প্রিয় প্রহর পর্ব-০৭

0
550

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৭(বোনাস)
আরোহী ফ্রেশ হয়ে হাঁটু পর্যন্ত লং কুর্তি, প্লাজো ও ওড়না পড়ে বেরিয়ে দেখে শুভ্র পুরো রুমে চোখ বুলাচ্ছে। কি কারনে পুরো রুম স্ক্যানারের মতো স্ক্যান করছে বুঝে আসলো না আরোহীর। আরোহী ব্যালকনিতে তোয়ালে রেখে এসে শুভ্রকে এখনো কিছু খুঁজছে সেই অবস্থায় দেখে জিঙ্গাসা করে,
–আপনি কি কিছু খুঁজছেন?

শুভ্র আরোহীর দিকে তাকিয়ে ঘার নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
–কি খুঁজছেন?

শুভ্র এবারো মুখে কিছু না বলে ব্যলকনিতে যায় এরপর সামনে গোল দোলনাটা দেখে সেখানে বসে। আরোহী শুভ্রর পেছোন পেছোন ব্যালকনিতে যায়। আরোহী শুভ্রর কর্মকান্ড কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু যখন দেখলো শুভ্রকে আয়েশ করে দোলনার মধ্যে বসতে তখন তার মাথায় ক্লিয়ার হলো যে শুভ্র এগজ্যাক্টলি কি খুঁজছিলো! আরোহী শুভ্রর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে জিঙ্গাসা করে,

–আপনি কি এই দোলনাতে রাতে ঘুমানোর কথা ভাবছেন?

শুভ্র এবারো যখন ঘার নাড়িয়ে উত্তর দেয় তখন আরোহীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে দুহাত রেখে বলে,

–এই! এই! আল্লাহ আপনাকে মুখ দেয়নি? সেই কখন থেকে দেখছি মৌনব্রত ধারণ করে আছেন! নাকি আমার সাথে কথা বলবেন না তাই এরকম করছেন?

শুভ্র নিজের মাথা উুঁচিয়ে আরোহীর মুখ পানে তাকায়। একদম রৌদ্রময়ী রূপ! এখন মনে হচ্ছে আরোহী তার ফর্মে আছে। শুভ্র মুচকি হাসে। এরপর মাথা নিচু করে বলে,

–না। আমি তোমায় ইগনোর করছি না। উত্তর তো দিয়েছিলাম। মুখে না হোক ইশারায়।

আরোহী দমে যায়। সে চায় না শুভ্রর সাথে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে এনে এখন কথা বলতে। তবে শুভ্র এই ঠান্ডার মধ্যে ব্যালকনিতে থাকবে এটা কোনো মতেই মানা যায় না। আরোহী এবার শুভ্রকে নরম সুরে বলে,

–এই ঠান্ডার মধ্যে আপনি বাহিরে থাকবেন! অক্টোবর মাস। রাতের দিকে ঠান্ডা পড়বে আর কিছুটা শিশির তো পড়বে। আপনার রুমের ব্যালকনিতে থাই গ্লাস লাগানো আছে অর্ধেকটা জায়গায় আর সেখানে ডিভান আছে। আর আমার রুমের ব্যালকনিতে কোন থাই গ্লাস লাগানো নেই। আর না আছে ডিভান। এই ছোট্ট দোলনায় আপনি ঘুমাতে পারবেন না।

শুভ্র প্রশ্ন করে,
–তাহলে কোথায় ঘুমাবো?

আরোহীর সরাসরি জবাব,
–কেনো বিছানায়। এত্তো বড় বিছানাটা কি আপনার চোখে পড়ছে না?

শুভ্র কিছুটা অবাক হয় আরোহীর কথায় এরপর জিজ্ঞাসু স্বরে বলে,
–তাহলে তুমি কোথায় ঘুমাবে?

আরোহী ঠোঁট উল্টে বলে,
–কেনো বিছানায়!

শুভ্র চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ আরোহীর দিকে তাকিয়ে থেকে পরে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,
–না। তা করার দরকার নেই। আমি এখানেই ঠিক আছি। তুমি রুমে বিছানায় ঘুমাও। আমি এখানে এডজাস্ট করে নিবো।

আরোহী তো মানবে না। সে শুভ্রকে রুমে নিয়েই যাবে। তাই নাছোড়বান্দার মতো বলে,
–এটা হবে না। আপনি রুমে যাবেন এবং বিছানায় ঘুমাবেন। কালকে রাতেও ছোট্ট ডিভানে ঘুমিয়েছিলেন। ওইটুকু ডিভানে কি আপনার মতো জিরাফের জায়গা হয় বলেন? আর আজকে তো দোলনায়!

শুভ্রকে জিরাফ বলায় শুভ্র চোখ ছোট ছোট করে তীক্ষ্ম নজরে তাকায় আরোহীর দিকে এরপর বলে,
–তুমি আমাকে জিরাফ বললে? আমি জিরাফ?

আরোহী দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। তাও হার মানবে না এই মনোভাব নিয়ে বলে,

–তো কি! জিরাফই তো! আপনি দেখছেন আপনি আমার থেকে কতো লম্বা? পাঁচ ইঞ্চি লম্বা! তাহলে আপনি তো জিরাফই হলেন। আপনি বেশি লম্বা। আমার মাথা আপনার নাক পর্যন্ত হয়।

শুভ্র বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
–হাসবেন্ডরা লম্বাই হয় বউদের থেকে। বুঝেছো!

আরোহী বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
–তো মিস্টার হাসবেন্ড! হাসবেন্ডরা লম্বা হয় এটা জানেন। তো হাসবেন্ড ও ওয়াইফ যে এক বিছানায় ঘুমা তা জানেন না?

শুভ্র থতমত খেয়ে যায় আরোহীর কথায়। সে তো ভুলেই গেছিলো তার সাথে কথা বলা মেয়েটা তর্কে এক্সপার্ট!
শুভ্র চুপ করে আছে। আরোহী শুভ্রকে চুপ করে থাকতে দেখে নরম স্বরে বলে,

–এক বিছানায় থাকলেই যে একে অপরকে ছুঁয়ে ফেলবো এমন কিছু না। আমরা নিজেদের মধ্যবর্তী দূরত্ব বজায় রেখেও এক বিছানায় ঘুমাতে পারি। তাছাড়া আমরা শরীয়ত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী এবং আইন অনুসারেও। আপনি আমার সাথে ঘুমালে আপনার গুনাহ হবে না আর না হবে জেল। ওয়েদার যদি গরমকালের হতো তাহলে রাতে ব্যালকনিতে দোলনায় থাকলেও কিছু বলতাম না কিন্তু ওয়েদারটা ঠান্ডা তার উপর আমাদের এখানে মশার উপদ্রব বেশি। আপনাদের বাসায় তো এতো গাছ গাছালি নেই আমাদের বাসার মতো। তাই ওখানে মশা কিছুটা কম।

আরোহী থামে। শুভ্রর ভাবগতি বুঝতে পারছে না এখনও। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্র। আরোহী আবারো বলে,

–জানি আপনি আমায় স্ত্রী মানেন না। সত্য বলতে আমি আপনার জায়গায় হলে হয়তো আপনার সাথে ক্রমাগত রুড বিহেব করতাম। আপনার কষ্ট হয় আমি বুঝি তবে কারো সম্পর্কে সেচ্ছায় তৃতীয় ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। আপনি সবটা জানার পরেও যখন ক্রমাগত তৃতীয় হতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনি আপনার পথ রোধ করতে আমি আপনায় বিয়ে করেছি। আপনাকে আয়ু ভাই মানে। হ্যাঁ, আমি জানি আপনি তা মানেন না তবে যদি আয়ুর পূর্বের প্রতি ফিলিংস একতরফা হতো তবে আমি চেষ্টা করতাম যাতে আপনি আপনার ভালোবাসা পান। কিন্তু ওরা একে অপরকে কমিটেড। আপনার জন্য কষ্টকর তবে দেখবেন একসময় আপনিও পারবেন।
“জীবনে অন্যকাউকে জায়গা দেওয়া মানে এটা না যে, প্রথম জনের প্রতি কোনো ফিলিংস থাকবে না!”
আমি কখনোই বলবো না আপনি আয়ুকে ভুলে যান। আপনি আয়ুকে ভুলে গেলে হয়তো আমি বলতে বাধ্য হবো আপনার ভালোবাসাটা মোহ ছাড়া অন্য কিছু না।

আরোহী থামে এবার। কয়েক সেকেন্ড শুভ্রর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আরোহীর তাকিয়ে থাকার মধ্যেই শুভ্র সেখান থেকে উঠে রুমের দিকে যায়। শুভ্র আরোহীর কথা শেষ হবার পর রুমে যেয়ে বিছানায় শুয়ে পরে একপাশ হয়ে। তা দেখে আরোহীর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। এরপর আরোহী নিজেও রুমে যেয়ে কোলবালিশটা দুজনের মাঝে বর্ডারের মতো করে দিয়ে অপর পাশে শুয়ে পরে রুমের লাইট অফ করে। আজ মশারি টাঙ্গানোর ইচ্ছে নেই তাই দুইটা কয়েল জ্বালিয়ে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

_________
আর এদিকে মেঘ ও নীড়, দুই ভাই আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে চর্চা করছে। মেঘ তো খুশিতে বেশি এক্সাইটেড। কারন আজকে সাদিয়া মেঘ ও সাবিলার মধ্যে বাগড়া দিতে আসেনি। যখনি মেঘ ও সাবিলা কথা বলতে যায় তখনি সাদিয়া এসে সাবিলাকে নিয়ে টানাটানি করে। টানাটানি বলতে, কথা মাঝে এসে ঢুকে পরে আর মেঘের সাথে টম এন্ড জেরির মতো লেগেই থাকে। তখন সাবিলাও সাদিয়ার সাথে যোগ দেয়।

নীড় ওদের ঝগড়া দেখে আর হাসে। যখন ঝগড়া বেশি মেঘ ও সাদিয়ার মাঝে মারামারির পর্যায়ে চলে যায় তখন
নীড় গিয়ে ওদের থামায়। আর সাবিলা তখন থামাবে কি সে নিজেই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
আজকে মেঘের সামান্য চশমা নিয়ে দুষ্টামি করাতে, দুই জনের মনের রানী তাদের ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ করেছে। মেঘ যখন নীড়ের কাছ থেকে সাদিয়ার করা কাজ গুলো শুনে তখন মেঘ তো হাসতে হাসতে খাট থেকে পড়ে যেতে নিয়েও নীড় ধরাতে বেঁচে গেছে।
_______
সকাল ভোরে শুভ্রর ঘুম ভেঙে যায়। নিজের শরীরে কারো পা দেখতে পেয়ে সে পায়ের মালিককে দেখতে নিজের পাশে কোলবালিশের অপর প্রান্তে থাকা রমণীর দিকে নজর দেয়। পুরো এলোমেলোভাবে ঘুমিয়ে আছে আরোহী।
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে ওর রুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভোরের শুভ্র রাঙ্গা আলো কিছুটা রুমে এসে রুমের অন্ধকারছন্ন ভাবটাকে কাটিয়ে তুলছে। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাজে এখন। ফজর নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,