পুনর্জন্ম পর্ব-১০

0
216

#পুনর্জন্ম🤍
#পর্ব_১০
#আফিয়া_আফরিন

শিশিরের কথাটুকু বলতেই যা সময় লাগলো, পিছন থেকে মাথায় আঘাত পেতে সামান্য টুকু সময়ও লাগলো না। জলিল নামের ব্যক্তিটি, শিশিরের কথা শোনা মাত্রই ওর মাথায় একটা লা’ঠি দিয়ে আঘাত করলো। শিশির সাথে সাথেই সেখানে অ’জ্ঞা’ন হয়ে পড়লো।

তাওহীদ অবাক হয়ে বললো, ‘আরে ভাই এটা কি করলে?’

‘যা করেছি ঠিক করেছি। ও এই সমস্ত কারবার দেখে গেছে। যদি গ্রামের সবাইকে গিয়ে বলে দেয়।
পুলিশে জানাজানি হলে তুমি, আমি, তোমার বাপ সব গা’রদে।’

‘তাহলে ওকে নিয়ে এখন কি করবা?’

‘আপাতত এই বাড়ির মধ্যে রাখি। তোমাকে আর আজকে গ্রামে ফিরে যেতে হবে না। এমনিতেই তোমার বিরুদ্ধে পুলিশ প্রমাণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। দু একদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকো। আজকে রাত এখানেই থেকে যাও। আর শিশির কেও এখানেই রাখো। আমি ফিরে গিয়ে ব্যাপারটা তোমার বাবাকে জানাই। দেখি সে কি সিদ্ধান্ত নেয়?’

‘আচ্ছা। আপনি ফিরে যান। এই দিকের ব্যবস্থা আমি করছি।’

জলিল ফিরে যাওয়ার আগে, তাওহীদের সাথে শিশিরকে টেনে নিয়ে ভিতরে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখলো। আঘাতটা বেশ ভালোই লেগেছে। মাথার এক সাইড থেকে র’ক্ত বেরোচ্ছে।

জলিল যাওয়ার আগে তাকে ডেকে বলল, ‘এ আবার ম’রে টরে যাবে না তো? অবস্থা তো দেখি খুব একটা ভালো না। ম’রে গেলে তো আরেক সর্বনাশ।’

‘আরে ধুর। ম’রলে ম’রুক। ল্যা’টা চুকে গেল একেবারে।’

‘আমার কিন্তু ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। এদিকে পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ করছে। এইদিকে শিশির যদি মা’রা যায়, তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো তুমি?’

‘সবাই জানবে কিভাবে? কে জানে যে শিশির এখানে ম’রে পড়ে আছে? আর এসবের হচ্ছে কই মাছের প্রাণ, এত সহজে ম’রবে বলে মনে হয় না। দেখো তুমি, থাকো আজকের দিনটা। যা হয় আমাকে ফোনে খবর জানিও।

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি গ্রামে ফিরে গিয়ে কাউকে এখানে পাঠিয়ে দিও। আমি একা একা থাকতে পারবো না।’

‘হার্ট এত দুর্বল নিয়ে এত কাহিনী করছো তাওহীদ বাবা?’

‘বেশি প্যাচাল পারবা না তো। যাও এখন তুমি। সারাদিন শুধু জ্ঞান দেওয়া।’
.
.
.
জলিল গ্রামে ফিরে এসে রাকিব নামের এক ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো তাওহীদের কাছে। আর জমিদার আলি আকবর এর কাছে এসে বললো, ‘জমিদার সাব, সর্বনাশ একখান ঘটে গেছে।’

‘কী সর্বনাশ?’

‘আপনার ঐ অ’স্ত্র নেওয়ার সময় শিশির নামে ঐ ছেলেটার চোখে পড়ে গেছে।’

জমিদার সাহেব অবাক হলেন প্রচন্ড। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।

ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন, ‘তোমাদের বলেছিলাম কাজগুলো গোপনে করতে। প্রকাশ্য এলো কীভাবে? আমি কাজে না থাকলেই বড়ো গ’ন্ডগোল করো তোমরা। একটা কাজ ও সফল ভাবে তোমাদের দিয়ে হয় না। এখন লোক জানাজানি হবে। তারমধ্যো এই নতুন অফিসার বহুত তেজী। তাকে তো দেখানো যাবে না। ইতিমধ্যেই, সে তাওহীদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।’

‘সাহেব আমরা শিশিরকে ওই পৌড়বাড়িতে আটকে রেখেছি।’

‘বাহ: তাহলে তো একটা কাজের কাজ করেছো।’

‘কিন্তু ওকে কি করবো? ছেড়ে দিলে তো বলে দিবে মনে হয়। কোনভাবে কি ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করাবো?’

‘তোমার কি মনে হয় ওকে ভয় দেখালে ও ভয় পাবে। অনুপম আর শিশির একই। একই র’ক্ত যেনো গায়ে দুজনের। ওরে ভয় দেখিয়ে কাজ নেই। তার চেয়ে বরং আরেকটা কাজ করো।’

‘কি কাজ?’

‘মেরে ফেলো। লা’শটা ওই পৌড় বাড়িতে কোন এক ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে দাও। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাবে না। পুলিশের কাছে ওর নিখোঁজ হওয়ার জন্য ডায়েরি করাবে হয়তো ওর মা-বাবা। করুক, আমাদের কি? পুলিশ কেন, পুলিশের বাপ ও জানতে পারবে না এই কথা।’

‘এইটা একটা কাজের কথা বলছেন জমিদার সাহেব। পথের কাঁ’টা কখনো বিছিয়ে রাখতে হয় না, উপরে ফেলতে হয়।’

‘ যাও। তাওহীদ কে বলে দাও। আর তন্ময়ের কাছ থেকে দশহাজার টাকা নিয়ে যেও। ওকে বলে রেখেছি।’

জলিল ‘আচ্ছা’ বলে খুশি খুশি মন নিয়ে চলে এলো।
.
.
মৃন্ময়ী বিকেল বেলা শিশিরের জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু অনেকক্ষণ পার হওয়ার পরও শিশির এলো না।
মৃন্ময়ী একবার ভাবলো, ‘ওকে যে কাল রাতে আসতে মানা করে ছিলাম তাতে কি রাগ করেছে নাকি? আমি তো ভালোর জন্যই বলেছিলাম।’

মৃন্ময়ী আরো বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। শিশিরের বাড়ির সামনে ঘুরে পর্যন্ত এল। কিন্তু ভিতরে ঢুকলো না ব্যাপারটা খারাপ দেখায়।
.
.
.
আকাশে বিশাল ধূসর বর্ণের চাঁদ উঠেছে। আজ হয়তোবা পূর্ণিমার রাত। অরুনিমা জানালার সাইডে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুনছে। শুদ্ধ ঘুম থেকে উঠেই মা মা করছে। কিন্তু ওই দিকে খেয়াল নেই অরুনিমার। বারবার চোখের সামনে বাবার চেহারা ভেসে উঠছে। আর ক্ষ’ণে ক্ষ’ণে চোখ ভিজে উঠছে।

খুব ইচ্ছে করে সেই আগের সময়টাই ফিরে যেতে। এখন আর টাইম মেশিন নেই তাই না, থাকলে অরুনিমা ঠিকই নিজের সেই সময়টাই ফিরে যেতো।
বাবার বড়ো আদরের মেয়ে ছিল সে। ভাইয়ের বড়ো আদরের বোন। মা মারা গিয়েছিল সেই ছোটবেলায়। বাবা আর ভাই কখনোই মায়ের অভাবটা বুঝতে দেয়নি, বুকে আগলে বড় করেছে। কত রঙিন ছিল সেই দিনগুলো। ময়ূরী, মৃন্ময়ী, শিউলি কত স্মৃতি তাদের সাথে। সবাই মিলে কত আনন্দ করেছে। আর আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেই মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলেছে।
তাদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো যে বড্ড পো’ড়ায়। বিশেষ করে সেদিন অর্থাৎ গ্রাম থেকে ফিরে আসার পর, বাবাকে এক নজর দেখার পর, কোন কিছুতেই মন বসছে না অরুনিমার। বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে ফিরতে পারছে না, এখানে থাকতেও পারছেনা।

বারবার শুধু মনে হচ্ছে, বাবার কাছে গেলে বাবা আবার যদি ফিরিয়ে দেয়? দূর দূর করে যদি তাড়িয়ে দেয়? তখন কি হবে? সেই দিনের মতো যদি ফের ভুল বোঝে? তখন অরুনিমা কি করবে?

অরুনিমার মন খারাপ প্রণয় ও ইদানিং লক্ষ্য করছে। কিন্তু কি বা করবে সে?
অরুনিমার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে। তবুও সে যতই আনন্দে উল্লাসে থাকুক না কেন; নিজের বাবা ভাইকে দেখার জন্য, তাদের থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য চাতকের ন্যায় তৃ’ষ্ণা’র্ত অরুনিমা।

প্রণয় সিদ্ধান্ত নিলো, আজ রাতে ব্যাপারটা নিয়ে অরুনিমার সাথে আলোচনা করবে। অরুনিমা কে রাজি করাবে নিজের বাবার সাথে সামনাসামনি দেখা করার জন্য।
তাই একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এল সে। বাসায় ঢুকতেই শুদ্ধ বাবা বাবা করে লাফিয়ে উঠলো।
প্রণয় শুদ্ধকে কোলে নিতেই শুদ্ধ আধোবুলিতে উচ্চারণ করলো, ‘বাবা, মা আতকে (আজকে) তান্না (কান্না) তরচে (করছে)।’

প্রণয় তৎক্ষণাৎ কিছু বললো না। শুদ্ধ কে খাটে বসিয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি খেলা করো বাবা একটু পরেই আসছি।’

‘আততা (আচ্ছা)।’

অরুনিমা রান্না করছিলো। প্রণয় রান্নাঘরে এসে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। অরুনিমা তখনও ওকে দেখে নাই।

প্রণয় ধীরকন্ঠে বললো, ‘অরু।’

অরুনিমা পেছনে তাকিয়ে বললো, ‘ ও তুমি চলে এসেছো। ভিতরে বসো, রান্না হলেই খেতে দিচ্ছি।’

‘এত দেরি করে রান্না করছো আজকে?’

‘ওই আর কি, একটু দেরি হয়ে গেলো। তবে রান্না প্রায় শেষের দিকে। তুমি গরমের মধ্যে না থেকে ঘরে যাও।’

‘এই গরমের মধ্যে তুমিও তো দাঁড়িয়ে আছো এখানে। আমি থাকলে সমস্যা কি?’

‘রান্নাটা তো আমিই করছি তাই না?’

‘আচ্ছা একটা কথা বলতাম তোমাকে।’

‘বলে ফেলো।’

‘কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না?’

‘এমন ভাব করতেছো যে মনে হয়, তুমি আমায় প্রথম প্রপোজ করতে আসছো! এত ফর্মালিটি না করে সোজা বলে ফেলো।’

‘হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছো। আরেকবার প্রপোজ করে ফেললে মন্দ হয় না।’

‘কথা পেঁচিয়ো ও না। কি বলতে আসছো সেটা বলো।’

‘তুমি কি তোমাদের গ্রামে আরেকবার ফিরে যাবে। না মানে তোমার বাবার সাথে একটু দেখা করে আসো। বেশ কদিন ধরে দেখছি তুমি খুব আ’পসে’ট। যাবে কি?’

অরুনিমা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

তারপর বললো, ‘যাও তো তুমি। তোমার সাথে কথা বলতে গেলে আমার তরকারি পু’রে ক’য়লা হয়ে যাবে। যাও এখন।’

‘আমার কথা শুনবে না?’

‘একেবারে শুনবো না যে, তা নয়। তবে ভেবে দেখবো।’

প্রণয় আর কথা বাড়ালো না। ফিরে এসে শুদ্ধর পাশে বসলো।
.
.
.
শিশিরের জ্ঞান ফিরে এসেছে। তাওহীদ ওকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে। নড়তে পারছে না।

তাওহিদ ওকে দেখে বললো, ‘ এত তিরিং বিরিং করো না ভাই। একটা প্রবাদ বাক্য মনে আছে তো, পিপিলিকার পাখা গজে মরিবার তরে।’

শিশির আহ’ত গলায় বললো, ‘পানি।’

তাওহীদ ক্রু’দ্ধ গলায় বললো, ‘পানি নয়, তোমার মাথার খুলিতে একটা বুলেট পাঠাবো আমি।’

শিশির বেশ কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবারও বললো, ‘পানি।’

তাওহিদ বিরক্ত হয়ে বললো, ‘রাকিব ভাই বোতলে পানি আছে দিয়ে যান তো। কেউ পানি চাইলে নাকি না করতে হয় না। বেচারার শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করি।’

তারপর শিশিরের দিকে চেয়ে বললো, ‘তোমায় পানি দেওয়া হচ্ছে। পানি খেয়ে চুপচাপ মা’রা যাবা। তোমাকে তো গুলি করে মারতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা বোধহয় হবে না। ওই জলিল বে’হু’দ্দা শা’লা এত জোরে মাথায় মারছে, মনে হচ্ছে সভ্য মানুষের মতো র’ক্ত’ক্ষ’রণে মারা যাবে তুমি।’

রাকিব শিশিরের হাতের বাঁ’ধন খুলে দিলো। পানির বোতল আর দু টুকরো রুটি এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘নাও। মনে রেখো এটাই তোমার শেষ খাওয়া। তুমি বর্তমানে আমাদের শ’ত্রু। আমাদের গোপন কাজ তুমি জেনে গিয়েছো। এখন তোমার এত সেবা আমরা করতে পারবো না।’

রাকিব এসে তাওহীদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ওকি এভাবে মারা যাবে? এক গুলিতে খেল খতম করে ফালাও!’

তাওহীদ স্বজোরে হাসতে হাসতে বললো, ‘কাল সকালে গ্রামে যাবেন। ওর প্রেয়সি কে খবর দিয়ে নিয়ে আসবেন। ওর সামনে একে মা’রবো। মেয়ের মুখে খুব বড় বড় কথা। কথাটাই সারা জীবনের জন্য বন্ধ করে দিবো। মাঝরাতে আমাদের এসে ভূ’তের ভয় দেখায়। আপনি কাল ওকে ডেকে নিয়ে আসবেন রাকিব ভাই।’

সেই ভয়াবহ রাতটা কেটে গেলো। সকাল হতেই রাকিব গ্রামের ফিরে এলো। মৃন্ময়ীকে গিয়ে বললো শিশিরের কথা। মৃন্ময়ী আগে পিছে কোন কথা না ভেবে চলে এলো।

মৃন্ময়ীকে দেখে যেন শিশির সম্বিৎ ফিরে পেল। মৃন্ময়ী করা চোখে তাকদীরের দিকে তাকাতেই দেখল সে অ’স্ত্র উপরে তুলেছে। মৃন্ময়ীর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে।
যখন সে ব্যাপারটি বুঝতে পারলো, তখন ভ’য়ঙ্ক’র আত’ঙ্কে শরীরের সমস্ত শ’ক্তি দিয়ে ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে বললো, ‘না-না-নাহহহহ।’

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বন্দুকের বুলেটটা যেই মুহূর্তে শিশিরকে আঘাত করেছে, সেই আঘাতে যেন মৃন্ময়ীর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠেছে।

মৃন্ময়ীর মনে হলো সমস্ত পৃথিবী সৃষ্টি জগত যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। সময় বুঝি ঘড়ির কাঁটায় আটকে গেছে। শিশির দুই হাতে দেয়াল আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। বুকের কাছাকাছি শার্ট মুহূর্তেই লাল রং ধারণ করেছে।
ওরা দেখলো শিশির খুব ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে।

এরিমধ্যেই যেন অনন্তকাল পার হয়ে গেছে। মৃন্ময়ী ছুটে যেতে থাকে শিশিরের দিকে। কিন্তু মনে হয় সে বুঝি কখনোই তার কাছে আর পৌঁছাতে পারবে না।

মৃন্ময়ী শিশিরের দুই হাতে চেপে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। শিশির কিছু একটা বলতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। ফের ওর ঠোঁট দু’টি নড়ে উঠলো। কিছু একটা বলছে সে কিন্তু মৃন্ময়ী শুনতে পাচ্ছে না।

শিশির ফিসফিস করে বললো, ‘এ জন্মে তোমাকে আর আমার পাওয়া হলো না।’

মৃন্ময়ী শিশিরের মাথাটা বুকে চেপে ধরে বললো, ‘নাহ নাহ। এমন কথা বলো না প্লিজ।’

শিশির বললো, ‘তুমি আমার দিকে তাকাও।’

মৃন্ময়ী তাকালো।

শিশির বললো, ‘আমার দৃষ্টি ক্রমশই ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি যতক্ষণ দেখতে পারি, তোমাকেই দেখতে চাই। তুমি চোখ ফিরিয়ে নিও না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকো।’

মৃন্ময়ী অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে রইলো।
শিশির প্রায় শেষ মুহূর্তে ওর হাত ধরে বললো, ‘জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। ভালো থেকো।’

ব্যাস, থেমে গেলো নিঃশ্বাস। তাওহীদ আর রাকিব আগেই চলে গিয়েছিলো।

শিশির কে নিস্তেজ হতে দেখে, মৃন্ময়ী কোনো কিছু ভাবনার অবকাশ পেলো না। চোখের পানি মুছে বাইরে বেড়িয়ে এলো।
শিশিরের হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছে, মৃন্ময়ী ও বুঝতে পেরেছে। কিন্ত তাকে বাঁচানোর আশায় বাইরে বেড়িয়ে এলো; যদি কারো সাহায্য পাওয়া যায়।

একটু আগাতেই অনুপম কে দেখতে পেলো। হ্যাঁ, অনুপম ই তো। সে শহর থেকে ফিরে এসেছে।

মৃন্ময়ী কে পাগলের মতো দৌড়াতে দেখে, অনুপম ছুটে এলো।

মৃন্ময়ী কে দেখে বললো, ‘কী হইছে? এরকম পাগলের মতো দৌড়াচ্ছো কেন? এদিকে কি করছো তুমি?’

মৃন্ময়ী কোনো কথা বলতে পারলো না। পৌড়বাড়ির দিকে ইশারা করে বললো, ‘শি-শিশির!’

আর বলতে পারলো না। অ’জ্ঞা’ন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
.
.
.
.
.
চলবে…..