প্রণয়ের সূচনা পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
230

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৪
____________________________
বিকেলের অলস প্রহর, অলতার মধ্য দিয়েই কাট/ছে সূচনার। মিসেস আফিয়া আর ইসহাক সাহেব উত্তরা গিয়েছেন মিসেস আফিয়ার ভাইয়ের বাসায় কোনো কাজে।ইরা তার রুমে,তিথি ঘুমাচ্ছে। প্রণয় সেই দুপুরের পর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।সূচনার মূলত রা/গ উঠছে এখন একা বসে থাকতে।ইরার ওপর ও রা/গ উঠছে।এই মেয়েটা এমন কেন?তাকে প্রথম দেখে ভেবেছিল -এই মেয়ের সাথে তার ভালো জমবে,একদম কথার ঝুলি নিয়ে বসবে দুজন অথচ তাকে দেখ তার দেখা পাওয়াটাই যেন দু/স্কর।কাউকে না পেয়ে একা একা চুপচাপ বসে আছে ব্যালকনিতে। মেঘের চাদরে ঢা/কা আকাশ।এদিকে বিষন্নতা উপচে পড়ছে সূচনার মনে।প্রবাহমান বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ।প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যের রূপ দৃশ্যমান।মন খা/রাপ আর নীরবতায় সূচনা উপভোগ করছে সেই সৌন্দর্য।কী সুন্দর! এক কাপ চা আর পাশে সে থাকলে মন্দ হতনা।একদম অজান্তেই ভাবনা টা আসলো সূচনার মনে।নিজেই লজ্জা পেল,আজকাল তারও এসব শখ জাগে?তার মতো নিরামিষ মেয়ে আবার এসব ভাবে? তাও প্রণয়ের সাথে,প্রণয় ও নেহাৎ নিরামিষ।জ্বরের ঘোরে কিসব করেছে আর জ্বর যেতেই যেন তাকে চিনতেই পারছেনা।সে তো অবাক।যাক সেসব ভাবনা সব সাইডে রেখে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হলো।প্রকৃতি কখনো কোনো কিছু তে তাড়াহুড়ো করে না সব সুন্দর করে করতে।তবুও প্রকৃতিতে ঘটা একেকটা কাজ কতটা নিখুঁত, কত সুন্দর!সত্যি ই আল্লাহর সৃষ্টি অপরূপ। এজন্যই হয়তো বলা হয়েছে -আল্লাহকে না তার সৃষ্টি কে দেখো।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে যখন প্রকৃতির রূপ দেখতে মগ্ন সূচনা তখনই চোখে মুখে পানির ঝা/পটা লাগল।সে কেঁ/পে উঠলো খানিক।চোখ খুলে তাকালো।আকাশ ভে/ঙে যেন বৃষ্টির আগমন ঘটেছে।গতরাতের বৃষ্টির রেশ কা/টেনি,,সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন ছিল আকাশ আর এখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি।সূচনা আনমনে কন্ঠে সুর তুললো-

❝তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী

অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মা/তাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান।

তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মাতাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান…

সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা
ঘাসফুলেদের সাথে
আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া
ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া….ছন্নছাড়া।❞
তুমি চাইলে জোছনা স্বপ্নীল কোনো এক রাতে
আকাশটা ঘিরে প্রার্থনা
চাঁদটা বলবে হেসে জোছনা এলে শেষে
জানিও তোমার অভ্যর্থনা..
তুমি চাইলে জোছনা স্বপ্নীল কোনো এক রাতে
আকাশটা ঘিরে প্রার্থনা
চাঁদটা বলবে হেসে জোছনা এলে শেষে
জানিও তোমার অভ্যর্থনা
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা।
ঘাসফুলেদের সাথে আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া।
ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া।❞

থেমে গেল প্রণয় ও।সূচনার দুইপাশে দুইহাত গ্রিলে রেখে নিজের মাঝে আ/টকে দিল যেনয়।থুতনি তার সূচনার ঘাড়ে।সূচনার কপোলে কপোল স্পর্শ করছে প্রণয়ের।খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে কেঁ/পে কেঁ/পে উঠছে সূচনা।তা দেখে শব্দহীন হাসল প্রণয়।ফিসফিস করে বললো-

–‘কা/পছ কেন?

………

–‘বলো।

–‘আ,,আপনার জ্বর কি এখনও কমেনি?

সূচনার এমন প্রশ্নে ভ্যাবা/চেকা খেয়ে গেল প্রণয়।হালকা গলা খা/কারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘জ্বর,, জ্বরের কথা জিজ্ঞেস করছ কেন?

–‘আপনি জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টা ব/কেছেন সকালে কিন্তু যখন জ্বর কমলো তখন তো আর আপনাকে আমার আশেপাশে ও দেখিনি।এখন আবার সকালের মতো কাহিনি শুরু করেছেন তাই ভাবলাম আবার জ্বর এসেছে কিনা।

নিজ কায়দায় ছোট্ট করে হাসলো প্রণয়।দুষ্টুমির স্বরে বললো-

–‘তার মানে তুমি চাইছিলে যেন আমি সকালের মতো আচরণ করি।তাই তো?

–‘মো,,মোটেও না৷ সে কথা কে বললো?

–‘তুমি ই তো বললে।

–‘আমি কখন বললাম আশ্চর্য!

–‘মুখে বলোনি,,কিন্তু মনের চোখ দিয়ে তোমার মন পড়ে নিয়েছি।

–‘ভালো করেছেন। ছাড়ুন।

–‘যাও,,আমি ধরে রাখিনি তো।

–‘হাত না সরালে যাব কিভাবে?

–‘যেতে পারলে যাও।না পারলে এভাবেই থাকো,আমার তো ভালোই লাগছে।

–‘আমি একটু ছাদে যাব,,বৃষ্টি তে ভিজতে দিবেন আজকে?

–‘অসময়ের বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর উঠবে।

–‘বেশি না একটু ভিজব।

–‘না..

–‘প্লিজ।

–‘ঠিক আছে তবে আমিও যাব।

–‘কে,,কেন?

–‘তুমি বৃষ্টি তে ভিজবে আমি দেখব তোমাকে।

–‘আমি যাবনা তাহলে।

–‘কেন?

–‘এমনি,,

–‘বলো।

–‘ আপনি দাড়িয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগবে।

প্রণয় শব্দ করে ই হেসে দিল।যার দরুন সূচনা সত্যি লজ্জায় পড়ে গেল এখনই।প্রণয় হাসি থামিয়ে গাড় কণ্ঠে বললো –

–‘লজ্জাবতী লজ্জা না পেলে কিভাবে হবে?তার লজ্জা রাঙা মুখ দেখার যে তীব্র তৃষ্ণা এই নেত্র জোড়ায়।লজ্জাবতীর লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করব আমি,লজ্জাবতী লজ্জা পাবে সেদিকে চেয়ে হাসব আমি আর বুদ্ধি আট/ব তাকে আরও লজ্জা দেয়ার।
চলো।
________________________________
বাধ ভাঙা বৃষ্টি।ছাদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে একজন মানবী।ভিজে একাকার অবস্থা তার।পড়নের প্রিন্ট করা শাড়িটা লেপ্টে আছে গায়ে।সন্ধ্যা নামবে নামবে এমন, সাথে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় অন্ধকার লাগছে।বৃষ্টির বেগও তীব্র যার দরুন আশেপাশের ছাদ থেকে তেমন বোঝা যাবেনা তাদের অবস্থান।সূচনার সাথে প্রণয় ও ভিজছে।তার না শোনেনি প্রণয়।ভিজছে তার সাথে।সূচনার থেকে কিছুটা দূরেই রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে প্রণয়। বৃষ্টির ঝুম শব্দ।আসৃতে বললে শোনা যাবেনা তাই সূচনা উচ্চ স্বরে বললো-

–‘আর ভিজবেন এবার আসুন।

প্রণয় শুনলো কি না কে জানে।কিন্তু জবাব আসলো না কোনো।সূচনা এবার এগিয়ে গেল তার দিক।তার পাশে তার দিক মুখ করে দাড়ালো।বললো-

–‘অনেক ভিজেছেন এবার আসুন।আজকেই জ্বর হয়েছে পুরোপুরি না কমতেই আবার আসবে।কথা শোনেননা কেন?কত করে বললাম ভিজবেন না,আমিও ভিজব না চলুন চলে যাই।কিন্তু না কথা শোনে কে?ঘা/ড়ত্যা/ড়া একটা।চলুন।

নিজের মতো করে বকব/ক করে চলেছে সূচনা কিন্তু প্রণয় জবাব দেয়নি কথার।তা দেখে সূচনা আবার কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিবে তার আগেই হাত ধরে ফেলল প্রণয়।হাত ধরে টে/নে নিজের সামনে দাড় করালো তার দিকে পিঠ করে।আবারও থুতনি রাখল সূচনার গ্রীবায়।সূচনা বিমুঢ় হয়ে গেল। চুপ করে রইলো সে।তার থুতনি টা সূচনার ঘাড়ে রাখা অবস্থায় নড়চড় হচ্ছে।সেখান টায় আলতো ভাবে স্পর্শ করছে ঠোঁট।প্রণয়ের এক হাতর বিচ/রণ সূচনার উদ’রে।সূচনা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে স্বাভাবিক দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার কানের কাছে ফিসফিস করে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-

–‘তোমার লজ্জা লাগছে না?

ঠোঁ’ট কাম/ড়ে ধরলো সূচনা।ইশশশ,,এমন প্রশ্ন ও করতে হয়?সে কি এতটুকু ও বোঝেনা যে তার কী পরিমাণ লজ্জা লাগছে।সূচনা নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো সামনে তাকিয়ে।প্রণয় মাথা বাা/কিয়ে সূচনাকে দেখছে।মিনিটের নিরবতা,অতঃপর প্রণয়ে গাড় কণ্ঠের উক্তি-

–‘সে বৃষ্টি বিলাসে ব্যস্ত আর আমি তাকে।এমন মুহুর্ত শত বার আসুক হাজার বার আসুক।

–‘একবার জ্বর হোক তখন বুঝবেন।

ফ/ট করে বললো সূচনা। তার কথার পিঠে প্রণয় বললো-

–‘জ্বর হোক, জ্বরের ঘো/রে সুখ’ময় সব অঘ’টন ঘ’টুক আমার দ্বারা।সে অঘ’টনের কথা চিন্তা করে লজ্জায় মিয়িয়ে যেয়ে মুখ লুকাক সে আমার বু/কে।

সূচনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মাথার সাথে মাথা ঠে/কিয়ে দাড়ালো।ফিচেল কণ্ঠে বললো –

–‘তুমি জানো তোমার শরীরের প্রতিটা ভা/জ আন্দাজ করতে পারছি আমি।

সূচনা চ/কিতে দৃষ্টিতে তাকালো।তা দেখে বা/কা হাসলো প্রণয়। বললো-

–‘সত্যি বলছি।বৃষ্টি তে তুমি আমি একা, যদি কোনো ভুল হয়ে যায়, তাহলে কি ক্রো/ধ দেখাবে নাকি সাদরে গ্রহণ করবে?

চোখ খিঁ/চে বন্ধ করে নিল সূচনা।লজ্জায় কান গ/রম হয়ে গেছে তার।প্রণয় বললো-

–‘চলো তাহলে।
______________________
–‘এমনই এক দিন ছিল ইরাবতী, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বৃষ্টি ছিল না যদিও।কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নীল জামদানী পড়া, মুখে প্রসাধনীর আলিঙ্গন, হিজাবে আবৃত্ত এক রমনী।স্টেজের সামনে এক পাশে বসে ছিল সে।প্রথম দেখাতেই হৃদ/পিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন জানান দিয়েছিল এই মেয়ের মধ্যে কিছু আছে।দেখো সত্যি ই হয়েছে তা, আনার হৃদ রাজ্যে রাজ করছো তুমি, আমার সমস্ত প্রেমাবেগ তোমার জন্য। আমার ইরাবতী, মুগ্ধর ইরাবতী।তোমার
অভিমান ভা/ঙাতে হবে।তর সইছে না, কবে দেখব তোমাকে?তোমার অভিমান ভাঙা/তে পারব তো?

জানালার ধারে দাড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে কথাগুলো বলছিল মুগ্ধ। প্রেমিক হৃদয়ের আ/কুলতা।আচ্ছা এই আকু/লতা কি পারবে ইরার মন গ/লাতে?নাকি নতুন কোনো বিচ্ছেদের গল্প র/টবে?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৫
_____________________________
বৃষ্টির বেগ কমে গেছে বেশ খানিকটা।সন্ধ্যা ঠেলে রাতের আগমন ও ঘটেছে বহু আগে।রাত সাড়ে নয়টা এখন।মিসেস আফিয়া আর ইসহাক সাহেব বাসায় ফিরেন নি।বৃষ্টির কারণে আসতে দেয়নি তাদের অগ্যতা থেকে যেতে হয়েছে উত্তরাতেই।মিসেস আফিয়া ফোন করেছিলেন সূচনাকে।টেবিলে খাবার বেড়ে দিয়ে সূচনা তিথি আর ইরাকে ডাকতে গেল।ইরার রুম লক করা বরাবরের মতো।তিথির জ্বর উঠেছে।তার জ্বরের কথাটা মিসেস আফিয়া আর ইসহাক সাহেব কে জানায়নি। অযথা চিন্তা করবেন।সিজনাল ফিভার,ঘরে একজনের হলে অন্য জনের ও হয়ে যায়,ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তিথি ঘুমাচ্ছে, সূচনা ডাকেনি, ঘুমাক।সবার খাওয়া শেষ হলে সে খাইয়ে দিবে।মিসেস আফিয়া বলেছিলেন তাকে -”আমার চার ছেলে মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হচ্ছে তিথি।একটু কিছু হলেই একেবারে নিস্তেজ হয়ে যায়। সব আমার ওপর ছেড়ে দেয়। অসুস্থ হলে পানিটা পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হয়।’প্রায় সব পরিবারে এমন একজন থাকেই।ইরার রুমের দরজায় নক করতে নিলেই দরজা খুলে যায়। মানে ভে/ড়ানো ছিল দরজা।সূচনা দরজায় দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ইরা আসব?

–‘হ্যা আসো।

সূচনা ভেতরে প্রবেশ করলো।কাবার্ডের ড্রয়ারে কিছু একটা খুজছে ইরা।সূচনার দিকে না তাকিয়ে ই ইরা জিজ্ঞেস করলো-

–‘কিছু বলবে ভাবি?আমাকে ডাকতে, আমিই আসতাম।

–‘তুমি রুম থেকে বের হও?

পাল্টা প্রশ্ন করলো সূচনা। তার গলার স্বরে কিঞ্চিৎ ক্ষো/ভের আভাস তা টের পেল ইরা।ইরার উত্তর না পেয়ে সূচনা আবার বললো-

–‘ সারাদিন তো রুমে থাকো,তিথি পড়ায় ব্যস্ত থাকে,তোমার ভাইয়া অফিসে।আমি একা থাকি, তুমিও রুমে পড়ে থাকো।দেখো,আমাদের সবারই মন খা/রাপ হয়,মাঝেমাঝে তার কারণ থাকে,মাঝেমাঝে বিনা কারণেই মন খারা/প হয়।কিন্তু তার মানে এই না যে সেই মন খা/রাপ নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। নিজের মন ভালো হওয়ার কারণ নিজেই হও, নিজের ভালো বুঝতে শিখো।কত মানুষ আসবে, যাবে কিন্তু একটা সময় তুমি একা হয়ে যাবে,একাই যাবে যেমন একা এসেছ।তুমি যেভাবে থাকছো তাতে মন খা/রাপ কমছে বই বাড়ছে। মন খা/রাপ কে পেলে পুষে নিজের মধ্যে স্থায়ী হওয়ার জায়গা দিচ্ছ। মানুষ যখন দেখবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি তখন তারা সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের আ/ঘাত করবে।তোমার দুর্বল জায়গা মানুষকে দেখিও না।বুঝেছো?খেতে আসো এখন।

একটানা কথাগুলো বলে গেল সূচনা। ইরা হাতের কাজ থামিয়ে দিয়েছে, দৃষ্টি এক জায়গায় স্থির ছিল এতক্ষণ। সূচনার শেষ কথায় মাথা নাড়িয়ে বুঝালো যে সে বুঝতে পেরেছে।তাকে আসতে বলে সূচনা চলে যেতে ধরলে ইরা পেছন থেকে বলে উঠলো-

–‘চলেই যেহেতু যাবে তাহলে তারা আসে কেন ভাবি?

–‘কিছু মানুষের আগমনই হয় চলে যাওয়ার জন্য হয়তো স্বইচ্ছায় নয়তো নিয়তি বাধ্য করে।কিন্তু কারো জীবন থেমে থাকেনা কারো জন্য,বাঁচতে হয়।যা হয় তার পেছনে কারণ থাকে কোনো না কোনো। হয়তো বুঝতে আমাদের দেরি হয় কিন্তু কারণ ছাড়া কিছু হয়না।

–‘যদি স্বইচ্ছায় যেয়ে থাকে?

–‘এমনটা নাও তো হতে পারে।

–‘প্রমান দেখেছি আমি।

–‘চোখের দেখা সবসময় সঠিক হয় না।অনেক সময় আমরা ঔ জিনিসটাই দেখি যেটা সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের সামনে রাখা হয়,তখন পরিস্থিতি এমন হয় যে তার অন্তরালে থাকা সত্যি টা ঘে/টে দেখার মতো জ্ঞান টুকু হারিয়ে ফেলে মানুষ।

–‘ এমনটা না সবার বেলায় না ও তো হতে পারে।

–‘তাহলে ধরে নাও সে তোমার ছিলই না।আর যদি সে তোমার ভাগ্যে থেকে থাকে তাহলে সে ফিরবে।বাদ দাও,খাবার সব ঠান্ডা হয়ে গেল তাড়াতাড়ি চলো।

–‘তুমি জানলে কি করে যে আমি…

–‘তোমার আর আমার বয়স কিন্তু প্রায় কাছাকাছি ইরা।এই বয়সে কি হয়, আর তোমার ব্যবহার দেখে সর্বপ্রথম এটাই মাথায় আসবে সেটা স্বাভাবিক। এই সময়টা এমনই।

–‘হুম।ভাবি..

–‘বলো।

ইরা বললো না কিছু। এগিয়ে গেল সূচনার দিক।আচ/মকাই জড়ি/য়ে ধরলো সূচনাকে। বললো-

–‘থ্যাঙ্কিউ সুন্দর করে বোঝানোর জন্য।

তাকে সোজা করে দাড় করিয়ে তার গাল টি/পে দিল বাচ্চাদের মতো।বললো-

–‘অনেক হয়েছে কথা এবার খেতে চলো।

–‘হুম।
___________________________
প্রণয় আর ইরা এতক্ষণ তিথির রুমেই ছিল।সূচনা তিথিকে খাইয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গিয়েছে সবকিছু গোছাতে।সূচনা সব কাজ শেষে তিথির রুমে আসলে প্রণয় নিজের রুমে চলে গেল।ইরা মেডিসিন দিয়েছে তিথিকে।তিথির দুপাশে দুজন বসে আছে,, তিথি চুপচাপ শুয়ে আছে। সূচনা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলো-

–‘একটু ভালো লাগছে এখন?

–‘একটু্।

–‘চিন্তা করো না..ঠিক হয়ে যাবে।

–‘ভাবি ঠিকই বলছে তিথি।তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর,আমি তোর সাথে শুই আজকে।ভাবি তুমি যেয়ে শুয়ে পড়ো।

–‘ভাবি তুমি আমার সাথে ঘুমাও।

ইরার কথার পিঠে তড়িৎ গতিতে বললো তিথি। ইরা দ্বিম/ত করে বললো-

–‘আমি আছি তো ভাবি রুমে যেয়ে থাকুক।

–‘না।ভাবি ও থাকবে তুমিও থাকবে।এমন করো কেন আমি না অসুস্থ।

মুখটা ল/টকিয়ে বললো তিথি।সূচনা ফিক করে হেসে দিল।বললো-

–‘সমস্যা নেই দুজনই থাকব।আমি একটু বলে আসি।থাকো।

সূচনা রুম থেকে বেরিয়ে এলো তার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সূচনা যেতেই ইরা হালকা করে তিথির কান টে/নে দিয়ে বললো-

–‘শুরু হয়েছে, অসুস্থ হলেই সব আহ্লাদ উপচে পড়ে তোর তাই না।

–‘একদম ঠিক ধরেছো। হিহিহি।

–‘একটু আগে কে যেন বলছিল “আমি না অসুস্থ। এখন আবার দাত কে/লাচ্ছে কে?

–‘তিথি বলেছে আর তিথিই দাত কেলা/চ্ছে।আজকে সুযোগ হয়েছে আমরা তিনজন একসাথে শুবো আর অনেক গল্প করব। ঠিক আছে?

–‘সে দেখা যাবে এখন একটু উঠে সোফায় বস তো।বিছানা টা ঠিক করি।

–‘আচ্ছা।
_________________________
সামনে ল্যাপ্টপ রেখে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কিছু একটা করছে প্রণয়।সে বিছানায় বসা আর সূচনা দরজার সামনে দাড়ানো। তার দিকেই তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে এগোতে নিলেই প্রণয় ফ/ট করে তাকালো তার দিকে। সূচনা কিঞ্চিৎ লা/ফিয়ে উঠলো সাথে পা ও থেমে গেল।প্রণয় অবাক হওয়ার ভঙ্গি/মা করে বললো-

–‘আশ্চর্য তোমার রুম, তোমার বর সব তোমার তবুও এত লুকোছাপা, ভয় যে কেন তোমার সেটাই বুঝিনা।

প্রণয়ের কথায় সূচনার ভ্রু যুগল কুঁ/চকে এলো কিঞ্চিৎ।বিছানার দিকে এক ঝ/টকায় এগিয়ে গিয়ে বললো-

–‘প্রথমত আপনি লুকোছাপার কথা বলছেন তাহলে শুনুন এটা আমার রুম,আপনি আমার বর,রুমের সব আমার সেটা সবাই জানে তো লুকোছাপার প্রশ্ন ই আসেনা।আর আপনাকে ভ/য় পেতে যাব কেন?আপনি বাঘ না ভাল্লুক নাকি পূর্নজন্মের রাফসান হক যে কে/টে টুকরো টুক/রো করে ফেলবেন সেজন্য আপনাকে ভ/য় পাব।আপনি একটা…

প্রণয় ও ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমি একটা কী?বলো।

সূচনা সেখানেই চুপ হয়ে গেছে। তার এতক্ষণে হুশ এসেছে আর সাথে ছাদের একেকটা মুহুর্ত যেন জী/বন্ত হয়েছে চোখের সামনে যার দরুন এখন মাথা তুলে তাকানো ও তার দায় হয়ে পড়েছে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো-তুই এত বো/কা কেন সূচি।জীবনেও কী বড় হবি না?

–‘বলো আমি কী?

কোনোরকম মাথা হালকা তুলে ফো/কলা হাসি দিল সূচনা।মুখটা ছোট করে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বললো-

–‘আপনি একটা ভোলা ভালা, ইনোসেন্ট ছেলে, আপনাকে ভ/য় কেন পাব বলুন।আপনার মতো ভালো আর ইনোসেন্ট আর দু একটা নেই।হেহেহে।

প্রণয় মুখ বা/কিয়ে হাসলো দু হাত বু/কে ভাজ করে বললো-

–‘আমার মতো ভালো ছেলে আর দু একটা পাবেনা তা ঠিক কিন্তু আমি মোটেও ইনোসেন্ট না।

–‘কে,,কেন?

–‘ধীরে ধীরে বুঝবে।মিহু কল দিয়েছিল, কল ব্যাক করো যেও। কল দিয়ে কানের পো/কা নাড়িয়ে ফেলছিল আমার।

–‘আপনি রিসিভ করে কথা বললেই তো আর বারবার দিত না।

–‘ওর কল রিসিভ করা মানে আমার আধা ঘণ্টা সময় ওয়েস্ট করা।

–‘হুহ,,ফোন কোথায় আমার?

–‘আমার কাছে।

–‘দিন।

–‘নিয়ে যাও।

–‘দিন আপনি।

সূচনা হাত বাড়িয়ে ফোন চাইলেও দিলনা প্রণয়।বললো-

–‘কাছে এসে নিয়ে যাও।

–‘এমন করছেন কেন,ফোনটা দিন।

কোল থেকে ল্যাপ্টপ সরাতে সরাতে প্রণয় বললো-

–‘আমি কিছু ই করিনি।বললামই তো নিতে পারলে নিয়ে যাও।কাছে আসতে বলেছি জ/ড়িয়ে ধরতে বলিনি যে এত ভ/য় পাচ্ছো।তোমার মাথায় সারাক্ষণ এগুলো থাকলেও আমার অনেক কিছু ভাবতে হয়।সবসময় এসব নিয়ে থাকিনা।আসো ফোন নিয়ে যাও।

সূচনা একটু বিশ্বাস পেল বোধহয়। চিন্তাছাড়াই এগোলো প্রণয়ের দিকে।ঝু/কে হাত বাড়িয়ে ফোন নিতে গেলেই কো/মড়ে সুর/সুরি মতো অনুভব হলে টাল সামলাতে না পেরে প্রণয়ের ওপরই পড়ে গেল।প্রণয় বা/কা হাসলো।মুখে হাত দিয়ে বললো-

–‘তোমাকে বলেছিলাম কাছে এসে ফোন নিয়ে যাও আর তুমি আমার মতো ভোলা ভালা মানুষ টার ওপর হা/মলে পড়লে।এই ছিল তোমার মনে।

সূচনা চোখ মুখ কুচ/কে বললো-

–‘একদম বা/জে কথা বলবেন না।আমি কিছু ই করিনি আপনি ই তো আমার কোম…

–‘কী করেছি তোমার কোমরে?

–‘ক,,কিছু না সরুন।দিন ফোন দিন।

–‘আমি তো ধরিও নি। তুমিই লেপ্টে আছো।

নিজের অবস্থান বুঝল সূচনা।সত্যি ই প্রণয় ধরে রাখেনি তাকে।সে ই তার টি-শার্ট এর কর্লার হাত দিয়ে ধরে রেখেছে।সূচনা তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়াতে নিলে প্রণয় হাত টে/নে ধরল।বললো-

–‘ছাাদ থেকো আসার পর যা হয়েছে তারপর তোমার ফিলিংস কেমন ছিল প্রণয়ী?

সূচনাকে চোখ মে/রে কথাটা জিজ্ঞেস করলো প্রণয়।সূচনা হাত ছাড়া/তে মোচ/ড়ামু/চড়ি করতে লাগল।তা দেখে প্রণয় ঘা/টালো না আর। আজকের জন্য থাক,আজকে অনেক লজ্জায় ফেলেছে তাকে।হাত ছেড়ে দিল প্রণয়,হাতে ফোন ধরিয়ে দিল।ফোন হাতে পেতেই সূচনা দ্রুত পায়ে উঠে চলে গেল ব্যালকনিতে।
.
.
রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না।মিহুকে কল করছে সূচনা। মেজাজ খা/রাপ হচ্ছে এখন।তিথির রুমে যেতে হবে তাকে অথচ এই মেয়ে ফোনই তুলছে না।এই শেষ বার দিবে বলে যখন ডায়াল করলো তখনই রিসিভ করলো মিহু।কানে তুলে বললো-

–‘কয়টা কল দিয়েছি হ্যা।কান কই থাকে তোর?

–‘এহহহ আসছে কান কই থাকে।তেকে কয়বার কল দিয়েছি আমি সে খেয়াল আছে? আপনার কান কই ছিল ম্যাডাম?

–‘আমি রুমে ছিলাম না, তোর ভাই শুনেছে কিন্তু সে রিসিভ করে নি।রিসিভ করে বলতে তো পারত পরে কল দেয়।

–‘করবে না কারণ সে জানে আমার কল রিসিভ করা মানে তার আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট করা।

–‘বাহ ভাই-বোন দুজনের একই কথা।

–‘হুম।কেমন আছিস তা বল।

–‘এতদিন পর মনে হলো।

কিছুটা অভিমানী কণ্ঠে সূচনা জিজ্ঞেস করলো।

–‘দেখ রা/গ করিস না সূচি।এ কয়দিন ব্যস্ত ছিলাম।মিসেস শেখ অসুস্থ ছিলেন।ওনার বর ও ছিলেন না বাসায়। ভাইয়া আর আমাকেই সবটা সামলাতে হয়েছে।ভাইয়া তো গত চারদিন ঢাকার বাইরে ছিলেন।সকালে ফিরেছে এখন আবার অসুস্থ, জ্বর উঠেছে।
আর তুই তো জানিসই আমি এত ঝা/মেলা দেখলে এমনি হা/ইপার হয়ে যাই।

–‘আচ্ছা বুঝলাম।এখন ঠিক আছে সব?আন্টি সুস্থ হয়েছেন?আঙ্কেল ফিরেছেন বাসায়?

–‘হু।

–‘একটা কথা বল তো মিহু।

–‘বলে ফেল কী।

–‘তুই আঙ্কেল আন্টি কে নাম ধরে কেন ডাকিস?

–‘তাদের ভাগ্য ভালো এত সম্মান দিয়ে মি. এন্ড মিসেস শেখ সম্বোধন করি শুধু মাত্র আমার বাবা মা দেখে।নাহলে ওনারা যা করেছেন তারপর…

–‘এভাবে বলছিস কেন কী করেছেন ওনারা?

–‘তোর কিছু বলার আছে?

–‘আবারও এই কথাটা কে ইগনোর করছিস।

–‘আমি কালকে আসব সেটা জানাতে কল দিয়েছিলাম।এখন তোর কিছু বলার থাকলে বল নাহলে ফোন রাখলাম। আল্লাহ হাফেজ।

–‘মি..মিহু

টুট টুট শব্দ জানান দিল সংযোগ বি/চ্ছিন্ন করেছে মিহু।দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সূচনা।এই মেয়েটা এমন কোন?যখনই এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় তাকে সে ইগনোর করে যেন পা/লিয়ে যায়।ব্যালকনি থেকে উঠে রুমে গেল সূচনা। প্রণয় আগের ভঙ্গিতেই বসে আছে। এই একজন ল্যাপ্টপ,ফোন,বিছানা আর কোলবালিশের সাথে যেন আজন্মকাল সম্পর্ক করে নিয়েছে।এগুলো নিয়ে বসলে আর উঠতে মন চায় না।
ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়া বাকি মাত্র।

–‘মনে মনে না ব/কে সামনা সামনি ব/কো।আমি আরাম করে বসছি তুমিও বসো তারপর শুনবো।

সূচনার ভাবনার সুতোয় করা/ঘাত করলো প্রণয়ের উক্ত বাক্য। সূচনা সে কথা আর বাড়ালো না।স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো –

–‘আমি তিথির সাথে ঘুমাব আজকে।ও একা ঘুমাবে না বলছে।

–‘ইরা আছে না সাথে।

–‘দুজনকেই লাগবে তার।

আচ/মকা প্রণয় ল্যাপ্টপ নিয়ে উঠে দাড়ালো। ল্যাপ্টপ পড়ার টেবিলে রেখে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো-

–‘ঠিক আছে যাও।

সূচনা কিছুটা অবাক হলো বৈকি।কিন্তু কিছু বললো না।যেতে পারলে বাঁচে।ঘুরে দরজার দিকে পা বাড়াতেই চুলে টা/ন লাগলো।চুল ধরে পিছিয়ে এলো সূচনা।বাম বাহু তে হাত রেখে টে/নে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল প্রণয়।চুলগুলো আলগোছে সরিয়ে একপাশে রেখে সূচনার ঘা/ড়ে ছোয়া/লো ও/ষ্ঠাধর। সূচনার ভাবনার বাইরে ছিল এমন কিছু।ঠোঁ/ট সরিয়ে গাঢ় কণ্ঠে প্রণয় বলে উঠলো-

–‘–‘আজকে ছেড়ে দিয়েছি তার মানে এই না যে রোজ রোজ ছেড়ে দিব।আজকে টিজার দেখিয়েছি,সামনে ট্রেলার দেখাব তারপর ফুল মুভি।গেট রেডি জান।গুড নাইট মাই নাইট কুইন।

বাহু ছেড়ে দিয়ে সূচনার থেকে সরে দাড়ালো প্রণয়।সূচনাও স্থির থাকতে পারলনা।এক প্রকার ছু/টে বের হলো রুম থেকে।যাওয়ার আগে শুধু এতটুকু বলে গেল-

–‘আপনি মোটেও ইনোসেন্ট না।

প্রণয় হাসল তার কথায়।
__________________________
তিথি ঘুমিয়ে পড়েছে অথচ বলছিল গল্প করবে।সূচনা রুমে আসেনি এখনও তাই ইরা ব্যালকনিতে যেয়ে দাড়িয়েছে।সূচনার বলা কথাগুলো ভবছিল সে।ভাবতে ভাবতে ঠিকও করে ফেলেছিল সে আর এমন মন ম/রা হয়ে থাকবেনাা,আগের মতোই ব্যবহার করবে।কিন্তু মন কী আর অত সহজে বোঝে?দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে সে একের পর এক।আনমনে আওড়াচ্ছে-

–‘আমি অভিমান করেছিলাম, আপনি বলেছেন -অভিমান কমলে এসো।অথচ আপনি আমার অভিমান ভা/ঙাবেন আমি তো সেই অপেক্ষায় ছিলাম মুগ্ধ সাহেব।অভিমানে অভিমানে দূরত্বের দেয়াল তৈরী হওয়ার আগে আপনি অভিমান টা ভা/ঙিয়ে নিলেও পারতেন মুগ্ধ সাহেব।
.
.
.
–‘দেখুন মিসেস শেখ আমি ঔ বাড়ি যাওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত আপনার কাছ থেকে পার মিশন নেই নি কোনোদিন আর না নিব কখনোতাই অযথা আপনার মতামত জানাতে আসবেননা।

রু/দ্ধ কণ্ঠে নিজের মা/কে কথাটা বললো মিহু।মিসেস আফসানা চিৎ/কার করে বললেন-

–‘মিহুউউ।

–‘চে/চাচ্ছেন কেন মিসেস শেখ?

–‘মিহু ভুলে যেও না আমি তোমার মা।

–‘ভুলিনি বিধায় এখনও এতটুকু সম্মান পাচ্ছেন।আশা করি এমন কিছু করবেন না যে সেই সম্মানটুকু ও না দেই।

–‘আমিও যাব আপু।

মিসেস আফসানার পেছন থেকে বলে উঠল পিহু।তার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে মিহু বললো-

–‘আজ না পাখি আরেকদিন নিয়ে যাব।তুমি স্কুলে যাও এখন।তোমাকে শুক্রবারে নিয়ে যাবে একদিন।

–‘ঠিক আছে।

পিহুর মন খারা/প হয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছে মিহু।কিন্তু ভাবল না আর।দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল মিহু।মিসেস আফসানা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফু/সতে লাগলেন।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৬
_____________________________
–‘কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল তাও ভুল ক্রমে।সেকেন্ড ইয়ারের এক ছেলে আমার ফ্রেন্ড অর্থী কে বা/জে কথা বলেছিল ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমি ভেবেছিলাম সেই ছেলেটা উনি যে মিস বিহেইভ করেছে অর্থীর সাথে।না জেনে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম তাকে।সে চুপ ছিল।যখন জানতে পারলাম আমার ভুল তখন ও উনি কিছু বলেননি, ছোট্ট করে হাসি দিয়েছিলেন শুধু।অর্থীর সাথে যে ছেলেটা মি/সবিহেইভ করেছিল তাকেও শা/স্তি দিয়েছে৷ আশ্চর্যের বিষয় ছিল যাকে আমি কথা শুনিয়েছিলাম সে অর্থীর পরিচিত এক ভাই।পাশাপাশি বিল্ডিংয়ে থাকে।বড্ড অস্ব/স্তি আর লজ্জাজনক পরিস্থিতি ছিল।কিন্তু সে হাসিমুখে চলে যায়।এদিকে ভেতরে ভেতরে আমার খা/রাপ লাগছিল।অর্থীকে বলার পর সে বললো দেখা করে সরি বলে নেয়, অস্বস্তি ও হচ্ছিল কিন্তু কলেজেই তার সাথে দেখা হয় আবার।সেই সুযোগে সরি বলি আমি আর ঔ দিনের মতোই স্বল্প পরিসরে হেসেছিল সে।এরপর থেকে তার সাথে প্রায়শই দেখা হত।সে আমাদের কলেজে আসত,কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার বাবা জড়িত ছিল, তার সুবাদে আসত কলেজে।কিন্তু কথা হত না যে তেমন না।প্রায়ই কথা হত,কিন্তু বেশিরভাগ হত ঠাট্টার ছলে।সে বড্ড চঞ্চল প্রকৃতির, যে কারো মন জয় করে নিতে পারে।তাকে তার চাল চলন,স্ট্রং পার্সোনালিটির কারণে ভালো লাগত।কিন্তু অত সিরিয়াসলি নেই নি। অর্থী প্রায়ই বলতো তার কথা।সে মেয়েদের সম্মান করে অনেক,স্বচক্ষে দেখেছি ও।ততদিনে দুজনের মাঝে সম্পর্ক অনেকটাই এগিয়েছে,নাম ছাড়া এক সম্পর্ক যাকে বলে।বিশ্বাস অনেকটাই তৈরী হয়েছিল দুজনের মধ্যে।কিন্তু সবকিছুর মধ্যে অনুভূতির শুরুটা তার দিক থেকে হয়েছিল নাকি আমার সেটা জানিনা,কিন্তু দুজনের দুজনের জন্য কিছু অনুভূতি আছে সেটা সম্পর্কে অবগত ছিলাম দুজনই।আমার তরফ থেকে ঠিকই আছে, কিন্তু তার তরফ থেকে অনূভুতি রা ছিল মিছে।আমাদের ক্লাসমেট অন্ন্যেশা পছন্দ করতো তাকে আগে থেকেই এটা জানতাম আমরা।এমনকি ক্লাসের অনেকেও জানতো।কিন্তু শুধু যে অন্ন্যেশার পছন্দ তেই সব সীমাবদ্ধ ছিলনা তা জানতাম না।উনি নিজেও অন্ন্যেশাকে পছন্দ করতেন আর তারা রিলেশনেও আছেন।যেদিন জানতে পারলাম সেদিন সামনাসামনি যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম সত্যি কি না ডে উত্তর দিলনা, মৌন ব্রত পালন করলো যেন।তার মৌনতাকে সম্মতি হিসেবে মেনে নিলাম।চলে আসলাম সে পিছু ডাকলো না।দুইদিন পর ফোন দিল, জিজ্ঞেস করলো অমন মনে হওয়ার কারণ?তাকে হা/রানোর ক/ষ্টে দুইদিন কত কে’দেছি, সে একবারও খোজ নেয়নি।সেই রা/গে ক্ষো/ভে আর কথা বলিনি।সে আর কল দেয়নি।সপ্তাহ খানেক পরেই ছিল এইচএসসি পরীক্ষা, সবকিছু ভুলে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করলাম।পরীক্ষা শুরু হলো, শেষ ও হলো।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একদিন আবার কল দিল সে।সেদিন বলে দিয়েছি তাকে কারণ।তাকে ভুলে গিয়েছি তাও বলেছি।সে বলেছে ফিরবে আমার কাছে, আমিও আশা নিয়ে বসলাম সে ফিরবে আমার অভিমান ভা/ঙাতে।কিন্তু জানো দিনাপুর বিয়েতে সে অন্ন্যেশাকে নিয়ে এসেছিল সাথে করে।সেদিন অন্ন্যেশার সাথে কথা হয়েছে আমার।সে তাচ্ছিল্য করে বলছিল আমাকে –

–‘তুমি ওকে কে/ড়ে নিতে চেয়েছিলে, কিন্তু পারোনি আর পারবে ও না।খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করছি।

থম/কে গিয়েছিলাম একদম।বিশ্বাস হয়নি নিজের কানকে।সেদিনও সে কী কান্না, তারপর থেকে,যত সময় সম্ভব নিজেকে রুমে বন্দী করলাম।কিন্তু এখন আর না,এবার সব ভুলে যাব।

একটানা কথাগুলো বলে যাচ্ছিল ইরা।সূচনা নির্বাক হয়ে শুনছিল৷ তারও কান্না পাচ্ছে। মেয়েটা কত ক/ষ্ট পেয়েছে। সে তো পরিচিত এমন অনুভূতির সাথে।চ/ট করে ক’টা কথা মাথায় আসলো তার।সাথে ইরাকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘তার নাম কী ইরা?

ইরা হালকা হেসে তৎক্ষনাৎ জবাব দিল-

–‘মুগ্ধ..ইরাবতীর অপ্রাপ্য মুগ্ধ সাহেব।

–‘সে বুঝি ইরাবতী বলে সম্বোধন করতো?

–‘হুম করতো।

–‘দিনাপুর বিয়েতে সে কিভাবে আসলো?ইনভাইট করলো কে?

এবার ইরারও যেন মাথায় আসলো প্রশ্ন টা।সত্যি ই তো মুগ্ধ কে দিনার বিয়েতে কে দাওয়াত করলো?তাদের পক্ষ থেকে তার জানামতে শুধু সে জানে মুগ্ধ আর অন্ন্যেশাকে।অর্থীকেও তো দাওয়াত করেনি সে।তাহলে মুগ্ধ কে আর কে চিনে বা জানে তার পরিবারে যে দিনার বিয়েতে দাওয়াত করলো।তার ভাবনায় ব্যাঘা/ত ঘটিয়ে সূচনা বললো-

–‘হতে পারে সে ছেলে পক্ষ থেকে এসেছিল।

ইরা কিছু পল ভাবল,বেখেয়ালি স্বরে ছোট্ট করে বললো-

–‘হয়তো।

–‘ইরা তুমি কিভাবে জেনেছিলে যে মুগ্ধ অন্ন্যেশার সাথে সম্পর্কে আছে?

কিছুটা ইতস্তত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো সূচনা।

–‘অন্ন্যেশা ই জানিয়েছে,তাদের কাপল পিক দেখিয়েছিল। দিনাপুর বিয়েতে যখন বললো তাদের বিয়ের কথা সেদিন ও একটা ছবি দেখিয়েছিল।দুটো হাতের ছবি।দএটো হাতের অনামিকা আঙুলেই জ্বল/জ্বল করছিল রিং,সদ্য এন্গেজমেইন্ট হওয়া একজোড়া কপোত-কপোতির হাতের ন্যায়।

সূচনার রা/গ হলো কেন যেন।সামান্য ক’টা ছবি দিয়ে ইরা মুগ্ধকে যাচাই করছে।অন্ন্যেশা মিথ্যাও তো বলতে পারে।মনের কথা মুখে এসেই গেল তার।ইরাকে জিজ্ঞেস বলেই ফেলল-

–‘ক’টা ছবি দিয়ে যাচাই করছ তাকে?হতেও তো পারে সেই ছবিগুলো ফে/ক ছিল।অন্ন্যেশা মিথ্যেও তো বলতে পারে।সামনা সামনি দুজনকে রেখে সবটা ক্লিয়ার করে নিতে পারতে।এমন ও তো হতে পারে যে মুগ্ধ কিছুই জানেন না এই ব্যাপারে, সবটা অন্ন্যেশা নিজে সাজিয়েছে।

–‘হতেও পারে,হয়নি ভাবি।এই যে হতেও পারে কথাটা দ্বারাই অনিশ্চয়তা বোঝায়।সে মিথ্যা বলবে কেন?আর মুগ্ধ, সে তো যথেষ্ট বুদ্ধিমান, কেউ তার নামে এমন গু/জব র/টাবে আর সে এতদিনেও জানবে না?হতেই পারে না।

–‘বেশি ভাবছো ইরা।আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলব ‘তোমার সামনাসামনি ওনার সাথে কথা বলা উচিত।

–‘তোমার তো আমাকে ব/কা দেয়ার কথা এই বয়সে মেয়ে প্রেম করছে তা না তুমি আর ও প্রেম জমিয়ে একেবারে ক্ষীর বানাতে লেগেছো।

–‘ব/কা তো অবশ্যই দিতাম যদি কোনো খা/রাপ ছেলের প্রেমে পড়তে কিন্তু পড়েছো তো,, যাকগে বলবে না তো তুমি।যা করার করো কিন্তু আমি যা বলেছি দেখবে তাই হবে।

–‘মানে?

–‘কিছু না।

–‘বলো

–‘সময় হলে সবটা পরিষ্কার হবে আর খুব শীঘ্রই।

–‘ রহস্য তৈরী করছো।

–‘একটু রহস্য থাকুক না হয়। চলো ঘুমাবে এখন।

–‘ঠিক আছে।
_______________________________
–‘নিস্তব্ধ রজনী।বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কা/টছে প্রণয়ের।ঘুম চোখে ধরাই দিচ্ছে না।কারণ সকাল হলেই বড় সড় এক কাজ করতে হবে তাকে।সাথে অতীতের তি/ক্ত এক স্মৃতি ক/ড়া নাড়ছে মাথায়, এই তো মাস এক বাকি তারপর..তারপর পুরো হবে আরেকটা বছর।ঔ দিনটা মোটেও অন্য সবদিনের মতো স্বাভাবিক না তার কাছে।অপরদিকে,মাথার ওপর স্থির হয়ে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ সূচনার।তার চোখ জোড়ায় ও ঘুম নেই।তার কারণ অবশ্য ভিন্ন।আজকে সকাল হতে যত ঘটনা ঘটেছে তার আর প্রণয়ের মাঝে, সেগুলো মাথা থেকে যাচ্ছে ই না,চেখ থেকেও সরছে না।চেখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই মুহুর্ত গুলো।কানে বা/জতে থাকে তার গাঢ় কণ্ঠে করা বাক্যগুলো।বিশেষ করে সেই কথাটা বড্ড ভয়ং/কর -‘সত্যি বলছি।বৃষ্টি তে তুমি আমি একা, যদি কোনো ভুল হয়ে যায়, তাহলে কি ক্রো/ধ দেখাবে নাকি সাদরে গ্রহণ করবে?হায়,,কী সুন্দর আবেদন।আচ্ছা সত্যি যদি কোনো ভুল হয়ে যেত?হায়….লজ্জা..লজ্জা।ভাবতেই গা কা/পছে যেন।প্রণয় ও কী জেগে আছে? নাকি আরা/ম করে ঘুমাচ্ছে? কে জানে?
সূচনার দিকে পিঠ করে শুয়েছে ইরা।মাঝে শুয়েছে তিথি। তন্দ্রাচ্ছন্ন সে।সূচনার বলা কথাগুলোই ভাবছে সে।সত্যি ই কী অমন হতে পারে? মুগ্ধ সত্যি ই তাকে ভালোবাসে?নাকি সবটাই তার অতিরিক্ত চাওয়া,অতিরিক্ত ভাবনা।

ফোনের স্ক্রিনের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। নীল রঙা জামদানী শাড়ী পরিহিতা একটা মেয়ে, হিজাব মাথায়,বাম হাতে নীল কাচের চুড়ি,ডান হাতে বেলি ফুলের গাজরা প্যা/চানো।তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু পরখ করছে মুগ্ধ। ছবিটা কত শত বার যে দেখেছে সে নিজেও জানে না।সর্বাঙ্গে অস্থিরতা কাজ করছে তার।কখন হবে সকাল,রাত শেষ হচ্ছে না কেন?মনে হচ্ছে কত প্রহর কে/টে গেছে কিন্তু রাত শেষ হওয়ার নাম গন্ধ নেই।এদিকে চিন্তা ও লাগছে, কী হবে?কীভাবে করবে?মানাবে কীভাবে? ভাবতে ভাবতে।ছেলে মানুষ হয়ে এত এত টেনশন,, হায়।ভাবা যায়?কত শত ভাবনা কার,অনুভূতির সূচনা আর অপেক্ষার প্রহর গুন’তে গু’নতে ঘুম নেই চার জোড়া চোখে।প্রেম যখন তীব্র হতে তীব্র হয়,অনুভূতিরা যখন মনের অ/তল হতে উপচে পড়ে তখন দুজন মানুষ দু প্রান্তে থেকেও শুধু মাত্র মনের দশা থেকে তারা একই দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করে।হয়তো।
___________________________
ফজরের নামাজ পড়ে তিথির রুমে যায়নি সূচনা।তিথির জ্বর কমে গেছে পুরোটাই।তিথির রুম থেকে নিজের রুমে এসেছে সোজা।রুমের দরজা ভেড়া/নো ছিল বিধায় রুমে আসতে সমস্যা হয়নি।রুমে এসেই অবাক হলো সূচনা।প্রণয় বিছানায় নেই,ওয়াশরুমেও নেই।তাহলে কোথায়?গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল ব্যালকনির দিকে।যা ভেবেছে তাই, প্রণয় ব্যালকনিতেই।ব্যালকনিতে প্রবেশ করতেই শীতল হাওয়ায় সমস্ত সূচনার শরীর জ/মে গেল যেন।পেছনে যেয়ে দাড়ালো প্রণয়ের। প্রণয় বোধহয় সাথে সাথে ই টের পেল তার উপস্থিতি।ঘুরে দাড়ালো তার দিকে।এই ঠান্ডার মধ্যে ও হাত কা/টা টি-শার্ট পড়ে বসে আছে। সূচনা ভ্রু- কু/টি করে তাকালো।তার দৃষ্টি উপেক্ষা করলো প্রণয়।তার পাশাপাশি যেয়ে দাড়ালো।তাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে প্রণয় হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো-

–‘শুভ সকাল বউজান।

সূচনা থমকালো,দু কদম পিছিয়ে ও গেল।গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে যেন পলক ফে/লতেও ভুলে গেল।প্রণয় এগো দু কদম। সূচনার গা/য়ে থাকা শালের এক কোণা ধরে টে/নে আনলো নিজের দিকে।তারপর মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘ আমি শীতে জমে যাচ্ছি আর তুমি শাল নিয়ে ঘুরছো।এটা কোন জায়গার নিয়ম?দাও।

এবার হুশ ফিরল সূচনার। ভ্রু কুটি আবারও কুচকে এলো, বললো-

–‘ আপনার ঠান্ডা লাগছে তো আপনি টি-শার্ট পড়ে ঘুরছেন কেন?গরম কাপড় পড়ুন কে না করেছে।

প্রণয় এক পল চুপ রইলো তারপর থুতনিতে হাত রেখে বললো-

–‘ঠিকই বলেছো টি-শার্ট পড়ে কেন ঘুরছি আমি?

–‘হু।

সূচনা প্রণয়ের থেকে দৃষ্টি অন্য দিলে তাক করতেই আ/কস্মিক ঘটনা ঘটলো।এক টা/নে সূচনার গা থেকে শাল সরিয়ে নিল।বেখেয়ালি ছিল সূচনা তাই বুঝতে পারেনি সে।নিজের গায়ে শাল জড়িয়ে ডান হাত এগিয়ে শাল সহ কাছে টে/নে নিল সূচনাকে।এবার সত্যি জমে গেল সূচনা।তাতে নতুন মাত্রা দিল প্রণয়ের নিম্নোক্তি-

–‘শাল লাগবে না,আই জাস্ট নিড ইউর আর্মস।

সূচনার কপোলে(গালে) হালকা করে নিজের কপোল(গাল) ঘষা দিল্ ব্যস…অতটুকু ই যথেষ্ট কেমন অস্থির লাগছে নিজেকে।প্রণয়ের সংস্পর্শে এসে যেন নিজেকে বদ্ধ উ/ন্মাদ লাগছে সূচনার। আখি যুগল আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেছে তার।চোখ বদ্ধ অবস্থায়
সূচনার মুখটা পরখ করতে ভুললো না প্রণয়।চোখের পাতাগুলো তি/রতির করে কা/পছে তার।নিচের ঠোঁ’ট টাও কিঞ্চিৎ কে/পে কে/পে উঠছে।প্রণয়ের খুব করে ইচ্ছে হলো তার ক/ম্পন রত পল্লবে ঠোঁ/ট ছুইয়ে দিতে,ঠোঁ/ট জোড়ায় আঙুলের স্পর্শ দিতে।কিন্তু সব ইচ্ছে কী আর পূরণ হয়?আপাদত থাক,এমনিতেই গতদিন অনেক ভুল হয়েছে তার দ্বারা।নিজেকে সংযত করতে চোখ সরিয়ে নিল প্রণয়।হাতের বাধন ও ঢিল করল।কিন্তু সূচনা সরলোনা।ছেড়ে দিতে যেন আরও লেপ্টে গেল।
____________________________
–‘দেখুন মিসেস শেখ আমি ঔ বাড়ি যাওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত আপনার কাছ থেকে পার মিশন নেই নি কোনোদিন আর না নিব কখনো তাই অযথা আপনার মতামত জানাতে আসবেন না।

রু/দ্ধ কণ্ঠে নিজের মা/কে কথাটা বললো মিহু।মিসেস আফসানা চিৎ/কার করে বললেন-

–‘মিহুউউ।

–‘চে/চাচ্ছেন কেন মিসেস শেখ?

–‘মিহু ভুলে যেও না আমি তোমার মা।

–‘ভুলিনি বিধায় এখনও এতটুকু সম্মান পাচ্ছেন।আশা করি এমন কিছু করবেন না যে সেই সম্মানটুকু ও না দেই।

–‘আমিও যাব আপু।

মিসেস আফসানার পেছন থেকে বলে উঠল পিহু।তার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে মিহু বললো-

–‘আজ না পাখি আরেকদিন নিয়ে যাব।তুমি স্কুলে যাও এখন।তোমাকে শুক্রবারে নিয়ে যাব একদিন।

–‘ঠিক আছে।

পিহুর মন খারা/প হয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছে মিহু।কিন্তু ভাবল না আর।দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল মিহু।মিসেস আফসানা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফু/সতে লাগলেন।
________________________
প্রণয়দের বাড়িতে এসেছে মিহু প্রায় ঘন্টাখানেক। মিসেস আফসানার সাথে কথা কা/টাকা/টি হওয়ায় মেজাজ ও কিছুটা খা/রাপ।ইরা,তিথিমিহু কথা বলছে ইরার রুমে।সূচনা রান্নাঘরে মিসেস আফিয়ার সাথে।সকালে দশটার দিকেই ফিরেছেন তারা।আজকে বাসায় কারো আসার কথা।সূচনা যতটুকু জানে খুব সম্ভবত সে প্রণয়ের বন্ধু। ইসহাক সাহেব ডে/কেছেন তাকে দেখা করবেন বলে।তার জন্য ই ভালোমন্দ রান্না হচ্ছে।তাই মিসেস আফিয়ার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে সূচনা।
_________________________
দুপুর সাড়ে বারোটা প্রায়।কলিংবেল বে/জে উঠতেই সোফা থেকে উঠে দরজা খুলে দিল প্রণয়।ইসহাক সাহেব ও বসে ছিলেন সোফায়।ডাইনিং রুমে ইরা,তিথি,মিহু৷ আর সূচনা চারজনই ছিল।টেবিলে খাবার সার্ভ করছিল তারা।আগন্তুক ব্যাক্তির সাথে হ্যান্ডশেক করে জড়িয়ে ধরলো তাকে প্রণয়।ড্রয়িং রুম আর ডাইনিং রুমের দূরত্ব খুব বেশি না।তাদের কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।কেউ খেয়াল না করলেও ইরার কানে এসেছে একটা কথা।ইসহাক সাহেবের কণ্ঠ –

–‘কেমন আছো মুগ্ধ?

ইরা তব্দ খে/য়ে গেছে যেন।হাত থেমে গেছে তার, কানে শুধু মুগ্ধ নামটাই বাজ/ছে তার।বু/কের ধুকপু/কানিও তীব্র জ্বা/লা করছে।

#চলবে