পুনর্জন্ম পর্ব-০৫

0
238

#পুনর্জন্ম🤍
#পর্ব_০৫
#আফিয়া_আফরিন

আহত বিড়ালের মত করুন সুরে ওঁয়াউ ওঁয়াউ শব্দে বিলাপ করছে আবহাওয়া। মোহন থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। না পারছে সামনে আগাতে, না পারছে পিছু হটঁতে। সামনে থাকা কালো ছায়া মানবটি মোহনের দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। মোহন ভড়কে গিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকে পরখ করে নিলো। বোঝা যাচ্ছে না কোনমতেই, কে এটা?

ক্ষী’প্র হরিণের মতো ঝড়ো হাওয়া বেগে এগিয়ে এলো ছায়া মানব টি। পিছু হটঁতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো মোহন।

আগন্তুক এগিয়ে ওর সামনে বসে শার্টের কলার চেপে বললো, ‘ওঠ শা’লা।’

‘কে ভাই তুমি?’

‘তোর মরন দূত!’

‘আমাকে মেরো না। দয়া করো। আমি কি করেছি?’

‘সব অপরাধী অপরাধ করার পর বলে আমি কি করেছি। আর তুই যে কি কি করেছিস তার হিসাব কি হাতে গুনে শেষ করা যাবে? শা’লার নর্দ’মার কী’ট কোথাকার! বড় মুখ করে আবার জিজ্ঞেস করিস তুই কি করেছিস? একটা নির্দোষ নিরপরাধ মেয়ে তোদের জন্য মারা গেলো। বছর দুয়েক আগের কথা মনে নাই, তাওহীদের জন্য অরুনিমার কি অবস্থা হয়েছিলো? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি? তোরাও তো ওকে ইন্ধন যুগিয়েছিস।’

মোহনের চোখে মুখে অজানা আতঙ্কা দেখা দিলো। বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করলো, ‘সত্যি করে বলো কে তুমি? তুমি কি তবে অরুনিমার সেই প্রেমিক?’

‘অরুনিমার কোন প্রেমিক তো ছিলই না। তোরা, সবাই মিলে নাটক সাজিয়েছিস।’

‘তাহলে কে তুমি? অরুনিমা যার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই।’

‘আবারো ভুল। অরুনিমা পালিয়ে যায়নি। ওকে তোরা যেতে বাধ্য করেছিস!’

‘তুমি তাইনা? তুমিই সেই প্র__!’

আর কোন কথা হলো না। ছা’য়ামানব তার হাতে থাকা ছু’রিটা সোজা মোহনের গলায় চালিয়ে দিলো। ফি’ন’কি দিয়ে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

সে মোহনের নিস্তেজ লা’শ টাকে টেনে নিয়ে সেই জীর্ণ কুটিরে রেখে দিলো। যেখানে ময়ূর গলায় দড়ি দিয়েছিলো। তার পাশের নদী তে নিজেকে ফের শুদ্ধিকরণ করে নিলো। আজও কু’কুরের জোরালো ডাক শোনা যাচ্ছে। এরা বোধহয় খুব তাড়াতাড়িই র’ক্তের গন্ধ পায়।
.
.
.
সকালবেলায় বন্ধুদের আড্ডায় মোহনকে আর আলিফকে পাওয়া গেল না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো, আলিফ শহরে তার মামাবাড়ি বেড়াতে গেছে। আর মোহন নিজের বাসায় একাই থাকে, বাইরে থেকে সেটা তালা মারা তাই দেখে তারা ধরে নিলো; হয়তো নিজের গ্রামে গেছে। মোহনের খোঁজ আর গত দুই দিনে কেউ করে নাই।
ফোন করারও প্রয়োজন পড়ে নাই, কারণ ওর গ্রাম অনেক ভেতরের দিকে যেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।

কিন্তু দুইদিন পর জমিদার বাড়ির কাজের মেয়ে ময়লা ফালাতে গিয়ে সর্বপ্রথম মোহনের লা’শটি দেখলো।
লা’শ ইতিমধ্যে পচে গেছে, জোহরা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল। তার চিৎকারেই বাড়ির ভেতরকার মানুষজন বাহিরে এলো এবং মোহনের বী’ভ’ৎ’স লা’শ টা দেখলো।

ডানা ছড়িয়ে বসে লা’শের গায়ে ঠোকর দিচ্ছে কালো কয়েকটা কাক। বুকে ছোপ ছোপ র’ক্তে’র দাগ। খয়রি হয়ে গেছে র’ক্তে’র কালার। খবর ছড়িয়ে পড়লো মুহূর্তেই।
মৃন্ময়ী যখন এসে লা’শটা দেখলো, নাড়ি ভুঁড়ি বোধহয় সাপের মতো কু’ন্ডু’লি পাকিয়ে গেল ওর পেটের মধ্যেই। চারিপাশে থকথকে র’ক্ত। লাল আঠালো র’ক্তে কালো দাগ পড়ে গেছে। লা’শের উপর বসে আছে এক পাল মাছি। আরেক পাল প
উড়ছে আশেপাশেই ভনভন করে।

সবার মুখেই একই প্রশ্ন, ‘এমন নৃ’শং’স খু’ন কে করলো?’
.
.
.
অত্যন্ত জটিল মন জমিদার আলী আকবর সাহেবের। সে বারান্দায় মোরা পেতে বসে আছে। গ্রামের মানুষজন মোটামুটি এবার বেশ ভালোই খে’পেছে।
সে ভীষণ ভালো মানুষ; তবে সেটা এই গ্রামের মানুষের কাছেই। সাধু সেজে রয়েছে প্রতিটি মানুষের কাছে।
সত্যিকার অর্থে অপরাধ জগতে তারা আলাদা একটা কদর আছে। এর আগের বার পুলিশ কে বুঝিয়ে শুনিয়ে অনুপমকে গ্রেফতার করিয়েছে। কিন্তু এইবার? এইবার তো সন্দেহের তালিকায় কাউকে রাখা যাচ্ছে না।

এইদিকে তার বড় বেআইনি ব্যবসা আছে। বেশ কয়েকটা বার ও ক্লাবের মালিক তিনি। বিদেশে অ’স্ত্র পা’চা’র করেছেন সহস্রবার।
তার ক্লাবের ব্যবসাটা ভালো যাচ্ছে না বেশ কিছুদিন যাবত। শহর থেকে বারবার খবর আসছে। সেই চিন্তার সাথে রয়েছে এখন মোহনের খু’ন! এর একটা সুরাহা করা দরকার।

একবার ভাবলেন ক্লাবের আর বারের দায়িত্বটা তাওহিদকে দিয়ে দিবেন। যদিও তাওহিদ এসব বিষয় অত পারদর্শী নয়। তবুও ওকেই দিতে হবে।
তন্ময়কে কোন ভাবেই দেওয়া যাবে না। সে একটু সাধু পুরুষ টাইপের। তন্ময় এসব সম্পর্কে কিছু জানেও না, আর জানলেও কখনোই সাপোর্ট করবে না। তার চেয়ে তাওহীদ ই ভালো।

তিনি তাওহিদকে ভেতর থেকে ডাক পাঠালেন, এমন সময় পুলিশের এসপি অফিসার মহিউদ্দিনের আগমন।

আলী আকবর মুখে হাসি ফুটিয়ে তাকে সাদরে বরণ করলেন। অতিথি রুমে নিয়ে বসালেন। চা নাস্তার ব্যবস্থা করলেন।

এসআই বাঁধা দিয়ে বললেন, ‘এসবের দরকার নেই। আপনার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা কথা বলতে এসেছি।’

‘অবশ্যই বলবেন। কথা কথার জায়গায়। আগে বসুন। চা পানি খান, তারপরেই না সব।’

‘সেসব পরে হবে। আমরা বরং কাজের কথায় আসি।’

‘আচ্ছা বলেন।’

‘সম্প্রতি খু’নগুলোর ব্যাপারে। আপনি নিশ্চয়ই এইটা বুঝতে পেরেছেন যে এটা খু’ন, নিছক কাকতালীয় কোন ঘটনা নয়।’

‘জী জী অবশ্যই। প্রমাণও তো পাওয়া গেছে।’

‘হ্যাঁ। এখানেই কথা। খু’ন যে হয়েছে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। কিন্তু কে খু’ন করেছে তার তো কোনো প্রমাণ মিলে নাই। অনুপম নামের ছেলেটাকে শুধুমাত্র আপনার কথার ভিত্তিতে আমরা অ্যারেস্ট করেছি। একদম কোন প্রমাণ ছাড়াই। আপনি বললেন তাই। অথচ অনুপমের বিরুদ্ধে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কোন প্রমাণ কেউ দিতেও পারে নাই।’

জমিদার সাহেব নিজের গলা খাদে নামিয়ে বললেন, ‘আরে অফিসার! কোন অপরাধী অপরাধ করে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন তো? আর কজনই বা প্রমাণ রেখে যায়? সে এখন জেলে, নিজের হাতে হয়তো খুন করেনি কিন্তু অন্য কাউকে দিয়ে খু’ন তো করাতেও পারে। আপনি ওকে রি’মা’ন্ডে উঠান।’

‘অযথাই উঠাবো? আর এটা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার নয় কি? খাপছাড়া ভিত্তিহীন একটা ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।’

‘দেখেন অফিসার। ভাবনা-চিন্তা করে বুদ্ধি বের করেন। এভাবে ছেড়ে দিলে তো হবে না। একের পর এক খু’ন হয়েই যাচ্ছে।’

এসআই চেয়ারে হেলান দিয়ে, বড় একটা নিশ্বাস ফেললেন।
.
.
.
চার দেওয়ালের মাঝের এই ছোট্ট ঘরটি কিন্তু ভালোই। অদ্ভুত এক শান্তি এখানে রয়েছে। শান্তির কারণ হচ্ছে খোলা আকাশের চাঁদ।
অন্ধকার চার দেয়াল, বড় একটা ভেন্টিলেটর থেকে রাতের আকাশের চাঁদ দেখা যায়। দেখতে ভালই লাগে, সুখ সুখ একটা অনুভূতি হয়। মনে হয়, খুব প্রিয় থেকেও একজন প্রিয় মানুষ ওইখানে রয়েছে।
অনুপম আজও বিষয় নিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের চাঁদের দিকে। হয়তো তার ময়ূরীকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা!
.
.
.
মৃন্ময়ী একা একা বসে আছে। জানালা দিয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখছে। হঠাৎ করেই কি যেন মনে হলো, উঠে দাঁড়ালো। ময়ূরীর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ময়ূরী মারা যাওয়ার পর থেকে ঘরটা আর খোলা হয়নি। জিনিসপত্র যেমন ছিল তেমনি আছে। মা তালা মেরে রেখে দিয়েছে।
মৃন্ময়ী আস্তে করে মায়ের ঘর থেকে চাবি নিয়ে এলো। ঘরটা খুলে ভিতরে ঢুকে, ভেতর থেকে আবার লাগিয়ে দিল।

ময়ূরী সব ব্যাপারে উদাসীন থাকলেও, নিজের ঘরের ব্যাপারে সে বেশ কঠোর ছিল। কোন জিনিসপত্রে কাউকে হাত লাগাতে দিত না। এক কথায় সে নিজের ঘরে অন্য কারো প্রবেশ পছন্দ করত না।

মৃন্ময়ী সামনে এগিয়ে গেলো। এই ঘরের মানুষটার মতো, সবকিছুই এখন স্মৃতি!
অসাবধানবশত হাতের সাথে লেগে একটা বই নিচে পড়ে গেল। বইয়ের ভিতর থেকে একটা চিরকুট বেরিয়ে এলো। চার ভাঁজ করা চিরকুটটা, উপরের লাল কালির লেখা “অনুপম”

কৌতূহলবশত চিঠিটা খুললো এবং পড়া শুরু করলো। যদিও বোনের ব্যক্তিগত বিষয় তাও আবার অনুপম কে লেখা, পড়াটা ঠিক হবে না। তবুও সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না।

‘প্রিয় অনুপম!’
তুমি কি আমার ভালোবাসা নাকি এক বুক কষ্ট? তোমার ভালোবাসা যে আমায় পীড়া দিচ্ছে, বুঝোনা তুমি? কেন বারবার সামনে আসো? কেন বারবার আমার অনুরোধ করো, “আমরা আবার নতুন করে খুব সুন্দর একটা সংসার গড়ে তুলবো ময়ূরী! যেখানে কোন অতীত থাকবে না। শুধু থাকবে আমার ভালোবাসা।”

তুমি কি সমাজ বোঝো না অনুপম? তুমি কি সত্যি পরিবার বোঝনা? বারবার এত কেন ফিরে তাকাও? কেন আমায় দুর্বল করে দাও?
তুমি জানোনা সমাজ আমাদের কখনোই মেনে নেবে না?
আমি মরতে চাই নাই অনুপম। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম তোমার হাত ধরে, তোমার বুকে মাথা রেখে।
কিন্তু দেখো ওরা আমায় বাঁচতে দিল না। সেই দিন তোমার সাথে একটা সুন্দর সংসার গড়ার স্বপ্ন এঁকে ছিলাম। কিন্তু ওরা আমার সেই স্বপ্নকে নিমিষেই ধুলিস্যাৎ করে দিলো।
জানো, তারপরেও আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম আমার সাথে হওয়া এই অন্যায়ের। কিন্তু তুমি তো প্রতিটা মুহূর্তে আমায় দুর্বল করে দিচ্ছিলে। তোমাকে পেয়েও, না পাওয়ার কষ্ট আমায় শেষ করে দিচ্ছিলো।
তবুও বাঁচবো আমি। তোমার ময়ূরীকে ছাড়া তুমি তো থাকতে পারবে না, তাই না? তোমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য হলো আমায় বাঁচতে হবে।
কিন্তু সেই আবারো তুমি, বারবার আমার সামনে চলে আসছো। তোমাকে কতবার নিষেধ করেছি, আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না। আমি পারছি না সহ্য করতে। আমি একান্তই তোমার ব্যক্তিগত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমায় আটকে দিয়েছিলো।
পারলাম না, বাঁচতে পারলাম না। নিজেকে আর বাঁচাতেও পারলাম না। তোমার না হওয়া স্মৃতি গুলো বাঁচতে দিচ্ছে না অনুপম। বড্ড পোড়াচ্ছে আমায়। আমি আর পারছি না। এত কষ্ট নিয়ে একটা মানুষ বাচঁতে পারে, বলো?
আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমায় আদরিনী সব সময় তোমায় ভালোবেসে, সব সময় তোমার পাশেই আছে। আর থাকবেও চিরকাল!’

মৃন্ময়ী চিঠিটা বুকে চেপে কাঁদতে লাগলো। এতক্ষন দম নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছিলো। এতো ভালোবাসা, এতো! কি করে পারলো ময়ূরী সব ছেড়ে, পরাপারে পাড়ি জমাতে?

চিঠিটা হাতে নিয়ে ময়ূরী মেঝেতে বসে পড়লে কাঁদতে কাঁদতে। বললো, ‘তোর অনুপম ভালো নেই রে। তুই নিজেও চলে গেলি ওর ভালো থাকাটাও কেড়ে নিলি। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। তোর অনুপম অযথা খু’নের দায়ে আজ জেলে। ওর কি হবে বলতো?’

এমন সময় রান্নাঘর থেকে বিনীতার ডাক শুনে উঠে গিয়ে চিঠিটা জায়গায় রেখে, চোখ মুখ মুছে বেরিয়ে এলো। দরজা তালা দিয়ে চাবি জায়গায় রেখে মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ডেকেছিলে আমায়?’

‘হ্যাঁ! কোথায় ছিলি?’

‘এমনিতেই। ওখানে।’

ময়ূরীর চোখ ফোলা, দৃষ্টিগোচর হলো না বিনীতার। ওকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘কাঁদছিলি নাকি? কি হয়েছে? সত্যি করে বলতো।’

মায়ের কথা শুনে মৃন্ময়ী ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে ফেলল, ‘মা আমার ময়ূরীর কথা খুব মনে পড়ছে। আমরা ছোটবেলা থেকে হেসে খেলে একসাথে বড় হয়েছি। সত্যি আমি আর পারছি না। আমার কষ্ট হচ্ছে। ওর মতো করে কেউ ভালবাসে না। কেউ শাসনও করেনা। আমারও মাঝে মাঝে ময়ূরীর কাছে চলে যেতে ইচ্ছা হয় খুব করে।’

বিনীতা মৃন্ময়ী কে জড়িয়ে ধরে নিজেও কেঁদে ফেললেন। ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘এমন কথা ভুলেও মুখে আনিস না মা। ময়ূরী চলে গেছে, তুই চলে গেলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো? আমাদেরও তো বাঁচতে হবে নাকি!’

‘কেন এমন করল মা ও? দেখতো অনুপম ভাই এত কিছুর পরেও ওকে বিয়ে করতে চাইছিলো।’

‘আত্মমর্যাদা বোধ বুঝিস? অনুপমকে বিয়ে করলে সব মানুষের কাছে ওর মান সম্মানটা থাকতো?’

‘সব সময় কি মান সম্মানটা জরুরী হয়ে দাঁড়ায়? ভালোবাসছিলো তো। ভালোবেসে তো সমাজ, মানুষজন সবকিছুকে পিছনে ফেলে এক হতেই পারতো। ভালবাসার চেয়ে বড় শক্তি আর কে হয়?’

‘ময়ূরী আর তোর বয়স এক হলেও ওর মধ্যে যা বোধ বুদ্ধি ছিল, তার এক ভাগও তোর মধ্যে নাই। বুঝবি না এসব কিছু তুই।’

মৃন্ময়ী নির্বিকার চিত্তে মায়ের বুকে মাথা গুঁজে পড়ে রইলো।
.
.
.
এসআই মহিউদ্দিন আলী আকবর কে ফোন করে জানিয়েছেন বিকালে একটা বৈঠক ডাকা হবে। চেয়ারম্যান কেও সেখানে আসতে বলা হয়েছে।

বিকেল বেলা সময় অনুযায়ী চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের ছেলে অয়ন, জমিদার সাহেব, তন্ময় উঠানে চেয়ার পেতে বসলো।
এসবের একটা সুরাহা দরকার। এমনি করে তো আর দিন চলতে পারে না। কিন্তু অনেক আলাপ আলোচনা করেও কূলকিনারা পাওয়া গেল না।

জমিদার আগের মতই বললেন, ‘অনুপমকে রিমান্ডে নেওয়া হোক। সমস্ত জারিজুরি বের হয়ে যাবে।’

এসআই বললেন, ‘উপরমহল থেকে নির্দেশ না দিলে তো আর এমনি এমনি কাউকে রিমান্ডে নিতে পারি না।’

চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ‘অযথা এসবের কোন দরকারই নাই। দুই এক দিন বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। দেখেন তারপর কি হয়। খুনি যেই হোক না কেন, সে তো আমাদের গ্রামেরই। পরবর্তী টার্গেট হয়তো কাউকে করে রাখছে।
তবে আমার মনে হয়না অনুপম এসব করছে। সে নিতান্তই ভদ্র পরিবারের ছেলে। আর যদি সে করেও, কি কারনে করেছে তা তো আপনার অজানা নয়?’

জমিদার সাহেব আর কিছু বললেন না।
এস আই ও বিমূর্ত হয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলেন। অয়ন অথবা তন্ময় বড়দের মধ্যে কোন কথা বলল না।

এসআই বললেন, ‘আজ উঠি। আজকের দিনটা সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবো।’

এসআই চলে যাওয়ার পর, চেয়ারম্যান সাহেব আর অয়ন ও বিদায় নিলো।
জমিদার সাহেব তন্ময়ের সাথে বসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় শহর থেকে একটা ফোন আসে।
ফোন ধরতেও ওই পাশ থেকে একটা ছেলে, নাম আরাফাত; তার কন্ঠ পাওয়া যায়।

সে বললো, ‘স্যার আপনি গত মাসে যে অ’স্ত্রগুলো পাচার করতে পারেননি, সেগুলো আজকে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এয়ারপোর্টে এসে ধরা পড়েছে।
.
.
.
.
.
চলবে…….

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]