#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৪
এই বাসার ছাঁদটা আমার বরাবরই ভীষণ প্রিয়। ফুলে ফুলে ছাঁদ সজ্জিত। ছাঁদের মাঝখানে একটা দোলনা আছে। তবে আমার রেলিংয়ের ওপর বসতেই ভালো লাগে। এই বাসার ছাঁদের রেলিংটা একটা বেশিই উঁচু। যার জন্য লাফিয়ে বসতে হয়। আমি হাতের ফোনটা রেলিংয়ের ওপর রেখে লাফিয়ে রেলিংয়ের ওপর ওঠে বসলাম। বেলি ফুলের ঘ্রাণে চারপাশটা মৌ মৌ করছে।
সময়টা এখন গৌধুলি লগ্ন। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। চারদিকটা সূর্যের লাল আভা ছেয়ে গেছে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। সবারই নিজের নীড়ে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। শুধু সময় হয় না আমার ডাক্তারবাবুর নিজের নীড়ে ফেরার। ফোনটা বাঁজছে। ফোনের শব্দ বিরক্ত লাগছে। এই শান্ত পরিবেশে এই শব্দটা অসহ্যকর এক অনুভূতি দিচ্ছে। আম্মুর ফোন দেখে ঝটপট ফোনটা রিসিভ করে ফেললাম।
আসসালামু ওয়ালাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
কেমন আছো আম্মু?
আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? রুদ্রর সাথে সব ঠিক ঠাক আছে তো?
আম্মু আমি একদম ঠিক আছি, আর উনার সাথেও সব ঠিক ঠাক আছে।
বিহান তো প্রীলিয়ার সাথে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। শুনছিস কথাটা?
কথাটা শুনিনি। তবে আমি তো জানতাম এই বিয়েটা হবার নয়। এক সময় না এক সময় এই বিয়েটা ভাঙবেই।
আম্মু আতকে ওঠে বলে, তুই এটা আগে থেকে কী করে জানতি? তুই কিছু করিস নি তো?
আমি কিছুই করিনি তবে ভাগ্নি অনেক বড় একটা গেইম খেলেছে। এই গেইম খেলার অপরাধে তাকে কী কী ভোগ করতে হবে সে নিজেও জানে না।
কী গেইম খেলেছে?
সেটা সময় হলেই জানতে পারবা।
আম্মুর সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। আযানের সুমধুর ধ্বনি কর্ণকুহর হতেই ছাদ থেকে নিচে নেমে এলাম।
_____________
উনি ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় আধ শোয়া হয়ে কাজ করছেন, আর আমি চেয়ারে বসে হেসেই চলেছি। এই তো কিছুক্ষণ আগে আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী ত্রয়ী সাথে কথা বললাম। মেয়েটার সাথে কথা বলার পর থেকে নিজের হাসি থামাতেই পারছি না। মেয়েটা এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে যে হাসি থামানো কষ্টকর হয়ে যায়। আমার হাসি দেখে উনি কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকাচ্ছেন। আমি উনার দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে হেসেই চলেছি।
তুমি হাসি থামাবা। তোমার হাসি দেখলে আমার বিরক্ত লাগে। হাসির শব্দটাও তিক্ত লাগে।
আপনার বিরক্ত লাগলে আমি কী করবো? আমারও তো বিরক্ত লাগে আপনার কথা শুনলে। আপনার কথা কর্ণগোচর হতেই মনে হয় কেউ কানের মাঝে মরিচ ঢেলে দিয়েছে।
আমার কথা শুনতে বিরক্ত লাগলে কানে তুলা দিয়ে রাখো। তাহলেই আর আমার কথা শুনতে হবে না।
সেইম টু ইউ। আপনিও চোখ বন্ধ করে কানে তুলা গুঁজে দিন। তাহলেই আর আমার হাসির দেখতেও হবে না, হাসির শব্দও শুনতে হবে না। আপনার কন্ঠ একটুও ভালো লাগে না। কিন্তু জানেন আমাদের কোচিংয়ে একটা স্যার আছে। স্যারের কন্ঠস্বর এতো মিষ্টি যে,
উনি কিছু বললেন না তবে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমার আর কিছু বলার সাহস হলো না। আমি আমার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
____________
আজকে শুক্রবার। উনারও ডিউটি নেই আমারও কোচিং নেই। দুজনেরই আজকে ছুটি। কিন্তু উনি আমাকে কড়াকড়ি ভাবে ইগ্নোর করছেন। সকাল থেকে একটা কথাও আমার সাথে বলেননি। উনার সাথে কথা বলতে গেলেও পাশ কাটিয়ে চলে যান।
রিদি আপু আর নিয়াম ভাইয়া আজকে বিকেলে চলে যাবে। তাই সকাল থেকে মামুনি বিভিন্ন পদ রান্না করছে। আমি আর রিদি আপু হেল্প করছি। রান্না শেষ হতেই মামুনিকে রেস্ট নিতে বলে আমি আর রিদি আপু সবকিছু এনে ডাইনিং টেবিলে রাখলাম। নিধিকে বলা হলো সবাইকে ডেকে নিয়ে আসার জন্য। নিধি দৌড়ে চলে গেলো। একে একে সবাই চলে এলেন শুধু উনি ছাড়া।
একটু পর নিধি টানতে টানতে উনাকে নিয়ে আসছেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উনি আসতে চাইছিলেন। উনি চাইলেই হাতটা ছাড়িয়ে নিতে পারেন। কিন্তু উনি তা করবেন নাহ আমি জানি। উনি নিধিকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। মুখে স্বীকার না করলেও সবাই বুঝতে পারে।
সবাই হই হুল্লোড় করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। কিন্তু উনি একটা কথাও বললেন না। উনি চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলেন। আমিও তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে রুমের দিকে দৌড় দিলাম। আমাকে এভাবে যেতে দেখে সবাই হেসে দিল। আমি রুমে ঢুকবো এই সময় উনি রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। আমি পিছন থেকে উনার শার্ট খামছে ধরলাম। উনি ভ্রু কুচকে পিছন ঘুরে তাকালেন।
কী সমস্যা আপনার? কথা বলছেন নাহ কেনো?
উনি এবারও নিশ্চুপ।
এবার কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে। কথা বলছেন নাহ কেনো আপনি? ইগ্নোর কেনো করছেন আমাকে?
উনি এবার রেগে বললেন, তোমার সমস্যাটা কী? আমাকে না খোঁচালে তোমার ভালো লাগে না? আমি কথা বললেও দোষ না বললেও দোষ। তুমিই তো গতকাল রাতে বললে আমার কথা শুনলে তোমার বিরক্ত লাগে। আমি তো তোমাকে ইগ্নোর করছি না। তোমাকে যাতে আমার কথা না শুনতে হয় তার চেষ্টা করছি।
আমি তো জাস্ট মজা করে বলছিলাম, আর আপনি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন? আপনি তো আমাকেও বলেছেন। তাই বলে কী আমি হাসি বন্ধ করে দিয়েছি? আপনি বুঝতে পারছেন নাহ আপনার কন্ঠ স্বর না শুনলে আমার কষ্ট লাগে। বক্ষ পিঞ্জরে চিন চিন ব্যথা হয় আপনার কথা না শুনলে।
ড্রামাবাজ একটা।
উনি বিড়বিড় করে কথাটা বলে রুম থেকে চলে গেলেন।
_____________
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছি সবাই। আর উনি বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। মনে হচ্ছে উনি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন। কলিংবেলের শব্দে উনি লাফিয়ে লাফিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলেন। দরজা খুলেই কাউকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলেন। আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কে এসেছে সেটা দেখার জন্য। কন্ঠ স্বর শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না কে এসেছে।
ডাক্তারবাবুর প্রাণ প্রিয় বন্ধু ইলান ভাইয়া এসেছেন। লোকটার সাথে এর আগে আমার মাত্র দুই বার দেখা হয়েছে। কিন্তু কণ্ঠস্বর চিনতে আমার একটুও অসুবিধা হলো না। উনি এতোটাই মজার মানুষ যে উনাকে ভোলা প্রায় অসম্ভব। আমি উনার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বললাম,
কেমন আছেন ভাইয়া?
আরে রিয়া যে আমি তো ফাস্ট ক্লাস আছি। তুমি কেমন আছো? উফ তোমাকে তো ভাবি ডাকা দরকার। যতই হোক বন্ধুর বউ বলে কথা। কিন্তু তোমাকে দেখে ভাবি ভাবি ফিলিংসটা আসে না। রিয়াটাই ঠিক আছে।
আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি আমাকে রিয়া বলেই ডাকবেন সমস্যা নাই।
আমাকে ছাড়া সবার সাথে কথা বললে হাসি মুখ থেকে সরতেই চায় না। আমার সাথে কথা বলতে আসলেই জংলীদের মতো বিহেইভ করে।
উনি বিড়বিড় করে কথাটা বললেও। উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকায় আমি উনার কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেলাম। এই অপমানের বদলা তো আমি পরে নিব।
আরে নিয়াম ভাই যে কেমন আছেন?
আমি ফাস্ট ক্লাস আছি শালাবাবু। তুমি কেমন আছো?
ভালো তো থাকবেনই আমার বউ ভাগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি কেমনে ভালো থাকি? আমার বউ আমাকে চিনে না।
রিদি আপু মুচকি হাসি দিয়ে বলে, কেমন আছো ইলান?
ইলান ভাইয়া বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়েন। তোমার মুখে নিজের নামটা শুনলে বুকে চিন চিন ব্যথা করে। সেটা কী তুমি বুঝো না?
ইলান ভাইয়ার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
চলবে…..
#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#বোনাস পর্ব
❌কপি করা নিষেধ ❌
ইলান ভাইয়া বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়েন। তোমার মুখে নিজের নামটা শুনলে বুকে চিন চিন ব্যথা করে। সেটা কী তুমি বুঝো না?
ইলান ভাইয়ার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
আহ রিয়া তুমি আমার কষ্ট দেখে এভাবে হাসতে পার না। তুমি না আমার বোন। তোমার উচিত আমার এই কষ্টে কেঁদে কেঁদে বন্যা বানিয়ে দেওয়া।
আর এই বন্যার পানিতে যেনো তুই ভেসে যাস।
ইলান ভাইয়া রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে, চুপ থাক তুই। কষ্ট আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এই বেয়াদব মহিলা আমাকে ধোকা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার বিয়ে করে ফেললো। আমি এই কষ্ট কই রাখি?
তোর উচিত এই কষ্টে কঁচু গাছে ফাঁস নেওয়া।
ইলান ভাইয়া আর রুদ্রর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে ইলান ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,
আচ্ছা ভাইয়া আপনার আর রুনা আপুর তো লাভ ম্যারেজ তাই না?
ইলান ভাইয়া মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। তাদের লাভ স্টোরি জানার জন্য আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। আমি অনুরোধ সুরে বলি,
ভাইয়া আপনাদের লাভ স্টোরিটা বলুন না।
বলার মতো কোনো লাভ স্টোরি আমাদের নেই। আমাদের লাভ স্টোরিতে ছিল না কোনো ভিলেন আর না কোনো বাধা। আর চার পাঁচটা প্রেমের মতোই আমাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল। হাই স্কুল লাইফ থেকে আমাদের প্রণয় শুরু। তখন থেকে আমরা এক সাথে আছি। এখন পর্যন্ত এক সাথেই আছি। স্কুল লাইফ শেষ হলো, কলেজ লাইফ শেষ হলো। ভার্সিটি লাইফে আমরা দুজন আলাদা হয়ে গেলাম। ও ভার্সিটিতে ভর্তি হলো আর আমি মেডিক্যালে। তবে ইন্টাররেস্টিং ব্যাপার হলো আমাদের ফাস্ট হাগ ফাস্ট কি……
আমি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললাম,
ছিঃ নাউযুবিল। ভাইয়া এসব কী বলেন? বেড রুমের কার্যকলাপ পাবলিক প্লেসে বলছেন কেনো?
রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, ইলান তুই এখনোও শিখলি না কোথায় কি বলতে হয। বাচ্চা মেয়েদের সামনে এসব কেউ বলে? বাচ্চারা এসব কথাবার্তা হজম করতে পারে না।
আমি উনার দিকে নাক ফুলিয়ে তাকাই। নিয়াম ভাইয়া হাসি মুখে বলে,
রিয়া এমন করছো কেনো? রুদ্র তো…..
নিয়াম ভাইয়ার কথার মাঝেই রুদ্র কাঁশতে শুরু করে। যেনো কাঁশতে কাঁশতে যক্ষা রোগীর ট্যাগ নিয়ে নিবেন। রিদি আপু নিয়াম ভাইয়ার মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
লজ্জায় আমি হাসফাস করছি। উনি কাঁশতে কাঁশতে ওঠে চলে যেতে নিলেই ইলান ভাইয়া উনাকে টেনে আবার বসিয়ে দেয়।
এমন ডং করছিস কেনো? দুই দিন পর বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি এখনো আমাদের সামনে ঢং করস। বিয়ের আগে তো বিয়ে করবি না বলে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছিলি। এখন তো বউ ছাড়া বাঁচস না।
তোর মতো আমার মাথায় এতো বাচ্চা ঘুরে না।
আমার মাথায় বাচ্চা ঘুরে তো তোর কী হয়ছে? আমি তো প্লেন করে নিয়েছি আমি প্রত্যেক বছর একটা করে বাচ্চার বাপ হবো।
আগে একটার হয়ে নে। তারপর বাকিগুলোর চিন্তা করিস।
আল্লাহ চাইলে…..
আমি দৌড়ে ওখান থেকে রুমে চলে এলাম। উনাদের এসব বেফাস কথা বার্তা আর নিতে পারছিলাম না। সবাই যেনো লজ্জা সরম বাজারে বিক্রি করে দিছে।
______________
রিদি আপুরা এখানে আছে, ইলান ভাইয়াও যখন এখানে এসেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার। বাধ সাদলো মামুনি আর আংকেল। উনারা কিছুতেই যাবেন না। অগত্যা উনাদের ছাড়াই আমাদের যেতে হচ্ছে।
রেডি হচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো রুমে একটাই ড্রেসিংটেবিল আর একটাই আয়না। উনিও রেডি হবেন আর আমিও রেডি হবো। আমি হিজাব পড়ছিলাম। ঠিক তখনি উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করা শুরু করে দেন। আমি বিরক্ত হয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এতে উনার কাজে ব্যাঘাত ঘটলো। আমার সামনে দাঁড়ানোর মতো আর জায়গা নেই। আমি একেবারে ড্রেসিংটেবিল ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছি। উনি আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই আমি বিরক্ত হয়ে উনাকে বলি,
কী সমস্যা আপনার? এমন বাচ্চামু কেনো করছেন? আপনি যে লম্বা আমার পিছনে দাঁড়িয়েও আপনি অনায়সে রেডি হতে পারবেন। কিন্তু আমি তা পারবো না। আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আমি কিছুই দেখতে পারবো না।
এতো খাটো হইছে কেনো? কমপ্লেন খাওনি? ইউ নো তোমার সাইজ একদম আঙ্গুরের মতো।
রাগে দুঃখে চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। এর আগে কেউ কখনো আমাকে এভাবে বলেনি। রাগে আমি রুম থেকে চলে এলাম। মামুনির রুমে গিয়ে হিজাবটা পড়ে নিলাম। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি নিয়াম ভাইয়া, রিদি আপু, নিধি, ইলান ভাইয়া আগে থেকেই বসে আছে। এখন শুধু দুইটা সিটই খালি আছে। একটা ড্রাইভিং সিট আরেকটা ড্রাইভিং সিটের পাশেরটা। উনি যে ড্রাইভ করবেন। সেটা আমি জানি। আমি কিছুতেই উনার সাথে বসবো না।
ইলান ভাইয়া আপনি সামনে আসবেন প্লিজ।
আমি মিষ্টি বোনটার কথা নিশ্চয়ই শুনতাম। কিন্তু কী বলো তো আমার মাথা কেমন ঘুরছে? শরীরটা কেমন লাগছে। তুমি প্লিজ সামনে বসে পড়ো। বমি বমিও লাগছে। এখন যদি আমি রুদ্রের শরীরে বমি করে দেই। তাহলে আর রুদ্র আমাকে আস্ত রাখবে না। তাই তো এমন একটা জায়গায় বসেছি এক পাশে জানালা অন্য পাশে প্রাক্তন। প্রাক্তনের গায়ে বমি করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্লেন করছি।
আমি উনার লজিকলেস কথা বার্তা শুনেই বেশ বুঝতে পারছি সব সামনে না বসার বাহানা। যেতে একদম ইচ্ছে করছে না। আমি না গেলে সবার মন খারাপ হবে। এর মাঝে উনি এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন।
কেউ একজন কী গাড়িতে ওঠবে? নাকি তার যাওয়ার ইচ্ছে নেই? তাকে ফেলে চলে যাব নাকি?
আমি ফুস ফুস করতে করতে নিজের সিটে বসে পড়লাম। আমি বসতেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর থেকেই ইলান ভাইয়া উনাকে এদিকে তাকাতে বলছেন তো আবার অন্যদিকে। আচমকা ইলান ভাইয়া চিৎকার করে বলে ওঠে,
রুদ্র তুই বাম দিকে তাকা। দেখ কী সুন্দর একটা মেয়ে যাচ্ছে?
আচমকা চিৎকার করে ওঠায় রুদ্র ঘাবড়া গিয়ে হুট করে গাড়ি ব্রেক কষে। এদিকে আমি রাগে সিট বেল্ট বাঁধতেই ভুলে গেছি। নিয়াম ভাইয়ার জন্য শুধু ব্যাথা পায়নি। আমি হেলে পড়তেই নিয়াম ভাইয়া আমাকে পিছন থেকে ধরে ফেলেন।
রিয়া তুমি সিটবেল্ট বেঁধে বসবা না। এখনি তো একটা এক্সিডেন্ট হতো। আমাদের ঘুরা রেখে হসপিটালে যেতে হতো।
জিজু তুমি কাকে কী বলছো? ওর তো কোনো কমনসেন্সই নেই। গাধা একটা। শুধু রাগই দেখাতে পারে। সবাইকে অস্থির না করলে এই মেয়ের শান্তি হয় না। রিডিকিউলাস।
উনি নিজেই আমার সিটবেল্ট বেধে দিলেন। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি। উনি এভাবে আমাকে সবার সামনে না বললেও পারতেন। অভিমানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। আমি জানি আমি অভিমান অপাত্রে দান করছি। উনি কখনোই আমার অভিমান বুঝবেন নাহ। অভিমান ভাঙানো তো অনেক দূরের কথা।
কী সমস্যা তোর? এমন চিৎকার করছিস কেনো?
আমার আবার কী সমস্যা? আমার কোনো সমস্যা নেই তো। আমি তো শুধু চেক করছিলাম তোর দৃষ্টি শুধু রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নাকি অন্য মেয়েদের দিকেও যায়।
আমি ওর দিকে তাকাবো কেনো? তুই এসব আজাইরা জিনিস বাধ দিয়ে নিজের কাজে মন দে। সারাদিন তো শুধু মাথায় এসবই ঘুরে।
রুদ্রর কথা শুনে ইলান ভাইয়া মুখ কালো করে ফেলে। গাড়ি জুড়ে শুধু নিস্তব্ধতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এই নিস্তব্ধতা ভেঙে হুট করেই রুদ্র বলে ওঠে,
সরি। আসলে তুই এভাবে চিৎকার করে ওঠলি তাই রেগে গিয়েছিলাম। তুই তো জানিস আমি চিৎকার চেঁচামেচি একদম পছন্দ করি না। প্লিজ কিছু মনে করিস না।
আমি বাইরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম উনি আমাকে সরি বলছেন। আমি তো এমন কেউ না যে উনি আমাকে সরি বলবেন।
চলবে….