প্রিয় শ্রাবণী পর্ব-৪৭+৪৮(শেষ পর্ব)

0
828

প্রিয় শ্রাবণী পর্ব-৪৭+৪৮(শেষ পর্ব)
ইসরাত জাহান তানজিলা
______________________
পাবেল চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। তা অবশ্য এখনো শ্রাবণী জানে না। পাবেল রোজ অফিসের নাম করে বেড়িয়ে পড়ে। বিষয়টা সবার কাছ থেকে গোপন রেখেছে। শ্রাবণীর কথা রাখার জন্য ঝোঁকের মাথায় চাকরিটা নিয়েছিলো। কিন্তু চাকরিবাকরিতে কোনোভাবেই মন বসাতে পারছে না। চাকরি ছাড়ার ব্যাপারটা শ্রাবণী জানলে নিশ্চিত কঠিন রাগ করবে। মেয়েটার রাগ আজকাল বড্ড বেড়েছে। অবশ্য মেয়েরা যখন জানে কোনো ছেলে তাকে ভালোবাসে, তাকে ছাড়া ভীষণ করে চাচ্ছে, তাকে ছাড়া ছেলেটার চলবেই না তখন তাদের রাগ, জেদ, অভিমান সবই বেড়ে যায়। শ্রাবণীও এতদিনে বুঝে গেছে পাবেল তাকে ভালোবাসে। শ্রাবণীকে দেওয়া কোনো কথাই পাবেল ঠিকঠাক রাখতে পারেনি। এই যে কিছুক্ষণ আগেও সে কতগুলো ছাইপাঁশ গিললো। নিজের খারাপ অভ্যাস গুলো ছাড়তে পারছে না পাবেল। কিন্তু এসব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সে সত্যিই শ্রাবণীকে ভালোবাসে।

পাবেল একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। প্রতিদিন অফিসের নাম করে বের হতে আর ভালো লাগছে না। সাহস করে শ্রাবণীকে সত্যিটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে। আশ্চর্য! ওইটুকু মেয়েকে ও এত কেন ভয় পাচ্ছে এই সামান্য কথাটা বলতে। পাবেল খাবার অর্ডার দিয়ে বিরক্ত মুখে বসে রয়েছে। সেদিন চৈতির সাথে ওই ঘটনার পর থেকেই ওর মেজাজটা খিটখিটে হয়ে রয়েছে। মেয়েটার গালে আরো দুইটা কষিয়ে চড় দিতে পারলে রাগটা বোধ হয় খানিক কমতো। কি দুঃসাহস! শ্রাবণীর সামনে বসে পাবেলের কলার ধরে গালাগালি করতে শুরু করেছে। রাগ দেখিয়ে পাবেল শ্রাবণীকে এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে দেয়নি। শ্রাবণী নিশ্চয়ই মনে মনে অনেক কিছু ভেবেছে। ভাবার মতই ব্যাপার। চৈতি যে এখনো ওর পিছনে পড়ে রয়েছে পাবেল সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। মেয়েটা ভীষণ উন্মাদ প্রকৃতির হয়ে গেছে। আগে কত শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিলো। পাবেল এসব নিয়ে চিন্তামগ্ন। হঠাৎ কে যেন বলে ওঠল,
–‘কিরে কি অবস্থা তোর? মনে মনে তোকে খুঁজছিলাম কয়েক দিন ধরে।’

পাবেল সামনে তাকিয়ে দেখে মুনিম দাঁড়িয়ে আছে। পাবেলের চোখেমুখে অপ্রস্তুত ভাব। ও মুনিমের মুখোমুখি হতে চায়নি। নিশ্চিত মুনিম এখন ওর কান ঝালাপালা করে দিবে। পাবেল শুকনো মুখ করে বলল,
–‘ও তুই। আমার অবস্থা এই তো চলছে। বস।’

মুনিম বসতে বসতে বলল,
–‘তুই না বললেও বসতাম। তোর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে আমাকে দেখে বিরক্তি হয়েছিস।’

পাবেল হেসে বলল,
–‘আরে না। কি খাবি বল? অর্ডার দেই।’

ওয়েটারকে ডেকে মুনিমের জন্য খাবার অর্ডার দিলো। মুনিম হঠাৎ বলে ওঠল,
–‘তুই না-কি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিস? আগের মত দিব্যি হাবিজাবি গিলে যাচ্ছিস?’

পাবেল ঠিক এসব প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে চায়নি। কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল,
–‘আমি তো তোকে আগেই বলেছি ওসব চাকরি-টাকরি আমায় দিয়ে হবে না। শ্রাবণীকে একটু ম্যানেজ করতে পারলেই ছেড়ে দিবো।’

–‘শ্রাবণী জানে তুই চাকরি ছেড়েছিস?’

–‘সর্বনাশের কথা! এটা আমি ওকে জানাতে যাবো কেন? আমি তো রোজ অফিসের নাম করে বের হই। মহা প্যারায় পড়লাম। ধ্যেৎ! আর ওর এত চাকরি দিয়ে কি দরকার বল? ওর কোনো কিছুতে কমতি না হলেই তো হলো। মেয়ে মানুষ সব সময় দুই লাইন বেশি বুঝে।’

পাবেল একটু দম ফেলে বলল,
–‘আমি যতই খারাপ কাজ করি। কিন্তু আমি শ্রাবণীকে সত্যি ভালোবাসি। আচ্ছা তুই বল তো একজন খারাপ মানুষ কি ভালোবাসতে পারে না কাউকে মন থেকে?’

–‘কত খারাপ মানুষ ভালোবেসে নিজেকে বদলে ভালো হচ্ছে। তুই হচ্ছিস না কেন? হ্যাঁ, একজন খারাপ মানুষ কাউকে মন থেকে ভালোবাসতে পারে। কিন্তু ভালো রাখতে পারে না।’

–‘আমি শ্রাবণীকে ভালো রাখতে পারবো না?’

–‘কখনোই পারবি না। এই যে তুই কারণে-অকারণে কত অন্যায়, অপকর্ম করছিস। তোর কি মনে হয় তুই পার পেয়ে যাবি? একদিন দেখবি হঠাৎ করে কঠিন ভাবে ফেঁসে গেছিস। তখন তো তুই নিজেই ভালো থাকতে পারবি না। অন্যকে ভালো রাখবি কিভাবে?’

পাবেল উত্তর দিলো না। দীর্ঘ সময় চুপ করে থাকলো বিরক্ত মুখে। ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল। মুনিম খেতে শুরু করলো। পাবেল একই ভঙ্গিতে বসে রইল। মুনিম বিরক্ত মুখে বলল,
–‘খাচ্ছিস না কেন?’

একটু থেমে আবার বিদ্রুপ করে বলল,
–‘শ্রাবণী যদি এসব জেনে আবার তোকে ছেড়ে চলে যায় তখন আসিস আমার কাছে। এবার আর তোর হয়ে শ্রাবণীর কাছে কথা বলতে যাবো না।’

–‘শ্রাবণী আমাকে ছেড়ে আর যাবে না।’

–‘না গেলে তো ভালোই।’

মুনিম একটু থেমে হাসতে হাসতে বলল,
–‘চৈতির সাথে ওইদিন অনুষ্ঠানে শ্রাবণীর সামনে বসে যা হলো। শ্রাবণী তো সেদিন পুরো হতভম্ব হয়ে গেল।’

চৈতির প্রসঙ্গটা আসতেই পাবেল চটে গেল,
–‘চৈতি প্রথম এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেছে। চৈতি আর কি করেছে তুই জানিস? কত বড়ো খারাপ কাজ ও করেছে!’

–‘চৈতি কি খারাপ কাজ করেছে জানি না। কিন্তু চৈতির সাথে তুই যা করেছিস ওর চেয়ে জঘন্য কাজ আর নেই। ওর পুরো লাইফটা তো তুই তছনছ করে দিয়েছিস। এ কথা তুই অস্বীকার করতে পারবি?’

পাবেল এসব কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
–‘চৈতি শ্রাবণীকে কিডন্যাপ করিয়েছে। কত দুঃসাহস ওর। ও এখনো আমার পিছনে পড়ে আছে আমি বুঝতেই পারিনি।’

মুনিম এ পর্যায়ে বেশ চমকে গেল,
–‘বলছিস কি? তুই তো এসব কিছুই আমার কাছে বলিসনি।’

পাবেল সব বলল। মুনিম বলল,
–‘যাক ভাগ্য ভালো শ্রাবণী বেঁচে গেছে। এজন্যই তো বলছি তুই শ্রাবণীকে ভালো রাখতে পারবি না। চৈতি এখন একদম সাইকো হয়ে গেছে। উন্মাদের মত চলাফেরা। শ্রাবণী এসব কিছু জানে?’

–‘এসব ওকে জানাবো মাথা খারাপ!’

–‘সেদিন অনুষ্ঠানে তো শ্রাবণীও ছিলো। ও কিছু জিজ্ঞেস করেনি?’

–‘করেছে। কিন্তু আমি কিছু বলিনি।’

–‘যা ই হোক। সাবধানে থাকিস।’

পাবেল তাচ্ছিল্য করে বলল,
–‘কিসের ভয়ে আমি সাবধানে থাকবো? চৈতির মত মেয়ের ভয়ে আমি সাবধানে থাকবো! সব দোষ কি আমার ছিলো? ওর কোনো দোষ ছিলো না? ও কেন স্বামী, সন্তান রেখে আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল?’

মুনিম বলল,
–‘ওসব তোদের ব্যাপার। তোরা ভালো জানিস।’

মুনিমের ফোন বাজছে। কি যেন জরুরি কাজ পড়েছে। খাওয়া শেষ না করেই উঠে চলে গেল। পাবেল চিন্তিত চেহারায় একটু একটু করে খাবার মুখে দিচ্ছে। চৈতির ব্যাপারটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে। চৈতির সাথে সত্যি কী ভীষণ অন্যায় করেছে? মানুষ নাকি তার প্রতিটি অপরাধের শাস্তি পায়। পাবেলের অপরাধের তো শেষ নেই। কি শাস্তি অপেক্ষা করছে ওর জন্য? হঠাৎ এসব চিন্তা কেন মাথায় আসছে পাবেল বুঝতে পারছে না।
_________________
শ্রাবণীর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আজ থেকে। বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে কিছুটা ওর। জয়নাল সাহেব আর ফরিদা বেগমের কাছে বলে, না খেয়েই বেড়িয়ে পড়লো দ্রুত। জয়নাল সাহেব আর ফরিদা বেগম অবশ্য কোনো কথা বলল না। পাবেল তার গাড়ি নিয়ে আরো ঘন্টা খানেক আগেই বের হয়ে গেছে। শ্রাবণীকে অবশ্য পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিল বেশ কয়েক বার। কিন্তু শ্রাবণীর পড়া বাকি ছিলো। পাবেলের গাড়িটা হঠাৎ এসে দাঁড়ালো শ্রাবণীর সামনে।
–‘ওঠো, গাড়িতে ওঠো। এত দেরি করে বের হয়েছো কেন?’

শ্রাবণী গাড়িতে ওঠে জিজ্ঞেস করে,
–‘আপনি তো আরো আধা ঘন্টা আগে বের হয়ে ছিলেন। এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?’

–‘একটু কাজ ছিলো সেখানে গিয়েছিলাম।’

পাবেল দ্রুত গাড়ি চালিয়ে শ্রাবণীকে কলেজের সামনে পৌঁছে দেয়। শ্রাবণী এক্সাম শেষে বের হয়ে দেখে পাবেল ওর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ এক ভালোলাগা কাজ করে ওঠে ওর মনে। সেলিম হোসেন যদি বেঁচে থাকতেন! শ্রাবণীর এক্সাম নিয়ে কি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতো মানুষটা! শ্রাবণী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এগিয়ে যায় পাবেলের দিকে,
–‘আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন?’

–‘না দাঁড়িয়ে ছিলাম না। কিছুক্ষণ আগে আসলাম।’

–‘আজকে অফিসে যাননি আপনি?’

পাবেল এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,
–‘তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে বলো? তোমার পরীক্ষা শেষ হলে আমরা বাবু নিবো শ্রাবণী। তোমার মত সুন্দর, মিষ্টি বাবু হবে।’

শ্রাবণী লজ্জা আর অস্বস্তিতে পড়ে চুপ করে রইলো। রাস্তার ভিতর দাঁড়িয়ে কি সব বলে চলেছে লোকটা। ও বিরক্ত মুখে তাকালো পাবেলের দিকে। বিপরীতে পাবেল শব্দ করে হেসে ওঠলো। গাড়ি চলতে শুরু করে। পাবেল মৃদু শব্দে রোমান্টিক গান বাজায়। গানের সাথে ঠোঁট মিলায়।
–‘আমরা আজ সারাদিন ঘুরবো শ্রাবণী। বাসায় যাবো না। তোমার পরীক্ষার মাঝে তো বেশ কয়েকদিন বন্ধ আছে। কোনো অজুহাত দেখাবে না দয়া করে। তুমি আমার সাথে সময়ই কাটাতে চাও না। তোমার সাথে আমার ভালো কোনো স্মৃতি-ই নেই। তুমি নিজ থেকে আগ্রহ করে কিংবা ভালোবেসে আমায় একটা চুমুও দেওনি কখনো। তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসো না?’

শ্রাবণী কয়েক সেকেণ্ড ভেবে উত্তর দেয়,
–‘বাসি।’

–‘তোমায় সত্যি একটা কথা বলি আমি চাকরি অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। এতদিন শুধু শুধু তোমায় মিথ্যা বলেছি।’

–‘আমি জানি আপনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’

পাবেল নিজেই চমকে গেল,
–‘তুমি জানো!’

–‘হ্যাঁ। আপনি আমাকে প্রতিনিয়ত মিথ্যে বলে গেছেন। আমিও মিথ্যেটা সত্যি হিসেবে নেওয়ার ভান করে গেছি। আপনি আপনার কোনো কথাই রাখেননি। আমি সব জানি।’

শ্রাবণীর গলায় চাপা অভিমান। পাবেল অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে থাকে,
–‘তুমি কি এখন আমায় ছেড়ে চলে যাবে? সত্যি বলতে কি জানো শ্রাবণী? খারাপ কাজে জড়ানো ভীষণ সহজ কিন্তু সেখান থেকে নিজেকে বের করে আনা কঠিন। অধিকাংশ মানুষই পারে না। আমিও পারছি না।’

এই বলে পাবেল গাড়ি থামিয়ে শ্রাবণীকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ শক্ত করে। শ্রাবণী বাসায় গিয়ে সেলিনা চৌধুরীর কাছে ফোন দিয়ে অস্থির গলায় জানতে চায়,
–‘একটা মানুষ খুব খারাপ। সে তার খারাপ অভ্যাস গুলো কিছুতেই ছাড়তে পারছে না। খারাপ-ভালো সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সে একটা মেয়েকে মন থেকে ভালবাসে। তাকে ভালো রাখতে চায়। তাহলে মেয়েটার কি করা উচিত?’

–‘একটা খারাপ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করা যায় কি-না আমার জানা নেই। তবে মেয়েটার উচিত তার মনের কথা শোনা। মনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া।’

শ্রাবণী ভীষণ দ্বিধায় পড়ে যায়। পাবেলের আচরণ দেখলে এখন মনে হয় সে শ্রাবণীকে ভীষণ ভালোবাসে। অথচ সে তার কোনো কথায়ই রাখেনি। বার বার শুধু বলে, শ্রাবণী আমি শত চেষ্টা করেও বদলাতে পারছি না ‌আমার অভ্যাস গুলো। এরকম একটা মানুষের সাথে কি নির্দ্বিধায় বসবাস করা যায়? শ্রাবণীর কি করা উচিত ও বুঝতে পারছে না। পাবেল কি আদৌ মন থেকে নিজের অভ্যাস গুলো বদলানোর চেষ্টা করেছে? এরকম একটা মানুষের সাথে ভালো থাকা যায়? কয়েকদিন পর যদি শ্রাবণীর প্রতি তার এই ভালোবাসাও ফুরিয়ে যায় তখন কি করবে শ্রাবণী? শ্রাবণী বুঝতে পারছে পাবেলের সাথে অজান্তেই জড়িয়ে গেছে ও। চাইলেই আগের মত কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। পাবেলকে ছেড়ে দূরে চলে যাওয়া কিংবা ডিভোর্স দেওয়ার।
(চলবে)

প্রিয় শ্রাবণী (পর্ব-৪৮ শেষ পর্ব)
ইসরাত জাহান তানজিলা
_____________________
শ্রাবণীর পরীক্ষা যেদিন শেষ সেদিন বিকালে হঠাৎ অপরিচিত একটা নম্বর থেকে ওর ফোনে কল আসে। দুই-তিন বার রিং হওয়ার পর শ্রাবণী ফোনটা তুলে। পাবেল তখন বাসায় ছিলো না। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
–‘হ্যালো শ্রাবণী বলছেন?’

শ্রাবণী আস্তে করে বলে,
–‘জি। কে বলছেন আপনি?’

ফোনের ওপাশের মানুষটা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে। তারপর বলে,
–‘আমি চৈতি বলছি। পাবেলের ফ্রেন্ডের অনুষ্ঠানে আপনি আমাকে দেখেছেন। আমার ধারণা সেদিন অনুষ্ঠানের সব ঘটনা আপনার মনে আছে। এবং আমার কথাও মনে আছে।’

শ্রাবণী চমকে গেল অনেকটা। সেদিন অনুষ্ঠানের সেই মেয়েটাকে ভালো করেই মনে আছে ওর। সত্যি বলতে মেয়েটার ব্যাপারে ভীষণ কৌতূহলী ও। পাবেলকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছে চৈতির কথা। পাবেল রাগ দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে। শ্রাবণী চমকে যাওয়ার ব্যাপারটা চাপিয়ে স্বাভাবিক গলায় জানতে চাইল,
–‘হ্যাঁ মনে আছে। আপনি কেন আমাকে ফোন করেছেন?’

–‘আচ্ছা সেদিনের সেই ঘটনার পর আপনি আপনার হাজবেন্ডকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি? জানতে চাননি আমি কে? কেন ওরকম আচরণ করেছি? আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে আমার সম্পর্কে আপনার হাজবেন্ড আপনাকে কি বলেছে?’

শ্রাবণী চুপ করে রইলো‌। এ প্রশ্নের উত্তর ওর কাছে নেই। এই মেয়ে হঠাৎ ওকে কেন ফোন দিয়েছে। শ্রাবণী বলল,
–‘আমি আমার হাজবেন্ডকে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আপনি আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন?’

চৈতি উচ্চশব্দে হেসে ওঠলো। শ্রাবণীকে বিদ্রুপ করে হাসলো যেন‌। হাসি থামিয়ে বলে,
–‘সত্যি তুমি তোমার হাজবেন্ডকে কিছু জিজ্ঞেস করোনি? আমার বয়সের অর্ধেক বয়স হবে তোমার। আমাকে তুমি মিথ্যা বলো না।’

চৈতি এতক্ষণ শ্রাবণীকে আপনি বলে সম্বোধন করলেও এ পর্যায়ে তুমি করে বলা শুরু করে।

–‘নিশ্চয়ই তুমি বার বার তোমার হাজবেন্ডকে জিজ্ঞেস করেছো‌‌। সে প্রতিবারই তোমার কথা এড়িয়ে গেছে। এড়িয়ে যাওয়া তো স্বাভাবিক। কারণ তার কাছে তো কোনো উত্তর নেই।’

শ্রাবণী চুপ করে রইলো। চৈতি আবার তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
–‘সারাজীবন ধরে হাজারটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে এখন তোমার মত হাঁটুর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সংসার করছে। সে নাকি তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তার এই ভালোবাসা সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকবে।’

শ্রাবণী এসব কথা নিতে পারছে না। ওর চিৎকার করে লাইনটা কেটে দিতে ইচ্ছে করছে‌। কিন্তু কেন যেন পারছে না। মেয়েটা আর কী বলতে চায়? আর কী কী করেছে পাবেল? চৈতির মুখ থেকে পাবেলের সম্পর্কে আরো কিছু শুনতে ইচ্ছুক ও। পাবেলকে নিয়ে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভয় ওর মনে প্রতিনিয়ত কাজ করে, চৈতির কথাগুলো যেন সেই ভয় আরো বাড়িয়ে দেয়। শ্রাবণী অস্থির হয়ে ওঠে।

–‘শ্রাবণী আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। তোমাকে কিছু বলার আছে। তুমি যদি দেখা করতে চাও তো আমি এড্রেস ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ দেখা করার ব্যাপারটা পাবেলকে জানাবে না। ও কখনো তোমাকে আমার সাথে দেখা করতে দিবে না। কারণ ও তো কখনো চাইবে না যে ওর কুকর্ম গুলো তুমি জানো।’

চৈতি ফোন রেখে এড্রেস ম্যাসেজ করে দিলো। শ্রাবণীর মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। চৈতির সাথে দেখা করতে যাবে কিনা মনস্থির করতে পারছে না। কি বলতে চায় চৈতি? পাবেলের সাথে তার কি সম্পর্ক ছিলো? পাবেলের কোন কুকর্মের কথা জানাতে এত মরিয়া হয়ে ওঠেছে চৈতি? শ্রাবণী আরো বিচলিত হয়ে যায়। ও চৈতির কথা শুনতে চায়‌। পাবেলকে না জানিয়ে চৈতির সাথে দেখা করতে যাবে? শ্রাবণী মনস্থির করতে পারছে না। দীর্ঘ সময় ভাবার পর শ্রাবণী ঠিক করে ও যাবে চৈতির সাথে দেখা করতে। পাবেলকে না জানিয়েই যাবে। যে মানুষটার সাথে সারাজীবন এক সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সম্পর্কে জানার আগ্রহ দমাতে পারলো না।

শ্রাবণী কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। উদ্বিগ্ন মনে চৈতির দেওয়া ঠিকানায় যায়। এই মুহূর্তে শ্রাবণী চৈতির সামনে বসে আছে। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ওর। খুব খোলামেলা পোষাক পরে আছে চৈতি। হাঁটু অবধি একটা টপস। সে অবাক গলায় বলল,
–‘সত্যি আমি ভাবতে পারিনি তুমি আমার কথা মত আসবে। পাবেলকে না জানিয়ে এসেছো নিশ্চয়?’

শ্রাবণী আস্তে করে বলল,
–‘হ্যাঁ।’

–‘শুনছি তোমাদের সম্পর্কটা নাকি বেশ ভালো। পাবেল তোমাকে খুব ভালোবাসে। এত ভালোবাসার পরও তুমি সেই মানুষটাকে বিশ্বাস করো না?’

শ্রাবণী বিচলিত গলায় বলল,
–‘কে বলেছে আমি তাকে…’

শ্রাবণীর কথা শেষ হওয়ার আগেই চৈতি বলে ওঠে,
–‘বিশ্বাস করলে তুমি এই মুহূর্তে আমার সামনে বসে থাকতে না। আমি বললাম আর তুমি চলে আসলে। এতেই বোঝা যায় তোমাদের ভিতরের বিশ্বাস কতখানি মজবুত! পাবেলের সম্পর্কে সব জেনেশুনে বিয়ে করেছো না-কি কোনো কিছু না জেনেই টাকা দেখে বিয়েটা করে নিলে?’

চৈতির সাথে কথায় পেরে ওঠে না শ্রাবণী। মেয়েটা ভীষণ চতুর। এক পর্যায়ে শ্রাবণী হতাশ গলায় বলে,
–‘আপনি কি আমাকে এসব বলতে দেখা করতে ডেকেছেন?’

–‘ওহ স্যরি। তুমি তো তোমার হাজবেন্ডর কুকীর্তি শুনতে এখানে এসেছো। তোমাকে এসব বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছি কেন!’

চৈতি একটু থেমে বলা শুরু করে,
–‘আমার সাথে পাবেলের চার বছরের সম্পর্ক ছিলো। আমি আমার স্বামী সংসার ছেড়ে ওর হাত ধরেছিলাম। একসাথে দীর্ঘ সময় এক সাথে কাটিয়েছি। তোমার মতই আমাকে ভীষণ ভালোবাসত। এক সময় সব ভালোবাসা উবে গিয়েছিল। আমার পুরো লাইফটা শেষ হয়ে গেছে ওর কারণে। শুধু আমি না এমন আরো অনেক মেয়েকে ও ঠকিয়েছে। সবার জীবন শেষ করে দিয়েছে। এখনো ও একটু বদলায়নি। আমি তোমাকে প্রমাণ দিতে পারি। তোমারও একই পরিণতি হবে শ্রাবণী। ও কখনো শুধরাবে না, কখনো না। এক সময় তোমাকেও ছুড়ে ফেলে দিবে।’

শ্রাবণীর মাথা ভনভন করছে। ও স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। মাথাটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

চৈতি পাবেলের নম্বরে কল করে যাচ্ছে। পাবেল ফোন তুলছে না। পাবেলের সামনে বসে ওর সব গোপন কথা শ্রাবণীকে বলা চৈতির বহুদিনের ইচ্ছা। আজ সেই সুযোগ এসেছে। চৈতি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। যেভাবেই হোক পাবেলকে ও এখানে আনবেই। ওর জীবন নষ্ট করে পাবেলকে শান্তিতে সংসার করতে কখনো দিবে না। ওদের সম্পর্ক, সংসার সবকিছু ভেঙেচুরে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবে। নয়ত ওর মনের এই অশান্তি, কষ্ট কমবে না। পাবেল ফোন না ধরায় চৈতি ম্যাসেজ করল,
শ্রাবণী এই মুহূর্তে আমার সামনে বসে আছে। বেচারী তোমার কুকর্মের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আহারে..বেচারি।’

চৈতির ম্যাসেজ পড়ে পরম আশ্চর্য পাবেলের চোখ কপালে উঠে গেল। চৈতি আবার ম্যাসেজ করল,
বিশ্বাস হচ্ছে না। একটা ছবি তুলে পাঠাবো?

সাথে সাথে পাবেল কল ব্যাক করে চিৎকার করে বলে,
–‘কি শুরু করেছিস তুই? নিজের ভালো চাস তো বন্ধ কর এসব। শ্রাবণীকে কিডনাফ পর্যন্ত করিয়েছিলি তুই। দারোয়ানকে দিয়ে মিথ্যা বলেয়িছিস। আমি তোকে কিছু বলিনি। কিন্তু এবার আমি তোকে ছাড়বো না।’

পাবেলের এই চিৎকারে কোনো রকম ভয় পেলো না চৈতি। উল্টো ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,
–‘নিজের ভালো এখন আর আমি চাই না। এখন শুধু তোর খারাপ চাই। কি করবি আর তুই? তুই চিৎকার করলেই কি সব মিথ্যা হয়ে যাবে? অনেক প্রমাণ আছে আমার কাছে।’

পাবেল নিজের রাগ ধরে রাখতে পারে না। রাগে ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে। চোখ দুইটা দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরে। শ্রাবণী ওকে কিছু না জানিয়ে চৈতির সাথে দেখা করতে গেছে। পাবেল ভাবতেই পারছে না। আগের থেকে দ্বিগুণ জোরে চিৎকার করে ওঠে। চৈতিকে বিশ্রী ভাবে একটা গালি দিয়ে বলে,
–‘আমি এবার তোকে মেরে ফেলবো।’

–‘সাহস থাকে তো আমার বাসায় আয়। শ্রাবণীর সামনে আমার মুখোমুখি হওয়ার সাহস আছে তোর?’

পাবেল ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে চৈতির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাগে কাণ্ডজ্ঞান সব হারিয়ে ফেলেছে যেন। এই পুরো সময়ে শ্রাবণী নীরব হয়ে রইল। ওর কান্না পাচ্ছে ভীষণ। কিছু বলার ভাষা নেই। চৈতি পাবেলের সাথে ওর ঘনিষ্ঠ ছবি শ্রাবণীকে দেখাতে থাকে। অন্য আরো অনেক মেয়ের সঙ্গে পাবেলের খোলামেলা ছবি। এক দলা কষ্ট শ্রাবণীর অনুভূতি অবশ করে দিচ্ছে। ওর চোখ ভিজে যাচ্ছে। চৈতি স্বস্তি পেলো। ওর উদ্দেশ্যে সফল হতে চলেছে তাহলে। মেয়েটা নরম স্বভাবের। এসব দেখেও সে কি থাকবে পাবেলের সঙ্গে? চৈতি যা বলেছে বা যা দেখেয়িছে তার কোনোটাই মিথ্যা না। পাবেল এসব করতে পারে সে সম্পর্কে শ্রাবণী আগে থেকে যে অবগত ছিলো না বিষয়টা এমন না। শ্রাবণী জানত তবে এতটাও জানত না। ও এসব মেনে নিতে পারছে না।

পাবেল উদ্ভ্রান্তের মতন চৈতির বাসার ঢুকে সত্যি সত্যি শ্রাবণীকে দেখতে পায়। এখানে আসার পথেও ভেবেছে চৈতি হয়ত ওকে বাসায় নেওয়ার জন্য এসব বলছে। চৈতি পাবেলের সামনে সব বলতে থাকে। পাবেল যতই চিৎকার, চেঁচামেচি করুক না কেন চৈতি থামছে না। পাবেল শ্রাবণীর উপর চটে গিয়ে বলে,
–‘আমাকে না জানিয়ে কেন তুমি এখানে এসেছো?’

এই বলে শ্রাবণীর হাত ধরে টেনে সোফা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়। শ্রাবণী মূর্তির মত হয়ে রইল। পাবেল টেনেহিঁচড়ে শ্রাবণীকে ওখান থেকে নিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে চৈতিকে আবার কুৎসিত ভাবে গালিগালাজ করে বলে,
–‘আমি তোকে দেখে নিবো এবার।’

চৈতিও উল্টো গালাগালি করছে। পাবেল চৈতির বাসা থেকে শ্রাবণীকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে উঠে ক্ষীপ্ত হয়ে উচ্চস্বরে বলে,
–‘কেন এসেছো এখানে? কার কাছে জিজ্ঞেস করে এসেছো তুমি? কি কাজ এখানে তোমার?’

শ্রাবণী নিজেকে আর সামলাতে পারছে না। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আচমকা চিৎকার করে বলে ওঠল,
–‘থামুন আপনি। আপনি উচ্চস্বরে কথা বললেই সব মিথ্যা হয়ে যাবে না। সব সময় আমাকে চোখ রাঙাতে আসবেন না। নিজের দিকে তাকান এবার। নিজের কুৎসিত রূপটা দেখেন।’

–‘তুমি ওর কথা বিশ্বাস করেছো? ও যা বলেছে সব আমার অতীত। আমার অতীত আমি অস্বীকার করছি না। ও নিজে কতটুকু ভালো? ও কেন স্বামী, সংসার রেখে আমার কাছে এসেছিল?’

রাগে পাবেলের শ্বাস গরম হয়ে যাচ্ছে। ও একটা লম্বা দম ফেলে আবার বলে,
–‘ওর সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা আছে? ও কত খারাপ! এই চৈতিই তোমায় কিডনাপ করিয়েছি। দারোয়ানকে দিয়ে মিথ্যা বলেছিয়েছে।’

এ পর্যায়ে শ্রাবণী অবাক হলো। কিন্তু এখন ওর মনে যা চলছে তা এ বিষয়টাকে ছাপিয়ে গেল। পাবেল বলল,
–‘ও আমাদের সম্পর্কটাকে নষ্ট করতে চায়। ওর উদ্দেশ্য খারাপ। তাই ও আমার অতীতের বিষয় গুলো এখন টেনে এনে তোমাকে বলছে।’

শ্রাবণী কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলল,
–‘আপনার অতীত আর বর্তমানের মধ্যে কোনো তফাত আছে? নিজেকে কোনো দিক থেকে বদলিয়েছেন আপনি? চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, নেশা করছেন, ক্ষমতার জোরে নিরীহ মানুষদের মারতে দ্বিধাবোধ করেন না, মেয়েদের নিয়ে এখনো আনন্দ ফুর্তি করে বেড়াচ্ছেন। গত পরশু দিনও পার্টিতে মেয়েদের সাথে হৈ হুল্লোড়, নাচানাচি করেছেন। সেই ভিডিও আমাকে দেখেয়েছি। কি যুক্তি দেখাতে চাচ্ছেন আপনি নিজের পক্ষে?’

এ পর্যায়ে পাবেল চুপ করে রইলো। গত পরশু দিনের ভিডিও চৈতির কাছে কি করে এলো! শ্রাবণী উগ্র রোষে ফেটে পড়ে বলল,
–‘কি হলো? উত্তর দেন আপনি?’

পাবেল শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল,
–‘শ্রাবণী আমি যা-ই করি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর পার্টির ওই মেয়েগুলো আমার বন্ধু ছিলো।’

–‘চাই না আমি এরকম ভালোবাসা। আমার প্রতি আপনার প্রেম, ভালোবাসা সব মিথ্যে । আপনি একজন প্রতারক, মেয়ে লোভী, খারাপ স্বভাবের মানুষ। আপনি কখনো বদলাতে পারবেন না।’

গাড়ি এসে বাসার সামনে থামে। পাবেলের আগে আগে শ্রাবণী গাড়ি থেকে বের হয়। বড় বড় পা ফেলে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ে। ও এক মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নেয় ও আর থাকবে না এই মানুষটার সঙ্গে। কোনো ভাবেই থাকা সম্ভব না। এরকম একজন মানুষের ভালোবাসা জীবনে অভিশাপ। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চায় ও। চিৎকার করে কাঁদছে শ্রাবণী। সেলিম হোসেনের দেওয়া সত্তর হাজার টাকা ওর কাছে আছে। এই টাকা নিয়েই ও বেড়িয়ে পড়বে যেদিকে দুই চোখ যায়। পাবেল প্রচণ্ড হতাশ ভঙ্গিতে সোফায় বসে আছে। শ্রাবণীকে কি বলে আটকাবে? কীভাবে বিশ্বাস করাবে যে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ও শ্রাবণীকে ভালোবাসে? শ্রাবণী আজ কোনো কথা বিশ্বাস করবে না, কোনো যুক্তি শুনবে না।

শ্রাবণী ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে‌। পাবেল ভেজা চোখে তাকিয়ে বলল,
–‘আমার একটু কথা শুনো শ্রাবণী।’

–‘আজ আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ঘৃণা হয়। আপনার দিকে তাকাতে আমার ঘৃণা হয়।’

পাবেল থেমে গেল। এই মুহূর্তে ওর অনুভব হলো ও বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য মানুষ। কেন শুধু শুধু শ্রাবণীকে আটকাচ্ছে? ও তো কখনো নিজেকে বদলাতে পারবে না। খারাপ স্বভাব গুলো ওর রক্তে মিশে গেছে। ওর মত একজন মানুষের সাথে কীভাবে ভালো থাকবে শ্রাবণী? পাবেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শ্রাবণীর চলে যাওয়া দেখছে। শ্রাবণী এক বারের জন্যও পিছনে ফিরে দেখলো না। এত ঘৃণা পাবেলের ওর প্রতি!
(সমাপ্ত)