#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_৪
আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ি
সকালে ঘুম ভাঙ্গে কিন্তু আমার শরীর তখনো ব্যথা করছিল, কোনমতে বিছানা থেকে নিজের শরীরটা উঠায়
ভালো করে তাকিয়ে দেখি শুভ আশেপাশে নেই আমি ওয়াশরুমে চলে যাই, চেঞ্জ করে আস্তে আস্তে নিচে নামি, তখন আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল..
নেমে দেখিয শুভ বসে আছে। ওকে দেখে আমি থমকে যাই, ভালো করে নিজের চেহারা ডাকি আমি
আমি আস্তে আস্তে রান্না গরে চলে যাই, কিন্তু সেখানে ময়না ছিলো না… এদিকে আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল.
তখনই শুভ জোরে আমার নাম ধরে ডাকে, আমি রান্না ঘর থেকে বের হয়ে শুভর সামনে এসে দাড়াই
শুভঃ ময়না আজ কাজে আসবে না, ওকে, আমি ছুটি দিয়েছি, তাই আজ বাড়ির সব কাজ তুমি করবে বাড়ির বউ বলে কথা তাই না( বাঁকা হয়েছে)
আমি থমকে যাই কারণ একে তো আমার শরীরে ব্যথা তারপর আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। এখন আবার আমার যদি বাড়ির কাজ করা লাগে, তাহলে তো আমি মরে যাব
আমি কাপা কাপা গলায় বললাম, আমার খুব খারাপ লাগছে। আজকে বাহির থেকে খাবার অর্ডার করলে হয় না
শুভ উঠে দাঁড়ায় আমি কিছুটা পিছিয়ে যাই, আমার শরীর প্রচুর কাঁপছিল
শুভ কিছুটা সামনে চলে যায় তারপর বলে কাজ তো তোমাকেই করতে হবে, কোন খাবার বাহির থেকে বাড়িতে আসবে না। আর আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে তাই সুন্দর করে আমার জন্য রান্না করো..
আর হ্যাঁ আমার গার্লফ্রেন্ড আসবে তোর জন্য কিছু রান্না করবে ঠিক আছে এটা বললে শুভ উপরে চলে যায়
আমিও যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমার চোখ থেকে পানি পড়ছিলো , এত ব্যথা নিয়ে আমি কিভাবে রান্না করবো তাই ভাবছিলাম
আমি রান্না ঘরে গিয়ে কোন মত রান্না করি। কিছুক্ষণের ভিতরেই শুভর গার্লফ্রেন্ড চলে আসে,
শুভ তার গার্লফ্রেন্ড কে নেমে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। আমি দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এটা কোন চিড়িয়াখানা থেকে চলে এসেছে..ওরে ছারেই কেন এসব প্রানীকে বেধে রাখা উচিত..
সব সময় কিভাবে কেউ এত শর্ট ড্রেস পড়ে থাকতে পারে, তাও এত শীতে।মেকআপ করতেই হয় এই মেয়ের মনে হয় নিজের চেহারা নিজে ভুলে গেছে এতদিনে
লায়লাঃআমার খুব ক্ষুদা লাগছে বেবি, শুভকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকামো করে কথা বললো
শুভ আমার দিকে না তাকিয়ে বলো তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসো, আমার বেবিটার হ্মুধা লাগছে
আমিঃ বেবি হলে ফিডার নিয়ে আসি, না দুধ গরম করে নিয়ে আসব (মনে মনে)
আমি সব খাবার গুছাচ্ছিলাম আর নিজের সাথে নিজেই বকবক করেছিলাম,আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা ভেঙ্গাচ্ছিলাম লায়লার
পিছন থেকে শুভর আওয়াজ শুনি, শুনে আমি কেঁপে উঠি
শুভ কিছু বলেন না শুধু পানি নিয়ে চলে যায় আমিও একটা ডুক গিলি
এরপর খাবার নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে দেই, আর লায়লার কাহিনী দেখি এরা একজন আরেকজনকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছিল।
আমার ভিতরটা মুচরে উঠছিল আমার স্বামী আমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে এসব কেন করছে সেটাই খুজে পাচ্ছিলাম না,কোন মেয়ের জীবনে এমন না হোক..
আমি তো আর তাকে জোর করে বিয়ে করিনি সে তো নিজের ইচ্ছাতেই আমাকে বিয়ে করেছিল। যদি পছন্দ নাই হতাম তাহলে তো আগেই না বলে দিতে পারতো
কি অদ্ভুত আজ বিয়ের এতদিন হতে চলল অথচ আমার স্বামী আমার চেহারায় দেখেনি,
তখনই শুভ আমার দিকে তাকায় আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি
শুভঃ দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো, আসো আমাদের সাথে খাবার খাও
আমি শুভর এত ভালো ব্যবহার দেখি শকড হয়ে যাই
শুভঃআরে বস খাবার তো তুমিই রান্না করেছো… আসো বসো..
আমি চুপচাপ বসে খাবার নিতে শুরু করি, ঠিক তখনই শুভ এক জগ পানি আমার খাবার প্লেটে ঢেলে দেয়
শুভঃ আমার সোনা বেবি ক্ষুধা লেগেছে (হাসতে হাসতে)
আমি শুভর দিকে তাকাতেই শুভ আমার মুখে পানি ছুড়ে মারে আমি তাড়াতাড়ি আমার মুখে হাত দেই আমি নিজেও চাই না শুভ আমাকে একটু দেখুক
লায়লাঃ শুভ বিবি তুমি কবে এই মেয়েকে ছাড়বে সেটা বলো..? আমার ভালো লাগছে না
শুভ :এইতো খুব তাড়াতাড়ি… কিছুদিন তো যাক
চলে যেতে থাকি এখানে বসে থাকলে প্রতিটা সেকেন্ড মরতে হবে আমার
উপরে কোন মত যাই, আমি তারপর নিজের আলাদা রুমটায় গিয়ে কান্না করছিলাম আস্তে আস্তে আমার ব্যথা যেন আরো বেড়ে যায়
আমার প্রচুর হ্মুধাও লেগেছিল তখন
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি, আমার শাশুড়ি মার ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে
আমার আরো কষ্ট হচ্ছিল যখন দেখতে পেলাম তার হাতে খাবারের প্লেট
আমি আমার শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম
আমার শাশুড়ি আমার মাথা ভুলিয়ে দিচ্ছিল। এরপর আমাকে খাবার খেতে বল আমি চুপচাপ খাবার খেয়ে নেই
শাশুড়িঃ আমি ভাবছিলাম তোমাকে বিয়ের পর, আমার ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু না ও তোমাকে বাঁচতেই দিতেছে না
আমিঃ আপনারা সব কিছু জেনেও কিভাবে আমাকে এরকম একটা মানুষের সাথে বিয়ে দিতে পারলেন..?
আমি যদি আপনার মেয়ে হতাম আপনি এমন করতে পারতেন??
শাশুড়ি মা কিছু না বলে চুপচাপ উঠে চলে যায়
এসব অত্যাচার সহ্য করতে করতে আরো অনেক দিন চলে যায়
বিয়ের পর দুই মাস হতে চলল
একদিন আমার বাবা মা আমাকে দেখতে আসে আমি আমার মাকে জড়িয়ে ধরি এতদিন পরে মাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম
আমার বাবা আমার দিকে তাকায়, অবাক হয়ে যায়
আব্বুহ এ কি অবস্থা তোর শরীরের, এমন শুকিয়ে গেছে কেন মুখ, কেমন হয়ে গেছে চোখের নিচে দাগ পড়ে গেছে ঠিকমতো খাবার খাস না
আব্বুর এমন কথা শুনে আমি মা দুজনেই অবাক হয়ে তাকাই
প্রথম আমার আব্বু আমার দিকে খেয়াল করেছেন এত বছর জীবনের পার করেছি কখনো আমার বাবা আমাকে কিছু বলেনি আজ প্রথম বললো
তখনই শুভর বাবা আসে
শুভর বাবাঃ আরে বেয়াই সাব আসেন আসেন বসেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তো আসতেই ভুলে গেছেন এ বাড়ী..
আব্বু: হ্যাঁ এখন মনে হচ্ছে আরো আগে আসার দরকার ছিলো..
আমার আব্বু আর শুভ বাবা একসাথে বসে মা শাশুড়ি মা ও বসেন। আমি তাদের জন্য পানি আনতে ভিতরে চলে যাই
আব্বুঃ আমি ভেবেছিলাম আমার মেয়ে এ বাসায় এসে অনেক সুখে থাকবে। কিন্তু এমন লাগছে আমার মেয়ে এখানে আর কিছুদিন থাকলে মরেই যাবে..
আমি পানি আব্বু আম্মুকে দিলাম আর আব্বুকে বললাম এমন কিছুই না আমি অনেক ভালো আছি
আব্বুঃ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আমি কিছুদিনের জন্য আমার মেয়েকে বাসায় নিয়ে যেতে চাই
শাশুড়িঃ হ্যাঁ অবশ্যই আপনার মেয়ে নিয়ে যান আপনি, গিয়ে ঘুরে আসুক শিখারও ভালো লাগবে
আমি চুপচাপ তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়
আব্বু আম্মু দুপুরের লাঞ্চ করে, তারপর আমাকে নিয়ে বের হয়, অনেকদিন পর খোলা আকাশের নিচে বের হয়েছি, গাড়ীর জানলা খুলে বাতাস অনুভব করছিলাম
আব্বু ড্রাইভিং এর ফাঁকে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিল এরপর একটি মেডিকেল সপে চলে যায়..
আমাকে দেখিয়ে মেডিসিন নিয়ে তারপর বাসায় যায়
আমি আমার বাবার এত কেয়ার দেখে অবাক ছিলাম,
খুব ভালোই লাগছিল
আমি মনে মনে ভাবছিলাম শুভকে খুঁজে ওকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে আসি,ওর জন্য আজ জানলাম আমার বাবাও আমার কেয়ার করে..
বাসায় যেতেই কেমন জানি একটা শান্তি উপভোগ করছিলাম নিজের রুমে চলে গেলাম, গিয়ে সবকিছু ঘুরে ঘুরে হাতিয়ে দেখছিলাম
কিছুক্ষণ পরেই আওয়াজ আসে বাড়ির কাজের মেয়ে সখিনার
এসে বলল আপা আপনার জামাই আইছে
নিমিষেই ভিতরের আনন্দটা শেষ হয়ে যায়
নামতেই জানতে পারলাম বাবা অফিসে চলে গেছে আর মা ও শপিংয়ে যাবে তাই শুভকে এখানে আসতে বলেছে
আমি একা দীর্ঘশ্বাস ফেলি যার জন্য আমার এই অবস্থা। আমি আম্মু তাকেই আমার জন্য রেখে যাচ্ছে
শুভঃআপনি চিন্তা করবেন না, আমি কাজের চাপে এতদিন খেয়াল করিনি, কিন্তু আজ থেকে আমি আপনার মেয়ের খুব যত্ন করব
আমি শুভর মাথা ভুলিয়ে ড্রাইবারকল গাড়ি বের করতে বলে চলে যায়
শুভ আমার দিকে তাকাতেই আমি তাড়াতাড়ি আমার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দে
শুভ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়, দরজায় আস্তে টুকা দিতে দিতে আমায় ডাক দিতে থাকে
শুভঃ দেখো দরজা খোলো তুমিও চাবা না যে আমি তোমার বাবা-মার সামনে, তোমার বাসায়, তোমার সাথে কিছু করি
আমি চুপচাপ দরজা খুলি শুভ ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়, আমি ভয়ে ডুক গিলি..
শুভ আমার খাটের উপর গিয়ে বসে, এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে নারাচ্ছিলো
শুভঃ আমার পা টা খুব ব্যথা করছে আমার দিকে তাকিয়ে
আমার বুঝতে বাকি রইলো না আমি ওর পা টিপি এটাই বুঝাতে চাচ্ছে, আমি চুপচাপ ওর পায়ের কাছে যাই এরপর ওর পা টিপতে শুরু করে
শুভ ফোন চালাচ্ছিলো আর আমি ওর পা টিপছিলাম, হঠাৎ শুভ পা দিয়ে জুড়ে আমায় একটা লাথি মারে…
আমি এক ছিটকায় দূরে গিয়ে পড়ি এরপর শুভ আমাকে টেনে গোসল খানার ভিতরে নিয়ে যায়, আর সেখানে আমার কাত করে ফেলে, আমার হাত বেধে কল ছেড়ে বেরিয়ে আসে
প্রচুর শীতে ঠান্ডা পানি শরীরে পড়ছিল আর আমি কেপে উঠছিলাম..
…চলবে…?
(কোন ভুল হলে হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন)