পুষ্প কন্যার প্রেম পাবক পর্ব-০৭

0
151

#পুষ্প_কন্যার_প্রেম_পাবক
#পর্ব৭
#রাউফুন

(১৮+ এলার্ট)

‘আর তুমি কি জানো? তুমি একটা লাগামহীন ঘোড়া। বেয়া’দব ,ভেড়া পোলা! আমি সম্পর্কে তোমার শশুর, আর তুমি আমাকে নিয়ে আড়ালে নিন্দে করতেছো? এই তোমার শিক্ষা,এই তোমার সংস্কার! ভেবেছিলাম কি আর হলো কি!’

বলেই বিড়বিড় চলেন গেলেন আজিজ সাহেব। শশুরকে প্রস্থান করতে দেখেই ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো তুষার।

‘উফফ জানে বেঁচে গেছি এই অনেক। আর এই খানে থাকা যাবে না। থাকলে তোমার চেয়ারম্যান, বাঘ বাপ সব সময় চোখেই গিলে খাবে আমায়। আমি আর নেই এই বাড়িতে।’

ঋতু সাপের মতো হিসহিসিয়ে তেড়ে গেলো তুষারের নিকট! দাঁতে দাঁত চিপে বললো,

‘চুপ করুন তুষার। আব্বা কি মনে করলেন হ্যাঁ? নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গেই কথা বলতে আসছিলেন, না হলে তো তিনি আসবেন না। এরপর আপনার এতো সব কথা শোনার পর আর কথা বলবে আব্বা? আমি জানি আব্বার মন পাওয়া কতটা কঠিন। হইতো সবে সবে মনটা গলেছিলো আপনার প্রতি আর এখনি এসব বলে সব কিছুতে জল ঢেলে দিলেন। এই মুখে কি একটুও কথা বাঁধে না? আড়ালে হোক আর সামনে, আপনি আমার আব্বার নামে নিন্দে করবেন? যতই হোক উনি তো আপনার গুরুজন!’

‘যখন তোমার বাপের সম্মন্ধে ভালো ভালো কথা বলি,তখন তো শুনে না, কি একটু বদনাম করেছি তখনই এসে হাজির। ধুর ভাল্লাগে না। আমি যামু গা কাল তোমার বাপরে বইলা রাজি করাও যাও! আমি আর এক মুহুর্ত এই বাঘের মুখে থাকতে চাই না। চোখ তো না যেনো মার্বেল একেকটা, ইয়া বড় বড় চোখ গুলা গরুর মতো লাল, আল্লাহ কি দাপট, এক্কেবারে ক্ষ্যাপা শেয়াল!’

ঋতু ঘুরেই কিছু বলার জন্য হাত উঠাই, কিন্তু সে হতবাক হয়ে গেলো দরজার কাছে আবার বাবাকে দেখে৷ আমতা আমতা করে বলল, ‘আব্বা, কিছু কইবেন? ভেতরে আসেন!’

তুষার আবার জমে গেলো। দরজার দিকে একবার তাকিয়ে চট করে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। বুকে হাত দিয়ে আড় চোখে বার কয়েক দেখলো। আজিজ সাহেব গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে রইলেন, ভেতরে এলেন না। দরজার কাছে দাঁড়িয়েই কাঠ কাঠ কন্ঠে বললেন,

‘তোর মায়ের থাইকা শুনলাম, তোরে নিয়া নাকি আলাদা বাসায় যাবো গা তোর নঁদের চাঁদ? ঋতু, তোর এই নঁদের চাঁদরে কইয়া দে, সে গেলে যেনো একলাই যায়। আমি আমার দুই মাইয়ারে ছাইড়া থাকবার পারি না। তাই যদি আমার মাইয়ার লগে সংসার করবার চাই তয় আমার বাড়িতেই থাহন লাগবো! আর এক খান কতা, যদি এতোই সম্মানে লাগে তাইলে এই কথাও কইয়া দে এই বাড়িতেই থাইকা যেনো আলাদা ভাবে সংসার বাঁনধে। কিন্তু মেয়েরে আমি যাইতে দিমু না। আর যেইডা কইতে আইছিলাম, আমি হইলাম বড়, গুরুজন আমি কি তোর নঁদের চাঁদের লগে যেইচে পইরা কতা কমু? আমার সম্মান এতোই ঠুনকো? তোর মায়ে ঠেইলা গুতাইয়া পাডাইলো তাই আবার আইছিলাম। প্রথম আইসা যা শুনলাম, এরপর আবার….যাক গে আমি যায়!’

তুষার নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা মা’র’লো। আবার ভুল করে ফেললো সে। সে ঋতুর দিকে অপরাধীর ন্যায় তাকিয়ে রইলো। যদি ঋতুর জন্য তাকে সারাজীবন এই বাড়িতে থাকতে হয় তবে তাই সই।

‘ঋতু, আমরা যাবো না এই বাড়ি থেকে। তবে আমরা এই বাড়িতে থাকলে ভাড়া দিয়ে থাকবো৷ আর আলাদা সংসার বাঁধবো ঠিক আছে? আমি তোমার, তোমার বাবার কথা ভেবে এই বাড়িতে থাকতে রাজি। তবে তোমার আমার সম্মানের কথাও ভাবতে হবে!’

‘ঠিক আছে।’

রাত হয়েছে তাই শুয়ে পরলো ওঁরা। ঋতুও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে তার বাবাকে এতোদিন কতটা ভুল বুঝেছে। বাবার সম্বন্ধে একটু ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচেছে সে। তার বাবা শামুকের মতো৷ বাইরেটা শামুকের খোলসের ন্যায় শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। সে আজ বুঝলো তার বাবার তার প্রতি ভালোবাসা কতটা গভীর। এতো দিন সে ভেবে এসেছে তার বাবা শুধুই তার ছোট বোনকে ভালোবাসে কিন্তু আজ সে উপলব্ধি করলো তার বাবা তাকেও কম ভালোবাসে না।

তুষার ঋতুকে বুকে টেনে নিয়ে বললো, ‘আমায় ক্ষমা করে দিও ঋতু। এভাবে মন খারাপ করে থাকবে না প্লিজ! আমি আসলে তোমার রাগী বাপকে রাগ থেকে ওসব বলিনি। মন থেকেও বলিনি। এমনি মজা করে বলেছি।’

তুষারের বুকে মাথা রেখেই ঋতু জিজ্ঞেস করলো,

‘ভালোবাসা মানে কি জানেন তুষার ?’

‘উম… ভালোবাসা মানে, এই তুমি নামক আপাদমস্তক মানুষটাকেই তো বুঝি। ভালোবাসা মানে, তুমি আমাকে নিয়ে যা অনুভব কর, আমাকে নিয়ে যা ভাবো, আমাকে ভেবে মুচকি হাসো, ভালোবাসা মানে একটা গোটা ঋতু, আমার ঋতু পরী!’

‘আমিও তো ভালোবাসা মানে আপনাকেই বুঝি। যে ভালোবাসার কোনো সংজ্ঞা নেই তুষার। আমারে এতো ক্যান ভালোভাসেন তুষার? আমার কথা ভেবে আপনি কতো সহ্য করেন। আমার মাঝে মধ্যে ভয় হয়, আমার কপালে এতো সুখ সইবে তো?’

‘শিহ এসব বলে না। আমি আমার পরীর জন্য সব করতে পারি!’ বলেই তার কপালে উষ্ণ ঠোঁট ছোঁয়ালো তুষার।

হতবিহ্বল, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে আছে ঝুমুর। তার হাতে তীর্থর নতুন কেনা এন্ড্রয়েড ফোন। ফোনের স্ক্রিনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সে দৌঁড়ে বাথরুমে চলে গেলো৷ বমি করে ভাসিয়ে দিলো সে। চোখে মুখে পানি দিয়ে চলে গেলো নিজের ঘরে৷ তার শরীর অনবরত কাঁপছে। কি কুক্ষণে যে সে তীর্থর ফোন ঘাটতে গেলো? তীর্থর পর পর তাকে রিজেক্ট করার পর তার তীর্থকে সন্দেহ হয়। তাই সে তীর্থের বাইরে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলো। বাইরে গেলে তীর্থ তার ফোন সাথে নিয়ে যায় না। এন্ড্রয়েড ফোন হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়িতেই রেখে যায়। সে বিছানা থেকে ফোন টা সুযোগ বুঝে হাতে নিলো। ফোন লক করা না থাকাই সে ফোন নিয়ে ঘাটতে থাকে। দেখতে থাকে কোনো মেয়ের ছবি আছে কি না। হঠাৎই ফোনের ম্যাসেজ টোনের শব্দ হয়। সে কৌতুহল বশত সেখানে ক্লিক করে এরপর একটা ভিডিও প্লে হয়, এরপর যা দেখে এতেই সে ঘেন্নায় বমি করে ভাসিয়ে ফেলে। রাগে সারা শরীর জলছে তার। নিজের রুমের ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে বসে রইলো শাওয়ারের নিচে৷ কতক্ষণ রইলো সেভাবে খেয়াল নেই তার।

তীর্থ রুমে এসে দেখলো, তার ফোন ফ্লোরে পরে আছে। সে ফোন হাতে নিয়ে লক খুলার পরই ছিটকে সরে গেলো সে৷ আবার ধরাম করে ফোন পরে গেলো হাত থেকে। দু কদম পিছিয়ে হতভম্ব হয়ে রইলো সে। এই ফোন নিশ্চয়ই ঝুমুর দেখেছে। কারণ ঋতু আপা বাসায় নেই এখন মার্কেটে গেছে, আর থাকলেও ঋতু আপা তার ফোন ধরবে না। এক মাত্র ঝুমুর ই তার জিনিস ধরার সাহস করে। রাগে সর্বাঙ্গ কাঁপছে তার। সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। বেরোনোর সময় সুফিয়া জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছে সে উত্তর না দিয়েই গটগট করে চলে এলো।

একটা খালি মাঠে, সরু একটা লাঠি দিয়ে তীর্থ ওর বন্ধু লিপনকে উদম পে’টা’নো পে’টা’চ্ছে। শক্ত হাতে মা”র’তে মা’র’তে হিশহিশ করে বললো,

‘তোকে বলেছিলাম না,আমার ফোনে এসব ট্রান্সফার করবি না। লজ্জা করে না? আমি হাজার বার বারণ করার পরেও কোন সাহসে আমার ফোনে এগুলা দিলি? আমাদের দুই দিনের বন্ধুত্ব আর আজ ই তুই তোর আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিলি? আজকে তোকে এখানেই পুঁ”তে ফেলবো।’

তীর্থর থামার নাম নেই রাগে ক্ষোভে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পরেছে তীর্থ। মা’রে’র দাপটে গগন বিদারী চিৎকার করছে লিপন।

‘ছেড়ে দে তীর্থ, আর মা’রি’স না। আমি সহ্য করতে পারছি না।’

‘তুই জানিস, আমার জেঠাতো বোন আমার ফোনে এসব দেখেছে, এক মাত্র তোর এরকম একটা ভুলের জন্য না জানি আমাকে কতটা খারাপ ভাবছে
সে!’

‘ছেড়ে দে ভাই, আমি আর জীবনেও এরকম কিছু করবো না।’ গোঙাতে গোঙাতে বললো লিপন!’

হাতের লা’ঠি ছুড়ে ফেলে গটগট করে চলে এলো বাড়িতে। প্রথমেই ভাবলো কোন মুখে সে ঝুমুরের
সামনে যাবে? লজ্জা করবে না? তাকে কি খুব খা’রা’প ভাবছে ঝুমুর? আগের মতোই সব ঠিকঠাক থাকবে তো আজকের পর? রাগে নিজেই নিজের চুল ছিড়ছে সে।

তীর্থ বাড়িতে এসে দেখলো ড্রয়িং রুমে ওঁর বাবা-মা বসে আছেন৷ বড্ড খারাপ মনটা একটু হলেও ভালো হলো বাবা মাকে দেখে। তীর্থকে দেখে আসলাম এগিয়ে এসে হাসি মুখে বললেন,

‘কই গেছিলা বাপ? আমরা আইসা বসে আছি কতক্ষন!’

রুমিও এগিয়ে এলেন। আদরের এক মাত্র ছেলের ঘার্মাক্ত মুখ আঁচলে মুছিয়ে দিয়ে শুধালেন, ‘কই গেছিলা, এমনে ঘামাইছো ক্যা?’

‘এমনি আম্মা এই এদিকেই গেছিলাম। তোমরা কেমন আছো? কখন আসলে?’

‘আমরা ভালা আছি বাপ। এই আধ ঘন্টা হইছে আইছি।’

‘এই আইসো তোমরা দুপুরের খাওন খাও! এতো দূর থেইকা আইছো!’ হাঁক ছেড়ে বলেন সুফিয়া।

‘ভাইজান কই গেছে ভাবি?’

‘সে একটু কাজে গেছে। বইলা যায় নাই কই গেছে।’

‘ওহ আচ্ছা। ভাবি, একখান কতা কই শুনেন, বড় মাইয়া যা করনের করছে,এইবারে ছোডো মাইয়াডারে দেইখা রাইখেন। দিনকাল যা হইছে!’

‘আপনে থামবেন তীর্থর বাপ? কোন সময় কি কওন লাগে জানেন না?’

‘আব্বা আমারে দেখতে আসছেন দেখে চলে যাবেন। এমন সমালোচনার তো কোনো দরকার নেই৷’

সুফিয়া কিছুক্ষন কি যেনো ভাবলেন। বললেন, ‘তুমি চিন্তা কইরো না আসলাম। আমি ছোডো মাইয়াডারে দেইখাই রাখতেছি!’

‘হো ঠিকই করতাছেন। মনে রাইখেন “নৌকার সামনের দিক যেদিকে যায় পেছনের দিক
টাও কিন্তু সেদিকেই যায় ভাবি। তাই ঝুমুররে একটু বেশি টেকেল দিবেন।’

ঝুমুর তার কম্পনরত শরীরে নিচে নামছিলো৷ চাচার মুখে তার নামে এমন কথা শুনে থেমে গেছিলো৷ কখন যে তার দু-চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে বুঝতে পারেনি। চোখ বন্ধের আগে শেষ টুকু যতটা দেখেছিলো,তীর্থ তার দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসছে।

#চলবে