পূর্ণতা পর্ব-০৪

0
698

#পূর্ণতা❤️
#Writer_Tanjila_Tabassum❤️

৪.

মাথাটা ঝিমঝিম করছে।বেশ ভারী লাগছে তারার কাছে। তবু ও আস্তে আস্তে চোখ খোলার চেষ্টা করল। হালকা চোখ খুলতেই বিছানায় উঠে বসলো তারা।তারপর মাথাটাকে হালকা ঝাঁকিয়ে নিয়ে সামনে তাকাতেই তার চোখ জোড়া বড়সড় হয়ে গেল। এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে থাকলেও এবার তারার ঘুম একেবারেই চলে যায়।ঘড়িতে সকাল সাড়ে সাতটা বাজে তারার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।তাই সে নিজের ফোনে দেখে। সময় ঠিক-ই আছে।এবার তারার মাথাটা ঘুরতে শুরু করলো ।সে শুধু কালকের রাতের কথা মনে করতে লাগলো।সে তো কালকে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে পিছনে ঘুরে তাকানোর সাহস পায়নি।ওখানেই হয়তো সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়। কালকে কেউ তাকে পিছন থেকে ডাকার পর সে খুব ভয় পেয়ে গেছিল। আস্তে আস্তে করে তার মাথা ঘুরতে লাগছিল, চোখগুলো বন্ধ হয়ে আসচ্ছিল, সবকিছু ঝাপসা লাগছিল ! তারার শক্তি হ্রাস পাচ্ছিল আর এক পর্যায়ে সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।এখন তারা ভাবছে কালকে তাকেকে ডেকেছিল?আর রুমে-ই বা কে নিয়ে আসলো তাকে?আলোক?আলোক ছিল না তো কালকে?আলোকের কথা মাথায় আসতেই তারা ব্যালকনির দিকে যায়।যেয়ে দেখতে পায় কেউ নেই।তারা এবার চিন্তায় পরে যায় । কালকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো কি তাহলে তার স্বপ্ন ছিল?তারা নিজের হাতের দিকে তাকায় তারপর একটু জোরে চেপে ধরে আর তার ব্যথা অনুভব হয়।তখন সে বোঝার চেষ্টা করে তার এইসব স্বপ্ন ছিল না। কালকে সে ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার পর হাতে ও অন্যান্য জায়গায় ব্যথা পেয়েছিল যেটা সে এখন অনুভব করতে পারছে।তাহলে কালকে কি ছিল ওইসব?আর তাকে রুম পর্যন্ত বা কে নিয়ে এলো?ভাবছে তারা। গভীর ভাবে ভাবছে।কালকে কন্ঠ টা কার ছিল বোঝার চেষ্টা করছে।ছেলে নাকি মেয়ের?আলোকের মুখ থেকে সে কখনোই নিজের নামটা শুনে নি তাই সিউর হতে পারছে না সেটা আলোক ছিলো নাকি! তাহলে তার শশুর কিংবা শাশুড়ি?ওনারা হতে পারে? শশুর শাশুড়ির কথা মাথায় আসতেই তারার কালকে রাতের তাদের কথা গুলো মনে পড়লো!তারার শশুর রায়হান তাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল। তার আর আলোকের বিষয় নিয়ে কিছু বলছিল। কিন্তু তার শাশুড়ি আশা বলতে দিতে চাইছিল না তারাকে।আর এগুলো নিয়েই তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হচ্ছিলো।তারা নিজের দুহাত মাথায় দিলো।আর ভাবছে যেদিন থেকে সে এই বাড়িতে এসেছে সেদিন থেকেই খালি তার মনে শত শত প্রশ্ন জন্মাচ্ছে।প্রথমত বিয়ের রাতে আলোকের একটা স্বাভাবিক আর শান্ত ব্যবহার! তারপর সে কেন জেলে ছিল তার উত্তর অজানা! তারপর বিয়ের পরের দিন অনেক পুরুষ আসার পর একটা পুরুষ তাকে দেখতে আসেনি! ব্যাপারটা অনেক অবাক জনক। তারপর ওই বৃদ্ধ লোকটার বলা কথাগুলো! আর কালকে রাতের তার শ্বশুর-শাশুড়ির কথাকোপন এবং কালকের ওই রুমটা কার ছিল?, ডায়েরীটাতে কার ছবি ছিল? আর কে বা ডেকেছিল তাকে পেছন থেকে? আর এখানেই বা কে নিয়ে আসলো তাকে? হাজার হাজার প্রশ্ন তারার মনে কিন্তু সবগুলোর প্রশ্নের উত্তর-ই অজানা। তারার মনে হচ্ছে এই বাড়ির প্রতিটি কোনায় কোনায় রহস্যজনক। প্রতিটি মানুষেরই ভিতরে অন্য এক রূপ। কিভাবে খুজবে তারা নিজের প্রশ্নের উত্তর? এইসব ভেবে তার মাথা ঘুরছে সাথে মাথাও ব্যথা করছে। তারা হাত দুটো দিয়ে মাথা চেপে ধরে ,চোখ দুটোকে বন্ধ করে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ চেপে ধরার পর তারপর ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকায়। সামনে তাকাতেই দেখে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা ওপাশের বা’দিকে আরো কয়েকটা বাড়ি আছে। সেখানে একটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে আলোক। এই জায়গাটা কেমন অদ্ভুত! গ্রাম নাকি শহর বোঝা যায় না। এক পাশটা দেখলে মনে হয় গ্রাম আবার আরেক পাশ দেখলে মনে হয় শহর। শহর-গ্রাম দুটোই মিশ্রিত।ওখানে তিনটি বাড়ি একসাথে তারপর আরও কিছুটা দূরে আরো কয়েকটা বাড়ি।একসাথে তিনটি বাড়ির মধ্যে থেকে আলোক মাঝখানে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। তারপর হেঁটে হেঁটে নিজের বাড়ি দিকে আসছে। তারা ব্যালকনি থেকে ভালো মতন দেখলো। সে ভাবছে আলোক ওখানে কি করে? আবার এটাও ভাবছে যে হবে হয়তো তাদের পরিচিত কেউ । আলোক ওখানে যাই করুক না কেন তাতে তার কি? ভাবছে তারা। তারপর দেখল আলোক বাড়ির অনেকটা কাছাকাছি এসে গেছে আর এক সময় সে ভেতরে ঢুকলো। তারাও বেলকুনিতে কিছুক্ষণ থেকে তারপর দরজা খুলে বাহিরে বের হলো। বাইরে আসতেই তার শাশুড়ি আশা আরা আলোকের মধ্যে কথাকোপন চলছে। আশা তারাকে দেখে হাসলো কিন্তু কিছু বলল না। আশা আলোকের সাথেই কথা বলছে।তারা দূর থেকে দেখলো। কিছুক্ষণ পর আশা ভিতরে গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এলো। তারপর সেটাকে আলোকের সামনে রেখে বলল,

‘তারাকে কোথাও নিয়ে গিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আয় না বাবা।’

আলোক কোন উত্তর দিল না। আশা আবারো বললো,

‘বিয়ে হয়েছে থেকে সারাদিন একাই থেকেই কাটিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। তুই ওকে নিয়ে বাহিরে কোথাও যা ওর ভালো লাগবে।’

আলোক নিচের ঠোঁট কামড়ে তার মায়ের দিকে তাকালো।আলোক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশা শপিং ব্যাগ থেকে একটা হলুদ কালারের শার্ট বের করে আলোকের সামনে ধরে বলল,

‘দেখ তোদের জন্য আমি নতুন ড্রেস আনিয়েছি। এগুলো পড়ে তোরা যা।’

শার্টটা হাতে ধরে আলোক দাঁড়িয়ে গিয়ে তার মাকে স্বাভাবিকভাবেই বলল,

‘উফফ মা তোমাকে কতবার বলবো আমি হলুদ আর লাল রঙের কোনো কিছুই পরিনা।’

কথাটা শুনেই আশা শার্ট টাকে রেখে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,

‘ইস আমি না দিনদিন সব ভুলে যাচ্ছি রে বাবা। আমি তো ভুলে গেছিলাম তুই তো হলুদ ,লাল কালার পরিস না।’

আলোক কিছু বলল না। আশা আলোকের কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘তাহলে অন্য কিছু একটা পড়ে যাস। আমি এটা চেঞ্জ করে আনিয়ে নেবো।’

আলোক কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্য পিছে ঘুরতেই তারাকে দেখে। তারাও আলোকের দিকেই তাকিয়ে আছে। তাঁরা দুজন ই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা লক্ষ্য করছে আলোক তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তারা চোখ নামিয়ে নেয়। তারপর আলোক ও নামিয়ে সিঁড়ি বয়ে চলে গেল ঘরে। কিন্তু তারা অবাক হয়ে আছে। কেন হলুদ কালার পড়তে চায় না আলোক? কারণ এই দুই কালার ছেলেদের জন্য পড়া হারাম? এজন্য কি পরতে চায় না এই কালার?‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের দু’টি বস্ত্র দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের বস্ত্র। অতএব তুমি এসব পরবে না। (ই.ফা. ৫২৬০, ই.সে. ৫২৭৩) [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৩২৭](হাদিসের মান: সহিহ হাদিস,Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD)।এইজন্য ই কি আলোক পড়বে না?নাকি এটা তার অপছন্দনীয় রং? সঠিক উত্তরটা ঠিক ভাবে জানা নেই তারার। কিছুক্ষণ পর আশা তারার কাছে এসে বলল,

‘যাও রেডী হয়ে নাও মামনি।আলোক তোমাকে নিয়ে বাহিরে যাবে।’

আশার প্রতিউত্তরে কোনো কিছু বলার সাহস পেলো না তারা। সে শুধু মাথা নিচু করে সবটাই শুনলো। তারপর না চাওয়ার সত্ত্বেও নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। রুমের সামনে এসেই দাঁড়িয়ে যায় তারা। তার দৃষ্টি কালকে রাতের সেই রুম টার দিকে। আস্তে আস্তে এগোতে থাকে তারা। তারপর রুমটার দরজার সামনে আসতেই দেখে রুমটা তালাবদ্ধ। দরজায় বড় একটা তালা ঝুলানো। তারা তালাটাকে হাত দিয়ে ধরে দেখল এটা চাবি ছাড়া খুলবে না। কিন্তু তারা আশ্চর্য ভাবে দেখছে! কালকেই তো এই ঘরটা খোলা ছিল তাহলে আজকে তালাবদ্ধ কেন? সেই ডায়েরী আর ভিতরে থাকা সেই ছবিগুলো তো দেখাই হয়নি! এখন কিভাবে দেখবে তারা? তারা এখন এতোটুকু আন্দাজ করতে পারছে কালকে কেউ ছিল তাকে দেখছিল!! আর নিশ্চয়ই এই ঘরটার মধ্যে কিছু লুকিয়ে আছে তাই আজ এটা তালাবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে করে সে না জানতে পারে। কিন্তু কি থাকতে পারে? এইসবের পিছনেও কে বা আছে?

হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যায় তারা। পিছনে ঘুরে দেখে তার শাশুড়ি আশা। হঠাৎ কেউ হাত দেওয়ায় তারা ভয় পেয়ে যায়। তারাকে এমন অবস্থায় দেখে আশা বলল,

‘এখানে কি করছো তারা?’

তারা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলতে লাগল,

‘না..ন..মানে এমনিতেই এসে…এসেছিলাম।’

আশা হালকা হেসে‌ বলল,

‘ওহ। কিন্তু তোমাকে না বললাম রেডি হতে।’

তারা মাথা নিচু করে উত্তর দেয়,

‘হ্..হ্যাঁ যা..যাচ্ছি!’

তারা যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। এদিকে আসা এগিয়ে এসে দরজার তালা টাকে ধরতেই পেছন থেকে তারা বলে,

‘মা এখ..

বলতে গিয়ে থেমে যায় তারা,আশাকে দরজার এতটা কাছাকাছি দেখে। আশা তাড়াতাড়ি করে তালা তাকে ছেড়ে পিছন ঘুরে আবারো জোরপূর্বক হেসে বলে,

‘কি কিছু বলবা?’

তারা কিছু না বলে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর কিছুক্ষণ পর বলে,

‘এই ঘরটায় কে থাক…..

তারার কথাটা শেষ না করতে দিয়ে আশা বলে ওঠে,

‘তারা তোমাদের দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি যাও।’

তারা যেতে যেতে বলে উঠে,

‘এখানে তালা কেনো?’

‘এখানে তো তালা দেওয়াই থাকে।দুটো ঘর বাদে বাকি সবগুলোতেই তালা দেওয়া থাকে ।'[হালকা হেসে‌]

‘কিন্তু আমি কালকে দেখ…

বলতে বলতে থেমে যায় তারা। তার কি বলা উচিত হবে কালকে সে এখানে এসেছিল? যদি কালকের ওই ব্যক্তিটি তার শাশুড়ি না হয় তাহলে তো উনি সব জেনে যাবেন। তাই তারা আর বলল না।

‘তারা এখানে তোমাদের ঘর আর আমাদের ঘর বাদে প্রত্যেকটি ঘরেই তালা বদ্ধ কয়েক বছর ধরেই।’

তারা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে ওখান থেকে চলে আসলো। আর ভাবছি কিভাবে তালাবদ্ধ থাকতে পারে? যেখানে সে কালকের এই ঘরটাতে ঢুকেছিল?তাহলে কি তার শাশুড়ি মিথ্যা বলছে?হচ্ছেটা কি তার সাথে?

#চলবে..?😑