পুনর্জন্ম পর্ব-০৬

0
235

#পুনর্জন্ম🤍
#পর্ব_০৬
#আফিয়া_আফরিন

আরাফাতের কথা শুনে জমিদার সাহেবের মাথায় নিমিষেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কোটি কোটি টাকার অ’স্ত্র সেখানে। সব জলে গেল।
ধরা পড়ার ভয় তিনি করেন না। একজনকে সামনে রেখে আড়ালে এই কাজ করছেন। তন্ময় সামনে আছে দেখে কিছু বলতেও পারলো না। ছোট্ট করে ‘আচ্ছা’ বলে ফোন কেটে দিলেন।
.
.
.
“রাজিব আর মোহন এর সাথে যা হয়েছে, সেটা তো কেবল একটা ট্রে’লা’র। এরপর তো আসল খেলা শুরু। ও ভালো কথা, বাকি আরো দুই বন্ধু আছে তো তোর। সমস্যা নাই, সময় মত তারাও শেষ হবে।
কথায় আছে না, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। দেখি কে তোকে আমার হাত থেকে বাঁচায়? আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাক। তোর সাথে অবশ্য আমার ময়দানে দেখা হবে। তার আগে হাজার খোঁজ করলেও তুই আমার খোঁজ পাবি না।
তোর সকল পাপের অবসান হবে। একবার ধরতে পারলে ধ’র থেকে মু’ন্ডু আলাদা করে দেবো। তারই অপেক্ষায় রয়েছি আমি!
আরেকবার মনে করিয়ে দিলাম, তৈরি থাক!”

স্প’ষ্ট হু’ম’কি!
তাওহিদ কিছুটা ঘাবড়ে গেল বটে। এটা কি সত্যিই কেউ দিয়েছে নাকি ফাজলামি করেছে? সে আর দেরি না করলো না, একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি গায়েই গঞ্জে চলে গেলো। ক্লাবেই বাকি বন্ধুরা আছে।

সবাইকেই হু’ম’কি বার্তাটা দেখালো। মোটামুটি সবাই ঘাবড়ে গেল। তবে এই ব্যাপারে একদম নিশ্চিত হয়ে গেল যে, এটা আর যাইহোক মজা বা ফাজলামি না। যে বা যারা এই কাজটা করছে, অ’তী’তের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই করছে।
রাজিব আর মোহন কেও খুন করা হয়েছে। তারপরই এই চিঠিটা পাওয়া।
এরপর নেক্সট টা’র্গে’ট, আলিফ, আহাদ আর তাওহীদ।
আর এদের সাথে সম্পর্কিত দুজন মানুষ অরুনিমা এবং ময়ূরী, যাদের সাথে চরম পর্যায়ের বিশ্বাসঘাত’কতা করা হয়েছিলো।
.
.
.
.
ইদানিং রাত আটটা বাজতেই অরুনিমার ঘুম পেয়ে যায়। ন’টার দিকে সেই ঘুম এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, সে চোখ ই মেলে রাখতে পারে না। ঘুম কাটানোর জন্য কত চেষ্টা করে। কোন কিছুই তার বেলা কাজ করে না। প্রণয় না আসা পর্যন্ত জেগে তো থাকতেই হবে। তারমধ্যে শুদ্ধ ও ইদানীং খুব বিরক্ত করছে ঘুম নিয়ে। রাত বাড়লেই যেন ছেলের চোখের ঘুম উড়ে যায়।

আজকেও শুদ্ধকে বহু কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে, নিজে চোখে মুখে পানি দিলো।
এখন বাজে ন’টা বিয়াল্লিশ। আজ বোধহয় প্রনয়ের ফিরতে ফিরতে দশটাই বেজে যাবে।

নাহ, পুরোপুরি ১০ টা অবশ্য বাজলো না আজকে। ন’টা বাহান্ন তেই চলে এলো। এসেই গোসলে চলে গেল।
যাওয়ার আগে অরুনিমা কে বলে গেল ভাত বাড়তে।

গোসল থেকে বের হতেই প্রণয় অরুনিমা কে বলল, ‘আজ তোমাদের গ্রামের ওইদিকে গেছিলাম।’

অরুনিমা বেশ অবাক হলো। তড়িৎ বেগে প্রণয়ের কাছে ছুটে এসে বলল, ‘কেন? কেন গিয়েছো তুমি ওখানে? তোমার কিছু হয় নাই তো? কেউ তোমায় আবার দেখে ফেলে নি তো?’

‘আরেহ না অরু। এত হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেন? কিন্তু একটা ঘটনা ঘটে গেছে।’

‘কি ঘটনা?’

‘মোহন আর রাজীব খু’ন হয়েছে।’

অরুনিমা আরেক দফা অবাক হলো। পরক্ষণেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘নেমক’হারা’মদের এটাই শাস্তি। তাওহীদটা মরলো না কেন? ওর মতো পাপীর বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নাই।’

‘এর মাঝেও আরেকটা খারাপ খবর আছে।’

‘আবার কি?’

‘ময়ূরী আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছে!’

অরুনিমা বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নিমিষেই চোখ ভরে উঠলো নোনা জলে। সে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলো।

প্রণয় ওকে থামানোর চেষ্টা করে বলল, ‘কেদোঁ না অরু। শুদ্ধ উঠে যাবে।’

‘কবের কার ঘটনা এটা? আর কিভাবে হলো।’

প্রণয় যা যা শুনেছে, অরুনিমাকে বলল সব।

‘জানো প্রণয়, মৃন্ময়ী আর ময়ূরী আমার নিজের দুই বোনের মত ছিল। তবে ময়ূরী আমার একটু বেশি প্রিয় ছিল। ঘটনাটা আমি মানতেই পারছি না।
অন্যায়ের শাস্তি কি ওরা পাবে না? তাওহিদ জা’নো’য়া’রটা এখনো বেঁচে আছে? এত কিছু করার পরও কেন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও? আর অনুপম জেলে? এত কিছু হবে আমি যদি জানতাম, তাহলে ওখান থেকে চলে আসার আগেই তাওহিদকে খু’ন করে আসতাম।’

‘এত উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই অরু। পুলিশকে জানানো হয়েছিল তো। জমিদার মশাই গন্ডায় গন্ডায় টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করেছে।’

অরুনিমা চোখ মুছে, প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘আমার বাবাকে দেখলে কোথাও?’

‘না আমি ভিতরের দিকে যাই নাই।’

‘আচ্ছা শোনো, আগামীকাল আমি একবার যাব। চিন্তা করো না, এমনভাবে যাব যাতে কেউ আমাকে চিনতে না পারে। শুদ্ধ কে তোমার কাছে রেখে যাবো। ওকে নিয়ে তো আর যেতে পারব না।’

‘কি বলো? একাই যাবে তুমি?’

‘হ্যাঁ আমি যাবো।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আর শুদ্ধ মিলে তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসবো নি।’

অরুনিমা হঠাৎ কি যেন ভাবলো। তারপরে প্রনয়ের দুই হাত নিজের হাতের মুঠো নিয়ে বলল, ‘আমার না শুদ্ধ কে নিয়ে খুব ভয় হয়। ও ভবিষ্যতে কি করবে? ওদের বংশেরই র’ক্ত যে, শুদ্ধ কি ওদের মতই অমানুষ হবে?’

প্রণয় সামান্য হেসে বলল, ‘ভুল কথা বললে অরু। ওদের র’ক্ত কেন বলছো? আর র’ক্তের টান কেই কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছো? ও জন্মানোর পর কখনো দেখেছে ওর পরিবারের মানুষজনকে? এসব কথা ভুলেও মাথায় এনো না। ও জন্মানোর পর থেকে আমাদেরকে চোখের সামনে দেখ, ওই বাড়ির মানুষের ছায়া কখনো ওর উপর পড়বে না। আমরা কখনই পড়তে দেব না।’

‘আল্লাহর কাছে দোয়া করি শুদ্ধ যেন তোমার মতই হয়। তোমার মত মানুষকে শুদ্ধ বাবা হিসেবে পেয়েছে, এটা তার চরম সৌভাগ্য।
তোমাকে আমি স্বামী হিসেবে পেয়েছি, এটা আমার চরম সৌভাগ্য!
ও তোমার মতোই থাকুক। ওই নি’ষ্ঠুর, স্বা’র্থপর মানুষের নজর ও যাতে কোনদিন ওর ওপর না পড়ে।’
.
.
.
প্রতিদিন রাত বারোটার পর শিশির মৃন্ময়ীদের বাড়ির পেছনে যাবেই। এটা রোজকার রুটিন। মৃন্ময়ী হাজারবার না বললেও, শিশির কখনোই পাত্তা দিত না। অবশ্য ময়ূরী মারা যাওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আর আসা হয় নাই।
আজ আবার এসেছে। পেছনের দিকটা আসলেই ময়ূরীর ঘরের জানালা দেখা যায়। এখন অবশ্য জানালা বন্ধই থাকে।
যখন ময়ূরী বেঁচে ছিল, তখন তাদের প্রেম করাটা বড্ড রিস্কের ছিল। এমনও দিন গেছে, ময়ূরীর নাকের ডগায় বসে দুজন প্রেম করেছে। অথচ ময়ূরী টেরই পায়নি। ময়ূরী বেঁচে থাকতে, অনেক কাহিনী করে এই জায়গাটা পাড়ি দেওয়া লাগতো। কিন্তু আজকে আর সেসব হলো না।
এক নিমিষেই চলে এলো। কত রাত দুজন জানালায় মাথা ঠেকিয়ে গল্প করেছে তার হিসেব নেই।

মৃনয়ীর সাথে তার সম্পর্ক প্রায় চার বছরের। চার বছর আগে কিছু না বুঝেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিল শিশির। তারপর কত চড়াই উতরাই পার করেছে। কতবার সম্পর্ক ভেঙে গেছে। কিন্তু কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যাবার কথা মাথায় আনে নাই।
আজকালকার যুগের প্রেম তো কথায় কথায় ব্রেকআপ হয়ে যায়। সেই দিক থেকে তাদের সম্পর্ক এখনো টিকে গেছে। এখন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুজনের সম্পর্কটা টিকলেই হলো।

মৃন্ময়ী বলেছিল একদিন, ‘মৃ’ত্যু ছাড়া তুমি আর আমি কখনোই আলাদা হবো না। আলাদা হওয়া সম্ভব না।’
মৃন্ময়ীর কথায় ভরসা পেয়েছিল শিশির।

মৃন্ময়ী মেয়েটা দেখতে আহামরি টাইপের সুন্দরীও না। ময়ূরী আর মৃন্ময়ী জমজ বোন, দেখতে এক রকম হলেও গায়ের রং ছিল আলাদা দুজনের। ময়ূরী ছিল ধবধবে ফর্সা। মৃন্ময়ীর গায়ের রং শ্যামলা ধাঁচের।
এই মেয়ের প্রেমে পড়ার মধ্যে কেমন কোন বিশেষত্ব নেই। তবু শিশির পড়েছিলো। প্রচন্ড ভালোও বাসে। মৃন্ময়ী আর শিশির কেউ কাউকে ছাড়া দূরে থাকতে পারে না।
.
.
.
আজ শিশির হঠাৎ করেই চলে এসেছে, মৃন্ময়ীকে না জানিয়েই। পেছনদিকে এসে জানাল ঠক ঠক করে বলল, ‘মৃন্ময়ী!’

শিশিরের গলার আওয়াজ পেয়ে মৃন্ময়ী জানালা খুলে দিলো।

শিশিরকে দেখা মাত্রই বলল, ‘কি ব্যাপার? কোথায় থেকে উদয় হলা?’

‘আমার কথা ছাড়ো। তোমার খোঁজ পাচ্ছি না কেন? প্রতিদিন বিকেলবেলা বাঁশ ঝাড়ের পেছনে পুকুর পাড়ে অপেক্ষা করি। তোমার তো দেখাই পাওয়া যায় না। ভুলে গেছো নাকি?’

‘হ্যাঁ ভুলে একদম ভোলানাথ হয়ে গেছি।’

‘কষ্ট পেলাম প্রচুর।’

‘মা আমার আগের মত আর বাইরে বের হতে দেয় না। তাই তোমার সাথে দেখাও করতে পারিনা। এমনকি রাতের বেলা আমার সাথেই ঘুমায়।’

‘এ বাবা, এখন আছে নাকি ভিতরে?’

‘না আসে নাই এখনো। বাবাকে খেতে দিছে, খাওয়া-দাওয়া শেষ হলেই এসে হাজির হবে।’

‘এ তো দেখি মহাবিপদ!’

‘কি করবো বলো? আচ্ছা শোনো কাল বিকালবেলা ওখানে অপেক্ষা করো। আমি যাব ওখানে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আজ কি চলে যাব?’

‘হ্যাঁ যাও। কাল তো দেখাই হচ্ছে।’

‘আচ্ছা।’
বলেই শিশির জানালার বাইরে থেকে মৃন্ময়ীর গালে হাত ছুঁয়ে চলে গেল।
.
.
.
সকাল সকাল অরুনিমা রেডি হচ্ছিলো। আজ নিজের গ্রামে যাবে একবার। অনেক, অনেকদিন পর। কত স্মৃতি সেখানে! নিজের বাবা, ভাই বোন, কতগুলো চেনা মুখ! ভাবতেই আনন্দ লাগছে। আবার একপ্রকার চাপা দুঃখ ও হচ্ছে, তাদের কাউকে নিজের পরিচয় দিতে পারবে না।

অরুনিমা নিজেকে একটা কালো বোরখায় আবৃত করে নিলো। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে কেমন যেন প্রচুর অসহায় লাগছে।
নিজের গ্রাম, নিজের জন্মস্থান, নিজের মানুষগুলোকে দেখতে যে কোনদিন এমন ছদ্মবেশ ধরতে হবে, এটা কে জানতো?

ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো। প্রণয় শুদ্ধ কে কোলে নিয়ে পাখি দেখাচ্ছিলো। বাপ ছেলের এই বন্ধন টা ভালই লাগে। তবুও বুক চিরে আরেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল অরুনিমার।

ছেলের নিজের বাবাই অস্বীকার করলো। আর প্রণয় নিজের ছেলের মতো করেই বুকে আগলে ধরলো।
পৃথিবীতে কত রকমেরই না মানুষ আছে। ভাগ্যিস সে সেদিন মরে যায়নি, না হলে প্রণয়ের ভালোবাসার থেকে বঞ্চিত হতো যে!
বর্তমানে এমন একটা অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, প্রণয়ের জন্য সে নিজের জানও কোরবান করে দিতে পারে।

প্রণয় ওকে দেখা মাত্রই বললো, ‘চলো এইবার। আর কত দেরি করবে।’

‘হ্যাঁ চলো।’

তিনজনে মিলে কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামের দিকে চলে এলো। প্রণয় আর শুদ্ধ অরুনিমা কে এগিয়ে দিয়ে ফিরে গেলো।
অরুনিমা প্রথমেই নিজের বাড়ির দিকে গেলো।
উঠোনেই দেখতে পেল বাবাকে। যদিও সে অনেকটা দূরে, তবুও চোখের দেখা দেখে নিলো।
সেই আগের মতই আছে। শুধুমাত্র বয়সটা একটু বেড়েছে। কিন্তু দুই বছরে আর কতই বা বাড়বে? তবুও বয়সের ছাপ পড়ে গেছে চেহারায়।

অরুনিমা আশেপাশেও তাকালো। যদি ভাইকে একটাবার দেখা যায়। কিন্তু তার আর দেখা পাওয়া গেল না।

ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ময়ূরীদের বাসার সামনে, পলাশীদের বাসার সামনে, নুপুরের বাসার সামনে অর্থাৎ বাল্যকালের বন্ধু যারা ছিল; তাদের সবার চৌকাঠ থেকেই ঘুরে এলো।

সবাই কি সুন্দর ভালো আছে! তার শূন্যতা কি কাউকে পোড়ায় না?
.
.
.
বিকেলের একটু আগেই মৃন্ময়ী নদীর পাড়ে গিয়ে বসলো। শিশির এখনো আসে নাই।

গ্রাম গঞ্জের মানুষ এই জায়গাটাকে ভু’তু’ড়ে ভাবে, অকারনেই।
তাই এই দিক টায় কেমন কারো যাওয়া আসার নেই। রবিবার গঞ্জে হাট বসে। সেই হাটে যাওয়া আসার দিনই শুধু ভিড় হয় এখানে। তাছাড়া প্রায় দিনে জনমানবশূন্য!

মৃন্ময়ী বসে বসে পুকুরে ঢিল ছুড় ছিল। এমন সময় তড়িৎ গতিতে শিশির পাশে এসে বসলো। হাতের লাল টকটকে জবা ফুলটা কানে গুঁজে দিলো।

মৃন্ময়ী ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, ‘কি ব্যাপার? এমন তাড়াহুড়ো করছ কেন?’

‘এই যে দেরি করে ফেললাম আসতে।’

‘তা তো অবশ্যই। দেরি কেন করলে?’

‘অনুপম ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেল।’

‘অনুপম ভাই মানে?’

‘আজ ই জেল থেকে বের হলো। ওর বাবা গিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসছে।’

‘ও আমি তো জানতামই না।’

‘এই তো কিছুক্ষণ আগের কথা।’

মৃন্ময়ী আলতো করে শিশিরের ঘাড়ে মাথা রাখলো। গল্প করতে লাগল অনেকক্ষণ পর্যন্ত। শিশির ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।

তন্ময় এই পথ দিয়েই বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎই চোখ আটকে গেল ঐদিকে। একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল সবটা। দৃষ্টিগোচর হলো না কিছুই। মৃন্ময়ীর পাশে কাউকে দেখলে হিংসে হয়। খুব হিংসে। পাশাপাশি খারাপ লাগাও কাজ করে। অপ্রকাশিত ভালোবাসার মানুষের পাশে আরেকজনকে দেখলে খারাপ লাগার কি আছে? এটাই বুঝে উঠতে পারে না তন্ময়। তবুও তার খারাপ লাগে।

মৃন্ময়ী উঠলো। বাসায় যেতে হবে এখন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বাবা বাড়ি ফিরে এসে না দেখলে আবার বকাবকি করবে।
মৃন্ময়ীর পাশাপাশি শিশির ও উঠে দাঁড়ালো।

ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ভালোবাসি!’

মৃন্ময়ী উত্তর না দিয়ে খুব শক্ত করে শিশিরকে জড়িয়ে ধরলো। শিশিরের হাত টেনে নিয়ে নিজের কোমরে রাখলো। শিশির খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতটাই জোরে জড়িয়ে ধরেছিল যে, মৃন্ময়ী ‘উহ’ করে উঠলো।

সে শিশিরের পিঠে দুইটা ঘু’ষি দিয়ে বললো, ‘ফা’জিল, এত জোরে কেউ জড়িয়ে ধরে?’

শিশির মুচকি হেসে বললো, ‘আমি ধরি।’
.
.
.
মৃন্ময়ী বাড়ি ফিরতেই দেখে বাবা ফিরে এসেছে। সে ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকলো। আজ নির্ঘাত বকা খেতে হবে।

মৃন্ময়ী পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে যাবে, অমনি তার বাবা ডাক দিল।
মৃন্ময়ী কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ বাবা।’

‘কই যাওয়া হয়েছিল শুনি?’

মৃন্ময়ী মিথ্যে বললো, ‘সাথী আপুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম।’

‘ও। সারাদিন এত বাহিরে ঘোরাঘুরি করিস কেন? ঘরে থাকতে কি হয়। বাহিরে কম করে যাবি, এখন থেকে।’

‘আচ্ছা।’

মৃন্ময়ী চলে যেতে নিলো। এমন সময় ওর বাবা পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘তোর বিয়ে ঠিক করে আসলাম।’
.
.
.
.
চলবে…..

[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]