প্রতিশোধ পর্ব-০২

0
140

#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_২

গাড়ি একদম আমার বাড়ির সামনে এসে থামে, শুভ আমাকে সেখানে রেখেই চলে যায়, আমি শুধু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম..

আমি: একটু ভিতরে গেলে কি হতো আমার বাবা মাকে আমি কি উত্তর দিবো..(শুভর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে)

আমি ভিতরে চলে গেলাম আম্মু আমার জন্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো

আম্মুহ কিরে জামাই আসে নি..?

আমিঃআম্মু ওনার কিছু কাজ আছে তাই চলে গেছে..

আম্মুহ ও আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোর জন্য অনেক কিছু রান্না করে রেখেছি খাবি আয়…

আম্মু আমাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিল হঠাৎ করে মা আমার গালে হাত রাখলো..

আম্মুঃ তোর গালে এটা কি হয়েছে এমন লাল হয়ে গেছে কেন?

আমি: ওই কিছু না এক কাথ হয়ে শুয়ে ছিলাম তো তার জন্য আর কি এমন হয়ে গেছে.

ঠিক তখনই বাবা আসেন এসে আমার গাল দেখেন আর কিছু না বলে চলে যান

আমি আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি তা জানি না, কিন্তু চোখ খুলতে দেখি একজন আমার রুমে বসে আছে, আমি প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেই না কিন্তু তখনি তাড়াতাড়ি উঠে বসি

আমি: আপনি এখানে কখন আসলেন?

শুভ তখন আমার দিকে পিট করে বসে ছিল, আমি চেহারা ডেকে আবার ডাক দেই..

আমি চেহারা লুকিয়ে রেখেছি এখন বলেন

শুভঃ তোর বাবা-মার সামনে আমাকে তাদের ভালো জামাই হতে হবে, তাই এখানে আসা এর চেয়ে বেশি কিছু না..

আমিঃ আচ্ছা ওকে

শুভঃ আমি কফি খাবো আমার জন্য এখনই কপি বানিয়ে নিয়ে আসো…

আমি তাড়াতাড়ি উঠে নিচে চলে যাই। এরপর কফি বানিয়ে নিয়ে আসি

আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কফি শুভর দিকে এগিয়ে দেই, শুভ কফিটা হাতে নিতে গিয়ে আমার হাতের উপরে ছেড়ে দেয়, গরম কফি আমার হাতে পড়াতে আমি চিল্লানি দিয়ল উঠি, সাথে সাথে আমার হাতও লাল হয়ে যায়

শুভ বাঁকা হাসি দিয়ে ভালো করে বসে

শুভঃ যা আমার জন্য আবার কফি করে নিয়ে আয়..

আমার চোখ দিয়ে তখন পানি পড়ছিল আমি কিছু না বলে চলে যাই
বেসিং এ নিজের হাত কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখি তারপর কিছুটা মেসেজ করে নেই আর আবার এক কাপ কফি বানিয়ে আসি

এসে দেখি শুভ নেই, আমি কফি কাপটা সাইডে রাখি এতক্ষণে বাড়ির একটা কাজের লোক এসে কফি পড়ে যাওয়া জায়গাটা পরিষ্কার করে গেছে

আমি আমার রুমের বেলকনিতে যাই গিয়ে দেখে শুভ বসে আছে আমার দুলনায় ওর হাতে আমার একটা বই..

শুভ: এসব ফালতু বই কেউ পড়ে

একটা উপন্যাস ছিলো

আমি কিছু বলি না, আমি ওখান থেকে ভিতরে চলে আসি তখনই আমার আম্মু ভিতরে আসে

আম্মুঃ কিরে জামাইবাবু কোথায় শুনলাম আসছে

আমি কিছু বলার আগেই শুভ ঘরের ভিতর ঢুকে এসে আম্মুকে সালাম দেয়, আম্মুর সাথে কথা বলে

শুভঃ এখান আন্টি আমার তো অনেক কাজ আছে অফিসের, তাই আমি হচ্ছে থাকতে পারবো না! আমি শিখাকে নিয়ে যেতে চাই, আমার সাথে আপনি কি বলেন..?

আম্মু: কিন্তু বাবা বিয়ের পর তো দুই তিন দিন এখানে থাকে হয়, নিয়ম এটা..

শুভঃ আমি তো আমার বউকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারবো না, তাই আরকি নিতে চলে আসলাম,পরে এসে থাকবে…

আমি এটা শুনে অবাক হয়ে যাই,আম্মুও শরম পেয়ে বলে ঠিক আছে নিয়ে যাও

আম্মু বের হতেই শুভ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকায়
আমি ভয় ঢুক গিলিএ মানুষটাকে আমার খুব ভয় করে, মাত্র দুদিন হলো পরিচয় দুদিনেই সে আমাকে তার ভয়ংকর রুপ দেখিয়ে ফেলেছে

শুভঃ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা বের হচ্ছি এখনই…

আমি: কিন্তু এখন এ সময় এত রাতে আমরা আজকে থেকে গেলে হয় না( কাঁপা গলায় কথাটি বললাম)

শুভ: যেটা বলছি সেটা করো এটা বলে শুভ নিচে চলে গেল…

আমি আবার কাপড় গুছিয়ে নিচে চলে গেলাম নিচে গিয়ে দেখি মা শুভকে খাবার দিচ্ছে , আর শুভ বসে বসে খাচ্ছে

আমি যেতেই মা আমাকে টেনে শুভর পাশে বসায়, এরপর আমাকে খাবার দেয়…
শুভ আমার পুড়ে যাওয়া হাটটা চেপে ধরে আমি ব্যাথায় কুকড়ে উঠি,কিন্তু শুভ হাসছিলো…
আমিও কিছুটা খেয়ে বের হয়ে যাই..

সারা রাস্তায় একটা কথাও বলে না, একটা বড় হোটেলের সামনে গাড়ি থামায়

শুভঃ গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামতে বলে, আমি বাধ্য মেয়ের মতো শুভকে ফলো করতে থাকি, কিন্তু ভিতরে যেতে বুঝতে পারি এটা আসলে একটা ক্লাব, যেখানে ছেলে মেয়েরা বাহারী রঙের পোশাক পরে বসে আছে , অনেকে ড্রিংক করছে অনেকে নাচ করছে

তখনই গতকাল রাতের মেয়েটা এসে শুভকে জড়িয়ে ধরে
ওই মেয়েটার সাথে চলে যায় আর ওর সাথে ডান্স করতে থাকে এমন ভাবে ডান্স করছিল যেন তারা একজন আরেকজনের ভিতরে ঢুকে যাবে

একটা ছেলে এসে আমার পাশে বসে, আর আমাকে ড্রিংক অফার করে আমি অস্বীকার করি, কিন্তু ছেলেটা আমাকে বুঝতে থাকে কিন্তু কিছু বলে না

তখনি আরো কয়েকটা ছেলেরা আসে তারা বিভিন্নভাবে আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছিল আমি বারবার নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেছিলাম
আমি নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে একটা চর বসিয়ে দেই…

ছেলেটা রেগে যায় শুভ তখন তাড়াতাড়ি এসে, আমার দিকে ঘুরে আমার গালে একটা চর বসিয়ে দে। চর খেয়ে আমি সামনে থাকা টেবিলের সাথে বাড়ি খাই সাথে সাথে আমার মাথা ফেটে যায়

আমার চোখ দিয়ে অনবরত তখন পানি পড়ছিল, আমার স্বামী কিনা আমাকে এভাবে এমন করছে…

শুভঃ তোর সাহস কেমনে হয় আমার বন্ধুর গায়ে হাত তোলার, তোকে তো আমি আজকে শেষ করে ফেলবো।এটা বলে আমাকে অনুভূত লাথি মারতে শুরু করে…

তারপর আশেপাশের লোকেরা ওকে থামায়

ওই মেয়েটা শুভকে বলে বেইব প্লিজ ও যদি মরে যায় তাহলে তুমি কিভাবে ওর সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে বলো

শুনে আমি বুঝতে পারি কেন শুভ আমাকে বিয়ে করেছে

শুভঃএসব থার্ড ক্লাস মেয়েদের আমি একদম সহ্য করতে পারি না, না কোন ক্লাস আছে। না কোন কিছু যদি নাই করতে পারি তাহলে গাড়িতে বসে থাকলে পারতো..

শুভর একটা বন্ধু এসে আমার তুলে

ফয়সালঃ দেখ ভাই তুই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস, তুই কিভাবে একটা মেয়ের সাথে এমন করতে পারিস বল আমায়..

শুভ: তোর এত মায়া লাগে ভাই, তুই ওকে নিয়ে যা আমি ওকে আমার সামনে দেখতে চাই না..

ফয়সাল আমাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আমি কান্না করছিলাম

ফয়সাল আমাকে গাড়ীতে বসায়, গাড়িতে বসেই আমি আমার ঘুমটাটা সরিয়ে ফেলি, ফয়সাল আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে..

ফয়সাল: তুমি তো খুব সুন্দর তাহলে কেন শুভ তোমাকে এমন করছে..ও চাঁদ রেখে ঘরে এসব করো বেড়াচ্ছে

আমি কিছু বলি না ফয়সার প্রথমে আমাকে একটি হসপিটালে নিয়ে যায়, এখান থেকে ভালো করে ব্যান্ডেজ করে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে..

শুভর মা আমাকে শুভর রুমে ঘুমোতে বলে, আমি বারবার না করাতেও আমাকে ওখানে রেখেই বের হয়ে যান। আমি ভয়ে ব্যাথায় কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি

মধ্যরাতে কারো ঠান্ডা স্পর্শ অনুভর করি নিজের কোমড়ে, ঘুম থেকে উঠে যাই দেখি শুভ আমার কোমরে মাথা রেখে পরে আছে,…

আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই

শুভ একবার আমার দিকে তাকায়, এরপর আবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে, দেখে বোঝা যাচ্ছে একটুও হুশ নেই শ

আমি একটা বালিশ নিয়ে সাইডে থাকা সোফায় শুয়ে পরি…

…চলবে..

(ভুল হলে হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন)