পূর্ণতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-০১

0
704

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০১

অয়ন একটা লাল গোলাপ নিয়ে আমার সামনে হাটু ভাজ করে বসে আমাকে প্রপোজ করছে। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। অতঃপর অয়নের হাত থেকে গোলপ টা নিলাম। কিছু বলতে যাবো তখনই কোথা থেকে ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়া সিদ্ধাত এসে রাগী কন্ঠে জোরে ধমক দিয়ে বলে

সিদ্ধাত: ঈশা!

আমি পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি সিদ্ধাত ভাইয়া আমার দিকে ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে। উনার এভাবে ধমকানোর কারন বুঝলাম না। তবে উনার ধমকে আমার বুকে একটা ছোট খাটো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। আমি দৌড়ে উনার কাছে গেলাম।

ঈশা: সিদ্ধাত ভাইয়া তুমি?
সিদ্ধাত: ভুল সময় চলে এসেছি? এসব চলে এখন? বাহ!
ঈশা: আরে কি বলছো এসব। ভুল সময় আসবে কেন।
সিদ্ধাত: তাই ই তো মনে হচ্ছে। ডিস্টার্ব করলাম তোদেরকে। একটু পারসোনার টাইম..
ঈশা: আরে তুমি যা ভাবছো তা নয়।

সিদ্ধাত কে থামিয়ে দিয়ে বললাম।

সিদ্ধান্ত : দেখলাম তো
ঈশা: আরে সত্যি বলছি। বিশ্বাস করো আমায়
সিদ্ধাত: নিজের চোখকে কি অবিশ্বাস করবো ঈশা? তুই যা করেছিস এর পরেরও তোকে বিশ্বাস করতে বলছিস?
ঈশা: তুমি ভুল বুঝছো সিদ্ধাত ভাইয়া। ও শুধু আমার ফ্রেন্ড। এর বেশি কিছুই নয়। তুমি ভুল বুঝছো আমাকে। আমরা তো..
সিদ্ধাত: ড্রামা বন্ধ কর ঈশা। আমি দেখেছি। আর কখনও আমার সামনে আসবি না

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া হন হন করে বেরিয়ে গেলো। উনার এই রাগের কারন অজানা আমার। আরে ধুর অবিশ্বাস করে চলে গেল এই রাগী ছেলে টা। ধ্যাত ভাল্লাগে না।

নোভা: কি রে সিদ্ধাত ভাইয়া রেগেমেগে বেরিয়ে গেল কেন?
ঈশা: আর বলিস না। অয়ন, আমাদের ক্লাসের ওই রিয়া আছে না ওকে পছন্দ করে। রিয়া কে কিভাবে প্রপোজ করবে সেটাই প্রাকটিস করছিল আমার কে দিয়ে। আর ওই রাক্ষস টা এমন সময় দেখে আমায় ভুল বুঝে চলে গেল।
নোভা: এতে উনার এতো ফাটছে কেন। জুনিয়ররা যা ইচ্ছা করুক উনার কি
ঈশা: কে জানে। চল তো যা হবার হবে। আনাদের কি। উনার ধার ধারে কে
নোভা: হুম চল, অয়ন যাবি?
অয়ন: না রে
ঈশা: ও তো রিয়ার সাথে যাবে
নোভা: ওহ হো
অয়ন মুচকি হেসে মাথা চুলকায়

☆☆ওদিকে সিদ্ধাত রেগে আগুন। রাগে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়। ড্রাইভ করছে আর ভাবছে, আমার চোখের আড়ালে ঈশার এসব চলে আর আমার সামনে এতো ন্যাকামি। এতো ন্যাকামি না করলেও পারতি। তাহলে আমি এই ভুল করতাম না। আর কখনও তোর সামনে যাবো না। কখনও না। ক্যাম্পাসে এবং বাইরে তোর সাথে কথাও বলবো না। চিনি না আমি তোকে। কিন্তু আমার এতো রাগ হচ্ছে কেন? কে ও আমার? যা ইচ্ছা করুক আমার কি। ওর তো পছন্দের কেউ থাকতেই পারে তাহলে আমার এতো জেলাস হচ্ছে কেন? উফফ পাগল বানিয়ে দেবে এই মেয়েটা আমাকে। গাড়ি এসে থামে একটা নির্জন জায়গায়। এটা আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা।গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরিয়ে নেই। আপনারা ভাবছেন ঈশা কে ভালোবাসি তাই আমার জেলাস হচ্ছে? আসলে ঈশা কে প্রথম দেখেছিলাম স্কুলে। আমি এসএসসির সার্টিফিক নিতে গিয়েছিলাম আর ঈশা তখন নতুন ভর্তি হয়েছিলো ক্লাস এইটে। কোনো এক কারণে স্কুল চেঞ্জ করেছিলো। সঠিক জানিও না। ওই দিন ফাস্ট দেখেছিলাম ওকে। ছোট খাটো একটা ক্রাস খেয়েছিলাম। এরপর মাঝেমাঝে রাস্তায় চলাচলের সময় দেখা হত। কখনও কথা বলি নি। ওর সাথে কথা শুরু হয় যখন একি ভার্সিটি তে ভর্তি হয়। অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছি ওর স্পেশাল কেউ আছে কি না সব সময় উত্তর দিয়েছে না। কিন্তু আজ নিজেই দেখলাম। আমার কাছে মিথ্যা বলার কারণ কি ছিল। সত্যি টা বললেই হতো এটাই আমার রাগের কারন। ভেবেছি একটা মিথ্যাবাদীর সাথে আর কথা বলবো না।

◆◆নোভা আর আমি ক্যাম্পাসের বাইরে দাড়িয়ে আছি। বাড়ি ফিরবো কিন্তু কিছু পাচ্ছি না। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকে শেষমেশ হাটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে নোভা বলে,

-ঈশু
-বলো সোনপাখি
-আমার না একটু ডাউট হয়
-কি নিয়ে
– সিদ্ধাত ভাইয়া কে নিয়ে

নোভার এমন কথা আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন নোভা আবারও বলে,

– হ্যাঁ রে। আমার না উনাকে কেমন যেন লাগে
– কেমন লাগে
– একটু অন্য রকম। মানে দেখ উনি আমাদের কত সিনিয়র তবুও উনি তোর সাথে এমন ভাবে মেলামেশা করে যেন উনি আমাদের ই ক্লাস ম্যাট
– আরে ধুর। উনি অনেক ফ্রেন্ডলি।
– না রে ঈশা আমার মনে হয় উনি তোকে লাইক করে

নোভার কথায় শুকনো বিসম খাই। যেখানে সিদ্ধাত নাম টা শুনলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। সেখানে নোভা বলে উনি নাকি আমাকে পছন্দ করে। হার্ট তো এবার ব্যাঙের মত লাফালাফি শুরু করলো। নোভা আবারও বলতে শুরু করল,

– কি রে থেমে গেলি কেন। কি ভাবছিস
– এ‍্যাহ!! না ভাবছি যে তোরে নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে
– আমাকে নিয়ে? কোথায়?
– মেন্টল হসপিটালে
-😒
– মাথা টা তোমার একবারেই গেছে বান্ধবী। সিদ্ধাত ভাইয়ার ভালোবাসার মানুষ আছে। বলেছে আমাকে। ভীষন ভালোবাসে উনি তাকে। সব কথায় শেয়ার করে আমার সাথে। যেমন টা তোরা করিস।
– ভালোবাসার মানুষ আছে না ছাই আছে। কই আর তো কোনো জুনিয়র কারো সাথে মিশতে দেখি না। শুধু তুই কেন?
– ক্লাসে তো আরো অনেকেই আছে তাহলে তোর বসার সময় শুধু মাত্র আমি কেন?
– তুই তো বেস্টু
– তো আমিও উনার বেস্টু। এটা শুধু ফ্রেন্ডশিপ আর কিছু না। আর উনার জিএফ আছে
– তুই দেখছিস তাকে?
– না। শুধু গল্প শুনেছি। খুব জানতে ইচ্ছা করে কে যে উনার ভালোবাসা
– তুমি নিজেই বান্ধবী
– তুই আবার এসব বলা শুরু করলি?
– আচ্ছা আর বলবো না যা

বাড়ি ফিরতে বিকেল হয়ে যায়। সাওয়ার নিয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। আর ভাবছি সত্যি কি সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝলো? আচ্ছা উনি রেগে গেল কেন? নোভা যা বলেছিল যদি সত্যি হয়। উফফ বাবা ভাবতেই বুক ধুক পুক শুরু হয়ে গেল। আল্লাহ গো। আমার বুকের ভিতরে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। কেমন যেন একটা ফিলিংস আছে উনার প্রতি। উনার ভয়েজ টা শুনলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। উনি আমার সামনে আসলে আমার বুক ধুকপুক করে। আর যখন কাছাকাছি থাকে তখনকার কথা আর নাইবা বললাম। এসবই ভাবছিলাম আর তখনই ফোন টা বেজে উঠে। নাম্বার টা দেখেই শুকনো ঢোক গিললাম। খুশি হবো নাকি ভয় পাবো বুঝতে পারছি না না। অন্য সময় এই নাম্বার থেকে ফোন এলে এক সেকেন্ড ও দেরি হয় না রিসিভ করতে। আর এখন ভয় লাগছে আবার ভালো ও লাগছে। প্রতি বারের মত এবারও আমার হার্ট ব্যাঙ হয়ে গেছে মানে হার্ট বিট বেড়ে গেছে আর কি। কাপা কাপা হাতে ফোন টা রিসিভ করলাম। অপর প্রান্ত থেকে টর্ণেডোর বেগে ভেসে

– ফোন রিসিভ করতে এতো দেরী হয়? কি করছিলি কি? কি এমন কাজে ব্যস্ত ছিলি শুনি?

ঈশা: আমি কি তোমার জন্য ফোন নিয়ে বসে থাকি?
সিদ্ধাত: বাহ! ভালো ইম্প্রুভ হয়েছে। মুখে মুখে তর্ক করাও শিখে গিয়েছিস
ঈশা: না। এমন কিছু নয়।
সিদ্ধাত: তাহলে কেমন কিছু? কখনও আমার সাথে মেজাজ দেখিয়ে কথা বলার সাহস হয় নি তোর। আজ হলো কি করে?
ঈশা: সরি। আর হবে না
সিদ্ধাত : মনে থাকে যেন
ঈশা: হুম।
সিদ্ধাত: এখন বল আমাকে মিথ্যে কেন বললি?
ঈশা: আরে রাগী ছেলে মিথ্যা কখন বললাম?
সিদ্ধাত: কে ছিল ওটা?
ঈশা: আরে সিদ্ধাত ভাইয়া ওই অয়ন আছে না আমাদের ক্লাসে আরে ওই যে যাকে নিয়ে তুমি ভুল বুঝছো। ওই লম্বা করে একটু শ্যামলা মানে আজকে যে…
সিদ্ধাত: এই স্টপ! কি হচ্ছে এগুলো। আমি ব্যাখ্যা চেয়েছি? এতো বেশি কথা বলিস কেন তুই?
ঈশা: তুমি তো আবার বুঝো না তাই ই তো আমাকে বেশি কথা বলতে হয়
সিদ্ধাত: কিহ!
ঈশা: না মানে কিছু
সিদ্ধাত: এখন বল কি ছিলো ওটা?

সিদ্ধাত ভাইয়া কে সব টা বললাম

সিদ্ধাত: হাহাহাহাহাহা সিরিয়াসলি? আর আমি ওহ নো ঈশা। আমি তো অন্য কিছু ভেবেছি। হাহাহাহাহা
ঈশা: ভাবতে বলেছে কে? যত্তসব হুদাই উল্টা পাল্ট ভাবো।
সিদ্ধাত: আচ্ছা তুই কি কাউ কে পছন্দ করিস?

সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কথা আবারও বুক ধুকপুক করছে। কাউ কে পছন্দের কথা বলায় উনার কথায় আগে মাথায় এলো। কিছু না ভেবেই খোলা মনে বললাম,

ঈশা: হ্যাঁ করি তো। তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি।
সিদ্ধাত: সিরিয়াসলি ঈশা?
ঈশা: হিহিহিহিহি। মজা করছি। তুমি কি সত্যি ভেবেছো?
সিদ্ধাত: না না এমন কিছু না। আচ্ছা আমি তোর সাথে পরে কথা বলি।

সিদ্ধাত ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে ফোন কেটে দেয়। এবার একটু মন টা হালকা হলো। তাই শুয়ে পড়লাম। একটা ঘুম দিবো। রাতে উঠে পড়বো। আসলে মাঝরাতে পড়া আমার অভ্যাস। তাই পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

◆◆অন্যদিকে মমতা বেগম একটা বিশ/ একুশ বছর বয়সি মেয়ের ছবি হাতে কাদছেন।
-আজ বাইশ টা বছর তোকে দেখি না। কোথায় আছিস কেমন আছিস কিছুই জানি না। যেখানেই আছিস ভালো থাকিস। আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে থাকবে।

এরই মধ্যে রুমে কারো প্রবেশে সেই ছবি লুকিয়ে ফেলেন তার আচলে। অতঃপর বলেন,

চলবে কি?

পূর্ণতা নাকি শূন্যতা সিজন ০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন