পূর্ণতা পর্ব-০৫

0
542

#পূর্ণতা❤️
#লেখনীতে-তানজিলা তাবাচ্ছুম ❤️

৫.

তারার রুমে যেতেই দেখে আলোক আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আলমারিটা খোলা। হয়তো কিছু দেখছে সে।তারাকে দেখতেই আলোক আলমারির ভিতরে কিছু রেখে আলমারি টা বন্ধ করলো।তারা আলোককে লক্ষ্য করলো ,আলোকের চোখ দুটো কেমন ভেজা ভেজা।তারা ভাবছে আলোক কি কাঁদছে?কারন তার চোখ জোড়া দেখে তো এমন ই মনে হচ্ছে।আলোক আলমারি লাগিয়ে তারা কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আলোক তারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তারপর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের ফোনে কিছু দেখতে লাগলো আলোক।বেশ কিছুক্ষণ পর তারা রেডি হয়ে বেরিয়ে আসলো।তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করলো।তারা রেডি হওয়া শেষ হলেও সে ফিরে আলোকের দিকে যায়।তারা আলোকের সামনে আসতেই আলোক বুঝতে পেরে তারাকে বলে,

‘আপনি নিচে যান আমি আসছি।’

বলার সাথে সাথে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।তারপর নিচে আসতে দেখে তার শাশুড়ি আশা একটা মহিলার সাথে কথা বলছে।মহিলাটা আশাকে বলছে,

‘আরে কি যে কন ভাবি।মাইয়ার বয়স হইয়া গেছে।বিয়া দেয়া লাগবো না?

আশা হালকা হেসে বলল,

‘সবে তো এস এস সি দিলো রুমানা।’

‘তাতে কি?মাইয়া তো আগেই সব ঠিক কইরা লইছে।’

আশা এবার অবাক হয়ে বলল,

‘তাইনা কি!’

‘হ ভাবি।মাইয়া ডা এখান পোলার লগে পিরিত বাধছে।আর মাইয়া ওই পোলা ছাড়া কাউরে বিয়া করবো না।’

আশা সিরিয়াস মুডে বলল,

‘তাহলে তো ভালো ।বিয়ে দিয়ে দেও।’

মহিলাটা গোমড়া মুখে বলল,

‘হ ভাবি দেওহান লাগবো।আইজকা পোলার বাড়ি যাইবো রুমানার বাপ সম্বন্ধ লইয়া।’

‘সেকি তোমরা যাবে কেনো?মেয়েদের থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া টা কেমন দেখায় না?’

মহিলাটার মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো। তবুও জোরপূর্বক হেসে বললেন,

‘হ ভাবি জানি। কিন্তু পোলাডার বাড়ি থাইকা কেউ কিছু কয় না তো তাই আমরা-ই ভাবলাম প্রস্তাব দেই।’

‘এটা কেমন কথা।’

‘আরে ভাবি তাতে কি? ‘বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রস্তাব দেওয়া সুন্নত’।এইদিক দিয়া একখান সুন্নত পালন হইয়া যাইবো।’

এবার আর তারা চুপ থাকতে পারলো না।’বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রস্তাব দেওয়া সুন্নত’ এটা একটা জাল হাদিস যা বর্তমান সমাজে প্রচালিত।আশা কিছু বলবে তার আগেই তারা বলে উঠে,

‘কোথায় পেলেন মেয়েরা বিয়েতে প্রস্তাব দেওয়া সুন্নত?’

তারার কথা শুনে মহিলাটা পিছন ফিরে তাকালো।আশা বরাবর তারা দাঁড়িয়ে। হঠাৎ তারা এমন কিছু বলায় মহিলাটা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তারপর বললেন,

‘ক্যান তুমি জানো না?সবাই তো জানেই।’

‘না বলছিলাম যে সুন্নত বললেন তাহলে নিশ্চয়ই সেটা কোনো হাদীসে আছে?এখন এটা বলুন কোন হাদীসে পেলেন?’

তারার কথা শুনে মহিলাটা হতবাক ।তারা কি বলতে চাচ্ছে উনি বুঝতে পারছেন না।আশা মিটমিট করে হাসছে কিন্তু কিছু বলছে না। এবার মহিলাটা আশার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ভাবি এই মাইয়াডা কি কয়।মেয়েরা প্রস্তাব দেওয়া সুন্নত সেটা আমরা সবাই জানি।’

‘সবাই যেটা জানবে, বলবে সেটাই কি সুন্নত হবে?’

তারা বলল।তারার কথা শুনে মহিলাটি আবারো তার দিকে ফিরে তাকালো।কিন্তু আশা সব দেখেই যাচ্ছে। মহিলার মুখে রাগান্বিত হওয়ার অভাস পাওয়া যাচ্ছে ।তারা বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

‘শুনুন অ্যান্টি।কিছু দীনি মানুষ এতই আবেগী হয়ে যায় কখনো কখনো যে তারা হালাল, সুন্নাহ্, ফরজ, ওয়াজিবের মধ্যে পার্থক্যটাও ভুলে যায়। যেমন ধরুন – বিয়ের ক্ষেত্রে নারী পুরুষকে প্রস্তাব দেয়া। অনেকেই আবেগের বশে বলে ফেলে এটা নাকি সুন্নাহ্!

এখন প্রশ্ন হলো,আমাদের রাসূল কে ছিলেন? কার জীবনী আমাদের জন্য সুন্নাহ্? হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নাকি তাঁর স্ত্রীগণের(!)? এতটুকু তো জানার কথা একজন মুসলিম হিসেবে তাই না? তাহলে কিভাবে উম্মুল মুমিনীনদের জীবনের ঘটনাকে আমরা সুন্নাহ্ বলতে পারি?

হযরত তাবিত আল-বানানী বর্ণনা করেছেন, “আমি আনাসের সাথে ছিলাম এবং তার সাথে তার এক মেয়ে ছিল। আনাস বলেন, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে তাকে নিজের জন্য (বিবাহের জন্য) প্রস্তাব দিলেন।
মেয়েটি বলল, হে আল্লাহর রসূল, আপনার কি আমাকে স্ত্রী হিসেবে প্রয়োজন আছে? (অন্য বর্ণনায়, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমাকে বিয়ে করে নিন’)
আনাস কন্যা বলল, ছি! মেয়েটার বিনয়ের কত অভাব! কত বেহায়া সে! কত লজ্জাজনক! আনাস বলল, সে বরং তোমার চেয়ে ভাল; সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বিয়ে করতে চেয়েছে, তাই নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।” [বুখারী, হাদিস ৪৮২৮]
আবার কুর’আনে এসেছে,
“পরহেজগার সেই মেয়ে নিজে থেকেই পিতার কাছে মুসা (আঃ) কে বিয়ে করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।”
[সূরা কাসাসঃ২৬-২৭]

এখানের আলোচনায় এটা সুস্পষ্ট জায়েজ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে, কিন্তু সুন্নাহ্ নয়। অনেকেই বলে থাকে যে সুন্নাহ্ বলতে ক্ষতি কি? এখানে তো তাকে আরো এনকারেজ করা হচ্ছে ব্লা ব্লা। থামুন একটু ! কোনটা সুন্নাহ্ আর কোনটা জায়েজ সেটা ঠিক করার কি আদৌ কোনো অধিকার আছে আপনার!? কি করে জায়েজটাকে সুন্নাহ্ বানাচ্ছেন? রাসূল (সাঃ) বেশি গন্ধযুক্ত খাবার(পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ আছে এমন) খেতে পছন্দ করতেন না, কিন্তু তিনি এটি কে হারামও বলেননি। রাসূল (সাঃ) গুইসাপ খাওয়া পছন্দ করতেন না, কিন্তু একেও তিনি হারাম বলেন নি। বরং এসবই জায়েজ ছিলো, হালাল ছিলো। আবার ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলা জায়েজ, কিন্তু ‘আস্তাওদিউল্লাহ’ বলা রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ্। ঠিক তেমনি, বিয়ের ক্ষেত্রে নারী পুরুষকে প্রস্তাব দেয়া লজ্জার কিছু নেই, এটা জায়েজ। কিন্তু সুন্নাহ্ না!
সুন্নাহ বলে রাসূল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা বলা সরাসরি জাহান্নামে নিজের জায়গা দখল করে ফেলার মতই! রাসূল (সাঃ) এর সত্য জীবনী কি ইসলাকে সুন্দর করে প্রদর্শন করার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হচ্ছে না? নাকি রাসূল (সাঃ) এর জীবনীর সত্য ঘটনাগুলো (যেগুলো শুনলে একজন অমুসলিমও মুগ্ধ হয়ে যায়) সেগুলোর ব্যাপারে আপনি এখনো সামান্য অবগতও নন? ইসলাম অবশ্যই সুন্দর একটি জীবনব্যবস্থা আর এখানে মিথ্যাকে সরাসরি মহাপাপ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে রাসূল (সাঃ) এর ব্যাপারে মিথ্যা বলার আগে কি রুহ্ সামান্যও কাপে না(!)? ইতিহাস ঘেটে দেখলেই বুঝবেন এখানে মনোমুগ্ধকর কতশত ঘটনা রয়েছে। কিন্ত তারা নিজের নফসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যাচ্ছেতাই বলে ফিরছে। তারা ইসলাম থেকে যেটা ভালো লাগছে সেটাকে তুলে নিচ্ছে আর যেটা ভালো লাগছে না সেটাকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিচ্ছে, আল্লাহুম্মাগফিরলি!
ইসলামকে কটাক্ষ করে কথা বলার সাহস মানুষ সাধারণত এইসব মনগড়া ফতোয়াগুলোর জন্যই পায় আমি মনে করি।

আর যারা খাদিজা (রাঃ) এর বিয়ের প্রস্তাব দেয়া নিয়ে লাফালাফি করছেন, আপনারা হয়তো এটাই জানেন না যে খাদিজা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) কে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি নিজে রাসূল (সাঃ) কে বিয়ের কথা বলেন নি বরং তাঁর বান্ধবী বলেছিলেন অভিভাবক হয়ে, তাও রাসূল (সাঃ) এর চাচার কাছে। এরপরও যারা নিজের মত করে ফতোয়া দিয়ে ঘুরবে তাদের আর কি-ই বা বলা যেতে পারে?
আল্লাহ আমাকে আর আমাদের সবাইকে সঠিক ইল্ম অর্জন করার তৌফিক দান করুক।

©_নিশাত_তাসনিম__

তারার সম্পূর্ণ কথাটা শুনে মহিলাটি হা করে তাকিয়ে আছেন। আশা মনে মনে মিটমিট করে হাসছেন।তারা মহিলাটির দিকে তাঁকিয়ে নম্র কণ্ঠে বললো,

‘আমার কথায় কষ্ট পাবেন না,এটাই সত্যি।আপনাদের ভুল ধারণা,আর জাল হাদীস প্রচলিত বেশি যেটা ইসলামকে দুর্বল করে চলছে আর আমাদের ঈমানকেও। আপনারা বিয়ের প্রস্তাব দিন এতে লজ্জার কিছু নেই এটা জায়েয আছে।কিন্তু সুন্নাহ বলে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবেন না।’

মহিলাটি হটাৎ করেই ফিক মেরে হাসলো।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তারার মাথায় হাত রেখে আশার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ভালই বউ পাইছেন ভাবি।একেবারে সোনার টুকরা।’

আশা হেসে মাথা নাড়ালো। মহিলাটা তারাকে বললো,

‘তোমারে যে কি কইয়া শুকরিয়া জানাই। আইজ তুমি কতবড় একটা ভুল ভাইঙ্গা দিলা আমার।’

তারা একটি হাসার চেষ্টা করে বললো,

‘জি শুকরিয়া জানতে হবে না।পারলে দোয়া করবেন।আর এতদিনের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাবেন।’

‘আইচ্ছা।’

বলে আশা কে উদ্দেশ্য করে মহিলাটি বললো,

‘ভাবি আমি আইজ আসি।’

আশা হাসি মুখে মাথা নাড়ালো।মহিলাটি চলে গেলো।তারা একটা হাফ ছেড়ে পিছনে তাকাতেই ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে গেলো আলোক কে দেখে।আলোক কালো কালারের একটা শার্ট পড়েছে। সাথে কালো প্যান্ট টাকনুর উপরে পড়া।আর সু পড়েছে। চুল গুলো আগের মতোই আছে বোধহয় আঁচড়ায় নি।কিন্তু আজ প্রথম তারা আলোক কে ফরমাল লুক এ দেখলো।তারা আলোকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে,’যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটা নয়।লুক দেখে মনে হচ্ছে ২৪-২৫ বছরের সুদর্শন ছেলে হবে।স্টাইলিশ!’
হটাৎ আশার কথায় তারার ভাবনা কেটে যায় আর সে দ্রুত আলোকের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

‘মা-শা-আল্লাহ।দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে একেঅপরের সাথে।’

তারা কিছু না বলে মাথা নিচু করল।আলোক হালকা হাসলো।তারপর তাঁরা দুজন বের হলো,কিন্তু কোনো যানবাহনে না গিয়ে তাঁরা দুজন হাঁটতে শুরু করলো। তারা আলোকের থেকে নিজের দুরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে।বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর তাঁরা দুজন মেইন রোডে গিয়ে পৌঁছায়।তারা এতক্ষণ লক্ষ্য করলো আলোক একবারো তার দিকে তাকালো না।আবার সামনে কতো মেয়ে,মহিলা যাচ্ছে কারো দিকেই তাকাচ্ছে না আলোক।নিজের মতো করেই হাঁটছে সে।তারার আলোকের এই দিক টা খুব ভালো লাগলো। আনমনেই সে একটু মুচকি হাসলো।তারা বার বার আড়াল চোখে আলোককে দেখছে। অনেকক্ষণ যাবত ঘুরাঘুরি করার পর তাঁরা দুজন বাড়িতে চলে আসে।

.

.

ঘড়িতে রাত ১:০০ বাজে। আচমকা তারার ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে বসে সে। কেমন অস্বস্তি লাগছে তার। মনে এক অজানা ভয় হচ্ছে। ঘরে এসি থাকার পরেও তার গা ঘামছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তারা। হঠাৎ তার নজর ব্যালকনির দিকে গেলো।আর সে ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালো। যেতেই দেখে আলোক ব্যালকনিতে নেই। তারা ব্যালকনি ছেড়ে পুরো ঘরে দেখে আলোক কোথাও নেই।তারা ভাবলো হয়তো আলোক অন্য ঘরে ঘুমিয়েছে।তাই আর না খুঁজে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। বিছানায় শুতে ই দরজার শব্দে চেয়ে তাকালো।দেখলো আলোক এসেছে কিন্তু তার হাতে একটা রক্ত মাখা ছুরি আর তার হাত ও সাদা শার্ট এ রক্ত।আলোক দ্রুত গতিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলো।তারা আলোককে এই অবস্থায় দেখে হতবাকের মত তাকিয়ে আছে।তারা ভাবছে এত রাতে আলোক কোথায় গিয়েছিল?আর তার এমন অবস্থা কেনো?হাতে, গাঁয়ে রক্ত!!ওয়াশরুমের দরজা খুলার শব্দে তারার ধ্যান ভেঙ্গে যায়।আলোক বের হলো তারপর ড্রেস চেঞ্জ করলো,তারপর ব্যালকনিতে গেলো।তারা কোনো শব্দ করে নি।নিরবে সব দেখেছে।তারার মনে হাজারো প্রশ্ন জাগছে। কিন্তু প্রতিবারের মত এবার ও তার প্রশ্নের উত্তর অজানা ই ।এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় তারা ঘুমিয়ে পড়ল।

_____

প্রতিদিনের মত আজকেও তারার ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল।তবে আজকে ফজরের আজানের শব্দে নয় বরং বাহিরের চেঁচামেচির শব্দে।তারা বিছানা থেকে উঠে দেখে এখনো ফজরের নামাজ এর সময় হয়নি আর আজান ও দেয় নি। কিন্তু এত ভোরে কিসের চেঁচামেচি চলছে দেখার জন্য তারা বাহিরে যায়। বাহিরে আসতেই তার শাশুড়ি আশা তাকে পিছন থেকে ডেকে উঠে,

‘তারা!কোথায় যাচ্ছো তুমি?’

তারা যেতে যেতে থেমে যায়।পিছনে ঘুরে তার শাশুড়ি আশা কে বলে,

‘মা বাহিরে এত শব্দ, চেঁচামেচি কিসের?

আশা তারার কাছে এসে বলল,

‘তোমার বাহিরে যেতে হবে না।বাহিরে অনেক মানুষ আছে সাথে পুলিশ ও আছে।তুমি তোমার ঘরে যাও।’

তারা আশার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকালো।তারপর বলল,

‘এত ভোরে মানুষ?আর পুলিশ কেনো ?’

আশা একটা হাফ ছাড়লো তারপর বললো,

‘ওইদিকের একটা বাড়িতে একজন পুরুষ খুন হয়েছে।’

‘খুন’ শব্দটা শুনলেই তারার বুক কেঁপে উঠল।সে বলল,

‘খু..খুব…খুন?কা…কার?কার হয়েছে?’

আশা তারার আরেকটু কাছে এসে বলল,

‘রুমানার আব্বা!কালকে যেই মহিলা টা এসেছিলেন তার স্বামী খুন হয়েছেন।সবাই বলছে তাকে রাতে খুন করা হয়েছে।তবে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে গিয়েছে । রিপোর্ট আসলেই জানা যাবে।’

তারা কথাটা শুনে একটা ঢোক গিলল। না চাইতেও তার কেমন ভয় লাগছে।তারাকে এ অবস্থায় দেখে আশা তার মাথায় হাত দিয়ে বলল,

‘তারা তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।আর ভয় পেয়ো না।যাও নিজের ঘরে যাও।’

তারা দ্রুত গতিতে নিজের রুমে চলে আসে।বাহিরে অনেক চেঁচামেচি চলছে।তারা ব্যালকনিতে যায়।আলোক নেই ব্যালকনিতে।তারা ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে যায়।আর নিচে তাকিয়ে দেখছে।শত শত মানুষের ভিড় ।কতো গুলো পুলিশ দাঁড়িয়ে।তারা লক্ষ্য করলো রাস্তার বা’পাশে থাকা একসাথে ওই তিনটি বাড়ির সামনে ভিড় মানুষের।আর চারদিকে মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।আর কয়েকজন পুলিশ তিনটি বাড়ির মাঝখানে থাকা বাড়িটি থেকে বের হচ্ছে।তার মানে ওই বাড়িতেই খুন হয়েছে। হঠাৎ আলোককে ওই বাড়ি থেকে বের হতে দেখে তারার বুক কেঁপে উঠলো।তার কালকের ঘটনা গুলো মনে পড়লো। গতকালকে সকালে তারা আলোককে এই বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছিল।আর মধ্যরাতে আলোককে হাতে রক্ত মাখা জামাকাপড় ও ছুড়ি নিয়ে দেখেছিল।তাহলে কি আলোক?তারা দু কদম পিছিয়ে গেল।তার হার্ট বিট দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে। তারা পর পর ঢোক গিলেই যাচ্ছে।আলোক কি ওই লোকটাকে খুন করেছে তাহলে?নাহলে এত রাতে তার গায়ে রক্ত আসলো কোথা থেকে? তাহলে কি আলোক সাইলেন্ট কিলার?শত শত প্রশ্ন আবারো জন্ম নিচ্ছে তারার মনে যার উত্তর প্রতিবারের মতন ই অজানা।

#চলবে…..