পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-২+৩

0
192

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

কিছু কিছু সিচুয়েশন নিজেকে একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যায়। চোখ মুখে নিরাশ,হতাশা,,সব যেমন অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। আলোর রোশনাই পাওয়া বড় দায়।নূর কোনো আশার আলো দেখতে পারছে না। সামনের থাকার ব্যক্তিটির মুখে এক্সপেল নামক বিষ বাক্য অথৈ সমুদ্রে তলিয়ে দিয়েছে।

নূর না বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে আর না পাচ্ছে সামনের দিকে তাকানোর শক্তি। মুখের বুলি তো স্যার নামক লোকটির বিষাক্ত কটুক্তিতে সেই কখনই বন্ধ হয়ে গেছে।

কি হলো নাহিদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? খাতাটা আমাকে দিন আর কপির পেপারগুলো ও।

আবার আবার সেই ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর। নূর নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। মনে মনে ঠিক করে নেয় আর সে বাড়ি যাবে না। কোন মুখে সে বাড়ি যাবে।

এরমধ্যে একজন ম্যাম প্রিন্সিপালের কাছে ফোন করে দেয়। তারপর সৌন্দর্য কে বলে,,
মি. ওয়াহিদ খাতা এক্সপেল করার আগে আমাদের বিষয় টা আরেকটু খতিয়ে দেখা উচিৎ। আই থিংক কোনো ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।

সৌন্দর্য একবার ম্যামের দিকে তাকিয়ে আবার খাতা দেখায় মন দেয়।এরমধ্যে ফোন নিয়ে কি কি যেনো করে।অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের তাদের এক্সামে মন দিতে বলে।কিছু সময় নিয়ে ফোন দেখে একটু পর ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।

ম্যামের দিকে তাকিয়ে বলে,,ম্যাম আই থিংক খাতাটা এক্সপেল করে দেওয়া উচিৎ। সাথে আমাদের নকল ধরা স্যার কে তার বুদ্ধিমত্তার জন্য পুরস্কৃত করা উচিৎ।

আর এইযে নকল বাজ মেয়েটাকেও শাস্তি দেওয়া উচিৎ। পড়াশোনা করো কিসের জন্য? নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে সৌন্দর্য। অথচ নূরের এখনও কোনো কথার প্রতি কোনো হুশ নেই।

নাহিদ স্যার কিভাবে টিচার হলেন বলুন তো?

সৌন্দর্যের কথায় নাহিদ স্যার ব্রু কোচকে তাকায়।
মা-মানে স্যার?

আপনি মানে বুঝতে পারছেন না?

নাহিদ স্যার মাথা নেড়ে না জানায়। সৌন্দর্যের কথায় উনি কিছুই বুঝতে পারছে না। এখানে উনার টিচার হওয়া নিয়ে কেনো প্রশ্ন উঠছে কেন।

কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই আপনি একজনের বিরুদ্ধে এলিগেশন দিয়ে দিলেন?

সব তো প্রমান সহ স্যার। আমি তাকে নকল সহ হাতে নাতে ধরেছি। তার খাতার ভিতর থেকে আমি নিজে পেপারটা বের করেছি।

নাহিদ সাহেব লোকটার হাতে রক্ত মাখা ছুরি।সামনে একজন ছুরির আঘাতপ্রাপ্ত লোক তারমানে এই না যে ছুরি ধরে রাখা লোকটাই আঘাতপ্রাপ্ত লোকটাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। হতে পারে লোকটাকে বাঁচানোর জন্য পেট থেকে ছুরিটা বের করেছে। এখন আপনি ভিতরের সত্যতা না জেনে উপরের টুকু দিয়ে বিচার করলে তো হবে না। আপনার জন্য একজন ব্রাইট স্টুডেন্টের লাইফ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।আপনি আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীর উপর নকল করার অভিযোগ তুলেছেন তাও সত্যতা যাচাই না করে।

মানে স্যার নকল তো ওই কর,,,

সাট আপ। জাস্ট সাট ইউর মাউথ। সি দিস বলেই সৌন্দর্য পকেট থেকে ফোন বের করে নাহিদ স্যারের দিকে ছুরে মারে।নাহিদ স্যার ফোনটা ক্যাচ করে নেয়। সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই চোখের ইশারায় ফোন দেখতে বলে। নাহিদ স্যার ফোনে দৃষ্টি দেয়।

কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে নাহিদ স্যার স্তব্ধ হয়ে রয়। না চাইতে হাতটা কেমন যেনো কেঁপে ওঠে। ভাবনায় পরে যায়। এরমধ্যে সৌন্দর্য ফোন টান দেওয়ায় যেনো হুঁশ আসে।

আপনি এতো ভুলোমনা কেন নাহিদ স্যার? অথিওরিটি কি করে আপনাকে রেখেছে বোঝলাম না।সামান্যতম বেসিক নলেজ ও দেখি কাজ করে না আপনার উপর।

ক্লাসরুমে যে টিচাররা ছাড়া ও সিসিটিভি আছে সেটা আপনি ভুলে গেছেন। সাথে যে এই মহৎ কাজটা করেছে সে ও। এতোটা চতুরতার সাথে কাজ করলো অথচ এটা মাথায় থাকলো না যে ক্লাসে ক্যামেরা লাগানো আছে।

সৌন্দর্যের কথায় আরো একজনের বুকে ছে’ত করে উঠে।

নাহিদ স্যার আপনি নিশ্চয়ই কম কথা শোনান নি?

এরমধ্যে ইসরাত মাঝখান থেকে বলে উঠে,, অনেক কথা শুনিয়েছে স্যার।সাথে ক্রিমিনাল ও বলেছে।নূর কয়েকবার বলতে চেয়েছে ও এমন করে নি।কিন্তু স্যার তো শুনলোই না।

ইউ সাট আপ নিজের এক্সাম দেওয়ায় মন দাও।তোমাকে কেউ কিছু বলতে বলেনি। সৌন্দর্যের ধমকে ইসরাত আর কিছু বলেনি চুপ হয়ে যায়।

ও যখন বলতে চেয়েছিলো ও নকল করে নি।ওর খাতার থেকে নকল টা পাওয়ার পর ও যখন বলতে চেয়েছিলো ও নকল করে নি। তখন আপনার উচিৎ ছিল সিসিটিভি দেখানোর।ফরগেট ইট।আপনার বিষয় টা কতৃপক্ষ পরে দেখবে।

আর আপনি নিশ্চই আসল কালপ্রিট কে তা দেখতে পেলেন নাহিদ স্যার??

সরি স্যার।

নাহিদ স্যারের সরি তে সৌন্দর্য পাত্তাই দেয় নি।

নূর বুঝতে পারলো এই যাত্রায় সে মনে হয় রক্ষা পেয়ে গেলো।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছে। এইবার মনে হয় তার ক্যারিয়ার টা বেঁচে যাবে। হাত পা এখনও মৃদু কাঁপছে।

এই মেয়ে তুমি পড়াশোনা করো কিসের জন্য? এই পড়াশোনার কোনো দাম আছে? মুখে কি তালা মেরে রেখেছো? তোমার খাতার ভিতর নকল পাওয়া গেছে সেটা তোমার না। তুমি জানো ও না এটা তোমার খাতার ভিতর কি করে গেলো।এটা জোর গলায় বলতে পারলে না? ক্লাসের টপার স্টুডেন্ট যার প্রতি বিষয়ে হাইয়েস্ট রেজাল্ট তার মুখের ভাষা নেই? অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানো না? এভাবে চোখের পানি দিয়ে সাগর বানালে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে কি?

নূর একটা কথা ও বলছে না চুপ করে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে। সৌন্দর্যের কথাগুলো একশো ভাগ সত্যি। কিন্তু কি করার সে এরকমই খুবই ইমোশনাল একটু কিছুতেই নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলে। প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা।

এক কাজ করো তোমার এক্সাম দিতে হবে না। বাড়ি চলে যাও।যাও বাড়ি গিয়ে গঙ্গা, যমুনার পানিতো রোদের জন্য শুকিয়ে যাচ্ছে।তুমি কেদে ড্রাম ভর্তি করে নদীতে পানি গুলো সাপ্লাই করে দিও।এতে খুব উপকার হবে।

সৌন্দর্যের কথায় ইসরাত নিঃশব্দে হেঁসে দেয়।অন্যান্য স্টুডেন্টরা ও হাসে। তবে এক্সাম দিতে দিতে যতটুকু বুঝতে পারলো স্যার টা অনেক কড়া।

হে ইউ স্ট্যান্ড আপ!!

বাক্যটা এতো জোড়েই ছিলো যে সৌন্দর্যের কন্ঠের প্রতিধ্বনি ক্লাস রুমের দেয়ালে বারি খেয়ে কয়েকবার একই কথা রিপিট হয়েছে। সকল ছাত্র ছাত্রীই ভয় পেয়ে গেছে। ইয়ানূর ভীত চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। এতোবড় ধমকে বুকটা ধুকধুক করছে। চোখের পানি সেই কখনই শুকিয়ে গেছে। চোখ মুখ এখন জ্বালা করছে নূরের।

সৌন্দর্যের সেই ধমকে ক্লাস রুমের আরো একজন দাঁড়িয়ে যায়। সৌন্দর্য ঐদিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসে। তারপর আঙুলের ইশারায় নূর কে সামনে যেতে বলে।

সৌন্দর্যের ইশারায় নূর রোবটের মতো একপা দুপা করে করে সামনে যায়।

খাতাটা নূরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,চুপচাপ ঠান্ডা মাথায় লিখো।ভাববে কিছু হয়নি।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।ভালো করে এক্সাম দেওয়ায় মন দাও। এই সাবজেক্টের এক্সাম নিয়ে ঝামেলা হয়েছে না? আমি এই সাবজেক্টই সর্বোচ্চ মার্ক দেখতে চাই তোমার। আর টাইম যতটুকু বরবাদ হওয়ার তা তো হলোই বিশেষ বিবেচনা করে তোমাকে আলাদা সময় দেওয়া হবে।নাও গো।

নূর চুপচাপ এসে লিখা শুরু করে।

এইযে মিস আপনি দয়া করে আপনার খাতা সহ এখানে আসলে আমি কৃতজ্ঞ হবো। আপনি আপনার পায়ের ধূলি এখানে ফেলবেন কি?

স-স-স্যার।

জ্বি ম্যাম?

আ-আসলে স্যার আমি ও-ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য দাড়িয়েছি।

ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনি অন্য কিছুর জন্য দাঁড়িয়েছেন আমি কি একবার ও বলেছি?

ন-না।

এখন বলবো। এতো সাহস নিয়ে কি করে এমন সাধারণ ভাবে বেঁচে আছেন? এতো এতো গার্ড,,সিসিটিভি থাকা সত্যেও এমন জঘন্যতম কাজ করেছেন। আরেকজনের খাতায় কপিকরা পেপার ঢুকিয়ে চুপচাপ নিশ্চিন্তে বসে এক্সাম দিচ্ছেন।

স-স্যার,,,,,,

একদম নেকা কান্না করবেন না।আপনার নাম যেনো কি?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।

রি-রিতা স্যার।

তা রি-রিতা চলে আসুন।

রিতা নামটা শুনে একটা ঝটকা খায় নূর।একঝলক পিছনে বসা রিতার দিকে তাকায়।

রিতা ও নূরের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।যার অর্থ আমাকে বাঁচিয়ে নে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নূর চোখ ঘুরিয়ে এক্সাম দেওয়ায় মন দেয়। ইসরাত ও মুখ ভেংচি কেটে এক্সাম দিতে থাকে।

রিতা সামনে আসলে রিতার খাতাটা হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নেয় সৌন্দর্য। কাম উইথ মি।
বলেই রিতাকে নিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে আসে। ক্লাসরুম থেকে বের হতেই প্রিন্সিপালের সাথে দেখা হয়ে যায়।

নিন এর ব্যবস্থা আপনি নিন।সৌন্দর্য প্রিন্সিপাল কে উদ্দেশ্য করে বলে।

আচ্ছা বিষয় টা আমি দেখছি। আর মেয়েটার সাথে এমন রু’ড বিহেভ না করলেও পারতে।

হোয়াটএভার,,,সি ডিজার্ভ ইট বলেই সৌন্দর্য বেরিয়ে যায়।

এতো ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে পরীক্ষা শেষ করে হল থেকে বের হয় নূর।পিছনে পিছনে ইসরাত। আজ একটা কথা বলার শক্তি ও নেই। পার্কিং সাইড পেরিয়ে গেইটের দিকে যেতে নিতেই শুনতে পায়,,,

হেই স্টপ।

নূর আর ইসরাত কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামলেও আবার চলতে থাকে ভেবেছে হয়তো অন্য কাউকে বলছে।

আই সেইড স্টপ। ডোন্ট ডেয়ার টু টেইক আ সিংগেল স্টেপ।

চলবে,,,,?

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

আই সেইড স্টপ। ডোন্ট ডেয়ার টু টেইক আ সিংগেল স্টেপ।

এবার নূর আর ইসরাত তাদের হাঁটা বাদ দিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর দুইজন ই পিছনে ঘুরে তাকায়।

সৌন্দর্য গাড়ির দরজা খুলে এক হাত গাড়ির দরজাতে আরেক হাত পকেটের ভিতর ঢুকিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ব্রু কোচকে।

ইসরাত সৌন্দর্য কে দেখে খুশি হয়ে যায়। নূর কে রেখেই সৌন্দর্যের কাছে এগিয়ে যায় কথা বলার জন্য। আরেকটা অবশ্য উদ্দেশ্য আছে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তালহা স্যারের খবর নেওয়া। অনেক দিন হয়ে গেলো লোকটা কে দেখে না।এক্সামের চক্করে ফোন ও দেওয়া হচ্ছে না।মন টা কেমন আনচান করছে।ইসরাত সৌন্দর্যের কাছে গিয়েই নাচের ভঙ্গিতে বলে উঠে,,,

হাই পরা স্যার!

সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় মানে?

আপনি স্যার হয়েও মানে জানেন না? আরে আপনি এতো সুন্দর এতো সুন্দর এতো সুন্দর যে পরিদের মতো দেখতে। পরি তো বলা হয় মেয়েদের তাই আপনাকে তো পরি বলতে পারি না তাইনা? তাই অনেক ভেবে চিন্তে পরিদের মেইল ভার্সন পরা বের করেছি।আ’ম সো ইনটেলিজেন্ট ইউ নো? একটু ভাব নিয়ে বলে ইসরাত।

নূর ইসরাতের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।

ইসরাতের এসব উল্টো পাল্টা কথা শুনে সৌন্দর্য বোকা বনে যায়। গাড়ির দরজা থেকে হাত পরে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই নিজেকে সামলে নেয়। ইসরাতের কথায় সৌন্দর্যের দম ফাটা হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে সৌন্দর্য। বেচারা তালহার জন্য খুব মায়া হচ্ছে সৌন্দর্যের।এসব ভাবনার মধ্যেই সৌন্দর্যের নূরের দিকে চোখ যায়। নূর কেমন মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখের অবস্থা করুন। মনে হচ্ছে ভালো মতো খায় ও নি। চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে। সৌন্দর্য বুঝতে পারলো এটা রাত জাগার ফল।

সৌন্দর্য নিজের মাঝে যথাযত গম্ভীরর্যতা এনে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,, এসব কি রকম কথা? আর আমি একজন টিচার ভুলে যেও না। আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলো।ব্যঙের মতো লাফাচ্ছো কেন?

ইসরাত ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,কি স্যার আমি কোথায় ব্যাঙের মতো লাফালাম? এটা আমাদের মেয়েদের সবারই একটু আধটু স্বভাবে আছে বুঝলেন? তারপর নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,, অবশ্য ঐ যে আমার পিছনে একটা রোবট দাঁড়িয়ে আছে সে বাদে।

এরমধ্যে নূরের গলা শুনতে পায়,,, ইসরাত বাড়ি কি যাবি না? আমার ভালো লাগছে না।চল তারাতাড়ি বাড়ি যাই।আর নয়তো তোর দরকার হলে তুই থাক আমি একাই চলে যাই।

এই নূর তুই কি বলছিস? একা বাড়ি যাবি কেন? আমি এখনই আসছি দুইজন এক সাথে যাবো বাড়িতে। চল চল বলেই ইসরাত নূরের দিকে এগিয়ে যায়।

ইসরাত গেইটের বাইরে ব্লাক কালার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঐটায় গিয়ে উঠো আমার ড্রাইভার তোমাকে পৌঁছে দিবে।

কিন্তু স্যার,,,, কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায় ইসরাত। নূরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ভালোই হয়েছে স্যার কে মানা করে লাভ নাই।নূর কে নিয়ে এখন গাড়ি করে গেলেই বরং বেশি ভালো হবে।

ঠিক আছে স্যার অনেক ধন্যবাদ। এই নূর চল আমাদের আর কষ্ট করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে নূরের হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে।

আই থিংক তুমি মনে হয় ভালো করে শুনতে পাও নি ইসরাত।আমি বলেছি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো,,ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। তোমাকে,,, তোমাদের না।

ইসরাত ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,,এসব আপনি কি বলছেন আমি একা যাবো মানে? নূরের কি হবে? তাহলে আমিও যাবো না। নূরকে একা রেখে আপনি ভাবলেন কি করে আমি যাবো?

সৌন্দর্য এবার ইসরাতের কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,, তোমার নূরের চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আর ও কোনো বাচ্চা মেয়ে না যে ছেলেধরা এসে নিয়ে যাবে।অবশ্য লোক অন্য কিছু ভাবতে পারে।লাইক স্পেশাল চাইল্ড। ওপপপস এখন তো আবার চাইল্ড ও বলা যাবে না ভার্সিটি তে পরে এ”ডাল্ট হয়ে গেছে।

সেই যাই বলেন না কেন স্যার আমি আমার বান্ধবী কে একা ফেলে যাবো না। মানে না।

তোমার বান্ধবী আমার সাথে যাবে।শুনতে পেয়েছো?

কিন্তু সে আপনার সাথে কেন যাব,,, বলতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে ইসরাত থেমে যায়।

কি হলো চুপ হয়ে গেলে কেন? তোমাকে ভেঙে নিশ্চই বলতে হবে না ওর আমার সাথে যাওয়ার কারণ।

না মানে ইয়ে,,,

নূর এতোসময় তাকে নিয়ে দুইজনের তর্কাতর্কি নিরব দর্শকের মতো দেখছিলো। তাকে নিয়ে এতকিছু অথচ তার কিছুতে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। না তার মতামত জানার চেষ্টা করছে।

এদের চক্করে নূরের আর আজ বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই এখান থেকে মানে মানে কেটে পরলেই ভালো হবে বলে নূরের মনে হলো। আস্তে ধীরে ইসরাতের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেলে।ইসরাত কথার তালে বুঝতে ও পারে না।

নূর পিছন দিক দিয়ে দৌড় দিতে নিবে এরমধ্যে নিজের হাত কারো হাতের শক্ত বাধনের অস্তিত্ব টের পায়।

বাহ ম্যাডামের মাথায় পালানোর বুদ্ধি ও আছে জানতাম না। গুড ভেরি গুড।কিন্তু এই টেকনিক আমার সাথে না অন্য কোথাও কাজে লাগাবেন। বলেই সৌন্দর্য ইসরাতের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,,,

গুড বায় ইসরাত।হেভ আ সেভ জার্নি।

থাংকু থাংকু পরা।
অল দা বেস্ট দোস্ত। বলেই ইসরাত এক নিমিষেই দৌড় দিয়ে গেইট পার হয়ে চলে যায়।

ইসু আমাকে রেখে যাস না। ইসরাত শোন আমার কথা। ইসরাত!

সৌন্দর্যের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে নূর।কিন্তু এতোই কি সোজা নাকি হাত ছাড়ানো কিছুতেই পারে না।

এসব মোচড়া মুচড়ি করে লাভ নেই। বুঝতেই তো পেরেছো ছুটতে পারবে না তাহলে অযথা কেন শক্তি ক্ষয় করছো? দেখেই তো মনে হচ্ছে এখনই বুঝি পরে যাবে। সো ঝামেলা না করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসো।

আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন? ছাড়ুন আমার হাত। আমার হাত ধরার আপনার কোনো অধিকার নেই। একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টের হাত এমন করে ধরে রেখেছেন কেন?

তোমার স্মৃতি শক্তি মনে হচ্ছে অনেক দূর্বল। হরলিক্স খাওয়াতে হবে। আগে একটা কিনা লাগতো এখন একটার পরিবর্তে দুইটা কিনতে হবে।হাহ্ সবই ভাগ্য।

সৌন্দর্যের কোনো কথায় পাত্তা না দিয়ে নূর শুধু ফোঁপাচ্ছে।

আচ্ছা কি যেনো বলছিলে? অধিকার রাইট? তুমি জানোনা আমার অধিকার? আমি কি করে ভুলে গেলাম এখন ডেমো ছাড়া কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। দিবো নাকি ডেমো যে আমি তোমার কে হই? একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যের কথায় নূর ছিটকে দূরে সরে যায়। তারাতাড়ি ঘুরে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।

ভুলেও সিনেমার মতো ড্রামা করে পিছনের সিটে বসতে যাবে না।

নূর গিয়ে সামনে বসে। এরমধ্যে কেউ পিছন থেকে নূরের চোখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে। নূর ভয় পেয়ে আআ বলে চিল্লিয়ে উঠে।

মাম্মা!!!

নূর হাত ছাড়িয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে,,মাম্মা?

হ্যা বিয়ে করার সাথে সাথে রেডিমেট বাচ্চা ও পেয়েছো। হাও লাকি ইউ আর! বলে সৌন্দর্য গাড়ি চালানো শুরু করে।

চলবে,,,,?