প্রিয় প্রহর পর্ব-০৬

0
575

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৬
খাবারে পর্ব শেষে সবাই যে যার মতো ছবি তুলছে। শুভ্র ও আরোহীর ছবি তুলছে ক্যামেরাম্যান। আয়ানা ও ধ্রুব তারাও ওদের সাথে ছবি তুলতে গিয়েছে নাহলে ব্যাপারটা চোখে লাগে। শুভ্র নিজের আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সে স্বাভাবিক আছে।

এদিকে সাদিয়া নীড়কে পটানোর উপায় খুঁজছে! হঠাৎ সামনে মেঘের মতো কাউকে দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে তার কাছে যায়। এরপর ওই ছেলের বাহুতে জোরে কিল বসিয়ে বলে,

–কিরে কালোমেঘ! তোর সাবুদানা কই? তুই এখানে একা একা, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমিতো এখন সাবুদানার সাথে নাই! আর আমি না থাকলে তো তুই সাবুদানার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারিস।
(সাবিলাকে “সাবুদানা” আর মেঘকে “কালোমেঘ” বলা হয়েছে।)

সাদিয়ার কথার বিপরীতে ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সাদিয়া তা পাত্তা না দিয়ে ছেলেটার হাত ধরে ঝাকিয়ে বলে,
–আচ্ছা শোন না! আমি যেই কারনে এসেছি। তোর ভাইটাকে যে আমার কথা বলবি, সেটা বলছিলি? কালকে আমার সাথে না তোর ডিল হলো যে তুই নীড়কে পটিয়ে দিবি! দে না ভাই! নীড়কে পটিয়ে দে। তুই যদি নীড়কে পটিয়ে দিতে পারিস তো আমিও তোরে সাবুদানার সাথে সেটিংস করিয়ে দিবো।

সাদিয়ার কথা শুনে ছেলেটা মনে মনে হাসছে কারণ এই ছেলেটাই নীড়! নীড় ও মেঘ যেহেতু জমজ তাই এদের দেখতেও একইরকম লাগে। আরোহী ও আয়ানার মতো ওদেরও কিছু ভিন্নতা আছে।
নীড় চশমা ব্যাবহার করে এবং সে গম্ভীর ও শান্ত থাকে। নীড় হুটহাট রাগে না তবে গম্ভীর্যতা ও কন্ঠস্বর ওকে মেঘের থেকে পার্থক্য করে। আর মেঘ, সে রগচটা এবং দুষ্ট তবে ক্ষতিকর দুষ্টামি করেনা। মেঘ চশমা ব্যাবহার করে না। মেঘের হুটহাট রেগে যাওয়ার সমস্যা আছে।

আজকে আরোহীর রিসেপশনে দুই ভাই একই রংয়ের পাঞ্জাবি পরেছে। পাঞ্জাবী কালো রংয়ের। একটু আগে নীড়ের চশমা মেঘ নিয়ে গেছে, সাবিলাকে একটু ভয় দেখতে। তাই নীড় চশমা ছাড়া যেহেতু চোখে কম দেখে তাই সে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। এরইমধ্যে সাদিয়া এসে নীড়কে মেঘ ভেবে এগুলো বলা শুরু করেছে। সাদিয়াকে একটু লজ্জা দিতে নীড় বলে,

–আগে মেঘকে খুঁজে বের করো তারপর ওরেই বলো আমাকে পটিয়ে দিতে!

সাদিয়া হকচকিয়ে যায়। সে তো চোখে চশমা নেই দেখে এই ছেলেকে মেঘ ভেবেছে আর এই ছেলে কিনা নীড় সয়ং! থতমত খেয়ে সাদিয়া সেখান থেকে কেটে পড়তে নিলে নীড় বলে,

–যেখানে যাচ্ছ যাও। মেঘকে পেলে বলবে সে যেন আমার চশমাটা দিয়ে যায়।

সাদিয়া আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে জলদি করে চলে যায়। নীড় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে মুচকি হাসতে থাকে। হ্যাঁ, নীড়ও সাদিয়াকে ভালোবাসে তবে সে প্রকাশ না করে ভালোবাসতে চায়। যেখানে দুজনেই দুজনকে চুপিসারে ভালোবাসবে আর আড়ালে তা প্রকাশ করবে। মুখে ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়ে যায় না! মনের না বলা কথা যদি বিপরীত পাশের মানুষ বিনা বাক্য ব্যয় করে বুঝতে পারে তাহলে সেই ভালোবাসাতে কোনো তিক্ততা আসে না।
তাছাড়া নীড় জানে যে তার মা ও সাদিয়ার বাবার সাথে অলরেডি নীড়-সাদিয়ার বিয়ের কথা বলেছে। ওদের বাবা-মারা চায় ওদেরকে সারপ্রাইজ করতে তাই সব কিছু ওদের না বলেই ঠিক করছে। কিন্তু নীড় একদিন রাতে তার বাবা-মায়ের কথা শুনে ফেলেছিল। সেদিন তার মা মিসেস নূর কিচেনে কাজ করছিলো তো মিস্টর মুনতাসির নিজের বউয়ের সাথে প্রেম করতে কিচেনে গেছিলো। তখন মিসেস নূর কথায় কথায় এটা বলে ফেলে আর নীড় ডায়নিংয়ে পানি খেতে এসে এগুলো শুনো পানি না খেয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।——-

সাদিয়া এখন বর-বউয়ের স্টেজের সামনে এসে মেঘকে খুঁজছে। আজকে সে মেঘকে ধোলাই দিয়েই ছাড়বে! খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলো। মেঘ স্টেজের এক কোণে সাবিলার সাথে বসে আছে। সাবিলা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে আর মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে সে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। সাদিয়া ওদের দেখে কনফিউজড হয়ে ওদের কাছে যায়।

–কিরে? তোরা দুইটা এভবে বসে আছিস কেন?

মেঘ এবার সাদিয়ার দিকে তাকায় এরপর কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। সাদিয়া ভ্যাবলার মতো চেয়ে আছে। নিজে আসছিলো কিছু বলবে কিন্তু কিছু বলার আগেই সে নিজেই কিছু বলতে পারলো না। সাদিয়া আর কি করবে! সে সাবিলার কাছে যেয়ে বসে। এরপর বলে,

–কিরে সাবুদানা? তোদের আবার কি হলো? আমি না থাকলেও তোরা এমন মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকিস জানতাম না তো!

সাবিলা চোখ মুখ খিঁচে সাদিয়াকে বলে,
–মেঘ জেনে গেছে সব।
সাদিয়া কপাল কুঁচকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাবিলার দিকে। সাবিলা মুখ ভার করে বলতে লাগে,
——-
” মেঘ নীড়ের মতো সেজে তার কাছে এসেছিলো আর এসে বলে,
–সাবিলা, তুমি কি মেঘকে নিজের মনের কথা বলবা না?
সাবিলা তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিল নীড় রুপি মেঘের দিকে। পরে কিছুক্ষন চুপ থেকে মিনমিন করে বলে,
–আসলে ভাইয়া, আমার মেঘ ভাইয়াকে ভয় করে। উনি কতো রাগী। আমার তো বুঝে আসে না, আপনার মতো শান্তশিষ্ট ছেলের এমন বদরাগী ভাই কি করে হয়!

মেঘ নিজের নামে এগুলো শুনে ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে তবে সে যেহেতু তার শান্তশিষ্ট ভাই নীড় সেজেছে তাই তাকে মুখ বুঁজে শুনতে হবে। সাবিলা আবার বলে,

–কিন্তু আমি মেঘ ভাইয়ার রাগ দেখেই তাকে ভালোবেসেছি। তার দুষ্টামি গুলোই আমার মনে ভালোবাসা তৈরি করেছে। হ্যাঁ, আমি ভালোবাসি “মেঘরাজ” কে। আমার মেঘরাজ সে!

আর মেঘ আবেগে আপ্লুত হয়ে চশমা খুলে খুশিতে বলে দেয় সে মেঘ। ”
—–

সাদিয়া সব শুনে খুশি হয় কারণ আজ তারা দুইজন না চাইতেও তাদের ভালোবাসার কথা তাদের ভালেবাসার মানুষটার সামনে জাহির করেছে।
সাদিয়া সাবিলাকে নিজের কথা গুলোও বলে এরপর দুই বান্ধুবী হাসতে থাকে।

রিসেপশন শেষ হবার পর আরোহী ও শুভ্রকে আরোহীদের বাড়িতে আনা হয়। আরোহী ও শুভ্রের জন্য দুইটা গেস্ট রুমের একটা আগেই পরিপাটি করে রেখেছিল। আরোহীর মন মতো ওই রুমটা সাজানো। রুমটা উত্তর মুখী। অফহেয়াইট দেয়াল আর দৈর্ঘ্যে ছোট তবে প্রস্থে বড় ব্যালকনি আছে। আর ব্যালকনিতে একটা রাউন্ড দোলনা রাখা। ব্যালকনির শুধু সামনেই গ্রিল। আর ছোট ছোট ফুলের গাছ। জারবেরা, বেলি, অপরাজিতা, পর্তুলিকা, ক্যাকটাস ও গেইটফুল (লাল রঙের ফুল যেগুলোর গাছ লতার মতো বেয়ে বেরায় এবং চিকন সরু পাতা) গাছ আছে। অপরাজিতা ও গেইটফুলের লতা ব্যালকনির গ্রিল বেয়ে আছে। লাল ও নীল ফুলের সমাহার গ্রিলের দুই পাশ জুরে যেনো অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে রেখেছে।
রুমে বেড, কাঠের আলমিরা, দেয়াল আয়না ও আর যা প্রয়োজনীয় আসবাব লাগে সব আছে। তবে সবকিছু ডার্ক চকলেট রঙের।

আরোহী রুমে এসে দেখে শুভ্র ইতিমধ্যে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পরেছে। সারাদিন তার মন ও শরীরের উপর দিয়ে কম তো ধকল যায় নি!
আরোহী আত্নীয় স্বজনদের হাত থেকে মাত্র নিস্তার পেলো। আত্নীয় স্বজনরা শুভ্রকেও ধরেছিল কিন্তু শুভ্রকে বেশিক্ষন রাখতে পারে নি। নাস্তা-পানি খাওয়ার পর সে রুমে চলে এসেছিল। আর আরোহী এখন রাত নয়টা বাজে সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছে। আরোহী তোয়ালে ও নিজের কম্ফোর্টেবল ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। সেই দুপুর বারোটা থেকে এই ভারী বেনারসি পড়ে আছে সাথে তো এই ভারী স্টোনের জুয়েলারি। মেকআপটা হালকার মধ্যে করাতে কালকের থেকে একটু স্বস্তিতে আছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,