প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-১৩+১৪

0
216

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৩)

আজকে দ্বিতীয়বারের মতো আদ্রিশকে ডিভোর্স পেপার পাঠাল আঁখি,ব্যাথার পরিমাণ তার সেদিনের তুলনায় এক চুলও কম ছিল না,আজও হাতে কাগজটা নিয়ে বুকে প্রচন্ড কম্পন অনুভব করল,তবুও বুকে আত্মসম্মান নামক পাথর রেখে কাগজটা আবারও পাঠিয়ে দিল আঁখি।

আঁখি তার পক্ষের উকিল পাঠিয়েছে আদ্রিশের কাছে।লয়্যার আরিফুল ডিভোর্স পেপার টা বের করে আদ্রিশের সামনে রেখে বললেন।

দেখুন মি.আদ্রিশ আপনিও একজন লয়্যার,আপনি ভালোয় জানেন ডিভোর্স হতে সর্বক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই মতামত প্রাধান্য পায় না,বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে থাকতে না চায় তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সে তাকে ডিভোর্স দিতে পারবে অপরপক্ষের মতামত না থাকলেও,এতে যদি নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টার মিমাংসা না হয় তবে সে ব্যাপারটা আদালত অব্দি পৌঁছায়,মিস আঁখি আপনার সাথে থাকতে মানসিকভাবে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না,আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন তাই উনি আপনাকে অনায়াসে ডিভোর্স দিতে পারেন,আগের বার উনি সাইন করে আপনাকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছিলেন,আপনি তা ছিঁড়ে দিলেন,কিন্তু আপনি ভালোয় জানেন ওটা অনুলিপি ছিল,যার ফলস্বরূপ আপনার বিরুদ্ধে উনি আইনত পদক্ষেপ নিতে পারেন উনি,তাও উনি আপনাকে একটা সুযোগ দিলেন,এখানে উনি আবারও তার একটা অনুলিপি পাঠিয়েছেন,আপনিও সই করে দিবেন উনি আশা রেখেছেন,তাও যদি আপনি আগের মতো কিছু করার চিন্তায় থেকে থাকেন তবে আপনি ভুল করছেন,আইন সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন,ডিভোর্স টা এমনিতেই কার্যকর হবে।আমি না হয় চলি,আপনি যথেষ্ট সময় নিন,ভেবে দেখুন বিষয়টা,আশা করি সাইন করে রাখবেন।

লয়্যার আরিফুল চলে গেলে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কাগজটার দিকে আদ্রিশ,যেখানে আঁখির সাইন স্পষ্ট, কি করে পারল আঁখি সাইন টা করে দিতে, আদ্রিশ কি আদোও পেরে উঠবে সাইন করতে,কই কথাটা ভেবেই তো তার বুক কাঁপছে,যে আঁখিকে না পাওয়ার শোকে একসময় ম*র*তে বসেছিল সেই আঁখিকে কি পারবে নিজে থেকে দূর করতে!কি করে পারবে তাকে ছাড়া বাঁচতে!

ডুবে গেছে এক বিষাদের সমুদ্রে আঁখি,সব কিছু যেন একসাথেই মাথায় ভর করে গেছে,আদ্রিশের বিশ্বাসঘাতকা,আদৃতের হুট করে ফিরে আসা,কলির আচমকা মৃত্যু, সাথে তার ব্যক্তিগত খবর মিডিয়াতে চলে যাওয়া,আশপাশের লোকের সমালোচনা,এর উপর ডিভোর্স পেপার আবার পাঠানো,ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ,আদ্রিশের সাথে তার সুন্দর সেই সম্পর্কের সমাপ্তির সূচনা,এতো কিছু একসাথে কেউ কেমনে মেনে নিতে পারে,উক্ত পীড়া সহনীয় মাত্রা পেরিয়ে গেছে আঁখির,মাথা প্রচন্ড ধরেছে তাই একটা ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরেছে বিছানায়,তবে ঘুম আসছে কোথায়,হঠাৎ মনে পরল তার বাবার কথা।তার বাবা তাকে প্রায়ই বলতেন।

আঁখি,মাই প্রিনসেস,তুই শুধু আমার মেয়ে না আমার অহংকার হতে হবে তোকে,যার সামনে শত পুরুষকেও হার মানতে হবে,যাকে জয় করতে হবে পৃথিবীর সকল অসাধ্য সাধন করার সক্ষমতা,সেই ধৈর্য্য আর সাহসিকতা তোর মধ্যে থাকতে হবে,যাতে আমি মাথা উঁচু করে বলতে পারি তুই আমার সন্তান, আমার মেয়ে।

বাবার এ কথাটা মনে পরায় হঠাৎ করেই যেন সীমাহীন এক ধৈর্য্য ও শক্তির যোগান হলো,মনে কোথা থেকে একটা প্রশান্তির ছোঁয়া বিরাজমান হলো,মনে প্রচন্ড এক টান পরল আঁখির,বাবা মায়ের স্মৃতি যখন এতো প্রশান্তি দিতে পারে তবে তাদের সংস্পর্শ কতটা প্রশান্তি দিতে সক্ষম হবে।খুব লোভ হলো আঁখির আবারও মা বাবার ভালোবাসা পাওয়ার,তবে তা আদোও সম্ভবপর কখনও হবে কি না কে জানে,কিন্তু নিজেকে আজ আটকাতে পারছে না আঁখি,তাদের পাশে যাওয়ার ক্ষমতা আঁখির নেই তবে দূর থেকে তাদের একপলক দেখে আসবে ভেবে নিয়েছে।যেই ভাবনা সেই কাজ,উঠে গেল আঁখি।

একটা জিন্স প্যান্টের সাথে হুডি পরে নিল,চুলগুলো খোঁপা করে কাঠি দিয়ে আঁটকে নিল,তারপর বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে,বাবার দেওয়া সেই বাইকটা বের করল,মা বাবার ঘর থেকে আর কিছু সাথে করে নিয়ে না আসলেও বাইকটা ঠিকই নিয়ে এসেছিল,তার বাবার স্মৃতি হিসেবে,মা বাবার কাছে সন্তানদের এতো আত্মসম্মান খুঁজতে নেই আঁখির মতামত,যেহেতু প্রাণটাই উনাদেরই দান,আদ্রিশের বাড়ি থেকে আসার পরদিন লোক পাঠিয়ে বাইকটাও আনিয়ে নিয়েছিল আঁখি,তিন বছর পর আজ আবারও তাতে চড়ার ইচ্ছে জাগল আঁখির,বেশ খুশি মনে চড়ে বসল তাতে,চওড়া এক হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট করল,লক্ষ্য খান ম্যানশন,ভিতরে না গেলেও বাহির থেকে দেখে আসবে নিজের জন্মস্থান, পারলে জন্মদাতা পিতা মাতা ও তার বাকি পরিবারের সদস্যদেরও।আজ তিন বছর পর আবারও সেই রূপে রাতের শহরে রাইড করতে বের হয়ে খুব ভালো লাগছে আঁখির।

আজ হাসপাতাল থেকে বেশ রাত করে ফিরছেন ডা.আশরাফ খান,সাথে আজ গার্ড আনেন নি,এমারজেন্সিতে হাসপাতালে থাকাও পরতে পারে ভেবে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আদৃত আজ নিজে থেকেই উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।অনেক দিন পর তার আশরাফ স্যার এর সাথে দেখা,যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করে উনাকে আদৃত,এমারজেন্সিতে আদৃত আজকে উনার সাথেই ছিল,এমারজেন্সি পর আদৃতকে উনি আর যেতে দেননি,নিজে তাকে বাড়ি ড্রপ করবেন বলে।আদৃতের বাড়ি ডা.আশরাফ খানের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার মধ্যেই পরে তাই।বর্তমানে আদৃত আর আশরাফ খান গাড়িতে বসে আছেন,আশরাফ খান আদৃতকে নিজের হাসপাতালে জয়েন হবার প্রস্তাব সরাসরিই দিয়ে দিলেন।

আদৃত মাই ভয়,তুমি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ছিলে আমার শিষ্যদের মধ্যে, তাই আমি তোমাকে আমাদের হাসপাতালের একজন সার্জন হিসেবে নিয়োগ করাতে ইচ্ছুক,এ বিষয়ে তোমার কি মতামত?

আদৃত উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই গাড়িটা থেমে গেল।

কি হয়েছে মফিজ?

স্যার মনে হয় টায়ারে কোনো সমস্যা হয়েছে,আমি দেখছি।

আশরাফ রায়খানকে কথাটা জানিয়ে গাড়ি থেকে নিচে নামতেই কোথা থেকে তিনজন মাস্ক পরা লোক এগিয়ে এলো,হাতে তাদের ধারালো ছু*রি,একজন ছুরিটা এনে ড্রাইবারের গলা বরাবর ধরল,বাকি দু’জন গাড়ির দু’দিকে গিয়ে আদৃত আর আশরাফ খানকে বেরুতে বলল।তারা রাস্তায় কিল ফেলে গাড়ি আটকাতে সফল হয়েছে।

এই বের হো দু’জন, আর যার যার কাছে যা আছে সব দে।

আশরাফ খান আর আদৃত দুজনই বুঝতে পারলেন এরা ছিনতাই কারী,গাড়ি থেকে নেমে পরলেন তারা দু’জন।আশরাফ খান বললেন।

দেখো তোমরা আমাদের কাছে কিছুই পাবে না,আমরা টাকা বহণ করছি না,সোনা গহনা কিছু নেই আমাদের কাছে,বাকি কার্ডগুলো নিয়ে গিয়েও তোমাদের কোনো লাভ হবে না।

ওই বুড়া বেশি কথা বলিস কেনো?চুপচাপ যা আছে বের কর।নয়তো এখনই পেটে ছু*রি ঢুকিয়ে ফুটো করে দিবে,হাতের ছুরি দেখিয়ে আশরাফ খানকে ভয় দেখালে তার হাত ধরে এক টান দিয়ে পিছনে মুড়ে ভেঙে দেয় আদৃত,সাথে সাথেই লাথি দিয়ে ড্রাইবারের পিছনের জনকে ফেলে দিল,পাশের জন এসে আদৃতের উপর ঝাপিয়ে পরল।আদৃত তিনজনকে সামলাতে লাগল আর ডা.আশরাফ খানকে বলল ড্রাইবারকে নিয়ে গাড়ির ভিতর ঢুকে চলে যেতে,এদিকে আশরাফ খান কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না,এভাবে আদৃতকে রেখে যাওয়া ঠিক বলে মনে হচ্ছে না উনার,উনি সাথে সাথে পুলিশকে ফোন করলেন,হঠাৎ একজন আদৃতের অগোচরে আশরাফ খানের উপর হামলা করবে ঠিক তখন তার হাত পাকড়াও করে কেউ একজন,এক ঘুষিতে তাকে নিজের জন্মদাতার পাশ থেকে বেশ দূর করে আঁখি,দীর্ঘ তিন বছর পর নিজের কলিজার টুকরোকে আবারও এই রুপে দেখে নয়ন ভরে এলো আশরাফ খানের,বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে আঁখি বলল।

গাড়িতে ঢুকে গাড়ি লক করো বাবা,এদের তোমার মেয়েই সামলে নিবে।কথাটা বলে ছোটে গেল আঁখি তাদের দিকে,আদৃত তাদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত,একজন আদৃতকে ছুরিঘাত করতে আসলে আঁখি তার আশাতে পানি ঢালে,হাত মুড়ে ভেঙে দেয় তার,তখনই আদৃতের নজর যায় আঁখির উপর,আঁখির এই রূপটা আবারও দেখতে পেয়ে আদৃতের মনে প্রশান্তি ছেঁয়ে গেল,বেশ অবাকত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে।এদিকে আঁখি তাকে হুটহাট বলল।

এই যে আমাকে এভাবে দেখাদেখির অনেক টাইম পাবেন বর্তমানে এদের দিকে খেয়াল দেন,আমি না হলে এখনই পরে মা মা বলে চিল্লানী দিতেন।

বরাবরের মতো আঁখির কথায় হাসি আসলেও হাসল না আদৃত,মারপিটে মন দিলো,একসময়কার কারাতে চ্যাম্পিয়ন আদৃত, আর আঁখি যাকে তার বাবা দশ পুরুষের সমতুল্য এক নারী হিসেবে গড়ে তুলেছেন,এমন কোনো দেশ নেই যেখানে তিনি তার একমাত্র মেয়েকে ঘুরতে নিয়ে যান নি,বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আত্নরক্ষা কৌশল তিনি শিখেয়েছেন মেয়েকে,শারীরিক ও মানসিক কোনো দিক থেকেই মেয়েকে অক্ষম রাখতে নারাজ ছিলেন আশরাফ খান,আঁখির সকল সফলতার পিছনেই রয়েছে তার বাবার অবদান।আজ মেয়েকে নিজের ঢাল স্বরূপ পেয়ে সুখে চোখে জল চলে এসেছে আশরাফ খানের,একাই একটা মেয়ে তিনজনের উপর ভারী পরেছে,অবশেষে তিনজনকে মেরে কুপকাত করল আঁখি আদৃত,গাড়ির ডিঁকিতে দড়ি ছিল তা বের করে তিনজনকেই পাশের গাছের সাথে বেঁধে নিল দু’জন, ড্রাইবার ততোসময়ে টায়ার পাল্টাতে লেগে গেছে,আশরাফ খান এখনও দাঁড়িয়ে আছেন গাড়ির বাহিরে,আঁখি এবার ছোটে গেল বাবার কাছে,বর্তমানে তার ভিতর দ্বিধা দন্দ্ব কাজ করল না আর,বাবাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা মাথায় চাপল।বাবার হাত পা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে অস্থির হয়ে বলল।

বাবা তুমি ঠিক আছো তো?

তিনটে বছর পর আজ মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনে প্রাণটা জুরিয়ে গেল আশরাফ খানের,তবুও দম্যের কাছে হার মেনে গেলেন উনি,মুখ ফিরিয়ে বললেন।

আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই ডা.আঁখি,আপনি তা ভালো জানেন,আশা করি আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রফেশনালই থাকবে।

বাবার মুখে এমন পর করা কথা মেনে নিতে পারল না আঁখি। ঠোঁট চেঁপে কান্না দমানোর চেষ্টা করল,চোখ তার জ্বলে টইটম্বুর হলো, যা লক্ষ্য করলেন আশরাফ খান,গম্ভীর হয়ে বললেন।

কান্না দূর্বলদের প্রতিক,তাছাড়া আপনি ভালো ফাইটার,ওয়েল ডান,কিপ ইট আপ।

বাবার মুখে নিজের জন্য প্রসংশা বাক্য আঁখির জীবনের সব বিষাদ যেন মুছে দিল নিমিষেই। যে বাবা কখনও আঁখির প্রশংসা করেন নি উক্ত বিষয়ে,যতই দক্ষতা দেখাত সে তার বাবাকে তার বাবা সন্তুষ্ট হতেন না,বলতেন এর থেকেও ভালো করা যায়,যাতে অনেক সময় মন খারাপ হতো আঁখির,আজ অবশেষে তার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটেছে ভেবেই চোখে জমে থাকা বিষাদময় জল সুখের আশ্রুরূপে ঝরে গেল।আশরাফ খান এবার আদৃতের উদ্দেশ্যে বললেন।

″আদৃত আমি পুলিশকে ফোন করে দিয়েছি উনারা আসছেন ততসময় আমাদের এদের দেখে রাখতে হবে।″

″এদের জন্য আমরা আছি স্যার,আপনি চলে যান,রাত অনেক ঘনিয়েছে।″

″তুমি তো সাথে গাড়িও আনো নি,পুলিশ এসে যাক আমরা নাহয় একসাথেই যাব।″

″তার আর কোনো প্রয়োজন হবে না স্যার।আমি বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে নিব,নয়ত আঁখি তো আছেই।″

আদৃতের কথায় অনেকটা ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল আঁখি আদৃতের দিকে কিন্তু বেশি সময় না তাকিয়ে থেকে আঁখি বলল।

″তার প্রয়োজন হবে না ডা.আদৃত,আমি একাই এদের দেখে রাখব আপনি চলে যান।″

আঁখির বাবা চাইলেন না মেয়েকে এভাবে নির্জন একটা জায়গায় একা রেখে চলে যেতে কিছু বা*জে লোকের সাথে,তাই আবার বললেন।

″না আমি ঠিক আছি এখানে,একসাথে যাব ডা.আদৃত।″

″স্যার আপনি চলে যান,আমরা দেখে নিব ব্যাপারটা।″

হ্যাঁ বাবা,দুঃখীত স্যার আপনি চলে যান,আমি না হয় উনাকে ড্রপ করে দিব।

আঁখি আদৃতের সাথে বর্তমানে সায় মেলানোর কোনো ধান্দায় ছিল না,কিন্তু এতো রাতে এমন জায়গায় বাবার প্রাণেরও অনিশ্চয়তা মেয়ে চায় নি,তাই আমতা করে কথাগুলো বলে গেল।

না যেতে চাওলেও আঁখি আর আদৃতের জোরাজুরিতে পরে গেলেন আশরাফ খান, মেয়ের সামনে তাকে নিয়ে উনার মনের দূর্বলতা ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে যেতে মন মানিয়ে নিলেন।আদৃতকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন,যাবার আগে আড়চোখে নিজের সন্তানকে প্রাণভরে একনজর দেখে নিলেন।

আঁখি আদৃত তাকালো একে ওপরের দিকে,চোখে চোখ পরতেই দু’জনই অসস্তিতে পরে চোখ নামিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি।

ব্যাথার্ত হৃদয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল আদ্রিশ,আঁখিকে ছাড়লে নিঃস্ব হয়ে পরবে সে,কিন্তু তাকে নিজের করেও রাখবে কেমনে?

বাড়িতে প্রবেশ করতেই রিদিকা এগিয়ে এসে তার ব্যাগটা নিলো,তাকে কক্ষে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসতে বলে নিজে তার খাবার আনতে ব্যস্ত হলো।

আদ্রিশ কক্ষে এসে ফ্রেস হয়ে নিল,বিছানায় বসতেই রিদিকা খাবার নিয়ে এল তার জন্য।

তার মুখে এক লোকমা ভাত মেখে তুলে দিতে গেলে আদ্রিশ জিজ্ঞেস করল।

″তুমি খেয়েছ রিদিকা?′

″হুম কবেই খেয়ে নিয়েছি,তুমি খেয়ে নাও।″

কথাটা শুনে আদ্রিশের মনে পরল আঁখির কথা।এমন অনেক রাতেই দেরি করে ঘরে ফিরত আদ্রিশ,তবে তা যতই রাত হোক না কেন আদ্রিশ ব্যতীত কখনও খাবার মুখে নিত না আঁখি,আদ্রিশের জন্যই অপেক্ষা করত,সে কি রাগ আর অভীমান করত মধ্যরাতে তার সাথে তার ফুলপরি দেরিতে ঘরে ফিরা নিয়ে,অতঃপর পাল্টা অভিমানে যখন আদ্রিশ না খেয়ে ঘুমোতে যেত তখন আদ্রিশকে টেনে তুলে মুখে জোর করে খাবার তুলে দিত,আদ্রিশও তখন সব অভিমান ভুলে খেয়ে নিত আর নিজেও খাইয়ে দিত তার প্রিয়তমাকে।সে ক্ষণটা কি আদোও আর কখনও ফিরবে তার জীবনে?প্রশ্নটা ভয় ও দুরাশা উভয়ের জানান দিয়ে যাচ্ছে, যাতে রিদিকার হাতে খাওয়ার মনোভাবই ফুরিয়া যায় আদ্রিশের,আঁখির জায়গায় আজ সে রিদিকাকে এভাবে মেনে নিতে পারছে না,কিন্তু কেনোই বা পারবে না!সে তো রিদিকাকেও ভালোবেসে পাশে রাখার চেষ্টা করেছে,আর রিদিকা তো তার পাশে আছেই,তবে কেনো ওকে আঁখির মতো মেনে নিতে পারবে না সে?অনেক চেষ্টা করেও রিদিকার হাতে আর খেতে পারল না আদ্রিশ,তাই এবার বলল।

খাব না রিদিকা,খাবারটা রেখে তুমি চলে যাও,আমার যখন ইচ্ছে হবে খেয়ে নিব।

চলবে……..

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৪)

বেশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আঁখি আদৃত,কেউ কোনো কথা বলছে না,পিনপিন নিরবতা বজায় রয়েছে দু’জনের মধ্যে,অনেকটা অস্বাভাবিকতা গ্রাস করে আছে দু’জনকেই।মনে জমে গেছে যেন পাহাড় সমান বাক্য যা বলতে চায় দু’জন দুজনাকে, জমে আছে কতো মান অভীমান,জানাতে চায় যে একে ওপরকে তবুও ব্যর্থ দু’জন, খুব করে চেয়েও সেই অধিকারত্ব আর সাহস কোনোটাই জুটিয়ে উঠতে পারছে না তারা, অবশেষে নিরবতা কাঁটালো আদৃত।স্বাভাবিক ভাবে বলল।

″তা কেমন আছো?″

″খুব ভালো।″

″সত্যিই কি খুব ভালো?″

″ভালো না থাকার আলাদা কি কারণ থাকতে পারে?স্বাচ্ছন্দ্য বেঁচে থাকাটা কি যথেষ্ট না।″

″হুম,কথাটা ভুল না।″

″তা,বিয়ে করে নিয়েছেন তাই না?কেমন আছেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে?″

″হয়ত কাঙ্ক্ষিত সে অঙ্গনা জীবনে থাকলে অবশ্যই ভালোই থাকতাম তাকে আর নিজের ভালোবাসার অংশ কে নিয়ে।আফসোস না তো সে নেই আর না তো ভালোবাসার কোনো অংশ।″

আদৃতের কথায় কিছুই মিলিয়ে উঠতে পারল না আঁখি ডা.সানিয়াকে তো আঁখি সেদিন একটা শপিংমলে দেখেছিল,তবে আদৃত কেন বলছে ও তার কাঙ্ক্ষিত জনকে জীবনে পায় নি,কিন্তু আদৃত তো ডা.সানিয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসত আর ডা.সানিয়াও তো আদৃতকে ভালোবাসত,দু’জন দু’জনাকে ছাঁড়া বাঁচবে না এমনই জানত আঁখি,যার ফলস্বরূপ আঁখিকে ছাড়তে হলো আদৃতকে,মেনে নিতে হলো হার সানিয়ার ভালোবাসার কাছে,পরাজিত হলো আঁখির একতরফা ভালোবাসা,আদৃতের সুখের জন্য ত্যাগ দিলো তাকেই,সীমাহীন পী*ড়া সহ্য করে নিল হাসিমুখে, তবে যার সুখের জন্য এতকিছু করল আঁখি সেই সুখী নয় বিষয়টা জানতে পেরে বুকের ভিতরটায় কেমন এক শুণ্যতায় ভরে গেল,আশ্চর্যও হলো সাথে প্রচুর,সানিয়া তো ভিক্ষে চেয়েছিল আদৃতকে আঁখির কাছে,নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় দাবী করেছিল আদৃতকে তবে কেন সে আদৃতের সাথে নেই,কেন আদৃত নিঃস্ব, খুব কৌতুহল জাগল আঁখির মনে বিষয়টা জানার,আদৃতকে কি এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে তার?আঁখির ভাবনার মধ্যেই পুলিশ এসে পরল সেখানে।

অনেক বলার পরও আদ্রিশ না খেলে খাবার নিয়ে গিয়ে কিচেনে রেখে এলো রিদিকা,আদ্রিশ শুয়ে আছে বিছানায়,রিদিকা এগিয়ে এসে তার পাশে শোয়ে পরল,বুকের উপরের শার্টের বোতাম খোলে আদ্রিশের বুকে তার নখ দিয়ে হালকা করে আঁচড় কাটতে কাটতে বলল।

″কি হয়েছে তোমার?এই রুমে আমায় আসতে দাও না,আমার রুমে তো যাও ই না,এভাবে আমার থেকে দূরে থাকতে কষ্ট হয় না বুঝি তোমার?আমাকে যখন পর করেই রাখার ছিল তবে আপন করলে কেন?″

″দেখো রিদিকা তুমি যেমনটা ভাবছ তেমন কিছু না,আসলে আঁখি আবারও ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে,ভেবে পাচ্ছি না কী করব,বিরক্ত লাগছে আমার সবকিছু, তুমি বরং রুমে যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।″

″না আমি কোথাও যাব না,আমি তোমার পাশেই থাকব।″

″জেদ করো না রিদিকা,চলে যাও।″

কথাটা বলে আদ্রিশ রিদিকার হাত তার বুক থেকে সরাতে গেলে রিদিকা ব্যথায় কুকরে উঠে আহ বলে,আদ্রিশ রিদিকার জন্য বেশ অস্থির হয়ে উঠে বসে এবার।

″কি হয়েছে রিদিকা?″

″কিছু না।″

অতঃপর আর কিছু না বলে রিদিকা তার হাতটা আদ্রিশের চোখের অগোচরে নিতে চাইলে আদ্রিশের চোখ চলে গেল তার হাতের উপর। দেখতে পেল নখের বেশ কটা আঁচড়ের দাগ রিদিকার হাতে,অনেকটা ফুলে গেছে জায়গাটা,লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।রিদিকার হাতের এমন হাল দেখে অনেক খারাপ লাগল আদ্রিশের।অস্থির স্বরে জিঙ্গেস করল।

এটা কেমনে হলো রিদিকা?

রিদিকা আমতা করে বলল।

″কিছু না এমনিই।″

″কি হয়েছে রিদিকা বলো?″

″কিছু না,তুমি শুয়ে পরো আমি না হয় চলে যাই।″

রিদিকা চলে যেতে নিলে তার হাত পাকড়াও করল আদ্রিশ,এবার বেশ রেগে গিয়ে বলল।

বলো রিদিকা কি হয়েছে?

রিদিকা এবার কান্না করে দিয়ে বলল।

″আমি বললেও তুমি বিশ্বাস করবে না,যেতে দাও।″

″আগে বলবে তো কি হয়েছে?কে করেছে এসব?″

″শুভ্রতা আপু,আসলে আজকে আমি রিহানকে একবার ডেকেছিলাম আমার পাশে আসার জন্য,কিন্তু ও আসতে চায় না,তাই আমি ওর পাশে যাই,জানোই তো আমার বাচ্চাদের কতো পছন্দ তাই,কিন্তু যেই আমি রিহানকে কোলে নিতে যাব ঠিক তখন শুভ্রতা আপু এসে খামছি দিয়ে দেয় আমার হাতে,আমি জ্বা*লা*য় হাত সরিয়ে নিলে উনি রিহানকে কোলে নিয়ে আমায় বলতে লাগেন।উনার স্বামী বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে,আমি না কি কা*ল*না*গি*নী।

″এ কি বলছ তুমি?ভাবি এমনটা কখনও করতে পারে না।″

″বিশ্বাস হলো না তো,আমি জানতাম,তাই বলতে চাই নি।আসলে আমি কপালপোড়া, কখনও কারো মন পাই নি,না পেলাম মা বাবার মন,না পেলাম প্রথম স্বামীর মন,না পেলাম বেস্ট ফ্রেন্ড এর,না পেলাম তোমার আর তোমার পরিবারের, এমন জীবন পাওয়ার থেকে অকাল মৃ*ত্যুও ভালো হতো।আমি মরে কেন যাই না।″

আদ্রিশের অবিশ্বাসের ন্যায় বলা কথাটার উত্তরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উক্ত জবাব দিলো রিদিকা।রিদিকার কান্নায় আদ্রিশের মন এবার যেন মোমের মতো গলে গেল,আঁখির ব্যাথাভরা স্মৃতি এড়িয়ে রিদিকার চোখের জ্বলে মন ভোলে গেল আদ্রিশের।এবার আবারও অনেকটা রেগে বলল।

ভাবির সাহস হয় কেমনে তোমার সাথে এমন করার,আমি এখনই কথা বলছি উনার সাথে।
______

পুলিশ এসে ছি*ন*তা*ই*কা*রী গুলোকে নিয়ে গেল আঁখি আর আদৃতকে ধন্যবাদ দিয়ে।এবার আঁখি বলল।

″তা আপনি বাইক চালাবেন?″

″আজ না হয় তোমার পিছন বসি।″

হুম, বলে আঁখি বাইকে চড়ে গেলে আদৃত তার পিছন বসল।আজ এতো বছর পর আবারও একই বাইকে পাশাপাশি দু’জন বসে আছে,দু’জনের বুকের স্পন্দন যেন একই গতিতে চলছে, সেই পুরানো সুপ্ত অনুভুতি গুলো বুকের ভিতর কেমন জানি নতুন শিহরণ তৈরি করছে।

বাইক চলছে আপন গতিতে,প্রবল হাওয়া ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে দু’জনকে,হাওয়ার বেগে বাইক চালানো আঁখির পুরাতন অভ্যেস,আজও তার ব্যতীক্রম কিছু ঘটছে না,যার ফলস্বরূপ বাতাসের বেগ অত্যদিক হয়ে লাগছে তাদের গায়ে,সহসা বাতাসের একটা ঝপটে আঁখির মাথার হুডিটা সরে পরে যায়,আদ্রিশ পিছন থেকে আয়নায় অপলকে দেখে যাচ্ছে আঁখিকে,হুডিটা পরে যাওয়ার পর চুলের কাঁটাটাও কেমন খুলে যাচ্ছে বলে মনে হলো আদৃতের,সাথে সাথে আঁখি বলল।

ডা.আদৃত আমার কাঁটাটা পরতে দিবেন না।

বলতে না বলতেই কাঁটাটা পরে গেল খুলে,আঁখির ঘন চুলগুলো খোলে বাতাসে দুলতে শুরু হয়েছে।আঁখি এবার কর্কশ গলায় বলল।

ইশ বলেছিলাম কাঁটাটা ধরতে পারলেন না তো।

আদৃতের বেশ মজা লাগল,এতবছর পর আজ আবারও আঁখির অধিকার খাটিয়ে আদৃতকে বকে দেওয়া,তাছাড়া ওর খোলা চুলের পরশ যেন আদৃতের জন্য সোনায় সোহাগা,ইচ্ছে করেই আঁখির কাঁটা ধরে নি আদৃত তার চুলের ঘ্রাণ নিবে বলে।কথাটা ভেবে মুচকি হাসল আদৃত।

সময়ের সাথে রাস্তা ফুরচ্ছে,সাথে কল্পনায় বিমোহিত হচ্ছে আদৃত,আঁখির উড়ন্ত চুলের শোভনীয় ছোঁয়া মন দোলাচ্ছে আদৃতের,নিয়ে যাচ্ছে তাকে সুদূর অতীতে।আদৃত তখন বাইক চালাতে খুব পছন্দ করত,আর আঁখি প্রায় আসত সে সুযোগ উঠাতে।

″এই যে ডা.আদৃত কোথায় রওয়ানা হলেন?″

″কাজ আছে।″

″আমাকেও সাথে নিন,আমাকে আমার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তারপর আবার কাজে চলে যাবেন।″

″বাড়িতে গাড়ি আছে তো, যেকেনো ড্রাইবার ছেড়ে দিবে তোমায়।″

″আপনার মতো হ্যান্ডসাম ড্রাইবার থাকতে অন্যের সাথে গাড়িতে কেন চড়ব?″

ও হ্যালো আমি হ্যান্ডসাম হই বা না হই আমি তোমার কোনো ড্রাইবার না ওকে,সো নাও গো টু হেল।

রেগেমেখে কথাগুলো বলে আদৃত বাইক ছাড়তে যাবে তখনি আঁখি গিয়ে এক ছোটে তার পিছনে চেঁপে বসল।

″এই এই কি করছ?নামো নামো।″

″নামব না,আপনি আমার কেনা ড্রাইবার না হলেও মনের ড্রাইবার ঠিকই,আর আপনার জীবনের গাড়িতে আমি যাত্রীর তালিকায় একমাত্র থাকব আজীবন।″

″দেখো আঁখি তুমি কিন্তু আমার ভদ্রতার বাঁধ ভেঙে ফেলছ।রাগিয়ো না আমায়।″

″রাগলে কি হবে শুনি?কি হবে? কি হবে?কি হবে?″

অতঃপর দুষ্টুমি করে আঁখি আদৃতের বাইক ঝাঁকানি দিতে শুরু করলে দু’জনই উল্টে পরে যায় বাইক থেকে,আদৃত রেগে আ*গু*ন রূপে ঝটফট উঠে পরে নিচ থেকে,আঁখি হাসতে হাসতে শেষ।

ইউ আর জাস্ট এনোয়িং।

কথাটা বলে আদৃত ঘরের ভিতর চলে যেতে শুরু করল।আঁখি পিছন থেকে হাসতে হাসতে বলতে লাগল।

আমি এনোয়িং হই বা কিউট,যেরকমই হই না কেন আমি তো শুধু আপনারই,বুঝলেন ডা.সাহেব।

হঠাৎ বাইকটা থেমে গেলে অতীত থেকে ফিরে আসে আদৃত। আঁখি বলে উঠে তাকে।

এই যে ডা.সাহেব নামেন, আপনার বাড়ি চলে এসেছি।

আদৃত আর কিছু না বলে নেমে যায় বাইক থেকে।আঁখি চলে যাচ্ছে এমতাবস্তায় পিছু ডাক দেয় আদৃত।

আঁখি…

আদৃতের ডাকে চলে যেতে নিলেও পিছু মুড়ে দেখে আঁখি,স্বাভাবিক ভাবেই বলে।

কিছু বলবেন ডা.আদৃত?

আদৃত যে আঁখিকে বলতে চায় অনেক কিছুই তবে চাইলেও যেন এই মুহুর্তে মুখে কোনো প্রত্যাশিত বাক্য ফুটিয়ে তুলতে পেরে উঠল না,হালকা স্বরে শুধু বলল।

গুড নাইট।

গুড নাইট,বলেই আঁখি বাইক ছেড়ে চলে আসলো।পুরনো কিছু স্মৃতি যে খুব বাজেভাবে আঁখিকেও আঁকড়ে ধরেছিল তখন, হয়ত তা আদৃতের কাছে প্রকাশ্যে না বেড়োয় সেই ভয়েই তাড়াহুড়োয় চলে আসলো।
____

আদ্রিশ উঠে শুভ্রতার কাছে আসতে নিলে রিদিকা তাকে আটকে নিল।

″প্লিজ তুমি যেও না,আমি চাই না আমার কারণে ঘরে অশান্তি আসুক।″

″কিন্তু রিদিকা ভাবি এমন কিছু তোমার সাথে কিভাবে করতে পারে!আমার তো গা জ্বলছে।″

″থাকুক না,আঁখির চলে যাওয়া তো কেউ মেনে নিতে পারছে না,সবাই তো আমাকেই দোষী ভাবে,আর তুমিও হয়ত তাই ভাবো,কিন্তু আমি চাই না কারো মনে কষ্ট দিতে,সবাই ভালো থাকুক এটাই চাই,তুমি প্লিজ আমার জন্য হলেও এ বিষয়ে ভাবির সাথে কোনো কথা বলো না।প্লিজ। প্লিজ আমার এই কথাটা রাখো।″

″ওকে ওকে বলব না এখন তুমি প্লিজ কেঁদো না।তুমি এতো ভালো দেখেই তো সবাই তোমার উপর চড়ে বসে।আসলে তোমার এই সরলতা,এই শান্ত স্বভাবই আমায় তোমার প্রতি আ*স*ক্ত করে বার বার।আর আঁখি চলে যাওয়া নিয়ে আর কেউ হলেও আমি কখনও তোমায় দোষী মনে করি না,ওর সমস্যা আমার সাথে,তাই তুমি নিজেকে দোষী মনে করবে না কখনও।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রিদু পাখি।সবাই তোমাকে অবহেলা করলেও আমি কখনও করব না।″

আঁখির মা একটু আগেই আঁখির কথা বলে কান্না করতে করতে শুয়ে পরেছেন।প্রায়ই উনি এমনটা করেন,মেয়ের শোকে কাতর হয়ে পরা উনার নিত্যদিনের কাজ,উপর থেকে মেয়ের এমন দূরাবস্থা সম্পর্কে জানার পর কোন মায়েরই বুকে শান্তি থাকে।

আজ মেয়ের কথা মন থেকেই সরছে না ডা.আশরাফ খানের,কলিজার টুকরোকে তিন বছর পর দেখতে পেয়ে এবার মন আর শান্ত করে রাখতে পারছেন না সেই বাবা।বার বার তাকে দেখতে মন চাইছে।কিন্তু দম্যের উপর অনুভুতিকে জায়গা দিতে পারছেন না উনি।অবশেষে মস্তিষ্কে খেলিয়ে গেল যুক্তিযুক্ত ভাবনা।পার্সোনাল সম্পর্ক আঁখির সাথে রাখা না গেলেও প্রফেশনাল তো রাখতেই পারবেন ডা.আশরাফ খান।যাতে মেয়েকে নিয়ে উনার সেই লুকিয়ে রাখা অনুভুতি বেড়িয়ে আসার কোনো সুযোগ থাকবে না।
অবশেষে আঁখিকেও নিজের হাসপাতালে জয়েন হওয়ার প্রস্তাব দিবেন ঠিক করে নিলেন ডা.আশরাফ খান।

রিদিকার হাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো আদ্রিশ।রিদিকা বলল।

তুমি ঘুমোয় আমি না হয় আসি।আমাকে তো আর পাশে চাই না তোমার।

রিদিকা চলে যাবে তার আগেই তাকে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো আদ্রিশ।

″একা কেনো যাবে?তোমাকে তোমার রুম অব্দি নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমার প্রেমিক পুরুষ আছে না।বিয়ের পর বউ থেকে বেশি দূরে থাকা ঠিক হয় না,তাই না।″

রসিকতার স্বরে কথাটা বলে পাজকোলে নিয়ে নিল আদ্রিশ রিদিকাকে,তারপর তাকে তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

রিদিকাতে মত্ত হয়ে আঁখির দেওয়া দুঃশ্চিতা থেকে অল্প দূরে থাকার ছোট্ট প্রচেষ্ঠা করতে লাগল আদ্রিশ।পারি দিল সুখময় ক্ষণে।

চলবে……