প্রতিশোধ পর্ব-০৬

0
150

#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_৬

আমি খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিলাম, আর ব্লাশ করছিলাম। একটু পরেই শুভ আসে, আমি তাড়াতাড়ি আমার মুখ ঢাকি..

শুভ এসে আমার পাশে বসে, আর আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে আজকে তুমি এটা পড়বে..

আমি হাতে নেই

শুভঃ যাও পড়ে আসো, আজকে আমরা ঘুরতে বের হবো..

সবকিছু স্বপ্নের মতই লাগছিলো।আসলেই কি শুভ বদলে গেছে এক রাতের ভিতরে…

আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে রুমে চলে যাই..

ব্যাগ ভালো করে দেখি, এখানে একটা শাড়ি আছে সাথে কিছু জুয়েলারি। খুব ভালো লাগছিল এই প্রথম নিজের স্বামীর কাছ থেকে এত সুন্দর একটা গিফট পেয়েছি, নিজেকে হঠাৎ করেই ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিল

শাড়ি পরে কতক্ষন আয়নার সামনে নিজেকে দেখছি আজকে হঠাৎ নিজেকে খুব বড় মনে হচ্ছে..

তারপর ভাবতে থাকি কিভাবে মুখ ঢাকা যায়, আচল দিয়ে ছোট্ট একটা ঘোমটা দিয়ে নিচে নামি

ও আমার নামার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমি আস্তে করে শুভর সামনে যাই, শুভ আমার সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল

শুভ আসতে করে আমার আঁচলটা উঠায়, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি

শুভঃ আমি নিজের অজান্তে এত সুন্দর একটা ফুলকে এতো আঘাত করেছি, আমায় ক্ষমা করে দাও..

আমি সাথে সাথে চোখ খুলি, কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না..

শুভ:আমি জানি আমাকে মাফ করা এত সহজ না, কিন্তু আমি সবকিছু করবো তোমার জন্য…

কিছু বলি না যত যাই হোক এই কয়দিন আমার উপর প্রচুর অত্যাচার চলেছে এত সহজে কি সব ভুলতে পারবো?

শুভ আমার এক হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়, এরপর গাড়িতে বসায়..

শুভ গাড়ী স্টার্ট করে,আমি শুধু ভাবছিলাম আগের মতোই যদি জুড়ে চালায়,কিন্তু এমন কিছুই হয় না শুভ আরাম করে গাড়ি চালায় আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম

শুভ হঠাৎ করে গাড়ি থামায়, আমার জানালার পাশে একটা পিচ্ছি এসে দাঁড়ায়। আমি গাড়ির জানালা নামায় দিতেই আমাকে অনেকগুলো গোলাপ ফুল দেয়, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি

পিচ্ছিকে সব ফিরিয়ে দিতে থাকি তখন শুভ বলে এগুলো তোমার জন্য..

আবার শুভর দিকে তাকাই এসব কি হচ্ছে আমার সাথে

শুভ আবার গাড়ি চালায় আমি চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি, কিছু বুঝতে পারছিলাম না হচ্ছেটা কি? এগুলো ওর আরেকটা রূপ যেটা আমি দেখতে পাচ্ছি..
নাকি নতুন কোন প্লেন

আমি শুভর কথা ভাবছিলাম যে সত্যি কি শুভ পরিবর্তন হয়ে গেছে

শুভঃ আজকের সকালে যখন তোমায় আমি প্রথম দেখি, তখনই বুঝতে পারি আমি কত বড় ভুল করেছি। এত সুন্দর এত মায়াবী তুমি যার জন্য আমি লায়লার মত হাজারটা মেয়েকে কোরবান করে দিতে পারবো (মনে মনে)

শুভ আবার থামায় ,এত নির্জন জায়গায় থামতেই আমি ভয় পেয়ে যাই, আশেপাশে কোন মানুষ ছিল না, আমি ভাবতেছিলাম আমাকে না জানি এখানে মেরে চাপা দিয়ে যায়

শুভ তাড়াতাড়ি নেমে আমার গাড়ির দরজা খুলে, ভয়ে ভয়ে নিচে নামি..

আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে যেতে থাকে আমার প্রচুর ভয় করছিল তখন…

কিছুটা যেতেই আমি সেখানে একটি নদী দেখতে পাই আমার ভয় আরো বেড়ে যায়, আমি ভয়ে ঢুক গিলি

ও আমাকে নিয়ে যায় নদীর কাছে, সেখানে একটা নৌকা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো আছে। শুভ আমাকে নৌকায় তুলে আমি বুঝতে পারছিলাম না, আমার শুভকে কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল..

নৌকাতে আরো একটি লোক ছিল হয়তো সে মাঝী, কিন্তু তাকে শুভ অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে

নৌকা চালানো শুরু হয় আর আমার ভয় আরো বেড়ে যায়, নৌকা যত গভীরে যাচ্ছিলো আমার ভয়ও বেড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কিছুদূর যেতেই আমি অবাক হয়ে যাই, আমার সামনে সুন্দর করে একটি জলকুটির সাজানো হয়েছে।
এমন লাগছিল যেন বউ সাজানো হয়েছে…

শুভ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়…

সুন্দর করে ব্রিজ দাওয়া জলকুটির পর্যন্ত, পুরো ব্রিজ ফুল দিয়ে সাজানো। আমি আস্তে আস্তে সামনে আগায় শুভ সামনে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আমার খুব ভালো লাগছিল কেন জানি..

আমায় চেয়ারে বসায় এরপর খাবার অর্ডার দেয়, আমরা খাবার খাই, শুভ অনেক কথাই বলছিলো আমার খুব ভালো লাগছে ওর সাথে সময় কাটাতে..
এদিকে রাত ও হয়ে গেছে

হঠাৎ করে শুভ আমার কাছে এসে আমার চোখ ধরে, আমাকে এক পাশে নিয়ে যায় আর আমার চোখ খুলে…

আকাশে বাহারী রঙের বাজ্জী জ্বলমল করছিলো, আমার খুব ভালো লাগছিল হঠাৎ করে ভালো করে দেখলাম বাজ্জির মাধ্যমে সরি শিখা লেখেছে..

এরপর আমি শুভর দিকে তাকাই, শুভ হাঁটু গেড়ে বসে আছে তাও কান ধরে..

আমি একটা মুচকি হাসি দেই, এরপর শুভ উঠে দাঁড়ায় আর আমার কপালে একটা চুমু খায়..

ঠিক তখনই শুভর ফোনে কল আসে, শুভ ফোন রিসিভ করে একটু দূরে সরে যায়, আমি দাঁড়িয়ে চারপাশে উপভোগ করছিলাম রাত যেন আরো সুন্দর করে দিয়েছে আশেপাশের যায়গাটা

হঠাৎ করে শুভ এসে আমার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমি কিছুটা কেঁপে ওঠি.

শুভ: শোন ডেড কল করেছে,তারা নাকি বাসায় আসছে আমাদের বাসায় যেতে হবে…
আর তুমি আমার সাথে যাবে তোমার বাসায় আমি কল করে দিবো..

শুভ আমাকে নিজের দিকে করে আমার হাত ধরে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর বলে প্রমিস আমি আর কখনো তোমাকে আঘাত করব না, আর কাউকে আঘাত করতেও দেবো না। অন্য কেউ যদি তোমাকে আঘাত করার চেষ্টা করে আমি তাকে শেষ করে দেবো..

আমি জানি আমাকে মাফ করা এতটা সহজ না কিন্তু তুমি আমার পাশে থাকো আমি ভালো হয়ে দেখাবো..

_______________

আমরা বাসায় পৌঁছে যাই, শুভ গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে। আমার হাত ধরে শুভ বাসার ভিতর ঢুকে, বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।
এই প্রথম আমাদের এমনভাবে দেখেছে..

শুভর মাঃ ও হো এটা কি দেখছি, আমার ছেলে দেখি ভালো হয়ে গেছে

শুভ হাত ছেড়ে দেয়,আমি উপরে রুমে চলে যাই শরমে..

ওপর দিকে

লায়লাঃ বস শুভ আজকে শিখাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল, এমনকি আমার ফোনও কেটে দিয়েছে, আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে…

অচেনা লোকটা সামনের টেবিলটার উপরে থাকা জিনিসগুলো ফেলে দেয়,
লায়লাল গলা চেপে ধরে রাগে

লায়লাঃ বস আমাকে ছেড়ে দেন আমি শুভকে আবার নিজের জালে ফাসানোর চেষ্টা করব প্লিজ বস(কাপা গলায়)

…চলবে…?