তোমার হাতে পানি না খেলে কি আমার তৃষ্ণা মিটে?

ফাতিহা দৌড়ে চলে যায় সৌন্দর্যের জন্য পানি আনতে। কিছু সময়ের মাঝেই পানি নিয়ে ফিরে আসে। সৌন্দর্যের হাতে দেয়।

সৌন্দর্য মুচকি হেসে পানি টুকু নিয়ে এক নিমিষে সবটুকু শেষ করে। তারপর টেবিলে গ্লাস টা রাখে। ফাতিহা কে তুলে নিজের কোলে তুলে নেয়।

ফাতিহা কোলে বসে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।

সৌন্দর্য নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ফাতিহার হাতে ধরিয়ে দেয়। এটাতে সব আছে মাম। তুমি যেভাবে বলেছো সেভাবেই করেছি।

ফাতিহা সৌন্দর্যের কথা শুনে লাফিয়ে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে একটু দেখেই ওয়াও বলে চিল্লিয়ে উঠে।

সৌন্দর্য ফাতিহার মাথার চুল গুলো হাত৷ দিয়ে এলোমেলো করে দেয়। অন্যসময় হলে ফাতিহা রে’গে যেতো।কিন্তু এখন একটুও৷ রা’গ করলো না। উল্টে মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে উপরে চলে যেতে থাকে।

সৌন্দর্য ফাতিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলে,,মাম আর যা যা বলেছো সব এনেছি। গাড়িতে আছে। তোমার রুমে পৌঁছে যাবে।

ফাতিহা সৌন্দর্যের কথায় দৌড় থামিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। তারপর হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়।

দেখেছিস দাদু ভাই এই বয়সেই কি সব কান্ড ঘটায়?

বাদ দাও দাদি।আজকালকের বাচ্চারা একটু বেশিই আপডেট। তবে খারাপ সঙ্গের সাথে যেনো না মিশে সেই দিকে খেয়াল রাখলেই হলো।

হুম যা দাদু ভাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ির সবাই কোথায়?

এই সময় কেউ বাড়িতে থাকে? যে যার কাজ নিয়ে আছে। আমিতো একাই থাকি। ফাতিহা আজ স্কুলে যায় নি তুই আসবি বলে।

আচ্ছা দাদি আমি রুমে যাচ্ছি।

যা গিয়ে রেস্ট নে।

এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।

এখনই দিচ্ছি।

—————————————-

নূর বাড়িতে আসার সাথে সাথে তার ছোটো বোন তূর গল্প জুড়ে দিয়েছে। সেখানে কি কি করলো।কি কি দেখলো সব। তূরের ও খুব ইচ্ছে ছিলো বোনের সাথে যাওয়ার। কিন্তু তার একটা এক্সাম হওয়ায় যেতে পারেনি৷ অবশ্য এক্সাম কোনো ব্যাপার না সে এক্সাম ফেলে ঠিকই চলে যেতো।কিন্তু বাবার ভয়ে যেতে পারেনি।

নূরের উল্টো হচ্ছে তূর। নূর যেমন কম কথা বলে।তূর তেমন বেশি কথা বলে। নূর যেমন পড়াশোনায় ভালো তূর তেমন টেনেটুনে পাশ করা ছাত্রী। সেই কখন থেকে জানতে চাইছে কি দেখেছে।কি কি খেয়েছে। কেমন আনন্দ করেছে। অবশ্য ঠিক জানেই তার বোন কি বোরিং। ঘুরতে গিয়েও যে বইয়ে মুখ ঢুকিয়েছিলো।

কি হলো কিছু বলছিস না কেন আপু?

নূর চুপ করে বসে আছে। মাথাটা খুব ধরেছে।শরীর ও কেমন জানি মে’জ মে’জ করছে। জ্বর আসবে আসবে বলে মনে হয়।

কি হলো আপু চুপ করে আছিস কেন?

তূর এতো জোরে কথা বলবিনা তুই আমার সামনে। আর কি বলবো তোকে? সিলেটে কি দেখতে যায় মানুষ? পাহাড়,ঝর্না,চা বাগান এসবই তো।

হইছে তোর বর্ণনা দিতে হবে না। ফোন দে পিক দেখবো আমি।

আমার ফোনে পিক নাই তুই কোথা থেকে দেখবি?

মানে টা কি আপু? তুই পিক ও তুলিস নি?

না। তুই জানিস আমার এসব ভালো লাগে না। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করছিস বলতো?

ধ্যাত। তোকে আমার জিজ্ঞেস করাটাই ভুল হয়েছে। মাফ কর বইন আমার। আমি ইশু আপুর থেকে জেনে নিবো। বোরিং একটা মেয়ে তুই। তোর উপর যে মাঝে মাঝে কি রা’গ হয় আমার। আমি বুঝে পাই না ইশু আপুর মতো একটা মেয়ে কি করে থাকে তোর সাথে। যে তোকে বিয়ে করবে তার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে। কথাগুলো বলে তূর বের হয়ে যায়।

তূর যেতেই নূর বিছানায় শরীরটা হেলিয়ে দেয়। চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

———————-

ইসরাত আননোন নাম্বার থেকে তালহা কে দুটো মিসড কল দেয়। তারপর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। কানে ধরে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা তাই না। আজ মজা বোঝাবে।

তালহা ঘুরে এসে খুবই ক্লান্ত। মোবাইল সাইলেন্ট করেনি। তাই রিংটোনের আওয়াজে নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।

অপর পাশ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ইসরাত আবার কল করে। এবার আর মিসড কল না ডাইরেক্ট কল করে। কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়। কারণ তালহা কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমোচ্ছে। বেশ কয়েকবার বিরক্ত হয়ে এবার ঘুমো ঘুমো চোখে উঠে বসে। মুখ দিয়ে গা*লি বের হতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়।

ফোন তুলে কানে ধরে। হ্যালো হ্যালো করতে থাকে। ইসরাত মুখে ওড়না চাপা দিয়ে বসে বসে হাসছে। বার কয়েক হ্যালো হ্যালো বলে চলেছে তালহা।

ইসরাত ফোন কেটে দেয়।

তালহা শুতে যাবে আবার কল আসে। এবার ও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি।রাগে তালহা কল কেটে দেয়। তারপর ফোন বন্ধ করে আরামে ঘুম দেয়।

ইসরাত আরো একবার কল দিয়ে দেখে ফোন বন্ধ। এবার শব্দ করে হেসে উঠে। তারপর দরজার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দেয়।তার মা শুনতে পারলে পা’গল হয়ে গেছে ভেবে পাবনা দিয়ে আসবে।

নিজের মনে হাসতে হাসতে শুয়ে পরে ইসরাত।

———————-

নূরের রাতে সত্যিই অনেক জ্বর আসে কাঁপুনি দিয়ে। কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ঔষধ খাইয়ে মাথায় পানি দিয়ে। জ্বর কমার নাম নেই।

নূরের বাবা ডাক্তার কে কল করে।সব শুনে উনি জানায় নূরকে যেনো ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যায়।

নূরকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তাররা তাকে দেখছে। নূরের বাবা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বেশ চিন্তিত। মেয়েটা এতোটা অসুস্থ হয়ে গেলো। ভাবতেই বুকে কষ্ট হচ্ছে।

#চলবে,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

প্রচন্ড জ্বরে কয়েকদিন ভোগেছে নূর। দুই দিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। জ্বরে কাবু করে নিয়েছিল নূর কে। এখন সুস্থ আছে মোটামুটি। পরিবারের সকলেই নূর কে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলো।মেয়ে টা কয়েকদিনের জ্বরে শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে পারে নি।

সকাল থেকে ইসরাত ফোন দিয়ে চলেছে নূর কে। কলেজে গিয়ে এডমিট কার্ড আনতে হবে আজ। কিন্তু মেয়েটা ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো সাইলেন্ট করে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। কলেজে যে যেতে হবে ভুলে খেয়ে নিয়েছে হয়তো।

নূর জানালার ধারে বসে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরমধ্যে তূর রুমে আসে।

এই আপু তুই এখানে বসে কি ভাবছিস বল তো। ইসরাত আপু সেই কখন থেকে তোকে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে, সেই খেয়াল কি আছে তোর?

ইশু কল দিচ্ছে কেন?

আমি কি জানি তুই জিজ্ঞেস কর।নে লাইনে আছে ধর বলেই নূরের হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়।

নূর কানে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে গা’লি’গা’লা’জ ভেসে আসে। নূর চোখ মুখ কোচকে চুপ করে থাকে। কিছু সময় যাওয়ার পর ইসরাত থামে। হাঁপিয়ে গেছে সে।

পানি খেয়ে আয়।

হ্যা দাড়া দোস্ত তোর জন্য আমার গলা শুকিয়ে গেছে।

নূর ইসরাতের কথায় মুচকি হাসে।

ইসরাত গিয়ে পানি খেয়ে আসে।
হ্যালো দোস্ত।

‘এবার বল কি হয়েছে? ‘

— আজ কতো তারিখ?

— এটা জানার জন্য তুই আমাকে কল দিয়েছিস?
ক্যালেন্ডার নাই? ফোনেও তো আছে দেখে নিলেই হতো।

ওরে আল্লাহ। তোর এতো ভুলো মন কবে থেকে হলো? আজ আমাদের এডমিট আনতে হবে।

ইয়া আল্লাহ আমি একদম ভুলে গেছি ইশু।

— আমি জানতাম।

— আমি জানতাম তুই ভুলে খেয়ে বসে আছিস।

— তুই রেডি হয়ে গেছিস?

নাহ এখনই হবো।রেডি হওয়ার আগে তোকে জানিয়ে নিলাম।

খুব ভালো কাজ করেছিস দোস্ত। আমি এখনই রেডি হচ্ছি। তুই রেডি হয়ে আমাদের বাড়িতে আয়।

আচ্ছা আমি এখনি আসছি।

আচ্ছা।

——————————–

ইসরাত আর নূর কলেজ থেকে এডমিট কার্ড কালেক্ট করে নেয়। নূর চেয়েছিলো বাড়ি চলে যাবে কিন্তু ইসরাতের জন্য পারে নি। সে নাকি একটু কেনাকাটা আর ফুচকা খাবে। নূরের কোনো কথা শুনেনি।জোর করে শপিং করতে নিয়ে যায়।

কেনাকাটা করে বেরিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে থাকে। ফুচকার দোকানে যাবে ফুচকা খেতে।

এরমধ্যে নূরের ফোন বেজে উঠে। ব্যাগ থেকে নিয়ে দেখে তার মা ফোন দিয়েছে।

হ্যা মা বলো।

নূর কোথায় আছিস তুই? আর কতক্ষন লাগবে?

এডমিট নিয়ে ফেলেছি। বাড়ির কাছেই আছি একটু পর চলে আসবো।ইসরাত নাকি ফুচকা খাবে।

আচ্ছা খেয়ে আয় সমস্যা নেই। কিন্তু রোদে দাঁড়িয়ে থাকিস না।কিছুদিন হলো জ্বর থেকে উঠেছিস।আবার আসবে কিন্তু রোদে থাকলে।

আচ্ছা মা রোদে থাকবো না।

ইসরাত ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা অর্ডার দেয় দুই প্লেট। নূর কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলো। কথা শেষ করে ইসরাতের পাশে এসে দাঁড়ায়। ইসরাত ফুচকা গুলো একটু ঝাল দিয়ে বানানোর কথাই বলেছে। নূর যে কম ঝাল খায় সেটা ভুলেই গেছে। নূরের ও মনে ছিলো না ঝাল কম দেওয়ার কথা। নূর ভেবেছে ইসরাত ফুচকা ওয়ালা মামা কে আগেই বলে দিয়েছে ঝাল কম দেওয়ার কথা।

ফুচকা দিলে দুইজন ই বসে খাওয়া শুরু করে। নূর একটা মুখে দিয়েই থোম মে’রে থাকে। ইসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে অনেক কষ্টে মুখের ফুচকা টা শেষ করে। চোখ মুখ ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে। চট করে ফুচকার প্লেট রেখে উঠে পরে। এইদিক ঐদিক তাকিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে থাকে।

নূর,,,,এই নূর কি হয়েছে তোর? খাওয়া রেখে উঠে পরলি কেন?

নূর কিছু বলছে না ছটফট করতে থাকে শুধু।

ইসরাত নূরের কান্ড দেখে নিজের প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ায়। নূরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে।

এই নূর তোর মুখে কি হয়েছে?

ইশু,,, পা-পানি দে।

ইসরাতের এতোক্ষনে খেয়াল হয় সে কি করেছে। নূরের যে ঝাল খেতে পারে না সেটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।

তারাতাড়ি গিয়ে ব্যাগ থেকে পানি নিতে গিয়ে দেখে বোতল পুরো খালি।পানির ছিটে ফোটা ও নেই।
ফুচকা ওয়ালা মামা কে বলে পানি দিতে।

নূর হাত দিয়ে মুখে বাতাস করছে চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি ঝড়ছে। এরমধ্যে কেউ পিছন দিক দিয়ে জামায় ধরে টান দেয়।

নূর পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বোঝার আগেই হাত ধরে টান দেয় বসার জন্য। নূর হাঁটু মুড়ে বসে। মেয়েটা নিজের গলা থেকে ওয়াটার বোতল টা নিয়ে নূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,,, খেয়ে নাও এটা।

নূর ঝালের কথা ভুলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটা গম্ভীর গলায় বলে,,,
কি হলো খাচ্ছো না কেন? আমি মুখে লাগিয়ে খাইনি।খেতে পারো।

নূর কিছু না ভেবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে পানি খেয়ে নেয়। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর মেয়েটার দিকে তাকায়। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। কিন্তু মুখটা কেমন গম্ভীর করে রেখেছে। মনে হচ্ছে মুরব্বি।নূর মেয়েটার হাত ধরে নিয়ে চেয়ারে বসায়।

তোমার নাম কি বাচ্চা?

আমি বাচ্চা না।

নূর ইসরাতের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে ইসরাত ও মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আচ্ছা। এবার বলোতো তোমার নাম কি?

আমার নাম ফাতিহা ওয়াহিদ।

ওয়াও কি সুন্দর নাম ঠিক তোমার মতো।

— হুম সবাই তাই বলে।

ইসরাত মনে মনে বলে,, বাপরে কি ভাব এই বাচ্চা মেয়ের।

তুমি এখানে কার সাথে এসেছো? আর তোমার সাথে লোক কোথায়?

আমি স্কুলে এসেছি। আর আমার সাথে ড্রাইভার আংকেল আছে। ঐযে ঐ পাশে।ফাতিহা হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

নূর চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

তাহলে তুমি ঐপাশে না দাঁড়িয়ে এখানে কি করছো?

—- আমি গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখি তুমি ঝালে কেমন করছো। তাই আমার কাছে পানি ছিলো তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।

তারপর চলে যেতে নিয়ে পিছনে ফিরে বলে উঠে যেটা খেতে পারো না সেটা কেনো খাও?

নূরের কেন যেনো বাচ্চাটা কে খুব ভালো লেগেছে। তাই বলে দাঁড়াও একটু।

ফাতিহা দাঁড়ায়। নূর গিয়ে ফাতিহার গালে একটা চুমু খায়। তুমি অনেক ভালো তিহা বেবি।

ফাতিহা কিছু না বলে নূরের দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি চলে যায়। নূর কিছুই বুঝলো না হুট করে কি হলো। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামায় নি। দুইজন ই বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটা দেয়।

এরমধ্যে তালহা স্যারের ফোন আসে।নূর রিসিভ করতেই বলে ওদের বাসায় গিয়ে যেনো দেখা করে জরুরি কিছু নোটস দিবে। তাই বাড়িতে না গিয়ে তালহাদের বাসার উদ্দেশ্যে যায় দুইজন।

তালহাদের বাড়ির সামনে এসেই দুইজন কলিং বেল এ চাপ দিয়ে থামে। তারপর দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসে। ওদের জানা আছে এখন কে এসে দরজা খুলবে।

দরজা খোলার শব্দ পেয়েই নূর সামনে দাঁড়িয়ে ভাউউউ করে উঠে।বাচ্চাদের সাথে সে নিজেও বাচ্চা হয়ে যায়।

এরমধ্যে কারো কথা শুনে যেনো রোবট হয়ে যায় নূর।

“একদম খা’মচি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। এইবার আর ছেড়ে দিবো না। নখ সহ আঙ্গুল কে’টে ফেলবো।”

#চলবে,,,,,
কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।