#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_৮
শুভর সাথে কথা বলতে বলতে অনেক সময় কেটে গেল…
দুপুরে লাঞ্চ করতে সময় জানতে পারলাম।আমার শাশুড়ি মা বাসায় নেই, খাবার খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এ কেমন অদ্ভুত বাসা যেখানে বাড়ির লোক থাকেই না সহজে…
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ঠিক তখন আমার শাশুড়ি বাসায় আসে। আমি শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় ছিলেন সারাদিন..?
শ্বাশুড়িঃ একটু বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম..
এটা বলল নিজের রুমে চলে যায়, আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি এই বুড়ো বয়সে আবার বান্ধবীর বাসায় এত সময় কাটাতে হয় কয়দিন পরপরই…?
রাত অনেক হয়ে গেছে সেই সকালে শুভর সাথে কথা হয়েছিল, এর মধ্যে শুভ আর কল করেনি আমি কল করেছিলাম কিন্তু শুভ রিসিভ করেনি কল ব্যাক ও করেনি..
ঘড়ির কাঁটায় বারোটার বেশি বাজে, ঠিক তখনই আবার গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম, গতকাল রাতের মত আজকেও আমার শশুর একজন লোককে নিয়ে আসছে কিন্তু কালকের লোকটা আর আজকে লোকটা একজন না..
আমি আজকে আর রুম থেকে বের হলাম না রুমে বসেছিলাম, বসে বসে ভাবছিলাম বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে কিন্তু আমি আমার শ্বশুরবাড়ির কোন আত্মীয়স্বজনকে দেখিনি, না আমার শ্বশুর শাশুড়ি কোন বন্ধু-বান্ধব আমাদের বাসায় এসেছে…
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ি , হঠাৎ কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়
তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বাহিরে যেতে নেব, ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম আমার রুমের দরজা বাহির থেকে লাগানো, আমি দরজায় বারবার আঘাত করতে থাকলাম কিন্তু কেউ দরজা খুলছিলো না, আমি ময়না ময়না করে ডাকলাম তারপরেও কেউ দরজা খোলো না, শাশুড়ি মাকে ডাকলাম আমার খুব ভয় করছিল হঠাৎ কি হলো..?
আমি ফোন হাতে নিয়ে শুভতে কল করলাম সাথে সাথে কল রিসিভ করলো..
শুভ: সরি বউ আমি আজ অনেক বিজি ছিলাম, তাই তোমার কল ব্যাক করতে পারিনি, তুমি এখনো ঘুমাওনি আমাকে মিস করছো নাকি? ঘুম পাড়িয়ে দেবো আমি?,
আমি কাপা কাপা গলায় শুভকে বললাম বাসায় জানি কি হয়েছে,কে জানি চিৎকার দিয়েছে, বাহির থেকে আমার রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে, আমি কথাগুলো বুঝিয়ে বলতে পারছিলাম না এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম..
শুভ: তুমি শান্ত হও হয়তো তুমি কোন স্বপ্ন দেখেছো?
আমি কান্না করছিলাম ভয়ে, বারবার বলছিলাম আমার খুব ভয় করছে
শুভঃ আমি কালকে সকালে আসছি, তুমি এখন চুপচাপ শুয়ে ঘুমাও..
আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ শুয়ে পড়লাম সকালে আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই শুভ বাসায় এসে পৌছায়…
ও আমাকে সারা বাড়ি ঘুরে দেখালো, যে কোথাও কোন কিছু হয়েছে কিনা? আর জানালো দরজা জ্যাম হয়ে গেছিল তার জন্য দরজা খুলে নি রাতে..
আর বাসার কেউ নাকি আমার ডাকও শুনে নি..
আমিঃ তাহলে আমি শুনলাম ওটা কিসের আওয়াজ ছিল??
শুভ: হয়তো ঘুমিয়ে স্বপ্নে কিছু দেখেছো..? এমন হয়তো মাঝে মাঝে স্বপ্নই সত্যি লাগে..
আমি আর কিছু বললাম না, আর বাসার লোকও আমাকে বারবার বোঝালে এমন কিছুই হয়নি, কেউ চিৎকার করেনি আমার ভুল ছিল
শাশুড়িঃ আমি বলি কি তুই আর শিখা কিছুদিন কোথাও থেকে ঘুরে আস,শিখাও ভালো অনুভব করবে..
শুভ: হ্যাঁ আমি ওটাই ভাবছি কিছুদিন ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসি..
শশুর: হ্যাঁ তাহলে তোমরা বিকালে বের হয়ে যাও
বিকালের দিকে আমি আর শুভ রওনা দেই, আমরা চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম, সেখানে নাকি শুভর একটা বাসা আছে…
রাতে খাবার খাওয়ার জন্য আমরা একটা হোটেলে থামি
হোটেলের কিছু অংশ বাহিরে ছিলো, আমি আর শুভ সেখানেই বসলাম, খোলা আকাশের নিচে খাওয়ার আনন্দই অন্যরকম…
হঠাৎ করে একটা অল্প বয়স্ক মহিলা এসে শুভর কলার চেপে ধরে, আমি আর শুভ দু,জন অবাক হয়ে যাই আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু মহিলা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়..
আর বলতে থাকে আমার মেয়ে কোথায়? কি করছত আমার মেয়ের সাথে বল? চিৎকার করে কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছিল..
আমার পরে যাওয়া দেখে শুভ মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আমাকে তুলে..
শুভঃ কে আপনি আর কি আবোল তাবোল বলছেন পাগল নাকি আপনি?
তখনই কিছু লোক এসে মহিলাকে ধরে, আর বলে সে পাগল, মহিলার মেয়ে নাকি মারা গেছে তারপর থেকে মহিলার এই অবস্থা..
কোন ছেলে দেখলেই মহিলা তার সাথে এমন করে..
আমি অবাক হয়ে সবকিছু দেখছিলাম, শুভ আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসে।আর রওনা দেয় সেখান থেকে, আমরা কিছু না খেয়েই বের হয়েছি..
আমি চুপচাপ ছিলাম কিছু বলছিলাম না, তখন শুভ একহাতে আমার হাত ধরে..
শুভঃ কি হয়েছে কি ভাবছো?
আমি: ওই মহিলার কথা ভাবছিলাম? মহিলাটা কত কষ্টই না পেয়েছে? তার মেয়েকে হারিয়েছে আর এখন..
শুভ: হয়েছে এসব আজেবাজে চিন্তা বাদ দাও, তোমার তার কথা ভাবতে হবে না? তুমি এটা ভাবো বিয়ের পর আমরা ১ম কোথাও যাচ্ছি তাহলে তো এটা আমাদের হানিমুন তাই না..
শুভর কথা শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে যাই, আমি কিছুক্ষণের জন্য একদম জমে যাই, একটা মানুষ কিভাবে এত বেহায়া হতে পারে, এমন করে কেউ বলে নাকি..?
আমিতো তাকাতেই পারছি না ওর দিকে..
শুভঃ হয়েছে? এত শরম পেলে আমার আর সহ্য হবে না,গাড়ী থামিয়ে তোমাকে আদর করা শুরু করবো..
আমি শুভর মুখ চেপে ধরি, শুভ আমাকে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে যায় আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে একদম..
শুভঃ তুমি আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি যা আমি কখনো ভুলতে চাই না..
…চলবে..?
(কোন ভুল হলে হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন)