প্রণয়ের সূচনা পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
223

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৩
________________________
প্রতিটা সকালের শুরুতে হয় জীবনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা। সূচনার জীবনেও নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বিয়ের দেড়মাস পর এই অধ্যায়ের সাথে পরিচিত হয়েছে সে। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বোধহয় এমনি হয়, নাকি তাদের ক্ষেত্রেই এতটা সময় অতিক্রম হয়ে গেছে। হয়তো হ্যা হয়তো না,হয়েছে যে তাই অনেক। কিন্তু এরপরেও মনে বিষন্নতার মেঘেদের উড়াউড়ি। আজ দুইদিন প্রণয়ের ব্যবহার পুরোপুরি বদলে গেছে। তার সাথে ঠিকমতো কথা বলছেনা,তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত। এসবের কারন জানেনা সূচনা। কারন খুঁজতে গিয়ে বারংবার শূন্য হাতে ফিরেছে। কারন পাবে কিভাবে? সে তো কিছু করেনি করবেই বা কিভাবে? সেদিন রাতে ঘটনার পরদিন সকালে যখন সূচনার ঘুম ভেঙেছে তখন সময় ছিলো সাড়ে আটটা আর বিছানায় সে একা ছিলো।প্রণয় ব্যালকনিতে ভেবে দ্রুত এলোমেলো শাড়িটা কোনোরকম সামলে ওয়াশ রুমে চলে যায়। গলায়,ঘাড়ে ও কানে কিছু দাগ দেখা যাচ্ছে,সেগুলো কা*মড়ের দাগ,প্রণয়ের দেয়া।যেগুলো স্পষ্ট মনে করিয়ে দিয়েছে গত রাতের কথা,লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠেছে।ভালো করে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে যখন বের হয়ে দেখলো প্রণয় রুমে নেই, তখন প্রশ্ন জাগে, সে ভেবেছিলো বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে আর রুমে আসেনি। কিন্তু এতোটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও না আসায় কল লাগালো প্রণয়কে প্রথমবারের রিসিভ করেনি‌, দ্বিতীয়বারে করেছে। কিছু জিজ্ঞেস না করতেই প্রণয় হরবর করে বলে-

–‘ আমি অফিসে আছি,কথা বলতে পারবোনা।

বলেই খ*ট করে কেটে দেয়। একটু খারাপ লাগলেও ব্যস্ত আছে ভেবে তেমন পাত্তা দেয়নি সূচনা তখন। ভেবেছিল পরে কল দিবে কিন্তু সেদিন একবার ও কল করেনি প্রণয়।সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেও তেমন কথা বলেনি।ফ্রেশ হয়ে, ব্যালকনিতে যেয়ে দরজা অফ করে বসে ছিল,সূচনা কতবার ঘুরে গেছে,দরজায় নক দিয়েছে।কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি।নয়টার সময় বেরিয়েছে তারপর তাড়াতাড়ি করে খেয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে। রুমে যে আরেকজন আছে তার খেয়ালই নেই যেন।রা*গ করে সূচনাও কিছু বলেনি।তারপর আজকের দিনও চলে গেল।এশার নামাজ পড়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে এসবই ভাবছে সূচনা।প্রণয় ফিরেনি এখনও,কল দিয়েছিল কিন্তু রিসিভ হয়নি।মিনিট কয়েক বাদে টেক্সট এসেছে

— ‘ফিরতে দেরি হবে।’

রিপ্লাই করেনি সূচনা।তার এবার রীতিমতো কান্না পাচ্ছে,এজন্যই বলে অনুভূতির প্রকাশ হয়ে গেলে আর মূল্য থাকে না।প্রণয় ও তাই করছে,এতদিন তো এমন করেনি,আর এখন যেই না বলেছে নিজের অনুভূতি তৎক্ষনাৎ আচরণে পরিবর্তন।দাড়ানো থেকে ব্যালকনিতে ডান পাশে নিচে পেতে রাখা ম্যাটে পা গুটিয়ে বসে পড়লো সূচনা।পাশে রাখা ফেয়ারি লাইট টা আজ জ্ব*লন্ত।সূচনা কোলে দুইটা কুশন একসাথে নিয়ে থুতনিতে হাত রেখে কয়েক পল ভাবলো কী করা যায়,কিন্তু লাভ হলো না কোনো।কোনো পথ বেরোলো না। তার ওপর নতুন এক চিন্তা ভিড় করেছে মাথায়।আজ বিকেলে ছাঁদে গিয়েছিল সে,উদ্দেশ্য সেই চিলেকোঠার রুমে কি আছে দেখা, কিন্তু লাভ হয়নি কোনো।তালাবদ্ধ রুমে কি আর ঢোকা যায়?মুখ ল*টকে ফিরেছে।তারপর থেকে চিন্তা ভিড়েছে ‘কী এমন আছে এই ঘরে?এত লুকানোর কি আছে?’ভাবতে ভাবতে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিল সূচনা।এত চা*প কি সে নিয়েছে কখনো,ছোট খাটো একটা মাথা তার,তার মধ্যে এত জ*টলা।উফফফ,হু হু করে কান্নার স্বর তুলে দিল সে।

–‘এভাবে কাঁদছো কেন?বর ম*রেছে তোমার?

আ*তকে উঠলো সূচনা,অতি নিকটে শোনা গেল স্বরটা।চকিতে তাকালো পাশে,প্রণয় হাটুতে ভড় করে তার দিকে ঝুকে আছে,দৃষ্টি উৎসুক তার,আর ক্লান্তির ছাপ চোখে মুখে।সূচনা তড়িৎ গতিতে প্রণয়ের মুখে হাত চেপে ধরলো,তার চোখে মুখে স্পষ্ট আতংক। আতংকিত গলায় ই বললো-

–‘কী বলছেন এসব?মাথা খারাপ হ’য়ে গেছে আপনার।

নিজের মুখ থেকে সূচনার হাতটা সন্তপর্ণে সরিয়ে নিল প্রণয়।গাম্ভীর্যের ভাব বজায় রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো-

–‘তেমন কিছু বলিনি।এখানে কী করছো ঠান্ডার মধ্যে আর কান্নাকাটি ই বা করছো কেন?

সূচনা এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাচ্চা কণ্ঠে বললো-

–‘হাত ছুয়ে কথা দিন আর এমন উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না।

–‘বাচ্চামো কেন করছো?

–‘করছি বাচ্চামি তা ও কথা দিন।

–‘কাঁদছো কেন?

–‘দিবেন না কথা?

হাফ ছাড়লো প্রণয়।বললো-

–‘ঠিক আছে দিলাম এখন বাদ দাও।বলো কী হয়েছে?

এবার মুখ চুপসে গেল সূচনার,আরও কান্না পেল কারণ জিজ্ঞেস করায়।যেন কান্না সব দলা পাকিয়ে গলায় এসে আ*টকেছে।মাথা নিচু করে নিল,নিচু স্বরে বললো-

–‘কিছুনা এমনি।

–‘ তাড়াতাড়ি বলো।কিছু না বলো না আবার, এমনি মাথা গ*রম।

–‘আপনার মাথা সবসময়ই গ*রম থাকে।

–‘হ্যা থাকে এখন আরও হচ্ছে। না বললে আরো খা*রাপ হবে।বলো,ফাস্ট।

সূচনা কিয়ৎপরিমাণ চুপ রইলো।তারপর নিচু স্বরে বললো-

–‘আপনি দুইদিন ধরে এমন করছেন কেন?

–‘কেমন করছি?

–‘ইগনোর করছেন,কথা বলছেন না, তাকাচ্ছেন ও না।কি করেছি আমি?

এবার নীরব রইলো প্রণয় ও।আলতো স্পর্শে সূচনার এক হাত মুঠোবন্দি করলো প্রণয়,প্রগাঢ় দৃষ্টি স্থাপন করলো সূচনার পানে।নীরবতা ভে*ঙে শীতল কণ্ঠে বললো-

–‘তেমন কিছু না,আমার মনে হচ্ছিল সেদিন রাতে আমাদের মধ্যে যা হয়েছে তা আমার ভুলে হয়েছে।তোমার অনুমতি নেইনি আমি,নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।তার জন্য মনে হচ্ছিল তুমি আমাকে নিয়ে খা*রাপ ধারণা রাখবে। তাই..

সূচনা কিছু সময় থম মে*রে তাকিয়ে রইলো, অতঃপর ফিক করে হেসে দিল।তার হাসিতে ভ্রু কুচকালো প্রণয়,থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘হাসছো কেন?একটু আগে তো ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করছিলে।

মুখে হাত চেপে হাসি আ*টকালো সূচনা।বললো-

–‘আপনি কী লজ্জা পাচ্ছেন?

প্রণয় ধমকানো স্বরে বললো-

–‘লজ্জা পাবো কেন হ্যা?লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

–‘বিহেভিয়ার দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। শুনুন আপনার যেমন মনে হচ্ছে সেটা আসলে আমার মনে হওয়া উচিত কিন্তু মনে হচ্ছে না কারণ যা হয়েছে তা হওয়ারই ছিল একদিন। আর অসম্মতি তে কিছুই হয়নি । যা হয়েছে দু’জনের সম্মতি তে হয়েছে।

–‘মানে তোমার সম্মতি ছিল?

–‘আপনার মনে হয়েছে আমার কোনো অসম্মতি ছিল?

–‘মনে নেই আবার দেখতে হবে।

সূচনার দিকে আরেকটু ঝুঁকে চোখ মে*রে বললো প্রণয়।সূচনা লজ্জা পেয়ে প্রণয়ের বুকে দু হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো-

–‘সরুন,দূরে যান।

–‘কেন?একটু আগেই তো বললে যে..

–‘আমি কিছু বলিনি।

–‘ঠিক আছে যাও ছেড়ে দিলাম।

–‘ধন্য।

–‘প্রণয়ী?

হঠাৎ গম্ভীর স্বরে ডাক দিল প্রণয়।সূচনা সহসা জবাব দিল-

–‘হু।

–‘তুমি আমাকে পেয়ে ভাগ্যবতী না বরং প্রণয় স্বয়ং প্রণয়ীকে পেয়ে ভাগ্যবান।

–‘আউচচ,দিল পে লাগি।

–‘আহ্লাদ।

–‘হু।

জানেন মেয়েরা তাদের কাছেই আবদার করে, তাদের সামনেই আহ্লাদী ভাব ধরে যারা তার খুব কাছের কেউ,যারা তার সেই আহ্লাদী ভাবটাকে বা সেই আবদার গুলোকে মূল্যায়ন করতে পারে।আর মেয়েদের একটা অদ্ভুত শক্তি আছে তারা সেই মানুষগুলোকে না খুব তাড়াতাড়ি ই চিনে নিতে পারে। তবে কিছু মেয়েরা আবার বুঝতে একটু বেশি ই সময় ব্যয় করে ফেলে কিন্তু বুঝতে পারে ঠিকই। পার্থক্য হয় এখানে যদি আগে বুঝতে পারতো তাহলে হয়তো খা*রাপ কিছু হওয়া থেকে রেহাাই পেত,হয়তো বড়সড় ঝড় বয়ে যেত না,হয়তো পরিস্থিতি টা অন্য রকম হত, আরও সুন্দর হত।ব্যস এতটুকু ই।

–‘বাহ বাহ,তুমি জানো তুমি মাঝেমধ্যে হুট করে অনেক বড় হয়ে যাও, অনেক বেশি বুঝদার মনে হয় তোমাকে।আবার মাঝেমধ্যে হুট করে ই কেমন বাচ্চা বনে যাও।

–‘কিন্তু মানুষ আমি একটাই।

–‘হুম..
_______________________
–‘স্যার সেই নাম্বার থেকে আবারও ভয়েস মেসেজ এসেছে একটা।আগের বারের টার মতো এটাতেও একই কথা।’তার মামাকে কেন মে*রেছি আমরা?সেই একই স্বর।টানা তিনদিন একই মেসেজ আসলো।আপনার কথা মতো সেই নাম্বারের ডিটেইলস বের করেছি।কয়দিন আগেই সেই সিম টার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে,রেহান আদনান নামে। সে আমেরিকাতে থাকতো, কিছুদিন আগেই ফিরেছে,আমেরিকা তে কিন্তু উনিও থাকতেন। স্যার আমার মনে হচ্ছে..

–‘যা মনে হচ্ছে তাই।

তন্ময়কে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো প্রণয়।
আবারও বললো-

–‘ আচ্ছা তন্ময় শোনো কালকে অফিস শেষে এটা নিয়ে কথা বলবো।এখন রাখি তাহলে?

–‘ঠিক আছে স্যার।

–‘অফিস আর কারো সামনে ছাড়া স্যার বলতে নিষেধ করেছি তো।

–‘ঠিক আছে ভাইয়া।

–‘দেট’স লাইক আ গুড ব্রো।আচ্ছা রেস্ট কর তাহলে।

–‘ঠিক আছে।

কল কে*টে দিয়ে দাড়িয়ে রইলো ব্যালকনিতে।পেছন থেকে ডেকে উঠল সূচনা-

–‘খেতে আসুন।

দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দিল-

–‘যাও আসছি।

–‘তাড়াতাড়ি আসুন।

তাড়া দিয়ে আসতে বলে চলে গেল সূচনা।প্রণয় মিনিট পরেই চলে গেল।
_____________________________
রাতের খাবারের পালা শেষ,ফ্রেশ হয়ে কা*পতে কাপ*তে কোনোরকম কম্বলের নিচে ঢুকেছে সূচনা।প্রণয় আগে থেকেই ছিল বিছানায় আধশোয়া হয়ে।সূচনার কাঁপা কাপি দেখে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আজকেও গিজার অন করে নাও নি?মন কোথায় থাকে হ্যা?

সূচনা কম্বলের ভেতর থেকে ই জবাব দিল-

–‘মনে না থাকলে কী করব?

–‘কি করবে কাপ*তে থাকবে।

প্রণয় টুক করে কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল।কামিজ ভেদ করে পেটে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁ*পে উঠলো সূচনা।ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে প্রণয় বললো-

–‘এখন বুঝি শীতকালে সিঙ্গেল ছেলেমেয়ে গুলো এমন বিয়ে বিয়ে করে কেন?

–‘কেন?

–‘এমন নরম, গরম তুলতুলে একটা ব্যক্তিগত কম্ফোর্টার পেতে হলেও বিয়ে করা উচিত।

–‘ছিহ

স্ব শব্দে হাসলো প্রণয়।ঘাড়ে নাক ঘষতে লাগলো আবারও। সূচনা নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ভালোবাসার রঙ কী প্রণয়?

–‘সেটা নির্ভর করে সেই মানুষটার ওপর,তার অনুভূতির ওপর, ভালোবাসা নিয়ে তার স্বংজ্ঞা কী তার ওপর।সবার ক্ষেত্রে ভালোবাসার ডেফিনেশন এক হয়না,তাই সবার জন্য ভালোবাসার রং ও এক হয় না।বুঝেছো মেয়ে?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৪
___________________________
হুমায়ুন আহমেদ বলে ছিলেন -‘মেয়েদের স্বভাব ই হচ্ছে হালকা জিনিস নিয়ে মাতামাতি করা।’

সূচনা আপাদত তাই করছে,অফিসে না গিয়ে বেচারা প্রণয় ফেসে গেছে। তার চেয়ে বড় ভুল হয়েছে টিভি দেখতে বসে।নাস্তা শেষে রুমে এসে টিভি দেখতে নিয়েছিল, চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একটা মুভি আসে সামনে,হলিউড মুভি।সমস্যা সেটা না,সমস্যা হচ্ছে মুভি তে ঠা*স করেই একটা ই*ন্টিমেট সিন এসে পড়েছে আর সেই সময় ই আগমন ঘটেছে সূচনার।যা হওয়ার তাই হয়েছে, আপাদত অ*গ্নি দৃষ্টি নিয়ে সূচনা তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে,প্রণয় চুপ।গত দশ থেকে পনোরো মিনিট ধরে সূচনা একাধারে বকবক করেই যাচ্ছে।সূচনা রা*গে ফোঁসফোঁস করতে করতে বললো-

–‘আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না আপনি এমন,ছি ছি ছি।

প্রণয় চুপ এখনও।সূচনা আবারও বললো-

–‘কথা বলছেন না কেন এখন?

–‘আরে আমি জানতাম না কী তখন ঔসব আসবে…

–‘আপনি জানতেন না?উফফ ইচ্ছে করছে আপনাকে…

সূচনা পুরো কথা শেষ করবে কী ত*ব্দ খেয়ে গেছে একদম।চুলে হাত বুলাতে বুলাতে প্রণয় বললো-

–‘কী ইচ্ছে করছে?কী করবে আমাকে?

–‘ এটা কী করলেন?

–‘তুমু থুক্কু চুমু খেয়েছি।

–‘কেন?

–‘কারণ ঔসব দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে।শান্তি এখন এসবই শুনতে চেয়েছিলে না?

–‘আমি আপনার মতো না।

–‘তুমি আমার মতো হতে যাবে কেন?তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে। আশ্চর্য।

–‘আপনার মাথা আসলেই গেছে।

–‘হ্যা তো?

–‘কিছু না আমার মাথা খান বসে বসে। যত্তসব।

–‘আমার অভাবের দিন আসেনি যে বউয়ের মাথা খাবো।’তুমি তো চি*বিয়ে খাচ্ছ আমাকে।

–‘আমার বরের ও অভাবের দিন আসেনি যে আপনাকে চি*বিয়ে খেতে যাব।

–‘ওহ আচ্ছা।

–‘হুম।

প্রণয় এবার ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো –

–‘একটা জিনিস খেয়াল করলাম।

ভ্রু উচিয়ে সূচনা জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী?

–‘এটাই যে তুমি..তুমি..

–‘কী আমি?

–‘ ঝ*গড়ুটে হয়ে গেছো আগে থেকে।আগেই ভালো ছিলে চুপচাপ,কেমন ভয়ে ভয়ে থাকতে,ঠোট উল্টিয়ে তাকিয়ে থাকতে,আমাকে ভয় ও পেতে,তোমার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য কত কিছু করতে হতো। আর এখন টেপ রেকর্ডার এর মতো বাজতেই থাকো।

–‘আমি টেপ রেকর্ডার?আগে ভালো ছিলাম? ভয় পেতাম আপনাকে?ঝ*গড়ুটে হয়ে গেছি,ঠোঁট উল্টিয়ে তাকিয়ে থাকতাম?

চোখ রা/ঙিয়ে জিজ্ঞেস করলো সূচনা।

–‘হ্য….মানে..

–‘সামনে থেকে সরুন।

–‘কেন?

–‘সরুন।

প্রণয়কে সরিয়ে দিয়ে বেডে বসে পড়লো সূচনা,প্রণয় ও পাশে বসতে বসতে বললো-

–‘আমি তো মজা করছিলাম,রাগ করেছো?

–‘…..

–‘সরি রা*গ করছো কেন?আচ্ছা আর বলব না কানে ধরে সরি।

–‘…….

–‘আ’ম সরি কাপ কেক।

মুখ ছোট করে বললো প্রণয়।মুখে কিছু বললো না সূচনা,ঠোট উল্টিয়ে,ভীড়ু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক,অতঃপর ছোট বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে ধরলো প্রণয় কে।প্রণয় বোকা বনে গেল,সাথে সাথে কিছু জিজ্ঞেস করলো না,সময় নিল একটু।কিছুটা অপ/রাধী স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘রা*গ করেছো?আ’ম সরি আর বলব না,প্রমিজ,পিংকি প্রমিজ।

–‘কেন?

–‘তুমি হার্ট হয়েছ না এজন্য। আ’ম সরি।

–‘আরে থামুন এত সরি সরি করার কী আছে?আপনার সরি শুনে মনে হচ্ছে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলে ও দেয়ালে কে বলবেন ‘সরি।’

চট করে প্রণয়কে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো সূচনা।

–‘এতক্ষণ কী ছিল ঔসব?

প্রণয় বোকা বোকা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। সূচনা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো-

–‘আপনি আগের আমিকে দেখতে চেয়েছিলেন তাই একটু দেখালাম আর কি।কিন্তু যেভাবে সরি বলছিলেন আমার নিজের কষ্ট লাগছিলো তাই বলে দিলাম।

–‘তুমি আমার একটা মাত্র বউ রা*গ করেছো সরি বলবই কিন্তু দেয়াল তো আমার কিছু না সরি বলতে যাব কেন?

–‘তার মানে দেয়ালের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক থাকলে দেয়ালকে সত্যি সত্যি সরি বলতেন?

–‘শাট আপ প্রণয়ী।রাগ কমেছে আপনার?

–‘…..

–‘কথা বলো না কেন?

–‘….

–‘উফফ আবার কি হয়েছে?

–‘আশ্চর্য মাত্র ই তো বললেন কথা না বলতে।

–‘আল্লাহ আমি নির্ঘাত পাগল হয়ে যাব।আমি শিওর আর কয়দিন পর পাগলাগারদে তোমার সাথে আমি দেখা করতে যাব।

–‘কেন?আমার সাথে দেখা করতে যাবেন কেন?

–‘কারণ আমি পাগল হয়ে যাব।

–‘তো আপনি পাগল হবেন আপনি যাবেন আমি কেন যাব?

–‘কারণ তুমি আমার জীবনের অংশ,আমার রুম,আমার কাবার্ড যেমন ভাগাভাগি করেছি তোমার সাথে তেমনই আমি পাগল হব চিকিৎসা তোমার করাবো।সিম্পল।

–‘কালকে থেকে আমি অফিসে যাব আপনি বাসায় থাকবেন। সিম্পল।

–‘ ধরে নাও আজকে সিড়ি থেকে পড়ে পা ভে*ঙে গেল।

–‘সিড়ি থেকে পড়লে না পা ভা*ঙবে।

–‘যদি ফেলে দেয়?

কিছু বলতে পারল না সূচনা,বিচলিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। পাত্তা দিল না প্রণয়,উঠে চলে গেল।
_________________________
হাতে ছোট এক কাগজ নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সূচনা।শেলফের বইগুলো গুছিয়ে রাখতে যেয়েই এই কাগজটা পেয়েছে। হয়তো কোনো বইয়ের ভেতরে ছিল নাড়াচাড়া করতে যেয়ে নিচে পড়ে গেছে।তেমন ছোট না,কাগজটাতে কেমন আঁকিবুঁকি করা,স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।সম্ভবত অনেক আগের আকা,কোনো বাচ্চা হাতের,একজন মহিলা নিচে পড়ে আছেন,তার সামনে একজন পুরুষ দাড়িয়ে আছে, ডান হাতে তার কিছু আছে বোধহয়,কাগজটার একেবারে নিচের দিকটায় ছোট্ট একটা তারিখ ও আছে।ছোট করে লেখা শুধু ডিসেম্বর ৩০।এতক্ষণ খুটিয়ে দেখার পর এতটুকুই কোনোরকমে মেলাতে পেরেছে সূচনা।সূচনা বুঝতে পারল না এমন আঁকি বুকি বা সেই তারিখের মানে ও কিছু বুঝলো না।কাগজটা উল্টে দেখতে নিলেই হাত থেকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেল।সূচনা চমকে উঠলো আচমকা আক্র*মনে।সামনে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল,কাগজটা প্রণয় হাতে মুঠ করে ধরে রেখেছে, চোখমুখ শক্ত তার।সূচনা কিছু বলার আগেই প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-

–‘এটা কোথায় পেয়েছো?

সূচনা কোনোরকম ভয়ে ভয়ে জবাব দিল-

–‘শে..শেলফের কোনো বইয়ের ভেতর ছিল, গোছাতে নিয়ে দেখি নিচে পড়ে গেছে।

–‘পড়ে গেছে তাহলে সেটা নেড়েচেড়ে দেখছিলে কেন? আর তোমাকে নিষেধ করেছি না ছাদের ঔ রুমের আশেপাশে যেতে না, তাহলে কেন গিয়েছ আবার?

–‘আ..আসলে..

–‘না করেছিলাম?

ধ/মকে উঠলো প্রণয়,তার ধম/কে কেঁপে উঠল সূচনা,ঝাপসা হয়ে গেল চোখ জোড়া।কান্না আসছে তার,গলার ভেতরে আ*টকে যাচ্ছে শব্দ,কোনোরকম কাঠ গলায় বললো-

–‘সরি,আর যাব না।

এটুকু বলেই দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করলো সূচনা।এভাবে না বকলে হতো না?কী ছিল একটা কাগজই তো তার জন্য এমন ব্যবহার?কান্না করাটা কী অতিরিক্ত ইমোশান তার?মানুষ যতই শক্ত হোক না কেন যখন নিজের কাছের মানুষ টা তার সাথে একটু উচ্চ স্বরে ও কথা বলে তখন রাজ্যের কান্না আর মন খারাপ এসে ভিড় করে তার মনে।তার ক্ষেত্রে ও তাই হচ্ছে?

এদিকে সূচনা চলে যেতেই দুই হাত দিয়ে চুল খা*মচে ধরলো প্রণয়।বেডে বসে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে সে,এত বড় ভুল কীভাবে করলো সে্?এখন তো আর এই রুমটা তার একার না।এটা এখানে ভুলে ফেলে রেখেছে তার খেয়াল ই হয়নি, সূচনার হাতে যে পড়তে পারে।সূচনা বুঝেছে কিছু?আচ্ছা সে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে,দোষ তো সূচনার না তারই।ধ্যাত।মাথা চেপে ধরলো আবার।মহারাণীর রা*গ ভাঙাতে হবে।কিন্তু কীভাবে?
________________________
আজ দুইদিন কেটে গেছে সূচনা নিজের বাড়িতে। প্রণয় রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেনি,সূচনা তাই ভেবেছিল তার আব্বুর বাসায় চলে যাওয়ার কথা বললে প্রণয় আট*কাবে তাকে কিন্তু প্রণয় নিজেই তাকে দিয়ে গেছে বাসায়।মিসেস দিশা যখন জিজ্ঞেস করলেন হঠাৎ কিছু না বলে এসেছে যে?তখন জবাব টা প্রণয় নিজেই দিয়েছে। কত সুন্দরকরে মিথ্যা বললো-

–‘অনেকদিন ধরে মন খারাপ করছিলো আসার জন্য তাই নিয়ে আসলাম,আবার এসে নিয়ে যাব।

মিসেস দিশা তাই বিশ্বাস করলেন।এমন টা মোটেও আশা করেনি সূচনা,এখানে আসতে ও চায়নি,সেই যে দিয়ে চলে গেছে আর কল করেও খবর নেয় নি প্রণয়।সেদিনের ব্যবহারে যেমন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়েছিল, সেই মনে হওয়া টা ই এখন সত্যি মেনে নিয়েছে সূচনা।তার ভুল হয়েছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে, গতরাত ঘুমায়নি,চোখ জোড়া যেন অনশন করেছিল ঘুমাবে না বলে।কিন্তু আজকে রাত জাগবে না আর।বলা হয় প্রেম অতি তীব্র হয়ে গেলে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়,তুচ্ছ মনে করে নিজেকে,যার প্রেমে পড়েছে শুধু তার মাঝে নিজেকে খুজে পেতে চায়।এই কথাগুলো বোধ-হয় সত্যি। আজ খুব করে উপলব্ধি করছে সূচনা।সব ভুলে নিজেই আজকে কল দিবে ভেবেছিল।কিন্তু তার আগে কল আসলো প্রণয়ের।বুক ধ্বক করে উঠলো,স্ক্রিনে প্রণয় নামটা দেখেই বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শুরু হলো।ফোন রিসিভ করলো সে,মিনিট কয়েক এর নীরবতা,দুজনই নিশ্চুপ ছিল।নীরবতা ভাঙলো,প্রণয় শীতল কণ্ঠে ডাকলো-

–‘প্রণয়ী?

প্রণয়ের কণ্ঠ সূচনার কান অব্দি আসতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোতের প্রবাহ।অভিমান সব আবারও এক সাথে দলা পাকালো,কয়েক পল পরে ছোট্ট করে জবাব দিল-

–‘হু।

প্রণয় নীরব রইলো আরও কয়েক পল,অতঃপর পূর্বের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বললো-

–‘আই নিড ইউ।আই রিয়েলি নিড ইউ

চোখ জোড়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল সূচনার,হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল একদম,বুকের ধুকপুকানি বাড়লো।এক বাক্যে এত কিছু হয়ে গেল তার?কী ছিল তাতে?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৫
_____________________________
–‘কিছু বলবে না?

ঘোর ভাঙলো সূচনার,ভাবনা শেষ হলো সব,পাল্টা প্রশ্ন করলো-

–‘কী বলবো?

–‘কিছু বলার নেই?

উত্তর দিল না সূচনা, বলার তো অনেক কিছু আছে আর সেটা জানা স্বত্তে ও জিজ্ঞেস করছে।সূচনা চুপ করে রইলো। প্রণয় আদেশের স্বরে বললো-

–‘বারান্দায় আসো।

সূচনা অবাক হলো,রাত সাড়ে দশটা বাজে এখন,এই সময়ে বারান্দায় কেন যাবে সে?তা ও কোনো কারণ ছাড়া।সে সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেন?

প্রণয় সহসা জবাব দিল-

–‘কারণ আমি বলেছি নাও কাম ফাস্ট।

সূচনা রা/গ দেখালো,মুখ বা/কিয়ে বললো-

–‘ আসবো না,আপনি বললে ই কেন আসতে হবে?আমার ইচ্ছের দাম নেই?

–‘তুমি আসবে না?

–‘না।

প্রণয় চুপ রইলো মিনিট খানেক। তারপর করুণ কণ্ঠে বললো-

–‘আমি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি জান।

সূচনার বুক ধ্বক করে উঠলো।এটাই আশঙ্কা করছিলো সে,তাহলে প্রণয় সত্যি ই এসেছে,এত রাতে,এই ঠান্ডার মধ্যে।ফোন কানে নিয়েই ঝট করে উঠে পড়লো, ব্যলকনির দরজা খুলে দৌড়ে গিয়ে দাড়ালো,সামনের রাস্তায় দৃষ্টি দিতেই দেখা গেল..ফোন কানে নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রণয়। রাস্তার নিয়ন বাতির আলোয় স্পষ্ট মুখখানা,চিনতে এক বিন্দু অসুবিধা হয়নি সূচনার।এমন শীতের মধ্যে ও প্রণয়ের পড়নে শীতের কোনো কাপড় নেই,অফিসের ফর্মাল গেট আপে এখনও। সূচনা ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘এত রাতে কেন এসেছেন আপনি?সকাল হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে পারলেন না?

–‘না পারলাম না,আই নিড ইউ মিনস আই নিড ইউ রাইট নাও।সকাল হওয়ার তো অনেক দেরি।

–‘পাগলামো করছেন।

–‘করছি তো?

–‘কিন্তু কেন?

টুট টুট শব্দ জানান দিল কল কে/টে দিয়েছে প্রণয়।অবাক হলো সূচনা,পুনরায় কল করলো ফোন অফ।আশ্চর্য মাত্রই না কথা বলছিল,পায়চারি করতে করতে ইতিমধ্যে ব্যালকনি থেকে রুমে এসে পড়েছে সূচনা।পুনরায় ব্যালকনিতে যেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো রাস্তা ফাঁকা। তাজ্জব বনে গেল সূচনা, সাথে ভয় ও পেল কোথায় গেল প্রণয়?নাকি এতক্ষণ কল্পনা করছিলো আগের বারের মতো।আবারও প্রণয়ের নাম্বারে কল করলো সূচনা কিন্তু বন্ধ ই শোনালো।সূচনা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল একদম।কি হচ্ছে এসব?মিসেস দিশা আর আরহাম সাহেব শুয়ে পড়েছেন আর এতক্ষণে ঘুমিয়ে ও পড়ার কথা, এত রাতে সদর দরজা খুলে বাইরে যাওয়া, মন সায় দিল না সূচনার।মিসেস দিশাকে ডেকে যে কিছু বলবে তা ও উচিত মনে হলো না। কী বলবে ওনাকে?চিন্তা ভাবনা করতে করতে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো সূচনা খুব সাবধানে রুমের দরজা খুলে ধীর পায়ে বেরোলো।ড্রয়িং রুমের সামনে যেতেই দেখা গেল ড্রয়িং রুমের লাইটগুলো জ্ব/লছে,সে অবাক হলো,আরেকটু এগোতেই যা দেখা গেল তা দেখে আজকালকার ছেলেমেয়েদের ভাষায় বললে বলা যায় -‘সে রীতিমতো টাস্কি/ত।’ ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে প্রণয় আর মিসেস দিশা।সূচনা সেখানে আর পা বাড়ালো না, তড়িৎ গতিতে ছুটলো রুমের উদ্দেশ্যে।রুমে এসে দরজা লক করে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।মানে তার আম্মু ও জানতো যে প্রণয় আসবে।ভাবতেই রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে সূচনা বললো-

–‘তুমি আমার আম্মু তুমি আমার কথা শুনবে তা না আমার বিপক্ষে কাজ করা শুরু করেছে।হুহ।

দরজায় নক পড়ায় ধ্যান ভাঙ/লো সূচনার।শুনেও না শোনার ভান করতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না।দরজা খুলে দিল,প্রণয় প্রবেশ করলো রুমে,দরজার সামনে থেকে সরে আসলো সূচনা,প্রণয় দরজা লক করে সূচনার দিকে ঘুরলো,হাতের শপিং ব্যাগটা পাশে থাকা হ্যাঙ্গিং এ রাখলো।এক পা এক পা করে এগিয়ে আসলো সূচনার দিক।সূচনা মুখ ভাড় করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল।তাকে অবাক করে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো প্রণয়।কোনো প্রকার নড়াচড়া করলো না সূচনা।মিনিট কয়েক বাদে প্রণয় নিজেই ছেড়ে দিল তাকে।শপিং ব্যাগ তেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

রুমের বাইরে থেকে মিসেস দিশা ডাকলেন সূচনাকে।সূচনা বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
____________________________
রুমে খাবার নিয়ে এসেছে সূচনা।প্রণয় খাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।সূচনা আবারও বললো-

–‘কী সমস্যা খাবেন না কেন?

–‘ক্ষুধা নেই তাই, আমার ঘুম প্রয়োজন।

–‘কেন রাতে ঘুমান নি?

–‘না

–‘কেন?রাতে কী তারা গুনেছেন?

মুখ বা/কিয়ে বললো সূচনা।সে আবারও বললো-

–‘একটু খেয়ে নিন কী সমস্যা?

_____________________________
হিমশীতল হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে দোল খাচ্ছে সূচনার খোলা চুল গুলো।প্রণয় রুমে,খাওয়া শেষ তার,জেদ ধরেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেয়েছে।সূচনার মাথায় আসছে না তার কেমন ব্যবহার করা উচিত প্রণয়ের সাথে।সে রা/গ করে থাকবে আর একটু সময়?নাকি মানিয়ে নিবে?

ঘাড়ে খোচা খোচা কিছু স্পর্শ পেতেই শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো সূচনার,একদম প্রস্তুত ছিল না বিধায় রিয়েকশনটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। উদরে শীতল ছোয়া পেতেই যেন শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলল সূচনা,শরীরের ভার ছেড়ে দিল প্রণয়ের ওপর,প্রণয় সামলে নিল।চুল গুলো এক পাশে সরাতেই উন্মুক্ত হলো পিঠের কিছু অংশ।প্রণয় বার কয়েক সেখানটায় ছোয়া দিল ঠোঁ/টের।সূচনাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে প্রণয় খুব যত্ন সহকারে চুমু খেল তার কপালে।আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল সূচনা। চোখ বদ্ধ অবস্থায় ই অভিমানে কণ্ঠে বললো-

–‘এতদিন পড়ে আপনার মনে হয়েছে দেট ইউ নিড মি?

–‘সেটা তো আমি জানি মনে হবে কেন?শুধু একটু দেখতে চেয়েছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার অবস্থা এখন কেমন হয়?

–‘কী দেখলেন?কী বুঝলেন দুইদিনে?

–‘আই রিলাইজড দেট আই নিড ইউ এভরি সেকেন্ড অফ মাই লাইফ।

কান অব্দি পোঁছাতেই বদ্ধ চোখ জোড়া নিমিষেই খুললো সূচনা, হেসে উঠলো সে,পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলো প্রণয় কে।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো প্রণয় নিজেও।অভিমানের পালা শেষ হলো তবে।নাকি বাকি?
____________________________
সকাল এগারোটা।সূচনাকে নিয়ে সবে মাত্র ই বাড়ি ফিরেছে প্রণয়।মিসেস দিশা অনেক করে বলেছেন দুপুরে খেয়ে বেরোতে।শোনে নি প্রণয়,চলে এসেছে।সূচনা ও তার আম্মুকে বুঝিয়ে বলেছে অবশ্য। মিসেস আফিয়া,ইরা আর তিথি তো অভি/যোগের খাতা খুলে বসেছেন সূচনার কাছে।সূচনা কেন এমন হুট করে চলে গেল?আবার দু’দিন পর আসলো তা ও।অনেপ বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলে কয়ে মানিয়েছে সূচনা। নিচ থেকে রুমের দিকে অগ্রসর হয় সে।প্রণয় আগেই চলে গেছে রুমে।রুমের দরজা তার ভেড়ানো ছিল,হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।ভেতরে প্রবেশ করতেই কেমন বিদ/ঘুটে একটা গন্ধ নাকে আসলো তার।অন্ধকারে ছেয়ে আছে পুরো রুম।রুমের প্রতিটা জানালা লক করা,ব্যলকনির দরজা ও লক করা এমনকি পর্দা ও দিয়ে রাখা।অন্ধকার তো লাগবেই।সূচনা অবাক হয়ে গেল,রুমের অবস্থা দেখে মেজাজ খা/রাপ ও হলো।’মেয়েরা গোছালো ছেলেদের একদম পছন্দ করে না কিন্তু তাদের গোছানো জিনিস নষ্ট করলে আবার তেতে উঠে।সূচনা ও মেয়েদের সেই অন্যতম বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেই প্রণয়কে একদফা বকে দিল।প্রণয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। তারপর সেই বাজে স্মেল টা কিসের জিজ্ঞেস করলো সে।কিন্তু জবাব দিল না প্রণয়।সূচনা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে খুলে দিল জানালা, ব্যালকনির দরজা ও খুলে দিল পর্দা সরিয়ে।জিজ্ঞেস করলো-

–‘খালা রুম পরিষ্কার করতে আসে নি?

–‘রুম লক করা ছিল।

–‘কেন?

নিরুত্তর রইলো প্রণয়। বেডের অবস্থা ও যাচ্ছে তাই।সূচনার বেডের কাছে এগিয়ে যেয়ে বালিশ একটা হাতে নিতেই হাত ধরে বসিয়ে দিল প্রণয়।ধপ করে শুয়ে পড়লো সূচনার কোলে মাথা রেখে।আহ্লাদী স্বরে বললো-

–‘চুলে বিলি কে/টে দিবে কাপকেক?ঘুমাবো আমি,আমার ঘুম পেয়েছে।

সূচনা নাকচ করতে পারল না,সব ভুলে টুলে মাথায় যত্ন সহকারে হাত বুলাতে লাগলো প্রণয়ের।
________________________
কাবার্ড থেকে বেডের জন্য নতুন চাদর বের করতে যেয়ে যে এসব দেখবে সূচনা ভাবতেও পারেনি।প্রণয় এসব…ছিহ সে ভাবতে পারছে না।ঠাস করে শব্দ করে কাবার্ড লাগাতেই ওদিকে প্রণয় জেগে উঠলো।ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কী হয়েছে? শব্দ হলো কীসের?

–‘কী..কিছু না।সরি আপনার ঘুম ভা/ঙিয়ে দিলাম।

–‘এদিকে এসো।

ধীর পায়ে এগোলো সূচনা,পাশে বসে বললো-

–‘বলুন

–‘চিন্তিত লাগছে কেন?

–‘কই না তো।

–‘শিওর?

–‘হ্যা।

বালিশ থেকে মাথা সরিয়ে পুনরায় সূচনার কোলে মাথা রাখলো প্রণয়।মিহি স্বরে বললো-

–‘ঔটা থেকে এটা অনেকটা বেটার।

ভাবুক মনে পূর্বের ন্যায় প্রণয়ের চুলে হাত চালালো সূচনা।

#চলবে