প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
3171

#প্রিয়_ভালোবাসা

#নিশাত_তাসনিম

#পর্ব:৩

রুমে গিয়ে আবারো কোনো শব্দ না করে চুপচাপ গিয়ে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম।বিছানাটা অনেক বড়, কত সাজ সজ্জিত। টাকা থাকলে যা হয় আর কি?
একটা বিষয় খুব আশ্চর্য লাগলো উনি আজকে নেশা না করেই ঘুমিয়ে পড়লেন।অনেক বেশি আশ্চর্যজনক কথা, একজন নেশাখোর নেশা না করে ঘুমিয়ে পড়লো।আমি তো শুনেছি নেশা এমন একটা জিনিস যা একবার ধরলে আর ছাড়ে না।আর উনি তো কয়েকবছরের নেশাখোর।আমরা যদি কখনো কোনো কিছু মন থেকে করতে চাই তাহলে সেটাই করতে পারবো,শুধু দরকার দৃঢ় মনোবল।

শীতের মৌসুম, ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া, নরম তুলতুলে বিছানায় ঘুমটা বেশ আরামদায়ক হচ্ছিলো,কিন্তুু হঠাৎ কেউ আমাকে বিছানায় ঘুম থেকে টেনে তুলো বসিয়ে দিলো।কি হলো, কিছু বুঝলাম না,কিন্তুু হাত-পায়ে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করলাম সাথে সাথে আহ্ বলে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

আমি বিছানার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম,বিছানার অনেক জায়গা রক্তের চোপচোপ দাগ,আমার সাদা জামাটার অনেক জায়গা রক্ত লেগে আছে,সামনে তাকিয়ে দেখি উনার গায়ে হালকা হালকা রক্তের দাগ, কিন্তুু এতো রক্ত কই থেকে আসলো?মাথাটা একদম হ্যাং মেরে গেলো।মাথায় হাত দিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভাবতেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।

আমি উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,,”দেখুন আমাকে একদম বকবেন না,আমি ইচ্ছে করে করি নি। আমি এসব এখনই ধুয়ে দিবো।”বলেই তারাহুড়ো করে উঠতে যেয়ে পায়ে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করলাম সাথে সাথে আহ্ বলে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি পায়ের সাদা ওড়না টা পুরো লাল হয়ে আছে।আমি উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই ঠাসস করে আমার গালে উনি থাপ্পর দিয়ে দিলেন।খুব জোরেই দিয়েছিলেন যার কারনে তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পড়ে গেলাম।

উনি বিছানা থেকে উঠে হুংকার দিয়ে ডাকতে লাগলেন,,”রিয়া,রিয়া”।

আমি ভাবতে লাগলাম এই রিয়া আবার কে?২/১ মিনিট মিনিট পর একটা চিকন শ্যামলা রঙের মেয়ে এসে উপস্থিত হলেন।

উনি চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন,”আসতে এতো সময় কেনো লাগে?”

আমি এমন ধমকে কেঁপে উঠলাম।কিন্তু উনি ধমকে সীমাবদ্ধ ছিলো না, এমন এমন শব্দ বলতে লাগলেন যা শুনে আমার কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো।ছিঃ কি বাজে গালিগালাজ করতেছে।

—“৫ মিনিটের মধ্যে আমি রুমের সব কিছু যেনো পরিষ্কার পাই।আর তুমি নিজেকে কী মনে করো?বুঝলাম তুমি সবার থেকে আলাদা, সেটা তুমি এভাবে না দেখালেও বুঝবো?নিজেকে কী বুঝাতে চাও সেটা বলো?আর হাত-পা এভাবে কই থেকে কেঁটে আসছো?একবার ভালো করে দেখো বিছানার কী অবস্থা? কতো রক্ত,শরীরে কী রক্ত বেশি হয়ে গিয়েছিলো নাকী?”আরো আরো এত কথা শুনাতে লাগলো।আমি কিছু বললাম না চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম কতো জোরে মেরেছে,গাল টা জ্বলতেছে।

উনার চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘরের বাহিরে কতগুলো মানুষ জমা হয়ে গিয়েছে।হঠাৎ আমার শাশুড়ি মা এসে ঠাস ঠাস করে উনাকে দুই থাপ্পর দিয়ে দিলেন।বিষয়টা এতো তাড়াতড়ি ঘটে গেলো যে আমরা কেউই কিছু বুঝতে পারলাম না।

উনি অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে শাশুড়ির দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে চেয়ে রইলেন।

শাশুড়ি আরেকটা থাপ্পর দিয়ে বললেন,,,”ছি অনুভব,তুই এতো খারাপ হলি কবে?একটা মেয়ের সাথে এতোটা খারাপ কাজ করতে তোর লজ্জা করলো না?মানলাম তোদের বিয়ে হয়েছে তাই বলে মেয়েটার সাথে।ছিঃ, ছিঃ।তোকে আমার ছেলে বলতেও লজ্জা হচ্ছে।সেদিন আমি মরে গেলেই ভালো হতো,আজ এ দিনটা অন্তত দেখতে হতো না।মেয়েটার এতো বড় ক্ষতি করেছিস তার উপর ওকে সকাল সকাল গালাগালি করছিস,আবার মেরেছিস।তুই আজকে থেকে আমাকে মা বলবি না, আমি মনে করবো আমার ছেলে মারা গিয়েছে।”

কী হলো?কিছুই বুঝলাম না।আন্টি এসব কি বললো?আর উনি কী করেছে?আজব পাবলিক।
উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, উনি কিছু না বলে মুচকি হাসি দিয়ে মদের বোতল খুলে খেতে লাগলেন।

উনার আবার কী হলো?পাগল নাকী মা এতো কথা বললো আর উনি মদ গিলতেছে।ইয়াক ছিঃ মদের কী বাজে গন্ধ বের হচ্ছে।

আমি উনার কান্ড দেখায় এতোটাই বিভর ছিলাম যে আমার শাশুড়ী কখন আমার পাশে এসে বসলেন আমি বুঝতেই পারলাম না।

শাশুড়ী মা আমার গালে হাত দিতে দিতে বলতে লাগলেন,”ইশশ কত জোরে মেরেছে।”

এ কথা বলে আমার গালে হাত দিতেই চমকে উঠলেন,,”ও মা, তোর শরীর এতো গরম কেনো?”

দেখি দেখি বলেই আমার গালে গলায় হাত দিয়ে চেক করতে লাগলেন।সাথে সাথেই মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, “সে কী তোর গা তো জ্বরে পুরে যাচ্ছে,এতো জ্বর আর ও তোকে ছিঃ?মাফ করে দিস রে মা, আমি বুঝতে পারি নি জানোয়ার টা তোর এত বড় ক্ষতি করে দিবে।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,”উনি কী করেছে?”

“আমার তো বলতেও ঘেন্না লাগছে,ছিঃ এতো বাজে?”

শাশুড়িমা বিষয়টা ক্লিয়ার করতেই আমি দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম,, “না, না। উনি এমন কিছুই করে নি,আসলে,,”

আমার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শাশুড়িমা বলতে লাগলেন,”দেখেছিস তুই জানোয়ারের মতো কাজ করার পরেও ও কী বলতেছে।তোর জন্ম না হলেই ভালো হতো,আল্লাহ আমাকে নিঃসন্তান করলে আরো ভালো হতো।”

এবার আমার কাছে খারাপ লাগতে লাগলো।আমি শাশুড়িমা কে বলতে লাগলাম যে ভুল বশত পায়ে কাঁচ আটকে যাওয়ার কারনেই এতো ব্লিডিং হয়েছে।শাশুড়ীমা আমার হাত-পা চেক করে দেখলো সত্যি সত্যি কাঁটা গিয়েছে।

শাশুড়িমা এবার অনুতপ্ত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললেন,”বাবা আ,,,”

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে উনি হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,”মা তুমিই ঠিকই বলেছিলো আল্লাহ তোমাকে আমার মতো সন্তান না দিয়ে নিঃসন্তান করলে ভালো হতো।”

শাশুড়ী মা আবারো কিছু বলবে তার আগেই উনি বললেন,,,”তোমার কোনো দোষ নেই।আসলে আমরা মানুষেরাই এমন কোনো কিছু দেখলেই মন্তব্য করতে থাকি।বিষয়টা কী আদৌ সত্যি না মিথ্যা সেটা বিচার করে দেখি না।তালকে তিল বানানো আমাদের স্বভাব।আমাদের স্বভাবই এমন,একবারের জন্যও ভেবে দেখি না কী বলি না বলি?আমার কথাগুলো সামনের মানুষের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে।”

আসলেই বিষয়টা সত্য,আমরা মানুষেরাই এমন।কারো সম্পর্কে পুরো না জেনে মন্তব্য করি?উনি তো মিথ্যা বলেন নি,বাহ্ লোকটার,,,

চলবে,,,

(সবার পছন্দ এক না ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলুন।)