পূর্ণিমাতিথি পর্ব-১৫+১৬

0
493

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৫

আমি বাইরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম উনি আমাকে সরি বলছেন। আমি তো এমন কেউ না যে উনি আমাকে সরি বলবেন। আমি উনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কেউ না তো। উনার তো আমার মন খারাপে কিছু যায় আসে না। আমার জীবনে আমার অবস্থান একটা আগাছার মতো। আগাছা যেমন মানুষ উপড়ে ফেলে, তেমনি একদিন উনিও আমাকে উনার জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। কিন্তু আমি তো সেই সুযোগ দিব না। তার আগেই আমি উনার জীবন থেকে অনেক দুরে চলে যাব। এতোটাই দূরে যাব উনি আমাকে আর কখনো খোঁজে পাবেন নাহ।

সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। কিন্তু আমি নিশ্চুপ।

রুনা আসুক তারপর আমি তোর হাসি বের করবো। আমি বলবো তুই অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকিস। তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মাঝে মাঝে চোখও মারিস।

ছিঃ রুদ্র। তোকে তো আমি ভালো ভাবতাম, আর তুই আমার সংসার ভাঙতে চাইছিস।

তোর ড্রামা অফ কর।

_____________

সবাই মিলে আজ অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। একসাথে সবাই হাওয়াই মিঠাই খেলাম। উনি প্রথমে খেতে না চাইলেও ইলান ভাইয়া জোড় করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছিল। রুদ্র আর ইলান ভাইয়া কী যেনো একটা জরুরি কাজে গিয়েছে। যাওয়ার আগে অবশ্য আমাকে গাড়িতে বসে থাকার কথা বলে গিয়েছিল। রিদি আপুরা নিজেদের বাসায় চলে গেছে।

হুট করেই কেউ একজন আমার হাত ধরে রাস্তার পাশ থেকে সরিয়ে নিলো। সাথে সাথেই তীব্র বেগে একটা গাড়ি আমার পাশ ঘেষে চলে গেলো। আচমকা এমন হওয়াতে আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলাম।

আর ইউ অকে?

পুরুষালি কন্ঠ কর্ণকুহর হতেই আমি মাথা তুলে থাকালাম। চোখের সামনে স্বল্প পরিচিত একটা মুখ। এই লোকটা আগের বারও আমাকে বাঁচিয়েছিল। এবারও আমাকে বাঁচালো। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। আমি ঠিক আছি।

ধন্যবাদ আপনাকে। আবারও আপনি আমার জীবন বাঁচালেন। আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন এর তুলনায় ধন্যবাদটা অতি সামান্য। আমি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

কৃতজ্ঞ থাকার দরকার নেই এটা আমার কর্তব্য ছিল। চোখের সামনে একজনকে তো আর মরতে দেখতে পারি না। আমার জায়গায় আপনি হলেও হয়তো এই একই কাজ করতেন। বাই দা ওয়ে দুই দুবার দেখা হলো কিন্তু আপনার নামটা জানা হলো না। আমি ইফাদ আপনি?

আমি রিয়া।

নাইস নেইম।

ধন্যবাদ।

আচ্ছা তাহলে আমি আসি, আর একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। আই থিংক আপনাকে কেউ মারার চেষ্টা করেছিল। আপনাকে বাঁচানোর জন্য তো সবসময় আর আমি থাকবো না।

উনি আমাকে বাই বলে চলে গেলেন। আমিও সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বাই বললাম। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। কে আমাকে মারতে চাইছিল? এটা পরিষ্কার কেউ একজন আমাকে মারতে চাইছিল। কারণ আমি মেইন রোড থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেউ একজন ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে গাড়ি চাপা দিতে চাইছিল। কিন্তু কে?

আমি গিয়ে আবার গাড়িতে ওঠে বসলাম। একটু পর উনিও আসলেন। সিটবেল্ট বাধতে বাধতে উনি বলেন,

বাহ আজকে এতো শান্ত শিষ্ট। এমনিতে তো তোমাকে ধমকিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যায় না। আর আজকে নিজে থেকেই এতক্ষণ ধরে শান্তভাবে গাড়িতে বসে আছো।

আমি উনার কথার কোনো প্রতিত্তর করলাম না। উনি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলেন,

তখনকার জন্য রেগে আছো? বকাটা তোমার প্রাপ্য ছিল। এর জন্য আমি তোমাকে সরি বলবো না। ভুলটা তোমার ছিল। জিজু তোমাকে না ধরলে এতক্ষণে তুমি হসপিটালে থাকতে।

আমি এবারও কিছু বললাম না। উনিও আর কিছু বললেন না। উনি চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি উনাকে তখনকার ঘটনাটাও বললাম না। বললেই বকাবকি শুরু করে দিবেন। তাই চুপ থাকাই ভালো। হুট করেই উনি আশ্চর্যজনক একটা প্রশ্ন করে বসেন,

ফুচকা খাবে তুমি?

মানে?

ঐ যে দেখো ফুচকা আর চটপটির দোকান। খাবে? মেয়েদের মন খারাপ থাকলেও নাকি ফুচকা দেখলে মন ভালো হয়ে যায়।

আমি একবার দোকানের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ফুচকা কখনোই আমার প্রিয় খাবারের মাঝে ছিল না।

না খাব না। আপনি বাসায় চলুন।

সিরিয়াসলি তুমি মেয়ে হয়ে ফুচকাকে না বলছো।

মেয়ে হওয়ার পিছনে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ে হলে ফুচকা খেতেই হবে। প্রিয় খাবারের মাঝে ফুচকা থাকতেই হবে। আমি ফুচকা এতো পছন্দ করি না। এখানের ফুচকাগুলো নোংরা পরিবেশে তৈরি করে। একজন খেয়ে যাওয়ার পর আরেক জনকে এই প্লেটেই দিচ্ছে। দেখুন প্লেটগুলো বার বার এক পানিতেই ধুয়ে দিচ্ছে।

তুমি মেয়ে তো? কলেজ লাইফে থাকতে দেখতাম কলেজ ছুটি হওয়ার পর মেয়েরা হামলে পড়তো ফুচকার দোকানের ওপর। অ….

কিছু একটা বলতে গিয়েও উনি থেমে গেলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি উনি অরির কথায় বলতে চেয়েছিলেন। উনার মনটাও খারাপ হয়ে গেছে। আমি হাসি মুখে বললাম,

আমি কোনো ট্রিট মিস করি না। আপনি আমাকে ফুচকা ট্রিট দিতে চেয়েছিলেন। যেহেতু আমি ফুচকা পছন্দ করি না। তাই আপনি আমাকে চকলেট ট্রিট দিবেন। না বলতে পারবেন নাহ। যান এখনি চকলেট নিয়ে আসুন।

উনি চলে গেলেন চকলেট নিয়ে আসতে।

_________________

এর মাঝে কেটে গেলো দুইদিন। বিহান আমার সাথে অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার জন্য। কিন্তু রুদ্রর জন্য সুযোগ পায়নি। বিহান হঠাৎ কেনো আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। সেই কারণটা সবার কাছে অজানা হলেও আমি জানি।

আগামীকাল কোচিংয়ে পরিক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত। রুদ্র আমাকে একজন টিউটরের মতো গাইড করছে। পড়া না বুঝলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নোটস করে দিচ্ছেন। যাতে আমার সময় নষ্ট না হয়। যখন যা লাগে সব এনে দিচ্ছেন। এক কথায় উনি উনার দায়িত্ব পালনে কোনো রূপ ত্রুটি রাখছেন নাহ।

নিজেকে একজনের দায়িত্ব মনে হতেই হাসি পায়। সত্যিই আমি উনার কাছে দায়িত্ব ছাড়া আর কিছুই না। এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই চুলে টান পড়লো। আমি চোখ মুখ কুঁচকে সামনে তাকাতেই রুদ্রকে দেখতে পেলাম। উনি কিছুক্ষণ আগেই হসপিটাল থেকে এসেছেন। হসপিটাল থেকে এসেই শাওয়ার নিয়েছেন। এখনো চুল থেকে টুপ টাপ পানি পড়ছে। শাওয়ার নেওয়ার পর উনাকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে।

একে তো আমার আদেশ অমান্য করে বিছানায় পড়তে বসেছো। এখন আবার পড়াশোনা বাদ দিয়ে স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেছো।

উনার কর্কশ গলা শুনে ঘোর কেটে গেলো। এই লোকটা অলয়েজ তেতো তেতো কথা বলে। জন্মের পর থেকে মনে হয় শুধু করলাই খেয়েছে।

বইটা দাও দেখি। এতক্ষণে কী পড়ছো? শুধু স্বপ্নই দেখেছ নাকি ফাঁকে ফাঁকে একটু পড়াশোনাও করছো।

মাথায় হাত দিয়ে আমি উনার দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকাই। বেয়াদব লোক এতো জুড়ে চুল টান দিয়েছে যে এখনো ব্যথা পাচ্ছি।

______________

পরীক্ষার দিন আমার এতো টেনশন হয় কি বলবো। টেনশনে পড়ায় ভুলে যায়, আর প্রশ্ন কমন পড়লে এক্সাইটমেন্টে লিখতে ভুলে যায় বা কোনটা রেখে কোনটা দিব সেটাই ডিসাইড করতে পারি না।

আজকে সকাল থেকেই প্রচুর টেনশন করছি। টেনশনে রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারি নাই।

এতো টেনশন করো না। তোমার প্রিপারেশন অনেক ভালো। ইনশাল্লাহ পরীক্ষা ভালোই হবে।

গাড়িতে ওঠে বসলাম। কিন্তু কিছুতেই সিটবেল্ট লাগাতে পারছি না। নিজের হাতের ওপর আরেকটা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে পাশে তাকাতেই ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

চলবে……

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৬

গাড়িতে ওঠে বসলাম। কিন্তু কিছুতেই সিটবেল্ট লাগাতে পারছি না। নিজের হাতের ওপর আরেকটা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে পাশে তাকাতেই ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। উনি তড়িৎ গতিতে আমার থেকে দূরে সরে গেলেন। আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে বসে আছি। দুজনেই অনেক অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। এমন একটা ঘটনা ঘটবে যেটা কারো কল্পনায় ছিলো না।

উনি সিটবেল্ট বাধার জন্য আমার দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময় আমি পাশে তাকাতেই দুজনেই অধর যুগল এক হয়ে যায়। সারা রাস্তা দুজনের মাঝে আরো কোনো কথা হয়নি। গাড়ি কোচিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই আমি ঝটপট নেমে পড়লাম। আমি নামতেই উনি এক মিনিট সময় ব্যয় না করেই চলে গেলেন। আমিও আর পিছন ফিরে তাকালাম না।

______________

কোচিং শেষে ত্রয়ী বললো, শপিংয়ে যাওয়ার কথা। আমিও আর না করলাম না। উনি একটু পরেই নিতে আসবেন। উনার সামনে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না। লজ্জা আর অস্বস্তিতে আমার অবস্থা বেহাল। তাই ত্রয়ীর সাথে শপিংয়ে যেতে রাজি হয়ে গেলাম।

দুজনেই একটা রিকশায় চড়ে বসলাম। রিকশায় চড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। সাথে যদি বক বক করার মতো কেউ থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আমরা দুজন নিজেদের কথায় এতোটায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে আর কারো কথায় মনে নেই। রিকশা এসে শপিং মলের সামনে দাঁড়ায়। রিকশা থেকে নামতে নিলেই হাত থেকে ফোনটা রাস্তায় পড়ে যায়। ফোন তুলে দেখি অফ হয়ে গেছে। অনেক বার অন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই অন হচ্ছে না।

আপাতত ফোনের চিন্তা বাদ দিয়ে শপিং মলের ভিতরে ঢুকলাম। ত্রয়ী অনেক কিছু কিনছে। কিন্তু আমার কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। আমার এই এক সমস্যা নিজের জিনিস নিজে পছন্দ করে কিনতে পারি না। হঠাৎই চোখ আটকে গেলো একটা উড়নায়। উড়নাটা কালো রঙের। কালোর মাঝে সোনালি সুতায় কাজ করা। সাধারণ কাজ তবুও আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করছে।

উড়নাটা যে দোকানে ছিল তার থেকে আমরা অনেকটাই দূরে ছিলাম। হঠাৎই মনে হলো আমার আগে যদি অন্য কেউ কিনে নেয় উড়নাটা। আমি ত্রয়ীর হাতটা টানা শুরু করলাম।

এই রিয়া! কী হয়েছে? তুই আমার হাত ধরে এভাবে টানাটানি করছিস কেনো? ড্রেসটা দেখতে তো দিবি।

আমি ত্রয়ীর কথায় পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলাম দোকানের দিকে। কেউ একজন উড়নাটার দিকে হাত বাড়িয়েছিল তার আগেই উড়নাটা টেনে আমার কাছে নিয়ে এলাম। উড়নাটার অপর পাশে ইফাদ দাঁড়িয়ে ছিল, আর উনিই উড়নাটার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলেন। উনাকে দেখে আমি অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।

কেমন আছেন ভাইয়া?

উনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,

এই তো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? উফ সরি আপনাকে তুমি বলে ফেললাম।

আলহামদুলিল্লাহ। সমস্যা নেই আপনি আমাকে তুমি করেই বলেন। আমি আপনার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট। বাই দা ওয়ে উড়ানাটা কী গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিচ্ছিলেন?

ত্রয়ী আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে, ‘উফ সরি আপনাকে তুমি বলে ফেললাম।’ এটা হচ্ছে ছেলেদের মেয়ে পটানোর ট্রেন্ড।

ত্রয়ী আর কিছু বলতে চেয়েছিল। তার আগেই আমি ত্রয়ীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাই। আমার চোখ রাঙানো দেখে ত্রয়ী চুপ করে যায়।

গার্লফ্রেন্ডের জন্য না বোনের জন্য।

তাহলে আপনিই এটা নিন।

না এটা তুমিই নাও। তোমাকেই মানাবে এটাতে।

ধন্যবাদ ভাইয়া। আসি তাহলে।

উনাদে বিদায় জানিয়ে বিল পে করে চলে এলাম। এদিকে ত্রয়ীর আনলিমিটেড বকবকানি। আমি এই লোকটাকে কী করে চিনি। লোকটার সাথে এতো কথা কেনো বলছিলাম। নিজের পছন্দের জিনিস লোকটাকে কেনো দিয়ে দিচ্ছিলাম। ত্রয়ীর বকবকানি সহ্য করতে না পেরে আমি ত্রয়ীকে সবকিছু খুলে বললাম। ত্রয়ীর মুখ তো বন্ধই হলো না উল্টো এনাম ভাইয়াকে গালি দেওয়া স্টার্ট করছে।

______________

কলিংবেল বাজাতেই সন্নিতা দি এসে দরজা খুলে দিল। ড্রয়িংরুমের কোথাও মামুনিকে দেখতে পেলাম না। হয়তো ঘুমাচ্ছে। আংকেলের কড়া নির্দেশ প্রত্যেক দিন বিকালে মামুনিকে ঘুমাতে হবে। নাহলে খবর আছে। বিয়ের এতোগুলো বছর হয়ে গেলো এখনো দুজনের মাঝে ভালোবাসা একটুও কমেনি। দিন দিন আংকেল যেনো মামুনির প্রতি আরো বেশি কেয়ারিং হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা রুদ্র তো আংকেলের ছেলে। শুনেছিলাম ছেলেরা নাকি বাবার মতো হয়। তাহলে আংকেল যেমন মামুনির প্রতি কেয়ারিং তেমন রুদ্র আমার প্রতি কেয়ারিং হতে পারে না। রুদ্র তো আমার প্রতি কেয়ারিংই তবে সেটা ভালোবাসা থেকে না দায়িত্ববোধ থেকে।

রুমে এসে রুদ্রকে বিছানার ওপর বসে থাকতে চমকে ওঠলাম। এই সময় তো উনি বাসায় থাকেন না। উনি মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। আমার আসার শব্দ শুনেই হয়তো মাথা তুলে তাকিয়েছেন। আমি উনার চোখ দুটো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। উনার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। নাকটাও লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি ভীষণ রেগে আছেন। কিন্তু কেনো? আমি তো রাগার মতো কিছু করি নাই।

এতক্ষণে আপনার আসার সময় হলো। তা কী কী শপিং করলেন? আমাকেও একটু দেখান।

উনার কথা শুনে আমি চমকে ওঠলাম। উনি কী করে জানলেন আমি শপিং করতে গিয়েছিলাম? আচমকা উনি আমার হাত থেকে শপিং ব্যাগটা কেড়ে নিলেন। ব্যাগ থেকে উড়নাটা বের করলেন।

বাহ বেশ সুন্দর তো। এটার জন্যই আমারে ইগ্নোর। আমি আবার কারো ইগ্নোর সহ্য করতে পারি না।

হুট করেই উনি উড়নায় আগুন ধরিয়ে দিলেন। আমি উনাকে আটকাতে চেয়েও আটকাতে পারি নাই। চোখের সামনেই উড়নাটা পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। হাতে আগুন লেগে ফুসকা পড়ে গেছে। বাহ্যিক ব্যথার চেয়েও মনের ব্যথাটা অনেক বেশি। কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লাম।

কেনো করেন এমন আপনি আমার সাথে? হৃদয় নামক কোনো বস্তু কী আপনার নেই? আপনি কী কোনো দিনই অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারবেন না?

উনি আমাকে বসা থেকে টেনে দাঁড় করালেন। আমার বাহু ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

আমিই নাহয় হৃদয়হীন। আপনার তো হৃদয় আছে। আপনি তো অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেন। আপনাকে নিয়েও যে কেউ টেনশন করতে পারে সেটা তো আপনি অনুভবই করতে পারেন না। আপনি তো নিজেরটা নিজে বুঝতে শিখে গেছেন। গতকাল এক্সিডেন্টের কথাটাও আমার কাছ থেকে চেপে গেলেন।

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে কাবার্ডে লাথি মারলেন। দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরলেন। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি আবার আমার দুই বাহু চেপে ধরেন। এবার বেশ জুড়েই চেপে ধরেন যার কারণে বেশ ব্যথা পাচ্ছি। একদিকে পুড়ে যাওয়া হাতের ব্যথা, আরেক দিকে উনার দেওয়া ব্যথা। চোখ দিয়ে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

ইলানের কাছ থেকে যখন জানতে পারলাম তোমাকে কেউ মারার চেষ্টা করেছিল। তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। পাগলের মতো ছুটে এসেছিলাম তোমার কোচিংয়ের সামনে। কিন্তু তুমি নেই। পুরো কোচিং তন্য তন্য করে খোঁজলাম। ফোনের কথা মাথায় আসতেই তোমাকে ফোন দিলাম। কিন্তু তুমি আমার ফোন পেয়েই ফোন বন্ধ করে দিলে। আমার মনে আরো বেশি ভয় ঢুকে গেলো। দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শহরের অলি গলি তোমাকে খোঁজে বেড়ালাম। এট লাস্ট দেখি তুমি শপিংমল থেকে শপিং করে বের হচ্ছো। অন্যের অনুভূতির মূল্য না দিলে কখনোই নিজের অনুভূতির মূল্য পাবে না।

উনি আমার ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। আমি হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম।
উনি এই ভালো তো এই খারাপ। কবে এই অসহ্যকর অনুভূতি থেকে মুক্তি মিলবে?

চলবে……..