প্রিয় প্রহর পর্ব-০৮

0
572

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৮
শুভ্র আরোহীর পা নিজের উপর থেকে সরিয়ে উঠে বসে। এরপর একপলক আরোহীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে অজু করে বের হয় একবারে। বিছানার দিকে নজর যেতেই দেখে আরোহী পুরো বিছানা দখল করে ঘুমাচ্ছে। ফজরের ওয়াক্ত প্রায় শেষ তাই শুভ্র আরোহীকে নামাজের জন্য ডাকার কথা ভাবে। কিন্তু পরক্ষনেই ইতস্তত বোধ করে যে ডাক দিবে নাকি দিবে না। মনের দোলাচলে ফেঁসে গিয়ে শুভ্র ভাবে, নামাজ পড়তেই তো ডাক দিবে! অন্য কোনো কারণে তো না। তাই শুভ্র আরোহীকে ডাক দেয়।

আরোহী তো ঘুমে বিভোর। সকালের মিষ্টি রোদ ওর চোখে মুখে পরছে। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে না কারন শীতল হাওয়ায় একটু মিষ্টি রোদ উষ্ণতা ছোঁয়ায়। রাতে ফ্যানের গতি কমিয়ে রেখেছিলো তাই এখন গুঁটিসুটি মেরে নেই। কাঁথা গায়ে দিয়েই পুরো বিছানা ফাঁকা পেয়ে এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে।

–আরোহী! আরোহী!
শুভ্র জড়তা কাটিয়ে আরোহীকে দুই বার ডাক দিলো কিন্তু আরোহী নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়। আরোহীকে সবার মতো শুভ্র কখনো “আরু” বলে ডাকে নি। তাই এখন কি বলে সম্বোধন করবে তা নিয়ে দোটানায় আছে। একবার ভাবে “রৌদ্রময়ী” বলবে আবার ভাবে “রুহি” বলবে! সব মিলিয়ে সে আর না ভেবে পুরো নামেই ডাকবে বলে ভাবে। অলরেডি ৫.৪৫ বেজে গেছে।

–আরোহী! ঘুম থেকে উঠো। ফজরের সময় চলে যাচ্ছে। আরোহী! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?

আরোহী ঘুমের ঘোরেই জবাব দেয়,
–উফফ! আমায় আরেকটু ঘুমাতে দে। তোর আমার ঘুম নিয়ে এতো প্রবলেম কেনো রে আয়ু?

শুভ্র অবাক। এই মেয়ে এতোই ঘুম কাতুরে যে ঘুমের ঘোরে তাকে নিজের বোন ভাবছে। শুভ্র দেখছে সময় কম তাই আবারো ডাক দেয়।

শুভ্রর ডাকে এবার আবারো আরোহী বিরক্তিতে কানের উপর বালিশ দিয়ে বলে,
–দেখছিস আজকে আমি এলার্ম দেই নি। তাও কেন ডাকতেছিস? আমার যে এখন নামাজ নেই তা তুই জানিস না? যাতো নিজে নামাজ পড়।

শুভ্র আর কথা বারায় না। জলদি করে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষে একটু ব্যালকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে। এখনো ছয়টা বাজতে মিনিট দুয়েক বাকি। সূর্য উঠে গেছে। আরোহীদের বাড়িতে বড় বড় গাছ আছে বিধায় গাছের ফাঁকা দিয়ে সূর্যের আলো খুব সুন্দর ভাবে আসছে। এসময় এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না। কিন্তু নিজের বাড়ি হলে হয়তো রান্নাঘরে গিয়ে বানিয়ে নিত কিন্তু এখন তো শ্বশুর বাড়িতে আছে।

আরো আধঘন্টা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলো না শুভ্র। সকালের মনোরম শীতল হাওয়ায় এতটাই বিমুগ্ধ চিত্তে প্রকৃতি অবলোকন করছিলো যে তার পাশে এক রমণী দুকাপ ধোঁয়া উঠা চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারেনি।
——–আরোহী আরো পনোরো মিনিট আগে ঘুম থেকো উঠেছে। শুভ্রর ডাকে তার ঘুম অনেকটা হালকা হয়ে এসেছিলো তারপর শুভ্র জানালার পর্দা খানিকটা সরিয়ে দিয়েছিলো আবার ব্যালকনির দরজাটাও খোলা। কানের উপর থেকে বালিশতো সরিয়ে ফেলেছিল তাই সকালের শুভ্র রাঙা আলো ও হালকা রোদের ছটায় ঘুম ভেঙে যায়। এরপর তার আশপাশ দেখে মনে পরে যে সে এখন তার বোনের সাথে না বরং তার স্বামীর সাথে। আরোহী শোয়া থেকে উঠে বসে এরপর ব্যালকনিতে নজর গেলে বুঝতে পারে শুভ্র ব্যালকনিতে আছে কারন রুমের দরজা বন্ধ ভিতর থেকে।
আরোহী ফ্রেশ না হয়ে আগে রান্নাঘরে যায় আদা, লং ও এলাচ দিয়ে লেবুচা বানাবে তাই। হালকা চায়ের পাতা দিয়ে আদা, লবঙ্গ, এলাচ দিয়ে রং চা বানিয়ে তাতে চিনি ও লেবু দিয়ে চা বানাবে। আরোহী রান্নাঘরে যেয়ে দেখে তার মা সবজি কাটছে নাস্তার জন্য। আরোহী ওর মাকে বলে সে চা বানাবে তাই চায়ের পানি বসায় চুলায়। চা পাতা বাদে বাকি সব মশলা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এরপর ফ্রেশ হয়ে চা বানিয়ে নিজের বাবা-মাকে দুকাপ দিয়ে শুভ্র ও নিজের জন্য নিয়ে আসে।

শুভ্রকে নিমগ্ন চিত্তে প্রকৃতি দেখতে দেখে আরোহী চায়ের কাপ শুভ্রর সামনে বাড়িয়ে দেয়। নিজের সামনে ধোঁয়া উঠা কিছুর উপস্থিতি পেয়ে নজর সরায় আর চায়ের কাপ দেখে তা বাড়িয়ে দেওয়া রমণীর দিকে তাকায়। শুভ্র চায়ের কাপটা নেয় এরপর তাতে চুমুক দেয়। চা টা তার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আরোহী কে উদ্দেশ্য করে শুভ্র বলে,
–চা টা কি তুমি বানিয়েছো?

শুভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে তখন আরোহী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো। শুভ্রের করা প্রশ্নে নজর না সরিয়েই জবাব দেয়,

–হুম। আমি বানিয়েছি।
–চা টা কিন্তু অনেক দারুন হয়েছে।

শুভ্রর প্রতিউত্তরে আরোহী মুচকি হেসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগে।
প্রিয়জনের সামান্য প্রশংসা যেনো মনকে প্রশান্তি দেয়।

শুভ্রর কাছে সময়টা সুন্দর লাগছে। তার পাশে থাকা রমণীর পরিচয় এই মূহুর্তে যাই হোক না কেনো তার সঙ্গ শুভ্রর ভালো লাগছে।
চা পান করা যখন শেষ তখন আরোহী শুভ্রকে বলে,
–আপনার মশলা দিয়ে লেবুচা অনেক পছন্দের।

শুভ্র সচকিত নয়নে তাকায়। এরপর ঘার হেলিয়ে হ্যাঁ বুঝায়। তার বিপরীতে আরোহী মুচকি হেসে শুভ্রের হাত থেকে খালি কাপটা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

আরোহী জানতো যে শুভ্রের মশলা দিয়ে লেবুচা পছন্দের। সাত বছর আগে শুভ্র এব্রোড যাওয়ার আগে শুভ্রদের বাসায় গেলে দেখতো সকাল বেলা শুভ্র লেবুচা পান করতো।
ওই সময় পনেরো বছরের কিশোরীর মনে সদ্য ফোঁটা প্রেমের কলি যেনো পরিস্ফুটিত হবার আশায় ছিলো। কিশোরী মন তখন নতুন অনুভূতির জোয়ারে ভাসতো আর নিজের না বলা প্রেমিক পুরুষের পছন্দ অপছন্দ লক্ষ্য করতো। কিন্তু সে কি জানতো? যে তার প্রেমিক পুরুষের মনে তার চঞ্চল স্বভাবের বিপরীত তার শান্ত স্বভাবের বোনকে নিয়ে এক পাহাড় সম অনুভূতির আনাগোনা!
________

সবাই একত্রে ব্রেকফাস্টের জন্য বসে আছে। হলুদ ছাড়া ডিম ও সবজি দিয়ে একটা ভাজি, ডিম ভাজা ও রুটি। এগুলো নাস্তার জন্য। সবাই ব্রেকফাস্ট শেষে শুভ্র সবাইকে বলে হসপিটালে চলে যায়। আরোহী ও আয়ানা নিজেদের রুমে যায়, যেখানে বিয়ের আগে আরোহী ও আয়ানা থাকতো।

নীড় ও মেঘ চলে যায় নিজেদের চাকরি ক্ষেত্রে। নীড় একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিএসসি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আর মেঘ ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের।
(কম বয়সে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হওয়া যায়। আমার ইউনিভার্সিটিতে আছে।)

আরোহী ও আয়ানা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
–আরু! তুই কিন্তু আমাকে এখনো বলিস নি যে তুই শুভ্র ভাইকে ভালোবাসিস।

আয়ানার কথায় আরোহী হকচকিয়ে যায়। আয়ানা আবারো বলে,

–আমি আমার মনের সব কথা তোর সাথে শেয়ার করেছি। তুই কেনো লুকিয়ে গেলি?
আরোহী চুপ করে আছে। কি বলবে? এটা তো বলতে পারে না যে আরোহী সাত বছর আগেই শুভ্র মনের মানুষের নাম জানতে পেরেছিল!

আয়ানা আবারো বলে,
–তোর মনে আছে? আমার আর ধ্রুবের প্রথম আলাপ? মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে গিয়ে সেখানে ওর সাথে দেখা হয় আমার। ধ্রুব ছিলো আমাদের কোচিংয়ে নতুন মেনটর। আমাদের ক্লাস টাই ছিলো ওর প্রথম কোনো কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া। প্রথম দিন হিসেবে সে নার্ভাস ছিলো অনেক তাইতো সে কোনো রকমে নিজের পরিচয় নিয়ে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে বই খুলে পড়াতে শুরু করে দেয়।

আরোহী ও আয়ানা একত্রে হেসে উঠে। আরোহী বলে,
–সত্যি আয়ু! আমি ওই দিন ধ্রুবকে “গবেট” নাম দিয়েছিলাম। প্রথম দিন কই পরিচিত হবে তা না করে সরাসরি পড়াতে চলে গেলো!

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।