প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৯+১০

0
232

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৯)

হাই ড.আঁখি,কেমন আছো তাহলে?

রিপোর্টার কলির হঠাৎ আগমণে বেশ বি**র**ক্ত হলো আঁখি,মেয়েটি যে বড্ড গা*য়ে পরা,আদ্রিশের জন্য অনেক পা*গ**লা*মি করত যদিও আদ্রিশ তাকে কোনো পাত্তা দেয় নি কখনও তেমন,আদ্রিশের পিছন পরা নিয়ে একদিন তাকে বেশ কথা শোনায় আঁখি, তারপর থেকে তাকে তাদের আশপাশে তেমন আর দেখা যায় নি,এতদিন পর সোজা আঁখির কেবিন অব্দি চলে আসছে নিশ্চয়ই কোনো ম*ত*লবে ভালোয় জানে আঁখি,তাই সোজাসাপটা বলল।

″ভালো আছি,তা এখানে হঠাৎ? ″

″না তাজা একটা খবর শুনলাম তাই ভাবলাম একটু খোঁজ নেই,কত তারিফ শুনেছি তোমার ওই মুখে তোমার আদ্রিশের,ভালোবাসার উপর কি বিশ্বাস তোমার,তাকে নিয়ে কত গর্ব,তবে তার নতুন বিয়ের বিষয়টা কেমন জানি হজম করতে পারছিলাম না,তাই আসা,বুঝতেই তো পারছ।তা কতো অ**প*মা*নই না সইলাম আমি ভাবছি এবার ফিরিয়ে দেই কি বলো।″

″দেখো কলি,সেদিন আমাদের এনিভার্সারি পার্টিতে তুমি ড্রি**ংক করে অ**শ্লী**লতা করতে চাইছিলে আদ্রিশের সাথে।তাই না চাইতেও তোমার সাথে আমায় বা**জে ব্য***ব**হার করতে হয়েছে সেদিন,সেটাকে এভাবে মাথায় নিয়ে ঘুরলে তো হবে না।″

″হুম ফা**ন্দে পরে এখন বে*জা বেড়াল হয়ে গেলে,হা হা হা হা।ছা*ড়ব না আঁখি তোমায় এটাই জানাতে এসেছিলাম,পারলে আটকিয়ো আমায়,চলি কেমন।″

আঁখির সামনের চেয়ারেই বসে এতবড় একটা চ্যালেন্জ দিয়ে গেল কলি আঁখিকে।আঁখি বেশ চি*ন্তি*ত হলো,কলি নামক বে**হা**য়া মেয়েকে সে ভালো করে চিনে,একে আটকানো যাবে না,তবে আদ্রিশের সাথে বি**চ্ছে**দ এর বিষয়টা আঁকি চায় না মিডিয়াতে যাক,এতে যে ওর নামটা বেশ খা**রা**প হয়ে পরতে পারে।কি করবে এবার ভেবে চলল আঁখি।

হাসপাতালে প্রবেশ করছে অপরূপা এক রমণী,নাম তার রিংকি,জন্ম বাংলাদেশে হলেও আমেরিকাতেই বড় হওয়া তার,মা বাবা বাঙালি তাই ভাষাটা বেশ জানে,নিজেও পেশাগত একজন ডাক্তার,বাংলা ভাষা জানলেও স্বাভাব, আচরণ বা রুচি কোনো দিক থেকেই তার মধ্যে বাঙালি নারীত্বের কোনো ছোঁয়া নেই,না*ই*টি পরে হেলে দুলে হাসপাতালে প্রবেশ করছে,রিংকি বলতেই ছেলেদের বুকের ক*ম্প*ন, ও হাসপাতালে আসা মানে রোগী থেকে ডাক্তার অব্দি ওকে উ**ল্টে পরে দেখা,নাইটিতে ওকে যে এক আলাদা আকর্শনীয় লাগছে,ল**লো*প দৃষ্টিতে আশপাশের সবাই গি**লে খাচ্ছে তাকে,হাজার জন তার প্রেমে মশগুল থাকলেও তার মনে একজনকেই ধরেছে,আদৃত নামক সুদর্শন পুরুষকে যে তার চাই ই চাই।আদৃত চলে যাবে খবরটা কানে যেতেই ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানেই চলে আসল,আদৃত হাসপাতালে এসেছে সবাইকে নিজের যাওয়ার কথাটা জানিয়ে দিতে।আদৃত নিজের কেবিন থেকে বেরুবে ঠিক তখনই রিংকি ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরবে তার আগেই আদৃত পিছু হটে যায়,রিংকি নি*রা*শ হয়ে জায়গায় স্থীর হয়।আদৃত বেশ রূ**ঢ় ভাবে বলে।

″রিংকি তোমাকে না বলেছি আমার টা*চিং পছন্দ না।″

″সরি,আসলে খেয়াল থাকে না,তুমি চলে যাবে শুনে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারি নি,আর বেশি কিছু না হলেও হা*গ টা তো করতেই পারো।″

″আই এম নট ইন্টারেস্টেড ইন দেইজ থিংকস, ইউ নো দিস ভেরি ওয়েল।বাই দ্যা ওয়ে,দেশে যাচ্ছি।পারলে তাড়াতাড়ি ফিরব,আল্লাহ হাফেজ। ″

কথাগুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলো আদৃত,আদৃতের প্রতি ঘা*য়ে*ল দৃষ্টি তাক করে মুচকি হাসল রিংকি।

নিজেকে বিপুল কাজে ব্যস্ত রেখেছে আঁখি আদ্রিশের খেয়াল যাতে দূর দূর অব্দি তাকে না ছোঁতে পারে,কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল কেবিনের কাবার্ডে রাখতে গিয়ে হঠাৎ কিছু কাগজের নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো একটা ডায়েরি,ডায়েরিটা আঁখির চিরপরিচিত, নিজের জীবনের কিছু সুন্দর মুহুর্ত যে সেখানে সে নিজের হাতে ফুটিয়ে তুলেছিল,বড় করে ওটার উপরে লিখেছিল ড.আদৃত,এখনও সেটাতে তার নাম লিখা,লিখা তাকে নিয়ে চলমান একসময়কার আঁখির অ*কৃত্রি*ম ও অসীম অনুভুতি।এই ডায়েরিটা কিনতে গিয়েই যে আদৃতের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।আঁখি তখন কিশোরী, সবে মাত্র ১৮ তে পা রেখেছিল,ডায়েরি লিখার খুব শখ ছিল তার,সেদিন একটা দোকানে গিয়েছিল ডায়েরি কিনবে বলে,একটা ডায়েরি বেশ করে তার নয়ন কা*র*ল,তবে ডায়েরিটাতে হাত দিতেই অপর পাশ থেকে ডায়েরির উপর আরেকটা হাতের টান পরল,তাকিয়ে দেখল আঁখি বেশ লম্বা চওড়া বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী একজন যুবক,আঁখি কপাল কুঁচকে বলল তাকে।

″এটা আমি পছন্দ করেছি।″

″এটার পেমেন্ট আমি করে দিয়েছি″

″এটা আগে আমি ধরেছি।″

″এটার মালিক আমি।″

″নাম লেখা আছে গায়ে?″

″লিখে নিব।″

″সা*হ*স থাকলে লিখে দেখান।″

″দেখুন আমি মেয়েদের সাথে কখনও ত**র্কে জরাই না,তাদের যথেষ্ট সম্মান করি।″

″আমি ছেলেদের সাথেই ত**র্কে জরাই,আর তাদের একদম সম্মান করি না।″

″আপনি কিন্তু সী**মা*ল**ঙ্ঘন করছেন।″

″আর আপনি সীমার ভিতরে থেকেও বাহিরের কাজ করছেন।″

″ওফ অসহ্য।″

″ওফ মোটেও সহ্যকর না।″

দোকানদার দু’জনের দিকেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল বেশ সময়, অতঃপর হুবহু একই ধরনের একটা ডায়েরি ওদের সামনে রেখে বলল।

ভাইয়া আপু আপনারা ঝগড়া না করে একটু কম্প্রোমাইজ করুণ,একজন এই ডায়েরিটা অন্যজনকে দিয়ে এটা নিয়ে নিন,একই তো।

কম্প্রোমাইজ ওয়ার্ড আমার ডিকশনারিতে নেই।

একসাথে দু’জনই কথাটা বলে একে ওপরের দিকে তাকাল,অতঃপর আদৃতের দিকে কপালে ভাজ ফেলে তাকানো অবস্থায়ই বলল আঁখি।

আরশিয়া আনজুম আঁখি কখনও কম্প্রোমাইজ করবে না।নেন আপনার টাকা।দোকানদারকে এক হাতে টাকা দিয়ে আদৃত কিছু বুঝে উঠার আগেই অন্য হাতে ডায়েরিটা টান দিয়ে ছুটে পালালো আঁখি।

অতীতের কথাগুলো ভেবে মনের অজান্তেই হাসি ফোটলো আঁখির ঠোঁটে, তবে সত্যতা মস্তিষ্কে নাড়া দিয়ে উঠতেই হাসি বি**লীন হলো তার,আদৃত আঁখির প্রথম ভালোবাসা,যাকে চাইলেও কখনও ভোলা যায় না,মনের এক কোণের কোথাও রয়ে যায় লুকিয়ে,আদ্রিশ জীবনে আসার পর আর কখনও আদৃতের কথা ভাবতে চায় নি আঁখি আদ্রিশকে ধোঁ**কা দেয়া হবে বলে,আদ্রিশ যদি কখনও জানে আঁখি আদৃতের কথা মনে করে তবে সে কষ্ট পাবে এই ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল আঁখি,তবে আদৃতের সকল স্মৃতি থেকে দূরে যেতে পারে নি সে,তাই আদৃতের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় এমন সবকিছু ন**ষ্ট করে দিলেও তার জন্য লিখা ডায়েরি আর তার একখানা ছবি এখনও আঁখির কাছে রয়ে গেছে,সবার চোখের আড়াল করে সেই স্মৃতিকে আঁখি এখানে এনে লুকিয়ে রেখেছিল,এবার ছবিটা বের করল আঁখি ডায়েরির ভিতর থেকে,হাত বুলালো সে ছবির উপর ধীমি স্বরে বলল।

ভালো আছেন না ড.সানিয়া কে নিয়ে?সুখে হয়ত সংসার করছেন,কপাল তো আমারই খা**রা**প ছিল,যাই হোক আপনি খুশি থাকুন সবসময় চেয়ে এসেছি আর আগামীতেও চাইব।

হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলে আঁখি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে ফোন রিসিভ করল,অচেনা নাম্বার।

″হ্যালো আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?″

ফোনের ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না আসায় আঁখি আবারও বেশ বি**র**ক্তি নিয়ে বলল।

কে বলছেন?ফোন করে কথা বলছেন না কেন?

কথা বলা কি জরুরি অনুভব করে নিতে পার না আমায়?ছেড়ে তো চলে গেলে, একবারও কি মনে পরে না আমার কথা?

ল**ম্প**টদে*র কথা মনে করার টাইম আঁখির নেই।

ফোন কে**টে দিলো আঁখি,সাথে সাথে ব্লক করল আদ্রিশকে,পরের বার ফোন দিয়ে আর পেল না আঁখিকে আদ্রিশ।মনের অ*স্থি*রতা আরও বেড়ে গেল,নতুন সিম কিনেছিল আঁখির সাথে যোগাযোগ করবে বলে কিন্তু আঁখি সে রাস্তাও বন্ধ করে দিলো,এতটা পর কিভাবে করতে পারল আঁখি তাকে,সারাদিন বার বার ফোন করা আঁখি,বাহিরে কোথাও আসলে বার বার ম্যাসেজ করা আঁখি আজ তার সাথে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে, এদিকে আঁখির সাথে কথা না বলে তাকে না দেখে সবকিছুই অ*নর্থ*ক লাগছে আদ্রিশের কাছে,কি করে পারছে আঁখি থাকতে তাকে ছাড়া,সে তো কোনো কাজে মন বসাতেই পারছে না,তখনই রিদিকার কল এলো আদ্রিশের নাম্বারে কেন যেন কল টা উঠানর মন চাইল না,তাই উঠালই না।বরং ভাবতে থাকল আঁখিকে কেমনে ফিরানো যায়।

আঁখি নিয়ে এলো নিজের সে ডায়েরিটা নিজের সাথে করে,আদৃত কখনও তাকে ধো**কা দেয় নি,যথেষ্ট মর্যাদা দিয়েছিল আঁখিকে,চাইলে সে আঁখির মন নিয়ে খেলা করতে পারত,নো**ং*রা করতে পারত আঁখির ভালোবাসা কিন্তু আদৃত যে সেরকম ব্যক্তিই নয়,হ্যাঁ আঁখি আর কখনও আদৃতের জীবনে ফিরে যেতে চায় না আর না তো আদ্রিশের জীবনে ফিরবে,এমনকি সে জীবনে আর কোনো পুরুষই চায় না,একা জীবনটা কা*টা*বে নিজের মতো করে ,কোনো অ*নাথ*কে দত্তক নিয়ে তাকে নিজের নাম দেবে ভেবে নিয়েছে।তবে আদৃতকে নিয়ে তার মনে জমে থাকা সম্মান কখনও কম হবে না,তাই তার এই শেষ স্মৃতি আঁখি আর নিজ থেকে দূর করে রাখবে না,তাই নিজের কক্ষের কাবার্ডে এনে রেখে দিলো তা সযতনে।

দিনশেষে বাড়ি ফিরল আদ্রিশ,আজ বাড়িতে প্রবেশ করতেই যেন মন চাইল না,ঘরে প্রবেশ করতেই মনে হলো পুরো বাড়িটা কেমন খ া খ া করছে,আঁখি ব্যতীত বাড়িটা যেন চিনি ছাড়া চা।আঁখির হৈ-হুল্লোড় হাসি তামাসায় যে বাড়িটা ভরে থাকত সবসময়।কাজ থেকে ফিরার পর বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখতে পেত আঁখির হাসিমাখা মুখখানা যা প্রশান্তি দিত আদ্রিশের মনে।আজকে রিদিকার চেহারা দেখে সে প্রশান্তিটা আসল না তার,তবে কেন? সে তো রিদিকাকেও ভালোবাসে তবে সে প্রশান্তি কেন পেল না,আদ্রিশের ভাবনায় ছে**দ ফেলে রিদিকা বলল।

″আদ্রিশ ফ্রেস হয়ে নাও,খেতে দিই।″

″না ময়নাপাখি খাব না,খেয়ে এসেছি,তুমি গিয়ে বরং শুয়ে পরো।″

কথাটা বলে রিদিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা তার কক্ষে চলে গেল আদ্রিশ,রিদিকা সেভাবেই তাকিয়ে রইল আদ্রিশের দিকে আর মনে মনে কি যেন ভাবতে থাকল।

পরদিন সকালে…….

″কি হলো গো, এতসময়ে তো আমার ছেলে এসে পরার কথা?

″আরে শায়লা উ*ত্তে**জি*ত হয়ো না তো,বলেছে তো দেশে এসে গেছে,ট্রাফিক এ আ**ট**কা পরেছে।″

″ইশ কবে যে আমার ছেলেটা আসবে?″

আজ জ্যাম লেগেছে বড্ড,পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দু’টো গাড়ি,একটাতে আদৃত নামক এক অ**স্থি*র হৃদয়ের পুরুষ বসে আছে যে তার অসুস্থ মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল,অপরটাতে এক রমণী,নাম তার আঁখি,সে তার দায়িত্ব পালনে যাওয়ার জন্য প্রহর গুনছে,দু’জনই অপেক্ষায় মশগুল,তবে এরা জানে না চোখ হটিয়ে যদি একবার পাশের গাড়িটার দিকে দৃষ্টি দেয় তবে তাদের ছয় বছরের অপেক্ষারই অবসান ঘটতে পারে।

চলবে………

আরোহী নুর…..।

প্রমত্ত অঙ্গনা
(১০)

গাড়িতে বসে ফোন ঘাটছে আঁখি, তবে গাড়িতে বসে বেশ বি*র*ক্ত হচ্ছে আদৃত, ট্রাফিক ছাড়ার নাম নেই এদিকে নিজের মনকে শান্তনা প্রদানেও ব্যার্থ হচ্ছে সে,মায়ের এমন অবস্থা সম্পর্কে জেনে মা পাগল ছেলে কেমনেই বা ভালো থাকবে,বিরক্তিতে আশপাশ করছে আদৃত,হঠাৎই আদৃতের চোখ আটকা পরল পাশের গাড়ির উপর,প্রবল হাওয়া বইছে তখন,বৃষ্টি নামবে হয়ত তাই তার আগমণ বার্তা দিয়ে যাচ্ছে,সুন্দর এই লগনে সুন্দরী এক রমণীর চুল হাওয়াতে দুলছে,অনেকটা একপাশ হয়ে এক হাতে ফোন টিপছে ওপর হাতে চুলগুলো সামলাতে ব্যস্ত সে রমণী,চেহারার উপর থেকে চুল সরাতেই পারছে না এমন হাল, আদৃতের আঁখিযোগল স্থির হয়ে রয়ে গেল সেই রমণীর উপর,বুকটা ধুক ধুক করতে শুরু হলো তার,কেমন জানি চেনাজানা এক অনুভুতি তার শরীরে দোল খাইয়ে যাচ্ছে, সেই হাত, সেই চুল,তার পাশে থাকার সেই অনুভুতি, খা*প*ছা**ড়া বাতাস যে আজ আদৃতের বিপক্ষে যাবার পণ করে এসেছে, শত চেষ্টার পরও আদৃত নামক যুবক দেখতে সক্ষম হচ্ছে না সে রমণীর চেহারাখানা, আঁখির বাতাস বেশ পছন্দ, তাই ফোন রেখে বাতাসের দিকে– যে দিকটায় আদৃত বসে আছে সেদিকেই ফিরবে ঠিক তখনি ট্রাফিক ছেড়ে দিল,যাতে করে আদৃতের গাড়ি তার ড্রাইবার আগে ছেড়ে দেয়,আদৃত জানালা দিয়ে তারাতাড়ি বাহিরে দেখল সেই গাড়িটা আর খোঁজে পেলো না,নিরাশ হল আদৃত,সে কি সত্যিই আঁখি ছিল,তবে কি তার আঁখিকে এতো পাশে পেয়েও একবার নয়ন ভরে দেখার ভাগ্য ঝুটিয়ে উঠতে পারল না আদৃত।

আঁখি তার লয়্যারের সাথে কথা বলে নিয়েছে,ডিবোর্সের কাগজ ছিড়ে দিয়েছে আদ্রিশ যার ফলস্বরূপ তাদের এখনও ডিভোর্স হয় নি,তাই তাকে আবারও কাগজ বানাতে হবে নয়ত আদ্রিশকে তা করার জন্য বাধ্য করতে হবে,আর আদ্রিশ না মানলে তার উপর কে**স করবে ভেবে নিয়েছে আঁখি।

বাড়ি ফিরে মাকে সুস্থসবল দেখে বেশ রে**গে গেল আদৃত,মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে বলে তাকে বাড়িতে আনিয়ে নেওয়া হলো,মা তো ছেলেকে দেখে মহাখুশি, তবে বেশ নারাজ হলো আদৃত।

একটা লিমিট থাকে মা,তুমি জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,সব কাজ ফেলে চলে এসেছি, মনে কি কি দুঃশ্চিতা আসছিল আমার,এমন নাটক তুমি করাতে পারলে মা,আর বাবা তুমি,তুমি এতো বড় মিথ্যে নাটকে কিভাবে জড়াতে পারলে!তুমি জানো আমি মিথ্যে কতটা অপছন্দ করি।

তুই যে একদম দেশে আসতেই চাইছিলি না,তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এমনটা করতে হয়েছে বাবা,মায়ের অনুভুতি তুই কি বুঝবি, মা কে ভালোবাসলে ছয় টা বছর এভাবে দূর দেশে পরে থাকতি না,আজ যদি সত্যিই হার্ট এ্যাটাক করে মারা যেতাম তবেই হয়ত ভালো হতো।

শায়েলা মির্জা আবেগে মিশ্রিত হয়ে কান্না করে কথাগুলো বলে গেলে তা বেশ আ**ঘা*ত করে আদৃতের মনে,ছুটে গিয়ে মাকে বুকে জড়িয়ে নেয় বলতে লাগে।

মা,আর কখনও এমন কথা বলবে না,আল্লাহ যেন আমার আগে আমার মা বাবাকে এই পৃথিবী থেকে না নেন।আমি সহ্য করতে পারব না।

পাগল ছেলে আমার,তোকে আল্লাহ যেন দীর্ঘজীবী করেন এটাই দোয়া চাই আমি প্রতি মোনাজাতে।ফিরে এসেছিস আর কখনও যাস নে এই মায়ের বুক খালি করে।

থেকে যাওয়ার কথায় বেশ ফিকে ভাব এলো আদ্রিশের চেহারায় তবে বর্তমানে এ নিয়ে আর কথা বাড়াল না আদৃত,ফ্রেস হবে বলে নিজ কক্ষের দিকে চলে গেল।

আজ কেন যেন বড্ড মনে পরছে আঁখির আদৃতের কথা,ছয় বছর পর আজ প্রথম এভাবে আবার আঁখি মনে করছে আদৃতকে,তবে কেন?ও তো আঁখির প্রাক্তন,ওকে তো ভুলে গেছে আঁখি,তাকে কেন মনে করবে?না সে তাকে মনে করবে না,তার জীবনে তো অন্য কেউ আছে,যাকে নিয়ে সুখে আছে সে,তার সুখের জন্যই তো আঁখি তাকে ছেড়ে চলে এলো,অন্য নারীর প্রেমে যে সে নিজের ভাগ বসাতে চায় নি,চায় নি সে রিদিকার মতো কারো ভালোবাসা কেড়ে নিতে,তাইতো চলে এসেছিল সেদিন,ভেঙে পরেছিল বড্ড,আদ্রিশ না থাকলে হয়ত সে প্রেমদ*হ*নের বেড়াজাল থেকে কখনও বেরুতে সক্ষম হতো না আঁখি,একজনকে ভুলতে অন্যজনের সাহারা নিতে গিয়ে তাকে মনে জায়গা দিয়ে গেল আঁখি,সেটা ছিল আঁখির জীবনের সবথেকে বড় এক ভুল,তখন সেই অবুজ মন যে এতো কিছু বোঝত না,ভুলের মা*শু*ল এভাবে দিতে হবে জানলে সে পথে পা বাড়াত না আঁখি কবুও,জীবনে কখনও কারো কাছে সাহারার খোঁজ করতে নেই,নিজেকে সামলে নেওয়া নিজেকেই শিখে নিতে হয়,দেরি করে হলেও আঁখি বুঝতে সক্ষম হয়ে গেছে বিষয়টা,আর সেই ভুল আঁখি আবার কখনও করবে না মস্তিষ্ক ও মনে গেঁথে নিয়েছে।

আদ্রিশ কাজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল, আজকে মনটা বেশ ফুরফুরে,আঁখির রাগ ভাঙাতে যাবে ভেবে নিয়েছে,ওকে তার কাছে নিয়ে আসবেই,আঁখি ছাড়া যে আদ্রিশ সব দিক থেকেই অচল,গতকাল রাত্রিতেও আঁখির স্মৃতি তাকে বড্ড বেশি বিরক্ত করেছে,তাই সকাল সকাল আঁখির দিদার করবে বলে বেড়িয়ে যাচ্ছে। রিদিকা হঠাৎ করে এসেই তাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল।

কাজে যাবে বুঝি?তার আগে আমাকে একটু আদর দিয়ে যাবে না?কই আঁখিকে তো কাজে যাওয়ার আগে রোজ তার কপাল ও গালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে যেতে,ও না চাইলে জো*র করে দিতে, আমাকে দিবে না?

আদ্রিশ ওকে নিজে থেকে ছাড়িয়ে সন্দেহ প্রবল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

″তুমি আমার আর আঁখির উপর নজর রাখতে?″

″আদ্রিশের প্রশ্নে রিদিকা একপ্রকার বিষম খেল,তবুও নিজেকে সামলে উত্তর দিল।″

″ওই আসলে আঁখি বলেছিল এসব,এখন তো আমিও তোমার স্ত্রী আমাকেও দাও তেমনটা। ″

″দেখো রিদিকা আমি আগেও বলেছি আঁখি আর তুমি এক নও আমার জন্য।এ অভ্যেসটা আমার আঁখিকে নিয়ে আর সেটা আমি বদলাতে চাই না অন্য কারো সাথে।কোথাও যাওয়ার আগে আঁখির ছোঁয়া পেতেই মন বেশি করে চায়,প্রথম থেকেই ওর ছোঁয়ায় আমি আমার ব্যস্ত দিনের শুরুটা করে থাকি তাই তাতে অন্য কারো অবস্থান দিতে চাই না।রাগ করো না ময়নাপাখি, এই দেখো ভালোবেসে তো গালে হাত রেখেছি,খুশি হও নি?″

রিদিকা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইল, তাই আদ্রিশ এবার ওকে খুশি করতে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল।

এবার তো খুশি?

খুশি না হলেও ধীমি স্বরে হুম বলে আদ্রিশকে সম্মতি দিল রিদিকা,আদ্রিশ এবার হাসিমুখে কক্ষের বাইরে চলে আসলো,নিচে এসে দেখতে পেল সাংবাদিক কলি এসে বসে আছে তার অপেক্ষায়।

″আরে কলি তুমি হঠাৎ?! এতদিন পর?″

″না এমনিই আসলাম আদ্রিশ,তোমার নতুন বিয়ের কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না,ভাবলাম দেখে যাই কে সেই অঙ্গনা যে আঁখির জায়গা নিতে সক্ষম হয়ে গেল,কার ক্ষমতা আমারও উর্ধ্বে চলে গেল।″

″আদ্রিশ কলির জবাবে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,তখনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল রিদিকা,কলি রিদিকাকে দেখে প্রশ্ন করল।″

″ও তোমার নতুন বউ না কি আদ্রিশ?″

″হুম″
কোনোরূপ জবাব দিলো আদ্রিশ,কলি এবার বেশ তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল।

″হায়রে আঁখি,কি ফু**টা**নি ছিল না ওর তোমাকে নিয়ে।তুমিও তো কম না,আমাকে পাত্তাই দিতে না আর তলে তলে এতদূর,তা আমারও নাম্বার লাগতে পারে রিদিকার পর আশা করা যায় তাই না?হা হা হা।″

″কলি তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছ।তোমার অভদ্রতার জন্য আমি বাধ্য হব তোমাকে অ*প*মা*ন করতে।″

″ও হ্যালো মি.আদ্রিশ,অ*প*মা*ন আপনারা যা করার করে নিয়েছেন,এখন না হয় আমার পালা,প্রস্তুত থাকবেন।আর হ্যাঁ আমার নাম্বার টা তো আছে,রিদিকা পরে কাউকে লাগলে কল মি।″

নি**ল**জ্জে*র মতো অঙ্গভঙ্গিতে কথাটা বলে চলে গেল কলি,রিদিকার বুকখানা বেশ মোচড় দিয়ে উঠল অন্য মেয়ের মুখে আদ্রিশের বিষয়ে এভাবে শুনে,তাই অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া না করে আদ্রিশের দিকে কেমন এক অভিমানী ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল,আদ্রিশও যেন বোঝতে পারল তার চোখের বাণী,এগিয়ে গিয়ে রিদিকার হাত ধরে বলল।

আরে ওই মেয়েটা পা**গ*ল,বে**হা*য়া,ওর কথা মনে নিও না তো,আঁখির পর আমার জীবনে তুমি এলেও তোমার পর কেউ আসবে না প্রমিজ,এখন চলি কেমন।

কথাটা বলে আদ্রিশ চলে গেলো,তবে মনে পেলো না শান্তনা রিদিকা,ডাগর ডাগর চোখে জল জমা হলো মুহুর্তে।

আদৃতের মনে শান্তি এক মুহুর্তের জন্যও খেলা করে যেতে পারছে না, ট্রাফিকের ওই মুহুর্তটা ভুলতে পারছে না আদৃত,মনে উঠছে হরেক প্রশ্ন,সেই মেয়েটি কি সত্যিই আঁখি ছিল,ছয় বছর পর দেশে ফিরে আঁখির দিদার করার জন্য তার আঁখিযোগল যে বড্ড উঠে পরে লেগেগেছে।মনকে আর শান্ত রাখতে পারছে না,না সে তো আঁখির সামনে যাবে না,চায় না আঁখি তার সুন্দর জীবনে তি*ক্ত অতীতের ছায়ায় নিরাশতা ভোগ করুক,তাই নিজেকে সামলাতে আবারও নিজের ডায়েরি খুলল,আঁখির স্মৃতিতে বিভর থাকা ক্ষণগুলো যে সে ডায়েরিতেই ফুটিয়ে তুলে প্রায়,তাতেই যে মনে অল্প প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারে।আজও তাই করতে চাইল,তবে লিখতে গিয়ে ডায়েরির শেষ পাতায় চলে এলো আদৃত,বেশ বিরক্ত করল আদৃতকে উক্ত দিক,প্রিয়সীকে নিয়ে ভালোবাসার মো*হি*ত ক্ষণে কোনোকিছুর কমতি সহ্য হয় না আদৃতের,তাই উঠে বেড়িয়ে গেল গাড়ি নিয়ে নতুন ডায়েরি আনার প্রয়োজনে।
সংসার আর হাসপাতাল দু’টোতে কেমন জানি গুলিয়ে গেছিল আঁখি, হাসপাতাল পরে তার সমস্ত সময় ছিল আদ্রিশের জন্য,তাই নিজের জন্য আলাদা সময় বের করার সুযোগ ছিল না তার,আদৃত জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর ডায়েরি লিখাটা একরকম ছেড়েই দিয়েছিল আঁখি,আজ হঠাৎ করে ডায়েরি লিখতে মন চাইল আঁখির,একাকিত্ব জীবনের নতুন ক্ষণগুলো ফুটাবে তাতে ভাবনাটা মস্তিষ্কে নাড়া দিতেই চলে এলো একটা ডায়েরির খোঁজে,এটা ৬ বছর আগের সেই দোকান।সেখানে প্রবেশ করতেই পুরাতন স্মৃতি কেমন করে জানি মন নাড়িয়ে গেল,প্রবেশ করতেই আঁখির চোখ গেল একটা ডায়েরির উপর,হাত বাড়িয়ে সেটা আনবে তখনি সেটাতে অপরপাশ থেকেই অন্য একজন ধরে নিল।আচমকা টানে দু’জনই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে রইল,সেই চেহারা,সেই ব্যক্তিত্ব,সেই মনের অনুভুতি যা ছয় বছর আগে কোথাও হারিয়ে গেছিল।দু’জনেরই মুহুর্ত যে থমকে গেল এখানেই,নিজেরা নিজেদের দ্রুত গতির সেই বুকের কম্পন টা আজ আলাদা করে অনুভব করতে পারছে,পা**গ*ল করা সেই ধ্ব*ং**সা**ত্নক অনুভুতি দু’জনেরই চোখে প্রেম অ*ন*লে*র জোগান দিল,জল রূপে তা ভরে গেল নয়ন জুরে,বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো,ধরে আসা গলায়,থমকে যেতে চাওয়া অধরে দু’জনেই বাণী ফুটিয়ে নিল একে ওপরের নাম।

″ড.আদৃত!″

″আঁখি….!″

দু’জনের ধ্যান ভঙ্গ করে দোকানদার বলে উঠল।

আরে ভাইয়া আপু আপনারা!আজ এতবছর পরে আবারও দু’জন একসাথেই,সেদিনের ঘটনা আমি এখনও ভুলি নি,হা হা,তা আজকে কিন্তু এই ডায়েরির একটাই পিস রয়ে গেছে,যেকোনো একজনকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

দোকানদারের কথার প্রত্যুকারে আদৃতের দিকে দৃষ্টি প্রখড় রেখে আঁখি বলে উঠল।

ত্যাগ তো শুধু আঁখিই করে এসেছে,আর আজও করবে।

অতঃপর আঁখি ডায়েরিটা ছেড়ে দিয়ে ছুটে পালিয়ে আসলো সেখান থেকে,চোখের জলগুলো বাধাহীন হয়ে নেমে এলো।

আদৃত ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেও চোখ বেয়ে তারও অজস্র জল নেমে এলো।

চলবে………

আরোহী নুর……….