প্রণয়ের সূচনা পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
219

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪০
_____________________________
–‘ঘটবে না, কিন্তু তার আগে কিছু জানা প্রয়োজন তোমার।

–‘কী?

–‘অন্ন্যেশা আর আমার ব্যাপারে যা শুনেছো।

ইরা বি/ব্রত বোধ করলো আবারও সেই প্রসঙ্গ টানায়।নিজের ভুলের কথাও মনে পড়লো,মুখ ভা/র করে বললো –

–‘সেই প্রসঙ্গ কেন টা/নছেন আবার?আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আর শুনতে চাই না কিছু।

–‘আপনার জানতে হবে।অন্ন্যেশা আমার খালাতো বোন।অন্ন্যেশার সাথে আমার এই একটা সম্পর্ক,কিন্তু সে আমাকে পছন্দ করে,বারবার নিষে/ধ করার পরেও সে শোনেনি,অন্ন্যেশা আপনাকে কী বলেছে না বলেছে সেগুলো আমি জানি,আমার আগেই স/ন্দেহ হয়েছিল তাকে।অন্ন্যেশাকে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করার পরই বলে দিয়েছে সব।তার সাজানো ছিল সবটা,কারণ সে জানত আমি আপনাকে….

–‘কী?

–‘কিছু না, আমি চট্টগ্রাম চলে যাব এ কথা কে বললো?

–‘ভাইয়া ভাবি কিন্তু মি/থ্যে বলেছে।

–‘যদি সত্যি হতো?

–‘আপনি যেতে চাইবেন আর আমি যেতে দিব?মানুষ ভুল এক বার করে, দুইবার করে রোজ রোজ করে না আর করলে তখন সেটা আর ভুল হয় না,ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়।আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব?

–‘আপনার মনে হয় মুগ্ধ তার ইরাবতী ব্যতিত অন্য কাউকে তার মনে রাজত্ব করতে দিবে?

–‘চাইলে পারবেন না,দিবনা করতে,খু/ন করে ফেলব একদম।

–‘বা/পরে..

–‘হুহ।

–‘আচ্ছা অন্ন্যেশা কোনো ছবি দেখিয়েছিলো আপনাকে?

–‘হ,,হ্যাঁ।

–‘কেমন ছবি?

………

–‘কাম অন চুপ করে থাকার কিছু নেই।প্রাইভেট পিক ছিলো না কোনো।সে আমার কাজিন।আমার বোন নেই, একমাত্র খালাতো বোন ও সে,তাই তাকে একটু বেশিই আদর করতাম।কিন্তু সেই স্নেহকে ভালোবাসা ভেবে বসে আছে।ক’টা ছবি দেখিয়ে আর বানিয়ে দুই লাইন বলেছে আর বিশ্বাস করে ফেলেছেন।আপনারা মেয়ে মানুষরা সত্যিই মাঝে মাঝে এমন বো’কা’মি করেন।তারপর নিজেও ক’ষ্ট পান আর আমার মতো মানুষদেরকেও ক’ষ্টে রাখেন।আর শেষে এইভাবে মুখ ল’ট’কে বসে থাকেন যে কিছু বলতেও পারিনা।

ইরা ফু/লছিলো এতক্ষণ,ফু/লো গালে দাঁ/তে দাঁ/ত চেপে রেখে খি/চে বসে ছিলো।কিন্তু এবার বা/ধ ভা’ঙ’লো।পুনরায় সুর তুলে কান্না শুরু হলো। মুগ্ধ কপাল চা/পড়া/তে চাপ/ড়াতে বললো-

–‘আরে বইন থাম,কতো কান্না করতে পারে মানুষ।

–‘আমি আপনার কোন কালের বোন?

কান্না থা/মিয়ে বলে উঠলো ইরা। মুগ্ধ আবারো মুখ বা/কা/লো। বললো-

–‘বাহ! কান্না শেষ?

–‘হু..শেষ।আপনার জন্য কম কাঁদতে হয় নি আমার।আর কত কাদবো?এখন বলুন কি বলতে বলতে থে/মে গিয়েছিলেন বলুন।

–‘কই কি বললাম?

–‘ঐ যে,আপনি আমাকে কি যেন..

–‘কী?

–‘বলুন।

–‘কি বলবো?

মুখ ভা/র করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল ইরা। মুগ্ধ মুচকি হাসলো। ইরার হাত জোড়া টেনে মুঠোবন্দী করলো নিজের পুরুষালী হাতে।
জড়ানো কন্ঠে বললো-

–‘ইরাবতীকে সুন্দর লাগছে।তারর সাথে দ্বিতীয় বার যেদিন কথা হয়েছিল সেদিন এই হিজাব টা ই পড়া ছিল আর এই বাটারফ্লাই ব্রোচ টা ও।

–‘এতকিছু মনে রেখেছেন আপনি?

–‘মানুষ সেই জিনিস গুলোই মনে করে যেগুলো সে ভু/লে গিয়েছে বা ভু/লগে বসেছে কিন্তু আপনাকে বা আপনার সাথে জড়িত কোনো কিছুই আমি ভুলিনি আর না ভুলবো তাই মনে না করার প্রশ্ন ই আসে না।আপনি সর্বদা আমার মনে বিরাজ করেন।

ইরার চোখ ছ/লছল করে উঠলো।তার অবস্থা বেগ/তিক করতে যেন আ/গুনে ঘি এর ঢা/ললো মুগ্ধর নিম্নোক্তি-

–‘প্রেম মধুর যদি থাকে সে পাশে,প্রেম বিষা/দ যদি দূরত্ব থাকে প্রেয়সীর সাথে।ইরাবতীকে ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি।

ইরা লা/জুক দৃষ্টিতে তাকালো,চোখ মুখে ল/জ্জাদের হা/না,নত মস্তকে লা/জুক কণ্ঠে বললো-

–‘আমিও।

–‘তুমিও কী?

–‘আমিও ভালোবাসি।

–‘কাকে?

–‘আপনাকে?

–‘আমি কে?

–‘এমন কেন করছেন?আপনি জানেন না?

–‘না আজকে আপনার কাছ থেকে নিজেট পরিচয় জানব।

ইরা চুপ রইলো মিনিট কয়েক।সময় নিয়ে বললো-

–‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি আমার মুগ্ধ সাহেব কে।

মুগ্ধ হাসলো ঠোঁ/ট প্রসারিত করে, হাসির শব্দ ও হলো।ইরা তাকিয়ে দেখলো আড়চোখে। মুগ্ধ ও ইরার চোখে চোখ রাখলো, ও/ষ্ঠদ্বয়ে হাসি বিদ্যমান।দু জোড়া চোখ তাদের তৃ/ষ্ণা মে/টাতে এতই ব্যস্ত যে দুজন মানুষ তাদের দূর হতে লক্ষ্য করছে তার খেয়ালই হলো না।প্রণয় আর সূচনা একপলক তাদের দেখেই আবারও পা বাড়ালো সেই জায়গায় যেখানটায় দুজন বসে ছিল এতক্ষণ।তারা দেখতে এসেছিল পানি কতটুকু গ/গড়িয়েছে।চিন্তা/য় ও ছিল বটে কিন্তু এখন নেই কারণ কাজ হয়েছে। হাটতে হাটতে প্রণয় বললো-

–‘নি/ষ্প্রাণ হাসি আজ আবারও প্রাণোচ্ছল।

–‘কার?

–‘দুজনেরই আর তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তোমার।

–‘যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে মান অভি/মান থাকেই।কিন্তু অভি’মানে অভিমা’নে দূরত্বের দে’য়াল তৈরী হওয়ার আগেই অভিমান ভা/ঙিয়ে নেয়া উচিত।ওরা দুজন সময়মতো বুঝেছে সেটা তাই শত অভি/মানের পরও সব শেষে দুজন দুজনের কাছেই ফিরেছে।

ভালোবাসা শুরুতেও সুন্দর শেষে ও সুন্দর মাঝে কিছু তৃ/প্তিদায়ক দুঃ/খ আর নিদা/রুণ নি/ষ্ঠুর যন্ত্রণা/র সাক্ষী হতে হয়।

–‘তুমি কবে বুঝবে?

–‘কী?

–‘এটাই যে দূ/রত্ব আমাদের মধ্যে দেয়াল না তৈরি করে দেয়।সময় পেরিয়ে গেলে পরে করার কিছু ই থাকবেনা।

–‘সে সুযোগ আসার আগেই সব ঠিক করে নিব।

–‘হু

আর কিছুই বললো না প্রণয়।পায়ের গতি বাড়লো তার,সূচনাকে পিছনে ফেলে রেখে হাটতে লাগলো।এমন অবস্থা দেখে সূচনা পেছন থেকে গলা উ/চিয়ে বললো-

–‘আমাকে ফে/লে রেখে কোথায় যাচ্ছেন?

–‘তুমি আসো নি/ষেধ তো করিনি আমি।

–‘তাহলে এত জো/রে হাটছেন কেন?

–‘তোমার পা দিয়ে তুমি আসবে আমার পা দিয়ে আমি।

প্রণয়ের কথা শুনে সূচনা পা জোড়া থা?মিয়ে দিল।কয়েক পল দাড়িয়ে থেকে ভাবলো কিছু ততক্ষণে প্রণয় অনেকটা এগিয়ে গেছে। সূচনা আ/চমকাই দৌ/ড়ানো শুরু করলো।দৌড়ে যেয়ে প্রণয়ের পাশে দাড়িয়ে নিজের বাম হাতটা প্রণয়ের ডান হাতের মধ্য দিয়ে নিয়ে এসে হাত চে/পে ধরলো।আচান/ক হওয়া ঘটনায় প্রণয় ভ/ড়কে গিয়েছে, পা ও থে/মে গেছে তার।সূচনা হা/পাতে হা/পাতে বললো-

–‘উফফফ আপনি কী খান বলুন তো।এতটুকু সময়ে কেউ এতটা পথ আসতে পারে।আল্লাহ আমার শ্বাস আ/টকে যাচ্ছিল দৌড়াতে যেয়ে।

–‘তোমাকে দৌড়ে আসতে বলেছে কে?তুমি
দৌড়াতে পারবে না জানা কথাই।

–‘দৌড়াতে পারবনা মানে?কেন পারবনা?ইনডায়েরেক্টলি মোটা বলছেন তো আমায়।হ্যা ঠিক আছে আমি একটু হেলদি বেশি না জাস্ট একটু হেলদি কিন্তু সেটাকে মোটা বলে না গুলু মুলু বলে,কিউট বলে।আপনি সেই কিউটনেসকে মোটা বলে মজা করছেন,মোটেও ঠিক না।আপনি পঁ/চা।

–‘ওলে বাবা বাচ্চা রা/গ করেছে,ম্যাডাম আপনার বাচ্চামো নাটক শেষ হলে বলেন এভাবে দৌড়ে এসে হাত ধরেছেন কেন?

–‘আগে বলুন তুমি না আপনি?

–‘দুটোই…আমার যখন যা ইচ্ছে। এবার বলো।

সূচনা মিন মিন করে বললো-

–‘আপনি আমার জন্য ক/ষ্ট পেলে আপনার ক/ষ্টে আমার ও ক/ষ্ট লাগবে..তাই।

–‘লাগবে না লাগছে?

–‘একটা হবে।

–‘যেটাই হোক বলো।

–‘আপনার কী মনে হয়?আপনার মনে যেটা আমার মনেও সেটা।

–‘আমার তো…

–‘আপনার কী?

–‘আমার তো মনে হয়….

–‘কী মনে হয়?

–‘আমার…..আমার বউ তো অনেক গুলুমুলু।সেটাই বলতে চাইছিলাম। চলো চলো।

সূচনার গাল টে/নে কথাটুকু বললো প্রণয়।সূচনা আ/হাম্মকের ন্যায় তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪১
__________________________
–‘আমরা হেটে হেটে কেন যাচ্ছি?এসেছি তো গাড়ি দিয়ে।

প্রণয়ের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ই প্রশ্ন করলো সূচনা।তার বাম হাত এখন ও আকড়ে ধরে রেখেছে প্রণয়ের ডান হাতটা।ছাড়েনি আসলে ছাড়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।এ কয়দিনে এতটুকু সে ভালোই বুঝতে পেরেছে যে আর যাই হোক প্রণয় তার জন্য নিরাপদ আর ভরসার একজন।তার সাথে থাকলে নিজেকে নিয়ে একদম চিন্তা হয় না।তার প্রশ্নে প্রণয় কা’ঠ কা’ঠ গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমরা কী দিয়ে এসেছি?

–‘আপনার গাড়ি দিয়ে।

–‘কার সাথে এসেছো?

–‘আপনার আর ইরার সাথে।

–‘এখানে ইরা আছে?

–‘না কারণ সে তো মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে।

–‘তো ইরাকে কী ফেলে রেখে যাবে এখানে?

–‘আশ্চর্য কথাবার্তা ফেলে রেখে যাব কেন?আর আপনি একের পর এক কী সব প্রশ্ন করে যাচ্ছেন বাচ্চাদের মতো।

–‘কারণ আমি বাচ্চা,আমার বাসায়,আমার রুমে, আমার জীবনে ইন ফেক্ট পুরো আমিটাতে একটা বাচ্চা মেয়ের পদার্পণ হয়েছে।তার প্রভাবে আমিও বাচ্চা হয়ে গেছি।বুঝেছো?শান্তি?

–‘না বুঝিনি পরে বুঝব তার আগে এটা বলুন আপনি বাচ্চা কাকে বলেছেন?

–‘তুমি আমি ছাড়া এখানে আর কেউ আছে?

–‘না।

–‘আমাকে দেখলে নিশ্চয়ই বাচ্চা বাচ্চা লাগে না।

–‘না বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো লাগে।

প্রণয় রিয়েক্ট করতে নিয়েও করলো না।পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই,আমি বয়স্ক তো বাচ্চা টা কে?

–‘কেন আমি

সূচনা কথার জ্বালে ফে’সে কথাটা বলে ফেলতেই প্রণয় দাত কে*লিয়ে হাসলো।সূচনার ঘটনা বোধগম্য হতে ই দাঁতে দাত চে/পে জিজ্ঞেস করলো-

–‘হচ্ছে টা কি হ্যা?আমাকে বাচ্চা, মোটা এসব বলে বলে অপমান করছেন, ঠিক আছে আজকে বাসায় যেয়ে আমি কালকেই আব্বুর বাসায় চলে যাব,আপনার বাসায় থাকবনা।আপনি একটা ভালো বয়স্ক ভদ্রমহিলা দেখে বিয়ে করে নিবেন তারপর তার সাথেই থাকিয়েন।

প্রণয় হাসি থামিয়ে বলল-

–‘আরে রা*গ কেন করছো জান?

–‘ধরবেন না হাত ছাড়ুন।

–‘ছাড়বনা কিন্তু আগে বলো আজকে বাসায় যেয়ে কালকে আব্বুর বাসায় কেন যাবে?অন্য কেউ হলে বলতো আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি।

সূচনা মুখ বা/কিয়ে উত্তর দিল-

–‘ কারণ আমি একা যেতে পারিনা আর এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কালকে সকাল সকাল রওনা হয়ে চলে যাব আর আসবনা।

–‘ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে যেও।

সূচনা রে*গে মে*গে আ*গুন হয়ে গেল একদম।সে একবার বলেছে চলে যাবে আর প্রণয় রাজিও হয়ে গেল।সে ক্ষী*প্ত গলায় বলল-

–‘হ্যা আপনি তো সেই সুযোগেই থাকেন কখন আমি ঘাড় থেকে নামব আর আপনি আরেকটা বিয়ে করবেন।

–‘ছি*হ ছি*হ এসব কী বলো?আমি তো কল্পনায় ও এসব কল্পনা করিনি আর তুমি মুখে বলছো।

–‘ ওভারএক্টিং হ’য়ে যাচ্ছে।

–‘উহুম..উহুম…আচ্ছা এবার চলো।

–‘যান আপনি আমি আপনার সাথে যাবনা।আপনি আগে যান আমি পেছন পেছন আসব।

–‘একটু আগে না চি/ৎকার করছিলে একা কেন রেখে যাচ্ছি?

–‘করেছিলাম কিন্তু এখন আমি একা যাব কারণ..

–‘কারণ আমি তোমাকে বাচ্চা বলেছি।

–‘আবারও বললেন

–‘আহা আমি তোমাকে বাচ্চা বলেছি আর তুমি আমাকে বয়স্ক, শেষ কা/টাকা’টি করো আর চলো।

–‘আমি আপনাকে একবার বলেছি আর আপনি পুরো তিনবার বলেছেন।

–‘মোটেও না। একবার বলেছি।

–‘তার মানে আমি মিথ্যা বলছি?

–‘আরে না না সত্যি তিনবার ই বলেছি।তুমি গুনে ও রেখেছো দেখা যায়। ইশশশ কত ভালো একটা বউ পেয়েছি যার কাছে আমার কথার এত দাম।বাহ!

–‘মজা করছেন আমাকে নিয়ে।

–‘এক চি*মটি পরিমান ও না।আমার তো নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

–‘তাহলে দাত কে*লিয়ে হাসছেন কেন?

–‘এমনি জান।আর হাসবনা খুশি!

–‘হাসবেন না কেন?হাসতে নিষেধ কে করেছে? কিন্তু আমি যাবনা আপনার বাসায় আমি আব্বুর বাসায় যাব।

–‘এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

–‘না।

–‘তুমি যাবে না?

–‘ না..না..না..আমি যা…..

বাক্যে দাড়ি পড়তে পারলো না আর,সূচনাকে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো প্রণয়।সূচনা চোখ গোল গোল করে তাকালো প্রণয়ের মুখপানে।কিছু বলার জন্য সবে দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ দূরত্ব হয়েছিল তার সাথে সাথেই প্রণয় ধমকা*নোর স্বরে বললো-

–‘খবরদার আর একটা কথা বলেছো তো। আই এম টেলিং ইউ একদম ছুড়ে ফেলে দিব।তারপর ভা*ঙা হাত পা নিয়ে ঘরে শুয়ে থাকবে তখন ওয়াশরুমে যেতেও আমাকে ডাকবে।সো কিপ কোয়াইট,গট ইট?

ছু*ড়ে ফেলে দিবে শুনে প্রণয়ের গলা আরও চেপে ধরলো।

–‘গলা টি*পে মা*রার প্ল্যান করেছো নাকি?

–‘সরি..

–‘মুখে আঙুল দাও।

ভদ্র মেয়ের মতো একহাতে গলা জড়িয়ে ধরে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে রইলো। হাফ ছাড়লো প্রণয় তার গলার অবস্থা বেহাল।এত জোরে আর এত বেশি কথা জীবনে একবারে বলেছে কিনা সে নিজেও জানেনা।বাসায় যেয়ে মিসেস আফিয়াকে জিজ্ঞেস করবে আজ।এই মেয়ের সাথে থাকতে থাকতে পাগলে পরিণত হচ্ছে দিনকে দিন।মিনিট পাচেক হাটার পর থেমে গেল প্রণয়।এই পাচ মিনিট প্রণয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিল সূচনা।প্রথমভাগে মুখ বা/কিয়ে রেখেছিল সূচনা আর এখন মুখে র/ক্তিম আভা ফুটে উঠেছে তার।আশেপাশে গুটি কয়েক মানুষ জন আছে, সবার দৃষ্টি তাদের দুজনের ওপর।লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফা*ক করে ভেতরে ঢুকে যায়।ইশশশ লজ্জা।

–‘গলা ছাড়ো না কেন? আর কতক্ষণ কোলে নিয়ে রাখব?

ঘোর ভা*ঙলো সূচনার।প্রণয় কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছে, সে ই গলা ধরে রেখেছে প্রণয়ের। লজ্জায় পড়লো খানিক, গলা ছেড়ে দিল তৎক্ষনাৎ। সামনে তাকাতেই দ্বিগুণ হলো এবার লজ্জার পরিমান।সামনে ইরা আর মুগ্ধ দাড়িয়ে আছে।সূচনা একপলক তাকালো প্রণয়ের দিক।কেমন ব*জ্জাত তাদের সামনেই এভাবে কথা বলছে।এর মধ্যে ই মুগ্ধ বলে উঠলো-

–‘আমার কাজ আছে যেতে হবে পুলিশ স্টেশন। আমি আসি।

–‘ঠিক আছে সাবধানে যা।(প্রণয়)

সূচনা ও সৌজন্য পূর্বক হাসি দিয়ে মুগ্ধ কে বিদায় দিল।মুগ্ধ চলে গেল,তারা তিনজন ও রওনা হলো বাড়ির দিকে।ড্রাইভিং সিটে প্রণয়, তার পাশে সূচনা।আর পেছনে ইরা।ইরার সাথে বসতে চেয়েছিল সূচনা কিন্তু প্রণয় চোখ দিয়ে ইশারা করেছে তার পাশে বসতে।আপাদত ইরার সামনে ধ*মক টমক খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তাই চুপচাপ যেয়ে বসে পরেছে।ইরা চোখ তুলে তাকাচ্ছে না ভুলক্রমে ও।তার লজ্জা আর অনুশোচনা দুটোই হচ্ছে। মাথাা নিচু করে বসেছিল পুরো রাস্তা। বাসায় এসেও সোজা নিজের রুমে চলে গেছে।
_______________________________
–‘ইরাপুকে আজকে পরিমান থেকে বেশি খুশি লাগছে না ভাবি?

ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে সূচনা আর তিথি।রাত সাড়ে আটটার মতো বাজে।সূচনার দিকে তাকিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে উক্ত প্রশ্ন টা করলে সূচনা জবাব দিল-

–‘সে সত্যি ই বেশি খুশি হয়তো তাই লাগছে।

–‘কিন্তু এতদিন তো কেমন করে থাকতো আজ হঠাৎ কী হলো?

–‘কী হবে?কিছুই হয়নি।

–‘তুমি জানোনা ভাবি।কিছু তো হয়েছে আমিই বের করব।

–‘পা*কা মেয়ে এতকিছু তোমার বুঝতে হবে না জানতেও হবে না।তুমি কিছু করবে না,সামনে পরীক্ষা আপাদত সেটা নিয়ে ভাবো।বুঝেছ?

–‘খালি পরীক্ষা পরীক্ষা করে সবাই।

–‘এখন তো একটু করবেই।পরীক্ষা শেষ হলে তারপর তো শান্তি পাবে একটু।

–‘হুম।

–‘এখন যাও তাহলে।

–‘আচ্ছা।
_______________________________
–‘মামী উনি ছোটবেলায় কেমন স্বভাবের ছিলেন?

রান্নাঘরে কাজ করতে করতে মিসেস আফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো সূচনা। মিসেস আফিয়া মাথা তুলে তাকালেন সূচনার দিকে।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলানো তার।হাসিমুখে বললেন-

–‘শোন তাহলে,প্রণয় ছোটবেলা থেকে না পা’জি স্বভাবের ছিল।জ্বা*লিয়ে মা*রতো সবাইকে,এত দুষ্টুমি করতো কী বলব,আপা তো রে*গে যেতেন আর তোর মামার কাছে নালিশ করতে আসতেন।আর প্রণয় আপার আগে এসেই তোর মামা আর আমাকে সবকিছু বলে দিত।আর বলতো ‘আম্মু আসলে আম্মুকে একটু ব*কে দিও কারণ আম্মু বাসায় নিয়ে তো আমাকে ব*কবে।তাই তোমরা আগেই ব*কে দিবে।’সারাদিন পড়ালেখা না করলেও রেজাল্ট ভালো আসতো।যখনই আসতো এত এত প্রশ্ন নিয়ে বসতো আমার আর তোর মামার কাছে।

মিসেস আফিয়া থামলেন।কথাগুলো বলার সময় ওনাকে কেমন চঞ্চল লাগছিলো ওনার কণ্ঠে ই বোঝা যাচ্ছে কিন্তু তার মুখটা মলিন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সূচনা বুঝতে পারলো মিসেস আফিয়ার পরবর্তী বাক্য কী হবে।তার ধারণামতো তাই হলো।মিসেস আফিয়া মলিন কণ্ঠে বললেন-

–‘সব ঠিকই ছিল কিন্তু আপার এমন হঠাৎ মৃত্যু তে প্রণয় আর আগের প্রণয় থাকেনি,বদলে গিয়েছে,আগের মতো কথা বলা,হাসাহাসি করা আর নেই তার মধ্যে।আমার প্রণয় আর আগের মতো প্রাণোচ্ছল নেই।তবে একটা জিনিস কী জানিস?

–‘কী?

–‘ও আগের মতো কথা বলে এখন।যেমন তাড়াহুড়ো করে কথা বলা,বাচ্চাদের মতো কথার রিপিট করে,মজা করে এমনকি ঝ*গড়া ও।সেদিন বলছিল আমাকে ‘মামী বাচ্চা এক মেয়েকে বিয়ে করে ঝামেলা তে পড়েছি।তার সাথে সারাক্ষণ আমার চিল্লাতে হয়।এটা করো না,ঔ টা করো,খেয়ে নাও,খাবে না তাকে জোর করো,রাত জেগে ফেবুতে গল্প পড়বে,গল্পের বই পড়বে, নিষেধ করলেও শুনবে না। আচ্ছা মুসি*বত তো।তুমি ব*কে দিবে যেন রাত না জাগে,ঠিকঠাক মতে খাওয়া দাওয়া করে আর আমাকে যেন না জ্বা*লায়।’
জানিস ওর ঐ রূপ দেখে মনে হচ্ছিল এটা আমার সেই ছোট্ট প্রণয় যে আমার কাছে নালিশ করতো তার মায়ের নামে। পার্থক্য এটাই তখন মায়ের নামে করেছে আর এখন স্ত্রীর নামে করছে।এই ছেলেকে নিয়ে বড় চিন্তায় ছিলাম যে ওর জন্য কেমন মেয়েকে ওর বউ হিসেবে আনব। ওর যা অবস্থা, একদম তারছি/ড়া বলা যায়।ওকে সামলাবে,আগের মতো করতে পারবে এমন মেয়ে খোজা চারটে খানে কথা না।যেখানে খোজা ই ক*ঠিন সেখানে খুজে পাওয়া তে মুশকিল বোধহয় আর তার ওপর বিয়ে করতেই রাজি হচ্ছিল না।কিন্তু তোদের দুজনের ভাগ্য দুজনকে টে*নে নিয়ে এসেছে দুজনের কাছাকাছি, জুড়ে দিয়েছে অদৃশ্য, শক্তিশালী এক বন্ধনে।অদ্ভুত না?

–‘ হ্যা,,অনেক অদ্ভুত।

সূচনা আনমনা হয়ে বললো কথাটুকুৃ।মিসেস আফিয়া সূচনার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলেন।অতি কোমল গলায় বললেন-

–‘শোন বাচ্চা, চাইলে সবকিছু ই সম্ভব।যেটা তোর সেটা হাজার বা’ধা পেরিয়ে হলেও তোর ই হবে কিন্তু যেটা তোর না সেটা দিনরাত এক করে চেষ্টা করলেও তুই নিজের করে পাবিনা।ভেবে নিবি সেটা তোর জন্য তৈরীই হয়নি।কিন্তু যেটা তোর সেটা তোর হবেই আর সেটাকে নিজের করে সবসময় আগলে রাখতে হয়,মুখ থেকে বের হওয়া কথা আর সময় দুটোই কিন্তু একই রকম। মানুষের মুখ থেকে একবার যেই কথাটা বের হয় সেটা সে হাজার চাইলে ও ফেরাতে পারেনা।আর সময়, সময় যা একবার চলে যায় তা আর কখনোই ফেরে না কারো জন্য। সময় থাকতে নিজের জিনিস নিজের করে রাখতে শিখে নেয়,সময় চলে গেলে তখন কেঁদে ও কুল পায় না মানুষ। বুঝতে পারছিস কী বলছি আমি?

সূচনার খুব ভালো করে ই কথাগুলো বোধগম্য হয়েছে।সে মাথা ঝা*কাতে ঝা*কাতে বললো-

–‘বুঝেছি মামী, খুব ভালো করে ই বুঝেছি।

মিসেস আফিয়া সূচনার থুতনিতে এক হাত রেখে বললেন-

–‘সাবাশ বাচ্চা, আমি জানি তুই বুদ্ধি মতি এজন্য বিশ্বাস আছে তোর ওপর যথেষ্ট পরিমানে।এখন আমার সাথে রুমে আয় তো খানিক।

জবাবে আলতো হেসে মিসেস আফিয়ার পিছু নিল সূচনা।
.
.
মিসেস আফিয়ার রুমে বিছানায় বসে আছে সূচনা। মিসেস আফিয়ার হাতে একটা শাড়ি।ওনার ঠোঁটের কোণে হাসি।শাড়ির দিকে তাকিয়ে হাত বুলাচ্ছেন শাড়ির ওপর।হয়তো স্মৃতিচারণ করছেন পুরোনো কোনো মুহুর্তের,হয়তো প্রিয় কোনো মুহুর্ত। কে জানে,সূচনা বুঝতে পারছেনা।কিন্তু নিশ্চয়ই স্পোশাল কিছু এই শাড়ির সাথে জড়িত।মিসেস আফিয়া নিজ হাতে শাড়িটাকে সূচনার কোলের ওপর রাখলেন।তারপর বললেন-

–‘বিয়ের পর প্রথমবারের মত যেদিন ওনার সাথে আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল,আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলেন উনি সেদিন এই শাড়িটাই পড়েছিলাম।একদম অন্য রূপে আবিষ্কার করেছিলাম দুজন দুজনকে।আমাদের এত বছরের পথচলায় সবচেয়ে সুন্দর আর মনে রাখার দিনগুলোর মধ্যে একটা মুহুর্ত। এটা নেয় তুই, আজকে এটা পড়বি।

–‘এ,এখন?

–‘হ্যা।

–‘কিন্তু মামী?

–‘কোনো কিন্তু না,এদিকে আয়।
______________________________
সূচনার পরনে তাতের শাড়ি।রেশমি সুতোর মিশ্রণে হালকা নীল রঙের শাড়িটির পাড়ে কারুকাজ করা।পুরোনো হওয়া সত্ত্বেও বেশ শৌখিন এবং আরামদায়ক লাগছে সূচনার কাছে।পুরোনো সময়ের তাতের শাড়ি হওয়ায় এর বুনন ধরন নকশা সবকিছু আলাদা।নিজেকে নিজের কাছেই অন্যরকম ঠেকছে সূচনার।লজ্জায় আর ভ/য়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।সে জানেনা কী হবে বা কী হতে চলেছে আজ।মিসেস আফিয়ার কথায় বা’ধ্য হয়ে শাড়িটা পড়েছে। কিন্তু প্রণয়ের সামনে যেতেই লজ্জা করছে তার।প্রণয় যখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করবে -এত সেজেছ কেন?তখন কী জবাব দিবে সে?সেই চিন্তায় অন্তরাত্মা পালাই পালাই করছে।কাজলের শেষ রেখা টেনে,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে সরে দাড়ালো।মিসেস আফিয়ার নজরে পড়লে উনি পূর্বের ন্যায় হেসে বললেন –

–‘একদম মিষ্টি একটা পরীর মতো লাগছে।এখন তাড়াতাড়ি যা।আয়।

কোনোরকমে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো সূচনা।
_______________________
দুরুদুরু বু*কে পা টিপে টিপে ভেড়ানো দরজা খুললো সূচনা।রুমে প্রবেশ করলে শীতল বাতাস যেন শরীরকে জমিয়ে দিল একদম।এমনিতেই হাত-পা শীতল হয়ে গিয়েছিল আর এখন এই ঠান্ডা বাতাসে বরফ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।রুম অন্ধকার করে রাখা,ব্যালকনির গ্লাস লাগানো কিন্তু পর্দা সরানো থাকায় বাইরের আলো এসে পড়েছে রুমে।বাতাসের উৎস খুজতে বেগ পেতে হয় নি।মিনিটেই বোঝা হয়ে গেছে সূচনার যে এই ঠান্ডার মধ্যে প্রণয় আবারও ফ্যান ছেড়ে রেখেছে। এই কাজ তো আজকে প্রথম না,আগেও করেছে। বু*কের ধুকপুকানির কথা এতক্ষণে ভুলে গেলেও আবার শুরু হলো সেই শব্দ। পূর্বের হতে দ্বিগুণ, না তার থেকেও বেশি।মনে হচ্ছে সে বাইরেও শুনতে পাচ্ছে।এমন অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দনের কারণ তার ঠিক পাচ কি সাত কদম সামনে দাড়িয়ে আছে প্রণয়।তার দৃষ্টি সূচনার ওপর, সূচনা ও তা বুঝতে পারছে তাই তো এই অবস্থা। নত মস্তকে স্টিলের ন্যায় দাড়িয়ে আছে সূচনা।অন্ধকারে,বদ্ধ রুমে দু প্রান্তে দু’জন মানব মানবী, ক্রমেই ভারি হচ্ছে তাদের হৃদ কোমল।কী হবে সামনে?নতুন কিছুর শুরু?নতুন #প্রণয়ের_সূচনা নাকি কিছুই না?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪২
_______________________________
–‘এত সেজেছ কেন?

সূচনার ভাষ্যমতো ভ্রু কুচকে প্রশ্ন টা করলো প্রণয়।সূচনা প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের পানে।ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়নে প্রণয়ের।সে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে এসেছে বোধহয়,গলায় তোয়ালে ঝোলানো যে।পুনরায় প্রণয়ের প্রশ্ন কানে আসতেই চ*কিত তাকালো সূচনা।জড়ানো কণ্ঠে বললো-

–‘মা..মামী জোর করে..

–‘ওহ।

আর কিছু বলল না প্রণয়।দাড়িয়ে রইলো চুপচাপ,দৃষ্টি তার সামনে এখন। সূচনার কপাল কুচকে এলো,মে*জাজ ও খা*রাপ হলো অনেকটা।সে এত সুন্দর করে তৈরী হয়ে এসেছে আর প্রণয় বিনাবাক্য ব্যয়ে চলে যাচ্ছে।একটু প্রশংসা করলে কী হত?প্রণয় ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতেই কুচকানো কপাল নিয়ে সূচনা সেধেই জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমাকে কেমন লাগছে?

প্রণয়ের পা থামলো,দৃষ্টি শান্ত হলো তার কিন্তু বু*কের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে।সে পালাতে চাচ্ছে, এই মুহুর্তে দুজন একসাথে থাকলে ভুল একটা হয়ে যাবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই প্রণয়ের।

–‘বলছেন না কেন?

নিজেকে ধাতস্থ করলো প্রণয়,সূচনার দিকে ঘুরে তাকালো।গাড় কণ্ঠে শোধালো-

–‘নীল রঙা শাড়ি পড়নে,খোলা চুলের,চোখে কাজল পড়া এক রমনীর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব আমার মনের ক্যানভাসে একে নিয়েছি,একদম আপাদমস্তক।

সূচনা শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক।সুন্দর না বলেও কত সুন্দর তার প্রশংসা করে দিল প্রণয়।

–‘তুমি কাজল পড়ো না কেন?

ভ্রু নাড়িয়ে সূচনাকে জিজ্ঞেস করলো প্রণয়।

–‘পড়েছি তো।

–‘দেখছি না তো এত হালকা করে কাজল পড়ো কেন?

সূচনা আমতাআমতা করে বললো-

–‘আসলে গাঢ় করে কাজল দিলে আমাকে মঞ্জুলীকার মতো দেখায় এজন্য হালকা করে দেই।

সূচনার এমন বাচ্চামো কথায় প্রণয় শব্দ করে হেসে দিল।তা দেখে সূচনা মুখ বা/কিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘হাসছেন কেন?এটা সত্যি কথা গাঢ় করে দিতে গেলে আমি আগেই কাজল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলি তারপর কিছুক্ষণ পেরোলে তো একদম লেপ্টে যেয়ে…মঞ্জুলীকার মতো দেখায়।

–‘এখন থেকে মোটা করে দিবে।

–‘আমি পারি না,ভয় করে।

–‘শোনো..হুমায়ুন আহমে স্যারের একটা ছোট্ট উক্তি আছে -‘কাজল ছাড়া মেয়ে, দুধ ছাড়া চায়ের মত’।বুঝেছো?এখন থেকে আমি দিয়ে দিব?

বিনাবাক্য ব্যয়ে শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিল সূচনা।হালকা হেসে ব্যালকনি তে চলে গেল প্রণয়।সূচনা বুঝে উঠতে পারলনা তার কি করা উচিত।ঠায় দাড়িয়ে রইলো দেয়ালের দিকে তাকিয়ে। টিকটিক শব্দ হচ্ছে ঘড়িতে,সময় পেরোচ্ছে,দাড়িয়ে থেকে অতিক্রম হলো মিনিট দশেক। অতঃপর কোনো রকম ভাবনা বা পরিকল্পনা ছাড়াই রুমের ফ্যান অফ করে সে ও পা বাড়ালো,উদ্দেশ্য ব্যালকনিই।দু হাত গ্রিলে রেখে বড় বড় শ্বাস টান*ছে প্রণয়।অস্থির লাগছে,প্রচন্ড রকমের,বড় অদ্ভুত অনুভূতি। লাগার ই কথা শত হলেও সে পুরুষ আর নিজের বিয়ে করা স্ত্রী কে এমন মোহময়ী,আকর্ষণীয় রূপে দেখলে তার সান্নিধ্য পেতে না চাইবে কোন স্বামী?তাদের তো আর হারাম সম্পর্ক না,কিন্তু সমস্যা একটাই।সে জানে না সূচনা কী চায়?তার মনে কী?তার কোনো ব্যবহারে যদি সূচনা তাকে ভুল বুঝে?হিতে বিপরীত হবে তখন।

–‘ব্যালকনি তে কেন আসলেন?

আচমকা প্রশ্ন,ঘাবড়ায় নি প্রণয়।তার পাশেই দাড়িয়ে আছে সূচনা,প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে। নিজেকে স্বাভাবিক করে স্বাভাবিক গলায় ই উত্তর দিল-

–‘এমনি, চলে যাব এখন।

প্রণয় চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই সূচনা তেতে উঠলো, চওড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘ইগনোর কেন করছেন?

প্রণয় থামলো,সে তো দূরে থাকতে চাইছে তারই ভালোর জন্য আর মেয়ে বলছে তাকে ইগনোর কেন করছে?একেই বলে কপাল।প্রণয় কপাল কুচকে পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘কয়টা বাজে এখন?

শাড়ির আচল আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে সূচনার জবাব-

–‘দশটা বাজে বোধহয়,, তো?

–‘হোয়াট তো?দশটা বাজে এমনিতেই আজকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে সো আই নিড টু টেক রেস্ট।

–‘তার মানে আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন এখন? রাতে খাবেন না?

–‘না খাবোনা…আগেই তো বলেছিলাম।

–‘হুম।

ব্যালকনির দরজার সামনে আসতেই পেছন থেকে প্রণয়ের হাত ধরে ফেললো সূচনা।আবারও থামলো প্রণয়,হুট করে রা*গ জেকে বসলো কিন্তু প্রকাশ করলো না সরাসরি।শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি হয়েছে তোমার?কী চাই?

–‘এটেনশন।

–‘মানে?

–‘মা..মানে মামী বলেছে যে নিজের জিনিস নিজেকে আগলে রাখতে।

–‘হ্যা তো?

–‘তো তাই করছি।

–‘হ্যা?

–‘আব..ব.. মানে..কিছু না।

–‘বুঝিয়ে বলো।

–‘কি..কিছু না তো।

–‘কিছু না হলে কা*পছো কেন?আশ্চর্য!আচ্ছা কালকে তো চলে যাবে তাই না?

পরপর কথাগুলো বললো প্রণয়।সূচনা রেগে গিয়ে বললো-

–‘কোথায় যাব?

–‘কেন তোমার বাপের বাড়ি আর আমার শশুর আব্বার বাড়িতে।

–‘কেন যাব?আমার বাড়ি এখন এটাই।

–‘যাওয়ার কথা বলেছিল কে?তুমিই তো।

–‘বলেছিলাম তো।

–‘তো এখন যাবে।

–‘যাবনা।

–‘যাবে।

–‘বললাম না যাবনা।

–‘যেতে হবে।

–‘আশ্চর্য আপনি আমাকে এত জোর করছেন কেন?

–‘করছি তো?

–‘বাড়াবাড়ি হচ্ছে?

–‘হোক।

–‘বিচার দিব আমি,আপনাকে ব*কা খাওয়াব তবুও যাবনা। হুহ।কি করবেন?

–‘দেখতে চাও?

–‘দে..দেখান।ভ*য় পাইনা আমি।

–‘সত্যি?

–‘হু..হুম

সূচনার ‘হুম’ বলতেই আকস্মিক এক ঘটনা ঘটলো তার কিছু বুঝে ওঠার আগেই।প্রণয় ঝট করে কোলে তুলে নিল সূচনাকে।কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে বললো-

–‘চলো তাহলে।লেট’স প্লে।

বিছানায় এনে নামিয়ে দিয়ে চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো-

–‘একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে তোমার ওয়েট কম হওয়ায়।হুটহাট কোলে নিতে সমস্যা হবে না।কথা না শুনলে কোলে করে ছাদে নিয়ে যাব।হয় আমি যা বলি তা শুনবে না হয় ছাদ টু নিচে।গুড আইডিয়া না?হ্যা।

প্রণয়ের দিকে খেয়ে ফেলবে ফেলবে লুক নিয়ে তাকিয়ে সূচনা বললো-

–‘এজন্য ই সেদিন বলেছিলেন যে আপনি ইনোসেন্ট না।ঠিক ই বলেছেন আপনি ইনোসেন্ট হতেই পারেননা, কোনো এঙ্গেল দিয়েই না,ভুল করেও না। আপনি.. আপনি.. আপনি তো…

–‘কী আমি?

–‘ব*জ্জাতের বড় ভাই।

–‘ছিহ এটা কেমন কথা বউজান? নিজের বরকে এসব বলো সাহস তো কম না।

কথাটুকু নরম স্বরে শুরু হলেও শেষ হলো কঠিন গলায়।সূচনা কিঞ্চিৎ ভ*য় পেয়ে গেল,কী বলতে কী বলে ফেলেছে।না জানি কি করে আবার।আমতা আমতা করে বললো-

–‘সরি স্লিপ অফ টাঙ আর হবে না।

–‘আমাকে কেমন মনে হয় তোমার?

হঠাৎ প্রণয় এমন প্রশ্ন করতেই সূচনা থমকে গেল, চুপ হয়ে গেল, মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারলনা, করার চেষ্টা টুকুও করতে পারলনা যেন সে জানে চেষ্টা করলেও শব্দ বের হবে না।

–‘বললে না।

কণ্ঠে অনেক খানি পরিবর্তন।সূচনা এবার মুখ না খুলে পারলনা।মুখ খোলার পাশাপাশি অবাক করা কিছু কান্ড ঘটালো।সে বিছানায় বসেছিল আর বিছানার পাশে তার গা ঘেষে দাড়িয়ে ছিল প্রণয়।সূচনা চট করে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।প্রণয়ের এক হাত ধরে বসিয়ে দিল বিছানায়। অতঃপর টুস করে বসে পড়লো তার কোলে।ভড়কে গেল প্রণয়।নিজের বাম হাত টা প্রণয়ের গালে স্পর্শ করালো সূচনা।একদম প্রণয়ের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো-

–‘আপনি এমন একজন পুরুষ যার মতো পুরুষকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চাইবে প্রতিটা মেয়ে।যে পাবে সে ভাগ্যবতী ছাড়া অন্য কিছু না।আর সেই ভাগ্যবতী একজন আমি,আপনার জীবনের অংশ হতে পেরে,আপনাকে পেয়ে সত্যি ই ভাগ্যবতী আমি।

প্রণয় বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলো সূচনার দিক।প্রণয় ভাবেও নি এত সহজে আর এত তাড়াতাড়ি নিজের মনের কথা প্রকাশ করবে সূচনা।সূচনা আবারও ফিসফিসানো কণ্ঠে বললো-

–‘দুজন মানুষ যখন একসাথে বসবাস করে,তখন তাদের মধ্যে আর কিছু হোক আর না হোক মায়া জন্মায়।মায়া নামক অদৃশ্য এক শি*কলে বাঁধা পড়ে যায় তারা।আপনি আর আমি তো হালাল সম্পর্কে আছি,একই ছাদের নিচে,একই কামরাতে বসবাস করছি।আর তারওপর অপর প্রান্তের ব্যক্তিটা যদি হয় আপনার মতো তাহলে তার মায়ায় পড়া টা আমার জন্য অস্বাভাবিক কিছু না।আপনার ছোট থেকে ছোট বিষয় গুলোও আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে।দোটানায় ছিলাম,বুঝে উঠতে পারছিলামনা নিজের মনের অবস্থা।কিন্তু আজকে মামীর কথাগুলো শোনার পরে বোঝা হয়ে গেছে।আপনি যখন চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন ঔ চারটা দিনে আমি বুঝতে পেরেছি আমার আপনাকে লাগবে,আমি আপনার মায়ায় পড়েছি,যেই সেই মায়া না।ভ*য়ংকর, ক*ঠিন মায়া।আপনার আমার শুধু শরীরের দূরত্ব আত্মার না।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চুপ করলো সূচনা।প্রণয় সাথে সাথে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখালো না।চুপ করে রইলো,সূচনা ও প্রণয়ের কোলেই চুপটি মেরে বসে আছে তার অপেক্ষায়।প্রণয় হুট করে ঝারি দিয়ে কোল থেকে নামিয়ে দিল সূচনাকে।তার হেন কান্ডে সূচনা ‘থ’ হয়ে গেল একদম।বিছানা থেকে উঠে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ব্যালকনিতে চলে গেল প্রণয়। তার যাওয়ার দিকে টলমলে চোখ নিয়ে সূচনা তাকিয়ে রইলো। তার মাথা আপাদত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।বুঝতে পারছেনা কোনোভাবে ই প্রণয়ের এমন ব্যবহারের কারণ।তার এই দশা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।একজোড়া শক্তপোক্ত হাত তার দু বাহু ধরে তাকে দাড় করিয়েছে।কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে।একদম যেন নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে চাইছে তাকে,দম আটকে যাওয়ার উপক্রম, থম মে’রে গেছে সূচনা আবার।প্রায় দশ মিনিটের মাথায় সেই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেয়েছে সূচনা।সূচনার দু গালে হাত রেখে মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাড়ালো প্রণয়। দু জোড়া চোখ আবদ্ধ হয়েছে,ওষ্ঠাধর
জোড়ার ও দূরত্ব ক্রমেই কমছে তাদের, সাথে ক্রমেই বাড়ছে শ্বাস।ওষ্ঠাধরের দূরত্ব কমতে কমতে প্রণয়ের ওষ্ঠ সূচনার অধর স্পর্শ করলো।কে*পে উঠলো দুজনই।সূচনার সমস্ত শরীরে তীব্র ঝাঁ*কুনির সৃষ্টি হলো।হালকা হতে স্পর্শ গভীর হলো,দুজনের মধ্যে উন্মা*দনা ছেয়ে গেল যেন একে অপরকে কাছে পাওয়ার।ক্রমেই অধর হতে ওষ্ঠ,গ্রীবা,চিবুকে নেমেছে প্রণয়ের স্পর্শ।সূচনার শরীরের প্রতিটা ভাজে কম্পন তুলছে প্রণয়ের একেকটা স্পর্শ। নিজেকে বদ্ধ উন্মাদ লাগছে সূচনার।প্রণয়ের অবস্থা ও তাই,নিজেকে কন্ট্রোল করার কথাটা তার মাথায় আসছেইনা।সে ব্যস্ত এখন সূচনা তে ডুবতে,নতুন সূচনা ঘটাতে।অন্ধকার রুম আরও অন্ধকার হলো,ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো,পর্দাও নামিয়ে দেয়া হলো।বাইরে থেকেও আলোর ছিটেফোঁটা ও আসার কথা না।আবারও দুজন মত্ত হলে দুজনায়,ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ,দুজন মানব মানবীর শ্বাসপ্রশ্বাস আর অস্পষ্ট সুখময় অনুভূতি প্রকাশের শব্দে মুখরিত হলো পুরো কামড়া।

#চলবে