প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-১১+১২

0
198

প্রমত্ত অঙ্গনা
(১১)

আঁখি বাড়ি চলে গেল,চোখের জল আর বইতে দিলো না,য*ন্ত্র**না*কে গায়ে মাখিয়ে নিলো,নিজ কক্ষের কাভার্ড থেকে আদৃতকে নিয়ে লিখা ডায়েরিটাও স্টোররুমে নিয়ে গেলো নিজ হাতে,ওখানের একটা থাক এর উপর ডায়েরিটা রেখে দিলো খুব যত্ন সহকারে,অল্পক্ষণ ডায়েরিটার উপর দৃষ্টি স্থীর রেখে বলল।

আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি ড.আদৃত,আপনি জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর নিজেকে গোছাতে অনেক সময় লেগেছে আমার,অনেক শ্রুম দিতে হয়েছে আমায় সে প্রচেষ্ঠায়,এতটাই ভে*ঙে পরেছিলাম যে নিজের প্রাণ ত্যাগ করার চিন্তা করতেও দ্বিধা বোধ করি নি,হ্যাঁ সেদিন ম*র*তে বসেছিলাম আমি তবে আদ্রিশ হয়ত নিজে ভে*ঙে চু*র*মা*র করবে বলে বাঁচিয়ে নিয়েছিল,আপনাকে ছাড়া কখনোই দ্বিতীয় জনের চিন্তা আমি করি নি আর না চেয়েছি তা করতে,আদ্রিশ তো মাতোহারা ছিল আমার প্রেমে,আমার নামে পা*গ*ল,বন্ধু হিসেবে ছায়ার মতো পাশে ছিল আমার সর্বক্ষণ, ভালো লাগত তাকে কিন্তু কখনও ভালোবাসার অনুভুতি আসে নি তাকে নি,ও তো ভালোবাসতে বাধ্য করেছিল আমায়,আমি তাকে ফিরিয়ে দিলে সে আমার প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছে, তখন ওর মধ্যে আমি নিজেকে দেখেছি,নিজের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পেরেছি,ও আমাকে এতো বড় যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম করেছিল তাই আমি পারি নি সেই একই যন্ত্রণা ওকে ফিরিয়ে দিতে,জীবন তো আর থমকে থাকে না,ওর পাশে গেলে আমার মনের যন্ত্রণা অনেকটা কম থাকত,তাই নিজের যন্ত্রণা ভোলা আর তাকে সেই ক*ষ্টে*র বেড়াজালে পরতে না দেওয়ার প্রচেষ্ঠায় আমি এগিয়ে যাই জীবনে,ভেবেছিলাম আর কখনও কাউকে ভালোবাসব না,কাউকে জীবনে জরাবো না,ভাবনার বিরুদ্ধে গিয়ে জীবনে ভালোবাসার ফুল দ্বিতীয়বারও ফোটলো আমার।আদ্রিশের প্রতিদান দিতে গিয়ে নিজেকে দ্বিতীয় সুযোগ দিলাম আমি,ওর সাথে থাকতে গিয়ে,মন কে ওর সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে ভালোবাসার বেড়াজালে আবদ্ধ হলাম আবারও,মন ভাঙার কষ্ট দ্বিতীয়বার সহ্য করার ভয়ে ওর প্রেমে সব ত্যাগ স্বীকার করলাম,ওর হাত ধরে চলে আসলাম বহুদূর, তবে নিয়তি যে ঘুরিয়ে এনে সেই পী*ড়া*টা*ই আমাকে ফিরিয়ে দিল।কেন ছেড়ে চলে গেলেন আমায়?আজ আপনি থাকলে হয়ত এতো কিছু হতো না আমার সাথে,অনুভুতির মারপ্যাঁচে এভাবে গুলিয়ে যেতাম না আমি,কখনোই আদ্রিশ আসতো না আমার জীবনে,আর আমার এই পরিণতি মোটেও হতো না এরকম।

কথাগুলো বলে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ত্যাগ করল আঁখি,চোখের অবাধ্য জল মুছে বলল আবার।

ছয় বছর পর আপনাকে এভাবে আবারও দেখতে পাবো ভাবি নি,তবে সত্যি বলতে কি জানেন?আপনাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি আর আদ্রিশকে ছাড়াও এখন বাঁচতে শিখে নিতে হবে,এ জীবনে আর কখনও কাউকে জড়িয়ে নিব না,আপনারা ভালো থাকেন দূর থেকেই চাইব।

অতঃপর পুরনো সকল তিক্ত স্মৃতির ভার স্টোররুমের ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালা দিল আঁখি,নিজ কক্ষের দিকে যেতে নিলে এক কাজের লোক এসে বলল।

″ম্যাম আদ্রিশ নামের কেউ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন, আপনার সাথে দেখা করতে চান উনি।″

″ওকে বলো চলে যেতে আমি দেখা করতে চাই না ওর সাথে।গার্ডদের বলে দাও ও যাতে কোনোরুপ বাড়িতে ঢুকতে না পারে।″

কথাটা বলে আঁখি কক্ষে চলে এলো। আঁখির এতো পাশে এসেও তাকে এক পলক দেখতে পাওয়া ভাগ্যে জুটাতে পারল না আদ্রিশ,কাজের লোকের কথা অনুযায়ী গার্ডেরা তাকে বাড়িতে ঢুকতেই দিল না আদ্রিশের অনেক জোরাজুরির পরেও,রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আঁখির বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, কোথাও দিয়ে যদি আঁখির একটা জলক দেখতে পায়,বাড়ির বাইরে আদ্রিশ দাঁড়িয়ে আছে,আজ দু’দিন ধরে তাকে দেখে চোখ জোরায় না আঁখি,বুকটা কেমন আনচান করে,নিজের চোখগুলো যেন অবাধ্য হয়ে চায় এবার।হুট করেই তো কাউকে মন থেকে মুছে ফেলা যায় না সে যতোই ক্ষ*ত দিয়ে থাকুক না কেন!তাই মনের অল্প শান্তনার সন্ধানে বারান্দার একপাশে গিয়ে দাড়িয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আঁখি যদি আদ্রিশের অগোচরে হলেও তাকে একনজর দেখার সুযোগ পায়।

আশটা নিয়ে বাহিরে তাকালে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল তার মন জুরে বসবাস করা সেই বি*শ্বা*স*ঘা*ত*ক পুরুষকে,বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করতে পারছে আঁখি,চোখ দিয়ে আবারও জল নেমেছে,অপেক্ষার অবসান ঘটে গেল আদ্রিশেরও,মনের সেই অসীম আকাঙ্খা এক নিমিষেই পুরণ হয়ে গেল,ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির জলক ফুটে উঠল,তার হৃদহরণী–তার ফুলপরিকে সে অবশেষে দেখতে পেলো।আদ্রিশের সাথে চোখাচোখি হতেই সেখান থেকে পালিয়ে গেল আঁখি,নিরাশতা ছেঁয়ে গেল আদ্রিশের মনে,মুখের হাসিটা পলকেই উদাও হলো।দৃঢ় বিশ্বাসের সহিত বলল।

আমি জানি আঁখি,তুমি আমাকে ভালোবাসো,তার পরিধি কতোটুকু তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কারো নেই,আমি জানি তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না,তোমাকে আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে।আর তুমি আসবেই।

অনুভুতির তলে দমে পরে কাঁদছে আঁখি,আদ্রিশের সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো আবারও চোখের সামনে আনাগোনা করতে শুরু হয়েছে,কান্নায় ভেঙে পরে বেশ চিৎকার করেই বলছে।

কেন আদ্রিশ কেন?কেন এমনটা করলে?
কেন? কেন এই জীবনে আসলে?আর কোন এভাবে ছেড়ে চলে গেলে?আমি তো তোমাকে জীবনে চাই নি,নিজে থেকে কেন আসলে আমায় আশ্রয় দিতে? আর কেন নিজে থেকেই আমার জায়গায় অপরকে বসিয়ে দিলে?এটাই কি ভালোবাসা ছিল তোমার আমার প্রতি?একসাথে কি দু’জনকে আদোও ভালোবাসা যায়?ওপরকেই যখন নিয়ে এলে তবে কেন এখন আমার পিছন পরে আছো?কিভাবে আশা করো, আমি তোমার পাশে অন্য কাউকে মেনে নিব!তা মেনে নিতে পারা কি খুব সহজ?অসাধ্য কিছু নয়?না আদ্রিশ তোমার পাশে কখনও কাউকে মেনে নিতে পারব না আমি,এতে তোমাকেও ছাড়তে দ্বিধা নেই আমার,যার শরীরে অন্য নারীর ছোঁয়া সে আর যাই হোক আমার হতে পারে না।

মধ্যরাতে ড্রি*ংক করে বাড়ি ফিরেছে কলি,হেলদোল খেয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে,ভাড়া এই বাড়িতে একা থাকে কলি,আজকে অতি খুশিতেই ড্রি*ংক করেছে সে,কারণ আগামীকাল সকালেই আঁখি আদ্রিশের উপর থেকে তার অপমানের শোধ তুলবে তাদের ব্যক্তিগত খবর ফাঁস করে,অতিরিক্ত খুশিতে মনের সুখে বিছানায় এসে ঢলে পরেছ শান্তির এক ঘুম দিবে বলে,এদিকে ঘরের বাতি বন্ধ করতে ভুলে গেছে সে,ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় উঠে আসে বাতি বন্ধ করার সুবিধার্থে কিন্তু সুইচে হাত দেওয়ার পূর্বেই পুরো ঘরে অন্ধকার ছেঁয়ে যায়,বিদ্যুৎ চলে গেছে ভাবে কলি,তখনি কক্ষে কারো উপস্থিতি টের পায় সে,বেশ ঘাবড়ে গিয়ে ফোনের টর্চ জ্বালতেই পিছন থেকে মাথায় ভারী কিছুর আঘাত পায় সে,মুখ থু*ব*ড়ে পরে ফ্লোরে,মাথায় হাত দিয়ে কোনোরুপ পাক ফিরে দেখার প্রচেষ্টা করতে লাগল সেই ঘা*ত**কারী ব্যক্তিকে,ফোনটা হাত থেকে ছিটকে পাশেই পরে গিয়েছিল তার,টর্চের আলোয় রুমটা অল্প প্রজলিত হলো,সেই আলোয় সে স্পষ্ট দেখতে পেলো কালো হুডি পরিহিত কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে, মুখে কালো মাস্ক উপর থেকে অন্ধকার কম নয় তাই তাকে একদমই চিনতে পারছে না কলি,কালো হাতমোজায় আবৃত হাতে ধা*রা*লো একটা ছু*রি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কলির মনে বড্ড ভ*য় জোগান দিল,মৃ*ত্যু ভয়ে বুকের কম্পনের গতি বেড়ে গেল, কাঁপতে থাকা অধরে জিজ্ঞেস করল।

″কে তুমি?আমাকে কেন মা*র*ছো?″

″প্রমত্ত অঙ্গনা,তোর মৃ*ত্যু।″

″প্লিজ আমাকে মে*রো না,আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?″

″জবাবদিহি করা আমার পছন্দ না।″

কলিকে আর কিছু করার বা বলার সুযোগ না দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে টান দিয়ে ছু*রি চালিয়ে দিল সেই অঙ্গাত ব্যক্তি কলির গলা বরাবর।মৃ*ত্যু যন্ত্রণায় মোচড়াতে শুরু করল কলি।

ভেজা নয়নে রাতের আঁধারের ঘনত্ব নাপছে আদৃত,আজকের রাতে যে চাঁদটাও লুকিয়ে গেছে মেঘাতলে,তারারাও যেন আজ দেখা দিবে না পণ করেছে,খুটখুটে অন্ধকার এক রাত,ঠিক যেন আদৃতের জীবনেরই বাস্তবতা,চাঁদ ব্যতীত রাত যেমন ঘন অন্ধকার এক দুঃস্বপ্ন আঁখি ব্যতীত আদৃতের জীবনও যে ঠিক তাই ই।
আজ ৬ বছর পরে ভালোবাসার সেই মানুষটাকে এতো কাছ থেকে দেখে কোনোমতেই তার স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না,চোখের জল থামার নামই কই নিতে চাইছে,বুকের হওয়া ব্যাথার পরিমাণ কাউকে বলে বোঝানোর সীমান্ত পেরিয়ে গেছে।অসীম এই পী*ড়া*র চাইতে তাৎক্ষণিক মৃ*ত্য*টা*ই হয়ত বেশ সহজ এমনটাই মনে হচ্ছে আদৃতের,বেঁচে থাকার সব আশই মরে গেছে তার,চেয়েও যে মরতে পারে না,মা বাবা দায়িত্ব আর দীনের কাছে বাঁধা পরে আছে যে আদৃত।তবে এভাবে বেঁচে থাকা মৃ*ত্যু যন্ত্রণার চাইতেও ভয়াবহ লাগে তার কাছে,রোজ প্রেমদ**হনে পোড়ে মর*তে হয় আদৃতকে,জীবন্ত লা*শ হয়ে বেঁচে থাকাই হয়ত তার কপালের লিখন,বাস্তব জীবনেও কেউ কারো ভালোবাসায় এতটা তলায় নিজে কাউকে ভালোবেসে এতটা গভীরে চলে না গেলে কখনোই তা মেনে নিত না আদ্রিশ।ভাবনার ফাঁকে হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে তার অগোচরে চোখ মুছে নিল আদৃত,আদৃতের কাঁধে হাত রেখে বলল সিয়াম।

″জীবনের ৩০ বছর পার করে দিলি আদৃত,আজকাল তো ছেলেমেয়েরা ১৫ টা বছরও অপেক্ষা করতে পারে না,প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে যায়,জীবনে নতুন মানুষের আগমণ ঘটায়,সেখানে জীবনের ৩০ টা বছর তুই একা পার করে দিলি।আঁখিও তো বিয়ে করে নিয়েছে,তোকে তো আঁখি পা*গ*লে*র মতো ভালোবাসত, জানিনা কেন তোকে ছেড়ে দিল,তাও তো নিজের জীবনে এগিয়ে গিয়েছে আঁখি,জীবন কারো জন্য আটকে থাকে না আদৃত,দ্বিতীয় সুযোগ জীবনকে কে না দিয়ে থাকে।দেখ আমিও তো মিতালি কে কতো ভালোবাসতাম,কিন্তু ও আমায় ধোঁকা দিলো,আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে চলে গেল অন্যের হাত ধরে,ও চলে যাবার পর কতোটা ভেঙে পরেছিলাম মনে আছে তোর?তারপর আমার জীবনে এলো ইশিকা,তাকে পেয়ে নতুন করে ভালোবাসতে শিখলাম,বাঁচতে শিখলাম আবারও,নিজেই তো তুই তোর বোনকে আমার হাতে তুলে দিলি,আজ আমাদের বিয়ের পাঁচটা বছর,দুইটা বাচ্চা হয়েছে আমাদের, সুখে সংসার করছি আমি।কই আমার জীবনে তো কোনো তিক্তটা রয়ে যায় নি। আমার কথা শোন এতবছর পর যখন দেশে ফিরেছিস তবে এবার বিয়েটা করে নে।নিজের জন্য না হলেও আব্বু আম্মু ইশিকা এদের সুখের কথা ভেবে নাহলে করে নে।″

″বিষয়টা তোর জন্য সহজ বলে মনে হলেও আমার জন্য মোটেও সহজ না সিয়াম,আমি জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছি আর আমার সেই একজনকেই চাই,সে ব্যতীত জীবনে আমি চাইলেও কাউকে জড়াতে পারব না।মৃত্যুর আগ অব্দি আমি ওকেই চেয়ে যাব।আমি ওর জন্য বয়সের দোষ হতে পারি,হতে পারি ওর একসমকার আদম্য এক কৌতূহল, কিন্তু ও আমার কাছে আমার ভালোবাসা,আমার চাই তো শুধু ওকেই চাই,ও নয় তো কেউ নয়।″

″তুই আঁখির জন্য না তো ওর বয়সের দোষ ছিলি আর না তো কোনো কৌতূহল, আঁখিও তোকে ওতটাই ভালোবাসত যতটা তুই বাসিস,জানিনা আঁখি তোকে কেন ছেড়ে দিল তবে যতটুকু আমি জানি ওর ভালোবাসা তোর জন্য মিথ্যে বা কোনো মোহ ছিল না।″

″জানিনা কি ছিল,কেন আর কিভাবে,তবে এটাই সত্য ও জীবনে অনেক এগিয়ে গিয়েছে,ওর জীবনে এখন আমার আর কোনো অস্তিত্ব নেই,আর আমি ওর সুন্দর জীবনে ব্যাঘাত ঘটাব না,দূর থেকেই ওকে ভালোবেসে যাব,তুই প্লিজ যা এবার,আমায় একা থাকতে দে।আর সবাইকে জানিয়ে দিস আমাকে কেউ যেন বিয়ের জন্য জোর না করে।জানিনা কি করে বসবো।″

পরদিন,

স্যার আপনি বলেছিলেন শহরের বর্তমান সময়ের খ্যাত সার্জনদের লিস্ট আপনাকে দিতে,এখানে নামকরা ছয় জনই বেস্ট, এদের মধ্যে ডাক্তার আঁখি শীর্ষে অবস্থান করছেন,

আঁখি নামটা শুনা মাত্র ড.আশরাফ খান বুকে তী*রা*ঘা*ত অনুভব করলেন,অল্পক্ষণে চোখে বাসা বাঁধলো জল।অবাধ্য সন্তানের নামের অবস্থান দেখে খুশিতে আত্নহারা হবে না অগোচরে চোখের জল ফেলবে,না তার নামে তাচ্ছিল্যের কয়েকটা বাক্য জুরে দিবে কোনো কিছুরই সঠিক দিশা পেলেন না ড.আশরাফ খান।

লোকটা আরও বলল।

তাছাড়া ড.লিমন উনিও আঁখি ম্যাডামের বরাবরেই অবস্থান করছেন।ড.আদৃত উনি আমাদের এখান থেকেই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন, দীর্ঘ ৬ বছর উনি আমেরিকাতে ছিলেন, সেখানেও উনি বেশ সফল ছিলেন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাই উনাকেও লিস্টে রাখা হলো,উনি গতকাল সকালেই দেশে ফিরে এসেছেন।

চলবে…….

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১২)

কলির ম*রদেহ ফ্লোরে পরে আছে,নিষ্প্রাণ চোখ উন্মুক্ত, চারিদিকে র*ক্তে*র ছড়াছড়ি, দেয়ালে র*ক্ত দিয়ে বেশ বড় করে লেখা।

প্রমত্ত অঙ্গনা

কেসটা বিচলিত করল ইন্সপেক্টর জিসানকে,ছয় বছর আগে একজন পুরুষের লা*শে*র পাশে তার র*ক্ত দিয়ে একই নাম লেখা পাওয়া যায়,অনেক তদন্তের পরও সে অঙ্গাত খু*নি*কে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি,এর দু’বছর পর তিনটে খু*ন হয় কয়েকদিন পর পর আর তাদের লা*শে*র পাশেও সেই একই নাম পাওয়া গিয়েছিল,র*ক্ত দিয়ে লিখা প্রমত্ত অঙ্গনা,আর আজ চার বছর পর আবারও লা*শে*র পাশে একই নাম বেশ চিন্তিত করল জিসানকে,কে এই প্রমত্ত অঙ্গনা!কেন সে এভাবে খু*ন করছে!আর এতো নিখুঁত তার কাজ যে কোনো প্রামাণ এখন অব্দি পুলিশ খুঁজে পায় নি তার বিরুদ্ধে।

কক্ষের বারান্দার এক কোণে অবস্থান নিয়েছে আদ্রিশ,আজ অনেক দিন পর হাতে আবারও সি*গা*রে*ট নিয়েছে,প্রতিটা নে*শা*ক্ত চুমুক মনে করিয়ে দিচ্ছে আঁখির স্মৃতি,আচমকা উৎফুল্ল হাসিতে তার গালে ফুটে উঠা সে টুলটা আজ খুব করে অধরে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে আদ্রিশের,চোখের সামনে ভাসছে আঁখির হুটহাট করে বেড়ানো দুষ্টুমিগুলো,কানে যেন বার বার বেজে উঠছে
খিলখিল করে মুক্তোঝরানো তার হাসির স্বর।আঁখির এভাবে আদ্রিশকে ছেড়ে নেওয়া মেনে নিতে পারছেই না সে।জীবনে যতই যে এসে যাক না কেন আঁখি যে তার জন্য আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুর উর্ধ্বে।আদ্রিশের জীবন জুরে এমন কিছু নেই যার স্পর্শ তাকে আঁখির কথা প্রতিনিয়ত মনে না করিয়ে দেয়। আঁখিকে ছাড়া একেকটা দিন হাজার বছরের সমান মনে হচ্ছে আদ্রিশের কাছে,আঁখিকে ফিরিয়ে তার আনতেই হবে,যতই যা অসাধ্য তাকে সাধন করতে হয় না কেন সে করবে ভেবে নিয়েছে।হঠাৎ পিছন থেকে তাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদিকা,আদ্রিশ সিগারেট ফেলে পাক ফিরে রিদিকাকে বিনা বাক্যে বুকে টেনে নিল,তার স্পর্শে আঁখির ছোঁয়া অনুভব করতে চাইল তবে ব্যার্থ হলো,আঁখির ছোঁয়া পৃথিবীর এমন কোনো নারী নেই যার সংস্পর্শে গিয়ে ভুলে যাবে আদ্রিশ।শান্ত গলায় বলল এবার।

আমি আঁখিকে খুব ভালোবাসি রিদিকা।

আঁখির হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তাটা পরে আদ্রিশের বাড়ির সামনা দিয়ে, ভালোবাসার মানুষটির বাসস্থানের সামনে দিয়ে যেতেও বুক কাঁপে আঁখির বার বার।কতটা হাস্যকর ব্যাপার, একসময় এটাই ছিল তার স্থায়ী ঠিকানা তার স্বপ্নের মহল,সে মহল আর সেই রাজপুত্র উভয়েই যে এখন অন্য নারীর রাজত্ব,কথাটা ভাবনায় আসলে বুক ফেঁটে কান্না নামে আঁখির,রোজ যাওয়ার সময় বাড়িটার উপর চোখ বুলিয়ে যায়,আজও সেদিকটায় যাওয়ার ক্ষনে চোখ উঁচিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাড়িটার দিকে তাকাতেই চোখে গেল আঙ্গাঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক আর রমণীর উপর,চোখে যেন ম*রি*চ পরল আঁখির,বুকের ভিতরটা চূ*র্ণ বি*চূ*র্ণ হয়ে গেল এক নিমিষেই, তড়িৎ বেগে কান্না এলে ঠোঁট চেপে তা দমাতে চাইল,চোখ সরিয়ে নিল তাড়াতাড়ি সেই নোংরা দৃশ্য থেকে,আদ্রিশ এতটা নিচে নামবে জানলে তাকে কখনও জীবনে জড়িয়ে নিত না,আজকে আঁখির তার বাবার বলা আদ্রিশকে নিয়ে কথাগুলো বড্ড মনে পরল,তার বাবা ডা.আশরাফ খান বলেছিলেন নোংরাকে কখনও পরিষ্কার করে রাখা যায় না,যার বংশে নড়চড় তার ভবিষ্যতে প্রজন্ম মজবুত হবে কেমনে,শুধু শিক্ষা কারো ডিএনএ পাল্টে দিতে পারে না,বংশের দোষ থেকেই যায়।কথাগুলো হারে হারে আজ মিলে যাচ্ছে আঁখির জীবনের সাথে,তবে না আদিল ভাইয়া তো এমন হন নি,ওর শরীরেও তো একই বংশের রক্ত,আসলে সবকিছুই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে,হয়তবা কাপুরুষ হতে বংশ লাগে না কয়েকটা লক্ষণই যথেষ্ট।এসব ভাবনার দখলে পরে রাস্তা কাটাতে লাগল আঁখির।

আদ্রিশের বলা কথাটায় শরীরে জ্ব*ল*ন শুরু হল রিদিকার,স্বামীর মুখে অন্য নারীর নাম– হোক না সে তার প্রথম স্ত্রী, স্বামী তো তারও,স্বামী ভাগ কোন নারী অন্যকে দেয়!জ্ব*ল*নে*র ভাবনা ধামাচাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল রিদিকা।

আদ্রিশ আবারও বলল।

আসলে রিদিকা ওকে কতটা ভালোবাসি আমি জানি না,শুধু জানি ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না,দম বন্ধ লাগে আমার,ও কোনো মতেই ফিরে আসতে চাইছে না,কিন্তু আমিও হার মানব না,ওকে যে ফিরতেই হবে,তুমি দেখে নিও ও আসবে।

রিদিকা এবার মুখ উঁচিয়ে আদ্রিশকে বলল।

″এতই যখন ওকে ভালোবাসো তবে আমায় কেন আনলে জীবনে? কেউ সতী*নে*র ভাগ মেনে নেয় না,আমি তো তাও মেনে নিয়েছি আঁখির কথা ভেবে কারণ আমি ওকেও যথেষ্ট ভালোবাসি,একসাথে তো থাকতেই পারতাম,কিন্তু ও তো হিং*সে করে চলে গেল আমায়,এতে আমার বা তোমার তো কোনো দোষ নেই।

″খবরদার যদি ওকে হিংসুটে বলেছ তো।ভুলে যেও না ও আমার প্রথম স্ত্রী, আমার মনের রানী,ওর বিরুদ্ধে কোনো একটা শব্দও সহ্য করব না আমি।″

আদ্রিশ বেশ রেগে গিয়ে রিদিকাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দিল,কর্কশ স্বরে কথাগুলো শুনিয়ে চলে গেল,রিদিকা বেশ অবাক হলো আদ্রিশের ওর সাথে করা এমন আচরনে, আজ দেড় বছর ধরে আঁখি আদ্রিশের সাথে থাকছে রিদিকা,কই কখনও তো আঁখির সাথে এমন আচরণ করতে দেখে নি আদ্রিশকে,আঁখি বরং অনেক রাগ অভীমাণ করত আদ্রিশের সাথে কিন্তু আদ্রিশ সে তো সর্বকালের বিবাগী ছিল আঁখির,তার রাগ অভীমাণ অনায়াসে মেনে নিত,কতো আদর ভালোবাসা ছিল তার আঁখির প্রতি,তবে রিদিকার ক্ষেত্রে তা কেন মিলছে না!রিদিকাও তো তার স্ত্রী আঁখির ন্যায়,তবে কেন বেদাবেদ?সেদিন আদ্রিশের সামনে আঁখি মারল রিদিকাকে কিন্তু আদ্রিশ তো তাকে তেমন কিছু বলল না।আর আজ রিদিকার বলা আঁখির বিরুদ্ধে অল্প একটা শব্দও সহ্য হলো না আদ্রিশের।

আঁখি আদ্রিশের ডিভোর্সের খবর মিডিয়াতে চলে গেছে,কাজে পৌঁছানোর পর থেকে অনেক জবাবদিহিতার সামনে পরেতে হয়েছে আঁখিকে,চারিদিকেই খবরটা ছড়াছড়ি পেয়ে গেছে অল্পসময়ে,তবে উক্ত বিষয় থেকে বেশি চিন্তিত করছে আঁখিকে অন্য কিছু,কলি তো মারা গেছে তবে খবরটা কে ফাঁস করল।কলির মৃত্যু সংবাদের আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি ,উপর থেকে এসব,সকাল হতে না হতেই ফেসবুকেই কলির মৃ*ত্যু সংবাদ পায় আঁখি।যতটুকু আঁখি জানে কলি খবরটা ফাঁস করে নি,তবে কে করল এমনটা?প্রশ্নটা বড্ড বিরক্তি নিয়ে এলো আঁখির মস্তিষ্কে।

কলির মৃ*ত্যু এদিকে আঁখি আর তার বিচ্ছেদের ব্যাপার যা নিয়ে এখনও তাদের নিজেদের মধ্যেই কথা হয় নি ভালো করে তা মিডিয়ার চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়াল,ইতিমধ্যে আশপাশের লোক সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে বিষয়টা বড্ড লজ্জার লাগছে আদ্রিশের কাছে।কে ফাঁস করল তবে ব্যাপারটা?কলি তো মা*রা গেছে তার মৃ*ত্যু*র ১৬ ঘন্টা পর খবর বের হয়েছে,তবে এমনও হতে পারে খবরটা কলি আগে তার স্টাফকে দিয়ে রেখেছিল আর তারাই খবরটা ফাঁস করেছে এমন ভাবনা এলো আদ্রিশের মনে,কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো কলিকে মারল কে!তাও তার কক্ষের দেয়ালে প্রমত্ত অঙ্গনা লিখা পাওয়া গেছে,আদ্রিশ অনেক সময়ই আদর করে আঁখিকে প্রমত্ত অঙ্গনা বলে ডাকত,কারণ আঁখি আদ্রিশকে নিয়ে বেশ পা*গ*লা*মি করত তাই,কিন্তু তার আঁখি কারো খু*ন করতে পারে না জানে আদ্রিশ,তবে সেই প্রমত্ত অঙ্গনা আসলে কে?

″স্যার আপনি তো এবছর তিনজন নতুন সার্জন নিতে চেয়েছিলেন আমাদের হাসপাতালে, তাই তো বেস্টদের লিস্ট চাইলেন,আর এখন যে সবার থেকে খ্যাত–যে আমাদের হাসপাতালের জন্য গর্ব হয়ে দাঁড়াবে তাকেই আনতে চাইছেন না।ডা.আঁখি ব্যতীত বাকি যে কাউকেই আপনি সিলেক্ট করে নিলেন!কেন স্যার?

″আমাকে কাজ শিখাতে এসো না ডা.রায়হান,ভুলে যেও না আমি সবার সিনিওর, হাসপাতালের ওনার।″

″সরি স্যার,কিন্তু ন্যায় আর সত্যের শিক্ষা আপনার কাছ থেকেই পাওনা আমার,আপনি আমার গুরু,আমি আপনার অনেক সম্মান করি,কিন্তু এ বিষয়ে আপনার সাথে মত মেলাতে পারলাম না আমি,তাই দুঃখীত।ব্যক্তিগত জীবনকে কখনও প্রোফেশনাল লাইফে না জরানোর শিক্ষা আপনিই দিয়েছেন,সেটা এখন আপনি নিজে ভুলে গেলে বাকিরা কি শিখবে স্যার আপনার কাছ থেকে?আপনার হাসপাতাল আপনার যা ইচ্ছে তাই করবেন আমি তো শুধু আমার মতামত জানালাম।চলি স্যার আমার ডিউটি আছে।″

কথাগুলো বলে চলে গেলেন ডা.রায়হান,ধাতব মুর্তির ন্যায় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন ডা.আশরাফ খান।

আঁখি আদ্রিশের বিচ্ছেদ হতে চলেছে খবরটা জানতে পেয়ে অবাকের শীর্ষে পৌঁছাল আদৃত,পরিষ্কার জানানো হয়েছে সেখানে– লয়্যার আদ্রিশ রাহমান প্রথম স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করে নেন যার ফলস্বরূপ তার প্রথম স্ত্রী ডা.আরশিয়া আনজুম আঁখি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,বর্তমানে উনি স্বামীর ঘর থেকে আলাদা অবস্থান করছেন।খবরটা শুনে যেন আদৃতের পায়ের নিচ থেকে মাটি বিচ্যুত হয়ে গেল।নিজের কানে ও চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদৃত,যার সুখের জন্য নিজের জীবন অন্ধকারে ভরে নিল আজ সে দুঃখের সাগরে ভাসছে,ভেবেই র*ক্ত জ্বলে উঠল আদৃতের,ইচ্ছে করল এখনই গিয়ে আদ্রিশের প্রাণ নিজ হাতে নিয়ে নিক।সাহস হল কি করে আদ্রিশের তার সুখপাখিকে পী*ড়া দান করার,না, পারল না আদৃত নিজেকে সংযত করতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে,পিছন থেকে মা ডেকে উঠলেন।

″আদৃত বাবা আমার কোথায় যাচ্ছিস?″

″ল*ম্প*ট কে তার জায়গা দেখিয়ে দিতে।″

ছেলেকে কখনও এমন রুপে বা এমন কথা বলে কোথাও বেরুতে দেখেন নি শায়েলা মির্জা,অত্যন্ত শান্ত আর গম্ভীর চরিত্রের অধিকারী আদৃত,কিন্তু আজকে যেন কোনো আলাদা এক আদৃতকে দেখতে পেলেন উনি।

মেয়ের বিষয়ে নিউজ দেখে ব্যাথাপূর্ণ হলো বাবার মন,এই ভয়েই যে মেয়ের সেই আবদার মেনে নিতে নারাজ ছিলেন উনি,কলিজার টুকরার গায়ে ফুলের টোকারও ভয় যে এখনও সেই বাবার হৃদয়ে সমপরিমাণ রয়ে গেছে,সন্তানেরা মা বাবাকে পলকেই পর করে দিতে পারলে বাবা মা যে কখনও পারেন না তাদের জীবন থেকে মুছে ফেলতে।

আদ্রিশ বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে,কাজে আসলেও মন লাগছে না তার,হঠাৎ কেউ সেখানে প্রবেশ করলে চোখ তুলে তাকালো,ছয় বছর পর ডা.আদৃতকে দেখে চমকে গেল সে,আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″ডা.আদৃত আপনি,ছয় বছর পর?″

″হ্যাঁ আমি,হয়ত আল্লাহই আমাকে এখানে আনিয়েছেন আঁখি সুখে আছে আমার এই ভ্রুমটা ভেঙে দেওয়ার জন্য।″

″আপনি কি বলতে চাইছেন ডা.আদৃত?″

আদৃত এবার অতিরিক্ত রাগে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিশের কলার চেঁপে ধরে বলল।

″সহজ ভাষায় বুঝিস না,তাই না?তুই ভালোয় জানিস আদ্রিশ আঁখিকে নিয়ে আমি কতটা সিরিয়াস,ভুলে যাস নে সেদিন আঁখি সামনে না এলে তোর হাত উপরে ফেলতাম আমি আঁখির হাত ধরে টান দেওয়া নিয়ে,যেটা শুধু অল্প একটা কারণ ছিল।সে জায়গাতে আঁখির পাশে তোকে মেনে নিয়েছি শুধু আঁখির সুখের কথা ভেবে,কিন্তু ভুলে যাস নে আমি সেই আদৃত,এখনও আঁখিকে ততটাই ভালোবাসি,ওর গায়ে ফুলের আঁচড়ও সইব না আমি।″

″ডা.আদৃত আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন,শক্তি শুধু আপনার শরীরে নেই আমারও আছে,আপনার সম্মান করছি বলে ভাববেন না ভয় পেয়ে আছি,আঁখি আমার স্ত্রী, আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপনি কথা না বললেই খুশি হবো।″

কথাটা কানে যেতেই ধাক্কা মেরে আদ্রিশকে ফ্লোরে ফেলে দেয় আদৃত,বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে।

এখনই দেখিয়ে দিতে পারতাম কার গায়ের জোর কত বেশি তবে তোর মতো কা*পু*রু*ষের গায়ে হাত তুলে আমি নিজের হাত নষ্ট করতে চাই না।আর কথা রইল আঁখির, পেয়ে যার মর্ম করতে পারিস নি তাকে ফিরে পাওয়ার আশা কি করে রাখিস।আঁখিকে দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়ার ভ্রমে পরে থাকিস না,ভালো হবে না তোর জন্য।

আদৃত চলে আসলো সেখান থেকে,আদ্রিশের ভিতর তোলপাড় হতে শুরু হলো,আদৃত ফিরে এসেছে এখন যদি সে আবারও আঁখির মন জয় করে যায় তখন কি হবে আদ্রিশের!না,এতোকিছুর বিনিময়ে এতো সাধনার পর আঁখিকে পেয়ে আদ্রিশ তাকে হাতছাড়া করবে না কোনো কিছুর বিনিময়েও।

পাহাড় পরিমাণ দুঃশ্চিতা নিয়ে একটা সার্জারি সেরে এসে বসল আঁখি,হাসপাতাল টা ছেড়ে দিবে ভাবছে,আর সেই রাস্তা দিয়ে আসার সক্ষমতা নেই তার।পারবে না মনের এমন দূরাবস্থা রোজ মানিয়ে নিতে,সকালের সেই দৃশ্যটা বার বার চোখে ভাসছে আঁখির।এমন কতশত সকালের শুরু এভাবে হতো আঁখির তা শুধু সেই জানে।

একদিন সকালবেলা আঁখি কক্ষের বারান্দার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল দেখছিল,সহসা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদ্রিশ,বেশ অভিমান নিয়ে আঁখি নিজে থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে তাকে,আদ্রিশ এদিকে তার ঘাড়ে পা*গ*লে*র মতো চু*মু দিয়ে যাচ্ছে।

″ছাড়ো আমাকে আদ্রিশ।″

″সারারাত আদর করতে দাও নি,এবার আর ছাড়ছি না তোমায়,কতো সরি বলার পরও ছাড় দিলে না তুমি আমায়,তবে আর নয় অভিমান,অনলি ভালোবাসা।″

″স্মোক কারিদের ভালোবাসি না আমি।″

″আমায় তো বাসো? ″

″না।″

″এমনটা বলো না বুকে বড্ড পীড়া অনুভব হয় ফুলপরি।″

″হুম আমার তো বুকে কখনও কোনো পীড়া হয় না,আমি তো রোবট, অনুভুতিহীন।″

″আরে এমনটা কেন বলছ,বললাম তো ছেড়ে দিব একদম,আর ভুলেও হাত লাগাব না ওসবে,ভেবে দেখে আগে দিনে চারটে খেতাম আর এখন ছয় মাসে একটা,তোমার জন্য কতো বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিলাম আমি,তুমি কি খুশি নও।″

″না,পুরোপুরি ছাড়তে হবে।″

″একটু সময় তো দাও।″

″ওকে দিলাম,ততদিন যতদিন তুমি আমার পাশে না এসে থাকতে পারবে।″

″ও মা এ কি বলে,এমনটা হলে তো এই ক্ষনেই সি*গা*রে*টের বংশ নাশ করলাম জীবন থেকে।চলো এবার ভালোবাসায় ভরিয়ে দেই তোমায়।″

অতঃপর আদ্রিশ আঁখিকে পাজকোলে নিয়ে কক্ষের পানে হাঁটা দিল,দুষ্টামিতে আঁখি মোচড়ামুচড়ি করছে আর হাসছে।

কি করছো আদ্রিশ ছাড়ো,আরে কাজ আছে তো,আল্লাহ এই কোন পাগল জুটল আমার কপালে।ছাড়ো আদ্রিশ।হা হা হা

চলবে………