পূর্ণতা পর্ব-১৫

0
425

#পূর্ণতা❤️
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️

১৫.

দরজা খুলতেই চাঁদ অবাক হয়ে গেল,হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।মেঝেতে পার্পল কালারের অনেক গুলো লাভ আকারের বেলুন।ঘরের প্রত্যেকটা পর্দাই পার্পল কালারের,বিছানার চাদর, বালিশের কভার সব পার্পল কালারের।এমন কী ঘরের ডিম লাইটটাও পার্পল কালারের।চাঁদ দেখে অনেক খুশি হয়েছে তার পছন্দের কালারের সবকিছু।চাঁদ চোখ সামনে যেতেই আলোককে দেখে। পার্পল কালারের পাঞ্জাবি পরে আছে।আলোক কে দেখতেই তার মুখের হাসি চলে যায়।আলোক তাকে ইশারা ডাকলো। চাঁদ মাথা নিচু করে তার সামনে যেতেই আলোক হাঁটু ভাঁজ করে বসে বলতে শুরু করলো,

‘ভালোবাসার সংজ্ঞা কিভাবে দিতে হয় আমার জানা নেই।শুধু এতটুকুই বলবো ভালোবাসি।নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি।আমি নিজেও জানিনা কীভাবে,কেনো তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম।যেই মেয়েটাকে একদিন আগে আমি সহ্য করতে পড়তাম না,আজ আমি তাকে এতটা ভালবাসি।আসলে কি জানত যখন আমরা কাউকে অপছন্দ করি,তখন তার ভালো কাজ,ভালো কথা সবকিছুই আমাদের অসহ্য লাগে।কিন্তু যখন আমরা তাকে খুব কাছ থেকে চিনে ফেলি,তখন তার প্রতি একটা অ্যাট্রাকশন জন্মায়, তখন তার সব কিছুই আমাদের ভালো লাগে,এমনকি আমাদের অপছন্দ কাজ গুলোও ভালো লাগে।তোমার হাসি, ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকানো,তোমার চোখের চাহনী এইসবের প্রতি আমার ভালোলাগা টা গভীর হয়ে গেছে।আর তোমার চোখের কোণের ওই তিল টা আমাকে আরো দুর্বল করেছে,আর করেই চলছে।আমি আজ তোমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছি না আর করবো না কারণ আমাদের বিয়ে হয়েছে আর আমি তোমাকে আমার ফিলিং গুলো জানিয়ে দিচ্ছি।শুধু এইটুকুই বলবো আমি আমার পূর্বের কাজকর্ম, আচার আচরণ, কথাবার্তার জন্য অনুতপ্ত।তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অসীম ক্ষমাশীল। আল্লাহর সেই মহান গুনের পরিপ্রেক্ষিতে তুমিও তোমার এই অপদস্ত স্বামী টাকে ক্ষমা করে দিও।’

প্রথমে কথা গুলো চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেও শেষের কথা গুলো বলার সময় আলোক মাথা নিচু করে ফেল। আলোক পিছনে ঘুরে টেবিলের উপরে রাখা পার্পল কালারের গোলাপ টাকে নিয়ে চাঁদের দিকে মুখ ফিরে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

‘আই লাভ ইউ চাঁদপাখি।তুমি কি হবে আমার ছোট বেলার চাঁদ পাখি?’

বলে গোলাপ টাকে এগিয়ে দিল আলোক। ছলছলে চোখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কেমন সব কিছু তার স্বপ্নের মত লাগছে।আগেও এইরকম অবিশ্বাস্য স্বপ্ন দেখেছিল তাই তার বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছে।চাঁদ গোলাপ নিতেই আলোকের মুখে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু বেশিক্ষণ হাসি টিকলো না।চাঁদ গোলাপ টাকে নিয়ে ব্যালকনি তে গিয়ে কোণায় ধপ করে বসলো।আলোক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দাড়ালো তারপর সেও সেখানে গেল।সেখানে গিয়ে চাঁদের পাশে বসে হাসিখুশি মুখ করে বললো,

‘শোনো মেয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসো তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।কারণ এত সহজে তুমি আলোকের হাত থেকে ছাড়া পাবে না।’

‘আর তুমি একটু ট্যারা টাইপের ।এক কথায় কথা শুন না।তাই এর জন্যও তোমাকে ট্রিটমেন্ট দিতেও হবে।’

অনেক হাসিখুশি নিয়ে আলোক বললো কিন্তু চাঁদ কোনো রিয়েক্ট করলো না।আলোকের মনের ভিতর এক ভয় লাগছে চাঁদ তাকে ক্ষমা করবে তো?আলোক একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অনেক গভীর ভাবে চাঁদ কে ডাকলো,

‘চাঁদ?’

আলোকের এমন গম্ভীর কন্ঠে চাঁদ একটু অবাক হলো তার পর আলোকের দিকে তাকালো।আলোক চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর নিজের পা দুটো মেঝেতে বিছিয়ে দিয়ে চাঁদের মাথা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গাইতে শুরু করলো,

‘ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে…

তোমার চুলে হাত বুলাবো,
পূর্ণ চাঁদের তলে …..
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার,
জোসনা পড়ুক কোলে…..
আজকে জড়ায় ধরবে,
তোমার মনকে আমার মন….
গাইবে পাখি, গাইবে জোনাক ;
গাছ গাছালি বন….

এত ভালবাসা গো জান,
রাখিও আঁচলে….
দোলাও তুমি, দুলি আমি ;
জগত বাড়ি দোলে …..
শব্দ ঘুমের মূর্ছনাতে,
বাতাসও সুর তোলে…..
ভালবাসার শিশির কণা,
পড়বে ও আঁচলে….
এত ভালবাসা গো জান,

রাখিও আঁচলে….
দোলাও তুমি, দুলি আমি ;
জগত বাড়ি দোলে …..
ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে……”

[বিঃদ্রঃ এখানে কোনো রকম বাদ্যযন্ত্র বা কোনরকম অশ্লীল ওয়ার্ড নেই।আর স্বামী স্ত্রীর একে অপরের জন্য এইরকম গান গাওয়া যেতে পারে।]

গাওয়া শেষ করতে করতে আলোক কেঁদে ফেলল।তারপর চাঁদের গাকের উপর তার গাল রেখে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,

‘চাঁদ পাখি।আই এম রিয়ালি সরি।আমি তোমাকে এই কয়েকদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি। রাগের বশে থাপ্পর ও মেরেছি।জানি না আমার কি হয়েছিল।হয়তো শয়তান ঘাড়ে চেপে বসছে।কিন্তু আমি তাকে প্রশ্রয় দিয়ে তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।আমি এভাবে থাকতে পারবো না। নিজের করা পাপের জন্য প্রতিনিয়ত আমি ভিতরে শেষ হতে যাচ্ছি।আর পারছি না আমি প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দাও।’

এইসব বলে কাদঁছে আলোক।তার চোখের পানি চাঁদের মুখে পড়ছে।চাঁদ খুব অবাক হয়ে আলোকের দিকে দেখছে। বিয়ের পরের দিন থেকে আজ সহ মাত্র দু দিন হলো যার মধ্যে মাত্র বিয়ের রাতে আর তার পরের দিন সকালে আলোক বাজে ব্যবহার করছে। সামান্য এইটুকুর জন্য আলোক নিজেকে কতটা দোষী ভাবছে।আসলেই যার মনে থাকে আল্লাহর ভয় সে এমনি হয়।মানুষ মাত্রই ভুল।আলোকের দ্বাড়াও ভুল হয়েছে।আর যারা ভুল করে তাদের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হন ,আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তাদের আল্লাহ মাফ করে দেন। চাঁদ হাসলো।হটাৎ চাঁদ হাসাতে আলোক চাঁদের উপর থেকে মাথা উঠল।তারপর চাঁদ ও উঠলো।আলোক চাঁদের দিকে তাকাতেই চাঁদ কিছু ইশারা করলো।আলোক চোখ মুখ মুছে চাঁদকে বললো,

‘ তুমি ইশারায় বল।আমি বুঝতে পারবো।’

আলোক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ জানে,কিন্তু মাঝে মাঝে বুঝতে সমস্যা হয়।চাঁদ নিজেকে দেখিয়ে আলোক কে দেখালো আর আলোক চাঁদের ইশারা অনুযায়ী বলতে শুরু করলো,

‘আপনার প্রতি আম_____

বলে আলোক থামলো তারপর ভেংচি কেটে বললো,

‘আপনি না ‘তুমি’।’তুমি’ করে বলবে আমায়।আবার বলো।’

চাঁদ হালকা হেসে ইশারা করতে লাগলো আর আলোক সেই অনুযায়ী বলতে,

‘তোমার প্রতি আমার কোন রাগ, অভিযোগ, অভিমান নেই।তুমি আমার হাসব্যান্ড মানে আমার পরিপূরক।আমার উপর নিজের রাগ,ভালোবাসা, অভিমান সব কিছু করারই তোমার অধিকার আছে। বিয়ের হওয়ার পর থেকেই আমি তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসি আমার স্বামীকে।আমি তোমার উপর কখনোই রাগ করিনি,না করেছি অভিমান।তাই ক্ষমা করার কথা আসে না।আর আল্লাহ তাআলা মহান। তিনি তার বান্দাকে অতিসহজেই ক্ষমা করে দেন,যদি সে একবার মন থেকে তওবা করে।তাহলে সেখানে আমি কে যে তোমাকে ক্ষমা করার?আমি নিজেও একজন পাপী বান্দা। তাই ক্ষমার করার কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছি, সামনেও ভালোবাসবো ইন শা আল্লাহ।’

আলোক থামলো কারণ চাঁদ ইশারা করা থেমে গেছে।চাঁদ অবাক দৃষ্টিতে আলোক কে দেখছিল কিভাবে আলোক তার কথা বুঝলো,সে কি বলতে চেয়েছে আলোক সব বলে দিলো তার ইশারা করতেই। এমনটাও সে আলোক কে ভাবে নি।এদিকে আলোক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন থেকে আমচমকা ই সে চাঁদ কে জড়িয়ে ধরলো। ধরে কাঁদতে লাগলো। হটাৎ করে এমন হওয়ায় চাঁদ একটু হকচকিয়ে গেল।আলোক জড়িয়ে ধরে বললো,

‘সরি চাঁদ পাখি।সব সময় চেষ্টা করবো তোমায় খুশি রাখার জন্য। আল্লাহ্ আমার সাধ্যে যতটুকু দিয়েছে সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।আমি এটা বলবো না যে তোমাকে সব সময় হাসি খুশি রাখবো,কখনো তোমাকে কাদাবো না।কারণ এইসব শুধু কল্পনায় মানায় বাস্তবে নয়। বাস্তবে জীবনে সুখ,দুঃখ,কষ্ট,হাসি,কান্না সবই থাকবে।তবেই না এর নাম জীবন।’

বলে আলোক হাসছে আবার কাদঁছেও।চাঁদ ও কান্নার মাঝে হাসছে।

____

‘যদি এতটাই ভালোবাসা ছিল তাহলে এইরকম হলো কেনো?

অনেক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জিজ্ঞাসা করল তারা। নিরব সামান্য হাসলো।

‘ভালোবাসা! এক অদ্ভুত! এই ‘ভালোবাসা’ নামক শব্দের সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাসি,সুখ,দুঃখ,কান্না সব। কাউকে এই ভালোবাসা মারে আবার কাউকে বেচে থাকতে দেয়।এইরকম তাই হয়েছিল___

#চলবে….