প্রণয়ের সূচনা পর্ব-১+২+৩

0
455

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#সূচনা_পর্ব

–‘সে আরও এক বছর আগে বিয়ে করে নিয়েছে সূচি।এমনকি দেশেও নেই। পুরো পরিবার সমেত আমেরিকা তে থাকে।

কথাটুকু কর্ণধার হতেই সূচনা চট করে তাকালো স্নেহার পানে।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার।যেন সব দ’লা পাকিয়ে আ’টকে গেছে গ’লায়।গ’লা ঝে’ড়ে পরিষ্কার করে নিল সুচনা।চোখ থেকে উপচে আসা কান্না আটকালো কোনোমতে।কা’পা কাঁপা গলায় বললো –

–‘আ,,আজ তাহলে আস,,আসি স্নেহু, পরে দেখা হবে একদিন।

–‘মাত্রই তো আসলি আর একটু থাক।

–‘না রে যেতে হবে।

স্নেহার উত্তরের অপেক্ষা না করে পেছনে ঘুরে হাটা ধরলো সূচনা।ফিরে তাকালো না পেছনে। চোখ ভিজে উঠেছে তার।দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে।ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে মিনিট পাচেক হাঁটলেই একটা পার্ক। সেই পার্কের সামনে এসেই থেমে গেল।মনের অস্থিরতার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা।পা দুটোও যেন চলছে না আর।পার্কের এক কোণে একটা খালি বেঞ্চে বসে পড়লো ধপ করে।চোখ থেকে অনবরত ঝড়ছে অশ্রু। আনমনে আওরাতে লাগলো –

–‘ভালোবাসায় এত বিষাদ কেন?কেন এত বিরহ?সব ভালোবাসা পূর্নতা পায়না কেন?

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজেই আবার নিজেকে শোধালো-

–‘আমার ভালোবাসা তো এক তরফা ছিল।সে আদৌ ভালোবাসতো? পছন্দ করতো নাকি কিছুই ছিল না।সে তো আজও ধোঁয়াশা। আর তুই বো’কার মতো সেই ধোঁয়াশার বে’ড়া জ্বালে আটকে আছিস সূচি।এভাবে আর ক’দিন তিন বছর কম কথা না।

চোখ মুছে হাত ঘড়িতে সময় পরখ করে নিল।পাঁচটা বেজে গেছে প্রায়।তাড়তাড়ি ফিরতে বলেছিল তার মা আর সে এত বেলা করে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো সূচনা। পার্ক থেকে বেড়িয়ে একটা রিকশা ডে’কে উঠে পড়লো,রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

“এতক্ষণ যার কথা হচ্ছিল সে সূচনা কবির তানজুম।এইচএসসি পরীক্ষার্থী।পরীক্ষার্থী বলতে আজকেই শেষ হয়েছে তার পরীক্ষা।মা -বাবা সহ ঢাকাতে থাকে।বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।বাবা আরহাম কবির পেশায় একজন ব্যবসায়ী আর মা মিসেস দিশা গৃহীনি।স্নেহা স্কুল সময়ের এক ফ্রেন্ড সূচনার মূলত তার সাথে ই দেখা করতে ক্যাফেতে এসেছিল।
.
.
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে পাঁচটার কাছাকাছি। বাসায় আসতেই সূচনার মা মিসেস দিশা তাড়া দিতে থাকলেন তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য। সূচনা বিরক্ত হলো খানিক।বিরক্তি মাখা কণ্ঠে ই জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি হয়েছে আম্মু?এত তাড়া কীসের?রেডি হতে বলছো কেন?কে আসবে?

মিসেস দিশা এত প্রশ্ন একসাথে শুনে বললেন –

–‘তোর সব প্রশ্নের একটাই উত্তর।

–‘কি সেটা?

মিসেস দিশা নির্বাক ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন-

–‘তোকে দেখতে আসবে আজকে।

মিসেস দিশার কথা শুনে বিস্ময়ের চূড়ায় সূচনা।অবাক চিত্তে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে।মুখে কোনো রা নেই তার।বিস্ময়ের ভাব যেন কাটছেই না।

সূচনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিসেস দিশা বললেন-

–‘দাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে সূচি।পাত্র পক্ষ এসে পড়বে।

নীরবতার অবসান ঘটিয়ে সূচনা কর্কশ গলায় বলে উঠলো-

–‘আম্মু তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?আজকে মাত্র পরীক্ষা টা শেষ হলো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে দিলেনা। নতুন করে টেনশনে ফেলে দিলে।আমি কি বেশি হয়ে গেছি তোমাদের জন্য যে এখনই বিয়ে দিতে চাইছো।অন্তত অনার্স টা তো কমপ্লিট করতে দিবে।

–‘বেশি কথা কেন বলছিস? যা বলেছি তাই করবে।যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

–‘আমি বিয়ে করবোনা আম্মু।

–‘বিয়ে করতে বলিনি।আজকে দেখতে আসবেন শুধু যদি পছন্দ হয় তাহলেই কথা এগোবো নয়তো না।তুই শুধু সুন্দর করে তৈরী হয়ে তাদের সামনে যাবি।

–‘আমি যাবনা আম্মু।

–‘রাগ উঠাস না সূচি।

–‘তাহলে আমার কথা মেনে নাও। না করে দাও তাদের। আব্বুকে বলবো আমি যে তুমি জোর করছো আমাকে।

সূচনার কথা শুনে মুচকি হাসলেন মিসেস দিশা। তারপর বললেন-

–‘ছেলে কিন্তু তোর আব্বুর পছন্দের ই।তোর আব্বু নাকি অনেক আগে থেকেই চিনে।ওনার তো বেশ পছন্দ হয়েছে।আর তোর আব্বুর কাছ থেকে ছেলের বর্ননা শুনে আমারো পছন্দ হয়ে গেছে। এখন শুধু দেখার পা’লা,সামনাসামনি কথা বলার পা’লা তারপর সব।এখন তুই যা।

–‘যাবনা আমি।আসবো না তাদের সামনে।
কথাটুকু বলেই ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সূচনা।
.
.
.
পাত্রপক্ষের সামনে নত মস্তকে বসে আছে সূচনা।তখন রা’গ দেখিয়ে চলে গেলেও তার মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাইকমেলের কাছে হে’রে গেছে। না করতে পারেনি আর।অগত্যা তৈরী হয়ে এসেছে পাত্রপক্ষের সামনে।তাদের সামনে বসার পরে মাথা তুলে তাকায়নি আর। সালাম দিয়ে শুধু তাদের করা দু’টো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল সেটাও নত মস্তকে। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো।একটা মেয়ে।তার বয়সী কিংবা তার চেয়ে একটু ছোট। মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে তাকাতেই জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেমন আছো ভাবি?

আগন্তুক মেয়েটার মুখে ভাবি ডাক শুনে থতমত খেয়ে গেল সূচনা। এক মূহুর্তের জন্য যেন তব্দা মে’রে গেল।অন্য দিকে আরেক জনের কা’শি উঠে গিয়েছে। মিসেস দিশা তাড়াতাড়ি করে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন তার দিকে।এরই মাঝে পাত্র পক্ষের একজন মহিলা বললেন –

–‘ওদের আলাদা করে কথা বলতে দিলে ভালো হয়।বিয়ে তো ওরাই করবে, সারাজীবন একসাথে ওদেরই থাকতে হবে।তাই বলছিলাম।

মিসেস দিশা ও সম্মতি জানিয়ে বললেন –

–‘হ্যা আপা ঠিক বলেছেন।

তারপর সূচনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

–‘সূচি মা ওকে নিজের রুমে নিয়ে যা।

সূচনা মায়ের কথা শুনে অবাক হলো।এভাবে একটা ছেলেকে একা নিজের রুমে নিয়ে যেতে বলছে।আজ মায়ের ব্যবহারে একের পর এক শক খাচ্ছে সে।কিন্তু কি করবে এখন?বি’পাকে পড়লো সে।উপায় না পেয়ে উঠে দাড়ালো। ছেলেটাও উঠে দাড়ালো তার দেখাদেখি। সূচনা তাকে উদ্দেশ্য করে নিচু স্বরে বললো-

–‘আসুন।

বিনা বাক্যে তার পেছনে চলতে লাগলো সে।দুরুদুরু বু’কে তাকে নিয়ে প্রবেশ করলো রুমে।
.
.
বারান্দার এক পাশে সূচনা আর তার থেকে যথা সম্ভব দূরত্ব নিয়ে দাড়িয়ে আছে ছেলেটা।নিরব,নিস্তব্ধ পরিবেশে অচেনা দুই জন মানবী।দু’জনই নিশ্চুপ। মৌনতা ভাঙলো আগন্তুক সেই ছেলেটাই।জিজ্ঞেস করলো –

–‘আপনার নাম কী?

জলপাই রঙা শাড়ীর আঁচল আঙুলে পেঁচিয়ে ভাবনায় মত্ত ছিল সূচনা। হঠাৎ করা প্রশ্নে কেঁপে উঠলো সে।তা দেখে ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে বললো-

–‘আপনি নার্ভাস ফিল করছেন?রিল্যাক্স আমি তেমন কিছু করবোনা।আর আপনার মতামত ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে ও কিছু হবে না।এতটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন।

শীতল কণ্ঠে বলা কথাটুকু শুনে কেন যেন সাহস এলো সূচনার। ইচ্ছে হলো তার কথা বিশ্বাস করতে। আপাদত কম্পনরত হাত আর হৃদপিণ্ড দু’টোকেই সামলাতে হবে।বেসামাল তারা, একটু টেনশনে ই তাদের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।নিজেকে ধাতস্থ করে উত্তর দিলো-

–‘আমার নাম সূচনা কবির তানজুম।এবার এইচএসসি দিয়েছি।

–‘আচ্ছা। আমি প্রণয়,প্রণয় আহমেদ।পড়ালেখার পাঠ আপাদত চুকিয়ে ফেলেছি।এখন জব করছি মিরপুরের একটা কোম্পানি তে।

–‘ আচ্ছা।

–‘তখন আপনার পাশে যে বসেছিল,ওর নাম ইরা।আমার বোন।

মিনিট দুয়েক মৌনতা পালন করার পর বললো প্রণয়।

তার দিকে না তাকিয়ে ই সূচনা বললো-

–‘ওহ,,

–‘হ্যা,,বাচ্চা মানুষ। এজন্য তখন আপনাকে,,

সূচনা বুঝতে পারলো যে সে কি বলতে চাইছে তাই হালকা হেসে বললো-

–‘সমস্যা নেই আমি বুঝতে পেরেছি।

–‘আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

–‘জ্বি বলুন।

প্রণয় কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ডাক পড়লো বাইরে থেকে। বারান্দা থেকে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো দু’জন।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
২+৩
#পর্ব_০২
__________________________
–‘তখন আপনার পাশে যে বসেছিল,ওর নাম ইরা।আমার বোন।

মিনিট দুয়েক মৌনতা পালন করার পর বললো প্রণয়।

তার দিকে না তাকিয়ে ই সূচনা বললো-

–‘ওহ,,

–‘হ্যা,,বাচ্চা মানুষ। এজন্য তখন আপনাকে,,

সূচনা বুঝতে পারলো যে সে কি বলতে চাইছে তাই হালকা হেসে বললো-

–‘সমস্যা নেই আমি বুঝতে পেরেছি।

–‘আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।

–‘জ্বি বলুন।

প্রণয় কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ডাক পড়লো বাইরে থেকে। বারান্দা থেকে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো দু’জন।
.
.
.
চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সূচনা।রুমের দরজা লক।আপাদত কারো সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই তার।পাত্র পক্ষ চলে গেছে দুই ঘন্টার ও বেশি। তখন থেকে দরজা লক করে বসে আছে সে।ইতিমধ্যে মিসেস দিশা কয়েকবার এসেছেন তাকে ডাক’তে কিন্তু প্রতি বারই হতাশ হয়েছেন।মনের মধ্যে শ’খানেক প্রশ্ন।প্রণয় নামক ছেলেটার সাথে আসা সেই ভদ্র লোক আর মহিলা হচ্ছেন তার মামা-মামি।সেই মেয়েটা তার বোন, ইরা।তাহলে তার বাবা-মা কোথায়?তারা আসেন নি কেন?প্রণয় কি বলতে চায়ছিলো?বাব-মা ই বা কেন এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছেন?আর ইরা মেয়েটা তাকে ভাবি কেন ডেকেছিল?যাওয়ার সময় ও তো বললো-

–‘ভাবি আসি।

প্রণয়ের চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু সে দৃশ্য চোখ এড়ায়নি সূচনার।এমনিতেই পরীক্ষার চা’পে ছিল এক’য়টা দিন।কোথায় ভেবেছিলো পরীক্ষা শেষ হলে শান্তিতে শুধু ঘুমাবে।নিজের চিরচেনা একাকিত্বের জগৎ এ ডুব দিবে আবার।তা আর হলো কই নতুন করে এই উ’টকো ঝামেলা।

নাহ আর কিছু ভাবা যাবেনা।মাথা খা’রাপ হয়ে যাওয়ার উপক্রম একেবারে।ঘুমাতে হবে।চোখ বন্ধ করে শু’তেই ফোনের কর্কশ আওয়াজে লা’ফিয়ে উঠলো সূচনা।মেজাজ খা’রাপ হলো বটে।ফোন হাতে নিয়েই দেখলো মিহু নামটা জ্বলজ্বল করছে।সাথে সাথে রিসিভ করলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অভিমান আর উদিগ্ন মাখা কণ্ঠে করা উক্তি-

–‘বাসায় যেয়ে ফোন করলি না কেন সূচি?

সূচনা মনমরা কণ্ঠে উত্তর দিলো-

–‘সরি।আসলে আমার একদমই মনে ছিলনা।

–‘আচ্ছা।এমন শোনাচ্ছে কেন কণ্ঠ?কি হয়েছে তোর?

–‘কিছুনা,, ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম একটু।

–‘এখন ঘুমাবি কেন?সবে আটটা কি সাড়ে আটটা বাজে।তোর মন খা’রাপ?

লম্বা করে শ্বাস ছাড়লো সূচনা।তারপর বিরস কণ্ঠে বললো –

–‘মা-বাবা আমার বিয়ে দিতে চাইছে মিহু।আজকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছিল।

ওপাশ থেকে মিহু বিস্ময়াহত গলায় বললো –

–‘আমি কি ভুল কিছু শুনলাম? কি বলছিস তুই,,এত তাড়াতাড়ি? আজকে হুট করে যে,,

–‘জানিনা কিছু।আমার ভালো লাগছে না এই ঝামেলা।

–‘পাত্র পক্ষ কিছু বলেছে?

–‘না বলেনি এখনো।

–‘ছেলে কেমন?

–‘জানিনা।অল্প কিছু কথা হয়েছে,কথা শুনে মনে হয়নি খা’রাপ।আর বড় কথা হচ্ছে আব্বুর নাকি ছেলেকে সেই লেভেলের পছন্দ হয়েছে।

–‘তার মানে নিশ্চিত ছেলে ভালোই হবে।বিয়ে করে নে।হিহি।

–‘তোর মাথা খারাপ?

–‘কেন সমস্যা কি?এখনো ওখানেই আটকে আছিস?

নিশ্চুপ সূচনা।তার কাছ থেকে জবাব না পেয়ে মিহু বলতে লাগলো-

–‘যা হওয়ার হয়ে গেছে সূচি।আর কত পড়ে থাকবি সেটা নিয়ে?যে যাওয়ার চলে গেছে। আজ হোক আর কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে।তুই ভেবে চিন্তে দেখ তো অতীত নিয়ে পড়ে থেকে কি পেয়েছিস তুই?শুধু নিজেই কষ্ট পেয়েছিস আর কিছু ই না। এবার একটু বুঝা নিজেকে।সে আসার হলে আসতো।তিনবছর তো কম না।সে তো তোকে ভুলেই গেছে, ফেরার ও কোনো সূযোগ নেই।তাই তুইও ভুলে যা পুরোপুরি।

–‘সে বিয়ে করে ফেলেছে মিহু।

মিহুর কথার মাঝেই সূচনা ভাবলেশহীন গলায় বললো –

–‘কিহ?কবে?

–‘হ্যা আরও এক বছর আগে।

–‘আর তুই অপেক্ষা করছিস এই মানুষটার জন্য।

–‘আচ্ছা এখন রাখি।একটু ঘুমাবো,মাথা ধ’রেছে।

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।

কল কে’টে সাইড টেবিলে ফোন রেখে দিয়ে স’টান হয়ে শুয়ে পরলো সূচনা।ওপরে অনবরত ঘুরতে থাকা
সিলিং ফ্যানের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো।আস্তে আস্তে চোখে এসে ভিড় করলো ঘুম।
.
.
রাত দশটা।দরজায় কড়া ধা’ক্কার শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সূচনা।দরজার বাইরে থেকে মিসেস দিশা কড়া গলায় বলছেন-

–‘সূচি এবার যদি তুই দরজা না খুলিস তা হলে আ’গুন ধরিয়ে দিব তোর রুমে।সময় নেই,কাজ নেই, কাম নেই পেয়েছে নিজের একটা রুম খালি দরজা বন্ধ করে বসে থাকা।রুমই জ্বালি’য়ে দিব।না থাকবে রুম আর না পারবি দরজা আটকে বসে থাকতে।

মায়ের হুমকি ধামকি শুনে ঢুলুঢুলু চোখে টলমলে পায়ে বিছানা থেকে নেমে যেয়ে দরজা খুলে দিল সূচনা।মিসেস সূচনা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার দিকে।তার দিকে তাকিয়ে সূচনা ঘুমুঘুমু কণ্ঠে বললো –

–‘উফফ আম্মু এতদিন পরীক্ষার জন্য ঘুমোতে দাওনি।এখন একটু ঘুমাতে দাও।কেন ডাকছো?

–‘ক’টা বাজে হ্যা।শুধু ঘুৃমালেই চলবে।দিন দিন শরীরের যা অবস্থা করছিস দেখলে মনে হয় যেন ফুক মা’রলেই উড়ে যাবি।তাড়াতাড়ি খেতে আয়।

রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে বসতে বললেন-

–‘আমি বসলাম এখানে যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

সূচনা চোখ মুখ কুচকে বললো –

–‘উফফ,,আম্মু এমন করোনা তো।

–‘যাবি নাকি।

–‘যাচ্ছি (মুখ বাকিয়ে)
.
.
খাওয়া শেষে রুমে এসে বসার একটু পরই আরহাম সাহেব রুমে আসলেন।

–‘বাবা তুমি এত রাতে?

–‘হ্যা একটু কথা ছিল।বারান্দায় আয়। অনেকদিন বা’প মেয়ে একসাথে আড্ডা দেইনা।

–‘হুম।

বারান্দায় পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে দু’জন।সূচনা বাবার দিকে তাকিয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টিতে।হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করলেন।তারপর বললেন-

–‘আমি জানি তোর মনে এখন অনেক প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় আর অবাক করার মতো প্রশ্ন টা হচ্ছে যে এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।প্রণয়কে আরও আগে থেকেই চিনি আমি।ওর মতো ছেলের হাতের যে কোনো বাবা ই চাইবে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে।আমিও চাইছি।তোর হয়তো এখন আমাকে খা’রপ মনে হবে কিন্তু একটা সময় এসে তুই নিজেই বুঝতে পারবি যে তোর বাবা সঠিক মানুষের হাতেই তুলে দিয়েছে তোকে।তুই ভেবে দেখিস একটু।

–‘ঠি,,ঠিক আছে বাবা।

–‘আরেকটা কথা কালকে প্রণয় তোর সাথে একটু দেখা করতে চায়।আমাদের কাছেই যে ছোট রেস্টুরেন্ট টা আছে সেখানে।মিহুকে নিয়ে যাস।

সূচনা অবাক হয়ে তাকালো তার বাবার দিকে। তার দৃষ্টি বুঝতে পেরে আরহাম সাহেব বললেন-

–‘চিন্তা করিস না।ভেবেই বলেছি। এখন তাহলে আসি।ঘুমিয়ে পড়।

মাথা নাড়ালো সূচনা।সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন আরহাম সাহেব।সূচনা ঠায় বসে রইলো সেখানে।কি করবে সে?যাবে?নাকি যাবে না?কি সিদ্ধান্ত নেবে?মনে শত প্রশ্ন তার।অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে দৃষ্টি রেখে আপনমনে বিড়বিড় করে বললো-

–‘তার আগমন না ঘটাই তো শ্রেয় ছিল।
.
.
ফজরের নামাজ পরে ঘুমিয়েছিল সূচনা।সকালে ঘুম ভাঙতে ভাঙতে আটটা প্রায়। বিছানা থেকে ফোন হাতরে বের করে কল লাগালো মিহুকে।রাতে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেখা করতে যাবে।মিহুকে কল করে সব বললে রাজি হলো সে।কল কেটে কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো বিছানায়।তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
.
.
বিকেল চারটা।রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে প্রণয় আর সূচনা।তার পাশে মিহু।সূচনা কাচুমাচু মুখ করে বসে আছে।তাদের চুপ থাকতে দেখে মিহু বললো-

–‘সূচনা আমি পাশের টেবিলে আছি।তোরা কথা বল।

দু’জনকে কিছু বলতে না দিয়েই মিহু উঠে চলে গেল।সূচনার দিকে পূর্ন দৃষ্টি রাখলো প্রণয়।বেগুনি রঙের চূড়িদার, তার সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পড়া।চোখে হালকা করে কাজল দেয়া।

–‘আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন।

সূচনার কথায় ঘোর ভাঙলো প্রণয়ের।মাথা নাড়িয়ে বললো-

–‘হ্যা।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৩
__________________________
দু’জনকে কিছু বলতে না দিয়েই মিহু উঠে চলে গেল।সূচনার দিকে পূর্ন দৃষ্টি রাখলো প্রণয়।বেগুনি রঙের চূড়িদার, তার সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পড়া।চোখে হালকা করে কাজল দেয়া।

–‘আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন।

সূচনার কথায় ঘোর ভাঙলো প্রণয়ের।মাথা নাড়িয়ে বললো-

–‘হ্যা।কালকে আমার সাথে আমার মামা-মামি আপনাদের বাসায় গিয়েছিলেন।

–‘হ্যা সেটাতো জানি।

–‘মা-বাবা না যেয়ে তারা কেন গিয়েছেন সেই প্রশ্ন অবশ্যই এসেছে আপনার মাথায়।

সূচনা নিচু স্বরে বললো-

–‘হ্যা এসেছিল।আম্মুকে জিজ্ঞেস করা হয়নি আসলে।ওনারা যান নি কেন?

–‘আমার মা মা’রা গেছেন যখন আমার ১৬বছর বয়স।

ওপাশ থেকে প্রণয়ের সোজাসাপটা জবাব।চকিতে তাকালো সূচনা।প্রণয়ের মুখশ্রী স্বাভাবিক। সূচনা কাঁপা গলায় বললো –

–‘আ,,আসলে আ,আমি সরি।আমি বুঝতে পারিনি।

প্রনয় স্মিত হেসে বললো-

–‘আপনি সরি বলছেন কেন?সত্যি তো সত্যি ই হয়।

প্রতিত্তোরে কিছু বললো না সূচনা।

–‘মামা-মামির কোনো ছেলে নেই,দুই জন মেয়ে।ছোট থেকে একটু বেশি ই আ’দর করতেন আমায়।আম্মুর আর কোনো ভাই-বোন ছিল।তাই আম্মু মা’রা যাবার পর মামা-মামি আমাকে আর ইরাকে তাদের কাছে নিয়ে গেলেন।তারপর থেকে তাদের কাছেই বড় হয়েছি দু’জন।পড়ালেখা শেষ করার পর অন্য কোথাও জব করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মামা দেননি। তার কোম্পানি তেই আছি তবে ইম্প্লই হিসেবে,তার ভাগ্নে হিসেবে না।আপনার, আমার ব্যাপারটায় সম্পূর্ণ ই আপনার বাবা আর আমার মামার হাত।কিন্তু আপনি আপনার মতামত রাখবেন সবার সামনে।আপনি কি চান সেটা বলবেন, চা’পে পড়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে পরবর্তী তে তা অনুতপ্ততার কারণ হয়ে দাড়ায়।

এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো প্রণয়।নিরব শ্রোতার ন্যায়,সবটা শুনলো সূচনা।তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে।সূচনার এমন চাহনি দেখে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-

–‘বুঝতে পেরেছেন কি বলতে চেয়েছি?

মাথা নাড়ালো সূচনা।যার অর্থ হ্যা বুঝতে পেরেছে।হাত কচ’লাতে কচ’লাতে আমতা আমতা করে সূচনা বললো-

–‘আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে।

–‘আচ্ছা তার আগে একটা প্রশ্ন করি?

–‘জ্বি করুন।

–‘আপনি কাউকে ভালোবেসেছেন?

প্রণয়ের কথাটুকু কর্ণগোচর হতেই নত মস্তক ফ’ট করে ওপরে তুললো সূচনা।তাকাতে পারলোনা প্রণয়ের দিকে।নামিয়ে নিল চোখ।চোখে পানির আভাস টের পেতেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।কোনোরকম ভাঙা কণ্ঠে বললো –

–‘হ্যা,,আ,,আমি একজনকে ভালোবাসতাম।সে ব্যাপারেই বলার ছিল।

–‘ভালোবাসতেন,মানে সে অতীত ছিল।যদি অতীত হয় তাহলে সে ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক না আমি।

নত মস্তক উপরে তুললো সূচনা।বললো –

–‘কিন্তু,,আমি

–‘আমি শুনতে চাইনা।সে অতীত ছিল সেটা বড় কথা।অতীতে টুকটাক এমন অনেকেরই থাকে।অতীতের ছায়া বর্তমানে পড়তে দিবেন না।অতীতে আ’টকে থেকেও লাভ নেই।অতীত ভুলে বর্তমানকে উপভোগ করুন।বর্তমানকে সমৃদ্ধ করুন।তাহলে ভবিষ্যত মধুর।আই হোপ বুঝতে পেরেছেন?

সূচনা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে। তা দেখে প্রণয় ব্যস্ত গলায় বললো-

–‘অতীত কে অশ্রুপাতে ভাসিয়ে দেয়া ই উত্তম।সেটা যাই হোক না কেন।

–‘জ্বি।

–‘আপনি কি চান?

–‘কোন ব্যাপারে?

সূচনার এমন কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো প্রণয়।সূচনাও বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তাই জোরপূর্বক হেসে বললো-

–‘সরি,আসলে,, বুঝতে পারিনি।আসলে,,

–‘আপনি সময় নিন,সমস্যা নেই।আপনার যেকোনো সিদ্ধান্ত কেই সম্মান করবে, আর আপনার মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।

সূচনার কৃতজ্ঞতার চাহনি।সল্প পরিসরে হেসে বললো-

–‘জ্বি।শুকরিয়া।
.
.
.
উত্তপ্ত ধরণীর বু’কে গোধূলির আগমন ঘটে গেছে অনেক আগেই।হলদেটে লাল রঙা সূর্যের আভায় পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে এখন সমস্ত আকাশ জুড়ে অন্ধকারের খেলা।বারান্দার মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে সূচনা।মেঝে পর্যন্ত বারান্দার গ্রীল।রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে এসেছে ঘন্টা দুয়েকের বেশি।প্রণয় ই দিয়ে গেছে বাড়িতে।মিহু ও চলে গেছে।সূচনা ফ্রেশ হয়ে ই বারান্দায় এসে বসেছে।ব্যস্ত শহরের,ব্যস্ত লোকজন,এত এত কৃত্রিম আলোয় আলোকময় পুরো শহর,অযথাই গাড়ির হর্ন তো আছেই।সব মিলিয়ে বিরক্তিকর এক পরিবেশ। তবুও এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।রেস্টুরেন্টে প্রণয়ের বলা কথাগুলোর বারবার বিচরণ হচ্ছে মন-মস্তিষ্কে।মন বলছে ঠিকই তো বলেছে প্রণয় আর মস্তিষ্ক বলছে তাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে অন্য কারো সাথে সংসার করাা যাবেনা।মন আর মস্তিষ্কের এই যুদ্ধে ফে’সে গেছে সে।কি করবে জানা নেই তার।বারান্দা থেকে সোজা রান্নাঘরে গেল।মিসেস দিশা কাজ করছিলেন রান্নাঘরে। সূচনা যেয়ে তাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। তা দেখে মিসেস দিশা বললেন-

–‘আজ এত ভালোবাসা কোত্থেকে আসলো আমার জন্য?

সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘এমন ভাবে বলছো যেন আমি তোমাকে একটু ও ভালোবাসিনা।

মিসেস দিশা হেসে বললেন-

–‘তা হতে যাবে কেন?আমার একটামাত্র মেয়ে সে আমাকে ভালোবাসবে না কেন?আমি তো মজা করছিলাম।

–‘হু।

–‘তা হঠাৎ রান্নাঘরে যে?

–‘এমনি।

–‘আচ্ছা।

–‘বিয়ের পর কি দায়িত্ব বেড়ে যায় আম্মু?

আচমকা সূচনার মুখে এহেন প্রশ্নে অবাক হন মিসেস দিশা। সাথে মনে ছোট্ট করে উকি দেয়,একটা প্রশ্ন-সূচনা বিয়ের কথা বলছে তাহলে কি?’তার ভাবনার মাঝেই সূচনা আবার ডাকলো-

–‘আম্মু?

–‘হ্য,হ্যা বল।

–‘বললে না?

হাতের কাজ রেখে সূচনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিসেস দিশা।তারপর নরম গলায় বললেন-

–‘বিয়ের পর একটা মেয়ের পরিচয়ই বদলে যায়।বিয়ের আগে সে কারো মেয়ে,কারো বোন হয় কিন্তু বিয়ের পর সে কারো স্ত্রী,কারো ছেলের বউ, ভাবি হয়,অতঃপর সন্তানের মা।তোর আব্বুর সাথে আমার বিয়ের আগে তাকে চিনতাম ও না আমি।যখন সবকিছু ঠিক হলো, বিয়ের দিন ঠিক হলো তখন একপলক দেখেছিলাম কিন্তু কথা হয়নি।বিয়ের পর প্রথম ক’মাস তো তাকে ভয় পেতাম কারণ ছাড়াই। তার সামনে থাকলে সব কাজ,কথা গু’লিয়ে ফেলতাম।আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলাম,বহু কাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত আসলো।যখন জানলাম তোর আসার খবর তখন তোর বাবা খুশিতে কে’দেই দিয়েছিলেন।সেদিন নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল।তোর বাবার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমি বাবা-মায়ের সাথে রা’গ করেছিলাম অনেক।কিন্তু সময় যত অতিক্রম করলাম তোর বাবার সাথে ততই মনে হতে লাগলো বাবা-মার আমার জন্য নেয়া সবথেকে উপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল তোর বাবার সাথে আমার বিয়ে দেওয়া টা।দায়িত্ব ছিল অনেক শুরুতে কিন্তু তোর বাবা অনেক সাহায্য করেছেন আমাকে।যার বদৌলতে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সামলাতে পেরেছি।বিয়ের এই অধ্যায়টা প্রতিটি মেয়ের জীবনেই আসবে।সবকিছু কঠিন মনে হবে শুরুতে।কিন্তু তার সঙ্গী যদি সুন্দর মনের অধিকারী হয় আর তাকে বোঝার ক্ষমতা রাখে তাহলে জীবন সুন্দর। বুঝেছিস?

মাথা নাড়িয়ে বললো –

–‘হু।আমি রুমে গেলাম আম্মু।

–‘ঠিক আছে যা, একটু পর খে’তে ডাক দিব ঘুমিয়ে যাসনা যেন।

–‘হু।

রুমে এসে মায়ের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো সূচনা।বার কয়েক আওড়ালো সে- সুন্দর মনের অধিকারী আর তাকে বোঝার ক্ষমতা থাকলে জীবন সুন্দর। আসলেই সুন্দর? আচ্ছা প্রণয় কি এমন নাকি সে ও তাদের কা’তারেই?কোনটা?
.
.
সকাল সাড়ে নয়টা।কাবার্ডের সামনে দাড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে সূচনা।ঝাপসা চোখে কাঁপা কাঁপা হাতে কাবার্ড থেকে জিনিসটা হাতে নিল।একটা ডায়েরি।এতক্ষণ এই জিনিসটাই দেখছিল সে।ডায়েরী টা হাতে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে গেল সে সাবধানে।মিসেস দিশা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন।ছাদের চিলেকোঠার ঘরে যেয়ে ডায়েরীটার দিকে এক পলক তাকালো।কাজ সেড়ে বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে।বাসায় আসতেই মিসেস দিশা চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন-

–‘তোর চোখ এমন লা’ল হয়ে আছে কেন?কি হ’য়েছে?

সূচনা জোরপূর্বক হেসে বললো-

–‘কিছুনা আম্মু,ছাঁদে গিয়েছিলাম,অনেক রোদ।সে জন্য ই এমন দেখাচ্ছে। আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি।

মিসেস দিশার সূচনার কথা বিশ্বাস হলো কিনা কে জানে।কিন্তু আর কিছু বললেননা।সূচনা রুমে চলে আসলো।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো।ফোন হাতে নিয়ে কল লাগালো মিহুকে।

#চলবে