প্রিয়তমা পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
923

#গল্পঃপ্রিয়তমা
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#অন্তিম_পর্ব

সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ।অস্তমিত সূর্যের লাল আভা পশ্চিম আকাশ জুড়ে বিস্তৃত।সমুদ্রের পানিতে এসে রক্তবর্ণ অন্তরিক্ষের ছায়া পড়ে তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তুলেছে।আশেপাশে অনেকগুলো কপোত-কপোতী হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে।মৃদুমন্দ বাতাসে দোলা দিয়ে যাচ্ছে মানবীর খোলা চুল।শাড়ির আঁচল বেশ লম্বা করে পেছনে ছড়িয়ে রাখা।বালির উপর দিয়ে এক পা এক পা করে প্রিয় মানবটির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে হাঁটছে মানবী।চারদিকে কোলাহল হলেও ওই মানব মানবীর মধ্যে বিরাজ করছে নিরবতা।হঠাৎই নিরবতা কাটিয়ে মানবী কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো-আচ্ছা!আপনি আমার জন্মদিনে আমাকে উইশ করেননি কেনো?

নিরবতা কাটালো মানবটিও।মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল ঝাকুনি দিয়ে কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে বলল,জন্মদিনে উইশ করা কি বাধ্যতামূলক?

রূপক এমন খাপছাড়া এলোমেলো কথা শুনে প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নিমিষেই মন খারাপ হয়ে গেলো তার।সবার জন্মদিনে তাদের স্বামীরা কত কত সারপ্রাইজ প্ল্যান করে আর ওর স্বামী সামান্য উইশটাও করলোনা।আবার বলছে উইশ করা কি বাধ্যতামূলক?

প্রিয়তমার মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাঁসলো রূপক।খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বলল-“জন্মদিন মানে আনন্দ করার দিন নয়।জন্মদিন মানে তোমার জীবন থেকে আরো একটি বছর চলে যাওয়া।মৃত্যু আরও নিকটে চলে আসা।অথচ এই দিনটি সবাই কত আনন্দের সাথে পালন করে।কাড়িকাড়ি টাকা নষ্ট করে।আমি মনে করি এই দিনটি কখনো একজন মানুষের জন্য আনন্দের হতে পারেনা।আর যদি বলো ভালোবাসা প্রকাশের কথা?তাহলে আমি প্রতিদিন,প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে ভালোবাসি।আর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত আমার ভালোবাসা একজনের নামে বরাদ্দ থাকবে।সে আমার প্রিয়তমা,সে আমার সন্তানের জননী,সে আমার বাম পাঁজরের হাড়,সে আমার সারাজীবনের চলার সঙ্গী।”
চোখে গভীর দৃষ্টি তাকিয়েও ভালোবাসা বিনিময় করা যায়।ভালোবাসাটা কিভাবে প্রকাশ করবে সেটা সম্পুর্ন তোমার নিজের উপর নির্ভর করে।লোকদেখানো কয়েকটা ট্রেন্ড ফলো করলেই ভালোবাসা প্রকাশ পায়না।

প্রীতি অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো রূপকের দিকে।নেত্রপল্লব সামন্যতম সময়ের জন্যেও পলক ফেলছেনা।মন মস্তিষ্কে খেলছে,আসলেই তো কথাগুলোতো কোনোদিন গভীরভাবে ভেবে দেখিনি।জন্মদিন মানেতো জীবন থেকে সময় হারিয়ে যাওয়া।হায়াত ফুরিয়ে আসা।রূপকের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শাড়িতে পা বেজে পড়ার আগেই রূপক হাতের কব্জি ধরে সামলে নিলো প্রীতিকে।
রূপক এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রীতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-আগে রাস্তা দেখে হাঁটো।জামাটা তোমারই।দেখার জন্য সারাটা জীবন পড়ে আছে।
প্রীতি খানিকটা লজ্জা পেলো রূপকের কথায়।

বিয়ের পরপরই যেখানে মানুষ হানিমুনে আসে সেখানে রূপক প্রীতি বিয়ের দুইবছর পর এলো।
চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে,আঁধার ঘনিয়ে নিকটে আসছে।রূপক প্রীতি পাশাপাশি হেঁটে দুজন দুজনকে অনুভব করে চলেছে।
হাঁটতে হাঁটতে রূপকের স্মৃতির ফটকে ভেসে উঠলো এক বছর আগের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা।চোখের কোন ঝাপসা হয়ে এলো তার।

প্রীতির অবস্থা খুবই শোচনীয়।রূপক যেনো মুহূর্তেই অবুঝ হয়ে গেলো।এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত সে উপলব্ধি করতে পারছেনা।প্রীতিকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছে।ফারুখ রূপকের কান্ডে অসন্তুষ্ট হলো।একজন পুলিশ অফিসারকে সব রকম মুহূর্তে শক্ত থাকতে হয় সেখানে রূপকের এমন করুণ দশা আশা করা যায়না।রূপক কেসগুলো কি সুন্দর হ্যান্ডেল করে অথচ এখন নিজেই ভেঙে পড়ছে।রূপক একটা ধমক দিয়ে ফারুখ বলল,কান্না থামিয়ে ওকে আশ্বস্ত করো।তোমাকে ভেঙে পড়তে দেখলে ও আরো ভয় পেয়ে যাবে।
একহাতে ড্রাইভ করে অন্যহাতে ফোন নিয়ে ফারুখ হাসপাতালে কল করলো।আগে থেকেই সব রেডি রাখার জন্য বলল।দ্রুত গাড়ি চালিয়ে প্রীতিকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।

যেহেতু আগে থেকেই সব রেডি ছিলো তাই আর দেরি না করে প্রীতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।রূপক ভেতরে যেতে চাইলেও ফারুখ যেতে দিলোনা।রূপক এখন যেই হালে আছে হয়তো ভেতরে সে প্রীতিকে ধরেই বসে থাকবে।ডাক্তারদের এগোতেও দেবেনা।অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ হয়ে যেতেই রূপক ফারুখকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।ফারুখ নিজের চোখের পানি আড়াল করে রূপককে সামলাতে ব্যস্ত।বাড়িতে কেউ কিছুই জানেনা।আগে অপারেশন শেষ হোক পরে জানানো যাবে।

রূপকের পাগলামি দেখে ফারুখ স্তব্ধ।রূপক হাউমাউ করে কেঁদে বলছে,ওর কিছু হবেনা তো বলো?প্রীতির কিছু হলে আমার জীবনের সব রঙিন আলো নিভে অন্ধকার নেমে আসবে।জীবন থেকে সব রং মুছে গিয়ে সাদা কালো চাদরে ঢেকে যাবে।দ্বিতীয়বার কাউকে আমি হৃদয়ে স্থান দিতে পারবোনা।সে আমার প্রিয়তমা।সে হীনা অচল আমি।বেঁচে থেকেও মরার মতো হয়ে থাকবো।আমার এখনই মনে হচ্ছে দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।প্রাণটা প্রীতির কাছেই রয়ে গেছে।আল্লাহ যদি নিয়ে যায় তাহলে দুটো প্রাণ যেনো একসাথে নিয়ে যায়।
ফারুখ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রূপককে।ভালোবাসার মানুষ হারানোর যন্ত্রনা কতটা নিদারুণ সেটা ফারুখের চেয়ে আর কেউ ভালো জানেনা।বেঁচে তো আছে দেহটা।হৃদয়টা যে অনেক আগেই মরে গেছে।
হাসপাতালে আসা অনেকেই হাঁটার পথে ওদের দুজনকে দেখছে।কেউ কেউ এসে ভিড় জমিয়েছে।হয়তো অনেকেই জানার চেষ্টা করছে ওদের দুজনের কান্নার কারণ।হয়তো বা সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারছেনা।

ডাক্তার যখন বলেছিলো গুলি বের করা হয়েছে।রোগী এখন আউট অফ ডেন্জার তখন রূপকের দেহে যেনো প্রাণ ফিরে আসে।
ফারুখ দুই বাড়িতেই ফোন করে জানিয়ে দিলো।তারা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে এসে পড়েছেন।প্রীতিকে দেখার পালা একে একে সবাই শেষ করলো।ফারুখ সবাইকে সব ঘটনা বলতে ব্যস্ত রূপক সবে ধীর পায়ে কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।প্রীতির এখনো জ্ঞান ফেরেনি।খুব বড় একটা অপারেশন হয়েছে।ডাক্তাররাই বলে দিয়েছে জ্ঞান ফিরতে দেরি হবে।
রূপক প্রীতির পাশে ফ্লোরে বসে পড়ে।ওর একটা হাতে ক্যানেলার লাগানো।অন্যহাত ধরে রূপক নিজের কাছে টেনে নেয়।কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ করে প্রীতির হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোয়ায়।হাতটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,আমি আর কখনো তোমাকে কোনো বিপদে পড়তে দেবোনা।সবসময় ছায়ার মতো তোমার পাশে থাকবো।তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেওনা।
প্রীতি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।রূপকের বলা একটা কথাও তার কানে পৌঁছেনি।
পনেরোদিন হাসপাতালে থাকার পর রূপক এক প্রকার জোর করেই প্রীতিকে বাড়িতে নিয়ে যায়।ফিনাইলের গন্ধে প্রীতি অতিষ্ঠ হয়ে রূপককে বলল ওকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

এদিকে সব প্রমাণের ভিত্তিতে রাজিব শেখ আর মিরন হায়দারকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো।সাথে রুবি আর ফারুখকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।রুবি অসৎ ব্যবসায় তার ভাইকে সাহায্য করেছে আর ফারুখ সব জেনেও পুলিশকে না জানিয়ে নিজে নিজে সব করার কারণে তাকেও একবছরের কারাদণ্ড দিলো।

প্রীতির কথায় ঘোর কাটলো রূপকের।প্রীতি ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বলল,এবার হোটেলে ফিরে চলুন।আর হাঁটতে ভালো লাগছেনা।রূপক দুই ভ্রু কুচকে বলল,তুমিইতো বললে এখানে হাঁটাহাঁটি করবে।প্রীতি ঝিমিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,এখন আর ভালোলাগছেনা।
রূপক দুষ্ট হেসে বলল,এখন হোটেলে ফিরে গেলে তুমি আমায় কি দিবে?
প্রীতি লজ্জা পেলেও কপট রাগ দেখিয়ে বলল-কচু দেবো আপনাকে।

রূপক কান পেতে বলল,কিহ!সারারাত ভালোবাসবে?আচ্ছা চলো আমি রাজি আছি।প্রীতি রূপকের বাহুতে কিল মেরে হাঁটা ধরলো।রূপকও হেসে দিয়ে পিছু পিছু গেলো।হোটেলে গিয়ে রুমের কাছাকাছি যেতেই রূপক প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।প্রীতি কিছু বলতে গেলেই রূপক চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,আজ কোনো এক্সকিউজ চলবেনা।ভালোবাসা চলবে।

পরিশিষ্ট★

থানা থেকে এসে রুমে চলে গেলো রূপক।প্রীতি রূপককে দেখে একগ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে রুমে ঢুকলো।গ্লাসটা রূপকের দিকে বাড়িয়ে দিতেই রূপক মাথার ব্যারেট ক্যাপটা প্রীতির মাথায় পড়িয়ে দেয়।অর্ধেক শরবত খেয়ে বাকিটা প্রীতির দিকে বাড়িয়ে দেয়।প্রীতি দ্বিরুক্তি না করে নিমিষেই বাকি শরবতটুকু গিলে ফেলে।কয়েকবছর ধরেই এটা চলে আসছে।রূপক মুচকি হেসে প্রীতির ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা লেবুর কণাটুকু মুছে ওয়াশরুমে চলে যায়।
প্রীতি গ্লাস নিয়ে নিচে নেমে যায়।

তিনবছর ধরে রূপক আর প্রীতি চট্টগ্রামে থাকে।রূপকের বদলি হওয়াতে এখানে চলে এসেছে সবাই।বাবা মা কিছুদিন রাহাতের কাছে ঢাকায় থাকে কিছুদিন রূপকের কাছে থাকে।এখন রাহাতের বাসাতেই আছে তারা।রূপক আর প্রীতির দুটো জমজ ছেলে হয়েছে।রাহাতেরও জমজ দুইটা ছেলে হয়েছে।
তাই রূপকের বাবা গ্রামের বাড়িতে “জমজ ভীলা” নেইম-প্লেট লাগিয়ে দিয়েছেন।বছরে দুইবার ঈদে সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যায়।

রূপক আর প্রীতির দুই ছেলের নাম ইফাজ আর ইয়াজ।চার বছর বয়স চলছে দুজনের।রূপক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দুজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে।তিন বাপ ছেলে মিলে খাটের উপর লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।ইফাজ পানি খেতে খাট থেকে নামলো।দরজার দিকে নজর যেতেই দেখলো প্রীতি আসছে।ইফাজ লাফিয়ে উঠে সবাইকে সাবধান করে বলল-হিটলারনী আম্মু আসতেছে!হিটলারনী আম্মু আসতেছে।
এতক্ষণ লাফালাফি হলেও মুহূর্তেই সব শান্ত হয়ে গেলো।সবাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।প্রীতি রুমে ঢুকে একপলক সব কিছু পরোখ করে চিৎকার করে উঠলো।
এই কি করেছো তোমরা বাপ ছেলে মিলে?বিছানার এই অবস্থা কেনো?এখানে কি গরু ঘুমায়?মনে হচ্ছে কুস্তি লড়েছো তিনজনে।
কেউ নড়চড় করছেনা।প্রীতি একটা শলার মুঠা এনে এলোপাতাড়ি সবাইকে পেটানো শুরু করলো।রূপক,ইফাজ,ইয়াজ তিনজনেই খাট থেকে নেমে দৌঁড়ে বাইরে চলে গেলো।
প্রীতি শলার মুঠা রেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো।ওরা বাবা-ছেলে তিনজনই দরজার কপাট ধরে উঁকি দিয়ে দেখছিলো।তারাও হেসে দিলো।এবার চারজনেই রুমের ভেতর পড়ে লড়াই শুরু করে দিলো।শেষে প্রীতি সোফায় বসে থেকে রূপক,ইফাজ আর ইয়াজের হাতেই বিছানা গোছালো।

আজ সবাই গ্রামের বাড়ি যাবে।কিছুদিন পরই মনির বিয়ে।গ্রামে থেকেই রূপকের বাবা মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করতে চাইছেন।রূপক প্রীতি বাচ্চাদের নিয়ে আগে ঢাকায় যাবে সেখান থেকে সবাই একসাথ হয়ে গ্রামে যাবে।
প্রীতি ছেলেদের রেডি করিয়ে দিলো।তারা বসার রুমে খেলছে।রূপক প্রীতিকে তাড়া দিলো ওর সামনে আসার জন্য।শাড়ী পড়ে রূপকের সামনে দাঁড়াতেই রূপক প্রীতিকে ঘুরিয়ে দিলো।অনেকদিন প্রীতিকে বেনুনি করতে দেখে দেখে নিজেও শিখে নিলো।এখন প্রীতির চুলে যত্ন করে বেনুনি করে দিলো।

সবাই মিলে গ্রামের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো।বাড়ির সামনের নেইম-প্লেটের দিকে তাকিয়ে সবাই একদফা হাসলো।কি সুন্দর গুটিগুটি অক্ষরে লিখা”জমজ ভীলা”।

বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো।ফারুখ আর তার মাও এসেছে।ফারুখ সোফায় বসে ফোন টিপছে।মনি একপলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ছেলেটা বিয়ে করবেনা বলে পণ করেছে।যদি কখনো তাকে বিয়ের জন্য জোর করা হয় তবে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে বলে হুমকি দিলো সবাইকে।প্রথম প্রথম মনির ফারুখকে দেখে মায়া হতো।যখনই বাড়িতে আসতো তখনই দেখতো ফারুখ উদাসীন,মলিন চেহারা বানিয়ে ঘুরতো।সেই মায়াকে মনি ভালোবাসা নাম করণ করে ফারুখকে জানালে ফারুখ মনিকে বোঝালো,এটা ভালোবাসা নয় মায়া।যদিও ভালোবাসা হয়ে থাকে তবুও আমার কিছু করার নেই।আমি স্বপ্নাকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে মেনে নিতে পারবোনা।
সময়ের সাথে সাথে মনিও সরে আসে।ভালোবাসা হলে হয়তো ভুলতে পারতোনা।মায়া বলেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।

ইফাজ আর ইয়াজ মিলে ফারুখের চুলনিয়ে জুটি করছে।সে চুপচাপ বসে রইলো।প্রীতিকে দেখে ইফাজ ইয়াজ ভদ্র ছেলের মতো মামুর পাশে বসে রইলো।ফারুখ মিটিমিটি হাসছে।

অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।বিবাহ সম্পন্ন করে বিদায় দেওয়ার পালা এসে গেছে।বিদায়ের পাট চুকিয়ে মেহমানরা সবাইও বিদায় নিলো।তরুণ আর রুবিও এসেছিলো বিয়েতে।

রাত্রি বারোটা।ফারুখ একটা গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নার কবরের পাশে।আজও বলে চলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়তমা।
অপরদিকে রূপক প্রীতি একে অপরের ভালোবাসায় ডুবে আছে।রূপকের বলা ভালোবাসি প্রিয়তমা আর ফারুখের বলা ভালোবাসি প্রিয়তমার মধ্যে একটাই পার্থক্য।একজনের ভালোবাসা পৃথিবীর বুকে বিরাজমান অন্যজনের ভালোবাসা প্রাণহীন হয়ে মিশে আছে মাটির তলায়।
#সমাপ্ত।