প্রণয়ের সূচনা পর্ব-১৯+২০+২১

0
206

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১৯
__________________________
ব্যস্ততার মোড়কে বন্দী শহুরে জনজীবন।সূর্যের উঁকি মারা/র সাথে সাথেই শুরু হয় মানুষের আনাগোনা।শরৎ এর ইতি ঘটিয়ে আগমন ঘটেছে হেমন্তের।হেমন্তেই শীতের ঘ্রাণ আসছে যেন।বিছানা থেকে মেঝেতে পা রাখতেই কিছু টা ঠান্ডা অনুভত হলো সূচনার।সূচনা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো চা হাতে।প্রণয় ওঠেনি এখনো।রাতে অনেকটা সময় বারান্দায় ছিল দু’জন। দেরি হয়েছে ঘুমোতে।তাই হয়তো ওঠেনি।আস্তে আস্তে তীব্র হচ্ছে আলো,মিলিয়ে যাচ্ছে শীতল, স্নিগ্ধ সকালের আবরণ।চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে সূচনা।বন্ধ আখিঁ জোড়া খোলার আগে কানে সেই রাতের কথোপকথন, চোখে ভেসে উঠল রাতের সেই দৃশ্য টুকুন।পাশাপাশি দাড়িয়ে ছিল দু’জন মানব-মানবি,নিশ্চুপ ছিল দু’জন।বাইরে হচ্ছিল হালকা বেগের বর্ষণ।বন্ধ ছিল সেই মানবির আঁখি জোড়া। হয়তো অনুভব করছিল বৃষ্টি কে।তখনই গ্রিলে রাখা তার বাম হাতে অনুভব হলো কারো ছোয়া,বন্দি হলো তার হাত সেই হাতে।চকিতে চোখ খুলে বন্দি করা হাতের মালিকের দিকে দৃষ্টি স্থির হলো।তার শান্ত,শীতল মুখে ঘোর লাগা চাহনি, অদ্ভুত,মাদকতা ভরা সেই চাহনি।জমে গেল সেই মানবির সমস্ত কায়া,হাত ছাড়ানোর জন্য বিন্দু মাত্র চেষ্টা ও করতে পারলনা।শুধু তাকিয়ে রইলো তার হাতের আঙুলের দিকে,অনামিকা আঙুলে জ্বলজ্বল করছে সাদা পাথরের একটা রিং।অপর হাত সামনে এনে ছোট নীল রঙের একটা বাক্স রাখল হাতে।কর্ণকুহর হলো মিহি স্বরে বলা বাক্য-

–‘বিয়ের রাতে নাকি স্বামী তার স্ত্রী কে কিছু উপহার দেয় কিন্তু তাড়াহুড়ায় আমি ভুলে গিয়েছিলাম সেদিন।তারপরে তো ইরাদের এক্সিডেন্ট হলো।হসপিটাল,বাসা,অফিস করতে করতে আর সময় করতে পারিনি।আজকে নিয়ে এসেছি আসার সময়। বক্সের ভেতর ডায়মন্ডের নোজ পিন আছে একটা,যেটা পড়েছ সেটা কেমন যেন বুজে বুজে আছে মনে হয়। এটা পড়ে নিও।

কিছু না বলে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে ছিল সে।তার হাতটা তখনো মুঠোবন্দি। এক মুহূর্তের জন্য ও ছাড়াতে চেষ্টা করেনি। আবার কর্ণধার হলো তর কথা-

–‘আমি তো গিফ্ট দিলাম দু’টো।তুমি কিছু দিবেনা?

কিছুটা আড়ষ্টতা নিয়েই জবাব দিতে হলো-

–‘আমার কাছে তো এখন কিছু নেই।কি দিব?

বৃষ্টি থেমে গেছে। নিরব পরিস্থিতিতে যোগ হলো হাসির শব্দ।হাসি থামিয়ে বললো-

–‘আছে,যা চাইব সেটা তোমার কাছেই আছে আর সঠিক সময়ে ফিরিয়ে ও দিব।

প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী আছে?

সে সহসাই বলে দিল-

–‘যে হাতের আঙুলে আমার দেয়া উপহার জায়গা পেয়েছে সেখানে আমার ঠোঁটের স্পর্শ দিতে চাই।অনুমতি কী আছে? কথা দিচ্ছি খুব শীঘ্রই তা ফেরত পাবে তুমি।

চমকিত,বিস্ময়াহত হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। সে আবারো হেসে বললো-

–‘ মৌনতা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ।

দেরি করল না আর,অনামিকা আঙুলে থাকা রিং টার কিঞ্চিৎ ওপরে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিল সময় নিয়ে।আপনা আপনি বন্ধ হলো সেই মানবীর চোখ জোড়া,যেন অদ্ভুত, অজানা শিহরণে শিহরিত হলো সমস্ত শরীর।

হাতে টান পড়তেই ভাবনার সুতোয় টান পড়ল তীব্র ভাবে।সূচনার ডান হাতে থাকা চায়ের কাপটা এখন পাশে দাঁড়ানো প্রণয়ের হাতে। হুট করেই যেন লজ্জারা হানা দিল চারপাশ থেকে,লাল হলো কপোল।চোখ তুলে তাকাতেও পারলনা।প্রণয় যখন তার আধ খাওয়া চা খেতে ব্যস্ত তখন মাথা তুলে তাকালো সূচনা। ব্যস্ত গলায় বললো-

–‘আপনি আমার চা খাচ্ছেন কেন?দিন ওটা আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।

–‘তোমার নাম লেখা আছে চায়ে?

প্রণয়ের হাত থেকে কাপটা টান দিয়ে নিতে যেয়েও পারলনা।বললো –

–‘নাম লেখা নেই,ওটা আমি অর্ধেক খেয়েছি কেন খাবেন এটা,দিন আমি বানিয়ে দিচ্ছি আরেক কাপ।

কাপের অবশিষ্ট চা টুকু শেষ করে সূচনার হাতে কাপটা ধরিয়ে দিয়ে তারপর বললো-

–‘আমার লাগবে না আর, থ্যাঙ্কিউ ফর দা টি।বেস্ট ছিল, আর কিছু পারো আর না পারো চা ভালো বানাও,কিন্তু মিষ্টি টা অনেক বেশি।

সূচনা কিছু টা মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘আমি মিষ্টি কম খাই,ঠিকঠাক ই দিয়েছি বেশি কেন হবে?আর আমি জানি আমি চা ভালো বানাই তবে সেটাকে বেস্ট উপাধি দেয়াটা বাড়াবাড়ি।

প্রণয় যেতে নিলেও থেমে গেল সূচনার কথায়।তার দিকে ঘুরে মিহি স্বরে বললো-

–‘ তার মিষ্টতা ছিল চায়ে ভরপুর তাই মিষ্টি টাও বেশি লেগেছে।সে খারা/প বানালেও আমার কাছে তা বেস্টই হবে সবসময়।

প্রণয় দেরি করল না আর চলে গেল রুমে।সূচনা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো অনিমেষ।
.
.
–‘আপনি কি আজকে অফিসে যাবেন না?

সকালে নাস্তা শেষে রেডি না হয় বিছানায় আরামসে ফোন নিয়ে বসে ছিল প্রণয়।তাই উক্ত প্রশ্নটা ছুড়ল সূচনা।প্রণয় হামি দিতে দিতে বললো-

–‘নাহ,,ইসহাক সাহেব এক সপ্তাহের জন্য ছুটি দিয়েছেন,বলেছেন বউকে সময় দিতে বেশি করে।

সূচনা ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘দিয়েছেন না আপনি নিয়েছেন?

প্রণয় মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘এহহ,,ঠে/কা পড়েছে আমার।যে একখান বউ পেয়েছি তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আবার অফিস থেকে ছুটি নিব।বাসায় থাকলে ভুল করেও তো রুমের দিক হও না আবার সে নাকি ঘুরতে যাবে আমার সাথে।তার চেয়ে বরং অফিসে থাকাই ভালো।অন্তত বোর হতে হয় না।

–‘হ্যা ঠিকই তো ধরেছেন কে যাবে আপনার সাথে ঘুরতে,খারু/স একটা।আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়ার থেকে তো ভালো বসে বসে ফিরোজা খালার সাথে স্টার জলসার সিরিয়াল দেখা।আমারই দোষ,কোন দুঃখে যে কথা বলতে এসেছিলাম আপনার সাথে।

প্রণয় লাফিয়ে উঠলো এক প্রকার বিছানা থেকে।
সূচনার সামনে দাঁড়িয়ে বললো-

–‘কী বললে?কী আমি?

–‘খারু/সসস।

প্রণয়কে রাগা/নোর জন্য সূচনা শেষে একটু টেনেই বললো।অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো।প্রণয় চোখমুখ একেবারে শক্ত করে সূচনার দিকে এগোতে লাগল।দাঁতে দাঁত চেপে বললো-

–‘আবার বলো তো পাখি,কী বললে।

সূচনা এবার ঘাবড়ে গেলে।ফাঁকা ঢোক গিলে কণ্ঠে স্বাভাবিকতা বজায় রেখেই বললো-

–‘খারু/স বলেছি খারু/সস।

সামনে এগোচ্ছে প্রণয়,পিছু হাঁটছে সূচনা।যেতে যেতে কাবার্ডের সাথে ঠেকল তার পিঠ। থামল প্রণয়, সূচনার একেবারে নিকটে এসে।প্রণয়ের থুতনি বরাবর সূচনার কপাল পড়েছে।সূচনা নত মস্তকে, শ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন।প্রণয় বাকা হাসল,সূচনার বাম হাত উচু করে রাখল তার মাথার ওপরে কাবার্ডের সাথে চেপে ধরে অন্য হাত রাখল তার বাম পাশে। ফিচেল কণ্ঠে শোধালো-

–‘এবার কোথায় যাবে প্রণয়ী,এখন তো তুমি সম্পূর্ণ বন্দী আমার মধ্যে।এখন বলো কী বলছিলে?

সূচনার প্রায় জ্ঞান হারানোর জোগাড়।বন্ধ আখি জোড়া,কাপছে সে রীতিমতো।আনমনে মনের কথা মুখে এসে পড়ল।নিচু স্বরে নিঃসৃত হলো-

–‘আপনি এত কাছে আসবেন না আমার কেমন যেন লাগে,মনে হয় ম/রে যাব আমি।দূরে যান।

প্রণয় বা’কা হাসল।বললো-

–‘এতটুকু তো কিছু ই না,এখন ও তো ট্রেলার ই দেখালাম না তাতেই এ অবস্থা তাহলে পুরো মুভি কীভাবে দেখাব।

সূচনার হুঁশ হলো। যে হাত মুক্ত ছিল সে হাত দিয়ে আলতো ধাক্কা দিল, প্রণয় সরে গেল,ছেড়ে দিল হাত। সূচনা আর তাকালো না সে দিকে। এক প্রকার দৌড়ে বের হলো রুম থেকে।শ্বাস নিল জোরে জোরে।
——————————————–
সকালের ঘটনার পর থেকে প্রণয়কে এড়িয়ে চলছে সূচনা।তাকে সামনে দেখলেই যেন হৃদ স্প্ন্দন অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য! এমন হচ্ছে কেন?এমন হওয়ার কী আছে?প্রশ্ন টা মাথায় আসলেও উত্তর ছিল শূন্য। মনের প্রশ্নের উত্তর কি আর মস্তিষ্ক দিতে পারে?পারে না। কিন্তু সে সম্পর্কে তো সে অবগত না।তখন সেই যে রুমে গিয়েছিল তারপর আর যায়নি।কতক্ষণ মিসেস আফিয়া আর ফিরোজা খালার সাথে রান্নাঘরে ছিল।তারপর দিনা আর ইরার সাৎে কিছু কথা বলে সময় কাটিয়েছে।দিনার এখন ও মন খারা/প। কারণ কালকের পর জাওয়াদ আর কল করে নি, না দিনার কল উঠিয়েছে।আজকে সকালে দেখল তাকে সব জায়গা থেকে ব্ল/ক করে দিয়েছে। এবার ইরার কাছেও খট/কা লাগে কারণ এর আগে ছোট খাটো ঝগ/ড়া হলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই সব ঠিক করে নিয়েছে, সে জায়গায় দুই দিন হয়ে গেল আবার ব্ল/ক ও করে দিয়েছে। সূচনা আর ইরা মিলে তাকে আশ্বাস দিয়েছে কোনোরকম যে সে হয়তো একটু বেশি ই রে/গে আছে,ঠিক হয়ে যাবে।দুপুরের দিকে রুমে এসে কাবার্ড থেকে শাড়ি নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকেছে, আশেপাশে কেউ আছে কি না তাও তাকিয়ে দেখেনি।প্রণয় তখন বেডেই বসে ছিল।সূচনা কান্ড কারখানা দেখে মুখ টিপে হাসছিল সে।দুপুরের পর রুমে না আসার সিদ্ধান্ত ই নিয়েছিল সূচনা।কিন্তু তার খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই প্রণয় চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো-

–‘খেয়ে তাড়াতাড়ি একটু রুমে এসো তো কাজ আছে।

সূচনা জানে প্রণয় ইচ্ছে করে ই সবার সামনে কথাটা বলেছে।খাওয়া শেষে ডাইনিং এ ই ঘুরঘুর করছিল সূচনা। তা দেখে মিসেস আফিয়া বললেন-

–‘কি রে তোকে না প্রণয় রুমে ডাকলো,যাচ্ছিস না কেন?

সূচনা মেকি হেসে বললো-

–‘ভুলে গিয়েছিলাম মামী,এখন যাচ্ছি।

–‘হ্যা যা।

যতটুকু আস্তে আস্তে যাওয়া যায় সূচনা ঠিক ততটা আস্তে ই পা ফেলছে।রুমের সামনে এসে আর ঘাবড়ালো না। বু/কে ফু দিয়ে টু/স করে ঢুকে পড়ল রুমে।রুমে ঢুকতেই দুইশো ভোল্টের ঝাট/কা খেল যেন।সাথে হাত দিয়ে চেপে ধরল চোখ জোড়া।বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললো —

–‘আপনার কী নূন্যতম সেন্সটুকু ও নেই যে চেঞ্জ করার আগে রুমের দরজাটা লক করে নিতে হয়।কেউ তো এসেও পড়তে পারে রুমে।

অর্ধেক টি-শার্ট পরিহিত ছিল প্রণয়,তখনই সূচনার আগমন ঘটেছে রুমে।প্রণয় গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বললো –

–‘ অন্য কেউ তো আসেনি,আমার বিয়ে করা বউ ই দেখেছে, ইট’স নট আ বিগ ডিল।এমন ভাবে লজ্জা পাচ্ছ যেন কী দেখে ফেলেছ,অর্ধেক টি-শার্ট তো পড়া ই ছিল।

–‘আপনার ছি মার্কা কথা বার্তা শেষ হলে দয়া করে টি-শার্ট টা পড়ুন,উদ্ধার করুন।

–‘পড়েছি,খোলো চোখ।

চোখ খুলে আবার ও বন্ধ করে নিল সূচনা।দাত কিড়মিড় করে বললো-

–‘মিথ্যা বললেন কেন?হ্যা?আপনি এত বেশ/রম?ছি/হ!

সূচনার অবস্থা দেখে প্রণয় হাসতে হাসতে শেষ। হাসি থামিয়ে বললো-

–‘এবার খুলো।এবার সত্যি পড়েছি

আঙুলের ফাঁ/কে উঁকি মে/রে দেখে নিল।নাহ সত্যি ই এবার।

–‘শোনো কথা আছে একটা।

এক ভ্রু উঁচু করে সূচনা জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

প্রণয় ফিসফিসিয়ে বললো-

–‘সিক্রেট,কানে কানে বলতে হবে। কানটা সামনে আনো।

–‘কান টান সামনে আনতে পারবনা,এভাবেই বলেন।

প্রণয় মন খারাপে/র ভাব করে বললো-

–‘দিনার জন্য সারপ্রাইজ ছিল,তুমি শুনবে না,আমার আর কী করার।

সূচনা ভাবল কিছুক্ষণ,কানটা একটু সামনে এগিয়ে দিয়ে তারপর মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘বলেন

সূচনার কানের কাছে মুখ এনে প্রণয় ফিসফিস করে বললো কিছু। সূচনা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘সত্যি বলছেন আপনি?আগে বলেন নি কেন?আমি এখনি যেয়ে বলছি।

–‘আরে থামো,তোমাদের মেয়ে মানুষদের না একটাই সমস্যা, পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ই প্যাচপ্যাচ করো।

প্রণয়ের কথায় ভে/ঙচি কাট/ল সূচনা।

–‘মুখ বা/কাও কেন আবার

–‘আমার মুখ আপনার কী?

–‘বউ আমার, সব আমার, তোমার কী?

–‘ঢং না করে বলেন।

–‘ঠিক আছে শোনো।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazi_Shifa
#পর্ব_২০
___________________________
বিস্মায়াবিষ্ট চোখে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে দিনা।কিছু বলতে ও পারছে না।তার দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করছে জাওয়াদ।দিনা এতক্ষণ চুপ থাকলে ও এবার আর পারল না। গলার স্বর উঁচু রেখে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আপনি কী ফাজলা/মো করছেন আমার সাথে?খেলনা মনে হচ্ছে আমাকে?

জবাব দিল না জাওয়াদ,ফেন স্ক্রল করতে ব্যস্ত সে।দিনা আবার ও জিজ্ঞেস করলো-

–‘কথা বলছেন না কেন?

জাওয়াদ বিরক্তি তে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক আওয়াজ বের করল।বললো-

–‘কী বলব?কী জানতে চাও?

–‘নিচে কী হচ্ছে এসব?আপনি হুট করে আঙ্কেল-আন্টিকে কেন নিয়ে এসছেন?

–‘তুমি নিশ্চয়ই অতটা অবুঝ না,এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা কেন নিয়ে এসেছি।

–‘বুঝতে পেরেছি এজন্যই তো জানতে চায়ছি কেন নিয়ে আসলেন হঠাৎ করে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না একবার ও।

–‘প্রয়োজন মনে করিনি।

–‘আমার মতামত আপনার কাছে কিছু ই না?

–‘তোমার মতামত নেয়ার কি আছে? এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আমাদের।এখন বিয়ের জন্য তোমার মতামত লাগবে কেন?

–‘আমি বিয়ে করবনা।

–‘কী বললে?

–‘আমি বিয়ে করবনা।

–‘এজন্য ই তো মতামত চাইনি।

–‘তাহলে কী জোর করবেন?

–‘সেটাই তো করছি।

–‘আপনি,,

–‘আমি অনেক ভালো আমি জানি, তুমি এতদিন বিয়ের কথা মুখ ফুটে বলতে পারছিলে না কিন্তু আমি তো বুঝে গেছি এজন্য আম্মু-আব্বুকে নিয়ে এসেছি, বিয়ের ডেট দিতে।ডেট ফিক্সড ও হয়ে গেছে।

দিনা আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলো তাকে থামিয়ে দিল জাওয়াদ।ভাব নিয়ে বললো-

–‘আরে থ্যাঙ্কিউ দিয়ে ছোট করো না, আমারই লাভ।বাই দা ওয়ে জিজ্ঞেস করলেনা ডেট কবে?

দিনা আগ্রহ নিয়ে সাথে সাথে ই ঐ জিজ্ঞেস করলো-

–‘কয় তারিখ?

জাওয়াদ মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘একটু আগেই তো বিয়ে করবনা বলে চিৎ/কার করছিলে,এখন আবার ডেট জানার জন্য ম/রে যাচ্ছে। নাটক বা/জ।

দিনা ভ্রুকুটি করে তাকালো। কিন্তু জাওয়াদ আর মুখ খুলল না।
.
.
.
জাওয়াদ ও তার মা-বাবা চলে গেছে সন্ধ্যার পরপর ই।আজ রবিবার,আগামী শনিবার দিনা আর জাওয়াদ এর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। ইসহাক সাহেব রাজি হতে চাননি,প্রথম মেয়ের বিয়ে তার মধ্যে এত তাড়াহুড়ো করলে কী হয়?তার ওপর ছেলের শশুর বাড়ীর লোকের সাথে এমন একটা দুর্ঘ/না হলো।এখন এসব?কিন্তু জাওয়াদ এর বাবা জাকির সাহেব আর তার মা মিসেস ইভার ভাষ্যমতে – এনগেজমেন্ট তো হয়ে ই গেছে, মেয়ের ওপর কিন্তু আমাদের ও অধিকার আছে, আমাদের ও তো মেয়ে তাহলে নিয়ে যাই একেবারে। এখন আর দেরি করবেন না।প্রণয় ও বললো রাজি হতে, কিছু হবে না।ইসহাক সাহেব আর না করেননি। বিয়ে তো দিতেই হবে তাহলে আর ঝা/মেলা করে লাভ কী?

তিথি আর ইরা মিলে একের পর এক কথা বলে লজ্জায় ফেলছে দিনাকে।সূচনাও আছে কিন্তু তার দৃষ্টি ইরার ওপর।সেদিন তার সাথে কথা বলার পর থেকে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত দেখানোর চেষ্টা করছে ইরা।এই যেমন – যেখানে কথা কম বলার প্রয়োজন সেখানে বেশি বলা,যেখানে বলা প্রয়োজন সেখানে চুপ থাকা,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে কোনো ছোট কথাতেই আবার দম ফাটি/য়ে হাসার মতো কথায় গম্ভীর হয়ে বসে থাকে।সূচনা লম্বা শ্বাস নিল,কার মনে কী আছে তা বোঝা দায়,উল্টা পাল্টা ধারণা করাটাও তার কাছে বি/চ্ছিরি একটা ব্যাপার।এতে অপর পাশের মানুষটার কষ্ট কমে বৈকি বাড়ে।বারবার ইরাকে জিজ্ঞেস করাটা তাই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। দিনার দিকে চোখ পড়তেই সূচনা লক্ষ্য করল দিনা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
চোখ যেন এটাই বলছে, “ছাইড়া দে মা কাই/ন্দা বাঁচি।”
সূচনা কোনোরকম হাসি চাপিয়ে ইরা আর তিথির উদ্দেশ্যে বললো-

–‘তোমরা দু’জন আসো তো,তোমাদের ডেকেছে তোমাদের ভাইয়া।

তিথি ভ্রু কুচকে বললো –

–‘তুমি মিথ্যা বলছ না তো?

–‘আর না রে বাবা,চলো।

–‘ঠিক আছে, চলো।(ইরা)
——————————————–
প্রণয় সোফায় বসে একটা ডায়েরি নিয়ে নাড়চাড়া করছে।বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ইরা আর তিথি।সূচনা কাবার্ডে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে তাদের দেখছে।বিরক্ত হলেও ইরা কিছু বলছে না,অন্য সময় হলে তো কিছু না কিছু বলত কিন্তু এখন চুপচাপ।তিথি চুপ থাকল না,বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললো-

–‘আমি জানতাম বরাবরের মতো আজকেও তুমি এমন করবে।রুমে ডাকবে,আসব,পনেরো মিনিট বসিয়ে রাখবে তারপর পাঁচ মিনিট কথা বলে অপমান করে রুম থেকে বিদায় করবে।

–‘হ্যা,,ঠিকই ধরেছিস।তিথি তুই এত বুদ্ধিমতি কবে হলি রে।

–‘সেই পিচ্চি কালের থেকেই তিথি বুদ্ধিমতি শুধু তোমরাই পিচ্চি পিচ্চি বলে অপ/মান করো।

–‘আচ্ছা তাই?

–‘হু,, ভাইয়া শোনো বিয়ের পরে তো হানিমুনে যায়,তোমরাও যাবে সাথে আমাকেও নিও প্লিজ। আমি না এখন পর্যন্ত দূরে কোথাও ঘুরতে যাইনি।

তিথির কথা শুনে কাশতে লাগল সূচনা।প্রণয় ও কিছুটা অস্বস্তি তে পড়ল।ইরা মুখ চেপে হাসি আট/কালো।পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রণয় দাতে দাত চেপে বললো-

–‘দুঃখীত, আমার ভুল হয়েছে, এটাকে বুদ্ধিমত্তা বলে না অকালে পা/কা বলে।

–‘ভাইয়াআআ,,

–‘তিথি কানের সামনে কিচিরমিচির করিস না।কাজ আছে অনেক, তোদের ফ্রেন্ড দের মধ্যে কাকে ইনভাইট করবি না কি করবি লিস্ট করে দেয় আর কী কী ফাংশন আপনারা চান তাও প্ল্যান করুন অতি দ্রুত।

–‘আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে কী আবিদ আঙ্কেলের কমিউনিটি সেন্টার এ দিবি?(ইরা)

–‘হ্যা ঔটাই একমাত্র উপায় এজন্য টেনশন কম হচ্ছে। সকালে ফোন দিয়ে কথা বলব আঙ্কেলের সাথে।

–‘আচ্ছা,,

–‘হ্যা তোরা প্ল্যান কর,জানা আমাকে।

–‘ঠিক আছে,,

–‘এখন যা আর তি তি তুই সাইডে আয় কথা আছে।

–‘আমার পড়া আছে গেলাম আমি, ইরাপু চলো তো।

ইরার আগে তিথি বের হয়ে গেল রুম থেকে।হাতের কাছে পেলে যে প্রণয় তাকে শাস্তি দিবে তার অভিজ্ঞতা আছে তার। এর আগে ছোট খাটো অনেক শাস্তিই পেয়েছে সে।

তারা যেতেই সোফা থেকে উঠে দরজা আট/কে দিল প্রণয়।সূচনা তখনও কাবার্ডের সাথেই হেলান দিয়ে ছিল।প্রণয়কে উঠতে দেখে সোজা হয়ে দাড়ালো সূচনা।দরজা আটকে সোজা সূচনার সামনে এসে দাড়ালো প্রণয়।ফাঁকা ঢোক গিলে গলা ভিজালো সূচনা।হাত দিয়ে গোছানো চুলকে ই ঠিক করতে লাগল।প্রণয় বা’কা হেসে বললো-

–‘এমন করছো কেন? এখন কিছু করার মুড নেই আমার।অবশ্য আমি যা করি হুটহাট করি,বলে কয়ে করি না।বুঝেছ?

একটু থেমে আবার বললো-

–‘তিথিটা আজকাল বেশি পে/কে গেছে। তবে কথা কিন্তু ঠিক বলেছে হানিমুনে তো যাওয়া দরকার নাহলে কিছু হবে কিভাবে?আমি ইতিমধ্যে একটা প্ল্যান ও বানিয়েছি।জিজ্ঞেস করো কী?

সূচনা মুখ আড়ষ্ট হয়ে মুখ ভার করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

–‘গুড কোয়শ্চেন। দিনার বিয়ের পর তুমি আর আমি ঔ জানালা দিয়ে পালাবো।আগে থেকেই টিকিট কে/টে রাখব।এই জানালা দিয়ে পালিয়ে যাব হানিমুনের উদ্দেশ্যে।তারপর তিনজন হয়ে ফিরব।ভালো প্ল্যান না।

সূচনা বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো প্রণয়ের দিকে। কাঠ কাঠ গলায় বললো –

–‘আপনি কী পা/গল? মানুষ হানিমুনে কি বছরের জন্য যায় যে দুইজন থেকে তিনজন হয়ে ফিরব।

–‘গাধি,তিনজন হয়ে ফিরব মানে,তিনজন হওয়ার প্রসেসিং শুরু করার প্রথম ধাপ নিব।তার পর না হবে তিনজন।

চোখ টিপ মে/রে শেষোক্ত টি করলো প্রণয়।সূচনা কিছু বলার আগে প্রণয় ভাবুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আচ্ছা তুমি এতকিছু জিজ্ঞেস করছো কারণ কী? সত্যি ই হানিমুনে যাবে? এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলে বাহ বাহ।

সূচনা ইতস্তত করতে লাগল।সে তো আগ্রহ বশত জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল, খেয়াল করেনি অতটা।সূচনার মৌনতার কারণ সম্পর্কে জানে প্রণয়।তাই আর অস্বস্তিতে রাখল না।নরম কণ্ঠে শোধালো-

–‘এত ঘাবড়ানো লাগবে না,আমি এমনিই বলছিলাম। রিল্যাক্স।

প্রণয়ের কথায় সত্যি ই স্বস্তি পেল সূচনা।কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য ই।প্রণয় আবার ও চোখ মে/রে বললো-

–‘ হানিমুনে না গেলেও কিন্তু সম্ভব।

চোখ গর/ম করে তাকালো সূচনা।দাত কিড়মিড় করে বললো-

–‘আমার না এখন একটা প্রশ্ন ই জাগছে যে,আব্বু আপনাকে কীভাবে পছন্দ করলো আমার জন্য? মুখের মধ্যে যতসব ছি/হ মার্কা কথা।বিয়ের দিন কি এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলেন?

–‘নাহ প্রণয় এক্সচেঞ্জ হয়নি তার স্বভাব এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে। তোমাকে দেখলেই আমার কেমন কেমন যেন লাগে।

সূচনা কিছু টা নিচু স্বরে বললো-

–‘আপনি এত কাছে আসলে আমারও কেমন যেন লাগে,একটু সরুন।

প্রণয় হেসে বললো-

–‘যাও ছেড়ে দিলাম,তবে ক্ষণিকের জন্য, আবার আসবে তুমি,তখন ছাড়বনা একবারও, লুকিয়ে রাখব এই খানে।

শেষ কথাটুকু বলতে যেয়ে বু/কে হাত দিয়ে দেখাল প্রণয়।সূচনা মাথা নিচু করে নিল।অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটল অধর কোণে।যে হাসির কারণ সূচনার অজানা।
______________________________
মাঝে কেটে গেছে তিনদিন।আজ বৃহস্পতিবার। দিনার মেহেদী আজকে।সকাল থেকেই তোড়জোড় লেগে গেছে পুরো বাড়িতে।সকাল থেকে ব্যস্ত প্রণয় আর ইসহাক সাহেব। মিসেস আফিয়া ও বেজায় ব্যস্ত, তার সাথে ব্যস্ত হাতে কাজ করছে সূচনা।মিহুর সাথে প্রায় এক সপ্তাহের মতো কথা হয়নি সূচনার।মিহুকে এ বাড়িতে আসতেও দেয়নি। তিথির কাছ থেকে জেনেছে সূচনা, মিহুকে নাকি এ বাড়িতে তেমন একটা আসতে দেয় না।যাও আসে মিহু তার পরিবারের বিরুদ্ধে। মিহুর ছোট বোন আছে একটা পিহু।সেটা জানে সূচনা।দু-একবার গিয়েছে তাদের বাড়িতে।কিন্তু ও নাকি আজ পর্যন্ত পা রাখেনি এ বাড়িতে।এ বাড়ির মানুষরা তাকে চিনলেও সে তাদের চিনে না।ব্যপারটা অদ্ভুত ঠেকেছে সূচনার কাছে। কিন্তু তিথি বাচ্চা মানুষ তাই বেশি খুঁটিয়ে দেখেনি।মিসেস আফিয়ার দুই বোন মিসেস আনহা আর রিমা।মিসেস আনহার এক ছেলে দুই মেয়ে।নিহা,ফিহা আর নিষাদ। মিসেস রিমার একটাই মেয়ে তনয়া।আজকে সকালেই এসেছে সবাই। আসার পর থেকে তাদের মুখের ভাব দেখে সূচনা স্পষ্ট বুঝতে পারছে এখানে তাদের মধ্যে কারোরই তাকে খুব একটা ভালো লাগছেনা।সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করতে গিয়েছিল কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছে তাকে।শুধু ফিহা নামের মেয়েটা এগিয়ে এসেছিল, মিষ্টি হেসে বলেছিল –

–‘কেমন আছো ভাবি?

সূচনা অবাক হয়েছিল, যেখানে কেউ তার সাথে কথা বললনা৷ এড়িয়ে গেল সেখানে এই মেয়েটা একাই কথা বললো তাও কত সুন্দর করে সম্বোধন করল।ভাবনায় মত্ত থাকা অবস্থায় অসাবধানতা বশত চুলোয় বসানো গর/ম কড়াইয়ে থাকা তেল চামচ থেকে ছি/টকে এসে হাতে লেগে যায়।অনেক বেশি ই গর/ম ছিল বিধায় মুখ দিয়ে মৃদু স্বরে ‘আহহ’ শব্দটা বেড়িয়ে যায় সূচনার।মিসেস আনহা,রিমা তারা পাশে টুল টেনে বসে কথা বলছিল।মিসেস আফিয়া ও সূচনার পাশেই রান্না করছিলেন আরেক চুলোয়।তার শব্দ শুনে মিসেস আফিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাকে নিয়ে। তাড়াতাড়ি করে কল ছেড়ে পানি দিতে থাকলেন সূচনার হাতে।হাত জ্ব/লছে প্রচুর, ঠোঁটে ঠোঁট চে/পে সহ্য করছে সূচনা।তবে হাতের ক্ষত থেকে ছোট্ট হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করলো কিছু কথা।না চাইতেও চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্রু।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২১
_____________________________
ঝাপসা নয়নে, দাতেঁ দাতঁ চে/পে পো/ড়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সূচনা।কানে আসছে গা জ্বা/লানো সব কথা।

মিসেস আনহা মিসেস আফিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলেই যাচ্ছেন-

–‘কী দরকার এত আহ্লাদ দেখানোর,এত বছর খায়িয়ে পড়িয়ে বড় করেছিস,লেখাপড়া করিয়েছিস তা কি কম ছিল?এখন আবার বিয়ে করিয়ে সাথে আরেকটা উট/কো ঝামে/লা কাধে নিয়েছিস।এত দরদ কেন তোর?আমাদের দেখতে পারিস না।হ্যা রে আফিয়া আমাদের বোন হয়ে এমন বোকা কিভাবে তুই।কোথাকার কোন মেয়ে নিয়ে আসছিস কে জানে,এখন আবার আমার বোন, বোন জামাইর ঘাড়ে বসেছে।আমার ভাগ্নে ভাগ্নীগুলোর ওপর তো চা/প পড়ে।তাদের পড়ালেখা,খাওয়া-পড়ার কি কম খরচ, সাথে তো দুইজন আছেই,বিয়ে করিয়ে আবার এখানে ঠাই দেয়ার কি আছে।বোন সহ পাঠিয়ে দিবি।চাকরি তো করছেই সেই তোদের অফিসেই।সমস্যা কী?এ বাড়িতেই রাখতে হবে কেন?যতসব, ফা/লতু।

সূচনার এবার রা/গ হওয়ার পাশাপাশি,কথাগুলো আঘা/ত করলো তার আত্মসম্মানে।আজ পর্যন্ত খাওয়া -পড়া নিয়ে কখনো কোনো কথা শুনতে হয়নি।কখনো খো/টা দিয়ে বলে নি কেউ।তার বাবার যা টাকা আলহামদুলিল্লাহ তার জন্য।যা আছে সব ই তার।কিন্তু এমন না যে সে এলো পাথারি সব খরচ করেছে।আর এই যে আঠারো বছরে তার বাবা-মা কি তার পেছনে কম খরচ করেছে।কিন্তু কখনো তার বাবা-মা ভুল ক্রমেও তো এরকম কথা শোনায়নি।এজন্যই বুঝি তারা বাবা-মা।মিসেস আনহা আর মিসেস রিমা যদি সূচনার পরিবারের কেউ হতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে অনেক কথা শুনিয়ে দিত সূচনা।নিজেকে কোনোরকমে সামলে রেখেছে সে।মিসেস আফিয়া তাদের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।অতি সাবধানে সূচনার পো/ড়া জায়গাটায় মল/ম লাগিয়ে দিচ্ছেন।সূচনার দৃষ্টি একবার হাতে তো আরেকবার মিসেস আফিয়ার মুখপানে যাচ্ছে। অতি শান্ত, শীতল তার চোখ-মুখ। কোনো ঝড়ে/র কী আভাস?পরিস্থিতি যখন পরিমানের চেয়েও শান্ত-স্বাভাবিক থাকে, তখন তা কোনো ঝড়ে/র পূর্বাভাস দেয়।সূচনা তো তাই জানে।তাহলে এখন কী হবে?সূচনার হাতে মল/ম লাগানো হলে মিসেস আফিয়া শান্ত গলায় বললেন-

–‘তুই রুমে যা, আর হাতে পানি লাগাস না এখন।

সূচনা যেতে ইতস্তত করলেও মিসেস আফিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।রান্নাঘর থেকে চলে আসলো সূচনা।রুমে আসতে আসতে মনের ভেতর খচখচ করছিল তার, বারবার প্রশ্ন জাগছিল- “যদি প্রণয় ওই সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকত,তাহকে কেমন রিয়েক্ট করতো?কিছু বলতে পারত?নাকি চুপ করে থাকত মাথানিচু করে?উত্তর খুজে পেল না সূচনা।তার খা/রাপ লাগছে, তার জন্য এমন হয়েছে, সাবধানে কাজ করলে হয়তো এই দুর্ঘ’টনা ঘটতো না।আর তারা অতকিছু বলার সাহস ও পেত না।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই রুমে আসলো সূচনা। বিছানায় বসতে নিয়েও বসলনা।ব্যালকনিতে গেল, খোলা হাওয়া পাওয়া যাবে একটু,হাত ও জ্ব/লছে,সাথে শরীর ও।সেটা কী রা/গে?তাদের সেসব কথার জবাব দিতে না পারায়?সূচনার প্রায় ই হয় এমন।কেউ তার সম্পর্কে বা তার পরিবার সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা কিছু বললে সেটার জবাব দিতে না পারলে রা/গে দুঃখে গা জ্ব/লে তার।এটা অদ্ভুত এক রো/গ না কি সেটা জানা নেই তার।তবে বিরক্তি/কর। ব্যালকনিতে দাড়াতেই বাতাসের প্রবল ঝাপ/টা ছুয়ে গেল সমস্ত শরীর।বু/ক ভরে শ্বাস নিল সূচনা।কিছুটা স্বস্তি মিলছে এখন।কাধে কারো স্পর্শ পেতেই খানিক চম/কে পেছনে তাকালো সূচনা।প্রণয় শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সূচনার দিকে। সূচনা ও শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।সূচনার পো/ড়া হাতটা কিছু না বলে নিজের হাতের মাঝে নিল প্রণয়।কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ছেড়ে দিল।স্বাভাবিক স্বরে বললো-

–‘ কিছু হয়নি, বেশি লাগেনি, ঠিক হয়ে যাবে।

সূচনা একটু মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘আমি ব্যথা পেয়েছি আর আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন কিছু হয়নি।

–‘কী করব এখন?তুমি কী ভেবেছিলে সিনেমার নায়কদের মতো স্লো মোশন এ দৌড়ে আসব,হাত ধরে আধা ঘণ্টা তাকিয়ে থাকব তারপর পরবর্তী আধা ঘণ্টা অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিব?নো চান্স।আমার অবর্তমানে কেউ একজন আমার থেকেও যত্ন করে তোমার ক্ষ’ত তে মলম লাগিয়ে দিয়েছে, এখন যদি তারপর ও আমি অতিরিক্ত তদারকি করতে আসি তাহলে সেটা হবে অতিরিক্ত কেয়ার বা ন্যাকা/মি।আমি ওসব করতে পারি না। তাছাড়া শরীরের ক্ষত যত গভীর ই হোক না কেন, মনের ক্ষত তার চেয়ে বহুগুণ তীব্র। এখন মুখে অস্বীকার করবে জানি,তবে তুমি মানুষ, রোবট না।যদিও সেসব লজিকলেস কথা। তবে ঔসব কথা ইগনোর করতে গেলেও করা যায় না, একটু হলেও খারা/প লাগে।

সূচনা কিঞ্চিৎ লজ্জা বোধ করলো।সে তো সেভাবে বলে নি।এমনি বলে ফেলেছে কিন্তু প্রণয় যে এভাবে বিষয়টা বলবে, সেটা বুঝতে পারেনি সূচনা।আমতা আমতা করে বললো-

–‘হ্যা,,তবে আমি এমনি বলেছি। সেভাবে বুঝাইনি ব্যাপারটা

–‘হু।

–‘ভাবি হাতে নাকি ব্যথা পেয়েছ?দেখি।বেশি লেগেছে?

দুজনের কথার মাঝেই দিনার কণ্ঠ।দুজন একসাথে পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখল দিনা,ইরা আর তিথি দাড়িয়ে আছে। মুখশ্রীতে কিছু টা চিন্তিত ভাব।

সূচনা হাসল।মাথা নেড়ে বললো-

–‘না এখন ঠিক আছে, অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছে মামি।

ইরা শাসনের স্বরে বললো-

–‘ সাবধানে কাজ করবে না। ধ্যান কোথায় থাকে।ভাইয়ার দিকে।(চোখ টিপ দিয়ে)

সূচনা চট করে তাকালো প্রণয়ের দিকে।এতক্ষণের গম্ভীর ভাবটা নেই প্রণয়ের মুখশ্রীতে। সে ও যেন অবাক,দৃষ্টি উৎসুক যেন জানতে চায় -সত্যি ই কি তার ধ্যানে থাকে।সূচনা কিছু টা অস্বস্তি বোধ করল।তার এভাবে তাকানো টা মোটেও ঠিক হয়নি। অস্বস্তি হচ্ছে এখন, ঝট করে সরিয়ে নিতেও কেমন যেন লাগছে। কেন তাকলো সে উত্ত শূন্য।
____________________________
মিসেস আনহা আর রিমা এখনো কানাকানি করছে। মিসেস আফিয়া যথেষ্ট শান্ত ছিলেন এতক্ষণ। কিন্তু এবার তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তার।তে/তে উঠলেন যেন।বাজ/খাঁই গলায় বললেন-

–‘তোরা কী চাস হ্যা?প্রতিবারই ছেলেটাকে নিয়ে কথা শোনাতে হবে তোদের?কী সমস্যা ওকে নিয়ে,বলতে পারবি,ছেলেটা কি করেছে তোদের?

মিসেস আনহা মুখ বা’কিয়ে বললেন-

–‘আমাদের কিছু করেনি, কিন্তু ও কে হয়, কেন ওর জন্য এত দরদ,রক্তে/র সম্পর্ক আছে তোনার? নেই তো।তাহকে কীসের দরদ এত। না বাপ আছে না মা৷ সারাজীবন তোমাদের টা খরচই হবে কিছু দিতে পারবে? পারবেনা।তাহলে এরকম মানুষদের রেখে লাভ কী?এটা তোমার বাড়ি নিশ্চয়ই কোনো এনজিও৷ সংস্থা না যে যাকে তাকে আশ্রয় দিয়ে দিবে। তোমরা না থাকলে ওরা এখন রাস্তার ছেলে মেয়ে হতো আর এখন,,,

মিসেস আনহা শেষ করতে পারলেন না কথা।মুখের কথা মুখেই থেকে গেল। রান্নাঘর কাপি/য়ে যেন আওয়াজে তুললো তার গালে পড়া চ/ড়।চমকে উঠলেন মিসেস রিমা।মিসেস আনহা যেন প্রতিক্রিয়া দেখাতেই ভুলে গেছেন।কল্পনা ও করতে পারেননি, মিসেস আফিয়া যে তার গা/য়ে হাত তুলতে পারেন।নিহা, ফিহা রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিল।ইতিমধ্যে দিনা,তিথি আর ইরার আগমন ঘটেছে রান্নাঘরে।তারাও আশ্চর্য বনে গেছে। ফিহা অবশ্য কিছু টা আন্দাজ করেই নিয়েছিল। কারণ প্রণয়কে নিয়ে সমস্যা টা তার মা/য়েরই বেশি।সবসময় ই প্রণয়ের ব্যপারে খা/রাপ কিছু বলতে দু পা এগিয়ে থাকেন। সে বুঝে উঠতে পারে না,কি সমস্যা তাকে নিয়ে? তার সাথে না যোগাযোগ হয় না কিছু। তাহলে কেন বলতে হবে এত কথা? কিছু মানুষ হয়তো থাকে,যারা শুধু শুধু ই অন্য কে নিয়ে টা/নাহেঁচড়া করে,অন্য কে কষ্ট দিয়ে সুখ পায়,পৈশাচি/ক সুখ।আচ্ছা তার মা ও কি তাহলে সেই লোকেদের দলে চলে গেছে?না হলে এমন করবে কেন?ফিহা মনে মনে এসব ই ভাবছিলো, তখনই কানে এলো তার মা/য়ের স্বর।কাঁপা কাঁপা গলায় উনি বললেন-

–‘তু,,তুই আমাকে মা/রতে পা,,পারলি?তাও ওই ছেলের জন্য যার কোনো পরিচয় নেই, যার কোনো,,

–‘চুপ একদম চুপ।তোর কি বিন্দু মাত্র লজ্জা নেই?যে কারণে গা/য়ে হাত তুললাম তারপরও সেই কথাই বলছিস।ছি/হ! এখন তো ভাবতেই গা রি রি করছে তোরা আমার বোন।যে ছেলের কথা বলছিস সে রাস্তার ছেলে কেন হতে যাবে?সে আমার ছেলে, আমার একমাত্র ছেলে।সে আমাদের ঘাড়ে আসে খায় না।নিজের স্ত্রী আর বোনকে খাওয়ানো পড়ানোর মতো তার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে।তার নিজস্ব ফ্ল্যাট ও আছে যেটা তার নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে কেনা।সে চাইলেই পারে সেখানে যেয়ে থাকতে।কিন্তু সে তোদের মত মানসিকতার না। সম্পর্কের বন্ধন কী সে সম্পর্কে অবগত সে।সম্পর্ক রক্ষা করতে জানে। আর কেন থাকবে সে আলাদা নিজের মা-বাবা,বোনদের ছেড়ে?অন্তত আমি বেচে থাকতে আমার ছেলে আমার কাছে ই থাকবে। যার যা বলার ইচ্ছে বলুক।প্রণয় আমার ছেলে।আমার ছেলে ও।

দিনার দিকে তাকিয়ে বললেন-

–‘দিনা আমি চাইনা আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে এমন অসুস্থ মন মানসিকতার মানুষ উপস্থিত থাকুক যারা আমার ছেলে আর ছেলের বউকে নিয়ে বা/জে কথা বলে। তোর কী মতামত?

দিনা সহসা উত্তর দিলো-

–‘আমি চাইনা আম্মু আমার ভাই আর ভাবিকে নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনো ধরনের বা/জে কথা বলা হোক।
যদি তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে তাহকে থাকুক না হলে,,

–‘বুঝেছি।

মিসেস আফিয়া আনহা আর রিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

–‘ আমি মুখে বলে অপমান করতে চাই না আর।বুঝে নিলে ভালো।

মিসেস আফিয়ার কথা শেষ হতেই নিহা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো তার মা/য়ের কাছে আর বললো-

–‘এরকম বাড়িতে থাকর মতো ইন্টারেস্ট আমাদের বেই যেখানে ডেকে এনে আমাদের অপমান করা হয়,তাও আবার এমন কারো জন্য। মাম্মা চলো।

মিসেস আফিয়া শান্ত গলায় নিহাকে বললেন-

–‘আমি চাই না একটু আগে তোর মা/য়ের গালে যেটা পড়েছে সেটা তোর গালে পড়ুক।

নিহা দাত কিড়মিড় করে বললো-

–‘মাম্মা চলো,ফিহা চল।

ফিহা কিছু টা ভয় নিয়েই বললো-

–‘আমি যাবনা,আমার প্রণয় ভাইয়া, আর ভাবি কাউকে নিয়ে ই কোনে সমস্যা নেই।তোমরা গেলে যাও।

মিসেস আনহা চট করে তাকালেন ফিহার দিকে।ফিহা ভাবলেশহীন। মিসেস আনহা কেন যেন কিছু বলতে পারলেন না। কোনোরকম শরীরটা টেনে নিয়ে বের হলেন রান্না ঘর থেকে।বের হওয়ার সময় দেখা হলো সূচনার সাথে।নিহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো সূচনার দিকে।সূচনা শান্ত চোখে তাকালো তার দিকে। সে জানে না কিছু কী হয়েছে এখানে।
.
.
.
–‘প্রণয় তোর মাথা খারাপ কী বলছিস এগুলো?

–‘আমি ঠিক ই বলছি মামি,এটাই বেস্ট ডিসিশন। আরও আগেই করতে চেয়েছিলাম আমি তোমার জন্য করতে পারিনি।কিন্তু আমার মনে হয় সময় এসে পড়েছে।

প্রণয়ের কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মিসেস আফিয়া, ইসহাক সাহেব, দিনা,তিথি সবাই।

#চলবে